User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অ্যা মাস্ট রিড বুক! ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছিল। পরবর্তীতে আমার প্রিয় স্যারকে উপহার দিই।
Was this review helpful to you?
or
"মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়" এই উক্তি টি শুনলেই চোখের সামনে যে মহান মানুষের অবয়ব ভেসে ওঠে তিনি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তার একেকটা বই যেন একেকটা জীবন্ত দলিল।একটা বই থেকে যে জানার,শেখার কতকিছু থাকতে পারে তা উনার বই পড়লে বোঝা যায়।'নিষ্ফলা মাঠের কৃষক' বইটি জুড়ে রয়েছে তাঁর অধ্যাপনা জীবনের আদ্যোপান্ত। যুবক বয়সে স্বপ্নতাড়িতের মতো শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগ দেয়া থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন থেকে বিদায় নেয়ার ইতিবৃত্ত;১৯৬২-১৯৯২ এই তিরিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি এই বইটিতে। শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে মহান একটি পেশা।তিনি তাঁর অধ্যক্ষ পিতা এবং স্কুল- কলেজ জীবনের কয়েকজন শ্রদ্ধেয়,প্রিয় শিক্ষকের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।পুরো বই জুড়ে আছে তার স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা এবং ধীরে ধীরে শিক্ষাঙ্গনের মূল্যবোধ,নিয়ম-কানুন,শিক্ষা ব্যবস্থার অবক্ষয়ের কথা।যতটা স্বপ্নতাড়িতের মতো তিনি এই পেশায় যোগ দিয়েছিলেন,ততটাই আশাহত হয়ে তিনি এই পেশা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন।শিক্ষকতা পেশা যে মহত্তম ব্রত সেটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই বইয়ের প্রতি পরতে পরতে তিনি তুলে ধরেছেন।একজন শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর।আলোকিত মানুষ তৈরি করাই তার জীবনের লক্ষ্য।শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই পারে একজন ছাত্রের মনের গহীনে পৌঁছে তাকে অপার সম্ভাবনাময় জীবনের দিকে ধাবিত করতে।একজন প্রকৃত শিক্ষকের স্বরূপ,তার কার্যক্রম,তার জীবনাচরণ কেমন হওয়া উচিত সেসব তিনি সাবলীলভাবে উদ্ধৃত করেছেন এখানে। তিনি তাঁর স্কুল,কলেজ জীবনের শিক্ষকদের জীবন থেকে কিভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন,তারা তাঁর জীবনকে কতটা প্রভাবিত করেছেন তা তিনি স্পষ্টভাবেই তুলে ধরেছেন।বাল্যকালের শিক্ষাগুরু তাঁর মানসপটে শিক্ষকতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা তিনি অতি সন্তর্পণে আগলে রেখেছেন সারাটা জীবন। একজন শিক্ষকই পারেন একটা ছাত্রের মধ্যে লুকায়িত অমিতপ্রতিভা খুঁজে বের করতে।শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তাকে জ্ঞানসমুদ্রে নিয়ে যাওয়া,জ্ঞান অন্বেষণের জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করা যাতে সে নিজেই সে জগতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যেতে পারে।ক্লাসে পড়ানোর সময় ছাত্রের মনোজগতে যে আলোড়ন তুলতে পারবে সেইতো প্রকৃত শিক্ষক।কিন্তু এখন শিক্ষকতার মানেই বদলে গেছে।ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট টিউশনে যেতে বাধ্য করা,গাদা গাদা নোটবই মুখস্ত করানো এসব এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।শিক্ষকতা আজ যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে সমাজের নৈতিকতা বিরোধী আস্তাকুড়ে। শিক্ষাঙ্গনের অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন ছাত্র রাজনীতি,সন্ত্রাস,নকল করার প্রবণতা,ঢাকার বাইরে থেকে বদলি হয়ে আসা অযোগ্য শিক্ষক সহ নানাবিধ কারণ।ষাটের দশকে জগন্নাথ কলেজ আর কায়দে আজম কলেজের(বর্তমান সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) ছাত্র রাজনীতি,সন্ত্রাস ছিল ভয়ংকর রকমের।পরীক্ষার হলে নকলের ট্রেণ্ড তারাই শুরু করেছিলো।অস্ত্র ও সন্ত্রাসের প্রভাবে শিক্ষাঙ্গনের কতৃর্ত্ব শিক্ষা কর্তৃপক্ষের হাত থেকে চলে গিয়েছিলো ছাত্রনেতাদের হাতে।শিক্ষাঙ্গন তখন আরোগ্যের অতীত হয়ে পড়েছিলো শুধুমাত্র অধঃপতিত ছাত্রের কারণে নয়,অধঃপতিত শিক্ষকদের কারণেও।এভাবেই তাঁর শিক্ষক হবার স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে,তিনি নিজেকে তখন সেই পেশায় দেখার মতো মানসিক অবস্থায় ছিলেন না বলেই নীরবে নিভৃতে সেখান থেকে সরে আসেন। জীবনের ত্রিশ বছর শিক্ষকতায় থাকার পর তিনি যখন বুঝতে পারলেন শিক্ষাঙ্গন আজ অবক্ষয়ের পথে, এ থেকে উত্তরণের পথ তাঁর জানা নেই তখন তিনি নিজেকে একজন অনুর্বর,নিষ্ফলা মাঠের কৃষক হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করলেন এবং স্বপ্নের পেশা থেকে অবসর নিলেন। এই পুরো বইটিতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ শিক্ষকদের যে স্বরূপ তুলে ধরেছেন তা যদি আজকের শিক্ষকেরা মনে লালন করার সাথে সাথে ধারণও করতে পারেন তাহলে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি পালটে যাবে।শিক্ষকতা তখন শুধু নামেমাত্র নয় বাস্তবেই মহান পেশায় পরিণত হবে।
Was this review helpful to you?
or
শিক্ষা ও শিক্ষক সম্পর্কে এত চমৎকার বই আমি কমই পড়েছি। আবু সায়িদ স্যার কথার জাদুকর। তার শব্দশৈলী আর বাক্য গঠনের মাধুর্যতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্বন্ধে এত সত্য কথন আমি আর কোথাও পড়িনি। সেই বইটাই আপনার কাছে আনন্দদায়ক লাগবে যা আপনার মনের কথা বলবে। এই বইটিও তেমনি। দেশের শিক্ষার পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক বিষয়, শিক্ষকের শিক্ষা গ্রহণে অনিহা, পাঠদানে অদক্ষতা সহ আরো নানাবিধ বিষয়ের অবতারণা করেছেন যা থেকে সচেতন পাঠক রসাদ্বন করতে পারেন। একজন শিক্ষকের সার্থকতা সেখানেই, যখন তিনি অনুভূতিময়, প্রত্যুতপন্নমতি, মেধাবি ও দীপান্বিত তরুন হৃদয়ে আনন্দ মন্থন করতে পারেন, তার জানার আকুলতাকে রগড়ে দিতে পারেন। একটা কথা আমার বেশ ভালো লেগেছে। তিনি শংকরাচার্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন- ধন জন যৌবন - কোন কিছুই গর্ব করার মত কিছু নয়, জীবনও তো পদ্মপাতার ওপরের চঞ্চল নীর, কান্তা-পুত্র কোনকিছুই ভবসমুদ্রে পারাপারের তরণী হবার যোগ্য নয়, কেবল একটি জিনিসই এ পথের পাথেয় হতে পারে : সজ্জনের সংগতি। ভালো মানুষের সাহচার্য। ভালো, মেধাবী মানুষের সান্নিধ্য। বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কি? একটা জাতির সুস্থিরতা এলোমেলো হয়ে যায় রাজনীতিবিদদের কথায় কথায় ডিগবাজি খেতে দেখলে তেমনি মূল্যবোধহীন শিক্ষক যারা কিনা ১০ টাকার বিনিময়ে ছা, ছপ, ছিংগারা খাওয়ানোতে ঢেকুর তোলেন আর পরম তৃপ্তির বুলি আওড়ান এমন শিক্ষক দের উল্টাপাল্টা আর আদর্শহীন কথায় শিক্ষার্থীরা অসহায় বোধ করে। আব্দুল্লাহ আবু সায়িদের শিক্ষকতা জীবনের গল্প যার প্রত্যেক স্তর বাঙময় হয়ে আছে সুখস্মৃতির প্রকোষ্ঠে। সুখপাঠ্য বই।
Was this review helpful to you?
or
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের জীবনে আসা স্যার, তাঁর কর্ম জীবনের নানা দিকের শিক্ষক শিক্ষত্রীয়দের বর্ণনা ছিল এই বইটা। বইটা প্রথম দিকে আমার কাছে বেশ ভালোই লাগতেছিল, কিন্তু মাঝখান থেকে কেন জানি বিরক্তি আসতেছিল। বইটা ১৯৯৯সালে লেখা, তখনকার শিক্ষাব্যবস্থার দুরাবস্থা এখনো পরিলক্ষিত। সমাধান কেউ দিচ্ছে না, শুধু সমস্যা সমস্যা সমস্যা বলে চিৎকার করলেই তো হয় না! উনারা জাতীয় অধ্যাপক, উনাদের কথা আমরা বই কিনে পড়তেছি, আজো সেই অন্ধকারেই আছি , তবে আসলে কি করলেন উনি কিংবা আর যারা দেশের এত্ত বড় বড় ডিগ্রি নিচ্ছেন? আসলে কি পরিবর্তন হচ্ছে নাকি শুধুই ভুলের ফিরিস্তিই শুনে যাচ্ছি গত ১৮টা বছর এবং এই পরিসংখ্যান চলছেই... এর শেষ কোথায়? আমি , আপনি, কেউই হয়তো জানি না, হয়তোবা নেইও সমাধান, কে জানে...
Was this review helpful to you?
or
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মে বই:নিষ্ফলা মাঠের কৃষক লেখক:আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রকাশক:মাওলা ব্রাদার্স ধরন:শিক্ষাবিদ দুর্যোগে সম্পূর্ণ লন্ডভণ্ড ফসলের ক্ষেতের দিকে অশ্রুসজল করুণ চোখে হতভাগ্য কৃষক তাকান,ঠিক সেভাবেই নিজের করা ত্রিশ বছরের অধ্যাপক জীবনের দিকে তাকিয়েছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।কিভাবে সোনার ফসল ফলানো মাঠ ধু ধু চরে পরিণত হল,তার বয়ান।বইয়ের নাম তাই ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’। বইয়ের ভূমিকায় এই গুণী মানুষ লিখেছেনঃ ''একদিন, তরুণ বয়সে, স্বপ্নতাড়িতের মতন এসে যোগ দিয়েছলাম শিক্ষকতায়।প্রতিটা শিরা-ধমনিকে সেদিন যা কামড়ে ধরেছিল তা এক উদ্ধাররহিত স্বপ্ন-সমৃদ্ধ মানুষ গড়ে তোলায় অংশ নেবার স্বপ্ন-সেইসব মানুষ যারা একদিন জাতির জীবনে পালাবদল ঘটাবে। আমার সে স্বপ্ন সফল হয়নি। গত চার দশকে, জাতীয় জীবনের সামগ্রিক অবক্ষয়ের হাত ধরে, আমাদের শিক্ষাঙ্গন ধীরে ধীরে এমন এক নির্বীজ মৃত্যুর শিকারে পরিণত হয়েছিল যে সম্পন্ন বা মহৎ কোনোকিছুর জন্মই সেখানে কার্যত অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। এই বিশাল পতনের মুখে কোনো একক ব্যক্তির আলাদাভাবে কিছু করার ছিল না। আমার পক্ষেও তা সম্ভব হয়নি।আমার এই বই আমাদের সম্পন্ন শিক্ষাঙ্গনের নীরক্ত মাঠে অবসিত হবার গ্রুপ।'' শুধু নিজের অধ্যাপনার সময়ের কথাই যে লিখেছেন তেমনটা না।লিখেছেন নিজের শিক্ষকদের কথা যাদের কথা পড়লে মাথা এমনিতেই শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে।অসাধারণ সেইসব শিক্ষক সম্ভবত এখন রূপকথার গল্পের নায়ক হয়ে গেছেন।তাঁদেরকে মনে হয় অতলের গহবরে হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তী।বইয়ের শুরুতেই অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন তাঁর স্কুল ও কলেজের সেইসব শিক্ষকের কথা যারা তাঁর মনে তো বটেই পাঠকের মনেও শ্রদ্ধার আঁচড় কেটে গেছে। আহ!শুধু শিক্ষক না,যেন একই সঙ্গে স্নেহশীল পিতা ও মমতাময়ী মাতার গুণে গড়া বন্ধুও।যাঁরা নিজেরা প্রদীপের সলতে হয়ে আগুনে জ্বলে ছাত্রের জীবনে আলো দান করেন।পরের অংশে লেখক বর্ণনা করতে শুরু করেছেন তাঁর নিজের শিক্ষকতা জীবনের গল্প।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পাশ করা এক তরুণ কিভাবে শিক্ষকতার মত পেশাতে এল এবং বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার আলো বিলিয়ে যেতে থাকলেন সে বর্ণনা পড়তে পড়তে নিজেই যেন তাঁর ছাত্র হয়ে যাই।আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র লেখক যিনি বাংলাদেশের শিক্ষাজগতের গুণগত মানের অধঃপতনের ব্যাপারটা বইয়ের পাতায় আদ্যোপান্ত লিখে গেছেন।তিনি একটা টিপিং পয়েন্টের মধ্য দিয়ে এসেছেন যার আগে দেখেছেন শিক্ষকতা পেশার মহান চেহারা আর এর পরে শিক্ষতার নির্লজ্জ ভয়াল রূপ। কিভাবে ধাপে ধাপে একটা দেশ ও জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধসে পড়ে তা একেবারে চলচ্চিত্রের মত ধরা পড়বে পাঠকের চোখে।শিক্ষাঙ্গনে ক্যান্সারের মত সন্ত্রাসের বিস্তার দেখেছেন নিজের চোখে।চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না সম্ভবত।কারণ সারা দেশটাই যে রাহুর গ্রাসে।আসলে স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতাউত্তর ত্রিশ বছরের সামরিক শাসনই সবচাইতে বেশি ক্ষতি করেছে আমাদের।এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক ছিল ১৯৭১ এর বিপ্লব।এত বড় একটা বিপ্লবের আফটারশক ঠিকভাবে সামাল দিতে পারিনি আমরা। সব মিলিয়ে হতাশাজনক অবস্থা এবং পতনের চূড়ান্ত।আরও কিছু পরের দিকে শিক্ষকদের বিতরণকারী থেকে বিপণনকর্মী হয়ে যাওয়ার লজ্জাজনক অধ্যায় লেখক তুলে এনেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়।নকলপ্রবণতা,গৃহশিক্ষক সমস্যা কিংবা ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নব্যবস্থা সহ আরও কিছু বিষয় উইপোকার মত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গিলে খেয়েছে কিংবা খাচ্ছে তা বুঝার জন্য এর চাইতে ভালো কিছু হতে পারে না।বইয়ের উপসংহারে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন নিজের স্কুল জীবনের ভয়াল শিক্ষকদের কথা।আরও লিখেছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ধরনের শিক্ষকের কথা যারা বিভিন্নভাবে তাঁর কাছে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ।বিশ্লেষণ করেছেন এই দেশের বেশ কয়েকজন নামজাদা শিক্ষকের। তবে এই বইয়ের একটা ছোট অংশের কথা না বললে চমকপ্রদ অংশের কথা বাদ পড়ে যাবে।সেটা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী কিভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে তার বর্ণনা।একরকম অদৃশ্য একটা কালো হাত যেন! অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর লেখার মান বা সাহিত্যরস যাচাই করার যোগ্যতা আমার মত নাদানের পক্ষে অসম্ভব।আমি তাঁর একজন গুণমুগ্ধ পাঠক ও ভক্ত।বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চায় কিংবা যারা শিক্ষাব্যবস্থার গুনগত মান সত্যিকার অর্থেই উন্নত করতে চান তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য বলে মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের অজস্র পরিচয়ের মধ্যে থেকে যদি শুধুমাত্র একটি পরিচয়কে বেছে নিতে বলা হয় তাহলে তিনি নিজেও তাঁর শিক্ষকতার পরিচয়টিকেই বেছে নিবেন। আসলে তাঁর রক্তের মধ্যেই শিক্ষকতার বীজ বোনা ছিল। তাঁর পিতাও শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতাকে স্যার কখনোই পেশা হিসেবে নেন নি, বরং এটাকে তিনি নিয়েছিলেন একটা মহৎ স্বপ্নের অংশ হিসেবে। যে স্বপ্ন দ্বারা তিনি আজীবন তাড়িত হয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ তিরিশ বছর অধ্যাপনার সাথে জড়িত থাকার পর তিনি অত্যন্ত হতাশভাবে লক্ষ্য করলেন, যে উর্বর ভূমিতে তিনি স্বপ্নের চাষাবাদ করতে চেয়েছিলেন তা বিভিন্ন রকম অবক্ষয়ের শিকার হয়ে আজ নীরক্ত পড়ে আছে। ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ স্যারের সেই ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে সরাসরি শিক্ষকতার পেশা থেকে চলে আসার গল্প, শিক্ষকতার মহৎ পেশার বাণিজ্যে পরিণত হওয়ার গল্প, স্বপ্নের জমিনের নিষ্ফলা হয়ে যাবার গল্প। ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ বইটির প্রথম অংশে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার তাঁর স্কুল ও কলেজজীবনের অসাধারণ সব শিক্ষক এবং তাঁদের শিক্ষকতার দর্শন সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি সেই সময় মানুষের ছাত্র সম্পর্কে কী রকম ধারণা ছিল সেটাও বইয়ের এই অংশে উঠে এসেছে। স্যারের কলেজজীবনে একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি কখনও ক্লাসে এসে বসতেন না, সবসময় দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি কেন দাঁড়িয়ে থাকেন এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তাঁর ছাত্রদের উত্তর দেন, তিনি ক্লাসে ঢোকার সময় তাঁর ছাত্ররা যেভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে সম্মান দেয় তিনি সেভাবে সারা ক্লাস দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে সে সম্মানের যোগ্য করে তোলেন। কী আশ্চর্য মহৎ দর্শন! আজকের দিনে এসে আমাদের এই সব শিক্ষককে আসলেই কল্প জগতের বাসিন্দা মনে হয়। আবার সে সময় সাধারণ মানুষ ছাত্রদের কতটা সম্মানের চোখে দেখতো তা বোঝা যায় যখন পড়ি, তখন ছাত্ররা বাজারে গেলে তাদেরকে দোকানদাররা বিনা পয়সায় লিচু, আম এগুলো ফলমূল ধরিয়ে দিত। আসলে তখন পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন একটা ব্রত ছিল, আজকের দিনের মত তা বাণিজ্যে পরিণত হয় নি। এই রকম প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বাংলায় মাস্টার্স শেষ করে কলেজে প্রভাষনার দায়িত্ব নেন। তাঁর তরুণ রক্তে তখন প্রতিনিয়ত স্বপ্নেরা আঁকিবুঁকি খেলে চলেছে। আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন, সমৃদ্ধ জাতি গড়ার স্বপ্ন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বার বার বলেছেন, তিনি ক্লাসরুমে ছাত্রদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে যে রকম স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তা আর কোন জায়গাতেই করেন না। বইয়ের এই অংশে এসে আমরা দেখতে পাই স্যার নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়েও কীভাবে ক্লাসরুমে তাঁর ছাত্রদের নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে, সর্বস্ব দিয়ে স্বপ্নের চূড়াকে পদতলে আনার আকাঙ্ক্ষায় বিভোর হয়ে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই পেশায় একাত্ম হয়ে থেকেছেন। স্যার তাঁর শিক্ষকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ঢাকা কলেজে কাটিয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, কিন্তু কিছু কারণে তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সে সব কারণও এই বইয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। স্বপ্ন-হ্রদে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে সময় ভালোই কাটছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই ষাটের দশকে বাঙালির জীবনে প্রথমবারের মত বিত্তের অনুপ্রবেশ ঘটতে শুরু করে। আর সেই সাথে জাতীয় জীবনে এসে নৈরাজ্য বাসা বাঁধে। এত কিছুর পরও শিক্ষাঙ্গন তখনও পবিত্রই ছিল। কিন্ত স্বাধীনতার পর সন্ত্রাস আর দুর্নীতির কালো ছায়া ধীরে ধীরে শিক্ষাঙ্গনকেও গ্রাস করে ফেলে। ওই সময় দেশে প্রথমবারের মত নেতিবাচক ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়। স্যার তখন অবাক বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন, ছাত্ররা আর শিক্ষকদের সম্মান করে না। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে তারা যে কোন কিছু করতে পারে। এমনকি তারা আর শিক্ষকদের কথারও তোয়াক্কা করে না। এসব দেখে স্যার খুব ব্যাথিত হলেন। তারপর এদেশের শিক্ষাঙ্গনে আরেকটি নতুন নির্লজ্জ প্রবণতা এসে যুক্ত হল। তা হল কোচিং বাণিজ্য। কিছু অসাধু শিক্ষকেরা কাঁচা পয়সার লোভে শিক্ষকতার আদর্শ বিসর্জন দিয়ে এ সবের সাথে যুক্ত হয়ে গেল। কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেল। তারা কোচিংয়ে কোচিংয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। অবশ্য স্যার এ সব গল্প শুধু অন্য শিক্ষকদের মুখেই শুনতেন। তিনি নিজে অনুভব করতে পারতেন না। কারণ তাঁর ক্লাসে শেষ বেঞ্চ পর্যন্ত ভরাই থাকতো। অবশ্য এর কারণ ছিল স্যারের অসাধারণ বাগ্মীতা। তাঁর কথার জাদুতে মুগ্ধ হতেই কলেজের অন্য বিভাগ এমনকি অন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ছাত্ররা আসতো। তবে স্যারের বিতৃষ্ণা চূড়ান্ত রূপ পায় যখন একদিন তিনি কমনরুমে অন্য শিক্ষকদের সাথে বসে ছিলেন এমন সময় একজন ছাত্র এসে জিজ্ঞেস করে, এখানে নাকি প্রশ্ন পাওয়া যায়? স্যার সেদিনই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তিনি বুঝতে পারেন, এই অসীম শক্তিশালী বিরুদ্ধ স্রোতের বিপরীতে তিনি একা কিছুই করতে পারবেন না। এই নিষ্ফলা মাঠে আর থাকা সম্ভব নয়। এই বইয়ের শেষ অংশে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ দেশবরেণ্য কিছু শিক্ষকের আদর্শের কথা বলেছেন যাদের তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবার আখ্যান। স্যারের স্বাদু বর্ণনাভঙ্গি, শব্দের মাধুর্যমণ্ডিত ব্যবহার এই বইয়ের বিশেষ অলংকার। শিক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী সব পাঠকেরই এই বইটি ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। আর সব শিক্ষকদের শিক্ষকতার আদর্শ সম্পর্কে সচেতন হবার জন্যে এই বইটি অবশ্যপাঠ্য।
Was this review helpful to you?
or
গত চার দশকে আমাদের শিক্ষাঙ্গন কী করে ধীরে ধীরে এক নিঃসাড় বন্ধ্যাত্বের শিকার হল, কী করে নানা দিক থেকে তার সবুজ ভাঁড়ার মৃত্যুর পদপাতে ঊষার হয়ে উঠল, এই বইয়ে সেই কাহিনী বলার চেষ্টা করেছেন লেখক। আমাদের শিক্ষাঙ্গণ এই যুগে কতটা বিশৃঙ্খল আর অরাজক হয়ে পড়েছিল এই বই তারই একটা অবিন্যস্ত ও প্রাথমিক দলিল। বইটি এ যুগের শিক্ষা-ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকদের কৌতূহলকে সামান্যতম মেটাতে সহায়তা করবে।
Was this review helpful to you?
or
দুর্যোগে সম্পূর্ণ লন্ডভণ্ড ফসলের ক্ষেতের দিকে অশ্রুসজল করুণ চোখে হতভাগ্য কৃষক তাকান,ঠিক সেভাবেই নিজের করা ত্রিশ বছরের অধ্যাপক জীবনের দিকে তাকিয়েছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।কিভাবে সোনার ফসল ফলানো মাঠ ধু ধু চরে পরিণত হল,তার বয়ান।বইয়ের নাম তাই ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’। বইয়ের ভূমিকায় এই গুণী মানুষ লিখেছেনঃ একদিন, তরুণ বয়সে, স্বপ্নতাড়িতের মতন এসে যোগ দিয়েছলাম শিক্ষকতায়।প্রতিটা শিরা-ধমনিকে সেদিন যা কামড়ে ধরেছিল তা এক উদ্ধাররহিত স্বপ্ন-সমৃদ্ধ মানুষ গড়ে তোলায় অংশ নেবার স্বপ্ন-সেইসব মানুষ যারা একদিন জাতির জীবনে পালাবদল ঘটাবে। আমার সে স্বপ্ন সফল হয়নি। গত চার দশকে, জাতীয় জীবনের সামগ্রিক অবক্ষয়ের হাত ধরে, আমাদের শিক্ষাঙ্গন ধীরে ধীরে এমন এক নির্বীজ মৃত্যুর শিকারে পরিণত হয়েছিল যে সম্পন্ন বা মহৎ কোনোকিছুর জন্মই সেখানে কার্যত অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। এই বিশাল পতনের মুখে কোনো একক ব্যক্তির আলাদাভাবে কিছু করার ছিল না। আমার পক্ষেও তা সম্ভব হয়নি।আমার এই বই আমাদের সম্পন্ন শিক্ষাঙ্গনের নীরক্ত মাঠে অবসিত হবার গ্রুপ। শুধু নিজের অধ্যাপনার সময়ের কথাই যে লিখেছেন তেমনটা না।লিখেছেন নিজের শিক্ষকদের কথা যাদের কথা পড়লে মাথা এমনিতেই শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে।অসাধারণ সেইসব শিক্ষক সম্ভবত এখন রূপকথার গল্পের নায়ক হয়ে গেছেন।তাঁদেরকে মনে হয় অতলের গহবরে হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তী।বইয়ের শুরুতেই অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন তাঁর স্কুল ও কলেজের সেইসব শিক্ষকের কথা যারা তাঁর মনে তো বটেই পাঠকের মনেও শ্রদ্ধার আঁচড় কেটে গেছে।আহ!শুধু শিক্ষক না,যেন একই সঙ্গে স্নেহশীল পিতা ও মমতাময়ী মাতার গুণে গড়া বন্ধুও।যাঁরা নিজেরা প্রদীপের সলতে হয়ে আগুনে জ্বলে ছাত্রের জীবনে আলো দান করেন।পরের অংশে লেখক বর্ণনা করতে শুরু করেছেন তাঁর নিজের শিক্ষকতা জীবনের গল্প।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পাশ করা এক তরুণ কিভাবে শিক্ষকতার মত পেশাতে এল এবং বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার আলো বিলিয়ে যেতে থাকলেন সে বর্ণনা পড়তে পড়তে নিজেই যেন তাঁর ক্লাসরুমের ছাত্র হয়ে যাই।আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র লেখক যিনি বাংলাদেশের শিক্ষাজগতের গুণগত মানের অধঃপতনের ব্যাপারটা বইয়ের পাতায় আদ্যোপান্ত লিখে গেছেন।তিনি একটা টিপিং পয়েন্টের মধ্য দিয়ে এসেছেন যার আগে দেখেছেন শিক্ষকতা পেশার মহান চেহারা আর এর পরে শিক্ষতার নির্লজ্জ ভয়াল রূপ।কিভাবে ধাপে ধাপে একটা দেশ ও জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধসে পড়ে তা একেবারে চলচ্চিত্রের মত ধরা পড়বে পাঠকের চোখে।শিক্ষাঙ্গনে ক্যান্সারের মত সন্ত্রাসের বিস্তার দেখেছেন নিজের চোখে।চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না সম্ভবত।কারণ সারা দেশটাই যে রাহুর গ্রাসে।আসলে স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতাউত্তর ত্রিশ বছরের সামরিক শাসনই সবচাইতে বেশি ক্ষতি করেছে আমাদের।এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক ছিল ১৯৭১ এর বিপ্লব।এত বড় একটা বিপ্লবের আফটারশক ঠিকভাবে সামাল দিতে পারিনি আমরা। সব মিলিয়ে হতাশাজনক অবস্থা এবং পতনের চূড়ান্ত।আরও কিছু পরের দিকে শিক্ষকদের বিতরণকারী থেকে বিপণনকর্মী হয়ে যাওয়ার লজ্জাজনক অধ্যায় লেখক তুলে এনেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়।নকলপ্রবণতা,গৃহশিক্ষক সমস্যা কিংবা ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নব্যবস্থা সহ আরও কিছু বিষয় উইপোকার মত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গিলে খেয়েছে কিংবা খাচ্ছে তা বুঝার জন্য এর চাইতে ভালো কিছু হতে পারে না।বইয়ের উপসংহারে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন নিজের স্কুল জীবনের ভয়াল শিক্ষকদের কথা।আরও লিখেছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ধরনের শিক্ষকের কথা যারা বিভিন্নভাবে তাঁর কাছে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ।বিশ্লেষণ করেছেন এই দেশের বেশ কয়েকজন নামজাদা শিক্ষকের। তবে এই বইয়ের একটা ছোট অংশের কথা না বললে চমকপ্রদ অংশের কথা বাদ পড়ে যাবে।সেটা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী কিভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে তার বর্ণনা।একরকম অদৃশ্য একটা কালো হাত যেন! অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর লেখার মান বা সাহিত্যরস যাচাই করার যোগ্যতা আমার মত নাদানের পক্ষে অসম্ভব।আমি তাঁর একজন গুণমুগ্ধ পাঠক ও ভক্ত।বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চায় কিংবা যারা শিক্ষাব্যবস্থার গুনগত মান সত্যিকার অর্থেই উন্নত করতে চান তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য বলে মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
দুর্যোগে সম্পূর্ণ লন্ডভণ্ড ফসলের ক্ষেতের দিকে অশ্রুসজল করুণ চোখে হতভাগ্য কৃষক তাকান,ঠিক সেভাবেই নিজের করা ত্রিশ বছরের অধ্যাপক জীবনের দিকে তাকিয়েছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।কিভাবে সোনার ফসল ফলানো মাঠ ধু ধু চরে পরিণত হল,তার বয়ান।বইয়ের নাম তাই ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’। এখানে শুধু নিজের অধ্যাপনার সময়ের কথাই যে লিখেছেন তেমনটা না।লিখেছেন নিজের শিক্ষকদের কথা যাদের কথা পড়লে মাথা এমনিতেই শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে।অসাধারণ সেইসব শিক্ষক সম্ভবত এখন রূপকথার গল্পের নায়ক হয়ে গেছেন।তাঁদেরকে মনে হয় অতলের গহবরে হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তী।বইয়ের শুরুতেই অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন তাঁর স্কুল ও কলেজের সেইসব শিক্ষকের কথা যারা তাঁর মনে তো বটেই পাঠকের মনেও শ্রদ্ধার আঁচড় কেটে গেছে।আহ!শুধু শিক্ষক না,যেন একই সঙ্গে স্নেহশীল পিতা ও মমতাময়ী মাতার গুণে গড়া বন্ধুও।যাঁরা নিজেরা প্রদীপের সলতে হয়ে আগুনে জ্বলে ছাত্রের জীবনে আলো দান করেন।পরের অংশে লেখক বর্ণনা করতে শুরু করেছেন তাঁর নিজের শিক্ষকতা জীবনের গল্প।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পাশ করা এক তরুণ কিভাবে শিক্ষকতার মত পেশাতে এল এবং বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার আলো বিলিয়ে যেতে থাকলেন সে বর্ণনা পড়তে পড়তে নিজেই যেন তাঁর ক্লাসরুমের ছাত্র হয়ে যাই।আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র লেখক যিনি বাংলাদেশের শিক্ষাজগতের গুণগত মানের অধঃপতনের ব্যাপারটা বইয়ের পাতায় আদ্যোপান্ত লিখে গেছেন।তিনি একটা টিপিং পয়েন্টের মধ্য দিয়ে এসেছেন যার আগে দেখেছেন শিক্ষকতা পেশার মহান চেহারা আর এর পরে শিক্ষতার নির্লজ্জ ভয়াল রূপ।কিভাবে ধাপে ধাপে একটা দেশ ও জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধসে পড়ে তা একেবারে চলচ্চিত্রের মত ধরা পড়বে পাঠকের চোখে।শিক্ষাঙ্গনে ক্যান্সারের মত সন্ত্রাসের বিস্তার দেখেছেন নিজের চোখে।চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না সম্ভবত।কারণ সারা দেশটাই যে রাহুর গ্রাসে।আসলে স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতাউত্তর ত্রিশ বছরের সামরিক শাসনই সবচাইতে বেশি ক্ষতি করেছে আমাদের।এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক ছিল ১৯৭১ এর বিপ্লব।এত বড় একটা বিপ্লবের আফটারশক ঠিকভাবে সামাল দিতে পারিনি আমরা। সব মিলিয়ে হতাশাজনক অবস্থা এবং পতনের চূড়ান্ত।আরও কিছু পরের দিকে শিক্ষকদের বিতরণকারী থেকে বিপণনকর্মী হয়ে যাওয়ার লজ্জাজনক অধ্যায় লেখক তুলে এনেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়।নকলপ্রবণতা,গৃহশিক্ষক সমস্যা কিংবা ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নব্যবস্থা সহ আরও কিছু বিষয় উইপোকার মত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গিলে খেয়েছে কিংবা খাচ্ছে তা বুঝার জন্য এর চাইতে ভালো কিছু হতে পারে না।বইয়ের উপসংহারে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন নিজের স্কুল জীবনের ভয়াল শিক্ষকদের কথা।আরও লিখেছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ধরনের শিক্ষকের কথা যারা বিভিন্নভাবে তাঁর কাছে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ।বিশ্লেষণ করেছেন এই দেশের বেশ কয়েকজন নামজাদা শিক্ষকের। তবে এই বইয়ের একটা ছোট অংশের কথা না বললে চমকপ্রদ অংশের কথা বাদ পড়ে যাবে।সেটা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী কিভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে তার বর্ণনা।একরকম অদৃশ্য একটা কালো হাত যেন! অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর লেখার মান বা সাহিত্যরস যাচাই করার যোগ্যতা আমার মত নাদানের পক্ষে অসম্ভব।আমি তাঁর একজন গুণমুগ্ধ পাঠক ও ভক্ত।বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চায় কিংবা যারা শিক্ষাব্যবস্থার গুনগত মান সত্যিকার অর্থেই উন্নত করতে চান তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য বলে মনে করি।