User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শ্রীকান্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যয়ের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলা যায়। এটিকে ভ্রমণ বা জীবনীভিত্তিক উপন্যাস ও বলা যেতে পারে। কলকাতা, কাশী, বার্মা বিভিন্ন স্থানের বিবরণ জীবনযাপন সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছে নায়ক শ্রীকান্তের নামে। উপন্যাসের মূল চরিত্র শ্রীকান্ত-রাজলক্ষী, প্রথম পর্বে ইন্দ্রনাথ অন্নদাদিদি তৎকালীন সমাজের জীবনব্যবস্থা। দ্বিতীয় পর্বে বার্মামুলক গমন অভয়া এবং শ্রীকান্তের চাকরীজীবন। তৃতীয় পর্বে ব্রজানন্দ ও সুনন্দা এবং চতুর্থ পর্বে গহর ও কমললতা। নায়ক শ্রীকান্তের ভবঘুরে জীবন, শ্রীকান্ত-রাজলক্ষীর রোমান্টিকতা এবং তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার একটি সুনিপুন চিত্রই হলো এই উপন্যাস। ©Al Amin Sarker
Was this review helpful to you?
or
অনির্দিষ্ট পথের পথিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর নিজের জীবনের ছায়া নিয়ে রচিত উপন্যাস শ্রীকান্ত! ঠিক উপন্যাস কী? না এ উপন্যাস নয়।এ ভ্রমণ কথা নয়।আত্মকথাও নয়।শ্রীকান্ত কী, তা রচনার আঙ্গিক কী, তা এখনো সাহিত্য সমালোচকদের বিতর্কের একটি মূল বিষয়। দারুণ জীবন ঘনিষ্ঠ এই উপন্যাস ১০০ তে ১০০
Was this review helpful to you?
or
'শ্রীকান্ত' উপন্যাসে লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রীকান্তের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পুরো উপন্যাসটি দেখিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ সময়েই শ্রীকান্ত তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গির থেকে অন্যদের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জীবনের বিষয়াবলি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলো খুবই শক্তিশালী। এখানে প্রধান নারী চরিত্র রাজলক্ষ্মীকে লেখক যতটা গুরুত্বপূর্ণ দিয়েছেন অন্নদাদিদি, অভয়া, কুশারীগৃহিনী, সুনন্দা, কমললতার মতো বিভিন্ন চরিত্র যারা উপন্যাসে বিভিন্ন সময়ে আগমন করেন তাদের চরিত্রগুলোও নিদারুণরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন। এর পাশাপাশি পুরুষ চরিত্রগুলোও বেশ ভালোভাবে উপস্থাপিত হয়েছে উপন্যাস জুড়ে তা ইন্দ্রদা থেকে শুরু করে রতন কিংবা আনন্দ হয়ে গহর পর্যন্ত। এই উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের নিজস্ব জীবনের সঙ্কটাপন্ন অবস্থা চরিত্রগুলোকে বাস্তবিক করে তুলেছে। পুরো উপন্যাসটি শ্রীকান্ত চরিত্রটির কাঁধে ভর করে চললেও এই উপন্যাসের গল্প শুধু শ্রীকান্ত ও তার আশেপাশের মানুষকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়নি। বরং শ্রীকান্তের জীবনের বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন অঞ্চলে থাকার অভিজ্ঞতা, সে সময়ের সামাজিক অবস্থা, আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা, ধর্ম, মানুষভেদে তাদের জীবনাদর্শন ইত্যাদি উপন্যাসে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরো উপন্যাসটি চারটি পর্বে লেখা। প্রতিটি পর্ব পাঠকদের আলাদা আলাদা ধরনের অভিজ্ঞতা দেবে। তবে সবগুলো পর্বের যোগসূত্র আছে। আর এই উপন্যাসের লেখনিতে যেসকল শব্দচয়ন ব্যবহৃত হয়েছে তা এই উপন্যাসকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_ফেব্রুয়ারি "বাংলা কথাসাহিত্যে ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শরৎচন্দ্র পাঠ করেন নি এমন শিক্ষিত বা মোটামুটি লেখাপড়া জানা বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপারটা আরও একটু পরিষ্কার করে লেখা যেতে পারে, পৃথিবীর যে কোনো বাংলাভাষীর সঙ্গে শরৎচন্দ্রের পরিচয় হয়েছে; না হয়ে উপায় নেই। এতো গল্প, এতো উপন্যাস আর এতো আশ্চর্য চরিত্র তিনি তৈরি করেছেন- সেইসব চরিত্র বা আখ্যান পাঠ না করে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে কোনো বাঙালির পক্ষে। খুব ছোটবেলায়,আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমার পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া মায়ের কাছে প্রথম দেখি একটি গল্প, ‘পণ্ডিত মশাই’। লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আরও পরে দেখেছিলাম মায়ের কাছে ‘মেজদিদি’ উপন্যাসটি। সে সময় পাঠ করেছিলাম কি না, মনে নেই। দুপুরে খাবার পর বাড়ির ও আশপাশের মহিলারা আসতেন মায়ের কাছে। মা তাদের পণ্ডিত মশাই, মেজদিদি পড়ে শোনাতেন। সেই শৈশবে দেখেছি, শরৎচন্দ্র গ্রামীণ নর-নারীর কাছে কীভাবে পৌঁছে গিয়েছিলেন..." কথাটা আমার না। আমার স্কুল শিক্ষকের। উনি আমাদের স্কুল ও কলেজ দুটোরই ক্লাস নিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা হোক কিংবা শরৎচন্দ্রের লেখার সাথে পরিচয় হোক, সবকিছুরই হাতেখড়ি তার কাছেই। বড় হয়ে স্কুল পাঠ্যে প্রথম পড়ি শরৎচন্দ্রের গল্প ‘নতুনদা’। আরও বড় ক্লাসে পাঠ করি ‘মহেশ’। ‘মহেশ’ আমার বিবেচনায় পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি গল্প। শরৎচন্দ্র যেমন আমার মা পাঠ করেছেন, তেমনি বাবাও পড়েছেন। লেখক সব বয়সের মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিজস্ব মহিমায়। লেখক পরিচিতিঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পিতার নাম, মতিলাল চট্টোপাধ্যায়। তা্ঁর জীবন বিচিত্র পথে গেছে। এনট্রাস পাশ করে এফ. এ. ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু শেষ করেনি নি। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য নানাবিধ কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। কখনো কেরানি, কখনো হিসাবরক্ষক, ধানের ব্যবসার ব্যবস্থাপক, হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক, কখনো জমিদার বাড়ির গাইয়ে-বাজিয়ে। অনেক সময় অদ্ভুতসব পরিবেশে তাঁকে থাকতে হয়েছে। যেমন কখনো নিরুদ্দেশ, কখনো ভবঘুরে, কখনো সন্ন্যাসীর দলে, কখনো ডক শ্রমিকদের হৈ হল্লায়, এমনকি পতিতালয়ের পরিবেশেও! বিচিত্র বর্নাঢ্য এক জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস সম্পর্কে লেখা আমার মত নগণ্য বইপোকার কাছে এক ধৃষ্টতাই বটে। কিন্তু তারপরও আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া ও অনুভবের ধ্যান লিখে এই অসামান্য লেখকের প্রতি সামান্য সম্মান নিবেদন করতে চাই। কারণ, ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের চরিত্রের ভেতর দিয়ে একজন বাঙালির বিশ্ববীক্ষণ করার দুর্লভ সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। আমার মনে হয়, উপন্যাসটি একশ বছর আগের বাঙালি জীবনযাত্রার আশ্চর্য এক দলিল। পৃথিবীর কনটেস্টে শ্রীকান্ত অসাধারণ, অনবদ্য এবং মহান মানবিক এক উপন্যাস। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভাষাটা বাংলা। যদিও আমরা জানি, বাংলা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা কিন্তু ইংরেজির সামনে বড় অসহায়। শরৎচন্দ্র যদি ইংরেজিভাষী কোনো লেখক হতেন আমরা এই উপন্যাস পাঠ করতাম আর তাঁর বন্দনায় মেতে থাকতাম। যা হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। শ্রীকান্ত উপন্যাসের একটি সংলাপ-‘মরার আবার জাত কি!’ এই সহজ সরল বাক্যটি মানব গোষ্ঠীর পরম আকর। ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৭ সালে। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৮ সালে, তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল একটু দেরীতে ১৯২৭ সালে এবং চতুর্থ বা শেষ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৩ সালে। আজকের সময়ের দিকে তাকিয়ে প্রায় একশ বছর আগে বিশাল আকারের উপন্যাস লিখেছিলেন শরৎচন্দ্র। সেই কালে সনাতন ধর্মের ভেতরে জাত-পাতের যে বিষাক্ত বিস্তার ছিল, সেই অন্ধকার কালে একটি উপন্যাসের চরিত্রের মুখ দিয়ে এমন সরল কিন্তু চিরকালের একটি মানবিক বাক্য প্রকাশ করাও ছিল দুঃসাহসের পরিচায়ক। চারটি খণ্ডে প্রকাশিত এই উপন্যাসে অনেক চরিত্র,উপ-চরিত্র,আখ্যান,উপ-আখ্যান তিনি তৈরি করেছেন।এর মধ্যে ইন্দ্র,পিয়ারী বা রাজলক্ষ্মী,অভয়া,গহর,কুমার সাহেব,টগর,রতন,বঙ্কু, কমললতা, ব্রজানন্দ,পুঁটি,নবীন,নন্দ মিস্ত্রি গোটা উপন্যাসে ধানখেতের আইলে আইলে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রতিটি চরিত্র বাঙালি পাঠককে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছে, এখনও সমানভাবে করছে। ভবিষ্যতেও করবে। একটা উপন্যাস, উপন্যাসের চরিত্র, আখ্যান একশ বছর পরেও পাঠককে আকর্ষণ করে, ধরে রাখে- ঔপন্যাসিকের সৃজন ক্ষমতা কতো প্রবল হলে এটা সম্ভব! কাহিনির প্রারম্ভে আমরা এক ভবঘুরে শ্রীকান্তের সাথে পরিচিত হই। চারপাশের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনধারার সাথে এই ভবঘুরের আত্মপরিক্রমা আমাকে অবলোকন করতে হয় খুব সতর্ক হয়ে। কেননা, প্রতিটি ধাপে ও বিরতিতে রয়েছে রোমাঞ্চ এবং প্রতিবেশ-প্রভাবের নিবিড় সব ব্যাপারাদি। উপাখ্যানের শুরুর দিকে শ্রীকান্তর জবানি থেকে খানিকটা উদ্ধৃত করা গেল: “কিন্তু কি করিয়া ভবঘুরে হইয়া পড়িলাম সে কথা বলিতে গেলে প্রভাত জীবনে এ নেশায় কে মাতাইয়া দিয়াছিল, তাহার একটু পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। তাহার নাম ইন্দ্রনাথ।“ ইন্দ্রনাথ খুবই সাহসী ছেলে। যে-কোনো কাজ করতে এবং নিজের ইচ্ছেপূরণের জন্য সে আগ-পাছ বিবেচনা করতো না। আর সে তার সামাজিক অপকর্মগুলোকে অনায়াসে স্বীকার করতো। একধরনের কিশোরসুলভ সরলতা শরৎচন্দ্র ইন্দ্রনাথের ভেতর স্থাপন করতে পেরেছিলেন কৌশলের সাথে। শ্রীকান্ত ক্রমে ক্রমে ইন্দ্রনাথের এই সাহস ও সরলতায় বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সিদ্ধি বা সিগারেট সেবন, মাছ চুরি, সাপের সঙ্গে সহজ বিচরণ- সবকিছু মিলিয়ে ইন্দ্রের মধ্যে কী যেন পেল শ্রীকান্ত; সে মোহের জালে সে আটকে পড়লো ধীরে ধীরে। আমরা, সমাজের আর দশজন লোক হয়তো ইন্দ্রকে সামাজিকভাবে ভদ্র বলি না; তার কার্যকলাপ হয়তো আমাদের কাছে বেয়াদবি বা যথেচ্ছাচারের মতো ঠেকে, কিন্তু লেখক শরৎবাবু এই ছেলেটিকে তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যসমেত যেন সাধারণভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। অন্তত শ্রীকান্তের জবানিতে তাঁর ওইরকম একটা ইচ্ছার আভাস আমরা লক্ষ্য করি। শ্রীকান্ত বলছে: “ছেলেটির বুকের ভিতর সাহস এবং করুণা যাহা ছিল তাহা সুদুর্লভ হইলেও অসাধারণ হয়ত নয়।” কোনো কাজ করে তা সকলের কাছ থেকে লুকোবার যে ব্যাপারাদি আমরা আমাদের মধ্যে প্রচলিত দেখি, তার বিপরীতে সরল স্বীকারোক্তির অপ্রচল ধারণাটিকে শরৎচন্দ্র ইন্দ্রনাথের চরিত্র-নির্মিতিতে শৈল্পিক রূপ প্রদান করতে চেয়েছিলেন মনে হয়। সিগারেট প্রভৃতি নেশার ব্যাপারে শ্রীকান্তের অতি সাধারণ জিজ্ঞাসা- “কেউ দেখে ফেললে?” প্রশ্নের জবাবে ইন্দ্রনাথ জানিয়েছে- “ফেললেই বা। সবাই জানে।” এই যে একটি কিশোর চরিত্রের আপন-স্বভাবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির প্রকাশ এবং জীবনকে উপভোগ করবার মানসিকতা, তা শরৎচন্দ্র ছাড়া আমাদের সাহিত্যে খুব কম মানুষই দেখাতে পেরেছেন! বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ই প্রথম নারীর মূল্য দিয়েছেন। নারীও যে মানুষ এবং রক্তমাংসের তিনিই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর তৈরী নারী চরিত্র হয়তো যুদ্ধ করেনি, হয়তো রাজনীতি করেনি কিন্তু সংসার জীবনের পরাকাষ্ঠায় তিনি নারীর ভেতরের ও বাইরের রূপ এবং রূপান্তর দারুণ মমতায়,মানবিক বোধে লালন করেছেন। একই সঙ্গে, মানুষ বা নারী কতো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তারই উপমেয় বর্ণনা লিখেছেন তিনি শ্রীকান্ত দ্বিতীয় খণ্ডের শুরুতে রাজলক্ষ্মীকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। তিনি লিখেছেন: “পিয়ারী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, সে আমি জানি। কিন্তু নেবে আমাকে সঙ্গে? বলিয়াই আমার পায়ের উপর ধীরে ধীরে আবার হাতখানা রাখিল। একদিন এই পিয়ারীই আমাকে যখন তাহার বাড়ি হইতে এক রকম জোর করিয়াই বিদায় করিয়াছিল, সেদিন তাহার অসাধারণ ধৈর্য ও মনের জোর দেখিয়া অবাক হইয়া গিয়াছিলাম। আজ তাহারই আবার এতবড় দুর্বলতা, এই করুণ কণ্ঠের মিনতি, সমস্ত এক সঙ্গে মনে করিয়া আমার বুক ফুটিতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই স্বীকার করিতে পারিলাম না। বলিলাম, তোমাকে সঙ্গে নিতে পারিনে বটে কিন্তু যখনি ডাকবে, তখনি ফিরে আসব। যেখানেই থাকি, চিরদিন আমি তোমারই থাকবো রাজলক্ষ্মী!” নারী চরিত্র চিরকাল বৈচিত্র্যময়। এই উদার আকাশ তো আবার রৌদ্রদগ্ধ মাঠ। নারীদের মন আছে, মনে প্রেম আছে, শরীরে আকাঙ্ক্ষা আছে- এ কথা প্রথম শরৎসাহিত্যেই প্রকাশ পয়। সেই প্রকাশের পথ ধরে এক সময় বাইজী পিয়ারীও কতো বিচিত্র বিভায়, ভালোবাসায়, অভিমানে, আদরে, মমতায় অসাধারণ হয়ে ওঠে পাঠকের কাছে। পিয়ারী বা রাজলক্ষ্মীকে মনে হয় আমাদের শ্বাশতকালের পরম স্নেহময় নারী- কখনো মা, কখনো প্রেমিকা, কখনো সেবিকা, কখনো আপন ধর্মে নিষ্ঠাবান একজন গৃহিণী। একজন নারীর ভেতরে অনেককে দেখার ও আবিষ্কার করার অবাক ক্ষমতা দেখে পাঠক হিসেবে, এই আধুনিককালেও অবাক না হয়ে পারি না। ‘অভয়া’ এই উপন্যাসে আরেকটি বিস্ময়কর নারী চরিত্র। প্রায় শূন্য হাতে রেঙ্গুনে এসেছে, হারানো বা হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে ফিরে পাবার বা উদ্ধারের আশায়। সঙ্গে একজন পুরুষ রোহিনী। রোহিনী অসম্ভব পছন্দ করে অভয়াকে। এই পছন্দের রশিটুকু ধারণ করে অভয়া রেঙ্গুনে। দুজনে থাকছে একই বাসায় কিন্তু ব্যবধান দুস্তর। রোহিনী হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করে অভয়াকে পাওয়ার আশায়। কিন্তু অভয়া? কঠিন শিলায় গড়া এক নারী- নিজেকে রেখেছে শামুকের মতো গুটিয়ে। খুঁজে ফিরছে স্বামীকে। এই যে মানব মানবীর পরস্পর কামনা বাসনার হিম চরিত্র, দিন যাপন, রাত পার- ভয়ানক জটিল মায়ামন্ত্রকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? আর মানব চরিত্রের সব কিছুই কে বা কবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছে? নারী পুরুষের সর্ম্পক কতো বিচিত্র এবং পরিহাসপ্রিয় হতে পারে, অভয়া, রোহিনী এবং অভয়ার স্বামী’র মধ্যে সর্ম্পকের পাঠ না করা পর্যন্ত বোঝা কঠিন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মানুষের ভেতরের বুভুক্ষ নীচুতাকে খুব যত্ন করে দেখতে পারতেন। না পারলে অভয়ার স্বামীর মতো এমন একটি চরিত্র আঁকতে পারতেন না। অভয়াকে তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেয়ার পর রোহিনীর কী হয়েছিল, সেটাও আঁকতে ভুল করেননি শরৎচন্দ্র। শ্রীকান্ত গেলেন রোহিনীকে দেখতে। কিন্তু গিয়ে কী দেখলেন? শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন: ‘সেটা মাহ ভাদরও নয়, ভরা বাদরও নয়,কিন্তু শূন্য মন্দিরের চেহারা যদি কিছু থাকে ত সেই আলো-অন্ধকারের মাঝখানে সেদিন যাহা চোখে পড়িল, সে যে এ ছাড়া আর কি, সে ত আজও জানি না। সব কয়টা ঘরেরই দরজা হা হা করিতেছে, শুধু রান্নাঘরের একটা জানালা দিয়া ধুয়া বাহির হইতেছে। ডান দিকে একটু আগাইয়া গিয়া উঁকি মারিয়া দেখিলাম, উনুন জ্বলিয়া প্রায় নিবিয়া আসিয়াছে এবং অদূরে মেঝের উপর রোহিনী বঁটি পাতিয়া একটা বেগুন দু খানা করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। আমার পদশব্দ তাহার কানে যায় নাই, কারণ কর্ণেন্দ্রিয়ের মালিক যিনি, তিনি তখন আর যেখানেই থাকুন, বেগুনের উপরে যে একাগ্র হইয়া ছিলেন না, তাহা নিঃসংশয়ে বলিতে পারি। আরও একটা কথা এমনি নিঃসংশয়ে বলিতে পারি। কিন্ত নিঃশব্দে ফিরিয়া গিয়া একে একে সেই ঘর দুটার মধ্যে যখন দাঁড়াইলাম, তখন চোখের উপর স্পষ্ট দেখিতে পাইলাম- সমস্ত সমাজ, সমস্ত ধর্মাধর্ম, সমস্ত পাপ পূণ্যের অতীত একটা উৎকট বেদনাবিদ্ধ রোদন সমস্ত ঘর ভরিয়া যেন দাঁতে দাঁত চাপিয়া স্থির হইয়া আছে।’ অভয়াকে ভালোবেসে সব ত্যাগ করে রোহিনী রেঙ্গুনে এসেছিল, অভয়াকে একান্ত করে পাবার আশায়। কিন্তু অভয়া? সে সনাতন ধর্মের নারী। জন্ম থেকে জেনে ও দেখে আসছে, নারীর স্বামী ভিন্ন কোনো গতি নেই। প্রেম শরীরের সম্পর্ক স্বামী ছাড়া,ভীষণ ভয়ানক ঘটনা। রেঙ্গুনে এসে রোহিনী চাকরি করেছে, সন্ধ্যার পর টিউশুনি করেছে, কেবলমাত্র অভয়াকে জয় করার জন্য। সেই অভয়া যখন স্বামীর সন্ধান পেয়ে স্বামীর ঘরে চলে যায়,তখন রোহিনী কী করতে পারে? তার তো বাঁধা দেওয়ার অধিকার নেই। হৃদয়ে কেবল ব্যথা জেগে ওঠে বুকের পাঁজরে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই দুঃখ, অপার ব্যথা আর হাহাকার এভাবে বর্ণনা করেছেন। আবার অন্যদিকে স্বামীর ঘরে গিয়েও অভয়া যে পাশবিক অর্ভ্যথনা পেয়েছে সেটাও মানব চরিত্রের কদাকার দিক। মানুষ চিরকাল অভেদ্য ও দুর্বোধ্য প্রাণী। নিজের স্বার্থের জন্য মানুষ পারে না, এমন কাজ আর নেই। অভয়ার স্বামী মানুষ নয়,পামর। কিন্তু পামর স্বামীর বাসায় গিয়েও অভয়া চিঠি লিখেছে শ্রীকান্তকে,কার জন্য? না, তার নিজের জন্য নয়। লিখেছে রোহিনীর জন্য। শ্রীকান্ত বলছে, ‘খুলিয়া দেখিলাম, আগাগোড়া লেখা রোহিণীর কথাতেই ভরা। যেন সবর্দাই তাহার প্রতি নজর রাখি- সে যে কতবড় দুঃখী, কত দুর্বল, কত অপটু, কত অসহায় এই একটা কথাই ছত্রে ছত্রে অক্ষরে অক্ষরে এমনি মর্মান্তিক ব্যথায় ফাটিয়া পড়িয়াছে যে, অতি বড় সরলচিত্ত লোকও এই আবেদনের তাৎপর্য বুঝিতে ভুল করিবে মনে হইল না।’ নারী ও পুরুষের পরস্পর সংযুক্তি, আবার পরস্পরবিরোধী সর্ম্পক ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসকে দিয়েছে জটিল মার্যাদা, বিশেষ আবেগ আর চিরকালীন আভিজাত্য। উপন্যাসটি সর্ম্পকে এতো কম পরিসরে বিস্তারিত লেখার সুযোগ নেই। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সফল শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, কথাশিল্পী। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে,ততদিন তিনিও থাকবেন আমাদের সঙ্গে তাঁর সৃজিত গল্প উপন্যাস ও চরিত্রের মধ্যে। তাই সবশেষে বলতে চাই, প্রিয় পাঠক, শ্রীকান্ত বাংলা সাহিত্যের একটি মাস্টারপিস। যদি এখনও বইটি না পড়ে থাকেন তো পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবেই আশা করি! ও হ্যা, আরেকটা কথা! এই বইটি সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন মূল্যের, বিভিন্ন প্রকাশনীর, বিভিন্ন সংষ্করণে। সুতরাং আপনাদের যেটি সুবিধা হয় সেটিই পড়তে পারেন। ধন্যবাদ! হ্যাপি রিডিং! এক নজরে শ্রীকান্তঃ নামঃ শ্রীকান্ত লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম প্রকাশকালঃ ১৯১৭ প্রকাশক (আমি যেই প্রকাশনীরটা পড়েছি)ঃ আফসার ব্রাদার্স মূল্যঃ ২২৫ টাকা (রকমারি) রেটিংঃ ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
চার পর্বে বিন্যস্ত শ্রীকান্ত দীর্ঘসময় পরিসরে ব্যপ্ত । এতে সংঘটিত ঘটনা ও কাহিনী বহু শাখা প্রশাখা এয় পল্লবিত ।প্রথম পর্ব ... শ্রীকান্ত এর ভবঘুরে জীবনের প্রতি আকর্ষণের আত্মভাষ্যে বিবৃত কার্যকারণ। শ্রীনাথ বহুরুপীর উপকাহিনী । ইন্দ্রনাথ , অন্নদাদিদি ,নতুনদা কাহিনী। সতীর্থ রাজপুত্রের আমন্ত্রণে শিকার এ অংশগ্রহ্ন কারী শ্রীকান্ত এর সাথে পিয়ারী বাইজী রূপিণী রাজলক্ষীর সাক্ষাৎ। এবং রাজলক্ষ্মী কর্তৃক শ্রীকান্ত পূর্ণআবিষ্কার। বাল্যপ্রণয় স্মৃতি এর পূর্ণ জাগরণ এ আপ্লুত রাজলক্ষ্মীর সম্মোহনী প্রভাবে শ্রীকান্ত মানসের টানা পোড়েন। এবং অবশেষে রাজলক্ষ্মীর হৃদয় ও ঐশ্রযে শ্রীকান্ত এর শরণ প্রাথনা এবং দার্শনিক মণ্ডিত বিচ্ছেদ শ্রীকান্ত এর প্রথম পর্বের মুখ্য বিষয়। দ্বিতীয় পর্ব ... এই পর্বের সুচনায় রয়েছে মাতৃ প্রতিশ্রুতির দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার অজুহাতে পুনরায় আর্থিক সাহায্য পারথনায় শ্রীকান্তর নিকট পাটনা গমন। এবং পরিশেষে রয়েছে সুদীর্ঘ কাল প্র স্বগ্রামে শ্রীকান্ত এর অসুস্থার খবর শুনে শ্রীকান্ত এর কাছে রাজলক্ষ্মী এর প্রত্যাবর্তন লোকচক্ষু ও লোকনিন্দা কে উপেক্ষা করে। এবং রাজলক্ষ্মী কে প্রতারনামূলক ভাবে স্মাজের কাছে নিজের স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দান।আর এর মধ্যব্রতী সময়ে আছে শ্রীকান্ত এর বার্মা গমন ও অভয়া ও রোহিণীকে নিয়ে এক কাহিনির অবতারণা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তৃতীয় পর্ব ... শ্রীকান্ত এর রাজলক্ষ্মীর সাথে পাটনা অভিমুখে স্বগ্রাম ত্যাগ এবং শ্রীকান্ত এর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ । সদ্য সুস্থ শ্রীকান্ত কে নিয়ে রাজলক্কমীর জমিদারি দেখা শুনার জন্যে পাটনা থেকে গঙ্গামাটি গ্রামে গমন ও বসবাস তৃতীয় পর্বের মুখ্য বিষয়। চতুর্থ পর্ব... চতুর্থ পর্ব ঘটনা বাহুল্যে পরিপূর্ণ। মুরারি পুরের আখড়ায় কমল লতা এর সাথে পরিচয় ও শ্রীকান্ত এর ঘনিষ্ঠতার কাহিনী। কমল লতা, শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মী নিয়ে চতুর্থ পর্ব ... এর মধ্যে প্রতি পরবেই রয়েছে কাহিনির আরো বিভিন্ন শাখা উপশাখা