User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ জলপুত্র লেখকঃ হরিশংকর জলদাস বই রিভিউঃ আঃ রাব্বি বইটি মূলত বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষা পতেঙ্গা,মিরেশ্বরাই জেলেপল্লীদের জিবন নির্বাহীকার প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখা হয়েছে। বইটিকে আমি দুইটি অংশে রেখে পর্যালোচনা করবো।প্রথম অংশের প্রধান চরিত্র হলো ভুবেনেশ্বরী। তার স্বামী চন্দ্রমনি, ছেলে গঙ্গাপদের জন্মের কিছু বছর পরেই মাছ ধরতে গিয়ে নিখোজ হয়ে যায় আর ফিরে আসে না।। বৃদ্ধ শশুড় ও ছোট গঙ্গাপদকে নিয়ে স্বামীহারা অল্পবয়সী ভুবনেশ্বর নিজের এই দারিদ্রতার জিবনে কোনো পথ খুজে পাচ্ছিলো না।।এই দিকে ভুবনেশ্বরের অভিপ্রায় তার ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলার জন্য, যা এই জেলে পাড়ায় আগে কেউ কখনো হয় নি।।তার প্রতিবেশী বংশীর মায়ের পরামর্শে ভুবন বহদ্দারদের নিকট মাছ কিনে ভদ্র পল্লীতে মাছ বিক্রি করা শুরু করে।।এভাবে মাছ বিক্রি করে কোনোরকম টেনেটুনে তার জড় জিবন চলতে থাকে।।ডাঙায় বাঘ ও জলে কুমিরের মত জেলে পল্লীর নিরীহ জেলেরা শশীভুষন,শুক্কুর মিয়া ও জনইপ্যারর বাপের মত লোকদের দ্বারা জোকের মত নিরবে শোষিত হতে থাকে এবং মাছ ধরতে গিয়ে কখন কখনো সাগরে ডাকাতরা তাদের মাছ গুলি ডাকিতে করে তাদেরকে নিস্ব করে দেয়।।তাই অকালের সময় জেলে পল্লীতে নেমে আসে দুর্ভীক্ষ। দ্বিতীয় অংশে আমি প্রধান চরিত্রে রাখবো গঙ্গাপদকে যে নাকি মায়ের শোকাবহ,ও কষ্ট,লাগব করার জন্য ৮ম শ্রেনীতেই পড়ালেখার ইতি টেনে মায়ের পাশে মাছ ভর্তি ঝুলি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিচরন শুরু করে।।কখনো রাতভর সাগরের খালে বিলে মাছ ধরে সে মাছ বিক্রি করে।। তবে এই অংশে গঙ্গপদকে দেখা যায় জেলে পল্লীর নিরীহ জেলেদেরকে দাদনদার ও ডাকাতদের শোষন,নিপীরণ,অত্যাচারের শেকল থেকে মুক্ত করার জন্য যুবসমাজের নেতার ভূমিকায় অংশ গ্রহন করে একসাথে সংগ্রামে লিপ্ত হতে।।তবে পৃথিবীর ধারা এই যে, অত্যাচারিত ও শোষিতদের মুক্ত করতে হলে বলি চরাতে হয়।।গল্পের শেষে দেখা যায় গঙ্গাপদকেও বলি হতে হয়েছে এই শোষিত,অত্যাচারিত জেলেদের মু্ক্তি ঘটানোর জন্য।।গঙ্গাপদেরর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে জেলে পল্লীর জেলে গুলি অত্যাচারীর বিরদ্বে প্রতিবাদি হয়ে উঠে এবং তাদের অধিকার আদায়ে সামর্থ হয়।। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু লেখক হুট করে আসবে নাম ধাম কামাবে আবার হুট করেই বিলীন হয়ে যাবে।।কিন্তু কিছু লেখক চির অম্লান হয়ে থাকবে তাদের কিছু লেখার দ্বারা।।হরিশংকর জলদাসকে আমি সেরকম একজন লেখক মনে করি।।তার জলপুত্র বইটি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাভাষায় এরকম একটি বই অনেকদিন কেউ লিখেনি।।সেই অনেক কাল আগে মানিক বন্দ্যােপধ্যায় লিখেছিলো "পদ্মা নদীর মাঝি", সমরেশ বসুর "গঙা" ও অদ্বৈত মল্লবর্মন এর "তিতাস একটি নদীর নাম"। তারপর তো কতজনই আসলো যুবকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে আবার হারিয়ে গেছে। কারন যুবকরা তো আর যুবক নেই।।যাই হোক ভালো লাগার মত একটি বই।তবে বইটির ভিতর চিটাগাংয়ের ভাষায় মারাত্নক গালাগালি রয়েছে।।তবে বইটির ভাবগাম্ভির্য ধরে রাখার জন্য এতোটুকু দরকার ছিলো তানাহলে বইটির পারিপার্শিকতা ফুটে উঠতো না।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ লেখনী, বরাবরই হরিশংকরের একজন ভক্ত।
Was this review helpful to you?
or
সাগরের জেলেদের নিয়ে রচিত এই বইটি। সত্যিই চমৎকার। হরিশংকর যেন অদ্বৈত এর পরে আরেক সাহিত্যিক যে নিজের মানুষের কথা বললো।
Was this review helpful to you?
or
লেখকের নাম আগে তেমন জানতাম না।কিন্তু কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ব সাহিত্য সংসদের এক প্রোগ্রামে তাঁর বক্তৃতা আমাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়।কিভাবে সমাজের নানাস্তরের টিটকারি আর অপমান তাকে প্রায় বৃদ্ধ বয়সে লিখে জবাব দিতে বাধ্য করে তা শুনে তাঁর বই পড়তে ভীষণ আগ্রহী করে। সেই আগ্রহ থেকেই তাঁর বইটা পড়া।ভীষণ ভালো লেগেছে বইটা।নিজে সেই সমাজের অংশ হওয়ায় জেলে সমাজের প্রায় সব খুটিনাটি উঠে এসেছে।ভুবন আর গঙ্গাপদের প্রতিরোধ আমাদের যেন একটা নতুন সমাজেরই ইঙ্গিত দেয়।সেই সমাজের প্রত্যাশায় এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জানতে পড়তে পারেন জলদাসের 'জলপুত্র' বইটি।
Was this review helpful to you?
or
কিছু বই বারবার পড়লেও তৃপ্তি পাওয়া যায়, অভুক্তি আসে না। জলপুত্র আমার কাছে তেমনই একটি বই যা আমাকে প্রতিবার মুগ্ধ করে, ভাবায়।জলদাসের প্রথম উপন্যাস এই জলপুত্র,এই শক্তিমান লেখকের প্রথম বইটি যখন প্রকাশিত হয়েছে তখন তার বয়স ৫০ এর উপরে! ভাবা যায় উনার লেখার প্রস্তুতি কী! এই বইয়ের কোন মন্দ লাগা নেই।
Was this review helpful to you?
or
হরিশংকর জলদাস রচিত জলপুত্র একটি জেলেভিত্তিক উপন্যাস| এর পূর্বে জেলেভিত্তিক আরো ৫ টি উপন্যাস রচিত হয়েছে| যার মধ্যে তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসের স্রষ্টা হলো একজন মালো অর্থাৎ জেলে | যার পর অনেকদিন কেউ জেলেভিত্তিক উপন্যাস রচিত হয়নি| তারপর হরিশংকর জলদাস জলপুত্র উপন্যাসটি রচনা করেন| এতে জেলেদের জভবনের নানা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা , অপ্রাপ্তির কষ্ট, শোষণের কাহিনি ইত্যাদি চিত্রিত হয়েছে| এখানে জেলেনারীর জীবনসংগ্রামের কাহিনী যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি এক জলপুত্রের নানা সাহসিকতার গল্প এতে এসেছে| ২০১২ সালে এটি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করে|
Was this review helpful to you?
or
কিছু বই বারবার পড়লেও তৃপ্তি পাওয়া যায়, অভুক্তি আসে না। জলপুত্র আমার কাছে তেমনই একটি বই যা আমাকে প্রতিবার মুগ্ধ করে, ভাবায়। লেখক জলদাস নিজে জেলে ছিলেন, আর তিনি জেলেদের কথাই বেশি বলেছেন, সম্ভবত নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই সাহিত্যিক আমাদের কাছে তুলে ধরেন সমুদ্রপাড়ের জল জীবন, জেলে জীবন নিয়ে। মল্লবর্মণ, সমরেশ বসু, মানিকের জেলেরা নদীর, আর জলদাসের জেলেরা সমুদ্রের। এই জেলেরা সন্ধ্যায় বের হয় সকালে ফিরে। ওরা সমুদ্রকে মা জ্ঞান করে। কিন্তু এই মা'ই তার পুত্রদের হরণ করে মাঝে মাঝে, যাইহোক- জলপুত্র বইটিতে লেখক জেলে সম্প্রদায়ের সব কথাই বলেছেন। আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, অশিক্ষার অন্ধকার, মানবজীবনের হাহাকার সব কিছুর মিশেলে এই আখ্যান রচিত। বইটি পড়ে আমার শুধু এটুকুই মনে হয়েছে একটা মানুষ কতটা পরিশ্রম করলে, মনের কতটা গভীরে ঢুকলে এই লেখা লেখতে পারে! জলদাসের প্রথম উপন্যাস এই জলপুত্র, প্রথম উপন্যাসেই বাজিমাত। আমাদের লেখকদের কাছে উনি বড় এক অনুপ্রেরণা- এই শক্তিমান লেখকের প্রথম বইটি যখন প্রকাশিত হয়েছে তখন তার বয়স ৫০ এর উপরে! ভাবা যায় উনার লেখার প্রস্তুতি কী! পাঠক, একজন ভুবনেশ্বরীর সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে হলে এই বইটি আপনাকে পড়তে হবে। এই বইয়ের কোন মন্দ লাগা নেই।
Was this review helpful to you?
or
এই উপন্যাসে জেলে সম্প্রদায়ের অপ্রাপ্তি বেদনা, প্রাপ্তির উল্লাস, শোষণের হাহাকার, অশিক্ষার অন্ধকার এসব অসাধারণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। এই উপন্যাসে একজন জেলেনারীর সংগ্রামশীল জীবনের ইতিহাস যেমন আছে, তেমনি একজন জলপুত্রের অধিকার সচেতন হয়ে ওঠার কাহিনি, ও শেষে শোষকদের হাতে মৃত্যুর জীবন্ত উপখ্যানও এটি। এই উপন্যাসে কৈবর্তসমাজের সকল প্রকার অসঙ্গতি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করছেন হরিশংকর জলদাশ।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নারীর জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এ কাহিনি। বালিকা বধূ হয়ে আসা ভুবনেশ্বরীর গল্প এটি। তার ঊনিশ বছরের ভরা যৌবনবতী শরীরের আকর্ষণকে ম্লান করে দিয়ে স্বামীকে টেনে নিয়ে গেছে চির যৌবনা দইজ্যা - দরিয়া। এক উথালপাথাল ঢেউয়ের দিনে তার স্বামী আর ফিরে নি। লাশ পাওয়া যায় নি, তাই রীতিমাফিক বার বছর সধবার বেশে অপেক্ষায় কাটাতে হবে তাকে। একমাত্র শিশুপুত্র গঙ্গাপদ আর বৃদ্ধ শ্বশুরকে নিয়ে তার জীবন। কখনো মুখ বুজে মার খাওয়া, কখনো তেড়ে ওঠা, শেষ পর্যন্ত অনাগত জলপুত্রের প্রত্যাশায় তার জীবন বহমান। এ বহমান জীবনে জড়িত প্রতিটা ব্যক্তি এখানে খোলস ছেড়েছে বা গুটিয়েছে যে যার চাহিদা মাফিক আর উপন্যাসকে সমৃদ্ধ করেছে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে।
Was this review helpful to you?
or
প্রান্তজন জেলেদের নিয়ে বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী যে হাতে গোণা ৪/৫ টি উপন্যাস আছে, তার মধ্যে সর্বাধিক পঠিত ও আলোচিত হল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পদ্মা নদীর মাঝি" এবং অদ্বৈত মল্লবর্মণের "তিতাস একটি নদীর নাম"। এ দুই উপন্যাসের মধ্যেই জেলেজীবন এসেছে নদীর পলি আর গভীরতা ছুঁয়ে, প্রবল ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধে জেতা মানুষের ঘামের কটু গন্ধ আর মাছের আঁশটে গন্ধ মেখে, নদীর মত সরল বিশ্বাসের সংগ্রামী মানুষ আর পাঁকের মত আঠাল কুটিল নিশ্বাসের সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের লড়াই ঘিরে। তাই এ দুই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এক অমর কীর্তিগাথা। হরিশংকর জলদাসের "জলপুত্র" উপন্যাসটিও উল্লেখিত উপন্যাসদ্বয়ের সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। তবে এর ব্যাপ্তি আরো অনেক বেশি। কারণ, অন্যান্য সকল উপন্যাসের জেলে জীবন নদী কেন্দ্রিক, কিন্তু এটি সাগর কেন্দ্রিক। তাই শুধু ইলিশ মাছের মত মৌসুম ভিত্তিক নয়, বরং এটি সারাবছরের নিরন্তর সংগ্রামের ছবি। এখানে শুধু জেলেরা মাছই ধরে না ; মেয়েরাও সে মাছের বেচাকেনায় বেড়িয়ে পরে। সেলিনা হোসেনের "পোকা মাকড়ের ঘরবসতি" নিয়ে অবশ্য এ ক্ষেত্রে উল্লেখের দাবী রাখে। তবে তা এ ঘরানার হলেও কাহিনি বিন্যাসে অতটা ব্যাপৃত নয়। "জলপুত্র" বইটি পড়তে গিয়ে বিশেষ করে মানিক বাবুর লেখা বারবার মনে চলে আসে। এর কারণ এই নয় যে, এ বইতে "পদ্মা নদীর মাঝি"র প্রভাব ব্যাপক, বরং আমাদের মনে সেটার শক্ত অবস্থানের কারণেই। তাই পাঠক মাত্রেই এ বই পাঠে মনের অজান্তেই সে তুলনায় চলে যাবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু নিবিড় পাঠে ধরা পড়ে যে, সাহিত্যগুণ আর বিশ্লেষণগুণ যেমন এক নয়, তেমনি এক নয় উপর থেকে দেখে ছেঁকে তোলা আর ভেতর থেকে ঠেলে বের হয়ে আসা।
Was this review helpful to you?
or
'জলপুত্র' উপন্যাসটি লেখক হরিশংকর জলদাসের প্রথম উপন্যাস।হরিশংকর জলদাসের এই উপন্যাসটি সমুদ্রের জেলেদের জীবনযাত্রা নিয়ে রচিত।"জলপুত্র" উপন্যাসটির কাহিনীও আবর্তিত হয়েছে সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত জেলে সম্প্রদায় কে নিয়ে।এ উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র ভুবনেশ্বরী।ভুবনেশ্বরীর বিয়ে হয় নয় বছর বয়সে জলপুত্র(জেলে)চন্দ্রমণির সাথে।স্বামীর ভালোবাসা আর শ্বশুর-শাশুড়ির স্নেহমায়ায় ভালোই কাটছিলো ভুবনেশ্বরীর সংসার কিন্তু এত সুখ ওর কপালে লিখেন নি বিধাতা।তাইতো শ্রাবণের এক ঝড় বাদলের রাতে ঊনিশ বছরের ভুবনেশ্বরীকে একা করে দিয়ে মা গঙ্গা গ্রাস করে নেয় চন্দ্রমণিকে।তিন বছরের ছেলে গঙ্গাপদ আর বৃদ্ধ শ্বশুর কে নিয়ে শুরু হয় ভুবনেশ্বরীর জীবনসংগ্রাম।দারিদ্রের করালগ্রাসে পর্যবসিত হয় ভুবনেশ্বরীর জীবন।চন্দ্রমণি নিখোঁজ হবার পরে মাছ ধরার জাল,অন্যান্য সরঞ্জামাদি, সংসারের নানা প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করেই কোনরকমে তিনটি প্রাণীর পেটে অন্ন যোগান দিচ্ছিলো ভুবনেশ্বরী কিন্তু এভাবে আর কতদিন চালানো যায়?একসময় বাধ্য হয়েই তাকে বিয়ারির কাজ শুরু করতে হয়।এ উপন্যাসে লেখক জেলেদের জীবন অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন।তাদের শ্রেণিবিন্যাস,কাজ,মাছ ধরার পদ্ধতি সবকিছুর ই নিঁখুত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।সচ্ছল জেলেদের নিজস্ব নৌকা আছে,নানা রকম জাল আছে,এদের বলে বহদ্দার।তাদের কাজে সাহায্য করার জন্য অন্য গ্রাম থেকে তারা কাজের লোক আনে,এদের বলে গাউর।যাদের নিজেদের নৌকা নেই,অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল পাতে তাদের বলে পাউন্যা।আর যারা বহদ্দারদের কাছ থেকে মাছ কিনে বাজারে বা পাড়ায় পাড়ায় মাথায় করে মাছ বিক্রি করে তাদের বলে বিয়ারি। গ্রামের বিধবা মহিলারা সাধারণত বিয়ারির কাজ করে থাকে।ভুবনেশ্বরী ও সংসারের হাল ধরার জন্য এ কাজে নামে।কিন্তু ভুবনের খুব ইচ্ছে তার একমাত্র ছেলেকে গঙ্গা কে সে লেখাপড়া শেখাবে,তাকে সে কখনো সমুদ্রে পাঠাবে না।ছেলে তার নয়নের মণি,তাকে সে কোনভাবেই হারাতে চায়না। জেলে সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী কোন জেলে সমুদ্রে নিখোঁজ হবার ১২ বছর পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চন্দ্রমণি সমুদ্রে যাবার ১২ বছর পূর্ণ হবার পরে ভুবন তার সধবার বেশ ত্যাগ করে বৈধব্য গ্রহণ করে।গঙ্গা তার মায়ের এই অমানুষিক কষ্ট সইতে না পেরে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে মায়ের সাথে বিয়ারির কাজ করে,সেই সাথে রাতে ছোট জাল ফেলে বিলে ঝিলে মাছ ধরে।এ উপন্যাসে রামদয়াল একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র,যে নদীভাঙ্গনে সব হারিয়ে এই গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়।সে শিক্ষিত মানুষ তাই জেলেসন্তানদের পড়ানোর দায়িত্ব নেয় সে।একটু একটু করে তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালায় রামদয়াল। কালের পরিক্রমায় অনেকের জীবনের শেষ হয় আবার অনেক নতুন প্রাণের জন্ম হয়।ভুবন তার বাবার মতো শ্বশুরকে হারিয়ে আরো বেশি একা হয়ে পড়ে।কিন্তু সময়ের সাথে সব শোক ই মানুষ কাটিয়ে ওঠে।গঙ্গা কে বিয়ে দেয় সুমিত্রা নামের এক বহদ্দারের মেয়ের সাথে।গঙ্গা পড়ালেখা করে তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি তাই সে তার মাকে কথা দেয় তার সন্তান হলে সে তাকে পড়ালেখা শেখাবে।গঙ্গা তার অনাগত সন্তানের নাম রাখতে চায় বনমালী। গ্রামের দুজন দাদন ব্যবসায়ী শশিভূষণ রায় ও আবদুস শুক্কুর, যারা পাউন্যাদের মাছ মারার মৌসুমে চড়া সুদে টাকা ধার দেয়।তাদের শোষণের বিরুদ্ধে এতদিন কথা বলার কেউ ছিলোনা কিন্তু গঙ্গা এখন পরিপূর্ণ যুবক।সে তার জেলেপল্লীর অন্যান্য যুবকদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে বলে।তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় দাদনদের কাছ থেকে তারা আর টাকা ধার নেবেনা,বহদ্দাররা টাকা ধার দেবে।মৌসুম শেষ হলে কিছু লাভসহ তারা সেই টাকা ফিরিয়ে দেবে। জেলেদের এই সিদ্ধান্ত জানার পরে দাদন ব্যবসায়ীরা প্রতিশোধ নেবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।গ্রামের সকল জেলেদের সোচ্চার করে তোলে গঙ্গা,তাই তাকেই তারা ঘোরশত্রু মনে করে।বৃষ্টি বাদলের এক স্নিগ্ধ ভোরে শুক্কুরের খামারবাড়ির খালে লাশ পাওয়া যায় গঙ্গার।জেলেরা সারাজীবনই নির্যাতিত,নিপীড়িত।তাদের জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলো গঙ্গা।জেলেদের সে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো মাথা উঁচু করে বাঁচতে।কিন্তু সমাজের দাপুটে,ক্ষমতাসীন দলের কাছে বারবার হেরে যেতে হয় গঙ্গার মতো মানুষদের।তাই আমাদের সমাজের নিম্নমানের মানুষগুলোকে সারাজীবন ই দারিদ্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়।মাথা উঁচু করে বাঁচার সাহস তারা পায়না কখনোই।এ উপন্যাসটি ২০১২ সালে "আলাওল সাহিত্য পুরস্কার" পায়। এ উপন্যাসটি পড়লে পাঠক অামাদের দেশের জেলে সম্প্রদায়ের জীবনব্যবস্থা,সমাজিক বৈষম্য সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে পারবে বলে মনে করি।
Was this review helpful to you?
or
‘জলপুত্র’ বইটি পড়তে গিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বারবার মনে চলে আসে। কারণটা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র প্রভাব নয়, বরং আমাদের মনে সেটার শক্ত অবস্থান দায়ী। তাই পাঠকমাত্রই এ বই পাঠে মনের অজান্তে সে তুলনায় চলে যাবেন, এটা স্বাভাবিক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এ দুই উপন্যাসে জেলেজীবন এসেছে নদীর পলির গভীরতা ছুঁয়ে; প্রবল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধজয়ী মানুষের ঘামের কটু গন্ধ আর মাছের আঁশটে গন্ধ মেখে; নদীর মতো সরল বিশ্বাসের সংগ্রামী মানুষ আর সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের লড়াই ঘিরে। তাই এ দুই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এক অমর কীর্তিগাথা। হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ উপন্যাসটিও উল্লিখিত উপন্যাসদ্বয়ের সব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। তবে এর ব্যাপ্তি আরো অনেক বেশি। কারণ উপরিউক্ত উপন্যাসগুলোয় জেলেজীবন নদীকেন্দ্রিক। জলপুত্র সাগরকেন্দ্রিক। এখানে শুধু জেলেরা মাছই ধরেন না; মেয়েরা তা বেচাকেনায় বেড়িয়ে পড়েন। বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত ও অবিসংবাদিত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার সঙ্গে মানের তুলনায় না গিয়েও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘জলপুত্র’ উপন্যাস জেলেজীবনের একেবারে গভীরে ঢুকে গেছে প্রতিটি পরিচ্ছদেই। এর প্রথম কারণ লেখক নিজে এ সমাজের। তাই এ সমাজ দেখা ও দেখানোর জন্য তার নিজের জীবনের খেরোখাতাই যথেষ্ট। দ্বিতীয় কারণ স্থানীয় ভাষার নিপুণ ব্যবহার।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ জলপুত্র লেখকঃ হরিশংকর জলদাস প্রকাশনীঃমাওলা ব্রাদার্স ধরনঃসমকানীন উপন্যাস মূল্যঃ২২৫ টাকা( রকমারি মূল্যঃ১৬৯ টাকা) . "জলপুত্র"উপন্যাসের স্থানিক পটভূমি চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গা গ্রামের জেলেপল্লীটি। এখানকার অধিবাসীরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। চরিত্রগুলোর মুখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা বসানা ছিল। . ‘জলপুত্র’ শুরু হয়েছে ভুবনেশ্বরীকে নিয়ে যে কিনা অপেক্ষায় আছে পূর্বরাতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া তার স্বামী চন্দ্রমণির। উনিশ বছরের ভুবনেশ্বরীর সে অপেক্ষা যেন শেষ হওয়ার নয়। অপেক্ষায় অপেক্ষায় অনেক বছর কেটে গেল। . উত্তর পতেঙ্গার জেলেপাড়াটি ভদ্র লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। ভদ্রপল্লি থেকে মাইল দুয়েক দূরে বঙ্গোপসাগরের কোলে পাড়াটি নিরুক্ত হয়ে শুয়ে আছে।হিন্দু ও মুসলিম পাড়াগুলো এই জেলেপাড়াটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে।এখানে প্রাণ আছে, প্রাণবান পরিবেশ নেই। জীনব আছে, জীবনায়নের সুস্থির বাতাবরণ নেই।পড়াশোনা ছেলেদের বিলাসিতা, আর মেয়েরা জন্মেছে ভাঁত রাঁধার জন্য আর বছর বছর সন্তান বিয়োবার জন্য। দশ-বারো বছর পেরোলেই ছেলেকে যেতে হয় সমুদ্র বা খালে বিলে মাছ ধরতে। এমনি জেলে পরিবারের ছেলে ছিল এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভুবেনশ্বরীর স্বামী চন্দ্রমণি। যে কিনা গল্পের শুরুতেই সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। . এর জন্যই ভুবেনশ্বরী প্রতিজ্ঞা করে যে সে তার ছেলেকে পড়াশোনা করাবে।হিন্দু মুসলমানদের সন্তানের মতো সেও শিক্ষিত হয়ে বাপের অপমৃত্যুরর দাগ ভুবেনশ্বরীর হৃদয় থেকে মুছে দিবে। . ভুবনেশ্বরীর একমাত্র পুত্র গঙ্গা ক্লাস নাইনে পড়ে এখন। জেলেপল্লীর মানুষ যে শিক্ষিত হবার নয়, ব্যারিস্টার হবার নয় সে সত্য গঙ্গা উপলব্ধি করেছে তার শৈশব থেকেই। বাবা চন্দ্রমণি প্রকৃতির আঘাত সহ্য করতে পারেনি, কিন্তু গঙ্গা পেরেছে। বারবার পেরেছে। প্রকৃতির পর তার প্রধান শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সমাজের মানুষ। নিজ সম্প্রদায়ের সকলকে সুসংগঠিত করে নায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে ঐক্যমত্য তৈরি করেছিল গঙ্গা। . জেলেসমাজের ভেতর থেকে জেগে ওঠা মানুষ গঙ্গা। যে জেলেরা বুঝেছিল শুক্কুর বা শশিভূষণের কাছ থেকে দাদন নিলেও সুদ থেকে নিজেদের মাছ রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধতা এবং শিক্ষার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আসতে পারে মুক্তি। শিক্ষিত রামগোলাম ঐক্যবদ্ধ করার সে প্রচেষ্টাতেই নিজেকে নিয়োজিত করেছিল। কিন্তু সমাজ তো নীতি দিয়ে চলে না। আর চলে না বলেই জেলেপাড়ার সকল মানুষ সব সময়ই একইভাবে ঐক্যবদ্ধও থাকে না। বারবার ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে সে ঐক্যকে ধরে রাখার প্রয়াস। গঙ্গার নিজের পরিবারের মানুষদের কাছ থেকেও আসে আঘাত। দুঃসম্পর্কের ভাই এর দাবিদার গোলকবিহারীর কাছ থেকে সে আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে গঙ্গা আর ওর মা ভুবনেশ্বরীর সহায় সম্পদ। পাড়ার মানুষদের সামাজিক প্রচেষ্টায় রক্ষা পায় তারা। শশিভুষণ- শুক্কুরের যে ষড়যন্ত্রে গঙ্গাপদকে হত্যা করার কথা চিন্তা করা হয় সেখানে কিন্তু হাজির জেলে- প্রতিনিধি গোপালও। গোপাল যে মিরজাফর তা সকলেই জানে, সে নিজেও কম জানে না। গোপালই বিভীষণের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে গঙ্গার কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেয়। . আর শিক্ষা প্রসঙ্গটি জলপুত্রতে গুরুত্বের সাথে আলোচিত। সে আলোর প্রতিভূ দীনদয়াল – সন্দীপে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর এসে উঠেছে পতেঙ্গার জেলেপাড়ায়। ‘আঁই লেয়াপড়া জানি। আন্নাগো পোলাপাইনেরে আঁই পড়াশোনা শিখায়্যুম’ (পৃ ৫৩) বলতেই জেলেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাকে পরিবারসহ গ্রামে আশ্রয় দেওয়ার। সে-আশ্রয়ের কারণে গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলোও আসছিল দরকার মতো। কিন্তু ‘জেলেসন্তানদের শিক্ষিত হওয়ার সকল স্বপ্ন-সাধ ধূলিসাৎ হয়ে গেল’ দীনদয়ালের চারিত্রিক কারণে। . পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ অদ্বৈত মল্লাবর্মণের (১৯১৪-১৯৫১) পরে দীর্ঘদিন আর কোনো জলপুত্র কলম হাতে তুলে নেননি। অদ্বৈতর মৃত্যুর ৪৯ বছর পর হরিশংকর জলদাস লিখতে শুরু করলেন। জেলেদের নিয়েই লেখালেখি শুরু করলেন তিনি। অদ্বৈত নদীলগ্ন মানুষদের জীবনকতা লিখে গেলেন, আর হরিশংকর লিখছেন সমুদ্রসংগ্রামী জেলেদের জীবনালেখ্য, তবে নদীমগ্ন মানুষজনও তাঁর কথাসহিত্যে অবহেলিত নয়। হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ উপন্যাসটি জেলেদের নিয়েই লেখা। ব্যক্তিক্রম এই যে—এটি সমুদ্রভিত্তিক জেলেজীবননির্ভর উপন্যাস। হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ উপন্যাসে জেলেসম্প্রদায়ের অপ্রাপ্তির বেদনা, প্রাপ্তির উল্লাস, শোষণের হাহাকার, অশিক্ষার অন্ধকার—সবই অসাধারণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে।সুন্দর একটি বই।পড়ে দেখতে পারেন। হাপি রিডিং.....
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃজলপুত্র লেখকঃহরিশংকর জলদাস প্রকাশনীঃমাওলা ব্রাদার্স মূল্যঃ১৬৯টাকা উপন্যাসটি পড়ার পর মনে হলো হরিশংকর জলদাস রচিত ‘জলপুত্র’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্য জগতের নতুন এক সংযোজন। সমুদ্রে মাছ ধরা জেলে সম্প্রদায়কে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে জলপুত্রের কাহিনী। নিজের জীবন হাতে নিয়ে যারা মাছ ধরে তাদের ঠগিয়ে শোষণ করার মানুষেরও অভাব নেই চারপাশে। লেখক খুব নিবিড়ভাবে একটা জেলে পরিবারকে বর্ণনা করতে গিয়ে পারিপার্শ্বিক ঘটনা এবং জেলেদের জীবন খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন এ বইটিতে। উপন্যাস টিতে প্রচুর পরিমানে আঞ্চলিক ভাষার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাষা ঠিক বোধগম্য হয়ে উঠে না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় পরিস্তিতি বিবেচনায় আঞ্চলিকতা না থাকলে তা যথাযথ হত না, লেখকের আঞ্চলিকতা বইটিকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে।পরিশেষে বলা যেতে পারে "জলপুত্র"সমুদ্রভিত্তিক জেলে দের জীবনের নির্মম বাস্তবতা এর উপাখ্যান এর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়।জেলেভিত্তিক উপন্যাস জলপুত্র ৫/৫ পেতে পারে আমার কাছ থেকে এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।আমার হৃদয়ে ঠিক দাগ কেটে গেছে বইটি।
Was this review helpful to you?
or
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এ দুই উপন্যাসে জেলেজীবন এসেছে নদীর পলির গভীরতা ছুঁয়ে; প্রবল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধজয়ী মানুষের ঘামের কটু গন্ধ আর মাছের আঁশটে গন্ধ মেখে; নদীর মতো সরল বিশ্বাসের সংগ্রামী মানুষ আর সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের লড়াই ঘিরে। তাই এ দুই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এক অমর কীর্তিগাথা। হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ উপন্যাসটিও উল্লিখিত উপন্যাসদ্বয়ের সব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। তবে এর ব্যাপ্তি আরো অনেক বেশি। কারণ উপরিউক্ত উপন্যাসগুলোয় জেলেজীবন নদীকেন্দ্রিক। জলপুত্র সাগরকেন্দ্রিক। এখানে শুধু জেলেরা মাছই ধরেন না; মেয়েরা তা বেচাকেনায় বেড়িয়ে পড়েন। ‘জলপুত্র’ বইটি পড়তে গিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বারবার মনে চলে আসে। কারণটা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র প্রভাব নয়, বরং আমাদের মনে সেটার শক্ত অবস্থান দায়ী। তাই পাঠকমাত্রই এ বই পাঠে মনের অজান্তে সে তুলনায় চলে যাবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাহিত্য আর বিশ্লেষণ এক জিনিস নয়, তেমনি সাদৃশ্য নেই ওপর থেকে দেখে ছেঁকে তোলা আর ভেতর থেকে ঠেলে বের হয়ে আসা। পদ্মা নদীর মাঝি সাহিত্যগুণে কালোত্তীর্ণ। পাঠমাত্রই এক জনাকীর্ণ জেলে-ঝুপড়ি তার আবহমান কালের কালি গোলা সমস্যা নিয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। লেখার ভাষা, আঁটসাঁট বুনট আর রিপুপীড়িত মানবচরিত্র বিশ্লেষণে তিনি অনন্য। কিন্তু পাঁড় কমিউনিস্ট মানিক বাবুর লেখায় সাহিত্যের পাশাপাশি নিপীড়িতের সংগ্রাম আর শোষকের বঞ্চনাও উঠে আসে বেশি। পদ্মার ইলিশের প্রাচুর্য যদি হয় শ্রমের মর্যাদা বা শ্রমিকের মুখের হাসি, সেখানে মাছের দাম না পাওয়া কিংবা ফাও নেয়ার মানসিকতা পুঁজিবাদী ভোগের লুটেরা চেতনা। যৌনতা আর নিষিদ্ধ আকর্ষণ এখানে একমাত্র বিনোদন। এতে আগামীর পাভেলরা এখন বুঁদ হয়ে আছে সস্তা ভদকার নেশায়। কারণ সুস্থ শিক্ষা আর বিনোদন বিবেকহীন ঈশ্বর দিয়ে রেখেছেন শ্রমিক পরিচয়ের বাইরের ভদ্রপল্লীতে। এমনকি হোসেন মিয়ারা আপাত নিরাপদ আশ্রয় মনে হলেও তা যেন পীত দানবের পুরী। বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত ও অবিসংবাদিত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার সঙ্গে মানের তুলনায় না গিয়েও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘জলপুত্র’ উপন্যাস জেলেজীবনের একেবারে গভীরে ঢুকে গেছে প্রতিটি পরিচ্ছদেই। এর প্রথম কারণ লেখক নিজে এ সমাজের। তাই এ সমাজ দেখা ও দেখানোর জন্য তার নিজের জীবনের খেরোখাতাই যথেষ্ট। দ্বিতীয় কারণ স্থানীয় ভাষার নিপুণ ব্যবহার।