User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
লেখালেখির শুরুটা ছিল স্কুল জীবন থেকেই। ডাইরি লেখার অভ্যাস ছিল ছোটবেলা থেকে। ছিল বই পড়ার নেশা। কোন রকম বাছ বিচার ছাড়া অসংখ্য বই পড়েছি। কিনেছি। সংগ্রহ করেছি। এভাবেই কেটেছে আমার শৈশব। বই ভেতর বুদ হয়ে থাকা। অজানা কে জানা। অচেনা অনুভবের অনুরণনে সময় পার। আমার লেখা প্রথম কবিতার নামটি স্পষ্ট মনে আছে। সে কবিতাটি লিখেছিলাম অদেখা আমার এক বন্ধুকে নিয়ে; শিরোনাম ছিল ‘অবয়ব’! সেটা ছিল ১৯৮৬ সালের কথা। সেই শুরু তারপর দীর্ঘসময় লিখেছি নিয়মিত। একটা সময়ে কেন জানি লেখালেখি একেবারেই বন্ধ করে দিলাম। ২০০৭ এ প্রবাস জীবনে আবারও হাতে কলম তুলে নিয়েছিলাম। সেই থেকে লিখছি। যদিও আমার লেখা কবিতার সংখ্যা খুব কম। আমি অনেক কবিতা লিখতে পারিনা। নিজের মধ্যে খুব বেশী তাড়না অনুভব না করলে আমি কিছুই লিখতে পারিনা। লিখিনা বলা চলে। প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর বই প্রকাশের ইচ্ছেটা মনের মধ্যে আকুপাকু শুরু করেছিল। সেই ভাবনা থেকে চুপিচুপি বই প্রকাশের প্রস্তুতি। নিজে নিজেই সব করেছি। কবিতা বাছাই, কম্পোজ, প্রুফ দেখা, ছাপাখানায় দৌড়াদৌড়ি, বই প্রকাশের পর বাংলা একাডেমীতে বই নিবন্ধন থেকে শুরু করে মোড়ক উন্মোচন। সব কাজ করতে গিয়ে সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। আনন্দ, আবেগ, উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা সব মিলে মিশে একাকার। বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২’র ১লা ফাল্গুন সন্ধ্যায় কথা সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় আনিসুল হক আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “জলজ ছায়ায়”র মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন। আমার পরিবার এবং লেখক সাহিত্যিক কবি বন্ধুরা ছাড়াও এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ হোসেন, প্রথম আলোর উপ-ফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন, প্রথম আলো ব্লগের সঞ্চালক নুরুন্নবী চৌধরীসহ শুভাকাংখীরা। দুরুদুরু বুকে বই খুলে কবিতাগুলো দেখা। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় যত্নে আদরে অক্ষরগুলোর উপর হাত ভুলানো। আহা নিজের প্রথম বই। সে অনুভূতি কিছুটা মেলে সন্তানের জন্মের অনুভূতির সঙ্গেই। প্রথম সন্তান জন্মের পর ঠিক এমন কাছাকাছি অনুভূতি হয়েছিল আমার। তারপর এলো অটোগ্রাফ দেবার অনুভূতি। সব মিলিয়ে এমন ভাব হয়েছিল “আমিও তবে কবি”। তারপর বেশ কয়েকটা বই প্রকাশ হয়েছে আমার। এখন সেসব মনে হলে কিছুটা হাসি পায়। বইটি উৎসর্গ করেছিলাম আমার দুই সন্তান নুশরিকা মাহদীন এবং মাহসাদ মাহদীনের জন্য। ‘এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’ প্রকাশনী হতে প্রকাশিত জলজ ছায়ার প্রচ্ছদ করেছিলেন সাইদুর রহমান চৌধুরী ভাই। মুখবদ্ধ লিখেছিলেন প্রিয় মুখ কাজী মামুন। তার কিছু অংশ তুলে দিলাম পাঠকদের জন্য! “তোমার পায়ের ছাপের ধ্রুপদী নকশায় আমি দেখি ভালবাসার কার্মিক কালিন্দী নদী ।“ হাফিজকে মনে পড়ে, নীল সাধু’র কবিতা পড়তে গেলে আরও মনে পড়ে খৈয়াম, সাদী সহ অপরাপর পারস্য’র কবিদের। প্রেম, প্রকৃতিতে নিবিড়ভাবে মগ্ন অথচ আধুনিক কবি নীল সাধু যেন বাস করছেন ভিন্ন এক সময়ে, ভিন্ন এক জগতে। শব্দের ঝনঝনানিতে কবিতা যখন মাধুর্য হারিয়ে ইট-কাঠ-পাথরের মোহে ভাঙতে চায় সবকিছু তখন বাড়ির পাশের আরশি নগরে কোমলতা খোঁজেন কবি; ‘রাজাধিরাজ’ হয়েও প্রিয়ার পায়ের কাছে ‘সাতমহলা প্রাসাদের কোনে’ কৃপা প্রার্থী হয়ে বসেন ‘খাজনা মওকুফ’ এর প্রত্যাশায়। অথচ তাঁরও আছে ‘শরীরের উষ্ণতা’র ‘অবিনাশী ক্ষুধা’, আছে আক্ষেপ- ‘বেনোজলে’ ভেসে যাওয়া ‘বিষণ্ণ খড়ের মত শূন্য জীবন’ এর, নিজে পুড়ে পুড়ে অপরকে পোড়ানোর। শব্দে বন্ধে তাঁর উপমায় গাঁয়ের মেঠো পথ হয় সিঁথির মত, জোছনা ধারণ করে শঙ্খের সাদা রঙ। রঙ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন কবি- ‘নীল মাছির ঝাঁক, ‘বেদনার লাল ঘোড়া’, দেবী দুর্গা’র শুভ্রতার মতো রঙের বিচিত্র ব্যবহার উপমার মতো করেই মুগ্ধতা বাড়ায় তাঁর কবিতার প্রতি। ‘রক্তজবার লাল’ প্রেয়সীর ‘অধরে’ মেখে দেবেন বলে ‘উপযাচক হয়ে’ তিনি অপেক্ষায় থাকেন ‘চন্দন গন্ধ মদির রাতের’, শোনান আমাদের বিশুদ্ধ প্রেমের গল্প, লিখেন প্রয়াত: বন্ধু’র প্রতি শোকবার্তা, তেমনি শোনান আমাদের ‘বেতস লতার বনে উদ্যত ফণা তুলে বিষধর গোখরো’র গল্প, ‘ত্রস্ত হলুদ ঠোটের শালিকের’ গল্প, অথচ রাজনীতি সচেতনতার বৈচিত্র্য দেখি ২০০৮ এর বাংলাদেশ নিয়ে লেখা কবিতায়। প্রেম-প্রকৃতি’র মোহ ঝেড়ে ফেলে তেমনি কবি নীল সাধু হঠাৎ উন্মোচন করেন আমাদের চরিত্র: “আমি সুশীল ভদ্রতার মুখোশে ঢেকে রাখি আজন্মের শত পাপ আমার, জুম্মার নামাজে অঝোরে কাঁদি রাত নামলে বারবনিতার স্তন খামচে ধরি!” বইটি প্রকাশের পর দিন অফিসে সকাল বেলা বেশ ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। তখন একটি ফোন পেয়েছিলাম। ওপাশ থেকে ভেসে এলো কিছুটা উত্তেজিত কণ্ঠস্বর। “ কবি নীল সাধু বলছেন?” : জ্বী – আপনি নীল সাধুর সঙ্গেই কথা বলছেন। : আরররে ভাই কি কবিতা লিখেছেন; আমি পড়ে মুগ্ধরে ভাই। আহা! দারুণ ভাই দারুণ। আমি সেদিন সেই প্রশংসাবাক্যে ব্যাপক লজ্জা পেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই চুপ করেই রইলাম। তিনি ওপাশ থেকে আরও কিছু কথা বলছিলেন। সবশেষে আমার জলজ ছায়ায় গ্রন্থিত ‘একলা’ শিরোনামের কবিতাটি ফোনেই পড়ে শুনালেন। আমি একই সঙ্গে খুশী এবং লজ্জা পাচ্ছিলাম তখনো। পরে আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর সেই ভদ্রলোককে চিনতে পেরেছিলাম, তিনি একটি পত্রিকায় কাজ করেন এবং আমার বইটি সংগ্রহ করেছিলেন অটোগ্রাফ এবং ফোন নাম্বার সহ। একদিন তার সঙ্গে কিছু খেতে হবে এই বলে সেদিন ফোন রেখেছিলেন। এটা ছিল আমার বই এর প্রথম পাঠ প্রতিক্রিয়া। আমার বইটি পড়ে প্রিয় কবি নাসির আহমেদ কাবুল ভাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন; “নীল সাধুর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জলজ ছায়ায়’ পড়লাম। অসম্ভব শক্তিমান কবি নীল সাধু প্রেম ও প্রকৃতির কবি। তার কবিতায় ওঠে এসেছে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের জীবন গাঁথাও। আমি সত্যি বিমোহিত। মুগ্ধ কবিতা পড়ে। সত্তর দশকের পর একজন শক্তিমান নবীন কবির সন্ধান পেলাম আমি। আমার পক্ষ থেকে অন্তত ব্লগের সবাইকে তার বইটি সংগ্রহ করার বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।“ আলোকিত মানুষ ব্লগার নিষাদ আমার ‘জলজ ছায়ায়’ সংগ্রহ করে সেদিন রাতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন: “ভেবেছিলাম নীল’দার অটোগ্রাফ সহ ‘জলজ ছায়ায়’ সংগ্রহ করবো, কিন্তু অল্পের জন্য উনার সাথে আজ দেখা হল না। এইমাত্র বইটা পড়ে শেষ করলাম। নীল’দা কে যদি ব্যক্তিগত ভাবে না জানতাম, না চিনতাম, ভাল না বাসতাম, তবুও তাঁর এই কবিতার বইটাকে আমার প্রিয় এর তালিকায় রেখে দিতাম। থ্যাংকস নীল’দা। ওহ, আমার চোখে সেরা কবিতাটা হচ্ছে ‘ভুলে যাও সব’, কি সহজ কথায় পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর অনুভূতির কথা লিখে ফেললেন।“