User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এমন একটি উপন্যাস যার প্রেক্ষাপট একেবারে যুক্তরাজ্যকে কেন্দ্র করে, সেখানে নারীদের এমন করুণ দুরাপস্থার চিত্র ফুটে উঠতে দেখলে যেকোন পাঠকেরই অবাক হওয়ার কথা। তবে পাঠক যদি এই তথ্যটা জানেন যে এই উপন্যাসের প্রকাশকাল ১৮১৩ এবং স্বভাবতই উপন্যাসে ঐ সময়টাকেই পটভূমি করে তুলে ধরা হয়েছে, তবে পাঠকের ভুল ভাঙতে বাধ্য। এমন একটা সময়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস'-এ, যেসময়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত ইংরেজ পরিবারের মেয়েদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল বিয়ে। কোনোরকমে একটু ভাল ঘর আর ভাল পাত্রের হাতে কন্যাকে পাত্রস্থ করাই যেন ছিল ঐ সময়কার নিম্ন মধ্যবিত্ত বা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সার্বিকভাবে এই চরম সত্যটাই আলোচ্য উপন্যাসের পরতে পরতে জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টা যদিও খুব একটা বিস্ময়জাগানিয়া নয় কেননা আজকের দিনেও অনেক সমাজে এই বিষয়টার দেখা মেলে, তবু তৎকালীন ইংরেজ সমাজে এই ব্যাপারটার সাথে বংশমর্যাদা, সামাজিক প্রতিপত্তি, অর্থনৈতিক নির্দিষ্ট সীমা প্রভৃতি এত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল, আজকের দিনে অনেকের কাছেই তা বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু সেই সময়টায় বসেই জেন অস্টিন এত নিখুঁতভাবে ঠিক সেই সময়েরই বাস্তবচিত্র একটা আটপৌরে ভালোবাসার কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন যে, উপন্যাসটি পড়ার পর উনিশ শতকের শুরুর দিকে ইংরেজ সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের মধ্যকার পারস্পরিক আবস্থানিক দ্বন্দ্ব পাঠকের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু এসবও এই কাহিনীর মূল আকর্ষন বলে আমি মনে করি না। বিরুদ্ধ পরিবেশে বাস করেও এলিজাবেথ নামের ২১ বছরের তরুণীর মধ্যে যেই তীক্ষ্ণ আত্মসম্মানবোধের দেখা মিলেছে, সে যেভাবে নিজের প্রতি ধেয়ে আসা সকল তুচ্ছ তাচ্ছিল্যকে পাশে সরিয়ে রেখে নিজের 'প্রাইড ও প্রেজুডিস' বজায় রেখে উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ডার্সির মনে তার প্রতি ভালোবাসার জন্ম দেয়, তা যেকোন সময়ের যেকোন শক্তিশালী নারী চরিত্রদের মধ্যে একটি অমর দৃষ্টান্ত হয়ে রইবে। অন্য দশটা মেয়ের মত না হয়ে, সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে নিজের ব্যক্তিত্বকে বিকিয়ে না দিয়ে লিজা যেভাবে তার চারিত্রিক দৃঢ়তাকে সমুন্নত রেখেছে এবং সেজন্য হাজারো বঞ্চনা মাথা পেতে সহ্য করেছে, সেটি আসলেই পাঠককে বাধ্য করে লিজার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। সর্বকালের সেরা সামাজিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস' এর অবস্থান অনেক উপরে। তবু একটা কাহিনী হিসেবে একটি পরিবারের ৫টি মেয়ের বিবাহ-মিশন ও সেই পথে বিভিন্ন সামাজিক বাধার প্লট আমাকে খুব একটা বিনোদিত করতে পারেনি। তবু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে গেছি লিজা নামক চরিত্রটির প্রতি গভীর সম্মোহনের ফলে। নিঃসন্দেহে লিজা যেকোন ভাষার সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি, যার চরিত্র উপন্যাসের কাহিনী যত এগিয়েছে ততই প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে আর পাঠককে বাধ্য করেছে এই চরিত্রের প্রেমে পড়তে। আমি নিজেও লিজার প্রেমে পড়েছি এবং সকলকে আমার আমন্ত্রন, উপন্যাস হিসেবে 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস'কে ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক, লিজার প্রেমে পড়তে চাইলে অবশ্যই উপন্যাসটি পড়ে নিন।