Our User Product Reviews

একজন কবি শিল্পীই শুধু নন- শিল্পীরও শিল্পী। কবির সৃজনপ্রয়াস, রুচি একেবারেই নিজস্ব। কখনো কখনো বৃত্তবন্দিও। তরুণ কবির নিজস্ব কণ্ঠ নির্মাণ, ‘কবি’ হয়ে ওঠার পথটুকু বন্ধুর, সময়সাপেক্ষও। প্রবহমান সময়ে চলে নিজেকে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে পুনর্নির্মাণের কসরত। সালাম মাহমুদ ৯০ দশকের কবি হলেও তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ (প্ল্যাটফর্মে ট্রেন) প্রকাশিত হয় ২০০১ খ্রিস্টাব্দে। ২০০১ থেকে ২০১৩- এ সময়ে আত্মনির্মিতি এবং নিজস্ব কাব্যভাষা সৃষ্টিতে সচেষ্ট ছিলেন এ তরুণ। তাই কবিতার মাঠে ছিলেন অনেকটাই নীরব। মাঝখানের ১২ বছরের ব্যবধান চাট্টিখানি কথা নয়। দীর্ঘ এক যুগ পর বেরুলো তার দ্বিতীয় বই ‘মৃত্তিকার দীর্ঘশ্বাস’। নাম থেকেই বইটির বিষয়বস্তুর কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব সৃষ্টিই কোনো না কোনোভাবে মৃত্তিকা-সংলগ্ন। মানুষের বেড়ে ওঠা এবং বিনাশে মৃত্তিকা ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। সুতরাং মানবসম্প্রদায়ের দীর্ঘশ্বাসও অনেকটা মৃত্তিকারই দীর্ঘশ্বাস হয়ে ওঠে। কলম-তুলির নান্দনিক ব্যবহারে কবি অনেক কিছুই আঁকেন। সচেতন কিংবা অবচেতন মনে নিজের সময়টিকেই চিত্রিত করার প্রতি বেশি ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়। সালাম মাহমুদ এ কাব্যগ্রন্থে সমকালের চিত্রই আঁকেননি, নিজের যাপিতজীবনের বোধ, ব্যাধি এবং আকাঙ্ক্ষাও মূর্ত করেছেন। কবির কথা হয়ে ওঠে পাঠকের কণ্ঠস্বর, সমষ্টির স্লোগান। সালাম মাহমুদের কবিতার বড় গুণ- মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ককে অনায়াস দক্ষতায় উঠে আসে। সম্পর্কের রসায়ন ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে। ধোঁয়াশা, আবছায়া অনেক সম্পর্ককে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে দিনকে দিন। এ অধোগামিতা সত্যনিষ্ঠ, মানবপ্রেমী কবিকে বিক্ষত করবে- খুবই স্বাভাবিক। কবি নিজের যন্ত্রণাগুলো নীলকণ্ঠ হয়ে একাই ধারণ করেন না, ছড়িয়ে দেন পাঠকদের দিকেও। সালাম মাহমুদের কবিতার অনুরণন নিজের অজান্তেই পাঠককে তাড়িত করে, আক্রান্ত করে। প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিলে যে ট্রেনের- মৃত্তিকা মাড়িয়ে, দীর্ঘশ্বাস উড়িয়ে সে ট্রেন ছুটে যাবে আরো দূরে- কাল এবং মহাকাল ছাড়িয়ে।