User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Well
Was this review helpful to you?
or
কবি,কথাশিল্পী,নাট্যকার—সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক,ষাটবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমার শ্রদ্ধা ও অভিবাদন গ্রহণ করুন।আপনি ভালো ক'রেই জানেন এক বামনপল্লীর অধিবাসী আমরা,যে-পল্লীতে অতিকায়দের আবির্ভাব দুর্লভ ও বিব্রতকর ঘটনা;এবং যদি কোনো অতিকায় আপন দুর্ভাগ্যবশত আবির্ভূত হয় মাঝারি ও নিম্নমাঝারির কীর্তনমুখর এ-পল্লীতে,তাকে আমরা নিজেদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়ে স্বস্তি পাই।এ-কাজ আমরা ক'রে আসছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।আপনার কথা ভাবলে আমি বোধ করি আপনার অতিকায় প্রতিভায় আমরা স্বস্তি পাই নি;তাই আমাদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়েছি আপনাকে;–আপনার অতিকায়তা সুখকর নয় আমাদের জন্যে;আপনি যে অতিকায় তা আমরা স্বীকার করতে চাই নি;বরং আপনাকে বহু ক্ষুদ্রকায়ের থেকে ক্ষুদ্র দেখার একটি অভ্যাস আমরা গ'ড়ে তুলে স্বস্তি পাচ্ছি।অন্ধ যেমন কখনো সম্পূর্ণ হাতি দেখে উঠতে পারে না,আমরাও সম্পূর্ণ আপনাকে,সৈয়দ শামসুল হককে,দেখতে পাই নি।অন্ধদের আচরণ, আমি বুঝি, নিরন্তর পীড়ন করেছে আপনাকে;তাই আপনি মহাভারতীয় একটি শব্দ—'সব্যসাচী'–পুনরাবিষ্কার করেছেন নিজের জন্যে;নিজেকে দেখেছেন আধুনিক অর্জুনরূপে। বামনপল্লীতে অর্জুন বেমানান;তবে আমাদের ভাগ্য দু-একটি অর্জুন আমাদের পল্লীতেও জন্মগ্রহণ করে।আমরা স্বস্তি পাই,সুখী হই,একমাত্রিকতায়;আপনি বহুমাত্রিক,এটাই আমাদের অস্বস্তির প্রধান কারণ।যিনি শুধুই কবিতা লেখেন,তাঁকে আমরা বলি কবি;তাঁর নামের সাথে কবির আগে বিশেষণের পর বিশেষণ আমরা ব্যবহার করি;যিনি শুধুই উপন্যাস লেখেন,তাঁকে বলি ঔপন্যাসিক, যিনি শুধুই নাটক লেখে, তাঁকে বলি নাট্যকার;কিন্তু যিনি ঋদ্ধ করেন সাহিত্যের নানান শাখা,যিনি হন সৈয়দ শামসুল হক,তাঁকে কী বলবো আমরা ঠিক ক'রে উঠতে পারি না।কবি বলবো,না ঔপন্যাসিক, না নাট্যকার? তাঁকে এক শব্দে আমরা ডাকতে পারি না ব'লে তাঁকে দেখি খণ্ডিত ক'রে;খণ্ডিত করতে গিয়ে তাঁকে ক্ষুদ্র ক'রে তুলি গৌণদের থেকে।আমাদের খণ্ডিতকরণপ্রবণতার এক বড়ো শিকার আপনি,সৈয়দ শামসুল হক,আপনি তা জানেন,এবং তা নিশ্চয়ই আপনাকে দশকের পর দশক পীড়িত ক'রে আসছে।আপমি নিজেই জানেন কবিতা, কথাশিল্প,নাটক মিলিয়ে আপনার উচ্চতার স্রষ্টা আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে তিনচারজনের বেশি,এবং সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও খুব বেশি মিলবে না।আমাদের খণ্ডিতকরণরোগের বড়ো এক শিকার হয়ে আছেন মহৎ বুদ্ধদেব বসু ;রবীন্দ্রনাথের পর যাঁর সমতুল্য আর কেউ নেই;তাঁর মহিমা আমরা যেমন বুঝি না,আমরা বুঝি না আপনার মহিমাও।কথাশিল্পী হিশেবেই আপনার পরিচয় বেশি,কিন্তু আপনি যে ওই এলাকায় আমাদের প্রধানতম,তা আমরা বলি না,বলতে ভয় পাই,বা আমরা বুঝে উঠতে পারি না।আমাদের বামনপল্লীতে পুরোনোর মূল্য বেশি,আর এ-পল্লীতে কোনো কথা একবার র'টে গেলে তার থেকে আমাদের আর মুক্তি ঘটে না,চিরকাল আমাদের ওই রটনা রটিয়ে যেতে হয়।কথাসাহিত্যের কথা উঠলে আজো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের কথা বলি,বিশেষ করে বলি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্-র কথা,যেনো তিনিই আমাদের শ্রেষ্ঠ,এমনকি চিরকালের শ্রেষ্ঠ,কথাশিল্পী ;আমরা এখনো ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছি।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের মধ্যে মুসলমানিত্বের পরিচয় লেগে আছে গাঢ়ভাবে,আর শিল্পকলার বিচিত্র সৌন্দর্যও দুর্লভ তাঁদের কথাসাহিত্যে।আর তাঁরা কি অনেকটা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মনে রেখেই লেখেন নি তাঁদের উপন্যাসগুলো?আপনিই তো প্রথম লিখেছেন আমাদের আপত্তিকর উপন্যাস,যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিব্রত করেছে;এবং দেখিয়ে দিয়েছে শিল্পকলা পাঠ্যপুস্তক নয়।আমাদের কথাসাহিত্যকে প্রথম বিচিত্র শিল্পসৌন্দর্যখচিত ক'রে তুলেছেন আপনি;এবং আপনার সৃষ্টিশীলতাও বিস্ময়কর। আপনি নিরীক্ষার পর নিরীক্ষা করেছেন শিল্প ও সৌন্দর্য সৃষ্টির;আপনার কথাশিল্প ও কবিতা ও নাটক নিরীক্ষার বিস্ময়কর বিশ্ব,যার কোনো তুলনা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে দেখি না।সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও কি খুব বেশি দেখি?বাঙলা কথাশিল্পে জীবন যতোটা বড়ো হয়ে আছে,ততোটা কি বড়ো হ'তে পেরেছে শিল্পকলা ও সৌন্দর্য? তারাশঙ্কর বা বিভূতিভূষণ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ে যতোটা জীবন পাই,ততোটা কি পাই সৌন্দর্য ও শিল্পকলা;এবং তাঁদের আজো আমরা যতোটা কিংবদন্তি ভাবি তাঁরা কি ততো বড়ো?তাঁরা কি বাঙলা উপন্যাসকে প্রথার মধ্যেই রেখে দেন নি,শিল্পকলার থেকে স্থূল জীবন নিয়েই বেশি মেতে থাকেন নি?আপনি বেরিয়ে এসেছিলেন ওই প্রথার ভেতর থেকে।শিল্পকলায় নিরীক্ষা মূল্যবান,কিন্তু নিরীক্ষা যদি শুধুই নিরীক্ষা হয়ে থাকে,তাহলে তার বিশেষ মূল্য থাকে না;শিল্পকলায় মূল্যবান হচ্ছে সফল নিরীক্ষা,যা আপনার কথাশিল্প থেকে কবিতা থেকে নাটক পর্যন্ত বিস্তৃত।আমি এখানে আপনার উপন্যাস বা গল্প বা কবিতা বা নাটকের ভাষ্য লিখতে চাই না,হয়তো কোনোদিনই লিখে উঠতে পারবো না,শুধু জানাতে চাই যে আপনার মহত্ত্ব আমি সব সময়ই উপলব্ধি করি।আপনার বাঙালিত্ব ও আন্তর্জাতিকত্ব যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত আপনার প্রেম ও কাম এবং জীবন।আপনার কবিতার উপাখ্যানতা যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত তার গীতিময়তা;এবং বিস্ময়কর আপনার নাটক—অলীক কুনাট্য রঙ্গের দেশে আপনি নাটককে ক'রে তুলেছেন শিল্পকলা।নাটক আমার কাছে দৃশ্যকাব্য নয়,পাঠ্যকাব্য;মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব,আর আপনার নাটকেই আমি পাই ওই পাঠ্যকাব্যত্ব—সুন্দরী নটী,সুন্দর নট,সুন্দর রঙ্গমঞ্চ বাদ দেয়ার পর যা থাকে,তাই হচ্ছে নাটক,যা পাঠ্য,যা দেখার নয়,অনুভব আর উপলব্ধির।নাটক শুধু উল্লাস আর করতালিতে সমাপ্ত নয়।আপনি যখন তৎসম থেকে চলতি যান,এবং চলতি থেকে আঞ্চলিকে,তখন যা সৃষ্টি হয়,তা হচ্ছে শিল্পকলা;এবং আপনার প্রজন্মের কেউ ওই শিল্পকলাকে আপনার মতো অনুভব করেন নি।আপনি বাঙলা গদ্যকে পরিস্রুত করেছেন,শিল্পকলা ক'রে তুলেছেন।আপনার মধ্যে আমি দেখি সৌন্দর্য আর শিল্পকলা, যা জীবনের থেকে মহৎ,এবং অবিনশ্বর। —হুমায়ুন আজাদ অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
Was this review helpful to you?
or
১৯৮২ সালে কবির শান্ত আকাশে নুরুলদীন ঘুরপাক খায় এই নাটকটির আবহমণ্ডল।কবি নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় শিরোনামে কবিতা সংকল করেছেন। বলতে গেলে,একটি জলন্ত চরিত্রকে ইতিহাসে ঠাঁই দেয়ার বহিঃপ্রকাশ এই বইটি। বাঙালী,বাংলাদেশ এই নুরুলদীনকে মনে রাখতে বাধ্য,এটি কবি তার চিন্তায় কুশীলবের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি প্রকাশ করেছেন।নাটকের বিভিন্ন আবহমণ্ডল প্রকাশ করছেন।রংপুরের নুরুলদীন সকলের প্রতি ডাক আজও দেশের প্রতিকূল সময় মনে করায়। শুরুতে বলে রাখি নুরুলদীনের আসল নাম নূরুলউদ্দীন কিন্তু রংপুরের সাধারণ মানুষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নুরুলদীন বলে ডাকা হয় পুরো নাটকে।নাটকের কাহিনী বলতে যেটা নির্দেশ করে তা হল:১১৮৯ সন।ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আক্রমণে,নির্যাতনে সবাই বন্ধী।সবাইকে নীল চাষ করতে হবে,বিনিময়ে কিছু পায় না চাষারা।উল্টো দালালরা (দেবী সিং) খাঁজনা না দিতে পারলে সব লুট করে নিয়ে যায়।ভুখা পেটে দিন কাটায় পরিবার। এসব কষ্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় নুরুলদীন। সবাই একত্র করে।লাঠি দিয়ে মোগলাপুর কুঁটি দখল করতে চায়।একপর্যায়ে ইংরেজরা অস্ত্র দেখায়,সবার কথা শুনে।কিন্তু মানে না,ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।সায় দেয় গ্রামের কিছু লোক।এভাবে তাদের চক্রান্তে নিহত হয় কৃষক নেতা কিন্তু জনগনের কাছে দেখে জান প্রতিবাদী মনোভাব নুরুলদীননের নিধর দেহ পড়ে আছে মঞ্চে। হঠাৎ তিনি উঠে পড়েন "জাগো বাহে,কোনঠে সবায়" বলে।ভিন্ন ভিন্ন কন্ঠে আবর্তিত হয় নীলকোরাস,লালকোরাস,আব্বাস মন্ডল,আম্বিয়া, টমসন,লেফটেনেন্ট, লিসবেথ,গুডল্যাড প্রমূখ।নাটকে নুরুলদীন,আম্বিয়ার নিবিড় সম্পর্ক আলোকপাত করা হয়। কোম্পানির কষ্টের কথা এবং কূটকৌশল প্রকাশিত হয়। ১০ টি দৃশ্যের মধ্যে কিছু কথা অবশ্যই বলতে হয় "স্বার্থটা উভয় পক্ষে এক হলে,মিত্র হয়ে যায় পরম শত্রু",মাঝির অন্তর যদি ভাংগি যায়,নৌকা তার টুকরা হয়া নদীজলে ভাসে" পরিশেষ বলা যায়,নুরুলদীনের সাহস আজও তিস্তা নদীতে বহমান,বাতাসে উড্ডীয়মান,কৃষকের কন্ঠে চলিত হয়।কৃষকদের দাবী আদায়ে সোচ্চার লোকটি নিজ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা মাথায় না রেখে আন্দোলন করেছেন। কবিত অত্যন্ত সুন্দর রুচিশীল ভাবে নাটকে সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
Was this review helpful to you?
or
সৈয়দ শামসুল হকের দ্বিতীয় কাব্যনাট্য ‘নূরলদীনের সারাজীবন’। যে কোনো বিবেচনায় এটি বাংলা কাব্যনাট্য ধারায় একটি অনন্য সংযোজন। এই রচনায় লেখকের পরিশ্রম ও মেধা সন্দেহাতীতভাবে লক্ষ্য করা যায়। একটি জনপদের ইতিহাস সংগঠিত করবার এই শিল্পসম্মত প্রয়াসকে কেবল উত্তর-ঔপনিবেশিক চেতনা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এদেশে কতরকম আন্দোলন যে সংগঠিত হয়েছিল তার সবটা এখনো আমাদের জানা নেই। বেঁচে থাকার সর্বশেষ গ্রাসটুকু যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে; সভ্যের বর্বর লোভ যখন দুর্দমনীয় হয়ে পড়ে তখন রুখে না দাঁড়ানোর কোনো উপায় থাকে না। আর এই প্রতিবাদকে ক্ষমতাসীন বিশেষ করে ঔপনিবেশিক শাসকরা দস্যুগিরি, বদমায়েশী উল্লেখ করে থাকে। ব্রিটিশের খাতায় লিপিবদ্ধ এমন একজন দস্যু নূরলদীনকে নিয়ে এই কাব্যনাট্যটি রচনা করেছেন সৈয়দ হক। নিম্নবর্গের ইতিহাস রচয়িতা রণজিৎ গুহ যেমন বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চেনার অন্যতম উপায় হলো সরকারি খাতায় তাদের বদমায়েশ, দস্যু ও বম্বাটে হিসেবে উল্লেখ করা। নূরলদীনও ছিলেন তেমন একজন সায়ত্ত্ব স্বাধীনতা সংগ্রামী। নূরলদীন এ নাটকের মূল চরিত্র হলেও তার জীবন বর্ণনা এ নাটকের লক্ষ্য নয়। বরং সময়ের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিভাবে একজন নূরলদীন সংগঠিত হয়, আত্মপ্রকাশ করে লেখক তা-ই দেখাতে চেয়েছেন। এবং এই নাটকের পরিসমাপ্তি করেছেন, বাঙালির চিরন্তন মানবিক আবেদনের ভেতর। এই নাটকটি অনায়াসেই লেখক প্রমিত বাংলাভাষায় রচনা করতে পারতেন; কিন্তু কাহিনীর গুরুত্ব তাতে শাহরিক রঙ্গমঞ্চের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। আমার মনে হয়, ভাষা, বিষয় এবং কাহিনীর বিস্তার বিবেচনা করলে সৈয়দ হকের অন্য কোনো রচনা নয়, না কবিতা না তার কথা সাহিত্য কেবল তার কাব্যনাট্যের অবস্থান হবে সামপ্রতিক সময়ে সর্বাধিক আলোড়িত সাহিত্যিক তত্ত্ব উত্তর-ঔপনিবেশিক তথা প্রকৃত নিম্নবর্গের সাহিত্য-চেতনার ভেতর। এই নাটকে ইতিহাসের সঙ্গে লেখক তার অপরিসীম কল্পনাশক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাঙালি জীবনে শোষক ও শোষিতের ইতিহাস রচনা করেছেন। এই নাটকের সন্ধি বিভাগ, ঘটনা নির্বাচন, প্রারম্ভ, অনুক্রম ও চূড়ান্ত পরিণতি পরম দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। এই নাটকের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে লেখক কৃষিভিত্তিক সমাজের মূল আত্মাকে সংগঠিত করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
দারুণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
১৯৮২ সালে কবির শান্ত আকাশে নুরুলদীন ঘুরপাক খায় এই নাটকটির আবহমণ্ডল।কবি নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় শিরোনামে কবিতা সংকল করেছেন। বলতে গেলে,একটি জলন্ত চরিত্রকে ইতিহাসে ঠাঁই দেয়ার বহিঃপ্রকাশ এই বইটি। বাঙালী,বাংলাদেশ এই নুরুলদীনকে মনে রাখতে বাধ্য,এটি কবি তার চিন্তায় কুশীলবের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি প্রকাশ করেছেন।নাটকের বিভিন্ন আবহমণ্ডল প্রকাশ করছেন।রংপুরের নুরুলদীন সকলের প্রতি ডাক আজও দেশের প্রতিকূল সময় মনে করায়। শুরুতে বলে রাখি নুরুলদীনের আসল নাম নূরুলউদ্দীন কিন্তু রংপুরের সাধারণ মানুষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নুরুলদীন বলে ডাকা হয় পুরো নাটকে।নাটকের কাহিনী বলতে যেটা নির্দেশ করে তা হল:১১৮৯ সন।ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আক্রমণে,নির্যাতনে সবাই বন্ধী।সবাইকে নীল চাষ করতে হবে,বিনিময়ে কিছু পায় না চাষারা।উল্টো দালালরা (দেবী সিং) খাঁজনা না দিতে পারলে সব লুট করে নিয়ে যায়।ভুখা পেটে দিন কাটায় পরিবার। এসব কষ্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় নুরুলদীন। সবাই একত্র করে।লাঠি দিয়ে মোগলাপুর কুঁটি দখল করতে চায়।একপর্যায়ে ইংরেজরা অস্ত্র দেখায়,সবার কথা শুনে।কিন্তু মানে না,ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।সায় দেয় গ্রামের কিছু লোক।এভাবে তাদের চক্রান্তে নিহত হয় কৃষক নেতা কিন্তু জনগনের কাছে দেখে জান প্রতিবাদী মনোভাব নুরুলদীননের নিধর দেহ পড়ে আছে মঞ্চে। হঠাৎ তিনি উঠে পড়েন "জাগো বাহে,কোনঠে সবায়" বলে।ভিন্ন ভিন্ন কন্ঠে আবর্তিত হয় নীলকোরাস,লালকোরাস,আব্বাস মন্ডল,আম্বিয়া, টমসন,লেফটেনেন্ট, লিসবেথ,গুডল্যাড প্রমূখ।নাটকে নুরুলদীন,আম্বিয়ার নিবিড় সম্পর্ক আলোকপাত করা হয়। কোম্পানির কষ্টের কথা এবং কূটকৌশল প্রকাশিত হয়। ১০ টি দৃশ্যের মধ্যে কিছু কথা অবশ্যই বলতে হয় "স্বার্থটা উভয় পক্ষে এক হলে,মিত্র হয়ে যায় পরম শত্রু",মাঝির অন্তর যদি ভাংগি যায়,নৌকা তার টুকরা হয়া নদীজলে ভাসে" পরিশেষ বলা যায়,নুরুলদীনের সাহস আজও তিস্তা নদীতে বহমান,বাতাসে উড্ডীয়মান,কৃষকের কন্ঠে চলিত হয়।কৃষকদের দাবী আদায়ে সোচ্চার লোকটি নিজ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা মাথায় না রেখে আন্দোলন করেছেন। কবিত অত্যন্ত সুন্দর রুচিশীল ভাবে নাটকে সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ইতিতে একটা কথা বলব,#নুরুলদীনের কথা মনে পরে যায়
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২ মাসঃ জুলাই সপ্তাহঃ ৪র্থ সপ্তাহ পর্বঃ২ (রিভিউ নং-২) বইঃ নূরলদীনের সারাজীবন লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক ধরণঃ কাব্যনাট্য প্রকাশনীঃ চারুলিপি প্রকাশন প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ মুদ্রিত মূল্যঃ ১৬৫ টাকা মাত্র পৃষ্ঠাঃ ৯৬ অনলাইন পরিবেশকঃ rokomari.com ★★★★★★★★★ "নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়; নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়; নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।" ______________________ নাট্যকারঃ সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে 'সব্যসাচী লেখক' বলা হয়। তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছর ব্যাপী বিস্তৃত। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ- নিষিদ্ধ লোবানখেলারাম, খেলে যা, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নুরুলদীনের সারাজীবন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঃ- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক,স্বাধীনতা পুরস্কার (তথ্যসূত্রঃ- উইকিপিডিয়া) ___________________ নাটক সম্পর্কে অল্পবিস্তরঃ (প্রেক্ষাপট, নূরুলদীন সম্পর্কে লেখকের অভিমত, আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ, মঞ্চায়ন) নূরলদীনের সারাজীবন সৈয়দ শামসুল হকের দ্বিতীয় কাব্যনাট্য। মাত্র চোদ্দ দৃশ্যের এ-নাটক কাব্য ও নাট্যগুণে অনন্য এক নাটক। কেউ কেউ বলেন যে, এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক। কাব্যনাটকটিতে রংপুরের একদম সাদামাটা আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও এখানে বোধগম্যতার কোনো অভাব নেই। তিনি এ-নাটকে আঞ্চলিক ভাষাকে যে কাব্যিক রূপ দিয়েছেন তা অনবদ্য। ইতিহাসের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের জীবন চেতনা এ-নাটকের আখ্যান। সৈয়দ শামসুল হক বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন যে, " নিজেকে দেয়া অনেকগুলো কাজের একটি এই যে আমাদের মাটির নায়েকের নিয়ে নাটকের মাধ্যমে কিছু করা, নুরুলদীনের সারাজীবন লিখে তার সূত্রপাত করা গেল। এই কাব্যনাট্য টি লিখে ফেলো আর পর আমার আশা এই যে এই মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এমন যে সবগুলো নায়কদের আমরা ভুলে গিয়েছি তাদের আবার আমরা সম্মুখে দেখব এবং জানব যে আমাদের গণ আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের ও অনেক বড় মহিমা সবার উপরের ১৯৭১এর সংগ্রাম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।" ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এদেশে অনেক আন্দোলনই হয়েছে তার সবটা হয়তো আমরা জানিনা। এসব আন্দোলন এবং বিদ্রোহের লক্ষ্যে রাজত্ব বা সিংহাসন লাভের আশা ছিল না। তাই কৃষক নেতা নূরুলদীন বলেছে 'মুই নবাব না হবার চাঁও। মুই সিংহাসন না চাঁও।' এক শাসক পরিবর্তন হয়ে অন্য শাসক আসে তাতে শ্রমজীবী মানুষের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কিন্তু বেঁচে থাকার সর্বশেষ আশাটুকু যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে; অর্থাৎ দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন রুখে না দাঁড়িয়ে কোনো উপায় থাকে না। ব্রিটিশবিরোধী এমনই এক কৃষক-আন্দোলনের নেতা ছিলেন নূরুলদীন। তাকে নিয়েই কাব্যনাট্যটি রচিত হয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে যেখানেই নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়েছে সেখানেই দর্শকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করেছে। ইতিহাসের বিস্তৃত পটভূমিকার স্বার্থে খোলা আকাশের নিচে নাটকটি মঞ্চায়নের কথা ভেবেছেন নাট্যকার। ______________ কাহিনী সংক্ষেপঃ নিরক্ষর একজন প্রান্তিক কৃষক নূরলদীন, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই তার। সে শুধু জানে এত অন্যায় আর সহ্য করা যাবে না, অন্যায় থেকে সবাইকে বাঁচাতে হবে। এটুকোই ছিলো তাঁর পূঁজি। তিনি রংপুর অঞ্চলের অত্যাচারিত কৃষকদের একজন প্রতিনিধি হয়ে অত্যাচারী নীলকর, জোতদার, জমিদার এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। চাষা, জালুয়া, যোগী, তেলি, চ্যাংড়া, সুতার, কামার, কুমার সহ সর্বশ্রেণীর মানুষ যেন নূরলদীনের ডাকে জেগে ওঠে। দিনাজপুর, কুচবিহার সহ রংপুরের চারদিক থেকে হাজার হাজার জনতা আসতে থাকে নূরলদীনের আশ্রয়ে; নূরলদীনের সঙ্গে যোগ দিতে। নূরলদীন হয়ে ওঠেন রংপুর অঞ্চলের কৃষক আন্দোলনের নেতা। নূরলদীনকে নবাব হিসেবে অভিহিত করতে চায়। বাল্যবন্ধু আববাসের প্রশ্নের জবাবে নূরলদীন জানায়, সে নবাব হতে চায় না। প্রকৃতপক্ষে শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে চায়। কৃষকরা সবাই নূরলদীনের কথা মত আন্দোলনে নেমে পরে। জমিদার, জোতদার, মহাজনদের স্বার্থপরতার জন্য বাংলার মানুষ ধীরে ধীরে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। জমিদারকে জমির চারগুণ পাঁচগুণ খাজনা দিতে গিয়ে দেখা যায় নিজের উৎপাদন করা খাদ্যের সবটুকু বিক্রি করে দিতে হয় তবুও ঋণ শোধ হয় না। তারপর অভাবে পড়ে খাবার না পেয়ে এক সময় জমি-বাড়ি ভিটা বন্ধক রেখে জমিদার এবং জোতদারদের নিকট থেকে টাকা ঋণ নিয়ে আসে অনেক সুদের বিনিময়ে। সেই ঋণ আর কখনো শোধ হয় না কিন্তু আসল ও সুদের পরিমাণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে এবং এক সময় মানুষ বাপ-দাদার ভিটে হারা, জমিহারা হয়ে একদম না খেয়ে ধুকে ধুকে মরে যায়। এইভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে ঋণের বোঝা তার পূর্বপুরুষ থেকে পেয়ে নিজে আবার ঋণ করে তার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যায় এভাবেই চলতে থাকে। খাজনা দিতে না পারলে ঘর-বাড়ি, ধানিজমি জ্বালিয়ে দেয়। গরু ছাগল স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি এমনকি বউ, ছেলে, মেয়েকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে বাংলার একতৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। নূরলদীনের তার বাবার কথা মনে পড়ে যায়, একদিন তার বাবা তাকে ডেকে বলে নূরলদীনের আজ মাদ্রাসায় যাওয়ার দরকার নাই আজ তার বাবার সাথে জমিতে হালচাষ করতে চলুক। নূরলদীন খুশিতে আত্মহারা- মাদ্রাসায় যেতে হবে না, শিক্ষকের বেত খেতে হবে না, মাঠে অনেক আনন্দ করা যাবে। নূরলদীন লাঙ্গল কাঁধে করে বাবার আগে আগে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠে চলে যায়। বলদের জায়গায় বাবা নিজের কাধ দিচ্ছে দেখে নূরলদীন জিজ্ঞাসা করে, বাবা তুমি কেন কাধ দিচ্ছ আমাদের বলদ কোথায়? তখন তার বাবা তাকে জানায় যে বলদ বিক্রি করে জমিদারের ঋণ শোধ করা হয়েছে কোনমতে! এখন যদি খেয়ে পড়ে বাঁচতে হয় তাহলে এভাবেই চাষ করতে হবে, নাহলে চাষাবাদ করা যাবে না। দুপুরের প্রখর রোদ সূর্য যেন গলিত আগুন ঢেলে দিচ্ছে। নূরলদীন লাঙ্গলের ফলাটা চাপ দিয়ে ধরে আছে, নূরলদীনের বাবা বলদ এর জায়গায় নিজের কাধ দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে অসুস্থতা এবং শারীরিক পরিশ্রমের জন্য তার বাবা অসুস্থ হয়ে জমির মাটিতে পড়ে যায়। একসময় চিৎকার করে ওঠে কিন্তু তার গলা দিয়ে বের হয় বলদ এর মতো হাম্বা আওয়াজ। তারপরে বাবা চিরতরে চলে গেলেন, আর কোনোদিন কথা বললেন না। নূরলদীনের আজও মনে পরে দু'চোখ ভিজে যায়। তাই কৃষকদের এই সুদের চক্র থেকে মুক্ত করতে, নীলকর, জমিদার এবং ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে এই আন্দোলন শুরু করেন। নূরলদীন নিজের মৃত্যুর জন্য ভয় পায় না! কিন্তু তাঁর সহযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে নূরলদীন তাদের আশ্বাস দিয়ে বলে, এক নূরলদীনের জন্য আন্দোলন কখনো থেমে থাকবে না, একজন নুরুলদীন চলে গেলে আর এক নূরলদীন আসবে। এই মুক্তির আন্দোলন কখনো থেমে থাকবে না। কিছুদিন যাবৎ স্বামীর খবর না পেয়ে নূরলদীনের স্ত্রী আম্বিয়া স্বামী বিরহে কাতর, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ওদিকে নূরলদীনের বাল্যবন্ধু আব্বাসকে নিজেদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করে শত্রুপক্ষ নীলকোরাস। ঐক্যবদ্ধ কৃষকরা নূরলদীনের নেতৃত্বে প্রথমে দেবী সিংহের অত্যাচার বন্ধ ও অন্যান্য দাবি পূরণের জন্য রংপুর কালেক্টরেট গুডল্যান্ডের কাছে দাবি জানান। গুডল্যান্ড দাবি না মানায় নিপীড়িত কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহ দানা বাঁধে। কৃষকনেতা নূরলদীনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, দাবি মেনে না নিলে দেবী সিংকে খাজনা দেবেন না কৃষক। শুরু হয় বিদ্রোহ। দেবী সিং ও গুডল্যান্ড সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে রংপুরে সেনা পাঠান। এই বাহিনী পথে পথে বিদ্রোহীদের বাধার সম্মুখীন হন এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। এ-বিদ্রোহ টিকে ছিল মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। নূরলদীনের বাহিনী মোগলহাটের ইংরেজ ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। মোগলহাট ও পাটগ্রামের অসম লড়াইয়ে লেফটেন্যান্ট ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বাধীন কোম্পানি বাহিনীর হাতে শহিদ হন নূরলদীন। নূরলদীন ব্রিটিশ বাহিনীর সামনে বেশিদিন টিকতে পারেননি সত্য; কিন্তু নূরলদীন যে মুক্তি, জাগরণের বীজ বপন করে গিয়েছিলেন তা ব্রিটিশ উপনিবেশের শাসন থেকে আজকের স্বাধীনতা অর্জনে প্রেরণা জুগিয়েছে। তাই নাট্যকার শিঙা, ঢাক, জনকোলাহলের মধ্যে এক বাণী প্রচার করে, "এক এ নূরলদীন যদি চলি যায়। হাজার নূরলদীন আসিবে বাংলায়। এক এ নূরলদীন যদি মিশি যায়। অযুত নূরলদীন য্যান এসে যায়। নিযুত নূরলদীন য্যান বাঁচি রয়।" ________________ পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ নূরলদীন এ নাটকের মূল চরিত্র হলেও তার জীবন বর্ণনা এ নাটকের লক্ষ্য নয়। বরং সময়ের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিভাবে একজন নূরলদীন গড়ে ওঠে এবং আত্মপ্রকাশ করে নাট্যকার তা-ই দেখাতে চেয়েছেন। এই নাটকে ইতিহাসের সঙ্গে লেখক তার অপরিসীম কল্পনাশক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে বাঙালি জীবনে শোষক ও শোষিতের ইতিহাস রচনা করেছেন। নূরলদীন একজন প্রান্তিক চাষি যার বাবা মহাজনের খাজনা পরিশোধ করতে হালের বলদ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় এবং নিজের ঘাড়ে জোয়াল নিয়ে জমি চাষ করতে যেয়ে মারা যায়। মরণকালে তার কণ্ঠেও মানুষের বদলে গরুর 'হাম্বা' ডাক শোনা যায়। ঔপনিবেশিক আমলে কৃষকদের মর্যাদা যে পশুস্তরে নামিয়ে আনা হয়; তাদের দায়িত্ব যে কেবল ঔপনিবেশিক প্রভুদের অর্থ জোগান দেয়া লেখক এ নাটকে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘যে জাতি অতীত স্মরণ করে না, সে জাতি ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে না। তাই আমাদের উচিৎ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের মোকাবেলা করা। আজও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনে নূরলদীন যেনো আমাদের আহ্বান করে বলে, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’ __আহমেদ সবুজ