User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মুক্তির সংগ্রাম সম্পাদক: আনিসুজ্জামান সম্পাদনা পরিষদ: আবদুল মমিন চৌধুরী, সেলিনা হোসেন শিল্প সম্পাদক: বীরেন সোম প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী প্রকাশক: চন্দ্রাবতী একাডেমি দাম: ৭০০ টাকা একটি সুপাঠ্য, সুসম্পাদিত নির্ভরযোগ্য বাংলার ইতিহাসের বইয়ের খুব দরকার ছিল আমাদের। চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে প্রকাশিত, আনিসুজ্জামান সম্পাদিত মুক্তির সংগ্রাম বইটি সে প্রয়োজন মিটিয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশের ভূত আমাদের ঘাড়ে চেপে বসার পর প্রাথমিক যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, তা দিয়েই শুরু হয়েছে বই। শেষ হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। দুই মলাটের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বাংলার মাটিতে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ সংগ্রামই বিধৃত হয়েছে। লেখাগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত যে পাঠক এই ভূখণ্ডের মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রামের ধারাবাহিক একটি চিত্র তাতে পেয়ে যাবেন। ইতিহাসের পথে পা বাড়ানো নতুন পাঠক যখন জানবেন, এই ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষ একসময় রাজনীতি নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাত না, গ্রামপর্যায়ের জীবনধারায় সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না, তখন সহজেই বুঝতে পারবেন, কেন পলাশী-পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ সমাজ থেকে কোনো প্রতিবাদ উঠে আসেনি। সাধারণ জনগণ শুধু তখনই রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাত, যখন তাদের অর্থনীতি, ধর্ম আর সংস্কৃতি বিপন্ন হতো। রাজস্ব আদায়ের জন্য রাষ্ট্রই যেত জনগণের কাছে, জনগণ কখনোই রাষ্ট্রের কাছে যেত না। পলাশী যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার অনুগত রাজা রামনারায়ণ রায় কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছিলেন। কেন? কারণ, মোগল আমলের চেয়ে কোম্পানি বেশি পরিমাণ রাজস্ব দাবি করেছিল। এমনভাবেই প্রতিরোধ নানা মাত্রায় ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। পূর্ব বাংলার কয়েকটি জেলায় ১৭৬৩ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যেই সংঘটিত হয়েছিল ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ। এরপর ছিল নীল বিদ্রোহ। এল তেভাগা আন্দোলন। পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশবিরোধী গেরিলা যুদ্ধ। এভাবেই এগিয়েছে দেশের সংগ্রামী ইতিহাস। আগেই বলেছি, বইটি শেষ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এসে। তবে তার আগে বাঙালি জাতির জন্য দিকনির্দেশক ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ আলাদাভাবে এসেছে অবধারিতভাবেই। এসেছে ছয় দফা থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ। সম্পাদক আনিসুজ্জামান তাঁর মুখবন্ধেই পরিষ্কার করেছেন বইটির উদ্দেশ্য। ২৪টি পৃথক অধ্যায়ে পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। এই ঘটনাগুলো যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ ছিল, তা নয়; এটা ছড়িয়ে গিয়েছিল ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলেও। ২৪টি অধ্যায় লিখেছেন ২১ জন ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। বাংলাদেশের লেখকদের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরাও আছেন এই তালিকায়। ২৪ জন চিত্রশিল্পী তৈলচিত্র এঁকে অধ্যায়গুলোকে ঋদ্ধ করেছেন। আছে কিছু ছবির ব্যবহার। বইয়ের বিষয়বস্তু সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফরায়েজি আন্দোলন, তিতুমিরের বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, স্বদেশি আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, নানকার বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, আজাদ হিন্দ ফৌজ, তেভাগা আন্দোলন, নাচোল বিদ্রোহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলন—স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এর বেশকিছু বিষয় নিয়ে পড়াশোনাও হয়। এ বইয়ের বিশেষত্ব হলো, সেই শিক্ষাকেই বড় পরিসরে নিয়ে আসা। চন্দ্রাবতী একাডেমি বইটি প্রকাশ করে একটি তুলনাহীন কাজ করেছে। বইটি তৈরি করতে পরিশ্রমের সঙ্গে যে ভালোবাসা ও সৃজনশীলতার যূথবদ্ধতা ছিল, সেটা বোঝা যায় অনায়াসে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির বিকাশের কারণে অন্তর্জালের মাধ্যমে পৃথিবী এসেছে হাতের মুঠোয়। এখন সহজেই মুঠোফোন কিংবা ল্যাপটপের সামনে বসে চট করে জেনে নেওয়া যায় যেকোনো বিষয়ে। কিন্তু এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, মুক্তির সংগ্রাম বইটির দিকে তাকালে, পৃষ্ঠা ওল্টালে মনে হবে, বই এখনো জ্ঞানারোহণের জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। যে কারও ব্যক্তিগত পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করবে এই বই। তরুণ প্রজন্মের জন্যও বইটি হতে পারে সেরা উপহার।