User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই : প্রিসিলা লেখক : মশিউল আলম অনন্য রকমের একটা গল্প পড়া হলো। আজকালকার অধিকাংশ লেখকদের মতো একই প্লটের ওপর ভিত্তি করে শুধু ঘটনা পরিবর্তন করে নতুন গল্প লেখার ছাপটা প্রিসিলা বইয়ে একদমি পাইনি। সাল ২০৫০, সন্তান নেওয়ার জন্য আইন হয়েছে। একজন মা*রা গেলে তবেই তার বংশধর কিংবা মৃতযাত্রী ব্যক্তি কাউকে উইল করে দিয়ে গেলে, একটি মৃত্যুর ফলে একটি সন্তান জন্ম দিতে পারবে। তবে অশিক্ষিত হলে সে ব্যক্তির মৃত্যুর ফলে কোনো সন্তান নেওয়া যাবে না, হতে হবে শিক্ষিত। এমতাবস্থায় 'সন্তান লাভের আশায় অন্যের মৃ*ত্যু কামনা, এবংকি নিজের পিতা-মাতারও', 'অন্যের মৃ*ত্যুকে ক্রয় করে মৃত-সংখ্যার সমপরিমাণ সন্তান জন্ম দেওয়া', 'মাতৃত্বের বাসনায় নারীদের করুণ অবস্থা, এই করুণ কালে নিজ স্বার্থলাভের জন্য স্বামীকে ফাঁ*সিতে ঝুলানো', 'পরিবারের সুখ-শান্তি নষ্ট হওয়া', সবকিছুর মানসিকতা ও পরিস্থিতি মিলিয়ে দারুণ একটা গল্প। সাধারণত অর্থনীতির দিক দিয়ে ধনী-গরিব ভাগ করা গেলেও, গল্পে অর্থের চেয়ে বেশি আশঙ্কা হয়ে ওঠেছে সন্তান লাভের প্রতি। যার টাকা বেশি সে অনায়াসেই কয়েকজনের মৃ*ত্যুকে ক্রয় করে যতো সন্তান গ্রহণ করতে পারে। দূর্বলদের ক্ষোভ সন্তান জন্মের উক্ত আইন রোধ করতে। কেননা আইনের প্রভাবে তারা নিজেদের সন্তান প্রাপ্তির মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উক্ত ক্ষোভর ফলে পদক্ষেপও ভয়ঙ্কর। কারণ সরকার চায় জনসংখ্যা কমাতে। এতে সুযোগ পেয়ে জনগণ কোনো পদক্ষেপ নিলে গো*লাগু*লিতে মানুষ মা*রতে সরকারের দ্বিধা হবে না। সবকিছুর মাঝে প্রধান দুই চরিত্র রাসেল ও প্রিসিলা যারা স্বামী-স্ত্রী, তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং পার্শ্ববর্তী বিষয়-বস্তুর সঙ্গে তাদের মনোভাব ও আচরণ যা-থাকে, তা নিয়েই "মশিউল আলম" লেখকের 'প্রিসিলা' গল্প। গল্পের সমাপ্তটা...! #রেটিং: ৪.৫/০৫ মনে হয়েছে গল্পের পরিবেশ ও পরিস্থিতি আরো ব্যাখ্যায় গম্ভীর ভাবে ফুটানো যেতো। তবে এমনও হতে পারে লেখকের চিন্তা অনুযায়ী তিনি নির্দিষ্টতেই স্থির থেকেছেন, কিংবা ওনারই ক্রুটি। বিঃদ্রঃ বানানে ভুলক্রটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
Was this review helpful to you?
or
গল্পটা ভালো।
Was this review helpful to you?
or
গল্পটা এমন এক সময়ের যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা তুঙ্গে তুঙ্গস্পর্শী। ত্রিশ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর দেশকে আমেরিকা নির্দেশ দিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি অনুমতি ছাড়া সন্তান নেয়া অবৈধ ঘোষণা দিতে। শুধুমাত্র পরিবারের কেউ মারা গেলেই ওই পরিবারের দম্পতি সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি পাবে। সন্তানের আশায় ব্যাকুল স্ত্রীরা মনে প্রাণে প্রহর গুনতে থাকে তাদের শ্বশুর শ্বাশুড়ির মৃত্যুর জন্য। বাসার বয়ঃবৃদ্ধরা নাতিপুতির মুখ দেখার ইচ্ছে করতে যেয়ে আতংকে থাকেন তাদের ভাড়াটে খুনি দিয়ে বৌমা খুন করানোর প্ল্যানে নেই তো? অনেক বৃদ্ধরা নিজেদের মৃত্যুস্বত্ত্ব বিক্রি করে যান কয়েক কোটি টাকায়। যারা এই স্বত্ত্ব কিনতে পারে তারা ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর বাচ্চা নিতে পারে। ভুলবশত, ইচ্ছাকৃত বা পরকীয়াজনিত যেকোনো কারণে যদি স্বামীর অজান্তে স্ত্রী বাচ্চা কনসিভ করে ফেলে তাহলে ছয়মাসের আগে এবোরশন করানোর আইন আছে। তবে ছ'মাস পেরিয়ে গেলে এবোরশন করানো নিষেধ। এক্ষেত্রে শুধু স্বামীর মৃত্যুদন্ড হবে। অনেকে এই পলিসিতেও চেষ্টা করেন। কেউ স্যাক্রিফাইস করে কেউ করে ধোকা। মৃত্যুস্বত্ত্ব কেনার ব্যাপারে সরকার করল নতুন নিয়ম। যদি মৃত ব্যাক্তি কমপক্ষে ইন্টার পাশ না হয় তাহলে তার মৃত্যুর বিনিময়ে সন্তান নেয়া যাবে না। এই আইনের ফলে নিম্নবিত্ত অর্ধশিক্ষিত মানুষরা হারালো সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকার। জনসংখ্যা কমতে থাকল। সরকারের আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়, মিছিল হয়, সভা হয়। সরকার পুলিশ দিয়ে ব্রাশফায়ার করে তাদের ওপর। জনসংখ্যা কমতে থাকে। রাজহানি মামলাগুলোর নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফাসির আদেশ কার্যকর হয় দ্রুত। জনসংখ্যা কমতে থাকে। আমাদের গল্পের মূল চরিত্র চল্লিশ ছুই ছুই প্রিসিলা আর তার স্বামী। ২০৫০ সালের এই বাংলাদেশে মৃত্যুস্বত্ত্ব কেনার জন্য তাদের টাকা জমানোর গল্প। শ্বাশুড়ি - বৌমার গল্প। মা ছেলেদের গল্প। আশা নিরাশার গল্প। রম্য- বিদ্রুপের গল্প। মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছার গল্প। ভালোবাসার গল্প। ভয়ংকর পরিণতির গল্ল। ভবিষ্যতের গল্প। বর্তমানের গল্প।
Was this review helpful to you?
or
গল্পটা আগাগোড়া সাহিত্য দিয়ে মোড়া৷ শব্দচয়ন, বাক্যসংলাপ, কথার ভঙ্গিমা সবকিছুই আশ্চর্যরকম সরল কিন্তু শক্তিশালী। ছোট্ট বইটায় কোনো লাইনই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি। চোখের সামনে ভেসে ওঠা বাংলাদেশের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম বারবার। মনে হচ্ছিল এ যেন ভবিষ্যতে নয়, যেন আমি এই পৃথিবীতেই বাস করি। শিহরণ জাগনিয় বই একখানা! পড়েননি? পড়ে ফেলুন।
Was this review helpful to you?
or
এই বইটা পড়ার পর মনে হয়েছিল এটা নিয়ে রিভিউ না লিখলে পাপ হবে পাপ। কী ভয়ংকর একটা বই অথচ প্রকাশের দেড় যুগ পার হয়ে গেলেও নেই তেমন কোনো হৈচৈ, কোনো আলোচনা-সমালোচনা। দুঃখজনক। গল্পটা এমন এক সময়ের যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা তুঙ্গে তুঙ্গস্পর্শী। ত্রিশ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর দেশকে আমেরিকা নির্দেশ দিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি অনুমতি ছাড়া সন্তান নেয়া অবৈধ ঘোষণা দিতে। শুধুমাত্র পরিবারের কেউ মারা গেলেই ওই পরিবারের দম্পতি সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি পাবে। সন্তানের আশায় ব্যাকুল স্ত্রীরা মনে প্রাণে প্রহর গুনতে থাকে তাদের শ্বশুর শ্বাশুড়ির মৃত্যুর জন্য। বাসার বয়ঃবৃদ্ধরা নাতিপুতির মুখ দেখার ইচ্ছে করতে যেয়ে আতংকে থাকেন তাদের ভাড়াটে খুনি দিয়ে বৌমা খুন করানোর প্ল্যানে নেই তো? অনেক বৃদ্ধরা নিজেদের মৃত্যুস্বত্ত্ব বিক্রি করে যান কয়েক কোটি টাকায়। যারা এই স্বত্ত্ব কিনতে পারে তারা ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর বাচ্চা নিতে পারে। ভুলবশত, ইচ্ছাকৃত বা পরকীয়াজনিত যেকোনো কারণে যদি স্বামীর অজান্তে স্ত্রী বাচ্চা কনসিভ করে ফেলে তাহলে ছয়মাসের আগে এবোরশন করানোর আইন আছে। তবে ছ'মাস পেরিয়ে গেলে এবোরশন করানো নিষেধ। এক্ষেত্রে শুধু স্বামীর মৃত্যুদন্ড হবে। অনেকে এই পলিসিতেও চেষ্টা করেন। কেউ স্যাক্রিফাইস করে কেউ করে ধোকা। মৃত্যুস্বত্ত্ব কেনার ব্যাপারে সরকার করল নতুন নিয়ম। যদি মৃত ব্যাক্তি কমপক্ষে ইন্টার পাশ না হয় তাহলে তার মৃত্যুর বিনিময়ে সন্তান নেয়া যাবে না। এই আইনের ফলে নিম্নবিত্ত অর্ধশিক্ষিত মানুষরা হারালো সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকার। জনসংখ্যা কমতে থাকল। সরকারের আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়, মিছিল হয়, সভা হয়। সরকার পুলিশ দিয়ে ব্রাশফায়ার করে তাদের ওপর। জনসংখ্যা কমতে থাকে। রাজহানি মামলাগুলোর নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফাসির আদেশ কার্যকর হয় দ্রুত। জনসংখ্যা কমতে থাকে। আমাদের গল্পের মূল চরিত্র চল্লিশ ছুই ছুই প্রিসিলা আর তার স্বামী। ২০৫০ সালের এই বাংলাদেশে মৃত্যুস্বত্ত্ব কেনার জন্য তাদের টাকা জমানোর গল্প। শ্বাশুড়ি - বৌমার গল্প। মা ছেলেদের গল্প। আশা নিরাশার গল্প। রম্য- বিদ্রুপের গল্প। মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছার গল্প। ভালোবাসার গল্প। ভয়ংকর পরিণতির গল্ল। ভবিষ্যতের গল্প। বর্তমানের গল্প। বইয়ের একটা অংশ তুলে দিচ্ছি। "বিক্রি : ক্যান্সারবৃদ্ধ ৬৫। আয়ু ৫ সপ্তাহ। দাম ৩ কোটি। ফোন ৮৯১১১৫৭৮৮৪১ বিজ্ঞাপনটি পড়তে পড়তে রাসেল অবাক হয়ে ভাবে, যে বৃদ্ধের আয়ু মাত্র পাচ সপ্তাহ তার দাম মাত্র তিন কোটি টাকা হয় কী করে? এটা অসম্ভব। এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো চালাকি আছে। হয়তো বৃদ্ধের এডুকেশন সার্টিফিকেটটা নকল। অথবা অন্য কোনো জালিয়াতি আছে। ইদানীং একই লোক একাধিক জায়গায় নিজেকে বিক্রি করছে। টাকা নিয়ে ভেগে যাচ্ছে, দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অথবা মরার কথা বলেছে ধরা যাক আট সপ্তাহ পরে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আটমাসেও তার মরার কোনও লক্ষণ নেই। তখন মামলা-মোকাদ্দমা, হ্যানো-ত্যানো, কিন্তু টাকা ফেরৎ পাওয়া কি সহজ? বরং উকিলের পিছনে টাকা খরচ করতে করতে নাভিশ্বাস উঠে যায়৷ " গল্পটা আগাগোড়া সাহিত্য দিয়ে মোড়া৷ শব্দচয়ন, বাক্যসংলাপ, কথার ভঙ্গিমা সবকিছুই আশ্চর্যরকম সরল কিন্তু শক্তিশালী। ছোট্ট বইটায় কোনো লাইনই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি। চোখের সামনে ভেসে ওঠা বাংলাদেশের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম বারবার। মনে হচ্ছিল এ যেন ভবিষ্যতে নয়, যেন আমি এই পৃথিবীতেই বাস করি। শিহরণজাগনিয় বই একখানা! পড়েননি? পড়ে ফেলুন। পড়ার পর রিভিউ দিয়েন। প্লিজ!
Was this review helpful to you?
or
প্রিসিলা লেখকঃ মশিউল আলম। মাওলা ব্রাদার্স, প্রকাশকাল ২০০১। আক্ষেপ দিয়েই শুরু করছি। বাংলা ভাষায় এত অসাধারণ একটা ডিসটোপিয়ান সাই-ফাই নভেলা আছে, অথচ পড়েছে হয়তো হাতে গোণা কয়েকজন পাঠক। ছোট্ট কলেবরের বইটা আজ থেকে আঠারো বছর আগে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত। প্রিসিলাকে নিয়ে তুখোড় আলোচনা হবার কথা ছিল সাহিত্যের পাতায়, কলামে অথবা বৈঠকী আড্ডায়। আফসোস! দ্বিতীয় খুনের কাহিনি, ঘোড়ামাসুদ, মাংসের কারবার, জুবোফস্কি বুলেভার, বাবা, তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত - মশিউল আলমের কলম থেকে জন্ম হয়েছে চমৎকার সব উপন্যাস আর ছোটগল্পের। সেই হিসেবে তার মূল্যায়ন হয়েছে কতটুকু? উত্তরটা জানা নেই। (উল্লেখ্য যে, ঘোড়ামাসুদ বইয়ে লেখক শহীদুল জহিরীয় রীতি অবলম্বন করেছিলেন। দীর্ঘ জটিল বাক্য, ভিসুয়াল পার্স্পেক্টিভ থেকে ন্যারেশন - এইসব আরকি! মশিউল আলমের বইগুলোতে এমন এক্সপেরিমেন্ট সদাশই লক্ষণীয়; অনেকের কাছে সেই ভাষারীতি দুর্বোধ্য বলে মনে হতে পারে। তবে প্রিসিলার বর্ণণাভঙ্গীকে অতি সাবলীল, সুখপাঠ্য বলা যায়।) আপাতত প্রিসিলা নিয়ে আলাপ করা যাক। নাম চরিত্র প্রিসিলা আর তার স্বামী এই বইয়ের মূল চরিত্র। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে(২০৫০ সালে) আইন পাশ হয়েছে, ইচ্ছে হলেই কোন দম্পতি সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ চলছে; আইন অমান্য করে কেউ গর্ভবতী হলে, তার স্বামীর জন্য নির্ধারিত হবে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি। এই আইনের প্রবর্তক কে? উত্তরটা সহজ, বরাবরের মতোই পশ্চিমের হর্তাকর্তারা কলকাঠি নেড়ে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে এদিকটায়। সরকার এখানে পুতুল, অথবা প্রাপ্তির আশায় অন্ধ। বাচ্চা নিতে চাইলে একটা আইন অবশ্য আছে। তা হলো, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কারো মৃত্যু ঘটলে, তবেই কোন দম্পতি সন্তান গ্রহণের অনুমোদন পাবে। অর্থাৎ একের বদলে এক। মৃত্যুর বদলে জন্মদানের অধিকারের মেয়াদ মাত্র এক বছর। আরেকটা বিকল্প উপায়ও অবশ্য আছে। চড়া দামে অনেকে নিজের মৃত্যুর সত্ত্ব বিক্রি করে দেয়, খবরের কাগজগুলোতে ছাপা হয় চটকদার বিজ্ঞাপন। সামর্থ্য থাকলে আপনি কিনে নিতে পারবেন। শর্তানুযায়ী মৃত ব্যক্তির উইল অনুসারে গর্ভধারণের অনুমতিও পাওয়া যাবে সেক্ষেত্রে। সকল নারীর মাঝেই মাতৃত্ববোধের সুপ্ত বীজ বোনা থাকে। এই সহজাত প্রবৃত্তির কারণেই তারা গর্ভধারণের আশায় মরীয়া হয়ে ওঠে একসময়। ২০৫০ এর বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাই, স্বামী অথবা প্রেমিককে না বুঝতে দিয়ে গর্ভে সন্তান ধারণ করে অনেকেই। আইনে আছে, ছয় মাস পেরিয়ে গেলে এবোর্শন করা যাবে না। তাই কোনমতে লুকোচুরি করে মাস ছয়েক কাটাতে পারলেই হলো। জন্মদাত্রী এক্ষেত্রে নিরাপদ, শাস্তি পেতে হবে জনককে। স্যাক্রিফাইস? তবু তাই হোক! ভবিষ্যতের এই সমাজে স্ত্রীরা নির্লজ্জভাবে অপেক্ষা করে থাকে, কবে তাদের শ্বশুর-শাশুড়ি বিদায় নেবে! সন্তানের আশায় মরীয়া হয়ে ওঠে তারা। বৃদ্ধরা হয়তো আরও বাঁচতে চান, তবু তাদের মনের কোণায় দানা পাকিয়ে ওঠে আতঙ্ক। এই বুঝি লোক ভাড়া করে খুন করানো হবে! স্বামী-স্ত্রীর প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে অভিনয় করে যায়। সৃষ্টি হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। অথচ সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাসীন দলের অনেকের কাছেই সন্তান জন্ম দেয়ার লাইসেন্স আছে! এ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়, বিক্ষোভ-সমাবেশ-মিছিল সব হয়। ফলাফল? কুকুর বেড়ালের মতাও গুলিবর্ষণ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় তাদের। চলুক গুলি, কমুক মানুষ। জনসংখ্যা কমানোটাই তো মূল উদ্দেশ্য! প্রিসিলাকে নিছক কোন কাল্পনিক ফিকশন বলে আখ্যায়িত করলে ভুল হয়। গল্পের আড়ালে লেখক এমন এক অস্থির সময়ের কথা তুলে ধরেছেন, যা হয়তো অতি আসন্ন। অস্থিতিশীল সময়ের স্রোতে কখন যে কল্পগল্প বাস্তবে রূপ নেয়, কে জানে?
Was this review helpful to you?
or
এই বইটা পড়ার পর মনে হয়েছিল এটা নিয়ে রিভিউ না লিখলে পাপ হবে পাপ। কী ভয়ংকর একটা বই অথচ প্রকাশের দেড় যুগ পার হয়ে গেলেও নেই তেমন কোনো হৈচৈ, কোনো আলোচনা-সমালোচনা। দুঃখজনক। গল্পটা এমন এক সময়ের যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা তুঙ্গে তুঙ্গস্পর্শী। ত্রিশ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর দেশকে আমেরিকা নির্দেশ দিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি অনুমতি ছাড়া সন্তান নেয়া অবৈধ ঘোষণা দিতে। শুধুমাত্র পরিবারের কেউ মারা গেলেই ওই পরিবারের দম্পতি সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি পাবে। সন্তানের আশায় ব্যাকুল স্ত্রীরা মনে প্রাণে প্রহর গুনতে থাকে তাদের শ্বশুর শ্বাশুড়ির মৃত্যুর জন্য। বাসার বয়ঃবৃদ্ধরা নাতিপুতির মুখ দেখার ইচ্ছে করতে যেয়ে আতংকে থাকেন তাদের ভাড়াটে খুনি দিয়ে বৌমা খুন করানোর প্ল্যানে নেই তো? অনেক বৃদ্ধরা নিজেদের মৃত্যুস্বত্ত্ব বিক্রি করে যান কয়েক কোটি টাকায়। যারা এই স্বত্ত্ব কিনতে পারে তারা ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর বাচ্চা নিতে পারে। ভুলবশত, ইচ্ছাকৃত বা পরকীয়াজনিত যেকোনো কারণে যদি স্বামীর অজান্তে স্ত্রী বাচ্চা কনসিভ করে ফেলে তাহলে ছয়মাসের আগে এবোরশন করানোর আইন আছে। তবে ছ'মাস পেরিয়ে গেলে এবোরশন করানো নিষেধ। এক্ষেত্রে শুধু স্বামীর মৃত্যুদন্ড হবে। অনেকে এই পলিসিতেও চেষ্টা করেন। কেউ স্যাক্রিফাইস করে কেউ করে ধোকা। মৃত্যুস্বত্ত্ব কেনার ব্যাপারে সরকার করল নতুন নিয়ম। যদি মৃত ব্যাক্তি কমপক্ষে ইন্টার পাশ না হয় তাহলে তার মৃত্যুর বিনিময়ে সন্তান নেয়া যাবে না। এই আইনের ফলে নিম্নবিত্ত অর্ধশিক্ষিত মানুষরা হারালো সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকার। জনসংখ্যা কমতে থাকল। সরকারের আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়, মিছিল হয়, সভা হয়। সরকার পুলিশ দিয়ে ব্রাশফায়ার করে তাদের ওপর। জনসংখ্যা কমতে থাকে। রাজহানি মামলাগুলোর নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফাসির আদেশ কার্যকর হয় দ্রুত। জনসংখ্যা কমতে থাকে। আমাদের গল্পের মূল চরিত্র চল্লিশ ছুই ছুই প্রিসিলা আর তার স্বামী। ২০৫০ সালের এই বাংলাদেশে মৃত্যুস্বত্ত্ব কেনার জন্য তাদের টাকা জমানোর গল্প। শ্বাশুড়ি - বৌমার গল্প। মা ছেলেদের গল্প। আশা নিরাশার গল্প। রম্য- বিদ্রুপের গল্প। মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছার গল্প। ভালোবাসার গল্প। ভয়ংকর পরিণতির গল্ল। ভবিষ্যতের গল্প। বর্তমানের গল্প। বইয়ের একটা অংশ তুলে দিচ্ছি। "বিক্রি : ক্যান্সারবৃদ্ধ ৬৫। আয়ু ৫ সপ্তাহ। দাম ৩ কোটি। ফোন ৮৯১১১৫৭৮৮৪১ বিজ্ঞাপনটি পড়তে পড়তে রাসেল অবাক হয়ে ভাবে, যে বৃদ্ধের আয়ু মাত্র পাচ সপ্তাহ তার দাম মাত্র তিন কোটি টাকা হয় কী করে? এটা অসম্ভব। এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো চালাকি আছে। হয়তো বৃদ্ধের এডুকেশন সার্টিফিকেটটা নকল। অথবা অন্য কোনো জালিয়াতি আছে। ইদানীং একই লোক একাধিক জায়গায় নিজেকে বিক্রি করছে। টাকা নিয়ে ভেগে যাচ্ছে, দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অথবা মরার কথা বলেছে ধরা যাক আট সপ্তাহ পরে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আটমাসেও তার মরার কোনও লক্ষণ নেই। তখন মামলা-মোকাদ্দমা, হ্যানো-ত্যানো, কিন্তু টাকা ফেরৎ পাওয়া কি সহজ? বরং উকিলের পিছনে টাকা খরচ করতে করতে নাভিশ্বাস উঠে যায়৷ " গল্পটা আগাগোড়া সাহিত্য দিয়ে মোড়া৷ শব্দচয়ন, বাক্যসংলাপ, কথার ভঙ্গিমা সবকিছুই আশ্চর্যরকম সরল কিন্তু শক্তিশালী। ছোট্ট বইটায় কোনো লাইনই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি। চোখের সামনে ভেসে ওঠা বাংলাদেশের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম বারবার। মনে হচ্ছিল এ যেন ভবিষ্যতে নয়, যেন আমি এই পৃথিবীতেই বাস করি। শিহরণজাগনিয় বই একখানা! পড়েননি? পড়ে ফেলুন। পড়ে রিভিউ দিয়েন। প্লিজ! বই: প্রিসিলা জনরা : ডিস্টোপিয়ান সাই ফাই/ ডার্ক ❤ লেখক: মশিউল আলম প্রকাশনী: মাওলা ব্রাদার্স গায়ের মুলা : মাত্র ৬০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৯ ✌
Was this review helpful to you?
or
২০৪৫ সাল। বাংলাদেশের নিঃসন্তান প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশনে বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রতি মাসের ১৫ তারিখ তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যের বিষয় হলো দেশের জনগণকে দশ বছর আগে পাস হওয়া "মানব প্রজনন নিয়ন্ত্রণ আইন" সম্পর্কে সচেতন করা। আইনে বলা আছে, "একটি মৃত্যুর বিনিময়ে একটি জন্ম। কোন পরিবারে কারও মৃত্যু না হলে কোন সন্তান জন্মদান করা যাবে না। এ আইন অমান্য করার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কারও মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ওই ব্যক্তির পরিবার একটি সন্তানের জন্ম দিতে পারবে। কারো মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে সন্তান না নিলে ঐ মৃত্যু মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। সাধারণত বৃদ্ধ পিতা বা মাতার মৃত্যু হলে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ পুত্র বা কন্যা সন্তান জন্মদানের অধিকার লাভ করে। তবে যে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর আগে তার মৃত্যুর বিনিময়ে সন্তান জন্মদানের অধিকার যে কাউকে উইল করে দিয়ে যেতে পারেন।" এ আইন পাস হওয়ার কারণ হলো দেশের ত্রিশ কোটি জনগণ। ছোট্ট দেশে এত লোক রাখা যাবে না। আমেরিকা নির্দেশ দিয়েছে, এদেশে আর একটি মানুষও যেন না বাড়ে। তাই এই আইন পাস হয়েছে। দেশজুড়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা নিজেদের বিক্রয় করছেন। দুই তিন কোটি টাকায় তাদেরকে কিনে নিচ্ছে কেউ না কেউ। তারপর কেনা সে বয়স্ক মানুষটি মারা গেলে ক্রেতা উইল অনুযায়ী একটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন। স্ত্রী যদি গর্ভধারণ করে ফেলেন ভুলবশত তাহলে স্বামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। কারণ মা না থাকলে তো সন্তানকে বাঁচানো যাবেনা। গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহের আগে গর্ভপাত করা যাবে। ছয় সপ্তাহ পেরুলেই স্বামীর ফাঁসি। এরকমও দেখা গেছে যে, কোন স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে গর্ভবতী হয়ে গেছে। আসামী হিসেবে তার স্বামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নতুন প্রেমিকের সাথে ঘর বেঁধেছে। গোয়েন্দা বিভাগ কিছুদিন পরে ডিএনএ টেস্ট করে নতুন স্বামীকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। পুরুষরা এ আইন কিছুতেই মানতে পারছেনা। আইনের ফলে দশ বছরে একজন লোকও বাড়েনি। আমেরিকা নির্দেশ দিলো, এবার জনসংখ্যা কমাও। সরকার আইন করলো, ইন্টারমিডিয়েট পাস করেনি এমন কেউ মারা গেলে তার পরিবর্তে সন্তান জন্ম দেওয়া যাবেনা। অধিকাংশ গরীবরা সন্তান নেওয়ার অধিকার হারালো। সরকারের এজেন্টদের কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য শুরু করলো। লোকজন জমে গেল। সরকার বিরোধী সমাবেশে ব্রাশ ফায়ার করলো নিরাপত্তাবাহিনী। বক্তার কিছু হলো না কিন্তু অসংখ্য মানুষ মারা গেল। কমলো কিছু মানুষ। সন্তান নেওয়ার জন্যে মা-বাবার মৃত্যু কামনা করতে লাগলো সবাই। স্ত্রীরা স্বামীকে মেরে ফেলতে লাগলো। সন্তানরা মা-বাবাকে। চারিদিক তখন মৃত্যু ভয়। কে যে কাকে হত্যা করে। সবাই সবাইকে সন্দেহ করে। রম্য এবং কল্পনায় ভরা, ব্যঙ্গাত্বক একটি বই "প্রিসিলা"। সমাজের নানা বৈষম্যের কথা উঠে এসেছে দারুণ এই বইটিতে। উঠে এসেছে আগামীর ভয়ংকর দুনিয়ার কথাও।