User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাস যখন পড়তে শুরু করি, তখন একটা পথে হাঁটছিলাম, আগে থেকে ধারণা করতে পারি , চেনা জানা এমন একটি পথে হাঁটছিলাম। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী এখানে রান্নাঘর, এখানে শোবার ঘর এমনই একটি মানসিকতা নিয়ে চলছিলাম, হঠাৎ এক গোপন দরজা খুঁজে যেই দরজা ঠেলেছি, দেখলাম সুড়ঙ্গ , আর সুড়ঙ্গ ধরে কিছুটা চলতেই দেখি কি এক বিশাল সাম্রাজ্যে এসে গেছি। কি যে মুগ্ধ হলাম। আমি কি কলম্বাস ? নাহ আমি, কোন লোভী ঔপনিবেশিক নই, হয়ত একা একলা হারিয়ে যাওয়া এলিস ইন ওয়ান্ডার ল্যান্ড হতে পারি। দুটো মানুষের একজন আরেকজন কে না দেখে পত্রমিতালীর গল্প শুনেছি এর আগে, এটা নিয়ে তো হঠাৎ বৃষ্টি চলচ্চিত্র হল, ফেরদৌস এর প্রেমে হাবুডুবু খেল কত শত নারী, দেখেছি অপর্ণা সেন এর, জাপানিজ ওয়াইফ চলচ্চিত্রটি, অঞ্জন দত্ত আর নিমা রহমানের চিঠি কেন্দ্রিক শ্রুতি নাটকও শুনেছি। নাহ তুলনা করছি না, শুধু পত্রমিতালী বা চিঠি চালাচালি ব্যাপার গুলো আর কোথায় কোথায় দেখেছি একটু বলছি। মালবিকা আর আভা, এই দুটি স্বত্তার প্রেমে না পড়ে থাকা যায় না। আভা আর মালবিকা যেন সত্যিকারের সোলমেটস, কোন ফেসবুকীয় এপ্স নয় যেখানে নানান ভার্চূয়াল খেলায় খুঁজে নিতে বলে, ফাইন্ড হু ইজ ইওর সোল মেটস, যেখানে ক্লিক করলে এমন একজনের ছবি আসে, যে ফ্রেন্ড লিস্টে আছে, এইটাই জানা ছিল না। চিঠি গুলোকে শুধু চিঠি সম্বোধন করতেও কেমন জানি বিরক্ত লাগছে। বিরক্ত লাগছে কারণ এই চিঠি গুলোকে অন্য কিছু বলতে হবে, অন্য নামে ডাকতে হবে। অথচ সেই সঠিক এবং পবিত্র নামটি আমি খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু চিঠি বললে হবে না, নিজের মনকে শান্ত করে, পবিত্র হয়ে এর নাম উচ্চারণ করতে হবে, তারপর স্পর্শ করতে হবে, এমন। একজন মানুষ আরেকজন মানুষ কে কাগজে কলমে যতটুকু মেলে ধরতে পারে, বাস্তবে হয়ত এর তিন ভাগের এক ভাগও পারে না। উপন্যাসের চিঠি গুলোও যেন তাই। এক একটি চিঠি যেন এক এক জন মানুষ। চিঠি নয়, জ্বলজ্যান্ত রক্তমাংসের প্রেমিক হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। মারুফ রসূল, আপনি পারেনও বটে। দূর্দান্ত সাহিত্য রসে নিমজ্জিত ছিলাম এই উপন্যাসে, সেই সাথে নিজের ভেতরে হাহাকার এবং তারপর কি এক নির্বাণ লাভ করে উপন্যাস শেষ করেছি। মন কেঁদে উঠেছে বহুবার, নিজেকে যখন আবিষ্কার করেছি কিছু জায়গায়। উপন্যাসের ভেতরে লেখকের নিজস্ব দর্শন, এবং মালবিকা আর আভার মাধ্যমে তা তুলে ধরার স্টাইল নান্দনিক লেগেছে, যেমন আভাকে লেখা চিঠিতে মালবিকার উক্তি “ বাংলা সাহিত্য আমার মায়ের মতো।“ আভা এবং মালবিকার মধ্যে কার চিঠি যে কার চেয়ে বেশি দূর্দান্ত সেটা বিচার করা যায় না। দুটি দু ধরণের মানুষ, যার যার মতো করে যেন একই কথা বলছে, অথচ যে ভাষায় বলছে, সেই ভাষা ভিন্ন, সম্পূর্ণ আলাদা। মালবিকাকে লেখা আভার চিঠির একটি অংশ তুলে দিতে ইচ্ছা করছে, “ ... তারপর আমি কাঁদি, অথচ চোখে কোন জল থাকে না। ভিজে যায় আমার হৃদয়, হৃদয়ের ড্রয়িংরুম, তার দেয়ালে টাঙানো কোন ভালোবাসার পোট্রেট, ভিজে যায় বুকের বামপাশ, মৃত গোলাপের মতো আমার কৈশোরের যৌনতাকে সে ছুঁয়ে যায়- আমি ক্লান্ত হই মালবিকা, এক সময় ক্লান্তির সীমানাও পেরিয়ে যাই; এরপর শূন্য হই, একেবারে শূন্য। নিজেকে তখন তৈরি করি নতুন কোন আরম্ভের জন্য; আমি নিজেই গড়ি নিজেকে, ঈশ্বরের মতো। আমি ঈশ্বর হয়ে উঠি প্রথমে, তারপর সৃষ্টি করি একজন আভাকে। তারপর আভা হত্যা করে ইশ্বর কে। তখন সে একা, আর কেউ নেই। আভা এসে বসে টেবিলে। সে চিঠি লিখতে শুরু করে। এ হলো তোমাকে লেখার আয়োজন। “ অপরাজিতা বা মালবিকা দুজনের মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসবো এই দ্বন্দ্বেও পড়তে হয়েছে। অপরাজিতার বক্তব্যে তার দৃঢ় ব্যাক্তিত্ব ফুটে উঠেছে বারবার। অপরাজিতা একজন হাড় মাংসের অসাধারণ এক মানুষ, আর মালবিকা যেন এক মায়াবী , স্বপ্ন-স্বর্গের কেউ। আমারও অপরাজিতার মতো বলতে ইচ্ছে হয়, “ভালোবেসে যা কিছু অর্জন করা যায়, তা সবার... আমি যা বলি- হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করি বলেই বলি। মানুষ হিসেবে অনেক দোষ হয়তো আমার রয়েছে, কিন্তু পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত কোথাও কপটতা নেই। “ দুজন মানব মানবীর প্রেমের জগতে, কি নিষ্পাপ ভালোবাসা আর নিজেকে অকপট ভাবে মেলে ধরা। সত্যি হিংসা হয় এমন প্রেমের জন্য, আর এমন প্রেমের স্রষ্টার প্রতি। চিঠিতে মালবিকা আর আভা’র মুক্তিযুদ্ধ এবং নিজের দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি প্রগার মমত্ববোধ, দায়িত্বশীলতা, ভালোবাসা পেলাম এবং ভাবলাম, অসংখ্য দায়িত্বহীন, কান্ডজ্ঞানহীন, স্বার্থপর প্রেমিক যুগলের চাইতে এই প্রেমিক যুগল যে কতটা পবিত্র আর নমস্য সেটা ব্যাক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত ভাষা সম্ভার আমার নেই। আভা এবং মালবিকার চিঠির বন্ধুত্বে, প্রেমে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি, বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি, অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে জেগে থাকা প্রাণের কথোপকথন। মুক্তিযুদ্ধ কে মনে প্রাণে পবিত্র হৃদয়ে ধারণ না করলে এমন করে একটি লাইনও লেখা সম্ভব না। এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে, অনুভব নিয়ে স্মরণ করেছি নিকোলাই অস্ত্রভস্কির অসামান্য সেই প্রতিজ্ঞা, “জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। এই জীবন সে পায় মাত্র একটি বার। তাই এমনভাবে বাঁচতে হবে, যাতে বছরের পর বছর লক্ষ্যহীন জীবন যাপন করার যন্ত্রণা ভরা অনুশোচনায় ভুগতে না হয়। যাতে বিগত জীবনের গ্লানি ভরা লজ্জার দহন সইতে না হয়। এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষ বলতে পারে, আমার সমগ্র জীবন আমার সমগ্র শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আদর্শের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে। " দেশের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা, মানুষ এবং মানবতার প্রতি একজন সাহিত্যিক বা লেখকের যে কমিটমেন্ট সেটাই খুঁজে পেয়েছি উপন্যাসটিতে। যিনি লিখতে জানেন, তিনি লিখে সেই দায়িত্ব পালন করবেন, যিনি আঁকতে জানেন তিনি এঁকে প্রকাশ করবেন, যিনি ছবি তোলেন তিনি তার ছবির মাঝে সেই কমিটমেন্ট ফুটিয়ে তুলবেন। মানুষের মুক্তির পথে এ সবই হবে সংগ্রামী হাতিয়ার। মুক্তির পথে সংগ্রামে, নিজের সকল শক্তি ব্যয় করার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার আদর্শই সবচেয়ে বড় আদর্শ। মারুফ রসূল কে ধন্যবাদ।