User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা মৃত্যু ক্ষুধা উপন্যাসটি অনেক সুন্দর!
Was this review helpful to you?
or
Interesting
Was this review helpful to you?
or
??
Was this review helpful to you?
or
বেস্ট
Was this review helpful to you?
or
A great book which inspires me a lot.Thanks to rokomari .....
Was this review helpful to you?
or
A great novel by our beloved rebel poet !
Was this review helpful to you?
or
???????
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
নজরুল ইসলাম এর বইটা অসাম্প্রদায়িক টাইপ।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন,,,,,
Was this review helpful to you?
or
Awesome
Was this review helpful to you?
or
oshadharon likha
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ কবিতা এবং সঙ্গীতে নজরুলকে খুঁজতে গেলে সন্ধানী পাঠক-শ্রোতার মানসে ধরা পড়বে তার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জীবনের বিচিত্র যাপন ধারা। সমাজ-রাজনীতির নবযুগে ধূমকেতুর মতো উদয় হওয়া নজরুলের বহুধা বিভক্ত অস্থির মনের পরিচয় পাওয়া যায় সহজেই। সকালে যিনি সাম্যবাদী রক্তের রাজনৈতিক কর্মী, দুপুর পেরোতেই তিনি হয়ে ওঠেন বিপ্লবী সৈনিক। গোধূলির ফিকে হয়ে আসা আলোয় যাকে দেখা যায় প্রবল প্রেমময় পুরুষ পরিচয়ে, সুবহে সাদিকের আগে তাকে তথাকথিত প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী হিসেবে আবিষ্কার করাও অবশ্যম্ভাবীরূপে অসম্ভব নয়। কবি হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়া লেখকদের আজীবন কবি হয়েই থেকে যেতে হয়। কবিদের অন্য পরিচয় স্বীকার করতে কেন যেন নারাজ থাকে ইতিহাস। অন্যান্য কবিদের মতোই নজরুলের কথাসাহিত্যও তাই ব্যাপক উপেক্ষিত। বিদ্রোহী, সাম্যবাদী, প্রেমিক, ধার্মিক, সংসারী নজরুলের স্বতন্ত্র রূপ মূর্ত হয়ে ওঠা সত্ত্বেও তার 'মৃত্যুক্ষুধা' উপন্যাস নিয়ে আলোচনা তুলনামূলক কম হয় - এটি তাই খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। ১৯৩০-৩১ সাল নাগাদ বই আকারে প্রকাশিত হয় 'মৃত্যুক্ষুধা'। এর আগে তিন বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল উপন্যাসটি। এটি সেই সময়ের কথা, যখন নজরুল তার পরিবার নিয়ে কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়কের ধারে একতলা এক বাড়িতে থাকছেন। নজরুলের বই বিক্রি করে প্রকাশকরা ফুলে-ফেঁপে উঠলেও নিদারুণ দারিদ্র্যে জর্জরিত হয়ে নজরুল রচনা করছেন, "হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান। তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান।" উপন্যাসের গল্প শুরু হয়েছে কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়কেই। যেখানে নিম্ন আয়ের মুসলমান আর ধর্মান্তরিত ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে। চানাচুর ভাজায় ঝালছিটের মতো দু-এক ঘর হিন্দুও যে নেই, তা নয়। দারিদ্র্যের বোঝা বয়ে একে অন্যের সাথে ঝগড়া করতে করতেই এদের দিন কাটে। সেখানেই থাকে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবার। তিন ছেলে হারানো এক বিধবা মহিলা, তার স্বামীহারা তিন পুত্রবধূ, ভাগ্য পীড়িত মেয়ে, একগাদা নাতি-নাতনি আর একমাত্র রোজগেরে ছেলে প্যাঁকালে - সংসারে এই কজন মানুষ। তাদের দারিদ্র্য, অসুখবিসুখ, জীবনসংগ্রামের টুকরো টুকরো ঘটনাতেই কাহিনি এগিয়ে যায়। প্যাঁকালে ভালোবাসে পাড়ার 'খেরেস্তান' মেয়ে কুর্শিকে। একদিন কুর্শির ওপর অভিমান করে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। দুর্দশার সীমা থাকে না তার পরিবারে। খ্রিস্টান মিশনারিরা তাদের স্বভাবজাত কৌশল খাটিয়ে দরিদ্র মুসলিম পরিবারটির মেজ-বৌকে প্ররোচনা দেয় যিশুর ধর্মে দীক্ষা নেবার, লোভ দেখায় সচ্ছলতার। এই গল্পের সমান্তরালে শুরু হয় আরেক গল্প। সে গল্প আনসার নামের এক বিপ্লবী, বিদ্রোহী, দেশপ্রেমিক যুবকের। আনসারের হৃদয়ের এক অংশ অবশ্য রয়ে গেছে দূরের কোনো শহরে রুবি নামের এক বিধবা তরুণীর কাছে - যাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। ছন্নছাড়া আনসারকে একদিন পুলিশ গ্রেফতার করে। অন্তিম পরিণতির দিকে এগোয় উপন্যাসের গল্প। সর্বহারাদের জীবন নিয়ে শুরু হওয়া সে গল্প রূপ নেয় এক অসহায় দাদির গল্পে, দুইবার ধর্মান্তরিত হওয়া বুক ভাঙা এক নারীর গল্পে, নিভু নিভু আয়ুর এক প্রেমিকযুগলের একই সাথে মিলনাত্মক অথচ বিয়োগাত্মক গল্পে। উপন্যাসের দৃশ্যকল্প রচনায় নজরুলের দক্ষতা আশ্চর্যরকম সুন্দর। চরিত্র গঠন কৌশলও দারুণ। প্রয়োজন অনুসারে আঞ্চলিক ভাষা, প্রমিত ভাষা কিংবা ব্রিটিশ সায়েবদের পয়লা সিলেবলে অ্যাক্সেন্টওয়ালা বাংলা - গোলমেলে লাগেনি কোনোটিই। একজন কবি যখন উপন্যাস লেখেন, তার ভাষা সাধারণ ঔপন্যাসিকদের মতো তো হয় না নিশ্চয়ই। আর সেই কবির নাম যখন কাজী নজরুল ইসলাম, তখন যে ভাষার প্রয়োগ হবে নান্দনিকতার স্পর্শে অত্যুজ্জ্বল - সে কথা বলাই বাহুল্য। 'মৃত্যুক্ষুধা' উপন্যাসেও তাই গল্পের চেয়েও আকর্ষণীয় তার ভাষাশৈলী, গাঁথুনির চেয়েও উপভোগ্য তার উপমা-অলঙ্কার, কান্নার চেয়েও লক্ষ্যণীয় তার নান্দনিক বেদনার ছাপ। পড়ার সময় কখনো কখনো কবিতা বলে ভ্রম হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। যারা কবিতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এর চেয়ে আকর্ষণীয় আর কী-ই বা হতে পারে? প্রিয় একটা অংশ হুবহু উঠিয়ে দিয়ে শেষ করে দিচ্ছি। দুইজনে সারারাত সমুদ্র আর আকাশের তারা দেখেছি। একবার শুধু অতি কষ্টে বলেছিল, "ঐ তারার দেশে যাবে?" আমি বললাম, "যাব।" সে গভীর তৃপ্তির শ্বাস ফেলে বলল, "তাহলে এসো, আমি তোমার আশায় দাঁড়িয়ে থাকব।" তারপর আমায় চুমু খেলো। এক ঝলক রক্ত উঠে এলো। তার বুকের রক্তে আমার মুখ-ঠোঁট রাঙা হয়ে গেল। বই: মৃত্যুক্ষুধা লেখক: কাজী নজরুল ইসলাম রেটিং: ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলাম অজ্ঞ ক্ষুধার্ত মানুষকে ধর্মের কথা বলাটা কতটা যৌক্তিক? যেখানে বেঁচে থাকা দায় সেখানে ধর্মকে বিলাসীতা বলা কি ভুল?দিনশেষে যখন ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর একে অপরের সাহায্য লাগবেই তখন ধর্মকে নিয়ে নোংরামি সৃষ্টির আসলেই কি কোনো মানে আছে।এতে তো ধর্মের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয় না।কিন্তু ধর্ম তো মানুষের কল্যাণের জন্য। কারো দরিদ্রতার, মুর্খতার সুযোগ নিয়ে ধর্মান্তরিত করার মধ্যে কি আদৌ কোনো মানবিক কিংবা ধর্মীয় বোধ কাজ করে,, কেউ যদি মন থেকে ধর্মকে মেনেই না নে তাহলে আর সে ধর্মের মূল্য কি,,,স্রষ্টা তো সবার মনের খবরই জানেন।তাছাড়া ধর্ম কোনো খাঁচা নয় আর মানুষও কোনো পশু নয় যে খাদ্যের লোভ দেখিয়ে ধর্মের খাঁচায় ঢুকাতে হবে,,মৃত্যুক্ষুধাতে তুলে ধরা হয়েছে এমন মানুষের গল্প যারা নিজেদের দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে চলছে অবিরাম,, নিজেদের অফুরন্ত দুঃখের মধ্যে যখন জাতি বিদ্বেষ যোগ হয় তা আরো ভয়াবহ রুপ নেয়, রোগে ক্ষুধায় কাতর হলেও আপন জাতির খবর থাকে না,,কিন্তু যখন অন্য জাতির সামান্য স্পর্শও নেয় তখন আপন জাতিই তাকে সমাজচ্যুত করে,,গজালের মার তুমুল ঝগড়ার মাধ্যমে শুরু হয় কাহিনী,,তাদের দারিদ্র্যতা,দৃষ্টিভঙ্গী, অসাধারণ লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।মেজবৌ এর অদ্ভুত জীবনীশক্তি আপন জাতির দেওয়া কষ্টে ধর্মান্তরিত হওয়া,,প্যাকালের তার পরিবারকে ছেড়ে যাওয়া,কিংবা আনসারের মতো মানুষের সকল সুখ ছেড়ে গরীবের জন্য লড়াই করা,একজন প্রকৃত নেতা হয়ে ওঠা,সবকিছুই লেখকের লেখায় বাস্তব রূপ লাভ করে।এককথায় অসাধারণ ছিলো এই উপন্যাসটি পড়ার অনুভূতি।স্পয়লার দিতে চায় না তাই কাহিনি সম্পর্কে আর তেমন কিছুই বললাম না।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসিক নজরুলকে যারা চেনেন না,একটু মনোযোগ দিন। মৃত্যুক্ষুধা আকারে ছোট একটি উপন্যাস। ‘নজরুল একাডেমী’র ‘নজরুলের উপন্যাস সমগ্র’র মাত্র ১০৬ পৃষ্ঠা জুড়ে এই উপন্যাস। কিন্তু কি নেই এতে...? জীবন-মৃত্যু-প্রেম-কামনা-দারিদ্র-সংঘাত,সব। সমরেশ বসুর ‘যুগ যুগ জীয়ে’র রিভিউ লিখেছিলাম। নিজেও মুগ্ধ ছিলাম বইটি পড়ে। সেখানে লেখক কম করে হলেও ২০০ পৃষ্ঠা ধরে কমিউনিজমকে তুলে ধরেছেন। নজরুল মাত্র ৫-৬ পৃষ্ঠায় তার চেয়ে সুন্দর করে কমিউনিজমকে এঁকেছেন। আনসারের একটা বক্তৃতার মধ্য দিয়ে কমিউনিজমের মূলমন্ত্র তুলে ধরেছেন। তাতে খুঁত আছে বলে মনে করি না
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_প্রকাশনা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম:মৃত্যুক্ষুধা লেখক:কাজী নজরুল ইসলাম প্রকাশনা: রকমারি তে যেটা আছে (মাওলা ব্রাদার্স) মূল্য:১১০৳ পৃষ্ঠাঃ ৭৫ প্রচ্ছদঃ ক্যাটাগরীঃ চিরায়িত বাংলার উপন্যাস প্রকাশকাল ঃ ১৯২৭ থেকে ১৯৩০ কাহিনী ঃ মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী উপন্যাস, নজরুলের উপন্যাসের সংখ্যা যদিও খুব বেশি না, তবে চিঠির সাহিত্য আর যেক’টি উপন্যাস লিখেছিলেন তাতে করে তাঁর বিদ্রোহী কবি- প্রেমের কবি বা সাম্যের কবি ছাড়াও যে লেখক সত্তা আছে, সেটা বেশ প্রগাড় রূপেই প্রকাশ পায়, এমনকি কবির কিছু ভাষণও এক অমর সাহিত্যের নিদর্শন । আমি যতদূর জানি , আর সকল সাহিত্যের মতই এই উপন্যাসটি নজরুলের বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত। ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত নজরুল কৃষ্ণনগরে বাস করতেন। কৃষ্ণনগর মাটির পুতুল এর জন্য বিখ্যাত, আর উপন্যাসের বাইরে গিয়ে কথা বলি একটা এটা গোপাল ভাঁড়ের কৃষ্ণনগর । আমাদের এই মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের পটভূমি কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়ক, ওমান কাথলি পাড়া (রোমান ক্যাথলিক) এবং কলতলাকে কেন্দ্র করে রচিত। যেখানে হিন্দু-মুসলিম-ক্রিশ্চান সম্রদায়ের বাস। উপন্যাসের শুরু হয় পানি সংগ্রহ কে কেন্দ্র করে... একটি হতদরিদ্র মুসলিম পরিবার। জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ মা, ৩জন বিধবা পুত্রবধু, দেবর প্যাঁকালে। পরিবারের প্রায় ডজনখানেক সন্তানের ভরণপোষণের ভার বছর উনিশের প্যাঁকালের কাঁধে। আছে হিড়ীম্বা, গজালের মা কুঁদুলি,পুঁটের মা আরও কত শত মানুষ , চাঁদ- সড়কের চাঁদ বাজারে ভিড় করে আছে। এদের মধ্যেই ক্রিশ্চান কুর্শি ভালবাসে প্যাকালেকে, ধর্মান্তরিত হতেও দ্বিধানিন্ত বোধ করেনি সে। একে একে উপন্যাসে আসে আনসার, রুবি, লতিফা , আনসার এরা... এই সময় আনসার রাজবন্দী হয়ে রেঙ্গুনে চলে যায়, সেখানে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার আশায় ওয়ালটেয়ারে যায়। নজরুল নিজেও একজন রাজবন্দী ছিলেন। সুস্থ হবে আনসার? কি হবে ধর্মান্তরিত কুর্শির? ? পাঠ প্রতিক্রিয়া ঃ সেই কোন ছোট বেলায় লিচু চোর দিয়ে নজরুলের সাথে পরিচয় এর পড়ে খুকি ও কাঠবেড়ালি কিংবা সকাল বেলার পাখি, সব ক’টি কবিতা মন্ত্রমুগ্ধের মত টেনেছে, আজো টানে!! নজরুলের কবিতার আবৃতি শোনা করা যেন প্রাণের অংশ। টানা শুনতে আবৃতি করতে ক্লান্ত হইনা! যায় হোক উপন্যাসে আসি, এটা নিয়ে খুব সম্ভব নাটক রচিত হয়েছিল বেশ আগে যেহেতু নানা উৎস থেকে জানা যে উপন্যাসটি বাস্তবতা ভিত্তিক সেহেতু এটি কে নিয়ে কথা বলা সম্ভব না। আসলে নজরুল আমার এত প্রিয় উনার লেখনী নিয়ে মন্তব্য করাটা বেশ কষ্টকর...।। সবার পড়া উচিৎ উপন্যাসটি ....................................। আমি আজ কে ২য় বারের মত আবার পড়ব বইটি, সেটা ৩য় কিংবা বেশ ক’বার ও হতে পারে আজই, আজ কে পিডিএফ পড়লাম, হার্ডকপি খুঁজব খুব তাড়াতাড়ি ...। জ্বলে থাক সব প্রদীপ..................। রেটিং ঃ ৫/৫ রকমারি লিঙ্ক ঃ https://www.rokomari.com/book/5457/%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%A7%E0%A6%BE
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়ার সময় আমার যেন মনে হইতেছিলো, প্রত্যেকটা চরিত্রই জীবন্ত।
Was this review helpful to you?
or
good books...
Was this review helpful to you?
or
"মৃত্যু? সে তো সহনীয়! সে তো বরণীয়! যদি আমি তাঁহাকে পাই মৃত্যুর স্বাদে!" মৃত্যু নিয়ে এক অবিস্মরণীয় খেলা খেললেন কাজী নজরুল! মৃত্যুপুরে বসে বসে কবি লিখছেন 'মৃত্যুক্ষুধা'। কাজী নজরুল আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন করুন মৃত্যুর অসহায় মানুষের কিছু দৃশ্য! মৃত্যুর যেই যন্ত্রনা সেই যন্ত্রণাও অনেক সময় অনেক মানুষ আপন করে নেয়! মৃত্যুর জন্য অনেকে অপেক্ষা করে তীব্র আগ্রহ নিয়ে! কিন্তু কখন? উপন্যাসের পাতায় আমরা উত্তর খুঁজি। চাঁদ সড়কে বসবাস করে সকল ধর্মের মানুষ। কাধে কাধ মিলিয়ে ভাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের সাথে চলাচল করছে এই পাড়ার অসহায় মানুষগুলো। প্রতিটি ঘরে অসহায়ত্ব! আর্তনাদের চিৎকার ভেসে যাচ্ছে টিনের চালার উপর দিয়ে উড়ে! হিড়িম্বার আর গজালের মা'র সেই কুৎসিত ঝগড়ার পরও তাদের একজনের বিপদে অন্যজনের ছুটে আসার কথা পাঠকের অনেক দিন মনে থাকার কথা! গজালের মা'র ছেলে প্যকালে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। যা আনে তাই দিয়ে সংসার চলে ভাঙ্গা রিকশার চাকার চেয়েও মন্থর গতিতে! বাড়িতে আছে সেজো বৌ, মেজো বৌ সহ অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে! কেউ বাসন নিয়ে দরজায় আবার কেউ বা মসজিদের সামনে শিন্নির জন্য অপেক্ষারত! আর ঘরে মমতাময়ী মা কান্দে ব্যাথা, বেদনার তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে! মাথার উপরে কাক উড়ে যায় বিনে আওয়াজে! যেন কাকের আওয়াজেরও দাম আছে! এই হচ্ছে চাঁদসড়কের একাংশের করুন অবস্থা!প্যকালে কাজে যাওয়ার পথেই দেখা বাড়ন্ত মেয়ে কুর্শির সাথে! এই চৌদ্দ বছর বয়সে যৌবন উপছাইয়া পড়ছে! রূপ যেন আর ধরে না! মসজিদের পাশে, তাল গাছের সাড়ির নিচে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে কুর্শির আর প্যকালের কিছু প্রেমালাপ শুনিয়েই লেখক তাঁদের প্রেমের গভীরতা জানিয়ে দিলেন। আহা! এ দেখা যেন কভু শেষ হবার নয়! পরদিন সকালে সেই প্যকালে পালিয়ে গেল সাথী কুর্শিকে একা রেখে। প্যকালের ঘামে ভেজা শার্ট গলায় নিয়ে বিলাপ করছে কুর্শি! যেন এখন তার পৃথিবীতে বেঁচে থাকা নিরর্থক! যার জন্য মালা গাথঁলাম, সেই বলে পচা ফুল! এখন কি হবে এই অসহায় পরিবারের? এদের বিরহ মাখা আর্তনাদ কে শুনবে? সেজো বৌ কে এক খ্রিষ্টান ডাক্তার দেখতে এসে ঔষধ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ পড়ল মেজো বৌ'র দিকে! মেজো বৌ'র সৌন্দর্যের প্রশংসা পাড়ার কেই বা না করে? পথের বসে থাকা কুকুরটা মেজো বৌ'র পিছে পিছে চুপিসারে হেটে চলে! সেই মেজো বৌ হঠাৎ ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হয়ে গেল! আর কত অভাব সহ্য করবে? অভাবের তাড়নায় খ্রিষ্টান পাদ্রীর সাথে উঠাবসা মেজো বৌ'র! ঘরের বাইরে বসে মাথা আচড়িয়ে অঝোড় নয়নে কান্না করছে প্যকালের মা অর্থাৎ মেজো বৌ'র শাশুড়ি! শেষ সম্বল টাও বুঝি কেড়ে নিল সেই চিরশত্রু খ্রিষ্টানরা! সবাই বুঝাচ্ছে মেজো বৌকে! কেউ দুঃখে অভিশাপ দিচ্ছে! আবার কেউ বা আদর করে বুঝাচ্ছে! আর সেজো বৌ? সে তো ট্রাজেডি! সবার আশা, খ্রিষ্টান ডাক্তারের ঔষধ খেয়ে বেঁচে যাবে সেজো বৌ আর তার ছোট্ট শিশু! আদৌ কি সবার আশা পূরণ হয়েছে?লতিফার দাদাভাই আনসার হঠাৎ আগমন করল গল্পে! কথা বলতে বলতে লতিফা যখন দাদাভাইকে রুবির কথা জিগ্গেস করল তখনি আনসার পাথুরে মুর্তির মতো তাকিয়ে রইল বোন লতিফার দিকে! 'রুবি? সে তো বিয়ে করে ফেলেছে! বিয়ের পর জামাই মারা গেছে। এখন সে বিধবা। আমার সাথে দেখা হয়েছিল। কিছু বলেনি। প্রয়োজন বোধ করেনি হয়তো!' কথা গুলো এক স্বাসে বললেন আনসার! কিছুদিন পর রুবি আসল! কিন্তু ভালোবাসার মানুষ আনসারের দেখা পেল না! আনসারকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল বিপ্লব বাদীর অপরাধে! ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে দুঃখে কাতর রুবির নিকট আসল অজানা অপরিচিত এক চিঠি! কি আছে সেই চিঠিতে? চিঠির মধ্যেই কি কাজী নজরুল মৃত্যুক্ষুধা'র উপকরণ রেখেছেন? নাকি ক্ষুধার সন্ধানে তীব্র আখাঙ্কিত মৃত্যুর জন্য পাড়ি দিতে হবে বড্ড দূরের পথ? অমানিশার ঘোর অন্ধকার রাত্রিতে কুয়াশায় ঘেরা সকল রহস্যের খুঁজে কলম চালাচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম!কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাস পড়ার সাধ ছিল অনেক। প্রথম এই উপন্যাসটা পড়েই শুধুমাত্র কাজী নজরুলের নয় বরং যে কোন লেখকের উপন্যাসের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম আমি! উপন্যাস কাকে বলে? এই কালজয়ী উপন্যাস পড়লেই পাঠক বুঝতে পারবেন! কি নেই এই উপন্যাসে? পাঠকের মনের আর্তনাদ আর বিরহ মাখা চোখের পানি এক হয়ে যাবে! মেজো বৌ'র সাথে যেন আমিও চলছি উপন্যাসের পাতায়! গজালের মা'র গগনময়ী আর্তনাদ যেন নাড়া দিচ্ছে আমায় বুকের ভেতরটা! আর আনসার? সে তো এক ভালোবাসার অংশ! জীবনের মায়া অতি তুচ্ছ ভালোবাসার সামনে! ঠিক এই কথাটিই পাঠক বুঝতে পারবে উপন্যাস শেষ করে! আমন্ত্রণ জানাব না আপনাকে! শুধু বলবো, আপনি মৃত্যুক্ষুধা না পড়লে উপন্যাসের মজা বুজতে পারবেন না! আমার অন্তত তাই মনে হয়! অন্তত উপন্যাসের রস, গন্ধ পেতে হলেও পাঠক কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী, অমর উপন্যাস 'মৃত্যুক্ষুধা' পড়তে পারেন। রুবির প্রেমের গভীরতায় হয়তো আপনিও ডুবে যেতে পারেন! কেউ বা জানে? হয়তো বারবার পড়ার পরও আপনার মনে হবে আরেকবার পড়িই না! আরেকবার পড়লে কিই বা হয়?
Was this review helpful to you?
or
তিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন, তিনিই থাকবেন❤
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ মৃত্যক্ষুধা লেখকঃ কাজী নজরুল ইসলাম ধরনঃ চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনিঃ মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশকালঃ ১৯৩০ পৃষ্টাঃ ৭৫ রকমারি মুল্যঃ ১১০ #কাহিনী_সংক্ষেপঃ 'মৃত্যুক্ষুধা' কাজী নজরুল ইসলামের অনন্যসাধারন একটা উপন্যাস। মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি বিষয় ক্ষুধা আর মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই লেখক তার অসাধারন ঔপন্যাসিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এ উপন্যাসে। মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের প্রথম কাহিনী গড়ে উঠেছে কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়ক নামক গ্রামের শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে। উপন্যাসে গ্রামের মসগ্র মানুষের কাহিনী আর দৃশ্যপট উঠে আসলেও মুলত একটা পরিবারেই বিষেশ ভাবে চিহ্নত। সেটা হলো প্যাঁকালের পরিবার। প্যাঁকালে এই উপন্যাসের সহনায়ক। অবিবাহিত প্যাঁকালের...রোগ-কাতর বৃদ্ধ মা এবং তিনটি বিধবা ভাবী আর তাদের ডজনখানেক সন্তান নিয়ে তার বিশাল পরিবার। এই আঠারো-উনিশ বছরের প্যাঁকালের উপরেই সমগ্র পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব। যা তার উপরে জুলুমের নামান্তর। তাই তার সংসারে সবসময় লেগেই আছে দারিদ্র,অভাব, ক্ষুধা আর তারেই কারনে একে একে পরিবারের প্রায় সবাই যখন অনিবার্য মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, প্যাঁকালের মেজ ভাবি (উপন্যাসে যার পরিচয় মেজ-বৌ হিসাবে, আর তিনিই উপন্যাসের কেন্দ্রিয় নারী চরিত্র ) জন্মার্জিত ধর্ম আর সংস্কারকে ভুলে ক্ষুধার তাড়নায় আর নিজ সন্তানদের বাঁচাবার জন্য খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহন করের। এখন এখানে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায় যে.... উপন্যাসের মেঝ-বৌ ধর্মান্তরিত হয়ে কি তার সন্তানদের ক্ষুধা আর মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পেরেছিলো আর সেই কি বেঁচে ছিলো শেষ পর্যন্ত?? আর প্যাঁকালেরেই বা কি হলো?? উপ্যাসের দ্বিতীয় কাহিনীতে আগমন ঘঠে রাজনৈতিক কর্মী আনসারের। তার সবকিছু থাকা সত্ত্বেও সে এখন গৃহহারা, সে পথে নেমেছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য। দেশে দেশ ঘোরে আনসার শ্রমিক সংঘ গড়ে তোলে। সেই সুবাদে আনসার কৃষ্ণনগর আসলে তার দেখা হয়ে যায় পুরানে প্রমিকা রুবির সঙ্গে। অনেক দিন তাদেন দুজনের দেখা সাক্ষাত ছিল না কেননা রুবি বাবা রুবিকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু রুবির সেই সংসার মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী ছিল। রুবি সর্বদা আনসারকেই স্বামী জ্ঞান করত। শেষদিকে আনসার একটা কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কি সেই কঠিন সমস্যা?? তার সমাধানেই বা হলো কি করে? রুবি কি শেষ পর্যন্ত তার পুরানে প্রেমিক কে ফিরে পেয়েছিল?? আর শেষে আনসারের শ্রমিক সংঘেরেই বা কি হলো?? উপরের সব প্রশ্নের উত্তর পেত হলে অবশ্যই আপনাকে পড়ে নিতে হবে বাস্তববাদী উপন্যাস "মৃত্যুক্ষুধা"। তাহলেই অাশাকরি উপন্যাসের কাহিনীর সাথে নামকরনে যথার্থতা বুঝতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ থাকবে না। #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ মুলত আমরা কাজী নজরুল ইসলামকে কবি হিসাবে বিশেষভাবে আখ্যায়িত করলেও তার মোট তানটি মাত্র উপন্যাসের একটি "মৃত্যুক্ষুধা " সেটাতে ঔপন্যাসিকের সর্বগুন নিহিত করছেন। অভাব আর দারিদ্র কিভাবে একটি মানুষকে আর জন্মার্জিত ধর্ম, বিশ্বাস, সংস্কার থেকে দূরে ঢেলে দেয় এবং আত্মা রক্ষায় যে কোনো ধরনের প্রবৃত্তিতে প্রলুব্দ করে তার উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি দৃশ্যায়িত হয়েছে নজরুলের এ উপন্যাসে। যা দেখে আমি সত্য বিস্মৃত হয়েছি। পেঠ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা এই বিষয় গুলের জন্যই মানুষ ক্রিয়াশীল। এসবে তাড়না আর জীবন রক্ষাত্রের নিমিত্তে একজন মানুষ সব করতে পারে যাতে তার বিন্দুমাত্র বাধে না। যা সত্য এবং স্বাভাবিক ঠিক তাই নজরুল তার লেখায় তুলে ধরেছেন। পক্ষান্তরে নিম্নশ্রেনীর স্বার্থ রক্ষাত্রে যে সব নেতা কর্মীরা তাদের নিজের জীবন উৎস্বর্গ করেছে তাদেরই পোহাতে হয়েছে সর্বময় যন্ত্রণা। ফেরারি হয়ে তাদের বেড়াতে হয়েছে। প্রেম ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। তা বাস্তব সমাজ ব্যবস্থার ইঙ্গিত বহন করে চলেছে। মুলত আমার মতে এই উপন্যাসে কাজী নজরুলের নিজে ব্যাক্তি জীবনের দ্বৈতসত্ত্বা পাশাপাশি বিরাজমান আছে। একটা অভাব, দরিদ্রতা অন্যটি সংগ্রামী চেতনা। উপন্যাসটি পড়ে আমি বেশ বিস্মৃত হয়েছি কখনো কখনো নিজের অজান্তে চোখের কোনে পানি চলে এসেছে। #ব্যাক্তিগত_রেটিংঃ ৯.২৫/১০
Was this review helpful to you?
or
কাজী নজরুল ইসলাম মূলত কবি এবং আমারা তাকে জানি কবি হিসেবেই। তবে তার লিখিত উপন্যাস এর সংখ্যা তিন টা। যদিও গদ্যসাহিত্য তার পদাচারনা তেমন নয় তবুও তার এই উপন্যাস গুলো যথেষ্ট যুক্তি নির্ভর। তার মধ্যে "মৃত্যুক্ষুধা" অন্যতম। উপন্যাসের কাহিনী মূলত, চাঁদসড়ক ও কৃষ্ণনগরের পটভূমিতে রচিত। কাহিনী রচিত কিছু মুসলিম ও কিছু খ্রিষ্টান নর-নারী নিয়ে। প্যাকেলে এ গল্পের উল্ল্যেখযোগ্য চরিত্র।একান্নবর্তী অথচ পিতৃহীন সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল অভিভাবক সে। বৃদ্ধ মা এবং তিনটি বিধবা ভাই বৌ ও স্বামী পরিত্যাক্ত এক বোন ও তিন ভাইয়ের সন্তান প্রায় ডজন খানেক। তাদের সকলের ভরণ পোষন নিজে (প্যাকেলে) কেই করতে হয়।মেজ ভাই এর বৌ যে, 'মেজ বৌ'নামে উপন্যাসে পরিচিত তার সাথে প্যাকেলের মা প্যাকেল এর বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু মেজ বৌ সুন্দরী হলেও তাকে সে বিয়ে করতে রাজি নয়। কেন না সে 'ওমান কাতলি' মধু ঘরামীর লাবন্যময়ী কুর্শিকে ভালোবাসে।কিন্তু মেজ বৌ প্যাকেল কে ভালবাসে। খ্রিষ্টান মেয়ে কুর্শি।উপন্যাসের দ্বিতীয় ধাপে আছে নায়ক চরিত্র আনসার।বিত্তশালী মুসলিম পরিবারের ছেলে। সে মূলত বিপ্লবী কর্মী। মেহনতী মানুষকে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলনে সচেতন এবং সক্রিয় করে গড়ে তুলাই তার লক্ষ। তার জন্য সে বদ্ধপরিকর। কৃষ্ণনগর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কন্যা রুবি কে সে ভালবাসে। রুবিও তাকে ভালবাসে। কিন্তু রুবির বাবা তা মেনে নিতে চায় না। আনসার কংগ্রেস কর্মী হয়ে একবার জেলে যায়। সে বুঝতে পারে শ্রমিক দের শক্তি উদ্বোধন ছাড়া দেশ কে স্বাধীন করা দুঃসাধ্য। আর তাই সে কৃষ্ণনগরে শ্রমিক সংঘ গড়ে তুলতে চায়।উপন্যাসের মূল উপকরন হচ্ছে দরিদ্র আর ক্ষুধা। আর ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু। ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ যে কি থেকে কি হয় তার চিত্র তুলে ধরেছেন। আর নজরুল এর উপন্যাসে নজরুল ই নায়ক। তার উপন্যাসের নায়ক চরিত্র গুলোকে তিনি তার মতো করেই প্রকাশ করেন। দরিদ্র এর করাল গ্রাস কিভাবে কৃষ্ণ নগরের মানুষের মাঝে ঢেউ তুলে তার বর্ননাই লেখক করেছেন। এছাড়া ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি , সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি, দূর্নীতি এগুলোর চিত্র ও এসেছে। ধর্মের নামে যে শোষন ও বঞ্চনা তারও চিত্র আছে। নজরুল মানেই বিপ্লব, বিদ্রোহ। তা অন্যায় এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিপ্লব। আনসার এর মুখে উচ্চারিত - "আমি যদি না ফিরি, দুঃখ করিসনে ভাই। আমরা তো ফেরার সম্বল নিয়ে বেরোই নি। তাই ফেরারি আসামি হয়েই কাটিয়ে দিলাম। " এই উক্তি গুলো প্রমান করে উপন্যাসের নায়ক এর মাঝে কবি নিজেই তার স্বরূপ প্রকাশ করেন।এ উপন্যাসে ক্ষুধা ও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে গজালের মা (প্যাকেলের মা)। তিনটি ছেলে অকালে মারা যায়, আর রেখে যায় বৌ-বাচ্চা, মেয়েটি ও শ্বশুর এর বাড়ি থেকে চলে আসে। তারও বাচ্চা আছে। দরিদ্রের চরম রূপ সে দেখেছে। শেষ পর্যন্ত কংকালসার। "মৃত্যুক্ষুধা" গজালের মা'রই ইতিবৃত্ত।উপন্যাসে চরিত্র হিসেবে আনসার এর খালাতো বোন লতিফা তার স্বামী নাজিম, মেজ বৌ এর বোনাই ঘিয়াসুদ্দীন, খ্রিস্টান পাদরি ও জোন্স উল্ল্যেখ যোগ্য।বইটি গতবছর শেষ করেছিলাম। ক্ষুধার নির্মম চিত্র গুলো যখন চোখে ভাসছিলো আমিও কেমন বিদ্রোহী হয়ে উঠছিলাম। এতে জনমজুর শ্রেনীর মানুষের অভাবগ্রস্ত এর চিত্র আছে।উপন্যাসে প্যাকেলে আর আনসার এর সাথে নজরুলের চাপ আছে। প্যাকেলের সাথে ব্যক্তিজীবনের, আনসার এর সাথে বিদ্রোহী নজরুলের।
Was this review helpful to you?
or
নজরুল মাত্র তিনখানা উপন্যাস লিখেছিলেন। সবগুলোই অনবদ্য। 'মৃত্যুক্ষুধা' তার রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। সংসারের বেদনা, দারিদ্র্য, প্রেম আর না পাওয়ার দুঃখকে অমলিন করে এঁকেছেন নজরুল৷ নায়িকা রুবি, নায়ক আনসারের প্রণয়ের মাঝে আইসিএস পরীক্ষার্থী মোয়াজ্জেমের আগমন কিংবা নিত্যদিনের চরম দারিদ্র্যে ধর্ম বিকিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামের কাহিনি লিখেছেন কাজী নজরুল। আবু রূশদের আত্মজীবনীতে পড়েছিলাম নজরুল এই উপন্যাসের কাহিনি কৃষ্ণনগরের কোনো এক দারিদ্র্যপীড়িত জনপদ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। ঔপন্যাসিক নজরুলকে আপনারা ভুলতে পারবেন না। পড়লেই আবিষ্কার করবেন ঔপন্যাসিক নজরুল ইসলামকে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম-মৃত্যুক্ষুধা জনরা-উপন্যাস ঔপন্যাসিক- কাজী নজরুল ইসলাম পৃষ্ঠা-৯০ মূল্য-১৮৫ "মৃত্যুক্ষুধা"কাজী নজরুল ইসলামের অন্যতম উপন্যাস। প্যাকেলে, পুরো সংসারের ভার তার কাঁধে। মা, তিনভাইয়ের বিধবা বৌ, স্বামী পরিত্যাক্ত বোন। ভাইদের আর বোনের ডজন খানেক ছেলে পুলে। পরিবারের দেখভালোর দায়িত্ব একমাত্র পুরুষ মানুষ প্যাকেলের। প্যাকেলের মায়ের ইচ্ছা তার মেজ ভাইয়ের বউকে প্যাকেল বিয়ে করুক। কিন্তু প্যাকেল পছন্দ করে খ্রিষ্টান মেয়ে কুর্শিকে। এই নিয়ে বেশ কিছু দ্বন্দ্ব ছাড়াও উপন্যাসে আরো একটা মূল চরিত্র হলো বিল্লবী কর্মী আনসার। যদিও অবস্থা সম্পন্ন ঘরের ছেলে সে, কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবী আদায়ের লক্ষে সে হয়েছে বিপ্লবী কর্মী। কৃষ্ণনগর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কন্যা রুবিকে সে পছন্দ করে। আনসার কংগ্রেস কর্মী হয়েও একবার জেলে যায়। প্যাকেলে একদিন কুর্শিকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় বরিশাল। আর এদিকে খাবারের কষ্ট সইতে পারে না বলে মেজ বৌ ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। মেজ বৌ চলে যাওয়ার পর তার ছেলেটা ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে মারা যায়। আনসারকে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। এসব নিয়ে কাহিনীতে বিভিন্ন গন্ডগোল ঝামেলার মধ্য দিয়ে কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। ব্যক্তিগত মতামতঃ উপন্যাসের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, ক্ষুধা আর মৃত্যুকে ঘিরে। প্রথমে প্যাকেলের বাবা মারা যায়। তিন তিনটে ভাই না খেয়ে দূর্বল হতে হতে মারা যায়। সেজ বৌ এর ছেলেটা মায়ের বুকের দুধ খেতে খেতে অসার হয়ে পরে। এমন কি মেজ বৌ এর সন্তানটাও না খেতে পেয়ে মারা যায়। এই এতো গুলো মৃত্যু শুধু মাত্র ক্ষুধার জন্য, খাবারের জন্য। পেটের ভার সইতে না পেরে মেজ বৌ সহ গ্রামের আরো অনেকে খ্রিস্টান হয়ে যায়। এমনকি প্যাকেলে ও কুর্শীও গ্রাম ছাড়া হয় কিছুটাকা রোজগার আর উদরপুর্তির আশায়। উপন্যাসিক ক্ষুধার একটা নির্মম চরিত্র দেখিয়েছেন। নজরুলের ইসলাম নিজের জীবনের ছাপ রেখেছেন আনসার চরিত্রের উপর। মেজ বৌ, আর প্যাকেলের মায়ের চরিত্রে রয়েছে পুরো অসহায়ত্বের চিত্র। ক্ষুধার জন্য মৃত্যুর চিত্র দেখিয়ে উপন্যাস শুরু করলেও, উপন্যাস শেষ হয়েছে মূলত মৃত্যুর জন্য ক্ষুধা দিয়ে। আর একারনেই উপন্যাসের নাম মৃত্যুক্ষুধা। ঠিক কতোটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ মৃত্যুর জন্য আহাজারী করলে তাকে মৃত্যুক্ষুধা বলা যায়! পুরোটা উপন্যাস ভালো লেগেছে। প্যাকেলে কুর্শী, আনসার রুবির রসায়নও বেশ ভালো লেগেছে। তা ছাড়া মেজ বৌ এর জন্য কিঞ্চিত খারাপ লেগেছে কেন না, মেজ বৌ দেখতে বেশ সুন্দরী সে প্যাকেলকে ভালবাসলেও প্যাকেল কালো বর্ণের কুর্শীকে পছন্দ করে। আর তার জন্য তাকে কাঁদতেও দেখা যায়। অবশ্য সে সামলিয়ে নিয়েছিলো একসময়। https://www.rokomari.com/book/5457/মৃত্যুক্ষুধা