User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সেলিনা হোসেন আমার প্রিয় লেখক। বাসায় তার কতো বই যে আছে, তা আমি গুনেও দেখি নাই। আর বই থাকলেই পড়া হয় বলে বেশিরভাগ উপন্যাসই আমি পড়ে ফেলেছি। সম্প্রতি তার উপন্যাসে প্রান্তিক মানুষের গল্প উঠে আসছে। যদিও তিনি সবসময়েই গল্প বা উপন্যাসে এমন চরিত্রগুলোকে তুলে আনেন যারা অশ্রুত, অবহেলিত- তা একজন নারী, একজন ধর্ষিতা, একজন যুদ্ধশিশু, একজন পাহাড়ি এমনই অসংখ্য মানুষ! ভূমি ও কুসুম ছিটমহলের পটভূমিতে লেখা উপন্যাস, সম্ভবত তাদের নিয়ে লেখা প্রথম। এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতোটা পীড়িত- সেই গল্পই পাওয়া যায় এই উপন্যাসে। উপন্যাসটি বিরাট কলেবরের, চারশ’ পৃষ্ঠাব্যাপী বিস্তারে উঠে এসেছে আরেক প্রান্তিক সমাজের উপাখ্যান। আমাদের সত্তুর পৃষ্ঠার উপন্যাসে অভ্যস্ত পাঠকদের জন্যে বিরাট কোষাগার এটি! বাংলাদেশের একেবারে উত্তর প্রান্তে ভারতীয় ভূখণ্ডবেষ্টিত ছিটমহল দহগ্রাম দহগ্রামের মানুষ স্বাধীন হয় না; তাদের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী। তারা মূল ভূখণ্ডে যেতে পারে না, নিয়ত বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। এ সবই ভূমি ও কুসুম উপন্যাসের পটভূমি। শত ঝড়ঝঞ্ঝা, শোক, ব্যাধি, মৃত্যুতেও সেখানে জীবন থেমে থাকে না। লেখকের ভাষায়, ‘একসময় ছিটের ভূমিতে ঘাস গজায়। সবুজ ঘাসের মাথায় সাদা কুসুম ফোটে। যতগুলো ঘর পুড়েছিল তার সবগুলো ওঠানো হয়। পুড়ে যাওয়া মানুষেরা মুক্ত হয়। খেতে ধান পাকে। কাটার সময় হয়। পাকা ধানের আঁটিতে উঠোন ভরে থাকে।’ গ্রামের বাসিন্দা মনজিলা ভালোবাসতেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী অরবিন্দকে; তাঁদের ভালোবাসার ফসল তানজিলা। এ অসম ভালোবাসার দায় সারা জীবন বয়ে বেড়ান মনজিলা। সম্ভবত তিনিই এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র; শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখক তাঁকে প্রতীকায়িত করেছেন একজন সাহসী ও সংগ্রামী নারী হিসেবে। একটি দারিদ্র্যপীড়িত ও সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করেও তিনি সামাজিক প্রথাগুলো ভেঙেছেন, সন্তানের পিতার পরিচয় নিয়ে কোনো অনুশোচনা করেননি। বাবা-মা তাঁকে পরিত্যক্ত করলে নমিতা বাগদি নামে এক বৃদ্ধার ডেরায় আশ্রয় নেন মনজিলা। গোলাম আলি উপন্যাসের আরেকটি ব্যতিক্রমী চরিত্র। তিনি নিজে সংসারবিবাগী, কিন্তু মিশে যান সবার সংসারে, তাদের বিপদ-আপদে সাহায্য করেন। তাঁর উদ্যোগেই দহগ্রামে প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ বিভাগের পর তাঁর কণ্ঠে আক্ষেপ শুনতে পাই, ‘আমাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল।’ তবে হাল ছাড়েন না গোলাম আলি। তিনি জানেন, ‘ছোট এই ভূখণ্ডে সবাই যদি সবার কাছে না থাকে তাহলে তো বেঁচে থাকা কঠিন হবে।’ এ উপলব্ধি থেকেই দহগ্রামে তাঁর জীবন সংগ্রাম শুরু হয় এবং তাতে যুক্ত হয় কাজেম মিয়া, খাদিজা বানু, মালতী, নিতাই, রুমালি, নূরুল, বাশার, আকালি, তাহের, সরমা নেহাল কার্তিক। আরও অনেকে। উপন্যাসের পটভূমি বিশাল। চরিত্র অনেক। যাদের কাছে রাষ্ট্রের, জীবন উপভোগের চেয়ে বেঁচে থাকা বড়। ছিটমহলের বাসিন্দারা কখনো স্বাধীনতার স্বাদ পায় না, পরাধীনতা বারবার তাদের স্বপ্ন-সাধ ভেঙে-চুরে দেয়। তবুও জীবন প্রবহমান। উপন্যাসে সেলিনা হোসেন ছিটমহলের পীড়িত-তাড়িত মানুষের জীবনসংগ্রাম তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন, ক্ষুধা যাদের নিত্যসঙ্গী, সীমান্তরক্ষীর বন্দুক যাদের প্রতিনিয়ত ধাওয়া করে। লেখকের কুশলী উপস্থাপনায় গোলাম আলি, নমিতা বাগদি, মনজিলা ও তানজিলার চরিত্র জীবন্ত হয়ে ওঠে। মনজিলার অসমাপ্ত কাজটি স্বেচ্ছায় তুলে নেন তাঁর কন্যা তানজিলা, গোলাম আলি আদর করে যাঁর নাম রেখেছিলেন বর্ণমালা। এ যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে জ্বালিয়ে রাখা দীপশিখা। সাতচল্লিশে উপন্যাসের যাত্রা শুরু, তারপর পাক-ভারত যুদ্ধ, তারপর ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ—প্রতিটি ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হয় ছিটমহলের বাসিন্দারা। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও দহগ্রামবাসীর যুদ্ধ শেষ হয় না। ছিটমহল থেকেও অনেকে যুদ্ধে যায়। হোসেন আলি, তোয়াব ফিরে আসেন। তানজিলার স্বামী আজমল আসেন না। শহীদ স্বামীর খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তানজিলা। কিন্তু যেতে পারেন না। সীমান্তরক্ষীরা বাধা দেয়। দু স্বাধীনতাও ছিটমহলের বাসিন্দাদের জীবন বদল করেনি, তাদের দুঃখ ঘোচায়ন। প্রত্যয়ী উচ্চারণ ‘আমি ছিটের স্বাধীনতা চাই। আমাদের বন্দী করে রাখতে পারবা না; স্তব্ধ হয়ে থাকে চারদিক।’