User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শাব্দিক চাতুর্য ব্যক্তিক চাতুর্যকে অতিক্রম করে যায় ছত্রিশ ব্যঞ্জনে। কবিতা শিল্পের সূক্ষ্মতম মাধ্যম। কবিতার শাব্দিক চাতুর্যই প্রমাণ করে কবি কত বড় প্রতারক! শিল্পীর ক্যানভাসে যে রঙের বিচ্ছুরণ কবিতায় এই শব্দবিচ্ছুরণ; এই বিকিরিত আবেগ যতটা গভীরে পৌছে অনুরণন ততটা দীর্ঘ হয়। এহসানুল ইয়াসিনের কবিতা পাঠের সুযোগ হয়েছে ছোটকাগজের বদৌলতে। রাধিকা নগরীরর দিকে হেঁটে যাচ্ছি হাতে পাই আকষ্মিকভাবে। ঢাকার অদূরে থাকি, ফেরার তাড়া নিয়ে বইটি বগল দাবা করে বাসে চাপি। ঢাকা শহরের যানজটে ৩২ পৃষ্ঠার অনুগ্রন্থে ২৪ টি কবিতা পাঠ করি বাসেই। শাব্দিক চাতুর্যের কারণেই বুঝি এই সম্মোহন। ‘সাদা ফুল রাতে ফুটে। এবং গন্ধও ছড়ায় অত্যধিক।/ দাদু বলতেন/ এই গন্ধে নাকি সাপ আসে ফুলতলায় সঙ্গমের জন্য!/ তবে কি বিষ আর সুবাস দুজনে বান্ধবী?’ সাদামাটা ভাষার এই দশর্নে আকৃষ্ট না হয়ে পারি না। লোকজ কাহিনিটি মিথের পর্যায়ে পড়ে; এহসানুল এটিকে শব্দচাতুর্যে পাঠকের সামনে এনেছেন প্রসঙ্গত অক্ষরবৃত্তের ছান্দিক মাধুর্যও মুগ্ধ করে। বাজার মিডিয়া যাকে সামনে আনে তাকেই নিয়েই বাঙালি হৈ-হুল্লোর করে। ইয়াছিন সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হলেও তাকে নিয়ে মাতামাতি নেই; সম্ভবত আড়ালপ্রিয়তা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আড়ালপ্রিয়তার আড়ালেই তিনি প্রশ্ন তোলেন ‘সুউচ্চ ভবনের বারান্দার গ্রিলে ঝুলে আছে ব্রা।/ আর বাইরের অসতর্ক আগুন তাপে পুড়ে যাচ্ছে নগর।/ আমাদের বান্ধবীরা বড় বেশি ব্যস্ত/ যদি নিউমাকের্টের জ্যামে আটকা পড়ে/ ঝলসে যাবে রোদের শহর।’ অরহান পামুকের গম্বুজের শহর, শামসুর রাহমানের স্মৃতির শহর, এহসানুলের রোদের শহর। বিশ্বায়নের যুগে উষ্ণায়ন প্রসঙ্গ বর্তমানে একটি বড় ইস্যু; সময়ের আবর্তনে সত্তরের স্লোগান আজ প্রশ্ন হয়ে বোধকে নাড়া দিচ্ছে, ‘আমরা প্রতিনিয়ত ফায়ার বিগ্রেডে ফোন করছি/ মধ্যদুপুরের নেটওয়ার্ক ব্যস্ততায়/ মিসড কলের সংখ্যা বাড়ছে/ নগর পিতা আপনি কি এতগুলো দায় গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন?’ কৈশোরের স্মৃতিময় দিনগুলোই বোধহয় শিল্পীসত্তায় সবচেয়ে বেশি দাগ কাটে। মানুষ একজীবনে ঘুরে দেখা জীবনকেই ঘুরিযে ফিরিয়ে দেখে, বিশ্লেষণ করে এবং এই নিয়েই প্রতিনিয়ত বাঁচে। কিন্তু ফেলে আসা স্মৃতির তাড়না কলমে উঠে আসে এবং সেই দিনলিপিই বুঝি মানুষের শ্রেষ্ঠ ডায়েরি ‘উঠোনে ছড়ানো ধানের উপর চড়–ইয়ের/ অঘোষিত অধিকার।/ মধ্যদুপুরে শিস বাজিয়ে দোয়েল কী একথা জানায়? অথচ/ মা এঠানে ধান ছড়িয়ে আলেয়াকে বসিয়েছে/ চড়–ই তাড়াতে। ওর হাতে শিকারি লাঠি। আর/ চোখ দুটি ছিঁচকে চোরের মতো সাফল্যের জন্য উদগ্রীব।/ মা আমার ঘুম আসে না/ আলেয়া কি ঘুমুতে গেছে?’ কবিতাটি পাঠে ফিরে যাই ঘাসের ঘটনা’য় কবি আবদ আজাদের কাছে, ‘রোদ্দুরে দোলে রোদ্দুরে দোলে/ বাড়টার ক্ষীণ কোমরে ঐ/ মাথা গুঁজে থাকা ছায়ায় শাখায়/ এলেবেলে দু’টি তাল চড়–ই/ চোখের ছিলায় দিন ছলকায়/ বেলা যায় বেলা যায়।’। আবিদ আজাদ রোদ্দুরে অলস মিথুন মূর্তি নির্মাণ করেন, কিন্তু তা ক্লান্তিময় রোদ্দুরেই ঝরে যায়। মধ্যদুপুরে আলেয়ার শিকারী চোখ রাতেও তাড়া করে ফেরে। আবিদ আজাদের এই আকস্মিক পতন যেমন উপেক্ষা করা যায় না এহসানুলের এই সম্পর্কের পারম্পর্যতাকেও উপেক্ষা করা যায় না। এহসানুল রাধিকানগরীর দিকে যে অসীম যাত্রা শুরু করেছেন তা শব্দকরের পক্ষেই মানায়; হাজার বছর ধরে যে পথে হেঁটে আসা তার নতুন অভিযাত্রিক এহসানুল ইয়াসিন। শব্দচাতুর্য ও ছন্দের কারুকাজ দীক্ষিত পাঠককে বিমোহিত করবে অবধারিতভাবে। কাব্যগ্রন্থটির অমরত্ব আকাঙ্খা তাই বাতুল চিন্তা নয়। রাধিকা নগরীর দিকে হেঁটে যাচ্ছি, এহসানুল ইয়াসিন, প্রচ্ছদ: রাজিব রায়, প্রকাশক: প্লাটফর্ম প্রকাশন, প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১০, মূল্য: ৩০ টাকা। রাহেল রাজিব কবি ও শিক্ষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়