User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পদ্মানদীর মাঝি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অনন্য উপন্যাস। পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে ফুটে উঠেছে পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষদের জীবন বৈচিত্র। পদ্মাপাড়ে অবস্থিত অজগ্রাম কেতুপুরের বাসিন্দা কুবের এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং নায়ক। আর নায়িকা হলো কপিলা, যে কুবেরের স্ত্রী মালার বোন। ময়নাদ্বীপের হোসেন মিয়াও উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান চরিত্র। আশ্চর্য এবং অদ্ভুত শৈল্পিক সৌকর্য ও পরিমিতি দিয়ে লেখক অতি যত্নসহকারে চরিত্রগুলোকে গড়ে তুলেছেন, যা পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করতে বাধ্য।
Was this review helpful to you?
or
পদ্মানদীর পাড়ের জেলেদের জীবন কাহিনী নিয়েই তৈরী এই উপন্যাসের মূল গল্প। জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ, বেচেঁ থাকার নির্মম সংগ্রাম সবকিছুই লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই উপন্যাসে। অবহেলিত, নির্যাতিত মানুষগুলোর জীবন সরলতা, জটিলতা, কুটিলতায় ভরা। সেসব কাহিনী একের এক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মাঝি কুবের। পদ্মা নদীতে মাছ ধরাই তার একমাত্র পেশা। এছাড়া সে আর কোন কাজ পারে না বা জানে না। এই পেশা তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। তার স্ত্রী মালা একজন সাধারণ বাঙালি নারী। মালা প্রতিবন্ধী। এ নিয়ে কুবেরের মাঝেমাঝে দুঃখ হয় আবার মাঝেমাঝে মালাকেই রাজরানী মনে হয়। মালা তার ছেলেদের গল্প শুনায়, ভাত মেখে খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়। এ যেন বাংলার সকল মায়েদের চরিত্রের উপস্থাপন। মালার অনেক গুণ থাকলেও একটা সময় মালার পঙ্গুত্বের কারণেই অবৈধ ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে কপিলা আর কুবেরের। কপিলা মালার বোন। মালার মতো পঙ্গু না। ছটফটে স্বভাবের মেয়েটি কুবেরকে আপন করে পেতে চায়। নিজের স্বামী, সংসার থাকার পরও সে সুখী না। কিন্তু সমাজ তাদের এই সম্পর্ক যে মেনে নেবে না। এই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হলে ছাড়তে হবে সমাজ। কপিলা বেশ রহস্যময়ী নারী চরিত্র বলেই মনে হয়। কখনো স্বামী শ্যামাদাসের সংসার সামলিয়েছে কখনো বা কুবেরকে নিয়ে দূরে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছে। এই উপন্যাসের অপ্রধান চরিত্রের মাঝে আছে যুগী। শেতলবাবুর স্ত্রী। শেতলবাবুর মতো খারাপ চরিত্র যুগীর না। শেতল লোকের টাকা মেরে দেয়, কাউকে সাহায্য করা তো দূরের ব্যাপার। আর যুগী তার উল্টো চরিত্র। গ্রামের লোকজন জানে, নিজের দুঃখের কাহিনীতে আরেকটু রঙ মাখিয়ে বললেই যুগীর মন গলানো যাবে। আছে এ উপন্যাসে আরেক রহস্যময় চরিত্র হোসেন মিয়া। ময়নাদ্বীপের মালিক। কিন্তু কোথায় সেই ময়নাদ্বীপ তা গ্রামের লোক জানে না। কে থাকে সেখানে তাও জানে না। এই উপন্যাসে আরো কিছু চরিত্র আছে। রাসু, গণেশ, গণেশের বউ উলুপী, কুবেরের পিসি, কুবেরের মেয়ে গোপী। এদের সবার সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেচেঁ থাকার সংগ্রামী কাহিনী নিয়েই লেখা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পদ্মানদীর মাঝি"।
Was this review helpful to you?
or
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন। এই উপন্যাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অসাধারণ শৈল্পিক দক্ষতায় মাঝি সমাজের মত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। এখানে লেখক পদ্মা পাড়ের মাঝিদের জীবন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত অত্যন্ত সুনিপুণ দক্ষতায় তুলে এনেছেন। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই, পদ্মা পাড়ের সেই সব ভাগ্যহত দরিদ্র মানুষের জীবন মানেই প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকা। এখানে নতুন শিশুর জন্মের সময়ও তেমন কোন উৎসব হয় না। বরং আরেকটি মুখের খাবার কীভাবে যোগানো যাবে সেই চিন্তায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখানে জীবন মানেই ক্ষুধা আর কামের তাড়নায় বেঁচে থাকা। এখানে ঘিঞ্জি-অপরিচ্ছন্ন ঘরের মধ্যে ঈশ্বরকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, ঈশ্বর থাকেন ভদ্রপল্লীতে। এইসব প্রান্তিক মানুষেরা এতটাই ভাগ্য বঞ্চিত যে তারা ঈশ্বরের করুণার স্পর্শও লাভ করতে পারে না। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কুবের। এছাড়া এই উপন্যাসের অনেক চরিত্রের ভিড়ে কুবেরের স্ত্রী মালা, কুবেরের শ্যালিকা কপিলা এবং রহস্যময় হাসান মিয়ার চরিত্রকে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে আলাদা করা যায়। মালা পঙ্গু, তাই সে কুবেরের ঘর-সংসার হয়তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চালিয়ে নিতে পারে কিন্তু তার সব কাম-বাসনা ভালো মত পূর্ণ করতে পারে না। জগতে কোন শূন্যস্থান থাকে না। তাই কুবেরের অন্তরে মালার জায়গাটা ধীরে ধীরে দখল করে নিতে থাকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসা কপিলা। দুইজন নারী-পুরুষ তাদের সম্পর্কের অনৈতিক দিক সম্পর্কে অবগত থাকার পরও তাদের জৈবিক চাহিদার কাছে পরাজিত হয়ে বার বার একে অপরের কাছে আসতে থাকে। এই কাছে আসা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে যখন কপিলা সব ছেড়ে দিয়ে কুবেরের হাত ধরে হোসেন মিয়ার বানানো ময়না দ্বীপে চলে যায়। হোসেন মিয়ার অংশটা এই উপন্যাসের মূল অংশ থেকে কিছুটা আলাদা তবে অবশ্যই সম্পর্কিত। হোসেন মিয়ার ময়না দ্বীপ প্রতিষ্ঠা করার আজন্ম বাসনার মধ্যে দিয়ে আসলে লেখক একজন মানুষের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেরই চিত্র রূপায়িত করেছেন। পরিশেষে বলতে হয়, মানিকের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটিতে প্রান্তিক মাঝি সমাজের জীবনচিত্র তুলে আনার মধ্যে দিয়ে আসলে সকল প্রান্তিক মানুষের জীবন বাস্তবতার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই উপন্যাসে প্রেম-কামের যে রূপ আমরা দেখতে পাই, তা যে কোন সময়ের যে কোন সমাজের জন্যেই একই রকম সত্য। এই কারণেই, ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি তার সময়ের সীমা ছাড়িয়ে একটি কালোত্তীর্ণ শিল্পের মর্যাদা লাভ করেছে।
Was this review helpful to you?
or
পদ্মানদীর মাঝি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর অসাধারন লেখা গুলোর একটি । পদ্মা তীরের জেলেদের জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস। এই জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে ফিয়ে লেখক নিজেও পদ্মানদীবর্তী জেলেদের গ্রামে কিছুকাল থেকেছেন। পর্যবেক্ষণ করেছেন গভীর ভাবে। পুরব বাংলার লোকজীবন এবং ভাষার সাথে তার অপরিচয় ছিলনা। বাস্তব জীবনের আলেখ্যনিরমানের সঙ্গে সঙ্গে সে আঞ্চলিক ভাষার একটি প্রমিত রুপ প্রয়োগ করেছেন জেলেদের মানুষদের মুখে। বাংলা সাহিত্যে নিম্ন শ্রেনীর মানুষের জীবনের বাস্তব আলেখ্য এর অভাব সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর ক্ষোভ ছিল।তার মনে হয়েছিল আধুনিক সাহিত্যে বস্তির চিত্র আছে। কিন্তু মানুষের জীবনচিত্র নেই। নিজের কথা সাহিত্যে সেই অভাব টা তিনি পুরন করতে চেয়েছিলেন। পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে বিধৃত জনজীবন স্থানকালের সীমায় আব্দধ ।কিন্তু তার একটি সরবকালীন সর্বস্থানিক সর্বমানবিক রুপ আছে।এখানে মানুষের কতগুলো মৌলিক প্রবৃত্তি উপস্থাপিত হয়েছে। দারিদ্র পীড়িত ও সংগ্রামশীল মানুষের চিত্র যা পাই এখানে তা হল নারী পুরুষের পারস্পারিক ভালোবাসা ও দৈহিক আকর্ষণের যে রুপ এখানে প্রতিফলিত ,তা একান্ত ভাবে পদ্মা তীরের নিজস্ব নয়।রিপুর প্রাবল্য সম্পর্কে পদ্মানদীর মাঝি এর কোনো চরিত্রই কোনো ভাবের প্রতিনিধি ন্য।তারা প্রত্যেকেই রক্তমাংসের স্বতন্ত্র ব্যক্তি। এইসব চরিত্রের মধ্যেও কুবের ,কপিলা, ও হোসেন মিয়া নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে। কাহিনির পরিনামে স্ত্রী ,কন্যা সংসার পরিত্যাগ করে কুবের তার স্ত্রীর সহদরা কপিলাকে নিয়ে হোসেন মিয়া এর ময়না দ্বীপে পলায়ন করে সত্য তবু ক্রুরতা ও লোলুপতার পর্যায়ের পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। স্বামী পরিত্যক্তা কপিলার মধ্যে নিজের আখাঙ্খা চরিতার্থ করার যা প্রবণতা আছে। সবকিছু ত্যাগ করে ভগিনীপতির সঙ্গে ময়না দ্বীপে প্রস্থানের মধ্যে দিয়ে আত্মপরটার পরিচয় আছে। তার প্রতিতুলতায় অনিশ্চিত জীবনের প্তহে অভিযাত্রার ঝুকির কথা যদি মনে না করি তাহ্লে দেখা যায় সমগ্র চিত্র টা কেবল ভোগ সর্ব স্বত্বার নয় । এই উপন্যাসে সমাজ চিত্র অঙ্কনে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন তেমনি মানবচিত্র এর গভীরে ডুব দিয়ে তার আলোকিত ও অন্ধকারময় দিক উদ্ঘাটন করে অসাধারন বৈচিত্রের সন্ধান দিয়েছেন