User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
১৯৫১ সালে প্রকাশিত দ্যাফনে দ্যু মরিয়ের 'মাই কাজিন র্যাচেল' অসাধারণ একটি রহস্যোপন্যাস। অধিকাংশ পাঠক এমনকি আমারও একটা বদ অভ্যাস আছে যে কোন বিখ্যাত লেখকের লেখা পড়তে গেলে তার লেখা সেরা কাজটির সাথে অন্য কাজগুলোর তুলনা করতে শুরু করে দিই। এরকম তুলনামূলক বিচার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুখকর হয় না। বরং হতাশ হতে হয়। 'মাই কাজিন র্যাচেল' পড়বার সময়ও বারবার আমার 'রেবেকা' পড়বার স্মৃতি মনে পড়ছিল এবং অবচেতন মনেই 'রেবেকা'র সাথে 'মাই কাজিন র্যাচেল' এর সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য বিচার করতে উদ্যত হচ্ছিলাম। এমনটা করলে যেকোন পাঠককেই হতাশ হতে হবে। কেননা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি 'রেবেকা'র কোন তুলনা হয় না। 'রেবেকা'র সাথে তুলনা করতে গেলে দ্যাফনে দ্যু মরিয়ের অন্য সব সৃষ্টিকর্মই ম্লান দেখাবে। তবে একটি বইয়ের সাপেক্ষে আরেকটি বইয়ের গুনাগুণ বিচারের ছেলেমানুষিতে না গিয়ে, স্রেফ একটি একক উপন্যাস হিসেবে 'মাই কাজিন র্যাচেল'কে যদি দেখি, তবে স্বীকার করতেই হবে যে এটি দারুণ একটা রহস্যোপন্যাস। কাহিনীর বক্তা ফিলিপ অ্যাশলে যে ছেলেবেলায়ই তার বাবা-মাকে হারায় এবং পরবর্তিতে একেবারে পিতৃস্নেহে তাকে মানুষ করে তার অবিবাহিত কাজিন অ্যামব্রোস। সে ছিল ফিলিপের চেয়ে পাক্কা কুড়ি বছরের বড়। ফিলিপের যখন বয়স সবে ২৩, তার কাজিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং শরীর ঠিক রাখতে সাময়িক সময়ের জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমায় ইতালিতে। সেখানে অ্যামব্রোসের সাথে দেখা হয় বিধবা র্যাচেলের সঙ্গে যে কিনা সম্পর্কে ফিলিপ ও অ্যামব্রোস উভয়েরই কাজিন ছিল। র্যাচেলের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে অ্যামব্রোস। কিন্তু তারপরই অ্যামব্রোস আরও কঠিন অসুখে পড়ে এবং অসুস্থ অবস্থায় অত্যাধিক সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নিজের অসুস্থতার জন্য সে র্যাচেলকে দায়ি করতে থাকে এবং এ বিষয়ে ফিলিপের কাছে চিঠি লেখে। চিঠি পেয়ে ফিলিপ যতদিনে ইতালিতে পৌঁছুল, ততদিনে মারা গেছে অ্যামব্রোস। ভাইয়ের কথা অনুযায়ী ফিলিপ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে র্যাচেলই অ্যামব্রোসের খুনি। এ জন্য র্যাচেলের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জন্মায় তার। র্যাচেলকে শাস্তি দিতে চায় সে। কিন্তু কদিন পর র্যাচেল যখন ইংল্যান্ডে ফিলিপের কাছে এসে থাকতে শুরু করে, ফিলিপ প্রেমে পড়ে যায় তার। সে তার পুরনো সন্দেহ থেকে সরে আসে। শুরু হয় একপেশে ভালোবাসা। কিন্তু ফিলিপ তার লেখায় দাবি করে যে র্যাচেলের আচরণেও তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেত। তবে সেটি ঠিক না ভুল তা বিচার করবে পাঠকই। যাইহোক, ফিলিপ সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেয় র্যাচেলের নামে, নিজের ২৫তম জন্মদিনের দিন। ওইদিন র্যাচেল আর ফিলিপের মিলন হয় যার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিপ ভাবতে শুরু করে যে র্যাচেলও তার ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছে। তাই পরবর্তিতে সকলকে সে জানিয়ে দেয় যে তারা বিয়ে করতে চলেছে। কিন্তু এমন সময় বেঁকে বসে র্যাচেল। তখন আবার ফিলিপের মনে পুরনো সন্দেহের বীজ নতুন করে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে র্যাচের অন্য এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক আছে এবং ফিলিপের কাছ থেকে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই সে তার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেছে। পরবর্তিতে কি হয়, তা জানতে পাঠককে বইটা পড়তে হবে। আমি শুধু এইটুক জানাতে চাই, উপন্যাসের বক্তার ভাষ্য অনুযায়ী এই উপন্যাসে দুইটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। কিন্তু টিপিক্যাল রহস্যোপন্যাসের মত এখানে খুনিদের সরাসরি চিহ্নিত করা হয়নি। বরঞ্চ এটি মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক কাহিনী যা পড়ে পাঠককেই বের করে নিতে হবে যে উপন্যাসে বর্ণিত দুইটি ঘটনা কি আসলেই হত্যাকান্ড ছিল আর তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে সেই হত্যাকান্ড দুইটি সংগঠনের পিছনে কাদের কাদের হাত আছে। সবমিলিয়ে বলতে পারি, মরিয়ের অন্যান্য উপন্যাসের ন্যায় এই উপন্যাসটি পাঠের অভিজ্ঞতাও পাঠকের জন্য অত্যন্ত সুখকর হবে। উপন্যাসের কাহিনীর এগিয়ে চলার পাশাপাশি পাঠকেরাও নিজেদের মনে গেসিং গেম খেলতে থাকবে, 'র্যাচেল কি খুনি, নাকি খুনি না?'... আগেই বলেছি এটি অনেকাংশে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। তাই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নিতে হবে পাঠককেই আর সেই সিদ্ধান্ত যথাযথ করে তুলতে চাইলে পাঠককে যতটা সম্ভব কাহিনীর গভীরে প্রবেশ করতে হবে।