Our User Product Reviews

খুবি চমৎকার একটি গল্প।

বইটার প্রথম লাইন থেকেই শুরু হয়েছে এর অনন্যতা। কাফকার মেটামরফোসিসের প্রথম লাইন যেমন এক ঐতিহাসিক লাইনে পরিণত হয়েছে ঠিক তেমনি এই লাইনটাও, ' মা মারা গেলেন আজ। হয়তোবা গতকাল ; আমি ঠিক জানি না।' প্রথম লাইন থেকেই উপন্যাসের নায়ক মারসোর উদাসীনতার পরিচয় পাওয়া আর তা চলতে থাকে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত। তাইতো মায়ের মৃত্যুতে সে কাঁদার যৌক্তিকতা সে খুঁজে পায় না, মাকে শেষবার দেখতে চায় না ; এমনকি মায়ের কফিনের পাশে রাত কাটানোর সময় সিগারেট টানে, কফি খায় এবং ঘুমিয়েও পড়ে। এছাড়া পরদিনই প্রেমিকাকে নিয়ে কমেডি সিনেমা দেখে, রাত কাটায়। তার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই চাকুরীতে, বিয়েকে সে ফালতু বিষয় মনে করে। এমনকি যখন তাকে আদালতে নেওয়া হয় তখনও সে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো কারণ খুঁজে পায় না, বিচারকে সে ভয় পায় না বরং আদালতে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পেরে গর্বিত হয়, বিচারপদ্ধতি দেখতে উন্মুখ হয়। রায়ের পর সে গির্জার ফাদারকে অপমান করে, ধর্মকেও তেমন কোনো আগ্রহের বিষয় বলে মনে হয় না তার কাছে।

১৯১৩ সালে আলজেরিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বিশ্বসাহিত‍্যের অন‍্যতম দিকপাল 'আলবেয়ার কাম‍্যু'।জীবীকার্জনের জন‍্য কখনও হয়েছেন সাংবাদিক,কখনও ফুটবল টিমের গোলরক্ষক,কখনওবা যোদ্ধা।তবে পরবর্তীকালে অন‍্যান‍্য পেশা ত‍্যাগ করে লেখাকেই মূল পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। "দি আউটসাইডার" গ্রন্থটি তাঁকে প্রথমবারের মত প্রতিভাবান লেখক হিসেবে বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।ফরাসি ভাষায় লিখিত বইটির মূল নাম "ল‍্য এত্রানজার"।তবে স্টুয়ার্ট গিলবার্ট কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদ "দি আউটসাইডার" নামটিই বেশি জনপ্রিয়তা পায়। ফরাসি সাহিত‍্যে নতুন বাস্তবতা ও দর্শনের প্রবক্তা হিসেবে 'জাঁ পল সার্ত্র' এর সঙ্গে তাঁর নামও উচ্চারিত হয়। কাহিনীর নায়ক মারসো একজন সামান‍্য চাকুরীজীবী।মধ‍্যবিত্ত শ্রেণীর এই যুবকের দিন কেটে যায় বিলাসিতা বর্জিত এক ফ্ল‍্যাটে,মাঝে মধ‍্যে মারি নামের এক বান্ধবীর সাথ আনন্দ উপভোগ করে।কিন্তু মৌলিক আবেগ অনুভূতি না থাকায় সমাজ তাকে দোষী সাব‍্যাস্ত করে। সে আসলে অনেকটা অদৃশ্য থেকে পর্যবেক্ষণ করেছে জীবন,যৌনতা আর মৃত‍্যুকে।ঘটনাচক্রে এক আরবকে খুন করে সে কারাবন্দী হয়।অত‍্যন্ত উদাসীনভাবে নে তার বিচার ও মৃত‍্যুদণ্ডের রায় পর্যবেক্ষণ করে। এই ভিন্নধর্মী চরিত্রটি সম্পর্কে 'সিরিল কনোলি' লিখেছেন,"সে (মারসো) একটি নেতিবাচক ধ্বংসাত্মক শক্তি,যে তুলে ধরে বুর্জেয়া এথিকসের অবাস্তবতা।"

চমৎকার একটা বই।