User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এক বসাতে শেষ করার মতো একটা বই । একটা ঘটনা কিভাবে মানুষের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে সেটাকেই খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই উপন্যাসে ।আর উপন্যাসটাকে আমাদের দেশের পরিস্থিতির সাথে খুব সুন্দরভাবে রিলেট করা যাবে ।
Was this review helpful to you?
or
'গুম' শব্দটি বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। চারিদিকে শুধু এই বিষয়েই কথা হচ্ছে, এই টপিক চায়ের কাপে ঝড় তুলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের আপডেটেড স্ট্যাটাসের বিষয়বস্তুতেও গুমের খুবই প্রাধান্য রয়েছে। তাই 'সেই গুমের পর' উপন্যাসটি বর্তমানের সাথে খুবই সমসাময়িক ও প্রাসঙ্গিক। তবে এই উপন্যাসটি মূলত রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১২ সালে। অবশ্য সেই সময়েও দেশে 'গুম' শব্দটি নিয়ে যথেষ্ট চর্চা হয়েছিল যার কারণ ছিল ইলিয়াস আলী নামক এক রাজনৈতিক নেতার গুম হয়ে যাওয়া। যাইহোক, এ থেকে মূলত এটাই প্রমাণিত হয় যে আনিসুল হক যেমন ইতিহাসকে উপজীব্য করে উপন্যাস রচনা করছেন তেমনি সমসাময়িক বিষয়বস্তুও তার লেখায় সমানভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। এই সমসাময়িক ঘটনাবলির উপর রচিত তাঁর উপন্যাস সমূহের আরেকটি বিশেষত্ব হল, যেহেতু আনিসুল হক একটি পত্রিকার সাথে যুক্ত এবং নিয়মিত কলাম লেখক, তাই সমসাময়িকতা একেবারে ডিটেইলে তাঁর লেখায় উঠে আসছে। 'সেই গুমের পর' খুবই আধুনিক একটা উপন্যাস। কোনোরকম ভনিতা না করে লেখক উপন্যাসের একদম প্রথম লাইন থেকেই কাহিনীতে ঢুকে পড়েছেন। কাহিনী গড়ে উঠেছে মূলত সাবিনা ইয়াসমিন নামক চরিত্রকে কেন্দ্র করে। সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী, আবুল বাশার নামক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক ঠিকাদার রাতে বাড়ি ফেরে নাই। সেই দিনটার বর্ণনা অর্থাৎ সাবিনা ইয়াসমিন সেদিন কি কি করেছেন সেগুলো যেমন শুরুতেই লেখক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছেন তেমনি সাবিনা ইয়াসমিন আর আবুল বাশারের ইতিহাস এবং বিশেষ করে সাবিনা ইয়াসমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে কাহিনীর প্রারম্ভে। এরপর ক্রমেই কাহিনী সামনের দিকে এগিয়েছে, দেখানো হয়েছে একটা লোকের রাতে বাড়ি না ফেরার ঘটনাটিকে এক সময় কিভাবে 'গুম হওয়া' নামক বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় আর কিভাবে আবুল বাশারের গাড়িটা পাওয়া যাবার পর গুম হওয়ার থিওরি পাকাপোক্ত হয়। এরপর যা যা ঘটে, সবই গুম পরবর্তি ঘটনার আখ্যান। একমাত্র পুরুষটির গুম হয়ে যাওয়ার পর স্বামী, দুই মেয়ে আর কাজের মেয়েকে নিয়ে গড়ে ওঠা সাবিনা ইয়াসমিনের পরিবারের কি দশা হয় সেটা বেশ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন লেখক। গুম পরবর্তি চৌম্বক কিছু ঘটনা হলঃ # সাংবাদিকেরা এসে 'বাইট' এর লোভে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পরিবারকে কিভাবে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে। # আবুল বাশারের গুমের কেসটিকে পুলিশ কিভাবে তদন্ত করে। # বিরোধী দল কিভাবে গুমের ঘটনার জন্যে সরকারকে দোষারোপ করে আর এটাকে ইস্যু করে আগামী নির্বাচনে জয়ের নতুন সোপান তৈরি করে। # স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ি এসে কিভাবে লোক দেখানো অভিনয় করে আর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আবুল বাশারকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দেয়। # আবুল বাশারের গুম হওয়ার ঘটনাকে উপজীব্য করে সংবাদপত্রগুলো কিরকম বাণিজ্যিক ধারার ফলো-আপ নিউজ প্রকাশ করতে থাকে। # টিভির টক শো'তে এসে অতিথিরা একটা লোকের গুমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাস্যকর জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মঞ্চ সাজায়। # আবুল বাশারের অনুপস্থিতিতে সাবিনা ইয়াসমিন আর তার পরিবার কিরকম আর্থিক সমস্যার মুখে পড়ে যে এক পর্যায়ে তারা ভাবতে শুরু করে, গুম না হয়ে আবুল বাশার যদি মারাই যেত তবে সেটা তাদের জন্য অধিক সুখকর হত। মোটামুটি গুম বা এ জাতীয় ঘটনার পর সরকার মহল, বিরোধীদল, মিডিয়া এসবের কিরকম প্রতিক্রিয়া হয় আর বাস্তবে ভিক্টিমের পরিবারের কিরকম শোচনীয় অবস্থা হয় তা সূচারু রুপে তুলে ধরেছেন আনিসুল হক। এক সময় যে সাবিনা ইয়াসমিন বিলাসিতার রাজ্যে বাস করত স্বামী সন্তানকে নিয়ে, সেই সাবিনা ইয়াসমিনকে স্বামী গুম হবার পরে আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে কিরকম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় তা বেশ চমকপ্রদ, কিন্তু সেটাই বাস্তব। ভাবগত দিক থেকে এই উপন্যাস অনেক বেশি গুরুত্ববহ। সেটি শুধু এ কারণেই নয় যে উপন্যাসের মাধ্যমে সমকালীন একটা বড় ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে, বরং যেভাবে লেখক সাবিনা ইয়াসমিন চরিত্রকে ভালো খারাপ দুইয়ের মিশেলে একটা রক্তমাংসের বাস্তব চরিত্রের আদলে গড়ে তুলেছেন, তা খুবই বিস্ময়কর। যে সাবিনা ইয়াসমিন সারাদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখে এমনকি স্বামীর গুমের পরও হিন্দি সিরিয়াল দেখা থামায়নি, সেই সাবিনা ইয়াসমিনই ভোরবেলা দুই মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে নিজেও নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ নিয়ে বসে যা থেকে আরও একবার প্রমাণ হয় অসহায় মানুষের শেষ ভরসা এক ও অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তাই। আবার প্রথম থেকে ফেসবুকে ফেক একাউন্ট খুলে পুরুষদের সাথে বিকৃত বিষয়ে চ্যাট করার মাধ্যমে সাবিনা ইয়াসমিনের চরিত্রটিকেও কিছুট বিকৃত মানসিকতার দেখানো হলেও, উপন্যাসের শেষ দিকে এসে যখন দেখা যায় নতুন এক পুরুষের কাছ থেকে সম্পর্কের লোভনীয় প্রপোজাল পাওয়ার পরও শুধু আবুল বাশারের ফিরে আসার কথাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সে লোকটাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, তখন পাঠকের দৃষ্টিতে সাবিনা ইয়াসমিন চরিত্রটি শুধু নতুন রূপেই আবির্ভূত হয় না বরং আবারো প্রমাণ হয় যে প্রতিটা বাঙালি নারীর মধ্যেই একটি করে বেহুলা বিদ্যমান! 'সেই গুমের পর' উপন্যাসের প্রশংসা থামানো মোটামুটি অসম্ভব। তবু এই লেখার এখানেই ইতি টানছি। আগ্রহী পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব, এখনই পড়ে ফেলুন অসাধারণ জীবনঘনিষ্ঠ এই উপন্যাসটি।