User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
অনুবাদ মোটেও ভালো হয়নি। একদম খাপছাড়া লেগেছে।অনেক বানান ভূল। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মতো প্রকাশনী থেকে এরকম অনুবাদ মোটেও আশা করিনি।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত "পেয়ারার সুবাস" বইটি পড়তে গিয়ে জানতে পারি লেখক মূলত কাফকার "রূপান্তর" বইটি পড়েই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মে। তাই আমিও মার্কেজ এর বাকি বইগুলো পড়া শুরু করার আগে এই বইটি পড়ে নেওয়া শ্রেয় মনে করেই পড়ে ফেললাম। এই বইটা অনেকটা ভিন্ন ধাঁচের। একজন মানুষ আরশোলা হয়ে যাওয়া, তার চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তন হওয়া, নিজের সাথে মানিয়ে নেওয়া, অন্যদের সাথে মানিয়ে নেওয়া সব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমার কাছে যেটা অবাক করা ব্যাপার ছিল সেটা হচ্ছে লেখক গ্রেগরকে আরশোলাতে রূপান্তর করে সেভাবে কাহিনী চালিয়ে নিয়েছেন। তিনি সেই আরশোলা থেকে আবার মানুষে রূপান্তর করার প্রয়োজন মনে করেননি। লেখক এখানে সূক্ষ্মভাবে যে বার্তাটি দিয়েছেন সেটাকে হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় বললে বলতে হয়, "মৃত্যুশোক সাতদিনের বেশি স্থায়ী হয় না। কারণ, সবাই জানে যে গেছে সে ফিরবেনা।নিখোঁজ শোক দীর্ঘস্থায়ী হয়।কারণ একটিই, নিখোঁজ ব্যাক্তির ফিরে আসার সম্ভাবনা।আনন্দের সম্ভাবনাই সেখানে শোকের প্রধান কারণ।" এখানেও গ্রেগরের পরিবারের হয়তো ক্ষীণ আশা ছিল সে আবার আগের রূপে ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। গ্রেগর যে আরশোলায় রূপান্তরিত হয়েছে সেটার মৃত্যু হয়েছে এবং সেই সাথে তার পরিবারে সাময়িক শোক নেমে আসলেও তারা সামলে নেয় এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করতে নেমে পড়ে।
Was this review helpful to you?
or
#বুক_রিভিউ নাম: রূপান্তর লেখক: ফ্রানজ কাফকা অনুবাদ: কবীর চৌধুরী #কাহিনী_সংক্ষেপে: যুবক গ্রেগর সামসা। বৃদ্ধ বাবা-মা আর তরুণী ছোটবোনকে নিয়ে সে থাকে। গ্রেগর সামসা এক মধ্যবিত্ত ভ্রাম্যমান সেলসম্যান। সংসারের সব দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে। কঠিন তার জীবন সংগ্রাম। ছোট বোনকে গ্রেগর খুব ভালোবাসে। তাকে সংগীতবিদ হবার সুযোগ করে দিতে সে দৃঢ়সংকল্প। কাজ এবং পরিবার এই দুইকে ঘিরে এভাবেই চলছিলো গ্রেগর সামসার দিন। কিন্তু হঠাৎ একদিন ভোরেবেলা গ্রেগর সামসা যখন ঘুম ভেঙে জেগে উঠলো তখন সে দেখল যে একটা বিশাল পতঙ্গে পরিণত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে সে। প্রথমে গ্রেগর এটাকে তার মনের ভুল বা স্বপ্নেরই সম্প্রসারণ বলে ভেবেছিলো। কিন্তু না কিছুক্ষণ পরই সে বুঝতে পারলো এটা কোনো স্বপ্ন নয়, বরং সত্যি সত্যিই সে একটা বড় আরশোলায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। আরশোলা হয়ে যাবার পর গ্রেগর কি ভাবে চলাফেরা করতো, কিভাবে আহার গ্রহণ করতো তার বিস্তারিত লেখক তার গল্পে তুলে ধরেছেন। মানুষ থেকে আরশোলায় রূপান্তরিত হওয়ার পরে গ্রেগর সামসা তার চেনা জগৎ থেকে, তার পরিবার থেকে, পরিবারের প্রতিটি মানুষের থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। অন্যের সকল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তীক্ষ্ণ হয়ে তার চেতনায় ধরা পড়ে, কিন্তু প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টা সত্ত্বেও সে তার নিজের মনোভাব, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবেগ-অনুভূতি কাউকে বুঝাতে সক্ষম হয় না। কিন্তু তারপর কি হয়েছিলো? হঠাৎ গ্রেগর সামসা আরশোলাই বা হয়ে গেলো কেন? আরশোলা থেকে কি আবার সে মানুষে রূপান্তরিত হতে পেরেছিলো? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া: এ পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেলজয়ী ১০৯ জনের মধ্যে ৩২ জন তাদের লেখায় কাফকার সরাসরি প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি শেক্সপিয়রের পরে আর কোনো লেখককে নিয়ে এত গবেষণা হয়নি, যা কিনা ফ্রানজ কাফকাকে নিয়ে হয়েছে। শিল্প বা সাহিত্যের সাথে সম্পর্ক আছে অথচ কাফকার নাম শুনেনি এরকম মানুষ পাওয়া বিরল! অনেক দিন থেকেই উনার বই পড়বো পড়বো করে আর পড়া হচ্ছিলো না। কিন্তু কালকে বইটা পড়তে বসে এক বসায় শেষ করেছি, কোনো রকম বিরক্তি আসেনি। এক বসায় শেষ করার মতই বই 'রূপান্তর'। টাইপিং মিস্টেক তেমন একটা চোখে পড়ে নি, ছিলো না বললেই চলে। কাহিনীর গঠন কাঠামোও ছিলো লক্ষ করবার মত। কোনো মানুষই বাস্তবিক অর্থে আরশোলায় রূপান্তরিত হতে পারেনা। সে দিক থেকে দেখলে 'রূপান্তর' গল্পটি বাস্তবতাবিরোধী গল্প। কিন্তু আক্ষরিক বাস্তবকে অতিক্রম করে আমরা কি ভিন্ন ধরনের কোনো বাস্তবতার কথা ভাবতে পারিনা? যদি পারি তাহলে আমরা দেখব যে, 'রূপান্তর' আমাদের জন্য বিচিত্র ও ভয়ঙ্কর সব অর্থে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। যারা এখনো বইটি পড়েন নি, পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে। "পৃথিবী বইয়ের হোক"! #হ্যাপি_রিডিং!
Was this review helpful to you?
or
বিশ্ববিখ্যাত ঔপন্যাসিক ফ্রানজ কাফকার 'রূপান্তর' বইটি পড়লাম। অন্য কোন লেখকের লেখা হলে 'রূপান্তর'-কে সরাসরি ফ্যান্টাসি নির্ভর রচনা বলে আখ্যায়িত করা যেত। কিন্তু লেখক ফ্রানজ কাফকার মত লেখক বলেই তা সম্ভব হচ্ছে না। ফ্রানজ কাফকার অন্যান্য লেখা যেমন নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রতিনিধিত্বমূলক অর্থাৎ লেখায় একটা বিষয়ের ওপর ফোকাস করা হলেও রূপক অর্থে অন্য বিষয়কে ইঙ্গিত করা হয়, তেমনি 'রুপান্তর'-এও তা-ই হয়েছে। মোটামুটি অবিশ্বাস্যরকমের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসিকার মাধ্যমে লেখক গভীর জীবনবোধের প্রতি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। বইয়ের গল্পটির মূল চরিত্র গ্রেগর সামসা (সেই শুনতে শুনতে ক্লিশে হয়ে যাওয়া অথচ বুকে বেদনার ঝড় তোলে যে নামটি) একজন ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান, যাকে নিত্যদিন ভোর চারটার ট্রেন ধরতে হয় অফিসের জন্য, এক সকালে ঘুম ভেঙে দেখল চার পেরিয়ে পেরিয়ে সাত বেজে যাচ্ছে, রোজকার সময়ে তার ঘুম ভাঙেনি বরং সে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় আকারের এক পোকা হয়ে।আমি জানতাম এখান থেকেই শুরু গল্পটা। গ্রেগরের পোকায় রূপান্তর হবার সকালটি থেকে, কিন্তু পড়তে পড়তে আবিষ্কার করি মূল গল্প শুরু হয় তখন—যখন বেলা বাড়ে, গ্রেগর তার রুমের বন্ধ দরোজার ওপাশ থেকে জান্তব কণ্ঠে কথা বলতে থাকে, তার অফিসের বড় কেরানী চলে আসেন খোঁজ নিতে কী হলো এমন যে, অফিসে যেতে পারেনি সে? গ্রেগর এর কিছুক্ষণ পর মুখ দিয়ে চাবি কামড়ে ধরে কোনো রকমে নিজের দরোজা খুলে উঁকি মারে বাইরে, তার পোকায় রূপান্তরিত অবস্থা দেখে মা অজ্ঞান হয়ে যান, কেরানী দৌড় মারেন এবং বাবা ভয় পান—ক্রোধান্বিত হন, কেরানীর ফেলে যাওয়া ছড়িটা নিয়ে তার দিকে ধেয়ে আসেন, গ্রেগরকে বাধ্য করেন নিজের রুমে ফিরে যেতে।এখন এই যে হুট করে একটা মানুষ, যে কি না পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক আর খুব কর্মঠ, জীবন যার কাছে কঠিন হলেও স্বপ্নগুলো মরে যায়নি, মা-বাবা আর সতেরোয় পড়া ছোটবোন গ্রেটিকে নিয়ে মোটামুটি সুখের সংসার—কেনইবা এক সকালে সে পোকা হয়ে যায় আঁৎকা? পুরো বিষয়টাকে সরলাংকে জাদু বাস্তবতা বলে মনে হয়, আসলে কি তাই? রূপান্তর নিখাদ বাস্তবতার গল্প, নিরেট এবং এক নিম্নমধ্যবিত্ত জার্মান পরিবারের। সেখানে কারো হুট করেই আকাশে উড়ে যাবার সম্ভাবনা নেই আবার নেই আলাদিনের জাদুর চেরাগে ঘষা দিয়ে দৈত্য বয়ে আনবার অবকাশ। এ দুটি উদাহরণই মেটাফোরিক মহত্ব মণ্ডিত, আমি বলছি না গল্পে অমন হওয়াটা অস্বাভাবিক—গল্প তৈরিই হয় গরু ও ঝড় থেকে আবার গরু-ঝড় গল্পে আসে বাস্তব থেকেই। গার্সিয়া মার্কেসের উড়তে উড়তে হারিয়ে যাওয়া সুন্দরী রেমেদিওস কিংবা মিলান কুন্ডেরার দেবদূতগণ আমাদের মনে বিষণ্ণতা আনে, ভিতরটা কুরে খেতে শুরু করে না। গল্পটায় পরিষ্কার হয়ে ওঠে কাফকার ফ্যান্টাসি নির্মম—যেহেতু তার পৃথিবীটিও নির্মম (গল্পের অবকাশহীন অথচ গল্পময়)।গ্রেগর সামসা সকাল-সন্ধ্যা হাড়ভাঙা পরিশ্রমেই অর্থ উপার্জন করে, ছুটির দিনগুলোয় পরিবার নিয়ে চলে যায় কোনো অবকাশ যাপন কেন্দ্রে, এ ছাড়া আর কোনো নতুনত্ব তাদের জীবনে ছিল না। কাফকা ঠিক এই স্বাভাবিকতার মাঝে ভয়ঙ্কর গোলযোগ তৈরির জন্য সামসার মেটামরফোসিস কল্পনা করলেন, তাকে বানিয়ে দিলেন পোকা। পোকাটি খোলাচোখে কিম্ভুত, স্বাভাবিক আকৃতির চেয়ে বড় একটা মাকড় কিন্তু আবিষ্কার করতে হয় সে আসলে এক অস্বস্তি—চারপাশ যে নিয়মে চলছে, তার বিরুদ্ধে সে একটা ব্যতিক্রম। যে পুত্রটি ছাড়া পরিবারের কোনো গতি ছিল না, সবার কাছে সে ছিল উন্নতি ও সমৃদ্ধির জীবন্ত প্রত্যাশা, হঠাৎ রূপান্তরে পরিবারের সকলের চোখে তার অবস্থান কেমন বদলে যেতে শুরু করে, আমরা নির্মমভাবে টের পেতে থাকি, এটাই মূলত রূপান্তর।গ্রেগরের প্রতি নিষ্ঠুরতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকেন তার বাবা, বৃদ্ধ বয়সে আবার তাকে উপার্জনে নামতে হবে, ক্লান্ত শরীরটিকে আবার নামাতে হবে পথে; এর সমস্ত দায় তিনি চাপিয়ে দেন গ্রেগরের ওপর, তাকে আহত করেন, এমনকি পারিবারিক যেকোন অঘটনে নিশ্চিত ধারণা করে নেন, ওতে হাত (অজস্র পা) আছে পোকায় রূপান্তরিত হওয়া তার পুত্রটির। অপর দিকে অবশ্য দেখা যায় আকস্মিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠবার পর গ্রেগর সামসার মা পুত্রের জন্য ভালোবাসা টের পান, তিনি তাকে দেখতে চান এমনকি তার রুমটিতে মাঝেমধ্যে উঁকি মারেন, যেখানে একটি সোফার নিচে কেটে যাচ্ছিল গ্রেগরের দিবস রজনী। শুধু দেখা যায় গ্রেটি—গ্রেগরের একমাত্র বোন, ভাইয়ের প্রতি স্বাভাবিক খেয়াল ধরে রাখতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাকে খাওয়াচ্ছে, ঘরদোর পরিষ্কার করে দিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা গল্পকারের জবানিতে শুনতে পাচ্ছি—এ বোনটির মিউজিক স্কুলে ভর্তি হবার বড় শখ—সে চমৎকার বেহালা বাজায়, আসছে ক্রিসমাসেই গ্রেগর ঠিক করেছিল তাকে মিউজিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে, যত অর্থই লাগুক না কেন। গ্রেগর ভিতরে ভিতরে অনুতপ্ত হয়, পরিবারের এ দুর্দশা আর স্বপ্নভঙ্গের জন্য তার এমন কিম্ভুত পরিবর্তনটাই তো দায়ী অথচ তার কিছু করার নেই, নিয়তি এখানে সবচে বিমূর্ত হয়ে আমাদের কাছে আত্মপ্রকাশ করে।গ্রেগর সামসা কাফকার মানস চরিত্র হয়ে দাঁড়ায় স্বাভাবিকভাবেই, অপছন্দনীয় পেশাগত দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় (গ্রেগর চাকরি ছেড়ে দেবার পরিকল্পনা করে মনে মনে, হাতে টাকা জমলে যে অন্য কিছু করবার স্বপ্ন দেখে, তার চাকরির মূল কারণ কোম্পানির বড় কর্তার কাছে বাবার-মায়ের পূর্বোক্ত ঋণগুলো শোধ করা) শিকার হয় নিয়তির—রূপান্তরিত হয় পোকায়। পুঁজিবাদি নিষ্ঠুরতা, কোম্পানির হর্তাকর্তাদের কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, কথায় কথায় চাকুরি হারিয়ে ফেলবার ঝুঁকি—এসমস্ত বিষয় স্বাভাবিকভাবেই এক স্বাধীনচেতা মানবসত্তায় শেকলের মতো অনুভূত হবে। পোকায় রূপান্তরিত হবার পরেও তার মাঝে আমরা আবিষ্কার করি শিল্পের ক্ষুধাটি অক্ষুণ্ণ থেকে যেতে, বাসার উটকো ভাড়াটেদের যখন তার বোন বেহালা বাজিয়ে শোনায়, নিজের কক্ষটি ছেড়ে সে ওই সঙ্গীতের মোহে বেরিয়ে আসে সকল বিপদের আশঙ্কা তুচ্ছ করে। এই শিল্পভুক সামসাকে তখন আবিষ্কার করতে হয় বাস্তবতার নিষ্পেষণে ক্লান্ত বিধ্বস্ত সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের আত্মা হিসেবে।একমাত্র বোন গ্রেটি, যে ভাইয়ের জন্য অগাধ স্নেহে পোকায় বদলে যাবার পরেও তাকে ত্যাগ করতে পারে না, এমনকি সেও এক সময় বিরক্ত-হতাশ হয়ে পড়ে, অথচ গ্রেগর নিজে কিন্তু স্বাভাবিক থাকে, মানসিকভাবে সে থেকে যায় আগের সেই উজ্জ্বল যুবকটি। পরিবারের সবাই যে তার এই মাকড়ে বদলে যাওয়া অবয়বটিকে ঘৃণা করছে—বিষয়টা তাকে প্রতিমুহূর্তেই বেদনায় ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু তার করবার কিছু থাকে না যেহেতু নিশ্চিতভাবেই একটা পোকা পুনরায় আর মানুষ হয়ে উঠতে পারে না, কেন পারে না? গল্পে আমরা কী দেখতে পাই? স্বাভাবিকতায় সামান্য পরিবর্তনও মানুষ গ্রহণ করতে পারে না, এমনকি তা নিতান্ত আপনজনের ক্ষেত্রেও, তাহলে হুট করে সমাজের কোনো পরিবর্তন, নতুন কোনো সম্ভাবনা মানুষ কিভাবে মেনে নেবে? আঁৎকা চারপাশের যেকোন পরিবর্তনই মানুষ প্রথম দফায় নেতিবাচকতা ও নিষ্ঠুরতার সাথে গ্রহণ করে, কাফকা তার এই গল্পটিতে সেটাও কি পরিষ্কার করে আঁকেননি? অনেকে ঠিক এ জায়গাটিতেই সাহিত্যে তার নবুয়্যাত আবিষ্কার করেন, বলেন—কাফকা তার সাহিত্য জীবন পার করেছেন আসলে প্রফেসির মাঝে, তার লেখাগুলোয় আমরা আবিষ্কার করেছি নিজ সময়ের পরে ঘটবে এমন অজস্র ঘটনা। তার সময়ে পৃথিবী বদলে যাচ্ছিল, সে বদলের আগমনী সংকেত বাজছিল বাতাসে, পৃথিবীর মানচিত্রে আসছিল বড় কোনো পরিবর্তন, আসছিল যুদ্ধ ও মৃত্যু। পরিবর্তন তো আমাদের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই—কাফকার গহন জীবনবোধ বইতে থাকা মগজ ঘূর্ণিবায়ুর মতো এ পরিবর্তনের আঁচে হয়ত নিয়ত বিধ্বস্ত হতো, ক্লান্ত কিংবা উনিয়তি এড়ানো সম্ভব না হলেও তার বিরুদ্ধে কাফকা দাঁড়ান নতুন এক স্বপ্ন নিয়ে, হতাশায় নিমজ্জিত সামসা পরিবারের গল্পটির শেষ টানতে চান এক আশাবাদ ব্যাক্ত করেই—যেহেতু কঠিন পৃথিবী কখনোই মানুষের জীবন অভিমুখী যাত্রাটিকে থামিয়ে দিতে পারে না, একজন লেখক হিসেবে আশা ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন না কাফকাও। তিনি দেখতে পান জীবন তো থেমে থাকে না, যুদ্ধ-মৃত্যু-ঝড় একে বিধ্বস্ত করবার ক্ষমতা রাখে কিন্তু ওতে সমস্ত আশা নিভে যায় না—সেটি টিমটিমে হয়েও জ্বলতে চেষ্টা করে।দ্দীপ্ত হতো, না হওয়াটাই ছিল অস্বাভাবিকতা।পাঠক বইটি পড়ে ভিন্ন স্বাদ পাবেন তাই বলব মিস না করে তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলুন আশাকরি আপনাদের ভাল লাগার খোঁড়াক হবে বইটি।
Was this review helpful to you?
or
মূল বইটি আগে থেকে পড়া ছিল। পরে বাংলা অনুবাদ দেখে বইটি হাতে নিলাম। বিরক্তির শেষ সীমায় গিয়ে উপনীত হয়েছিলাম। ভাবলাম খামোখা মেশিনম্যান হনুবাদকদের আমরা গালাগাল করি। ফালতু অনুবাদ যদি কেউ করতে চায় তার উচিত এই ভদ্রলোকের কাছে ট্রেইনিং নেওয়া। আমার কাছে এই সহ কবীর চৌধুরীকৃত আরও কয়েকটি অনুবাদ পড়ে তাকে মরণোত্তর একটি উপাধি দিতে ইচ্ছে করছে। তা হচ্ছে ‘তিনি একজন দোপেয়ে গুগল ট্রান্সলেটর’।
Was this review helpful to you?
or
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে 'চিরায়ত গ্রন্থমালা' সিরিজের অংশ হিসেবে অনুবাদিত বই হল ফ্রানজ কাফকার 'রূপান্তর' যেটির মূল হল 'মেটামরফোসিস'। অন্য কোন লেখকের লেখা হলে 'রূপান্তর'-কে সরাসরি ফ্যান্টাসি নির্ভর রচনা বলে আখ্যায়িত করা যেত। কিন্তু লেখক ফ্রানজ কাফকার মত লেখক বলেই তা সম্ভব হচ্ছে না। ফ্রানজ কাফকার অন্যান্য লেখা যেমন নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রতিনিধিত্বমূলক অর্থাৎ লেখায় একটা বিষয়ের ওপর ফোকাস করা হলেও রূপক অর্থে অন্য বিষয়কে ইঙ্গিত করা হয়, তেমনি 'রুপান্তর'-এও তা-ই হয়েছে। মোটামুটি অবিশ্বাস্যরকমের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসিকার মাধ্যমে লেখক গভীর জীবনবোধের প্রতি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এই উপন্যাসিকায় গ্রেগর নামের এক যুবককে দেখা যায় যে হঠাৎই এক সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করে যে তার শরীর আরশোলা টাইপের কোন এক অদ্ভুত পোকামাকড় জাতীয় প্রাণির শরীরে রূপান্তরিত হয়েছে। বাস্তব দৃষ্টিতে এই ব্যাপারটা খুবই অস্বাভাবিক এবং গ্রেগরের পরিবারের কাছেও সেটি সেভাবেই গৃহীত হল। তারপরও তারা অনেক চেষ্টা করল 'বাস্তবতা'কে মেনে নেয়ার। গ্রেগর ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গ্রেগরের 'অনুপস্থিতি'তে তাদের সংসারের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। অন্যদিকে পরিবারে পোকার শরীরে বাস করা গ্রেগরও ক্রমশ অচ্ছুৎ হয়ে উঠতে থাকে। তার বোন ও মা প্রথম দিকে তার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও ধীরে ধীরে গ্রেগরের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা গ্রেগরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কথাও চিন্তা করে। অন্যদিকে গ্রেগর পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তা বুঝতে পারলেও কোনভাবেই সে তাদের সাথে কম্যুনিকেট করতে পারে না এবং না খেতে খেতে একদিন মারা যায়। গ্রেগরের মৃত্যুতে তার পরিবার শোকাহত হয় না বরং তাদের জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরে আসে এবং তারা নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে। মোটামুটি অবিশ্বাস্য রকমের এই উপন্যাসিকার মাধ্যমে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন বিবর্তনের ধারায় সংসারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ভূমিকা কিভাবে অসহনীয়ের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। গ্রেগর চরিত্রটি প্রতিনিধিত্ব করছে এক ভাগ্যাহতের আর তার পরিবার প্রতিনিধিত্ব করছে নিষ্ঠুর বাস্তবতার যারা ধীরে ধীরে বাস্তবের সাথে তাল মিলিয়ে নিষ্ঠুরভাবে উপযোজিত হয়ে ওঠে। 'রূপান্তর' বা 'মেটামরফোসিস' কাফকার অন্যতম সেরা রচনা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এই রচনাকে বাংলায় অনূদিত করেছে বলে তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু আমার কাছে কবির চৌধুরীর অনুবাদ আশানুরূপ বলে বিবেচিত হয়নি। আক্ষরিক অনুবাদের আমি বিরোধী নই কিন্তু বাংলা ভাষায় জটিল বাক্য ব্যবহারের যে ক্রমধারা শুরু থেকে শেষ অব্দি অনুবাদক বজায় রেখেছেন তা আক্ষরিক অর্থেই উপন্যাসিকাটিকে বাড়াবাড়ি রকমের জটিল করে তুলেছে এবং উপন্যাসিকাটি তার মূল হতে বেশ খানিকটা দূরে সরে এসেছে। অনুবাদকের এই ব্যাপারটি বোধগম্য হওয়া উচিৎ যে আক্ষরিকতাই যে কোন রচনাকে তার মূলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় রাখতে পারবে তা ঠিক না। প্রয়োজন বোধে রচনা যে ভাষায় অনূদিত হচ্ছে, সেই ভাষায় আক্ষরিক অনুবাদটি সাবলীল না হলে অনুবাদক নিজের মত করে বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে সরলীকরণের আশ্রয় নিতেই পারেন বলে আমার ধারণা। কবির চৌধুরী তাঁর অনুবাদের সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখলে হয়তবা অনুবাদটি আরও অনেক বেশি উপভোগ্য হতে পারত।