User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য হুমায়ুন আহমেদ যখন আমেরিকায় গেলেন, সেই সময় দৈনিক কালেরকন্ঠের সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা শিলালিপি, যেটি প্রকাশিত হয় মূল পত্রিকার সাথে আলাদা ট্যাবলয়েড আকারে (আগে হত ম্যাগাজিন হিসেবে), সেখানে হুমায়ুন আহমেদের অন্যতম কাছের মানুষ ইমদাদুল হক মিলন ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন 'হুমায়ুন আহমেদ এবং হুমায়ুন আহমেদ'। সেই সময়টা ছিল বড় অদ্ভূত। হুমায়ুন আহমেদ পৃথিবীর অন্য প্রান্তে জীবনের সাথে পাঞ্জা লড়ছেন আর এ প্রান্তে বসে তার স্মৃতিচারণ করে যাচ্ছেন ইমদাদুল হক মিলন। আর হুমায়ুন আহমেদকে পাব কিনা জানি না। তাই তাঁর অতীতের অন্যসব সাহিত্যকর্মকে ভুলে বর্তমানে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত ইমদাদুল হক মিলনের লেখাগুলোই অনেক গুরুত্বের সাথে হাজির হচ্ছে আমাদের মত পাঠকের কাছে। কারণ ইমদাদুল হক মিলনের কলমে স্মৃতিচারণাটি শুধু স্মৃতিচারণা হিসেবেই থাকেনি, ক্রমেই এক অমর আখ্যানে পরিণত হচ্ছে যার নায়ক স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ। হুমায়ুন আহমেদের নিজের ভাষায় অনেক আত্মকথনমূলক রচনা পড়েছি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে ঠিক তাঁর মতই সাবলীল গদ্যে তাঁর খুব কাছের একজন মানুষের লেখাটা ছিল খুবই হৃদয়গ্রাহী। হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে কত অজানাই না জানতে পারছিলাম! প্রিয় লেখক কতদূরে, তবু 'হুমায়ুন আহমেদ এবং হুমায়ুন আহমেদ' নামক ধারাবাহিক রচনাটার মাধ্যমে প্রিয় লেখক বারবার হানা দিচ্ছিলেন আমাদের কল্পনার জগতে। তাই তো সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে বসে থাকতাম কবে শুক্রবার আসবে। 'শিলালিপি'র পাতায় পাব 'হুমায়ুন আহমেদ এবং হুমায়ুন আহমেদ' এর নতুন কিস্তি! একদম গল্পের মত করে হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে চমৎকার সব স্মৃতিচারণা করছিলেন ইমদাদুল হক মিলন। কিন্তু সেসব তো কেবলই অন্য একজনের দৃষ্টিতে হুমায়ুন আহমেদকে দেখার মত। এতে আনন্দ আছে ঠিকই কিন্তু সরাসরি হুমায়ুন আহমেদের সাথে তো পাঠকমন কম্যুনিকেট করতে পারছে না। এই ব্যাপারটা ইমদাদুল হক মিলনও বুঝেছিলেন। তাই কদিন বাদে দেখা গেল, নিজস্ব স্মৃতিচারণাকে তিনি সাময়িক বিরতি দিয়েছেন। এর বদলে কোন এক সপ্তাহর 'শিলালিপি'র পাতায় সরাসরি হুমায়ুন আহমেদের নিজের লেখা! সেই লেখায় দারুণ রসালো করে হুমায়ুন আহমেদ তুলে ধরলেন, কিভাবে ইমদাদুল হক মিলন ইন্টারভিউয়ের নাম করে তাঁকে জ্বালিয়ে মারছেন আর তিনিও কিভাবে নানা উপায়ে ইমদাদুল হক মিলনকে অপদস্ত করতে চেষ্টা করছেন। হুমায়ুন আহমেদের সেই লেখা পড়ে হাসি বাঁধ মানানো অসম্ভব। এখানে তো তিনি কোন চরিত্রের মাধ্যমে হিউমার বের করে আনছেন না, স্বয়ং নিজের চরিত্রের একটা রঙিন দিককে ফুটিয়ে তুলছেন। যাইহোক, পৃষ্ঠা ওলটাতেই পাওয়া গেল ইমদাদুল হক মিলনকে দেওয়া হুমায়ুন আহমেদের সেই বিখ্যাত ও ম্যারাথন 'ইন্টারভিউ'। মোট ১৩ পর্বে 'অন্যদিন' পত্রিকায় প্রকাশিৎ হয়েছিল ইন্টারভিউটা। সেটাকে আরেকটু ঝেড়ে মুছে 'শিলালিপি'র পাঠকদের সামনে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে শুরু করলেন ইমদাদুল হক মিলন। কি নেই সেই ইন্টারভিউতে! একেবারে ঘরোয়া ভঙ্গিতে দেয়া সেই ইন্টারভিউতে হেন বিষয় নাই যা নিয়ে ইমদাদুল হক মিলন হুমায়ুন আহমেদকে প্রশ্ন করেন নি। আর হুমায়ুন আহমেদও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছেন। সেই ১৩ পর্বের ইন্টারভিউতে কি ছিল তা বলতে যাব না। কেননা তালিকা করতে গেলে অনেক বিষয়ই বাদ যাবার সম্ভাবনা আছে। হুমায়ুন আহমেদের ছেলেবেলা, লেখকজীবন থেকে শুরু করে শেষ বয়সের ব্যক্তিগত টানাপোড়েন, মৃত্যুভাবনা সব টপিকেী খোলামেলা কথা বলেছেন হুমায়ুন আহমেদ। এই ১৩ পর্বের ইন্টারভিউ পড়লে খোলা ডায়রির পাতার মত করে পড়ে নেয়া যাবে হুমায়ুন আহমেদের সারা জীবনের চিন্তাচেতনা, দৃষ্টিভঙ্গিকে এবং জানা যাবে তাঁর ব্যক্তি জীবনের খুঁটিনাটি সব ইতিহাসকে। ইমদাদুল হক মিলন হুমায়ুন আহমেদের খুব কাছের মানুষ ছিলেন বলেই অন্তরঙ্গ আলাপের মাধ্যমে তিনি হুমায়ুন আহমেদের মনের সব কথা এমন অনায়াসে বের করে আনতে পেরেছিলেন। তো, 'শিলালিপি'তে প্রকাশিৎ হুমায়ুন আহমেদ এবং হুমায়ুন আহমেদ' নামক ধারাবাহিক রচনার পুরোটাউ স্থান করে নিয়েছে 'প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ' বইতে। এর বাইরের ইমদাদুল হক মিলন হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর হুমায়ুন আহমেদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক রচনা লেখেন। সেটিও স্থান পেয়েছে এই বইতে যা থেকে সহজেই জানা যাবে হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে বাংলা সাহিত্যের বড় বড় নক্ষত্ররা কেমন ধারণা পোষণ করতেন। এরপরে আছে ইমদাদুল হক মিলনকে দেয়া হুমায়ুন আহমেদের আরও একটা ইন্টারভিউ।সেই ইন্টারভিউতেও হুমায়ুন আহমেদের গভীর জীবনবোধের পরিচয় পাওয়া যাবে। আর একদম শেষে আছে 'প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ' নামের রচনাটি। এই রচনাটি প্রকাশিত হয়েছিল 'কালেরকন্ঠে' ২০১২ সালের ২১ জুলাই। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর ২ দিন বাদে। অর্থাৎ লেখাটা ইমদাদুল হক মিলন লিখেছিলেন হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পরদিনই। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার মত লেখাটিতে প্রিয়জনকে হারানোর অতি সূক্ষ্ম সব আবেগ উঠে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের লেখার মাধ্যমে। এই লেখাটি যখন পত্রিকায় পড়েছিলাম, প্রিয় লেখককে হারানোর দুঃখে খুবই আচ্ছন্ন ছিলাম। তাই লেখাটা পড়ার সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ থেকে পানি ঝরেছে। এতদিন বাদে, হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর প্রায় ২ বছর হতে চলল তবু আজ যখন আবারো লেখাটা পড়লাম, আজও আমার মনে সেই প্রথমদিন পড়ে যে অনুভূতি হয়েছিল সেটাই আবারো ফিরে এল। হুমায়ুন আহমেদ যে ইমদাদুল হক মিলনের কত কাছের ও কত ভালোবাসার মানুষ ছিলেন, এই লেখার প্রতিটি হাহাকারের মাধ্যমে সেটাই যেন বারবার প্রমাণিত হয়। সবমিলিয়ে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতিচারণা ও তাঁর ইন্টারভিউয়ের সংযোজনে 'প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ' বইটি অসাধারণত্ব লাভ করেছে। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে বই লেখার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল দেশে। প্রকাশিত হয়েছে প্রচুর বই। কিন্তু আমার মনে হয়, ইমদাদুল হক মিলন এই বইয়ের মাধ্যমে হুমায়ুন আহমেদকে যতটা তুলে ধরতে পেরেছিলেন, আর কেউ তা পারেন নাই। সেজন্য আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে রচিত স্মৃতিচারণমূলক বই সমূহের মধ্যে ইমদাদুল হক মিলনের 'প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ' বইটি অবিসংবাদিত সেরা।