User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
?বই নিয়ে আলোচনা ‘উত্তরাধিকার’ হচ্ছে কোনো প্রপার্টির বর্তমান কর্তার পরবর্তী অংশীদার। আর এই আলোচ্য বইটিও রচিত হয়েছে কোনো এক উত্তরাধিকারকে কেন্দ্র করে। তবে এই গল্পের প্রপার্টি কোনো ব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তি না। তাহলে কার উত্তরাধিকার হবে গল্পের প্রধান চরিত্র? চলুন শুরু করি- স্বর্গছেড়ার নয়নাভিরাম চা বাগান এলাকায় অনিমেষের জন্ম। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যের মাঝে বেড়ে উঠতে থাকা অনিমেষের সাথে সাথে আরো একজনেরও নতুন জন্ম হলো। জন্ম হলো নতুন একটি স্বাধীন দেশের সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে অনিমেষ এখন যাবে জলপাইগুড়িতে। সেখানে তার জীবন গড়া শুরু হয়। সেখানেই জীবনের নতুন নতুন অধ্যায়গুলো সে আবিষ্কার করতে থাকে। সে তার সরল চোখ দিয়ে দেখতে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈতিক আচরণ গুলো। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ এখন তার মতোই কিশোরে পরিনত হয়েছে। অথচ সেই দেশ মাতার সন্তানরা এখনো তাদের মাঝে দ্বৈরথ তৈরি করে আছে। তাদের এই রেষারেষিতে পদদলিত হচ্ছে সাধারণ থেকে অতি সাধারণরা। অনিমেষ নিজের মনেই ভাবতে থাকে, এদের কি দোষ? এরা কেনো কম দামে ভাত পাবে না? স্বর্গছেড়া থেকে জলপাইগুড়ি, তারপর রাজপথের রঞ্জিত পিচঢালা পথ পাড়ি দিতে দিতে অনিমেষ উপনীত হয় কলকাতায়। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হবে এবার অনিমেষ। অনিমেষ এখানে এসে আবিষ্কার করে তার জীবন ট্রামের চাকার মতনই ঘূর্ণন এবং ঘর্ষনের মধ্যে স্ফুরিত স্ফূলিঙ্গ। অনিমেষের এই পথচলার পথ থেকে তার অনেক নিকট আত্মীয়কে বিদায় জানাতে হয়। আর বিদায় দৃশ্যগুলো খুবই কষ্টের। পাঠক হয়েও আমি যেন অনিমেষের সব কষ্ট বুঝতে পারছি। ‘উত্তরাধিকার’ বইটি লিখেছেন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ‘সমরেশ মজুমদার’। ভারত ইংরেজদের কবল থেকে স্বাধীন হবার পর, সেই দেশের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টদের মধ্যকার সম্পর্ক পাঠকদের অনির চোখ দিয়ে অতি সরল ভাবে তুলে ধরেছেন। লেখক এই গল্পটিকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, এবং তার জন্য যে পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন সেই সবকিছুর ছাপ দেখতে পাওয়া যায় এই গল্পের পরতে পরতে। অনিমেষ চরিত্রটির পেছনে তিনি অনেক শ্রম দিয়েছেন। তাই এই অনিমেষকে যে কোনো কিশোর নির্দ্বিধায় নিজের মধ্যে আবিষ্কার করতে পারেন। লেখক অতি সুকৌশলে কিশোরদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করাতে পারেন এই চরিত্রটি দিয়ে। তিনি তার এই গল্পের মাধ্যমে পাঠকদের ভারতের রাজনৈতিক একটি চিত্র দেখিয়েছেন। যার মাধ্যমে তিনি হয়তো বলতে চেয়েছেন যে… ‘তোমরা যে এতো দেশপ্রেম দেশপ্রেম করো, তা এই দেশপ্রেমটা কী? যখন বন্যার্তরা সাহায্য পায় না কেবল তারা অন্য মতাদর্শের বলে, তখন দেশপ্রেম কোথায় থাকে? অথবা দেশ দেশ বলে যে মানুষের উপর গুলি চালাও তখন কি তোমরা বোঝো না যে, ওরা তোমার ভাই। একই মায়ের সন্তান। তখন দেশপ্রেম কই থাকে?’ যাইহোক, উত্তরাধিকার বইটি থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। অন্তত দেশপ্রেম বলে যে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নাই সেটা ভালো বুঝেছি। অনির কাকার মত করে আমারও বলতে ইচ্ছে হয়… ‘এই স্বাধীনতা মিথ্যা’ ধন্যবাদ বই হোক আপনার, আর আপনি বইয়ের
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি পড়ার সময় আপনি অনেকবার স্তব্ধ হয়ে যাবেন! কখনো হাসবেন আবার কখনো চোখের কোণে পানি চলে আসবে! কখনো,কখনো বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাবেন! অসাধারণ লেখনী! ঔপন্যাসিক এই উপন্যাসটি এমনভাবে শেষ করেছেন যে এই বইটি শেষ করার পর আপনি এই সিরিজের দ্বিতীয় বই কালবেলা পড়ার জন্য দিন গুণতে থাকবেন!
Was this review helpful to you?
or
best
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি না পড়লে জীবনের অনেক কিছু সম্পর্কে অজানাই রয়ে যাবে।
Was this review helpful to you?
or
"উত্তরাধিকার" সমরেশ মজুমদারের লেখা সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি।উপন্যাসটির মূল চরিত্রের নাম অনিমেষ। সে নিজের পরিবারের সাথে বসবাস করছিলো স্বর্গছেঁড়ার চা বাগানের কোয়ার্টারে। বংশানুক্রমে দাদু, বাবা দুজনেই চা বাগানের বড় বাবু। যে সময়ের ঘটনা লেখক তাঁর এই উত্তরাধিকার নামক ফ্রেমে আটকাতে চেয়েছেন সে সময়টায় ভারত সবে ইংরেজদের শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। শিশু অনির হাত দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট পতাকা স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তলনের মধ্যে দিয়ে তার মনে দেশপ্রেমের বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে উপন্যাসে। ছোট বেলা বুনা বীজ চারাগাছের ন্যায় বাড়ছিল সে যখন তার পিশি ও দাদুর সাথে জলপাইগুঁড়ি চলে যায়। বরাবর চুপচাপ ও নির্বিবাদী অনিমেষের চোখ দিয়েই ঔপন্যাসিক আমাদেরকে দেখিয়েছেন একটা অস্থির সময়ের ছবি। কংগ্রেস-বামদের বিরোধ, চিরাচরিত বাঙালী পরিবারের টানাপোড়েন ও ভালোবাসা, দেশপ্রেম আর সামনের অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়ানো সবটাই যেন উঠে এসেছে অবধারিতভাবে। উত্তরাধিকার শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি একটি দলিল। এমন এক দলিল যা সাক্ষী হয়ে আছে অনিমেষ নামের একটা সাধারণ ছেলের চোখে দেখা একটা অসাধারণ সময়ের।
Was this review helpful to you?
or
উত্তরাধিকার উপন্যাস সমরেশ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাস বলা চলে।মেধাবী এই লেখক উপন্যাসের চরিত্র গুলি সতন্ত্র ভাবে উপস্থাপন করেছেন। এই উপন্যাসের পাঠক হিসেবে আমার কাছে ভালো লাগা চরিত্র হলো সরিৎশেখর। উনার হাত ধরেই আঙারাভাষা চা বাগানের গোর পত্তন হয়। স্বর্গছেঁড়ায় ঠিক স্বর্গের মতই সুন্দর। একটা সময় অবশরে এখান থেকে প্রস্তান নিতে হয়। সাথে একমাত্র নাতি অনিমেষ। আমি উত্তরাধিকার উপন্যাসের নায়ক বলবো সরিৎশেখর কে।উনার দুই স্ত্রী মারা গেছেন। এক মেয়ে ও মারা গেছে। বড় ছেলে অবাধ্য। আরেক মেয়ে বিধবা হয়ে উনার উপরে পরে আছেন। এক সন্তানের স্ত্রী মারা গেছে। আরেক টা বিয়ে করে মুটামুটি ভালো আছে। এই সব নিয়েও তিনি অনিমেষ কে পোক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা তা করেছেন। অনিমেষ পরবর্তী উপন্যাস গুলিতে নায়ক হবে। কিন্তু উত্তরাধিকার এ নায়ক হলো সরিৎশেখর। অনিমেষের মা অল্প বয়সেই মারা গেছে। তার আগে অনিমেষের জীবন অন্য রকম ছিলো। চা বাগানে ঘুরাঘুরি তারপর মা হীনা সন্তান অনিমেষ দাদার সাথে। দাদা হয়তো মনের ক্ষতের আড়ালে প্রিয় নাতি কে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছে। মহিতোষ অল্প বয়সে স্ত্রী হারা হয়ে ভেঙ্গে পরে। মাসের মাস অনিমেষ এর জন্য টাকা দিয়েই খালাস। অনিমেষ এর প্রতি কর্তব্য পরায়ণ কখনই দেখা যায় নি। উনার পরের মা অনিমেষ এর সাথে ভালো আচরন এবং এক পর্যায়ে আংটি দেয়াটা ভালো লেগেছে। একটা সময় নিজের মায়ের মতোই মেনে নিয়েছে অনিমেষ। অনিমেষর বিধবা পিষি অনিমেষ কে মায়ের মতই দেখেছে। মা যতটা করতো তাই করতে চেষ্টা করেছে। এই উপন্যাসের টুইস্ট ধরা পরে শনিবাবার কথার মাঝে। যার কারনে অনিমেষের মা ইহলোক ত্যাগ করে।এবং বেশ কিছু ধারনা পাওয়া যায়। পরবর্তী পর্বের উপন্যাস গুলিতে। উত্তরাধিকার উপন্যাসের মধ্যে রাজনৈতিক আবহ টাও অত্যান্ত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে। প্রিয়তোষ, নিশিথবাবু, ঝাড়ুদা যার তার ভাবে স্বতন্ত্র ছিলো। ছোট শিশুর মনস্তাত্ত্বিক দিক গুলি ও ভালো ছিলো। ছোট শিশু অনিমেষ যেই দৃষ্টি কোন ছিলো তার বাইরের জগতে অন্য রকম কিছু হয় তা নিয়ে মনের মাঝে সংঘাত হয়েছে। সব হিসেব পালটে দেয়া হয় যখন ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাশ করে। উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা পাঠানো হয়। সরিৎশেখর, হেমলতা, মহিতোষ, সর্বপরি সব চরিত্রের মাঝে হুহু সৃষ্টি করে। বয়স্ক, রিক্ত,সরিৎশেখর, হেমালতা, অনিমেষ, মহিতোষ নিজ নিজ জায়গায় বুঝতে পারে সম্পর্কের ছেদ টুকু।বুকের জন্য প্রিয়জনের জন্য জায়গা টুকু বুঝতে পারে। সেই সময় টা ছিলো উত্তাল, ট্রেন ঝগঝগ করে কলকাতার উদ্দেশ্য যাচ্ছে। সামনের নতুন চরিত্র গুলি আসছে। একটা সময় ঘটে অন্য রকম ঘটনা যা অবিশ্বাস্য ঘটনা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #পুস্ত_পরিচিতিঃ নাম: উত্তরাধিকার লেখক: সমরেশ মজুমদার পৃষ্ঠা:২৯৫ দাম: Rs. ২০০ (মুদ্রিত মূল্য) প্রথম প্রকাশকাল: জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৬ বাংলা প্রচ্ছদ: সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় ভিতরের অলঙ্করণ: সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত #কাহিনী_সংক্ষেপণ: এই উপন্যাসের কাহিনীর শুরু উত্তরবঙ্গের একটি চা-বাগানের পটভূমি। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে গল্পের মূল চরিত্র অনিমেষ নামের এক কিশোর প্রথম 'বন্দেমাতরম' শব্দটি শুনে। তখন অর্থটি ঠিক বুঝতে পারে না। কিন্তু সেদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে তার ভিতরে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। অনি চা-বাগানের গ্রাম স্বর্গছেরা ছেড়ে সদ্য অবসর প্রাপ্ত বড়কর্তা দাদুর হাত ধরে জলপাইগুড়ি আসে পড়ালেখা শিখতে। সেই থেকে জেঠি আর দাদুর বুকেই বড় হতে থাকে। নতুন পরিবেশে কিশোর দেখতে থাকে দেশপ্রেমের নামে অসুস্থ রাজনীতির খেলা। প্রকৃত রাজনীতি আর দেশসেবার পথ খুঁজতে থাকে সে। কংগ্রেস আর কমুনিস্টের ভিন্ন উদ্দেশ্যের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে যায় অনিমেষ সঠিকপথ কোনটা তা ভেবেই। আস্তে আস্তে বড় হয় অনি। আর বাবা চায় ডাক্তার হউক, দাদু চায় ইংরেজিতে পড়ুক। কলকাতায় অনির গন্তব্য। সে কলকাতা যাচ্ছে। সেদিন পথেই দেখল- সারাশহরে আগুন জ্বলছে, কঠোর আন্দোলনের এক ভয়ংকর পরিবেশ। নিজের সম্পর্কে, দেশের সম্পর্কে পুরনো বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ভালবাসার সঙ্গে নতুন করে তার মুখামুখি পরিচয় শুরু হল। এই কাহিনী সেদিনের অনিমেষের আত্মজিজ্ঞাসার, আত্মানুসন্ধানের। আদৌ অনি পৌছাতে পারল কলকাতায়? অনির জীবনে কি কি হল তা জানতে পুরো গল্প পড়তে হবে। #পাঠপ্রতিক্রয়া: বাংলা সাহিত্যে কথাশিল্পীদের মধ্যে সরমেশ মজুমদার অগ্রগণ্য। তার বিশিষ্ট রচনাশৈলীর জন্য একতম বললেও অন্যায় হবে না। তার অন্যান্য সব উপন্যাস পড়লেই সেই প্রমাণ মিলে। 'উত্তরাধিকার' ঘরোয়া গল্পে অনুপম প্রসাদ গুণে তার মনোমুগ্ধকর মধ্যদিয়ে একালের তরুণদের জন্য বার্তা বয়ে এনেছেন। যাদের স্বাস্থ্যবান বই পড়ায় অনিহা আছে তারা শুরু করুন দেখবেন ডুবে যাবেন গল্পে। সাবলীল, সহজ ভাষার সামাজিক গল্পের বইতে আপনি সব পাবেন। সুখ, দু:খ, হতাশা, উল্লাস সব। বইয়ের ভিতরে অসাধারণ কিছু অলঙ্করণ রয়েছে কাহিনীর সাথে মিলিয়ে। যা আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। #প্রাপ্তিস্থান: ছোটবড় সব বই দোকানে পাবেন। নীলক্ষেত কিংবা বাংলাবাজার তাছাড়া আমাদের সবারপ্রিয় রকমারি.কম তো আছেই। ঘরে বসেই অর্ডার করলেই দ্রুত পেয়ে যাবেন আপনার দরজায় ঝামেলামুক্তভাবেই।
Was this review helpful to you?
or
এই উপন্যাসের কাহিনী লেখা অনিমেষকে নিয়ে। যার ডাকনাম অনি। অনিমেষের ছোটবেলা কাটে স্বর্গছেড়া চা বাগানে। স্বর্গছেড়া চা বাগানের বড় বাবু অনিমেষের দাদু সরিৎশেখর। স্বর্গছেড়ার এই চা বাগান সরিৎশেখর নিজ হাতে তৈরী করে দিয়েছেন। স্বর্গছেড়া! নামটার মাঝেই কেমন যেন একটা স্বর্গ স্বর্গ ভাব। আসলেই স্বর্গের মতো সুন্দর এই জায়গা। অনিমেষদের বাড়ির পাশেই অাঙরভাসা নদী, তার পাশেই ভুটানের পাহাড়, নদীর পানি এতোটাই স্বচ্ছ যে পানির নিচের হলদে পাথর পর্যন্ত দেখা যায়। সেই পাথরের নিচে আছে লালচে চিংড়ি মাছ। এই এতো সুন্দর জায়গা ছেড়ে ছোট্ট অনিকে চলে যেতে হবে দাদুর সাথে। কারণ আজ দাদুর রিটায়ারমেন্ট। দাদু তার চাকরি জীবনের পয়তাল্লিশ বছরের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে জলপাইগুড়িতে একটা বাড়ি তৈরী করেছেন। ছোট ছেলে প্রিয়তোষ আর বড় মেয়ে হেমলতা মানে অনির পিসিমা আর অনিকে নিয়ে থাকবেন সেখানে। স্বর্গছেড়ায় পড়াশোনার পরিবেশ খুব খারাপ। তাই দাদু আর অনির বাবা মহিতোষ ঠিক করেছেন অনি দাদুর সাথে জলপাইগুড়িতে গিয়ে থাকবে। ওখানের ভালো স্কুলে পড়াশোনা করবে। কিন্তু অনি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছে না, এতো সুন্দর জায়গা ছেড়ে কি করে থাকবে? তার থেকে বড় কথা মা ও যে তার সাথে যাচ্ছে না! কিন্তু দাদুর কথায় এ বাড়িতে শেষ কথা। অনিকে জলপাইগুড়ি যেতেই হবে, কোন ছাড়াছাড়ি নেই। অনি বাড়ির পিছনের বাগান থেকে একমুঠো মাটি রুমালে করে বেধেঁ নিয়ে যাবে জলপাইগুড়িতে। যেন সবসময় মনে হয় সে স্বর্গছেড়ায়ই আছে। দাদু, পিসি আর ছোট কাকার সাথে জলপাইগুড়ি আসে অনিমেষ। এখানকার এক স্কুলে ভর্তি হয়। নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশের দিন স্বর্গছেড়া থেকে মা, বাবা আসেন। অনি ভীষণ খুশি মাকে কাছে পেয়ে। কিন্তু সেই খুশি খুব বেশি সময় থাকেনি। কারণ গৃহপ্রবেশের দিন রাতেই ঘটে যায় অনির জীবনের চরম দুঃখজনক ঘটনা। অনিমেষের মা মাধুরী মারা যায়। সেই রাতে তিস্তা নদীতে বান ডাকে। চারিধার পানিতে ভেসে যায়। সকালে পানি নেমে যাওয়ার পর ছোট্ট অনি সবার সাথে শ্মশানে যায়। এক রাতেই ছোট্ট অনি যেন হটাৎই খুব বড় হয়ে যায়। সেই অনি একসময় বড় হয়। এর মাঝে হাজারো ঘটনার সম্মুখীন হয়। কিছু ঘটনায় চরম আঘাত পেয়েছে, কখনো পেয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আবার বিয়ে করে। প্রথমদিকে মানতে না পারলেও নতুন মা একসময় খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায় অনির। সবকিছু মেনে নিয়েই সেই ছোট্ট অনি শৈশব, কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পা রাখে। যত যাই হোক, জীবনের প্রতিটা সময় দাদু সরিৎশেখর ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। থমকে যেতে দেননি অনির জীবন চলার গতি। কি হয় শেষমেশ সেই অনির জীবনে?
Was this review helpful to you?
or
এ গল্প অনির। অনি, অনিমেষ। স্বর্গছেড়া চা বাগানের বড়বাবু সরিৎশেখরের একমাত্র নাতি অনিমেষ, পিসিমার অনিবাবা। আজ স্বর্গছেড়ায় অনির শেষ দিন। দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর চাকরি করার পর রিটায়ারমেন্টে যাবেন দাদু সরিৎশেখর। রিটায়ারমেন্টের পর নিজের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে জলপাইগুড়ি শহরে একটা বাড়ি করছেন। বিধবা মেয়ে আর ছোট ছেলেকে নিয়ে এখন থেকে ওখানেই থাকবেন। স্বর্গছেড়ায় তেমন পড়ার পরিবেশ নেই, তাই অনিকে নিজের কাছে জলপাইগুড়ি নিয়ে যেতে চান। তাই আজ অনির স্বর্গছেড়ায় শেষদিন। অনি কি করে থাকবে স্বর্গছেড়া ছেড়ে? এতো আসলেই স্বর্গ।।। ভুটানের পাহাড়, বাড়ির পাশের আঙরাভাসা নদী, নদীর হলদে বড় বড় পাথরের নিচে লাল লাল চিংড়িগুলো, কালী গাই, মদেশিয়া লাইন, আর সবচেয়ে বড় কথা, মাকে ছেড়ে অনি কি করে থাকবে? ভাবতেই ওর কান্না পাচ্ছে। কিন্তু দাদু একবার যখন বলেছেন, আর বাবা সম্মতি দিয়েছেন, তখন ওর কথা কেউ শুনবে না। যেতে ওকে হবেই। ঠিক আছে। যাবে অনি। তবে যাবার আগে স্বর্গছেড়ার একমুঠো মাটি সাথে করে নিয়ে যাবে। দাদু, পিসিমা আর ছোটচাচাকে সাথে নিয়ে শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা শহরে অনির নতুন জীবন। সাথে নিয়ে আসা স্বর্গছেড়ার মাটি সে ছড়িয়ে দেয় পেয়ারা গাছের নিচে। এ যেন জলপাইগুড়ি শহরে তার নিজস্ব এক টুকরো স্বর্গছেড়া। দাদুর নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশের রাতে ঘটে যায় অনির জীবনের চরমতম ঘটনা। সেই রাতে তিস্তা নদীতে বান ঢাকে। সকালে পানি নেমে যাওয়ার পর ছোট্ট অনি সবার সাথে জীবনে প্রথমবারের মত শ্বশানে যায়। অনুভব করে জীবনের এক নির্মম সত্য। এভাবে শৈশব, শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায় অনির জীবন। এতটুকু জীবনে কতশত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কিছু ঘটনা তাকে আলোড়িত করেছে, কিছু তাকে চরম আঘাত দিয়েছে, আর কিছু ঘটনা তাকে স্থির শান্ত হতে সাহায্য করেছে। চলার পথে সে পেয়েছে স্নেহশীল বড়বোন, লক্ষ্য স্থির করার জন্যে প্রণোদনা, বন্ধু-বান্ধব, মায়ের মত পিসিমা, বন্ধুর মত ছোটমা, আর শিক্ষা নেবার মত কিছু মানুষ নামের জীবের দেখা। এত কিছু দেখে শিখে সর্বোপরি তার দাদুর চলার পথে শক্ত লাঠি হয়ে উঠতে চেয়েছে সে। তার এই পথ চলা, স্বপ্ন দেখা সত্যি হবে তো? নাকি আরো হাজারটা অনিমেশেষ মত থমকে যাবে তার জীবন? আমার কথা : আমার সবসময়কার সবচেয়ে প্রিয় বইয়ের তালিকায় উত্তরাধিকার সবসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা দখল করে আছে। সেই কোন ছোট্টবেলায় পড়েছিলাম প্রথমবার। আজো যখন নিয়ে বসি ঠিক সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। এতটুকু পুরনো হয়ে যায়নি কোথাও। সেই পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট চা বাগান আর চা বাগানের পরিবেশ আজো আমাকে আনমনা করে দেয়। উত্তরাধিকার সেই সময়ের বাস্তব জীবনের এক চিত্র যখন দীর্ঘদিনের ইংরেজ শাসন থেকে এই ভূখণ্ড স্বাধীনতা পেয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে শিখে উঠতে পারেনি তখনো। তাইতো কালোবাজারি, সন্ত্রাস আর অনিয়ম, অবিচারের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছিল। এই কি ছিল মুক্তিকামীদের লক্ষ্য? দেশকে ইংরেজি শাষন থেকে বেরিয়ে আবার শৃংখল পড়ছিল যারা তারা কি আদৌ দেশপ্রেমিক। অনিমেষের দাদু সরিৎশেখরও হতাশ হয়েছিলেম এদের কার্যকলাপে। মনে করেছিলেন এ থেকে তো ইংরেজ আমলই ভাল ছিল। হায় কতটা আক্ষেপ করে একজন মানুষ বলতে পারে এই কথা!!! এই যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম।।।
Was this review helpful to you?
or
❤️❤️
Was this review helpful to you?
or
অনি,যেন আমারই প্রতিবিম্ব।একটু শান্তনা,আমার মাকে এখনো হারাতে হয় নি।তবে অনিকে পড়ে আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি নিজেই মা হারা হয়ে গিয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
ভারতীয় লেখকদের মধ্যে সমরেশ মজুমদার একটা শক্তিশালী নাম। তিনি শুধুমাত্র একজন পাঠকপ্রিয় লেখকই নন, একটা ব্রান্ডও বটে। অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাসের এই লেখকের গুণমুগ্ধ ভক্ত ওপার বাংলার মতো এপার বাংলায়ও ছড়িয়ে আছে। উত্তরাধিকার তাঁর লেখা সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটা। 'দেশ' পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো এই উপন্যাসটা। পরে বই আকারে বের হলে তা পাঠকের মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয়। উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতায় তিনি লিখেছেন কালবেলা, কালপুরুষ আর মৌষলকাল। এটাকে পরিণত করেছেন একটা অসামান্য সিরিজে। উত্তরাধিকারের মূল চরিত্রের নাম অনিমেষ, কাছের মানুষরা যাকে অনি বলেই ডাকে। নিজের পরিবারের সাথে বসবাস করছিলো স্বর্গছেঁড়ার চা বাগানের কোয়ার্টারে। বংশানুক্রমে দাদু, বাবা দুজনেই চা বাগানের বড় বাবু। যে সময়ের ঘটনা লেখক তাঁর এই উত্তরাধিকার নামক ফ্রেমে আটকাতে চেয়েছেন সে সময়টায় ভারত সবে ইংরেজদের করাল শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। শিশু অনির হাত দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট পতাকা স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তলনের মধ্যে দিয়ে তার মনে দেশপ্রেমের বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বর্গছেঁড়ার চা বাগান ছেড়ে সে যখন দাদু ও পিশিমার সাথে জলপাইগুঁড়ি চলে গেলো, সেই বীজ চারাগাছের ন্যায় বাড়ছিলো। বালক অনিমেষ দেখেছে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা, দেখেছে কম্যুনিস্টদের সম অধিকারের ঝান্ডা তুলে নেয়া। দুই পক্ষের নীতিগতো টানাপোড়েনের মাঝে নিজেকে বারবার জ্ঞাতসারে অজ্ঞাতসারে জড়িয়েছে সে। অনি বারংবার অর্থ খুঁজে ফিরেছে কংগ্রেসের 'বন্দে মাতরম' আর কম্যুনিস্টদের 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' স্লোগানের। কিন্তু প্রকৃত অর্থ যেন অধরা থেকে গেছে ইচ্ছে করেই। স্বর্গছেঁড়া আর জলপাইগুঁড়ির জীবন অনির চলার পথে এনেছে অনেক মোড়। কাছের মানুষগুলোকে অনেক ভালোভাবে চিনতে শিখেছে সে। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে মায়ের সাথে কথা বলা, স্নেহময় দাদুর ভালোবাসা, পিশিমার নিখাদ সন্তানসম স্নেহ - এসব নিয়েই কেটেছে অনির জলপাইগুঁড়ির সময়টা। বরাবর চুপচাপ ও নির্বিবাদী অনিমেষের চোখ দিয়েই ঔপন্যাসিক আমাদেরকে দেখিয়েছেন একটা অস্থির সময়ের ছবি। কংগ্রেস-কম্যুনিস্টদের বিরোধ, চিরাচরিত বাঙালী পরিবারের টানাপোড়েন ও ভালোবাসা, দেশপ্রেম আর সামনের অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়ানো - সবটাই যেন উঠে এসেছে অবধারিতভাবে। উত্তরাধিকারকে আরেক হিসেবে Child Psychology এর একটা অনবদ্য উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। লেখক সমরেশ মজুমদারের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে। তাই অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অনেক উপন্যাসেই চা বাগানের একটা নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। এই বইটাও তার ব্যতিক্রম না। বইটা পড়ার সময় আমি যেন স্বচক্ষে স্বর্গছেঁড়ার চা বাগান দেখতে পাচ্ছিলাম। উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্রই শক্তিশালী। বাবা, মা, দাদু সরিৎশেখর, পিশিমা, ঝাড়িকাকু, ছোটকাকু, নিশীথবাবু, মুভিং ক্যাসেল, মন্টু, অর্ক - এমন আরো অনেক চরিত্র কাহিনিতে নিয়ে এসেছে উপভোগ্য বৈচিত্র। লেখক পুরো উপন্যাসের কাহিনিটা সাজিয়েছেন অত্যন্ত মুনশিয়ানার সাথে। সাবলীল বর্ণনা তাতে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। উত্তরাধিকার শুধু একটা উপন্যাস না। এটা একটা দলিল। এমন এক দলিল যা সাক্ষী হয়ে আছে অনিমেষ নামের একটা সাধারণ ছেলের চোখে দেখা একটা অসাধারণ সময়ের। নিঃসন্দেহে, আমার জীবনে পড়া সেরা বইগুলোর একটায় পরিণত হয়েছে এই বইটা। একে একে কালবেলা, কালপুরুষ ও মৌষলকালও পড়ে ফেলবো। যারা এখনো উত্তরাধিকার পড়েননি, আমি বলবো দেরি না করে পড়ে ফেলুন। অন্য একটা সময়ে অবস্থিত অন্য একটা জগত অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।