User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
That's very excellent!
Was this review helpful to you?
or
মেয়েমানুষ এরকম হয়, ওরকম হয়, সবরকম হয়, শুধু মনের মত হয় না। শশী একটু রাগ করিয়া বলিল, তোমার কি হয়েছে বুঝতে পারছি না বউ। কুসুম তবু হালকা সুর ভারী করে না। বলিল,কি করে বুঝবেন? মেয়েমানুষের কত কি হয়, সব বোঝা যায় না। হলেনই বা ডাক্তার! এ তো জ্বরজ্বালা নয়। না,এসব আমার মনগড়া কথা নয়। উপরের লাইনগুলা 'পুতুলনাচের ইতিকথা' উপন্যাস থেকে নেয়া। জ্যেষ্ঠভ্রাতা সুধাংশুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এক চিঠিতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু কথা লিখেছিলেন। যার সারমর্ম হলো- উনি সাহিত্যক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি নাম করার জন্য এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে স্বাস্থ্যকে অবহেলা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে দুই বছর ধরে অসুস্থতার জন্য মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যেতেন। এর ফলে উনার আক্ষেপ ছিলো এই যে, উনি যখন ইন্টারন্যাশনাল ফেইম এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন তখনই অসুস্থতা সব ওলট-পালট করে দিচ্ছে। কিন্ত তিনি থেমে যেতে চাননি। লেখায় বিঘ্ন ঘটায় বলেছিলেন, "আংশিক সাফল্য লইয়াই আমাকে জীবন কাটাইতে হইবে। এভাবে বাচিয়া থাকিবার ইচ্ছা আমার নাই"। লেখালেখি শুরুর মাত্র নয় বছরের মাথাতেই তিনি বেশ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। অনেক সমালোচক স্বীকারও করেছিলেন তিনি রবীন্দ্র- শরৎ পরবর্তী যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক। এবং যার প্রমাণ স্বরুপ উল্লেখ করা যায় 'পদ্মা নদীর মাঝি' ও 'পুতুলনাচের ইতিকথা'। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝলাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় পাঠক মনে শূন্যতা তৈরী করার প্রচন্ড শক্তিশালী একটা ক্ষমতা আছে৷ 'পুতুলনাচের ইতিকথা' পছন্দের তালিকায় যুক্ত হবার মত একটা উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ এক গ্রাম্য ডাক্তারের কাহিনী। গাওদিয়া নামক গ্রামের অর্থ বৈভবে বলশালী এক সম্পত্তি কেনাবেচা ও সুদের কারবারি গোপাল দাসের ছেলে শশী। বাবার ইচ্ছায় সে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে যায়। এই ডাক্তারি পড়তে যাওয়ার আগে শশী ছিল গেঁয়ো, কিন্তু কলকাতার বন্ধুদের সংস্পর্শে ও বইয়ের প্রভাবে তার মনের দরজা-জানালা খুলে যায়। বহির্বিশ্ব সম্পর্কে সে সচেতন হয়। কলেজের সহপাঠী কুমুদ শশীর এই নব-জন্মান্তরলাভের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। তখন থেকেই শশী জীবনকে ভাবের ছাঁচে নির্মাণ করার বাসনা লালন করতে শুরু করে। গ্রাম ও গ্রাম্যতা সম্পর্কে তার স্পষ্ট কিছু কিছু বিরাগ তৈরি হয়। ডাক্তারি পাস করে শশী পৈতৃক গ্রামের উদ্দেশে প্রত্যাবর্তন করে। তার বাবার ইচ্ছা ছেলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা-ব্যবসা বাড়ানোতে মনোযোগী হোক। বাবার ইচ্ছা আর অবস্থাচক্র মিলেমিশে শশীকে গ্রামেই থিতু করে। আধুনিক চিন্তা-ভাবনায় কর্ষিত মনকে গ্রামজীবনের সঙ্গে যথাসম্ভব মানিয়ে নিয়ে শশী গ্রামবাসীর সেবায় নিয়োজিত হয়। শশীর উদার শিক্ষিত মহানুভব সত্তায় তার আবাল্য দেখা গ্রামের প্রতি মায়া তৈরি হয়, এই বন্ধ-ডোবা জলাশয়পূর্ণ অজ-পাড়াগাঁকেই সে ব্যবহারিক জীবনে ভালোবাসতে থাকে।বস্তুতপক্ষে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র গ্রাম্যজীবনে মানুষের জীবনরহস্য চেতনার মুখ্য উপকরণ মৃত্যু ও ব্যাধি। তাই আপাতদৃষ্টে মৃত্যু, বিষাদভারগ্রস্ত নায়ক ইত্যাদির অনুষঙ্গে একে অবসাদ আখ্যান ভাবলে ভুল হবে। জীবনের রহস্য সন্ধানই আদ্যন্ত পরিব্যাপ্ত এ আখ্যানে- সে হারু ঘোষের মৃত্যু ও তার পরবর্তী ভূতোর মৃত্যু, সেনদিদির মৃত্যু, যাদব পণ্ডিতের সস্ত্রীক মৃত্যু যেমন তেমনই বিন্দু-নন্দলালের ভালোবাসাহীন, জৈবিকতা, পরাণের দিনাতিপাত, কুমুদ-মতির জীবন নদীতে ভেসে চলা এবং ডাক্তার শশীর হর্ষরহিত সেবাদাস সুলভ কালক্ষেপও।
Was this review helpful to you?
or
গ্রামীণ দৃশ্যপট মধ্যে পুতুল নাচের ইতিকথা ব্যক্তির ভণ্ডামি এবং জটিলতা ও দুর্বোধ্যতা উপস্থাপন করে।সমসাময়িক আখ্যান থেকে ভিন্ন,প্রধান চরিত্র হিসেবে সমাজকে কেঁদ্রীকরন, প্রধানত সমাজে জীবিত ব্যক্তি সম্পর্কে উদ্বেগ যারা তাদের দ্বৈধীভাব এবং মনের অন্ধকার দারা বিমূর্ত সমাজকে দূষিত করছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় -ক্রান্তি-কাল সময়ের এক প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক।গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তিনি মানুষের অবস্থার একটি তীক্ষ্ন বিশ্লেষণ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের স্পর্শকাতর রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পুতুল নাচের ইতিকথা একটি একক ব্যক্তির গল্প নয়,বরং বিভিন্ন ব্যক্তির অবস্থা বর্ণিত করা হয়েছে।সেই সাথে আদিমতা,ভণ্ডামি এবং মানব মনোবিজ্ঞান অন্ধকার উপন্যাসের একটি চরিত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে।গ্রামের একটি অহংকারপূর্ণ ভণ্ডামি এর বিষয় হল এক বৃদ্ধ দম্পতির আফিম খেয়ে আত্মঘাতী হওয়া নিজেদের সাধু ও পবিত্র প্রমান করার জন্যে।ভণ্ডামি আরো তীব্রতর হয় যখন ছলনার সাহায্যে গ্রামের এক মেয়ে্র এক সমৃদ্ধিশালী ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হয়েছিল যে তার সাথে ব্যবহার করত এক বন্দিনীর মত।যখন সম্পূর্ণরূপে তার স্বামী দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে সে তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে ক্ষতিগ্রস্ত নারী হিসাবে গ্রামবাসীরা মন্তব্য সহ্য করা স্মভব হয়না তার।এটা ছেলের বিরুদ্ধে বাবার বিরোধ.ঐতিহ্যর বিরুদ্ধে শিক্ষা,শহরের বিরুদ্ধে গ্রামে; ভাগ্যএর বিরুদ্ধে মানুষএবং নারী ও মানুষের প্রহেলিকা।কিন্তু সেই সাথে মতবিরোধ ও পোশণ করে তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষকে পুতুল বানায়।এটি একটি সবল বিদ্রোহ নয় বরং একটি সহানুভূতিশীল হালকা এবং নিরন্তর প্রতিবাদ।পুতুল নাচের ইতিকথা আখ্যান এর যথারত ন্যায্যতা প্রতিপাদন করে একটি আপাত এবং ক্ষীন স্তরে।তাই এটি সবচেয়ে বিতর্কিত, এখনো বহুল প্রশংসিত উপন্যাস। লেখকের চোখ এর এই স্বচ্ছ দৃষ্টিই একজন লেখককে মহৎ লেখকে পরিণত করে বোধহয়।এর জন্যেই এই অসাধারণ উপন্যাসটি বারবার পড়া যায়।।কখনোই পুরানো হয়না