User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নিঃসন্দেহে খুবই একটি ভাল বই।
Was this review helpful to you?
or
"এই মুহুর্তে রাষ্ট্র আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের লাশের গাড়ি। লাশ বহন করা ছাড়া আর কিছু করতে পারছেনা।" ডোম; যাদের কাজ মৃত্যু নিয়ে। মৃতদেহ নিয়ে। সমাজের নিচু জাতের মধ্যে একটা হিসেবে ধরা হয়। এই ডোমদেে সাথে বন্ধুত্ব? ছিঃ! লোকে কি বলবে! কিন্তু লেখিকা এর ধার ধারেননাই। তুলে এনেছেন ডোমদের, মানুষ বলে। বলেছেন তাদের স্বপ্ন নিয়ে। তাদের জ্বালা নিয়ে কখা বলেছেন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শুদ্ধ। যার কাছে পৃথিবীটা আর দশটা মানুষের মতো নয়। মায়ের চোখে সে পুরোপুরি সুস্থ নয়। উপন্যাসের শুরুর দিকেই শুদ্ধর এক বন্ধুর মৃত্যু হয়। তাকে পোস্টমর্টেম করার জন্য মর্গে আনা হয়। লাশের সাথে শুদ্ধও আসে। মর্গেই দেখা পায় ডোম প্রাণেশের সঙ্গে। শুদ্ধ জীবনকে জীবন থেকে দেখতে ভালোবাসে বলে বন্ধুত্ব হয়। গভীর থেকে গভীরতর হয় তাদের সম্পর্ক। কিন্তু সমাজ তো এমন সম্পর্কের পক্ষে না। বাধা আসে। তবুও তাদের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। যাতায়াত শুরু হয় প্রাণেশের বাড়িতেও। কিন্তু এর মাঝেই আত্নহত্যা করে প্রাণেশের বউ প্রীতি। নিজের বউ এর লাশ নিজেকেই কাটতে হয় ডোম প্রাণেশের। উপন্যাসের আরেক চরিত্র বিম্ববতী। মা প্যারালাইজড। করার মধ্যে শুধু শুয়ে থাকা। কথা বলতে পারেননা। বিম্ববতীর পাশে থেকে হারিয়ে যায় তার বাবা, দীপাল। বিম্ববতীর জীবনে আসতে থাকে একের পর এক ঝড়। পাশে দাঁড়ায় শুদ্ধ। ধীরে ধীরে লাশ বাড়তে থাকে প্রাণেশের ঘরে। কেও চিনতে পারে কেও চিনেও না চিনে রেখে যায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের গাড়ির জন্য। একসময় শুদ্ধর পালা আসে লাশ শনাক্তের। কিন্তু না, সে এখন চিনতে পেরেও লাশটা চেনে না। রেখে যায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের গাড়ির জন্য। কিন্তু কেন? সেলিনা হোসেনের লেখার সঙ্গে পরিচিতি খুব বেশি নেই। নেই বললেই চলে। প্রথম পড়া "মর্গের নীল পাখি।" প্রথম পড়েই বুঝলাম বর্তমান সময়ের সাথে তাদের পার্থক্য। সূক্ষ্ম একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা। আহামরি কোনো কাহিনি না। কিন্তু তারপরও সেলিনা হোসেন তার লেখনি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটা চরিত্রকে। প্রতিটা চরিত্রের পেছনে রয়েছে নতুন সত্য; নতুন রুপ প্রত্যেকের। একেকজন গড়ে উঠেছে একেক চেহারায়। আছে ভালোবাসা, ক্রোধ, রাগ, হিংসা। দিনশেষে আছে একটা শিক্ষা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা মাসঃ জুলাই সপ্তাহঃ ৩য় পর্বঃ ১ বইয়ের নামঃ মর্গের নীল পাখি লেখকঃ সেলিনা হোসেন প্রকাশনীঃ অক্ষর প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ ২০০৫ সাল পৃষ্ঠাঃ ১৯২ মূল্যঃ ২৫০ টাকা . ভূমিকা: বইটি সম্পর্কে এর সম্পাদক বলেছেন, "ছেলেমেয়েরা বদলে দিচ্ছে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা। তারা বলছে রাষ্ট্র নিজেই বেওয়ারিশ লাশ বহনকারী আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের গাড়ি। আর এ কথাটিই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা সুনিপুণভাবে।" . এখানে আমার নিজস্ব কিছু কথা বলছি। আমরা দুই বান্ধবী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে বই তুলে পড়ি। একদিন রাতে বান্ধবীর সাথে কথা বলার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম কী করিস? বলেছিলো, মর্গে। রাগ করেছিলাম কী উল্টাপাল্টা বলছে তাই। পরে ও বলল এই বইটা পড়ছে বিধায় মজা করেছে। পরের সপ্তাহে আমরা বই ইস্যু করার সময় দু'জন বই অদল বদল করে নিলাম। এমনটা প্রায়ই করি। তবে বইটা নিয়ে পড়তে পড়তে সত্যিই আমারও কয়েকবার মনে হয়েছে আমি মর্গে অবস্থান করছি। এখানেই উপন্যাসটির সার্থকতা। . পাঠ আলোচনা: গল্পের নায়ক শুদ্ধ। সে মনে করে সে সুস্থ। কিন্তু তার মায়ের ধারনা ছেলে পুরোপুরি সুস্থ নয়। কেনো তার মায়ের এমন ধারনা? উপন্যাসের শুরুর দিকেই শুদ্ধর এক বন্ধু এ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। যাকে মর্গে দেখতে আসে ওরা সবাই। শুদ্ধ ভাবে তার ভেতরে একটি শূন্যতার গোলক আছে, সেটা অনবরত সচল থাকে এবং শূন্যতার নানা ব্যাখ্যা খোঁজায় সে তৃপ্তি পায়। আর এমন এক তৃপ্তি খুঁজতে গিয়েই তার পরিচয় হয় ঢাকা মেডিকেলের মর্গের ডোম প্রাণেশের সাথে। তৈরী হয় গাঢ় বন্ধুত্ব। কিন্তু একজন শিক্ষিত, সুপুরুষের সাথে একজন ডোমের বন্ধুত্ব সমাজ সহজে মেনে নেয় না। নানা বাঁধা আসে। তবুও তারা অবিচল থাকে নিজেদের জগতে। নিজেদের নিয়ে। দু'জন খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় একটা সময়। প্রাণেশের বাড়িতে শুদ্ধর যাওয়া আসা বাড়ে। সে বাড়িতে আছে প্রাণেশের অপরূপ সুন্দরী বউ প্রীতি আর একমাত্র ছেলে সোমেন। তারা সবাই মিলে খায়-দায়, গল্প করে। কিন্তু এর মাঝেই হুট করে বউটা বিষ খেয়ে মারা যায়। মর্গে আসে তার লাশ। শুদ্ধ প্রাণেশকে চেপে ধরে সত্য বলতে। প্রাণেশ সব বলে, যা হয়েছিলো গতরাতে। সব শুনে শুদ্ধর নিজেকে অপরাধী মনেহয়। আসলে কী কারণ ছিলো ওর মৃত্যুর? কেনোই বা শুদ্ধর এমন মনেহয়? . এদিকে শুদ্ধর ফ্রেন্ড সার্কেলের এক বান্ধবী যার নাম বিম্ববতী। ওর মা প্যারালাইজড হয়ে বিছানাগত বহুদিন। ওরা সাত ভাইবোন। বড় চারবোন মিলে মায়ের দেখাশোনা করে খুব যত্নে। ভাইগুলো ছোট। বাবা শাহাবুদ্দিনও বাচ্চাদের স্নেহ দিয়ে আগলে রাখেন। শুধু বাবার টাকায় সংসার চলে না বলে বিম্ববতীকেও চাকুরী করতে হয়। ওদের মা ছিলেন গণিতের শিক্ষিকা। একটা সময় একহাতে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, সংসারের হাল টেনেছেন। পাখির মতো ওমে বড় করেছেন। কত সহজে অংক বুঝিয়েছেন। বড় সাধ করে মেয়েগুলোর নাম রেখেছিলেন তার উপন্যাসে পড়া কিছু নায়িকার নামে। বিম্ববতী, চম্পাকলি, রাশিমণি আর দীপশিখা। ছেলে তিনটিরও তাই। অথচ সে মানুষটা কী অসহায়ভাবে আজ বিছানাগত। যার কথা বলার শক্তিটুকু নেই। . বিম্ববতীর জীবনে শুরুতে ছিলো দীপাল। সে তাকে কাপুরুষের মতো ছেড়ে গেছে। কিন্তু কেনো? হারানোর বেদনা, মায়ের অসুস্থতা, সংসার, সমাজ, ভাই-বোন, বাবা সব কিছুর চিন্তায় সর্বদা বিপর্যস্ত থাকে মেয়েটি। মাঝে মাঝে ভেঙে পড়ে ঝর্ণার মতো। শুদ্ধকে ওর ভালোলাগে কিন্তু শুদ্ধর প্রেমে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই দেখে বিম্ববতীও আর আগায় না। . তবে পরিবর্তন আসে বিম্ববতীর জীবনে। শুদ্ধ নিজেই ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়ায় ওর সামনে। ওকে বিয়ে করতে চায়। কষ্টে সর্বদা নীল হয়ে থাকা বিম্ববতীর মনেহয় ওর জীবনে সুখের হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। শুদ্ধকে তো ও মনেপ্রাণে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের বিয়েটা কি হয়? . উপন্যাসের মাঝপথে স্নেহপরায়ণ শাহাবুদ্দিন হঠাৎ বদলে যায়। রাত করে বাড়ি ফেরে। এলাকার লোকে পাঁচকথা বলে। তার বাবার এক মহিলার সাথে নাকি ভাব হয়েছে। ধীরে ধীরে বদলে যায় ভালোবাসার একমাত্র আশ্রয় বাবা নামের মানুষটি। এসবের মাঝেই ছেলেমেয়েকে একদম অনাথ করে শেষ প্রশ্বাস ত্যাগ করে বিম্ববতীর মা। সে রাতেও অনেক দেরিতে ফেরে ওদের বাবা। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনেও ধমক দেন ছেলে মেয়েদের এত কান্নাকাটি করার জন্য। এরপরই তিনি পবিত্র হতে গোসলে ঢোকেন। বোনগুলো ডুকরে কেঁদে ওঠে বাবার পিশাচতায়, নিচতায় ও জঘন্য কর্মের সাক্ষী হয়ে । এর ক'দিন পরেই ঘোষণা দেন তিনি বিয়ে করেছেন। কাল থেকে নতুন বউকে নিয়ে আলাদা থাকবেন। ছেলে মেয়েরা এখন ঘৃণা করতে শিখে গেছে। তারাও জানায় তাদের বাবার প্রয়োজন নেই। সে রাতেই এ বাড়িতে নেমে আসে আরেকটি মৃত্যু। তার লাশ মর্গে আসে। প্রাণেশ চিৎকার করে কাঁদে, 'ও কেন মরলো? ওর কী হয়েছিলো? ও মরতে চাইলো আর ভগবান মেনে নিলো?' কার লাশ ছিলো তখন নীল টাইলস ওয়ালা মেঝের মর্গের স্ট্রেচারের উপর? কিভাবেই বা মারা গেল সে? শাহাবুদ্দিন কি শাস্তি পায় তার কৃতকর্মের? . এর কিছুদিন পরে মারা যায় শুদ্ধর আরেক বান্ধবী রুচিরা। সব বুঝেও মেয়েটির বাবা-মা লাশ সনাক্ত না করে ফেলে রেখে চলে যায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের জন্য। কিন্তু কেনো? প্রাণেশ চায় না তার ছেলে তার মতো নিম্নশ্রেণীর হোক। সোমেনকে সে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নটা কি পূরণ হয়? সকল লাশের ব্যবচ্ছেদ করছে যে প্রাণেশ, তার পরিণতিই বা কী? উপন্যাসের শেষ মুহূর্তে শুদ্ধও একটি লাশের মুখোমুখি হয়। তাকে সনাক্ত করতে বলা হয়। চিনতে পেরেও সে অস্বীকার করে। স্থবির হয়ে যায়। লাশটি কার ছিলো? এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে আপনাকে পড়তে হবে বইটি। . ব্যক্তিগত মতামত: মৃত্যু আমাদের জীবনের এক কঠিন সত্য। বিভন্ন রকমের ও ধরনের মৃত্যুকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। ব্যক্তিগত শোকগুলো মর্গের ছোট ঘরটিকে বৃহৎ শোকে বদলে দিয়েছে। যে শোকগুলো আমার হৃদয় ছুঁয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে কয়েকবার। কিছু মৃত্যু এতই আচমকা আর অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে যে মেনে নিতেই অনেক কষ্ট হয়েছে। মনে হচ্ছিলো চোখের সামনে দেখছি যেন। প্লট ও সাবপ্লটগুলোতে কখনও পরিবারের প্রবল কষ্টে মর্গের ব্যবচ্ছেদের পরে বেওয়ারিশ হয়ে গেছে লাশ। এত কিছুর মাঝেও ছেলেমেয়েরা বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজছে। মর্গের সামনেও তারা করে বসছে ভালোবাসার প্রকাশ। যারা অনেকদিন ধরে অনবদ্য, ব্যতিক্রম কিছু পড়তে চাচ্ছেন নিশ্চিন্তে হাতে নিতে পারেন উপন্যাসটি। . লেখক পরিচিতি: সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নারী ঔপন্যাসিক। প্রখর বুদ্ধিমতি এই লেখিকার জন্ম ১৪ই জুন, ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে। পড়াশোনাও শেষ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাঁর উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় নতুনমাত্রা যোগ করেছে। তাঁর গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম মহিলা পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে অবসর নেন। ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ভ্রমণ তাঁর নেশা। তাঁর মোট উপন্যাসের সংখ্যা ২১টি, গল্প গ্রন্থ ৭টি এবং প্রবন্ধের গ্রন্থ ৪টি। লেখিকার প্রাপ্ত পুরষ্কারসমূহ: ড: মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯) বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০) আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১) কামার মুশতারি স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭) ফিলিপস্ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪) অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪) একুশে পদক (২০০৯) রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (২০১০) স্বাধীনতা পদক (২০১৮) . ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫ এত অসাধারণ একটি উপন্যাসের কোনো ত্রুটি অন্তত আমার চোখে পড়েনি। আয়েশা সিদ্দিকা