User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
i like this book.
Was this review helpful to you?
or
বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তাঁর কথাশিল্প কতটুকু পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে, সেটা প্রশ্নাতীত। কিন্তু আমরা তাঁর সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হলেও ব্যক্তি ওয়ালীউল্লাহ সম্পর্কে খুবই কমই জানি। চাকরির সুবাদে তাঁর জীবনের বড় একটা সময় কেটেছে বিদেশে। তাঁর স্ত্রী আন মারি ওয়ালীউল্লাহ তাঁর সম্পর্কে অন্তরঙ্গ একটি ছবি এঁকেছেন এ বইয়ে। তাঁর ব্যক্তিজীবন, রুচি, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাসহ কতশত বিষয় ওঠে এসে এ বইয়ে। বইটি স্মৃতিকথা হিসেবে অসাধারণ। সেই সঙ্গে কথাসাহিত্যিক ওয়ালীউল্লাহকে জানতে বইটি সহায়ক হবে।
Was this review helpful to you?
or
সদা প্রাণে জাগে উচ্ছ্বাস, তোমার বক্ষে আমার বাস । বিচলিত মন তোমায় ভেবে, দূর গৃহে বয় নীরব শ্বাস। বইটা সম্পর্কে লিখতে বসে দুটি লাইনই সর্ব প্রথম মাথায় আসলো। আনিসুজ্জামান(অধ্যাপক,বাংলাবিভাগ,ঢাকা ইউনিভার্সিটি)বইটির শুরুতে ওয়ালীউল্লাহ সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন এক নৈশভোজের ঘটনা উল্লেখ করেন -চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের কিছু অধ্যাপকের আমন্ত্রণে সেখানে 'খৈয়াম' নামক এক রেস্টুরেন্টে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সস্ত্রীক এসেছিলেন। সেই রেস্টুরেন্টে ওয়েটারদের একজন যখন নিম্নকন্ঠে তার কাছে জানতে চেয়েছিল যে, তিনিই 'লালসালু'র লেখক কি না, তখন তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। বইটির অনুবাদক শিবব্রত বর্মন। চমৎকার সাবলীল শব্দায়ন আর লেখনীর তুড়িতে এতো মধুর জাদু ছিল যা প্রকৃত লেখক ও অনুবাদক উভয়ের লেখার দারুন সমন্বয়ের বহিঃপ্রকাশ। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সম্পর্কে আন মারি ওয়ালীউল্লাহ শব্দ, স্মৃতি আর সময়ের ছাঁকনি দিয়ে তাঁর জীবনের গভীর থেকে গভীরের অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন। সহসা কারো জীবনীগ্রন্থ পরে এতো ভালো লাগে না , তবে এই বইটি তে অন্য রকম স্বাদ পেয়েছি। বিভিন্ন প্যারা করে জীবনীগ্রন্থটা লেখা হয়েছে । *আমাদের সাক্ষাৎ - তাঁর কোন জিনিসটা আমাকে আকর্ষণ করেছিলো? ওর চোখের কোমলতা, ওর হাসি? ওর অপূর্ব হাতে ধরে রাখা ৫০টি সিগারেটের গোলাকার টিন , যা সে কখনোই হাতছাড়া করেনি! ওর মার্জিত ভঙ্গিমা? ওর চৌকস ভাব? নম্রতা? জানি না। হয়তো এর সবই। সেই সময়টাতে আন মারির বয়স ছিল ২৩ আর সৈয়দ ওয়ালীউলাহর বয়স ছিল ৩১। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অস্ট্রেলীয় কিছু বন্ধু তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে উলুমুল বলে ডাকতেন। গহীন গভীরে মিশে থাকা হাজারো কথা আন মারি তুলে এনেছেন এখানে। *ইউরোপে - ইউরোপে অবস্থানরত আন মারির মা বাবার সাথে দেখা করার জন্য উভয়েই সেখাবে যান এবং সেখানে থাকাকালীন ওয়ালীউল্লাহর কাটানো সময়গুলোর বর্ননা উল্লেখ করা হয়। *বাঙ্গালী মুসলমান - বাঙালী ,বাংলার সমাজ, বাংলার আবহের প্রতি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গভীর টান এইভাবে উল্লেখ ছিল যে- উপমহাদেশের লোকজনের সঙ্গে খেতে বসে সে ওর বাঙ্গালী কায়দায় আঙ্গুল দিয়ে ভারতীয় খাবার খেত। আমি ওর আঙ্গুলের প্রশংসা করতাম। মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসতে পছন্দ করত ও। জাকার্তায় থাকতে বাড়িতে লুঙ্গি পরত। বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে সিগারেট খেত না। মামা মামির পা ছুঁয়ে কদমবুসি করত। রুই মাছ, ঢাকাই পনির, উচ্ছে,আম, সব ধরনের বাঙালী খাবার পছন্দ ছিল ওর। সুপারি চিবোত, ভাটিয়ালি পছন্দ করত। *সর্বগ্রাসী পাঠক - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মূলত আধুনিক সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তারা পড়া কিছু বইয়ের নাম এলোমেলো ভাবে উল্লেখ করা হল - এজরা পাউন্ড, টি এস এলিয়ট, স্যামুয়েল বেকেট, ফ্রানৎস কাফকা, ভার্জিনিয়া উলফ, ইভলিন ভাউ, ডিলান টমাস, এল ডুরেল, পাবলো নেরুদা-অধিকাংশ মার্কিন ঔপন্যাসিক। বইটিতে আরো অনেক লেখকের নাম আছেন যা পড়ে সাহিত্যের প্রতি তার গভীর আগ্রহের ছাপ পাওয়া যায় । * শিল্পী - ছবি আঁকা তাঁর খুব শখ ছিল । ছোটবেলার একটা ঘটনা উল্লেখ করি। একদিন তিনি পড়া না করে ছবি আঁকছিলেন। ওর বাবা এসে চুলের ঝুঁটি ধরে টেনে উঠিয়ে ওর ছবি আঁকা ছিঁড়ে ফেলেছিল। ওয়ালী তখন নিচু স্বরে বলেছিল, 'ছবি আঁকা চালিয়ে যেতে হলে আমাকে মাথার চুল ছেঁটে ফেলতে হবে।' *লেখক- এই প্যারাতে বেশ কিছু চিঠির অংশ উল্লেখ করা আছে যার মধ্যে তাঁর লেখক হওয়ার তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। *মানুষ ওয়ালী- ওয়ালী সম্পর্কে আন মারির উক্তি- 'ওয়ালী ছিল অবিশ্বাসী, কিংবা বলা যায় অজ্ঞেয়বাদী। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয় , সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ও মুসলমান হিসেবে গর্ববোধ করত। বইটির শেষে ওয়ালীউল্লাহর নিজের কিছু দৃষ্টিভঙ্গি- ' যখন আমি বলি যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তখন হয়তো কথাটি দিয়ে এই বোঝাতে চাই যে, তোমার কাছে আমি সহজ বোধ করি, স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমি তোমার কথা ভাবি এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমি ভাবি যে, তোমার সঙ্গে সবকিছু নিয়ে কথা বলা যায়। এটা কি কোন বোঝাপড়া? দুটি মানুষ মানসিকভাবে পরস্পরের কাছে এমন নগ্ন হয়ে ওঠে যে, তারা একে অপরের অবিচ্ছেদ্য হয়ে যায়। মানসিক নগ্নতা থেকে জন্ম এক ধরনের ঐক্য। কিন্তু আমরা এতো সহজে নগ্ন হতে পারি না ........। মনের উপর একটা পর্দা ঝুলিয়ে রাখার প্রয়োজন হলে বুঝতে হবে তোমার পক্ষে নগ্ন হওয়া সম্ভব নয় এবং সে কারণে ভালোও বাসা সম্ভব নয়। (২৬ অক্টোবর ১৯৫৪) । চমৎকার, চমৎকার , চমৎকার, চমৎকার, চমৎকার, এক কথায় চমৎকার ।