User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
জীবনের সংজ্ঞা বোধ করি আজ অবধি কেউ বের করতে পারেনি। যদি কেউ করেও থাকে তবে সে সংজ্ঞার সঙ্গে একমত হওয়ার মতো মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। মানুষের জীবন আসলে কতদূর যেতে পারে? এক জীবনে মানুষ কত কাজই করতে পারে? জীবনের কাছে সব ঘটনা কিংবা কাজের মূল্যই বা কতটুকু? এক জীবনে কত প্রশ্নের উত্তর মেলে? সম্ভব না। কখনও জীবনের কোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব না। জীবন অসংজ্ঞায়িত। এর কোনো সংজ্ঞা নেই। জীবনের শেষ আছে। অনেকে আবার বলবেন, জীবন শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত অধ্যায়। একবার ক্যাথরিন মাসুদকে প্রশ্ন করেছিলাম তারেক মাসুদের অসমাপ্ত কাজ নিয়ে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, মানুষের জীবনের সব কাজ অসমাপ্তই থেকে যায়। কখনও কোনো কাজের সমাপ্তি নেই। তাহলে মানুষ আসলে বেঁচে থাকে কি করে? কিংবা কি নিয়ে? এখানেও নানান মত পাওয়া যাবে। মানুষ বাঁচে স্মৃতি নিয়ে। যে স্মৃতি তাঁকে একাকিত্বের সাগরে ডুবিয়ে রাখে। প্রতিটি মানুষই আসলে নিজের কাছে একা। বড় একা। এ একাকিত্বের ফাঁদে পড়ে প্রতিটি মানুষই জীবনের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। এমনই সব অনুভূতি উঠে আসে আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগ্রন্থ ‘একলা থাকার গল্প’ বইয়ে। দশটি গল্প নিয়ে এ গ্রন্থের প্রতিটি গল্প প্রমাণ করে মানুষ একা। তবে এই একাকিত্বের ভেতর প্রতিটি চরিত্রকে আমরা দেখতে পাবো স্মৃতিকাতরতায়। চরিত্রগুলো সর্বক্ষণ স্মৃতির ভেতর ডুবে থাকতে পছন্দ করে। একটি চরিত্র হারুনকে আমরা দেখি ‘নিশীথ যামিনী ঘন অন্ধকারে’ গল্পে বড় নিঃস্ব অবস্থায়। সে কারো সঙ্গে কথা বলে না। শুধু ভাবে আর স্মৃতির সাগরে স্বেচ্ছায় মৃত্যুডুব দেয়। একা থাকতে পছন্দ করা হারুনের একাকিত্বের কারণ সন্ধানে লেখকও ডুব দেন স্মৃতিতে। হারিয়ে যাওয়া শৈশবে। যখন হারুনের কাছের বন্ধু ছিল তার দাদা। প্রিয় বন্ধু দাদার সঙ্গে শৈশবের উচ্ছলতার সময়গুলো উঠে আসে গল্পে। কিভাবে দাদার সঙ্গে খেলায় আর গল্পে মেতে ছিল হারুন। কিন্তু বয়সের ভারে দাদা হঠাৎ করেই হার মানেন মৃত্যুর কাছে। এক শীতের রাতে মৃত্যু যখন দাদার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন হারুনের বাবার সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। কিন্তু হারুনের বাবা তখনও বাসায় এসে পৌঁছাতে পারেনি। কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন। হয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা যা তিনি পুত্রের কাছে বলে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু মৃত্যু তাকে বলতে দেয়নি। দাদার এ পরিণতিকে হারুন মেনে নিতে পারেনি। লেখক উল্লেখ করে বলে দেন, “এই তাহলে মানুষের জীবন? অনেক কথা না বলেই তাকে চলে যেতে হয়! সেই কৈশোরেই এই সত্যের দেখা পেয়েছিল সে, আর বড় হতে হতে ধীরে ধীরে বুঝে ফেলেছিল, মানুষ তার বেশিরভাগ কথা বুকে নিয়েই কবরে চলে যায়।” এরপর হারুন নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কথা বলার সঙ্গী দাদা নেই। এক নীরবতার ভেতর প্রবেশ করে হারুন। জীবনে একবার প্রেমও হয়। কিন্তু প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের সঙ্গে মতের অমিল সবকিছুই হারুনকে আড়াল করে দেয়। হারুনকে কেউ বোঝে না। কেউ বুঝতে চায়ও না। হয়তো কোনো মানুষকেই কেউ কখনও বুঝতে পারে না। একমাত্র হারুনের দাদাই তাকে বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু দাদা নেই। সে সময় হারুনের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে দাদি। কিন্তু দাদি শুধু নীরবতার সঙ্গী। নীরবতা দিয়েই দাদির সঙ্গে কথা হয় হারুনের। এক হারুনের মা-বাবা, দাদি সবাই না ফেরার দেশে চলে যায়। কিন্তু সবাই চলে যাওয়ার আগেই হারুন নিজেকে একা আবিষ্কার করে। কিন্তু গল্পের শেষে হারুনকে কীটপতঙ্গের মতো আটোসাটো হতে দেখা যায়। জীবন শেষ পর্যন্ত এক কীটপতঙ্গের মতই। জীবনের কাছে পিষ্ট জীবন হয়তো কীটের চেয়েও তুচ্ছ! এ কীটের জীবন ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে। তারপর আবারও গুটিয়ে যেতে থাকে। এ কেমন জীবন? কেন এমন হবে? জোর করে কেন শৈশব, কৈশোর, যৌবন ছিনিয়ে নেওয়া হবে? এসব সময়ের মধুর স্মৃতিগুলোর কথা উঠে আসে “রিক্ত শাখা আবার কবে পূর্ণ হবে” গল্পে। আমরা দেখি লেখক খুব সুন্দর করে শৈশব কৈশোর, যৌবনের স্মৃতি উল্লেখ করেন। বিশেষ করে যৌবনের উন্মাদনায় কাটানো দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “কত স্বপ্ন ছিল! দিন বদলের স্বপ্ন, বিপ্লবের স্বপ্ন। বিপ্লব বিপ্লব বিপ্লব। ‘প্রতিবাদ প্রতিরোধ কমরেড, গড়ে তোলো গড়ে তোলো গড়ে তোলো ব্যারিকেড’ ”। যৌবন সময়টিই হলো উন্মাদনার, প্রতিবাদের, বিপ্লবের। ধীরে ধীরে মানুষের সময় এগিয়ে চলে। বিয়ে হয়, বাচ্চা হয়, স্বপ্নের বাঁক বদল হয়। লেখকের ভাষাতেই, “জীবন তো এমনই হয়, অন্তত চারপাশে তাকালে ভিন্নতর কোনো জীবনের দেখা মেলে না। সবাই যেন বিপন্ন হয়ে আছে, নিঃসঙ্গ হয়ে আছে। নাকি জীবনের ছায়াই সে দেখতে পায় সবার মধ্যে?” এমন সব প্রশ্ন পাঠকের মনের ভেতর হয়তো নতুন কোনো প্রশ্নের সম্মুখিন করে তুলবে। হয়ত বুঝে নেবে এতো আমার আপনার গল্প। অনিবার্য জীবনের অনিবার্য গল্প। হতাশা, স্বপ্ন ভঙ্গ, স্বপ্নে বদলে যাওয়া, একদিন জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া। অনিবার্য পরিণতি। তবে ‘পথ নেই, পাঁচালিও নেই’ গল্পে নিশি চরিত্রটিকে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করা যায়। অন্যচরিত্রগুলোকে স্মৃতিময় হতে দেখলেও নিশিকে আমরা দেখতে পাই স্মৃতিহীনতায়। তার কোনো স্মৃতি নেই, এই অনুভূতি তাকে কাঁদিয়ে তোলে। মানুষ স্মৃতিকাতরায় ভোগে। স্মৃতিই তাকে নিঃস্ব করে দেয়। অথচ নিশির যখন দাদির শৈশবের গল্প শোনে। দাদির ছোট ভাইয়ের গল্প শোনে। তখন নিশি নিজেকে স্মৃতিহীন হিসেবে আবিষ্কার করে। তখন সে বলে ওঠে, “… শূন্য শৈশব নিয়ে মানুষ বাঁচে কী করে? তোমার শৈশব আছে, বিস্তীর্ণ পথ আছে, পথের সঙ্গী আছে; আর তাই পথের পাঁচালিও আছে। আমার এগুলো কিছুই নেই। এই বুড়ো বয়সে তুমি তোমার নাতনির কাছে গল্প করার জন্যে কতকিছু সংগ্রহে রেখেছ; তোমার তো কোনো স্মৃতি নেই দাদু, আমি সারাজীবন কী ভাঙিয়ে খাবো? কী নিয়ে কাটাবো এই দুঃসহ জীবন?” গল্পের সমাপ্তি হয় এ বন্দনার মধ্য দিয়ে। নিশির হতাশা একটাই তার কোনো স্মৃতি নেই। প্রমাণিত হয় স্মৃতিহীন মানুষও একা, নিঃসঙ্গ। এমনই সব নিঃসঙ্গ চরিত্র উঠে আসে আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগ্রন্থে। জীবনের এতো সম্পর্কের মাঝে মানুষ নিজের কাছে একা। তাকে বোঝার তো প্রাণী সে খুঁজে পায় না। এমনই হয়তো মানুষের জীবন। তাই তো আবুল হাসান তার কবিতায় বলে গেছেন ‘মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা।’ আহমাদ মোস্তফা কামালের এ গল্পগ্রন্থে স্মৃতি, সম্পর্ক, নিজের সঙ্গে কথা বলতে দেখায় সবগুলো চরিত্রকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চরিত্রগুলো মিলিত হয় নিঃসঙ্গতায়। তারা তখন হয়ে ওঠে উন্মাদ। হারিয়ে ফেলে জগতে টিকে থাকার নূন্যতম ইচ্ছা। অথচ একদিন এ পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্যই যুদ্ধ করতে হয়েছে। প্রতিটি গল্পের প্রতিটি চরিত্র জীবনের পরিণতির কাছে আত্মসমর্পন করতে দেখা যায়। পাঠকের হৃদয়ের গভীরে সঞ্চার হবে চরিত্রের পরিণতিগুলো। নিজেকে নিয়েই অন্যজগতে চলে যাবে পাঠক। গল্পের ভাষা কিংবা বাক্য গঠন শৈলীতে আহমাদ মোস্তফা কামাল বরারবই শক্তিমান লেখক। প্রতিটি চরিত্রই অন্য ভাষায় কথা বলতে জানে, ভিন্নভাবে বিস্তার করতে জানে। তবে মাঝে মাঝে চরিত্রগুলো খেই হারিয়ে ফেলে। সেখান থেকেও উতরে যায় লেখকের নৈকট্য পেয়ে। এ গ্রন্থে দ্বিতীয় মানুষ, ঘুমায়ে পড়িব আমি, নৈশভ্রমণ, মরিবার হলো সাধ এ চারটি গল্প বিভিন্ন সময়ে গল্পগ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল। বাকি ছটি গল্প প্রথমবারের মতো গ্রন্থিত হলো।
Was this review helpful to you?
or
জীবনের সংজ্ঞা বোধ করি আজ অবধি কেউ বের করতে পারেনি। যদি কেউ করেও থাকে তবে সে সংজ্ঞার সঙ্গে একমত হওয়ার মতো মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। মানুষের জীবন আসলে কতদূর যেতে পারে? এক জীবনে মানুষ কত কাজই করতে পারে? জীবনের কাছে সব ঘটনা কিংবা কাজের মূল্যই বা কতটুকু? এক জীবনে কত প্রশ্নের উত্তর মেলে? সম্ভব না। কখনও জীবনের কোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব না। জীবন অসংজ্ঞায়িত। এর কোনো সংজ্ঞা নেই। জীবনের শেষ আছে। অনেকে আবার বলবেন, জীবন শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত অধ্যায়। একবার ক্যাথরিন মাসুদকে প্রশ্ন করেছিলাম তারেক মাসুদের অসমাপ্ত কাজ নিয়ে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, মানুষের জীবনের সব কাজ অসমাপ্তই থেকে যায়। কখনও কোনো কাজের সমাপ্তি নেই। তাহলে মানুষ আসলে বেঁচে থাকে কি করে? কিংবা কি নিয়ে? এখানেও নানান মত পাওয়া যাবে। মানুষ বাঁচে স্মৃতি নিয়ে। যে স্মৃতি তাঁকে একাকিত্বের সাগরে ডুবিয়ে রাখে। প্রতিটি মানুষই আসলে নিজের কাছে একা। বড় একা। এ একাকিত্বের ফাঁদে পড়ে প্রতিটি মানুষই জীবনের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। এমনই সব অনুভূতি উঠে আসে আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগ্রন্থ ‘একলা থাকার গল্প’ বইয়ে। দশটি গল্প নিয়ে এ গ্রন্থের প্রতিটি গল্প প্রমাণ করে মানুষ একা। তবে এই একাকিত্বের ভেতর প্রতিটি চরিত্রকে আমরা দেখতে পাবো স্মৃতিকাতরতায়। চরিত্রগুলো সর্বক্ষণ স্মৃতির ভেতর ডুবে থাকতে পছন্দ করে। একটি চরিত্র হারুনকে আমরা দেখি ‘নিশীথ যামিনী ঘন অন্ধকারে’ গল্পে বড় নিঃস্ব অবস্থায়। সে কারো সঙ্গে কথা বলে না। শুধু ভাবে আর স্মৃতির সাগরে স্বেচ্ছায় মৃত্যুডুব দেয়। একা থাকতে পছন্দ করা হারুনের একাকিত্বের কারণ সন্ধানে লেখকও ডুব দেন স্মৃতিতে। হারিয়ে যাওয়া শৈশবে। যখন হারুনের কাছের বন্ধু ছিল তার দাদা। প্রিয় বন্ধু দাদার সঙ্গে শৈশবের উচ্ছলতার সময়গুলো উঠে আসে গল্পে। কিভাবে দাদার সঙ্গে খেলায় আর গল্পে মেতে ছিল হারুন। কিন্তু বয়সের ভারে দাদা হঠাৎ করেই হার মানেন মৃত্যুর কাছে। এক শীতের রাতে মৃত্যু যখন দাদার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন হারুনের বাবার সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। কিন্তু হারুনের বাবা তখনও বাসায় এসে পৌঁছাতে পারেনি। কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন। হয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা যা তিনি পুত্রের কাছে বলে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু মৃত্যু তাকে বলতে দেয়নি। দাদার এ পরিণতিকে হারুন মেনে নিতে পারেনি। লেখক উল্লেখ করে বলে দেন, “এই তাহলে মানুষের জীবন? অনেক কথা না বলেই তাকে চলে যেতে হয়! সেই কৈশোরেই এই সত্যের দেখা পেয়েছিল সে, আর বড় হতে হতে ধীরে ধীরে বুঝে ফেলেছিল, মানুষ তার বেশিরভাগ কথা বুকে নিয়েই কবরে চলে যায়।” এরপর হারুন নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কথা বলার সঙ্গী দাদা নেই। এক নীরবতার ভেতর প্রবেশ করে হারুন। জীবনে একবার প্রেমও হয়। কিন্তু প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের সঙ্গে মতের অমিল সবকিছুই হারুনকে আড়াল করে দেয়। হারুনকে কেউ বোঝে না। কেউ বুঝতে চায়ও না। হয়তো কোনো মানুষকেই কেউ কখনও বুঝতে পারে না। একমাত্র হারুনের দাদাই তাকে বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু দাদা নেই। সে সময় হারুনের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে দাদি। কিন্তু দাদি শুধু নীরবতার সঙ্গী। নীরবতা দিয়েই দাদির সঙ্গে কথা হয় হারুনের। এক হারুনের মা-বাবা, দাদি সবাই না ফেরার দেশে চলে যায়। কিন্তু সবাই চলে যাওয়ার আগেই হারুন নিজেকে একা আবিষ্কার করে। কিন্তু গল্পের শেষে হারুনকে কীটপতঙ্গের মতো আটোসাটো হতে দেখা যায়। জীবন শেষ পর্যন্ত এক কীটপতঙ্গের মতই। জীবনের কাছে পিষ্ট জীবন হয়তো কীটের চেয়েও তুচ্ছ! এ কীটের জীবন ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে। তারপর আবারও গুটিয়ে যেতে থাকে। এ কেমন জীবন? কেন এমন হবে? জোর করে কেন শৈশব, কৈশোর, যৌবন ছিনিয়ে নেওয়া হবে? এসব সময়ের মধুর স্মৃতিগুলোর কথা উঠে আসে “রিক্ত শাখা আবার কবে পূর্ণ হবে” গল্পে। আমরা দেখি লেখক খুব সুন্দর করে শৈশব কৈশোর, যৌবনের স্মৃতি উল্লেখ করেন। বিশেষ করে যৌবনের উন্মাদনায় কাটানো দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “কত স্বপ্ন ছিল! দিন বদলের স্বপ্ন, বিপ্লবের স্বপ্ন। বিপ্লব বিপ্লব বিপ্লব। ‘প্রতিবাদ প্রতিরোধ কমরেড, গড়ে তোলো গড়ে তোলো গড়ে তোলো ব্যারিকেড’ ”। যৌবন সময়টিই হলো উন্মাদনার, প্রতিবাদের, বিপ্লবের। ধীরে ধীরে মানুষের সময় এগিয়ে চলে। বিয়ে হয়, বাচ্চা হয়, স্বপ্নের বাঁক বদল হয়। লেখকের ভাষাতেই, “জীবন তো এমনই হয়, অন্তত চারপাশে তাকালে ভিন্নতর কোনো জীবনের দেখা মেলে না। সবাই যেন বিপন্ন হয়ে আছে, নিঃসঙ্গ হয়ে আছে। নাকি জীবনের ছায়াই সে দেখতে পায় সবার মধ্যে?” এমন সব প্রশ্ন পাঠকের মনের ভেতর হয়তো নতুন কোনো প্রশ্নের সম্মুখিন করে তুলবে। হয়ত বুঝে নেবে এতো আমার আপনার গল্প। অনিবার্য জীবনের অনিবার্য গল্প। হতাশা, স্বপ্ন ভঙ্গ, স্বপ্নে বদলে যাওয়া, একদিন জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া। অনিবার্য পরিণতি। তবে ‘পথ নেই, পাঁচালিও নেই’ গল্পে নিশি চরিত্রটিকে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করা যায়। অন্যচরিত্রগুলোকে স্মৃতিময় হতে দেখলেও নিশিকে আমরা দেখতে পাই স্মৃতিহীনতায়। তার কোনো স্মৃতি নেই, এই অনুভূতি তাকে কাঁদিয়ে তোলে। মানুষ স্মৃতিকাতরায় ভোগে। স্মৃতিই তাকে নিঃস্ব করে দেয়। অথচ নিশির যখন দাদির শৈশবের গল্প শোনে। দাদির ছোট ভাইয়ের গল্প শোনে। তখন নিশি নিজেকে স্মৃতিহীন হিসেবে আবিষ্কার করে। তখন সে বলে ওঠে, “… শূন্য শৈশব নিয়ে মানুষ বাঁচে কী করে? তোমার শৈশব আছে, বিস্তীর্ণ পথ আছে, পথের সঙ্গী আছে; আর তাই পথের পাঁচালিও আছে। আমার এগুলো কিছুই নেই। এই বুড়ো বয়সে তুমি তোমার নাতনির কাছে গল্প করার জন্যে কতকিছু সংগ্রহে রেখেছ; তোমার তো কোনো স্মৃতি নেই দাদু, আমি সারাজীবন কী ভাঙিয়ে খাবো? কী নিয়ে কাটাবো এই দুঃসহ জীবন?” গল্পের সমাপ্তি হয় এ বন্দনার মধ্য দিয়ে। নিশির হতাশা একটাই তার কোনো স্মৃতি নেই। প্রমাণিত হয় স্মৃতিহীন মানুষও একা, নিঃসঙ্গ। এমনই সব নিঃসঙ্গ চরিত্র উঠে আসে আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগ্রন্থে। জীবনের এতো সম্পর্কের মাঝে মানুষ নিজের কাছে একা। তাকে বোঝার তো প্রাণী সে খুঁজে পায় না। এমনই হয়তো মানুষের জীবন। তাই তো আবুল হাসান তার কবিতায় বলে গেছেন ‘মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা।’ আহমাদ মোস্তফা কামালের এ গল্পগ্রন্থে স্মৃতি, সম্পর্ক, নিজের সঙ্গে কথা বলতে দেখায় সবগুলো চরিত্রকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চরিত্রগুলো মিলিত হয় নিঃসঙ্গতায়। তারা তখন হয়ে ওঠে উন্মাদ। হারিয়ে ফেলে জগতে টিকে থাকার নূন্যতম ইচ্ছা। অথচ একদিন এ পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্যই যুদ্ধ করতে হয়েছে। প্রতিটি গল্পের প্রতিটি চরিত্র জীবনের পরিণতির কাছে আত্মসমর্পন করতে দেখা যায়। পাঠকের হৃদয়ের গভীরে সঞ্চার হবে চরিত্রের পরিণতিগুলো। নিজেকে নিয়েই অন্যজগতে চলে যাবে পাঠক। গল্পের ভাষা কিংবা বাক্য গঠন শৈলীতে আহমাদ মোস্তফা কামাল বরারবই শক্তিমান লেখক। প্রতিটি চরিত্রই অন্য ভাষায় কথা বলতে জানে, ভিন্নভাবে বিস্তার করতে জানে। তবে মাঝে মাঝে চরিত্রগুলো খেই হারিয়ে ফেলে। সেখান থেকেও উতরে যায় লেখকের নৈকট্য পেয়ে। এ গ্রন্থে দ্বিতীয় মানুষ, ঘুমায়ে পড়িব আমি, নৈশভ্রমণ, মরিবার হলো সাধ এ চারটি গল্প বিভিন্ন সময়ে গল্পগ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল। বাকি ছটি গল্প প্রথমবারের মতো গ্রন্থিত হলো। ভিডিও রিভিউ: div id="fb-root" /div script (function(d, s, id) { var js, fjs = d.getElementsByTagName(s)[0]; if (d.getElementById(id)) return; js = d.createElement(s); js.id = id; js.src = "//connect.facebook.net/en_US/all.js#xfbml=1"; fjs.parentNode.insertBefore(js, fjs); }(document, 'script', 'facebook-jssdk')); /script div class="fb-post" data-href="https://www.facebook.com/photo.php?v=10152088375002264" data-width="466" div class="fb-xfbml-parse-ignore" a href="https://www.facebook.com/photo.php?v=10152088375002264" Post /a by a href="https://www.facebook.com/pages/Sheriff-Al-Sire/25034267263" Sheriff Al Sire /a . /div /div