User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ছোট মুখে বড় কথা বলার জন্য লেখকের কাছে আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি। বইটি পড়তে গিয়ে যেখানে বেশ হোচট খেতে হয়েছে তা হলো এর ভাষার জন্য। সমুদ্র অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করার কারণে বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়েছে যদিও কিছুদির যাওয়ার পরেই সহজেই ধরতে পারা যায়। আরেকটা বিষয় যদি বলি তা হলো বইয়ের চরিত্রের সংখ্যা খুব বেশি যা পড়ার সময় বাঁধার সৃষ্টি করে। আরও স্বল্প চরিত্র ব্যবহার করেও লেখক যা বলতে চেয়েছেন বা যা বলতে পেরেছেন তা বলা যেত বলে মনে হয়েছে। শেষ কথা বইটি লেখকের মাস্টার পিস একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসটিতে জেলেরা কিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, কিভাবে তারা দিনাতিপাত করছে সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে দয়ালহরির ভাই রামহরি লোভে পড়ে জালাল মেম্বারের কাছে নির্যাতিত হয়েছে, কিভাবে সে তাঁর জীবন দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে... সাধারন জেলেরা কিভাবে জাত বিচারে ছোট হয় সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা নিজেরা মিলে কিভাবে সমস্যার সমাধান করে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কিভাবে পাকিস্তানি আর রাজাকার বাহিনীর লাঞ্চনার শিকার হলো, কিভাবে তারা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করলো সব বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে।পরিশেষে বলব এটা শুধু একটা উপন্যাস নয় দীর্ঘ জীবনআখ্যান।
Was this review helpful to you?
or
অদ্বৈত মল্লাবর্মণের (১৯১৪-১৯৫১) পরে দীর্ঘদিন আর কোনো জলপুত্র কলম হাতে তুলে নেননি। অদ্বৈতর মৃত্যুর ৪৯ বছর পর হরিশংকর জলদাস লিখতে শুরু করলেন। জেলেদের নিয়েই লেখালেখি শুরু করলেন তিনি। অদ্বৈত নদীলগ্ন মানুষদের জীবনকথা লিখে গেছেন, আর হরিশংকর লিখছেন সমুদ্রসংগ্রামী জেলেদের জীবনালেখ্য, তবে নদীমগ্ন মানুষজনও তাঁর কথাসহিত্যে অবহেলিত নয়। মূলত, হরিশংকর জলদাস জেলেসম্প্রদায়ের দিবারাত্রির কাব্য নির্মাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ‘জলপুত্র’ ও ‘কৈবর্তকথা’র পর ‘দহনকাল’ লিখলেন তিনি। ‘দহনকালে’র কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বঞ্চিত-লাঞ্ছিত জেলেসম্পদায়, আছে তাদের প্রতিবাদ-প্রতিশোধ আর আছে মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। হরিদাস নামের একজন জলপুত্র অশিক্ষিত বাবা রাধানাথের প্রেরণায় আলোর পথে হাঁটছে। তার পরিবারকে ঘিরে সমাজের পিছুটান, স্বার্থপরদের লোলুপতা, সুবিধাবাদীদের ওপর-চালাকি আবর্তিত হচ্ছে। নিকুঞ্জ সর্দার আবদুল খালেকের সঙ্গে মিলেমিশে রাধানাথ তথা গোটা জেলেসমাজকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। চন্দ্রকলা নামের বিধবা মহিলাটি শেষ পর্যন্ত এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকে গেছে। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এরা যেন জেলেসমাজের একা একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। এদের নিয়েই ‘দহনকালে’র কাহিনী বয়ন। এই উপন্যাসে দয়ালহরি বঞ্চনার শিকার হয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে আর রামহরি নিজের জীবন দিয়ে জালাল মেম্বারের সেই বঞ্চনার প্রতিশোধ নেয়। হরবাঁশি গানের ভেতর দিয়ে জগৎ ও জীবনকে অনুধাবন করতে চায়। সমুদ্রসংগ্রামী এবং নদীলগ্ন জেলেদের সঙ্গ-নৈঃসঙ্গ্য, মৃত্যু-জীবন একাকার হয়ে আছে ‘দহনকাল’ উপন্যাসে। দহনকালের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জেলেরা একাত্তরের পাদদেশে এসে উপস্থিত হয়। নির্জীব, নির্বীর্য, নিথর উত্তর পতেংগার জেলেপল্লীটি পাকসেনাদের অত্যাচার-বর্বরতায় জেগে ওঠে। মা-বোন-স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করবার জন্য হরিদাস-রাধেশ্যাম-খু-উ বুইজ্যারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয় নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে। জেলেদের জীবনে আরেক দহনকাল শুরু হয়। উপন্যাসটি পড়তে শুরু করার পর প্রথমে মনে হয়েছিল সচরাচর ঘটনার মত হরিদাস একদিন বড় হবে, ভালো কোনো চাকরী করবে এরকম কিছু। কিন্তু লেখক আমার ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে দিলেন। তিনি এতো সুন্দরভাবে উপন্যাসটিতে মুক্তিযুদ্ধের কথা নিয়ে আসবেন সেটা আমি ভাবিনি। উপন্যাসটিতে জেলেরা কিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, কিভাবে তারা দিনাতিপাত করছে সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে দয়ালহরির ভাই রামহরি লোভে পড়ে জালাল মেম্বারের কাছে নির্যাতিত হয়েছে, কিভাবে সে তাঁর জীবন দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে... সাধারন জেলেরা কিভাবে জাত বিচারে ছোট হয় সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা নিজেরা মিলে কিভাবে সমস্যার সমাধান করে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কিভাবে পাকিস্তানি আর রাজাকার বাহিনীর লাঞ্চনার শিকার হলো, কিভাবে তারা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করলো সব বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে।পরিশেষে বলব এটা শুধু একটা উপন্যাস নয় দীর্ঘ জীবনআখ্যান।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যে কম লেখকই জেলেদের নিয়ে লিখেছেন... লেখকের হাতে যাদু আছে বলতে হবে.. খুব নিখুঁত ভাবে উপস্থাপন করেছেন.. খুব মনোযোগ সহকারে পড়লাম... দহনকাল পড়ে খুব মুগ্ধ হলাম... লেখকের প্রশংসা না করে পারলাম না... পড়তে পড়তে মনে হলো যেন আমি আগেকার গ্রামের রূপ খুঁজে পেলাম... জেলেদের মাছ ধরা রূপ.... শুভ কামনা ও ভালোবাসা রহিল লেখকের জন্য.... এমন উপন্যাস আমাদের আরো বেশি বেশি করে উপহার দেন... যেন আমরা পড়ে মুগ্ধ হই কিছু শিখতে পারি... ❤️
Was this review helpful to you?
or
গল্পলেখা সম্ভব হলেও উপন্যাস রচনায়, বিশেষত যদি তার সংখ্যাধিক্য তেমন রোমহর্ষক পর্যায়ে না পৌঁছায়, উপন্যাসিক উপন্যাস রচনায় প্রথম পর্যায়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজেকে বাদ দিতে পারেন না। অর্থাৎ কম-বেশি তা আত্মজৈবনিক হয়ে ওঠে। উপন্যাসিক যে আখ্যান বয়ান করেন তা উপজীব্য হয়ে ওঠে তাঁরই অভিজ্ঞতায়। এই অভিজ্ঞতার দুটি স্পষ্ট স্তর বিন্যাস- প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। পরোক্ষ অভিজ্ঞতার তুলনায় নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে যে আখ্যানের বয়ান তাতে জোর বেশি। এক ধরনের ইনভলভমেন্ট কাজ করে বলেই এমনটা ঘটে। নদীকে আশ্রয় করে বাংলায় কম উপন্যাস রচিত হয়নি। সমরেশ বসু’র ‘গঙ্গা’ কিংবা তারাশঙ্করের ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ এই প্রসঙ্গে সহজেই পাঠকের মনে আসবে। কিন্তু এঁরা কেউই নিজের বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন না। যেমন ছিলেন না মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘পদ্মানদীর মাঝি’র ক্ষেত্রে। বিষয়ের সঙ্গে লেখকের কদাচিৎ প্রত্যক্ষ সংযুক্তি ঘটে। যেমন ঘটেছে ‘তিতাস একটি নদীর নামে’-এ অদ্বৈত মল্লবর্মনের ক্ষেত্রে। অদ্বৈত নিজে ছিলেন মালো। তেমনটিই ঘটেছে হরিশংকর জলদাসের ক্ষেত্রে ‘দহনকাল’-এ
Was this review helpful to you?
or
*বুক রিভিউ* বইয়ের নাম : দহনকাল লেখকের নাম : হরিশংকর জলদাস ধরন : চিরায়ত উপন্যাস প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ প্রকাশনীর নাম : মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ কাল : ২০১০ মুদ্রিত মুল্য: ২৫০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৭৬ রাধানাথ জলদাস নদীতীরবর্তী একজন অশিক্ষিত জেলে। তার মা চন্দ্রকলা। রাধানাথের তিনবছর বয়সেেই তার বাবা রামকানাই বিহিন্দি জালে আটকে পড়ে মারা যান। সেই থেকে একমাত্র পুত্রকে নিয়েই চন্দ্রকলার বেচেঁ থাকার সংগ্রাম। বিধবা চন্দ্রকলা ঘাট থেকে মাছ কিনে নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। রাধানাথের চব্বিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন বাসুমতিকে। রাধানাথ আর বাসুমতির প্রথম সন্তান হরিদাস। রাধানাথের খুব ইচ্ছা ছিল সে পড়াশুনা করবে। তখন জেলেপাড়ার কেউই তেমন পড়াশুনা জানত না। দুএক শুধু থেমে থেমে পুথি পড়তে জানতো। এমনই একজন যতীন্দ্রমোহন জলদাস। সবাই তাকে যশোদর বাপ বলেই ডাকে। তার কাছেই বছরখানেক পড়ার সুযোগ পায় রাধানাথ। পরে মায়ের কষ্ট দেখে তার আর পড়াশুনা হয়না। হয়ে যান মায়ের নিত্য সঙ্গী।তাই রাধানাথের খুব ইচ্ছা তার বড় সন্তান হরিদাসকে সে যত কষ্টই হোক পড়াশুনা করাবে।তাই রাধানাথ হরিদাসকে নিয়ে যায় উঠান শিক্ষক আদাবস্যার স্যারের কাছে। যার প্রকৃত নাম চিত্তরঞ্জন দে। আদাবস্যার স্যারের কাছে পড়ে পতেংগা বোর্ড স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ন হয় হরিদাস। এই প্রথম জেলে পাড়ার কোন জেলের সন্তান পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে। হরিদাসের সাফল্যে বাবা রাধানাথ, মা বাসুমতি এবং ঠাকুর মা চন্দ্রকলা যারপরনাই খুশি। তারা খুশি হলে ও এলাকা লোকজন এটাকে খুব একটা ভাল চোখে দেখে না। হিন্দুপাড়ার কেশব দত্তের বউ বলেই ফেলল, “জাইল্লার পোয়া ফাস্ট ! কী অরাজকতা চলি আইল দেশত্।” হরিদাস ভর্তি হন পতেংগা হাই স্কুলে। বাবা আর ঠাকুরমার পরিশ্রমে ও নানান চড়াই উতরাই মধ্যে চলতে থাকে সংসার। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার প্রভাব ও পড়তে থাকে এই জেলে পল্লীতে। হরিশংকর জলদাস তার দহনকাল উপন্যাসে জেলে পল্লীর মানুষের নিত্য দিনের জীবনযুদ্ধ, একটি অশিক্ষিত জেলে পরিবার থেকে একটি সন্তান শিক্ষিত হবার গল্প তুলে ধরেন। শুধু তাই নয় এই অশিক্ষিত জেলে পল্লী থেকে হরিদাস, সুধীর, খু-উ বুইজ্যা, শ্যামল, রসমোহন, প্রেমদাস, কাশিরাম, উপেন্দ্র, রাধেশ্যাম কি ভাবে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে, মা বোনের ইজ্জত রক্ষায়, মুক্তির জন্য রুখে দাড়ায় তাই নিয়ে হরিশংকর রচনা করেন দহনকাল।
Was this review helpful to you?
or
হরিশংকর লিখছেন সমুদ্র সংগ্রামী জেলেদের জীবনালেখ্য, তবে নদীমগ্ন মানুষজনও তাঁর কথাসহিত্যে অবহেলিত নয়। মূলত, হরিশংকর জলদাস জেলেসম্প্রদায়ের দিবারাত্রির কাব্য নির্মাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ‘জলপুত্র’ ও ‘কৈবর্তকথা’র পর ‘দহনকাল’ লিখলেন তিনি। ‘দহনকালে’র কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বঞ্চিত-লাঞ্ছিত জেলেসম্পদায়, আছে তাদের প্রতিবাদ-প্রতিশোধ আর আছে মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। হরিদাস নামের একজন জলপুত্র অশিক্ষিত বাবা রাধানাথের প্রেরণায় আলোর পথে হাঁটছে। তার পরিবারকে ঘিরে সমাজের পিছুটান, স্বার্থপরদের লোলুপতা, সুবিধাবাদীদের ওপর-চালাকি আবর্তিত হচ্ছে। নিকুঞ্জ সর্দার আবদুল খালেকের সঙ্গে মিলেমিশে রাধানাথ তথা গোটা জেলেসমাজকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। চন্দ্রকলা নামের বিধবা মহিলাটি শেষ পর্যন্ত এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকে গেছে। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এরা যেন জেলেসমাজের একা একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। এদের নিয়েই ‘দহনকালে’র কাহিনী।
Was this review helpful to you?
or
নিজে মাৎস্যবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করলেও জলদাস মানে যে জেলে তা এই বই পড়ে জানা। জেলেদের দু:খ কষ্ট নিয়ে লেখা বইট সাথে আছে মুক্তিযুদ্ধের হালকা ছোয়া। খারাপ লাগেনি।
Was this review helpful to you?
or
হরিশংকর জলদাস একট নাম নয়। একটা রচনা। তা হলো জলপুত্রদের রচনা। দহনকালের কেন্দ্রে দাড়িয়েছে বঞ্চিত লাঞ্চিত জেলেসম্প্রদায়, আছে তাদের প্রতিবাদ আর প্রতিশোদের গল্প। সেই সাথে লেপ্টে আছে মুক্তিযুদ্ধ। এসবের বর্ণনাই হলো, দহনকাল। পতেঙ্গার জেলেপল্লীটি তখন জ্বলতে থাকে পাকসেনাদের নির্বিবাদ অত্যাচারে। একসময় ঘুরে দাড়ায় মানুষ গুলো মুক্তির নেশায়। কতোটা মজেছিলাম এই বইয়ে বলা মুসকিল। এত সুন্দর বর্ণনা ভঙ্গি আর ভাষাশৈলী!যা সত্যিই অসাধারণ! পুরো উপন্যাসের চিত্র চোখে ভেসে উঠেছিল আমার। বিশেষ করে চোখ দুটি ভিজেছিলো শেষ পৃষ্ঠাগুলোতে। চন্দ্রকলার শেষ দুটি বাক্য, "বাআজি অলরে! আঁর পোয়া রাধানাথ। আঁর একমাত্র বুগর ধন। আঁতুর। হাঁডিত নো পারে। কোন অপরাধ নোগরে। আঁর পোয়ারে নো বাইন্ধ্যো, নো মাইয্যো।" কি আকুতি! দহনকাল"উপন্যাসটি বাস্তবিকই এক দহনকালের ইতিহাসকে ধারণ করেছে। আর সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন হরিশংকর জলদাস তার আশ্চর্য সহজ সুন্দর বর্ণনাশৈলী আর জাদুকরী ভাষায়। "দহনকাল"জল ও স্থলের কাহিনী। এখানে শ্রেণীচেতনা প্রবল। মুক্তিযুদ্ধ এই উপন্যাসের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। জেলেরাও যে মুক্তিপাগল ছিল, স্বাধীনতা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাও যে তাদের মধ্যে জোরদার ছিল তার ইতিহাস 'দহনকাল'উপন্যাসটি। চমৎকার একটি বই।পড়তে পারেন। একই বিষয়বস্তুকে পুঁজি করে হরিশংকর জলদাস তার এই 'দহনকাল' উপন্যাসে যে সাহিত্যের ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেছেন, তাতে তাকে অদ্বৈত মল্লাবর্মণের যোগ্য উত্তরসূরী বলে আখ্যা দেয়া কি অত্যুক্তি হয়ে যাবে? মনে তো হয় না। জলপুত্র নিয়ে লেখা এই উপন্যাস এর অলিগলি। হাসি কান্নার ছড়াছড়িতে রচিত দহনকাল।দহনকাল যদি হয় ইতিহাস তবে তার সাক্ষী হলো হরিদাস। ১৪১৬ বাংলা সনে দহনকাল উপন্যাসটি "প্রথম আলো বর্ষসেরা বই" পুরস্কার পেয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ দহনকাল লেখকঃহরিশংকর জলদাস প্রকাশনীঃমাওলা ব্রাদার্স ধরনঃচিরায়ত উপন্যাস মূল্যঃ৩০০ টাকা (রকমারি মূল্যঃ২২৫ টাকা) . হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এরা যেন জেলেসমাজের একা একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। এদের নিয়েই ‘দহনকালে’র কাহিনী বয়ন। . নদীতীরবর্তি মানুষ ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তথা জীবনের টানাপোড়েনের কথা খুবই প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসে। পাশাপাশি উপন্যাসের কাহিনীতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকে স্থান দেয়ায়। . অশিক্ষিত রাধানাথ জেলে সমাজের নিয়মের বাইরে যেয়ে পুত্র হরিদাসকে লেখাপড়া শিখানো শুরু করে। একদিকে দারিদ্রের কঠিন নাগপাশ এর মধ্যে রাধানা্থ তার পুত্রের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। অন্যদিকে রাধানাথের মা চন্দ্রকলা এই স্বার্থপর ,সুবিধাবাদী সমাজের সমাজেরঅনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকেছেন। . শেষ পর্যন্ত এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকে গেছে। সেই সাথে সর্দার আব্দুল খালেক ও জালাল মেম্বার দরিদ্র, অশিক্ষিত এসব জেলেদের গ্রাস করার চেষ্টা করছে। . চন্দ্রকলা চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের এক বিধবার জীবনের নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার । হরিদাসের মা বসুমতী চরিত্রে আমরা দেখি একনিষ্ঠ গৃহিণীর সংগ্রাম যে সামান্য উপার্জন দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে গেলেও হার মানেন নি কখনো ! . এভাবে জেলেরা জীবনযুদ্ধে দিনদিন কাটাতে কাটাতে চলে আসে এক অন্য যুদ্ধ-মা-বোন-স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করবার জন্য হরিদাস-রাধেশ্যাম-খু-উ বুইজ্যারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়... জীবনযুদ্ধে ভিতু,বঞ্ছিত, নির্জীব,জেলেরা জড়িয়ে পরে দেশের যুদ্ধে।তাদের সর্ব শক্তি দিয়ে তারা প্রতিরোধ করে পাক হানাদার বাহিনীর। নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে। এত সব সংগ্রামের মধ্যেও লেখক অত্যন্ত নিপুন ভাবে তুলে ধরেছেন জেলে সমাজের বিভিন্ন ধর্ম পেশার মানুষের কাহিনী । সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা যেমন পাই তেমনি দেখি ঝড় বন্যার মত প্রাকৃতিক তান্ডবের ভয়াবহতা। নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।শুরু হয় তাদের এক নতুন কাল... দহনকাল... . #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ"দহনকাল"উপন্যাসটি বাস্তবিকই এক দহনকালের ইতিহাসকে ধারণ করেছে। আর সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন হরিশংকর জলদাস তার আশ্চর্য সহজ সুন্দর বর্ণনাশৈলী আর জাদুকরী ভাষায়। "দহনকাল"জল ও স্থলের কাহিনী। এখানে শ্রেণীচেতনা প্রবল। মুক্তিযুদ্ধ এই উপন্যাসের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। জেলেরাও যে মুক্তিপাগল ছিল, স্বাধীনতা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাও যে তাদের মধ্যে জোরদার ছিল তার ইতিহাস 'দহনকাল'উপন্যাসটি। চমৎকার একটি বই।পড়তে পারেন। হাপি রিডিং....
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-দহনকাল লেখক-হরিশংকর জলদাস ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-১৭৬ মূল্য-২৫০ মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনী রাধানাথ জলদাস এক জেলে, তার ছেলে বছর সাতেক বয়স নাম হরিদাস। বাবার হাত ধরে হাটছে। তারা যাচ্ছে আদাবস্যার এর কাছে। স্যার এর মূল নাম চিত্তরজ্ঞন দে । কিন্তু গ্রামের সবাই তাকে আদাবস্যার বলেই ডাকে। বলা যায় তিন প্রজন্মের শিক্ষক তিনি। আদাবস্যার এর কাছে ছেলেকে দিয়ে রাধানাথ বলে, " মাস্টার বাউ, আই অশিক্ষিত জাইল্যা, রাধানাথ আঁর নাম। আঁর পোয়াউয়ারে তোঁয়ার পাঅার উঅর রাই গেলাম।" আদাবস্যার হাত বাড়িয়ে হরিদাসকে কোলে নিলেন। রাধানাথ কে চলে যেতে বললেন। আদাবস্যার হরিদাস এর হাতের লেখা দেখে প্রশংসা করেন। উঠান স্কুল ছুটি হলে, ভূপাল নামের একটা ছেলে হরিদাস এর দিকে এগিয়ে আসে। সে তাকে তুমি সম্মোদন করায়, হরিদাস অবাক হয়। কেন না সে জানে তারা খুব গরীব তাদের তুই বলা ছাড়া কেউ কথা বলে না। একসময় ভূপালকে ফেলে হরিদাস বাড়ির দিকে ফিরে চলে। যেতে যেতে ভাবতে থাকে, ভগবান কতোজন কে কতো কিছু দেন আবার অনেক কে দেন না। সে জানে তারা খুব গরীব। তার বাপকে ভগবান টাকা দেয় নি, এমন কি একটার বেশি জালও নেই তার। কিন্তু এক দরদি মা চন্দ্রকলাকে দিয়েছে। ভগবান হরিদাসকেও কম দেন নি তার একটা ভাই আছে টুকটুকে এক বোন দিয়েছে। এমন কি একটা বেশ ভালো মা বাসুমতী কে দিয়েছে। এমন ভাবতে ভাবতে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। রাধানাথ এর মা বিধবা চন্দ্রকলা দাসী। মেছোপাড়ার অন্য দশ বিধবার মতো। বিয়ের চার বছর পরই বিধবা হয়। তখন রাধানাথের বয়স তিন।সেই থেকে চন্দ্রকলার সংগ্রামের জীবন শুরু। দশ বছর পর্যন্ত রাধানাথ টোটো করে ঘুরে বেড়িয়েছে। হঠাৎ একদিন তার মাথায় চাপে সে পড়ালেখা করবে। আর তাই মাকে দিয়ে বাল্যশিক্ষা ও শ্লেট আনাল। এক দুপুরে চন্দ্রকলা পায়ে ব্যাথা পেয়ে বাড়ি ফিরলেন। রাতে তার জ্বর এলো। বেঘোরে কাটল দুই দিন। একসময় চোখ মেলে চাইলো, দেখল রাধানাথ এর ভয়ার্ত চাহনি। সেই থেকে রাধানাথ আর মায়ের পিছু ছাড়েনি। মা যেখানে রাধানাথও সেখানে। মাছ কিনতে, বাছতে, ধুতে, হাটে-পাড়ায় বিক্রি করার সময় চন্দ্রকলার পাশ ছাড়ে নি রাধানাথ। রাধানাথের ২৪ বছর বয়সে বাসুমতী কে বউ করে আনেন চন্দ্রকলা। প্রথম প্রথম জড়তা থাকলেও এখন সে সংসারের পাক্কাগিন্নি। একদিন রাধানাথ বাসুমতী কে বলল, হরিদাস কে সে লেখা পড়া করিয়ে পড়া জানা জেলে বানাবে। বাসুমতীর চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসে তার উচ্ছ্বাস। সেই থেকে বাড়ি থেকে দুইমাইল দূরের আদাবস্যার এর বাড়িতে হরিদাস কে পাঠিয়েছে। এই তো গেলো হরিদাসদের কথা। গল্পের মোড়ে আছে হরবাশি, খু-উবুইজ্যা, রাধেশ্যাম, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এদের নিয়ে দহনকালের পরিধী। যেমন আছে রাধানাথ এর মতো আলোর খোজ করা মানুষ তেমনি আছে নিকুঞ্জ সর্দার, আবদুল খালেকের মতো সুবিধাবাদী। যারা জেলে সমাজকে গ্রাস করতে চেয়েছে নিজেদের সার্থে। তবে ছেলের অপমানে দমে থাকেনি চন্দ্রকলা। সে ঠিকি প্রতিবাদ করেছে নিকুঞ্জ সর্দার এর মুখের উপর। আবারও আছে দয়ালহরি যে বঞ্চনার শিকার হয়ে নির্বাক দাড়িয়ে থেকেছে। আরও আছে রামহরি যে নিজের জীবন দিয়ে জালাল মেম্বার এর বঞ্চনার প্রতিশোধ নেয়। এরকম করেই চলে জেলেদের জীবন মৃত্যু। তাদের জীবনের উত্তাল পাতাল কাহিনী নিয়ে দহনকাল পরিপূর্ন। তাদের দুঃখ সুখ আর জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম উঠে এসেছে উপন্যাসের পাতায়।এরকমি ঝোপঝাড় আর কাটার ভেতর হেটে চলে এসেছে পথের এক বাঁকে।বাঁক টা ঘোরে দাড়ায় তখন ৭১ এর পাদদেশে। উত্তর পতেঙ্গার দুটি জেলে গ্রাম মাউছ্যাপাড়া আর কৈত্তরপাড়া পটভূমি হয়েছে দহনকালের। হরিশংকর জলদাস একট নাম নয়। একটা রচনা। তা হলো জলপুত্রদের রচনা। দহনকালের কেন্দ্রে দাড়িয়েছে বঞ্চিত লাঞ্চিত জেলেসম্প্রদায়, আছে তাদের প্রতিবাদ আর প্রতিশোদের গল্প। সেই সাথে লেপ্টে আছে মুক্তিযুদ্ধ। এসবের বর্ণনাই হলো, দহনকাল। পতেঙ্গার জেলেপল্লীটি তখন জ্বলতে থাকে পাকসেনাদের নির্বিবাদ অত্যাচারে। একসময় ঘুরে দাড়ায় মানুষ গুলো মুক্তির নেশায়। কতোটা মজেছিলাম এই বইয়ে বলা মুসকিল। এত সুন্দর বর্ণনা ভঙ্গি আর ভাষাশৈলী!যা সত্যিই অসাধারণ! পুরো উপন্যাসের চিত্র চোখে ভেসে উঠেছিল আমার। বিশেষ করে চোখ দুটি ভিজেছিলো শেষ পৃষ্ঠাগুলোতে। চন্দ্রকলার শেষ দুটি বাক্য, "বাআজি অলরে! আঁর পোয়া রাধানাথ। আঁর একমাত্র বুগর ধন। আঁতুর। হাঁডিত নো পারে। কোন অপরাধ নোগরে। আঁর পোয়ারে নো বাইন্ধ্যো, নো মাইয্যো।" কি আকুতি! জলপুত্র নিয়ে লেখা এই উপন্যাস এর অলিগলি। হাসি কান্নার ছড়াছড়িতে রচিত দহনকাল।দহনকাল যদি হয় ইতিহাস তবে তার সাক্ষী হলো হরিদাস। ১৪১৬ বাংলা সনে দহনকাল উপন্যাসটি "প্রথম আলো বর্ষসেরা বই" পুরস্কার পেয়েছে। হরিশংকর জলদাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে নদী ভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্ত জনজীবন বিষয়ে গবেষনা করে ১৯৮২ সালে পিএইচডি করেন। পেশাজীবনে তিনি চট্টগ্রামের সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান। জেলেপল্লীতে জন্ম গ্রহন করায় জেলে জীবনে এর চিত্র তিনি স্বচোখে দেখেছেন। তার লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে জেলে জীবন ও তার সংগ্রাম।তাঁর জীবন পরিচয় পড়ে আমার মনে হয়েছে, দহনকাল এর হরিদাস যেন হরিশংকর এর জলছাপ। রকমারি লিংক https://www.rokomari.com/book/5312/দহনকাল-(প্রথম-আলো-বর্ষসেরা-বই-১৪১৬)
Was this review helpful to you?
or
মাটির গল্প, জলের গল্প।
Was this review helpful to you?
or
#সপ্তর্ষি_রকমারি_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগ নাম- মোঃ রাকিব হাসান রাব্বি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান - বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস ( বিইউপি) ইমেইল- [email protected] জেলা- ঢাকা Book Review উপন্যাসের নাম- দহনকাল (হরিশংকর জলদাস) বইটির কেন্দ্রে দাড়িয়ে আছে বঞ্চিত-লাঞ্চিত জেলে সম্প্রদায়ের জীবন সংগ্রাম আর ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতার গল্প। বইটির অন্যতম প্রধান চরিত্র হল জেলে পরিবারের সন্তান, রাধানাথের পুত্র "হরিদাস"। জেলে সমাজের একজন বাঁতি। শিক্ষার আলোতে আলোকিত হয়ে মুক্তি দিতে চেয়েছে তার অন্ধকারচ্ছন্ন জেলে সমাজকে। আর তার এই আলোর পথে আসার পেছনে তার বাবা রাধানাথ, পিসিমা চন্দ্রকলা আর শিক্ষক চিত্তরঞ্জন। চন্দ্রকলার হার মেনে না নেওয়া মনোভাব, রাধানাথের সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এই বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ। বর্ণ বৈষম্য, জাত ব্যবধানও এই বইয়ের মূল বিষয়। স্বার্থপর নিকুঞ্জ, আব্দুল খালেক বা জালাল মেম্বারের শঠতা গোটা জেলেসমাজকে গ্রাস করে ফেলতে উদ্যত। এই বইয়ের প্রাণ হল খু-উ বুইজ্যা। রামহরি আর দয়ালহরির ভ্রাতৃত্ব, রামহরির প্রতিশোধের জন্য প্রাণ উৎসর্গ উপন্যাসটিকে নিয়ে যায় এক অন্য দিগন্তে। হরবাঁশির গানের ভেতর প্রান খুজে বেড়ানো, ভুপালের আর হরিদাসের পাঠমগ্নতা, সুধীরের মেয়ে ভাগানো, জলোচ্ছাসের তান্ডবের বর্ণনা, ধর্মীয় দাঙ্গা সব কিছুই স্তরে স্তরে সাজানো আছে এই উপন্যাসটিতে। দহনকালের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে উত্তর পতেঙ্গার এই জেলেসমাজ এসে দাঁড়ায় একাত্তরের পাদদেশে। অংশ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে। প্রাণ হারায় অনেক জলপুত্র। কিন্তু এই মৃত্যূ হয় তাদের এক নতুন জীবনের পূর্বাভাস, এ মৃত্যূ ছিল স্বাধীনতার ঊষালগ্ন। এছাড়া এমন অনেক কিছুই আছে বইটিতে যা আপনার চিন্তার এবং জ্ঞানের জগৎ কে করবে আরও সমৃদ্ধ। সুখ,দুঃখ, ভালবাসা,ঘৃণা,জেদ, নমনীয়তা,জাত প্রথা, মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুর যেন এক অপরুপ মিশ্রণ এই উপন্যাসটি। ©রাকিব হাসান রাব্বি
Was this review helpful to you?
or
nice book.
Was this review helpful to you?
or
excellent
Was this review helpful to you?
or
'দহনকাল '- হরিশংকর জলদাস । হরিশংকর জলদাস 'দহনকাল' লিখেছেন জলদাস তথা জেলে সমাজের প্রকৃতি, সমস্যা, জীবন-যাপন ও জীবন সংগ্রাম নিয়ে । ' ওই যে চলেছে রাধানাথ জলদাস ,হনহন করে । তার ডান হাতে ছেলেটি ধরা- হরিদাস । খানা খন্দে ভরা মেটে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে তারা ।' - এভাবে শুরু হয়েছে 'দহনকাল ' । তারা চলছে আদাবস্যারের কাছে । তার উঠোন স্কুলে । অশিক্ষিত বাবা রাধানাথের প্রেরণায় হরিদাস হাঁটছে আলোর পথে । বাবা রাধানাথ হরিদাসের নিবিড় মমতায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিল ' তুঁই আঁর বংশের ধারারে উজ্জ্বল গরিবা। সমাজের মুখ উজ্জ্বল গরিবা । হেই দিন লাই অপেক্ষা গরি রই ।" হরিদাস সে পথেই হাঁটছে । পতেঙ্গা বোর্ড পাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম হতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম হওয়া একমাত্র হিন্দুই নয় আবার জলদাস । এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে । তার পিছনে আছে বিধবা ঠাকুরমা চন্দ্রকলা । এই চন্দ্রকলার সার জীবন নিরবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সংসার আগলে রেখেছেন । শোষণ অনাচারের বিরুদ্ধে সেও একদিন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে । ইচাখালির জেলে পল্লীর দয়ালহরি ও রামহরির কালিদইয্যার ব্যবসা । দয়ালহরি দয়ালু কিন্তু রামহরি তার উল্টো । রামহরির উল্টো পাল্টা স্বভাবের কারণে জালাল মেম্বারের প্যাচে পথে এসে দাঁড়ায় । রামহরি জীবন দিয়ে জালাল মেম্বারের অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয় । হরবাঁশির জগত ও জীবন গানের ভিতর দিয়ে প্রভাবিত । কৈবর্তপাড়ার জেলে পরিবারগুলো সচ্ছল ও শিক্ষিত । মারা তাদের পেশা হলেও প্রধান পেশা না। জমি- জিরাত হাল চাষ আছে । তাই তারা হালিক । তারা মনে করে জালিক জলদাস থেকে তারা উঁচু জাত । জেলেদের অলিখিত কিন্তু অলঙ্ঘনীয় নিয়ম হল - বহদ্দারের একটি জালের মাছ তোলার পর পাউন্যা নাইয়ার জাল থেকে মাছ তুলতে হবে । বহাদ্দারের দুইটি ও পাউন্যার একটি বিহিন্দি জাল থাকবে । কিন্তু রানিমোহন বহাদ্দারের নৌকায় জাল বসানোর অনুমতির শর্তে প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন হয় । রাধানাথ জলদাস জীবন জীবিকার জন্য মেনে নিতে বাধ্য হয় । যে রাতে জলোচ্ছ্বাস হল , গোটা সমুদ্র উপকূল তছনছ হয়ে যায় । পুকুর পাড়ে, খালের ধারে , খোলা জমিতে গরু ছাগলের মৃতদেহ পড়ে আছে । এগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মৃত মানুষের হাত পা উপর দিকে উঠানো । নিকুঞ্জ সরদার ,আব্দুল খালেক মেম্বারের মতো মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে লুটে নিল দাতা সংস্থার সাহায্য । প্রতিবাদ করে রাধানাথ । ষাটের দশকের মাঝামাঝি উপমহাদেশের যে হিন্দু- মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় তার ঢেউ জেলে পল্লীতেও লাগে । এই দাঙ্গায় উগ্র বিহারীরা মূখ্য ভূমিকা রাখে । সমুদ্র সংগ্রামী জেলের এ ভাবে হাঁটতে হাঁটতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দেখা পায় । মা-বোনের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য হরিদাস, রাধেশ্যাম , খ-উ বুইজ্যা , সুধীর হাতে অস্ত্র তুলে নেয় । পাকিস্তানি হানাদার আনসারির বাহিনী ও রাজাকার হামিদ , ইমদাদের অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয় । এ ভাবে নিজের অজান্তেই পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে । এভাবেই লেখা হয়েছে জেলেদের জীবনের দহনকাল । বি: দ্র: 'দহনকাল ' প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১৬ ।
Was this review helpful to you?
or
হরিশংকর জলদাস স্যারের দহনকাল বইটা অনেক বেশি ভালো লেগেছে। এতো বেশি ভালো লেগেছে যে প্রিয় লেখকদের তালিকায় ওনার নামটা লিখে নিয়েছেন। এর আগেও ওনার ইরাবতী বইটা পড়েছিলাম। সেটাও অনেক ভালো ছিল। ইরাবতী বইটি পড়ার পর ওনার আরো বই পড়তে ইচ্ছা হয়েছে। আর ইচ্ছা পূরণের জন্য ইচ্ছাপূরণ দেবতা হয়ে আসলো বড় ভাই মহিতুল আলম। স্যারও ছিলেন সেদিন বাতিঘরে। বইয়ে অটোগ্রাফও পেয়ে গেলাম, সাথে ফটোগ্রাফও। হরিশংকর স্যার নিজের নিয়মে লিখেন। ফলে তাঁর লেখাগুলো আলাদাভাবে বুঝা যায়। যেমন আমরা হুমায়ূন স্যার, সমরেশ স্যারের লেখা পড়ে বুঝে ফেলি। এটা লেখকের একটা বড় দিক। কারন সব লেখক নিজেদের আলাদাভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। দহনকাল বইটা জেলে সমাজ নিয়ে লেখা। ঘটনার শুরু হয় ১৯৫৫ সাল থেকে। বইয়ে সাল দেওয়া নেই। তবে ঘটনার প্রেক্ষাপটে অনুমান করে নিয়েছি। আর গল্পের মূল চরিত্র হচ্ছে হরিদাস জলদাস। যে জেলে সমাজ থেকে পড়ালেখা করতে যায়। হরিদাসের বাবা রাধানাথের পড়ালেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তাঁর বাবা অকালে মারা যাওয়ায় সে পড়ালেখা ছেড়ে পরিবারের হাল ধরে। আর তাঁর ইচ্ছাটা সে তাঁর ছেলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করেছে। কতটুকু সফল হয়েছে সেটা উপন্যাসটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। উপন্যাসটি পড়ার সময় আমার মাথায় যে জিনিসটা ছিল সেটা হচ্ছে উপন্যাসের "হরিদাস" লেখক নিজেই। অথবা লেখক নিজের জীবন আর কল্পনা থেকে এটা লিখেছেন। এরকম মনে হওয়ার কারন হল, আমি যখন ছোট ছিলাম আব্বু স্যারের কথা বলেছেন। ওনার কিছু ঘটনার কথা বলেছেন। যা আমি এই উপন্যাসের হরিদাসের মধ্যে খুঁজে পাই। আমার আব্বু পড়ালেখা করেনি। তাই গল্প-উপন্যাস তাঁর পড়ার কথা না। আর বইটা প্রকাশ করা হয়েছে ২০১০ সালে। সেহেতু আমার ধারনা সত্যি হতে পারে। আর স্যারের জন্মসাল ১৯৫৫। যেটা প্রেক্ষাপটের সময়ের সাথে মিলে যায়। উপন্যাসটির পড়তে শুরু করার পর প্রথমে মনে হয়েছিল সচরাচর ঘটনার মত হরিদাস একদিন বড় হবে, ভালো কোনো চাকরী করবে এরকম কিছু। কিন্তু লেখক আমার ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে দিলেন। তিনি এতো সুন্দরভাবে উপন্যাসটিতে মুক্তিযুদ্ধের কথা নিয়ে আসবেন সেটা আমি ভাবিনি। উপন্যাসটিতে জেলেরা কিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, কিভাবে তারা দিনাতিপাত করছে সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে দয়ালহরির ভাই রামহরি লোভে পড়ে জালাল মেম্বারের কাছে নির্যাতিত হয়েছে, কিভাবে সে তাঁর জীবন দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে... সাধারন জেলেরা কিভাবে জাত বিচারে ছোট হয় সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা নিজেরা মিলে কিভাবে সমস্যার সমাধান করে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কিভাবে পাকিস্তানি আর রাজাকার বাহিনীর লাঞ্চনার শিকার হলো, কিভাবে তারা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করলো সব বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে। বইয়ের অন্যান্য প্রধান যে যে চরিত্রগুলোর কথা না বললেই নয় সেগুলো হলো চন্দ্রকলা (রাধানাথের মা, হরিদাসের দাদী), বসুমতী (রাধানাথের স্ত্রী, হরিদাসের মা), খু-উ বুইজ্যা, নিকুঞ্জ, আদাবস্যার (হিরদাসের শিক্ষক)... উপন্যাসটিতে চট্টগ্রামের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য জেলার লোকেরা হয়তো বইটি পড়ে ভালোভাবে অনুভব করতে পারবেনা।
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়তে গিয়ে যেখানে বেশ হোচট খেতে হয়েছে তা হলো এর ভাষার জন্য। সমুদ্র অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করার কারণে বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়েছে যদিও কিছুদির যাওয়ার পরেই সহজেই ধরতে পারা যায়। আরেকটা বিষয় যদি বলি তা হলো বইয়ের চরিত্রের সংখ্যা খুব বেশি যা পড়ার সময় বাঁধার সৃষ্টি করে। আরও স্বল্প চরিত্র ব্যবহার করেও লেখক যা বলতে চেয়েছেন বা যা বলতে পেরেছেন তা বলা যেত বলে মনে হয়েছে। আর আরেকটা বিষয় যা বলব তা হলো লেখক দুইটি প্রেক্ষাপটকে যোগ করেছেন তা ঠিক আছে তবে মনে হয়েছে এই যোগ করাটা অনেকটাই কৃত্রিম। ১৭৯ পেজের বইয়ে লেখক যুদ্ধের কথা এনেছেন বলতে গেলে ১৩০ পৃষ্ঠার দিকে। আর তাছাড়া জেলেদের দ্বারা তিনি যে প্রতিরোধ দেখিয়েছেন তাও অসম্পূর্ণ। কনস্টেবলজাতীয় ৪-৫ জন হানাদার আর ৩-৪ জন রাজাকার মারার পর শেষে আমরা গ্রামের যে পরিস্থিতি দেখি তাতে এটাকে আদৌ প্রতিরোধ বলা যায় নাকি সে বিষয়েই সন্দেহ জাগে অর্থাৎ ঐ বিশেষ ঘটনার পর কি ঘটত যার কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি। আবার একদম লাস্ট পেজে হরিদাসের শেষ বক্তব্যটার মাধ্যমে লেখক যে নতুন দিনের গান শোনাতে চেয়েছেন তাও যুদ্ধের ঐ পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
Was this review helpful to you?
or
নাম- দহনকাল লেখকের নাম- হরিশংকর জলদাস বইটির কেন্দ্রে দাড়িয়ে আছে বঞ্চিত-লাঞ্চিত জেলে সম্প্রদায়ের জীবন সংগ্রাম আর ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতার গল্প। বইটির অন্যতম প্রধান চরিত্র হল জেলে পরিবারের সন্তান, রাধানাথের পুত্র "হরিদাস"। জেলে সমাজের একজন বাঁতি। শিক্ষার আলোতে আলোকিত হয়ে মুক্তি দিতে চেয়েছে তার অন্ধকারচ্ছন্ন জেলে সমাজকে। আর তার এই আলোর পথে আসার পেছনে তার বাবা রাধানাথ, পিসিমা চন্দ্রকলা আর শিক্ষক চিত্তরঞ্জন।
Was this review helpful to you?
or
জেলে সম্প্রদায় নিয়ে লেখা অসাধারণ এক বই। লেখক একই সাথে দুইটি প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন ; একদিকে জেলে জীবনের সমস্যা- দুর্দশা আরেকদিকে একটা পশ্চাৎপদ জনপদে মুক্তিযুদ্ধ ও এর প্রভাব। আর লেখকের বিশেষত্ব হলো তিনি অসাধারণভাবে এই দুইটা প্রেক্ষাপটকে জোড়া দিয়েছেন, একত্রিত একটা রূপ দিয়েছেন। প্রথম অংশে লেখক জেলেজীবনকে এঁকেছেন নিপুণভাবে। নিজে সেই সম্প্রদায়ের একজন হওয়ায় তাঁর স্বচক্ষে দেখা ঘটনাগুলোকেও তিনি ব্যবহার করতে পেরেছেন, জেলেরা কিভাবে সমুদ্রে মাছ ধরে, কিভাবে খায়-দায়-অবস্থান করে, কিভাবে জাতপ্রথা, ক্ষমতা তাদের জীবনকে সংকুচিত করে, জেলেদের দাম্পত্যজীবন, সামাজিক জীবন সবই তো লেখকের স্বচক্ষে দেখা। তাইতো তিনি সহজেই দেখাতে পেরেছের হরিদাসের স্কুলে পড়ার ঘটনায় সবার অবাক হওয়া, জাতপ্রথার জাতাঁকলে পৃষ্ট হওয়া জেলেদের সামাজিক জীবনকে, দেখিয়েছেন স্বার্থপরদের লোলুপতা, সুবিধাবাদীদের চালাকি, লোভীদের লোভ। আবার এর মাঝেই তিনি এঁকেছেন চন্দ্রকলা নামের এক বিধবা চরিত্রকে যে শুরু থেকেই প্রতিটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে কখনও ভেঙ্গে পড়ে নি, হরবাঁশির মতো চরিত্র যারা জাতপ্রথাকে ভাঙ্গতে চেয়েছে লালনের তত্ত্বে, খু-উ বুইজ্যার মতো চরিত্র যারা অশিক্ষিত হয়েও হরিনাথের শিক্ষায় সাহায্য করেছে সর্বদা। আর এদিকে যখন এসব সংগ্রাম চলছে তখন দেশের ইতিহাসেও ঘটে যাচ্ছে নানা রদবদল। প্রথমদিকে সেসবের প্রভাব জেলেপাড়ায় না পড়লেও কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধের ঘটনায় প্রথমবার এখানে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। আর এর সুযোগে একদিকে যেমন হামিদরা সুযোগ পেয়ে লুটতরাজ, হত্যায় নেমে পড়ে ঠিক তেমনি অন্যদিকে আবদুস সোবাহানের মতো মানুষেরা সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বস্ব বাজি রাখে। আবার একাত্তরের যুদ্ধ শুরু হলে সারাদেশের মতো পতেঙ্গার জেলেপাড়াও আক্রান্ত হয় পাক বাহিনী দ্বারা। এখানে লেখক সচরাচর যে বয়ান পাওয়া যায় তাই শুনিয়েছেন আমাদের; হত্যা, ধর্ষণ, জোরপূর্বক কাজ করানো, হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ এসব তুলে এনেছেন। কিন্তু এরপরেই তিনি দেখিয়েছেন এক প্রতিরোধ; কোনো অস্ত্র ছাড়া শুধু মা-বোন-স্ত্রীদের নির্যাতনের প্রতিরোধে জেগে উঠেছে এক নির্জীব গ্রাম।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিও_লেখার_পেতিযোগিতা ২০১৮ আমাদের দেশে এমন অনেক বই আছে যা একবার পড়া শেষ হয়ে গেলে মনে মনে বলতে আহ কি বই পড়লাম।এই রকম বই তো আগে কোনদিন পড়েনি।হরিশংকর জলদাসের "দহনকাল" সেই রকম একটি বই।বই টা একবার পড়েও তৃপ্তি মিটে না,বারবার পড়তে মন চায়। বইটি নিপীড়িত জেলেদের উপর লিখা হয়েছে,তাদের হাসি,কান্না,আনন্দ ,বেদনা এত সুন্দর করে বর্ননা করা হয়েছে আপনি মনমুগ্ধের মতন পড়বেন,তার চেয়ে বড় কথা বইটি পড়ার সমায় প্রতিটা চরিএ আপনার চোখে ভেসে উঠবে।বইটিতে মুক্তিযোদ্ধার পেক্ষাপট ও তুলে ধরা হয়েছে। আপনি বইটি না পড়ে থাকলে আপনার জন্য আসলেই অনেক সমবেধনা।বই পাগল হয়ে থাকলে এই আপনার জন্য পড়াটা অবশ্যই জড়ুরি।পড়া শেষে বলবেন,আহ! এ আমি কি পড়িলাম?আগে ক্যান বইটি পড়েনি।
Was this review helpful to you?
or
জেলেদের জীবন নিয়ে লেখা এরকম সুন্দর বই আগে পড়ি নি।
Was this review helpful to you?
or
দহনকাল।। দরিদ্র জেলেদের নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় অসাধারণ এক উপন্যাস এটা।। চট্রগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার অতি দরিদ্র জেলেদের নিয়ে রচিত উপন্যাস দহনকাল।। এই জেলেপাড়ার সবাই সমুদ্রের উপর নির্ভর।।সাগরে তাদের বেড়ে উঠা সাগরেই তারা বিলীন হয়।।বিশাল হিংস্র এই সাগরের মর্জির উপর, উদারতার উপর দরিদ্র জেলেদের বেচে থাকা অশান্ত ঢেউয়ের মতোই দোদুল্যমান।সমুদ্র বেজার থাকলে তারা মাছ পায় না, রাগান্বিত থাকলে তারা ফিরে আসেনা।।এ যেন জীবনের এক রুটিন, তারা নিঃসংকোচে মেনে নিয়েছে।ঝড়ে,ঝঞ্ঝায়,ঢেউয়ে নাইয়ারা,মাঝিরা,জেলেরা মারা গেলে কেউ অবাক হয় না।।আফসোস করে ভয়ে জড়সড় হয়ে কেউ সমুদ্রে যাবেনা এরকম ভাববার অবকাশ নেই এখানে।।ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা এ সুযোগ দেয় না তাদের।একটু সময় পেলেই উৎ পেতে থাকা ক্ষুধা হিড়হিড় করে ধেয়ে আসে ঘরে।ক্ষুধা ও দারিদ্রতার যেন শুধু এ পল্লীতেই বাস।সমুদ্রের ঝড়ের শক্তি থেকে বেশী মনের শক্তি নিয়ে তারা ভেসে চলে মাসের পর মাস।।মৃত্যুভয় কখনো নৌকাভর্তি মাছ আনার আনন্দকে, বেচে থাকার তাড়নাকে পরাজিত করতে পারে না।। এই জেলেপাড়ার দরিদ্র জলপুত্র হরিদাসকে তার বাবা রামহরি শিক্ষিত করার এক অদ্ভুত এবং জেলেদের কাছে অচেনা এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে দুইমাইলেরও বেশী পথ দুরের আদাবস্যারের উঠোন স্কুলে নিয়ে যায় এক ভোরে।। '' মাস্টারবাউ, আঁই অশিক্ষিত জাইল্যা,রাধানথ আর নাম।আঁর এই পোয়াউয়ারে তোয়ার পাআর উঅর রাই গেলাম।হিতারে মানুষ গইয্যো।" আদাবস্যার ছেলের জিজ্ঞাসু চোখ দেখে রাজি হলেন।।এই প্রথম কোন জলপুত্র পড়তে আসিয়াছে।। এই দরিদ্র জেলে অধিকাংশেরই নিজস্ব জাল নেই,নৌকা নেই।তারা দিনের পর দিন, রাত্রির পর রাত্রি খাটিয়া, ঝড়ের সাথে সম্মুখ সমরে লড়াই করে করে বড় বড় নৌকা বোঝাই মাছ আনে বহদ্দারে (মালিকের) জন্য।" "বহদ্দার অন্নচরণরা নৌকাভর্তি মাছ নিয়ে কুলে ফিরে, রাধনাথরা বাড়ি ফিরে শূন্য খাড়াং নিয়ে।তারপরও কোন প্রতিবাদ করতে পারে না....কেননা একজন বহদ্দারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে সব বহদ্দারের অসহযোগিতা তাদের মাৎস্যজীবনকে জেরবার করে ছাড়ে"। দুর সমুদ্রে কোন নৌকা ডুবে গেলে এ পাড়ায় নোকার জন্য কান্না হয়, চিরদিনের জন্য হারানো জলপুত্রদের নিয়ে বহদ্দারদের কিচ্ছু যায় আসে না। এদিকে জালাল মেম্বার,খালেক মেম্বার রা শোষনের তীক্ষ্ণ জাল পেতে রামহরি দয়ালহরিদের নৌকা,ধানি জমি দখল করে নেয় কিন্তু তাদের দেওয়া ঋন ফুরায় না।। এত সকল জীবন সংগ্রামের ভিতর জলপুত্র হরিদাস ক্লাস ফাইভে ফার্স্ট হয়।।ক্লাস সিক্সে উঠে সে।।অপার সম্ভাবনার অবারিত চোখ নিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়।। দরিদ্র জেলে পল্লীতে প্রথম কেউ এতদুর পড়ল।।একদিকে রাধানাথ দের সংগ্রাম অন্যদিকে নীরবে হরিদাস বেড়ে উঠছে।। ৭০ এর জলোচ্ছ্বাসে সারাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেল, জেলেপল্লীও বাদ গেল না তার রোষানল থেকে।।কাউকে পাওয়া গলে গাছের আগায়, কাউকে ঘরবাড়ীর নিচে কাউকে পাওয়ায় গেলনা।দুর দুরান্ত থেকে ত্রান আসলেও তা প্রতিবাদী রাধানাথরা পায় না।নিরঞ্জন, খালেক মেম্বাররা মেরে দেয়। একদিকে কালবৈশাখীর তান্ডবে এই দরিদ্র জলপুত্ররা ছিন্নভিন্ন, অন্যদিকে ডাঙ্গায় শোষনের নিষ্পেষণে তাদের জীবনের দহনকাল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।। এমনি এক অন্ধকার সময়ে ৭১ আসে তাদের জীবনে।।এই নিরীহ জলপুত্ররা এবার মাছ ধরতেও যেতে পারে না।।হত্যা, ধর্ষন, লুট,ক্ষুধা চারদিক থেকে এই নিঃস্ব জলপুত্রদের আঘাত করতে লাগল।। খালেক মেম্বার এখন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, পদোন্নতির সাথে সাথে অত্যাচারও বাড়তে থাকে তার. ....এভাবে বাড়তে থাকে তাদের দহনকাল......
Was this review helpful to you?
or
'দহনকাল' উপন্যাসটি বাস্তবিকই এক দহনকালের ইতিহাসকে ধারণ করেছে। আর সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন হরিশংকর জলদাস তার আশ্চর্য সহজ সুন্দর বর্ণনাশৈলী আর জাদুকরী ভাষায়। লেখকের সম্পর্কে বলতে গেলে স্বেচ্ছায়ই হোক বা অবচেতন মনের কারসাজিতেই হোক, অদ্বৈত মল্লাবর্মণের কথা মনে আসবেই। একই প্রেক্ষাপট আর জীবনধারা থেকে দুজন উঠে এসেছেন বলেই শুধু না। একই বিষয়বস্তুকে পুঁজি করে হরিশংকর জলদাস তার এই 'দহনকাল' উপন্যাসে যে সাহিত্যের ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেছেন, তাতে তাকে অদ্বৈত মল্লাবর্মণের যোগ্য উত্তরসূরী বলে আখ্যা দেয়া কি অত্যুক্তি হয়ে যাবে? মনে তো হয় না। 'দহনকাল' উপন্যাসের রিভিউ লিখতে বড্ড দেরি হয়ে গেল। ইতোমধ্যে ১৪১৬ বঙ্গাব্দে বাংলা ভাষায় বাংলাদেশী লেখকের সেরা সাহিত্যকর্ম হিসেবে এই অনবদ্য সৃষ্টি উপযুক্ত স্বীকৃতি পেয়ে গেছে প্রথম আলো'র কল্যাণে। তাই এই বইয়ের ব্যাপারে আসলে খুব বেশি কিছু বলার নেই। নিঃসন্দেহে এটি গোটা বাংলা সাহিত্যের সেরা সৃষ্টিকর্মসমূহের তালিকায় বেশ উপরের দিকেই থাকবে। যে প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাস রচিত অর্থাৎ জলের সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত নদীতীরবর্তি মানুষ ও জেলে সম্প্রদায়কে উপজিব্য করে গড়ে ওঠা এই উপন্যাসের কাহিনী বারবার আমাদেরকে মনে করিয়ে দেবে 'পদ্মা নদীর মাঝি' বা 'তিতাস একটি নদীর নাম' এর মত অমর সাহিত্যকর্মগুলোকে। নদীতীরবর্তি মানুষ ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তথা জীবনের টানাপোড়েনের কথা খুবই প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসে। পাশাপাশি উপন্যাসের কাহিনীতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকে স্থান দেয়ায়। হয়ত মুক্তিযুদ্ধকে টেনে না আনলে আর দশটা একই শ্রেণির সাহিত্যের কাতারে ঠাঁই হত এ উপন্যাসের। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ আর সেই মুক্তিযুদ্ধের ফলে মোড় ঘুরে যাওয়া কিংবা আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠা কাহিনী উপন্যাসকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। এমনিতে হরিদাস নামক জলপুত্রের জীবনপ্রবাহ, তার মনোজগতে বাবার প্রেরণা আর সমাজের নানা বাধা-বিপত্তি, তার পরিবারকে ঘিরে সমাজের পিছুটান, স্বার্থপর সুবিধাবাদীদের ওপর চালাকি অপরাপর কথাসাহিত্যের ভাবই বহন করে। বঞ্চিত-নিপীড়িত জেলেসমাজকে গ্রাস করতে রাধানাথ আর আবদুল খালেকের কূটচালও নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসব ঘটনাকে লেখক যেভাবে একটির সাথে আরেকটির সংযোগ ঘটিয়ে একীভূত করেছেন, সেটা নজর কাড়বার মতই। তাছাড়া উপন্যাসটির সবচেয়ে বড় দিক হল চন্দ্রকলার মত বিধবাকে অপর্ণার মত সংযমী কিন্তু সদা সংগ্রামশীল রুপে পাওয়া যা পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দিতে বাধ্য। আর সময়ের প্রয়োজনে উপন্যাসের চরিত্ররা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে পরোক্ষভাবে হলেও জড়িয়ে পড়ে, তারপরের ঘটনাপ্রবাহ ও তাদের অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমে পড়ার আখ্যান উপন্যাসকে পূর্নাঙ্গতা দান করে। প্রতিবাদ-প্রতিশোধ, সংগ্রামী মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, প্রতিটা চরিত্রের আলাদা রুপ-রঙে বৈচিত্র্যের সাথে হঠাৎ করেই যখন মুক্তিযুদ্ধ ঢুকে পড়ল, উপন্যাসের গভীরতা গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। বস্তুতই হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ --- এই চরিত্র কয়েকটির মাধ্যমে গোটা জেলে সমাজের বাস্তব চিত্র ছবির মত কল্পনার জগতে ধরা দেয়। আর একদম শেষে উপন্যাসের যে পরিণতি, তা আর শুধু ঐ জেলে সমাজের জীবনেই আটকে থাকে না। গোটা মানবজীবনেরই প্রকৃত প্রতিচ্ছবিরূপে প্রতিভাত হয়। সবমিলিয়ে একটা কথাই বলতে পারি, ‘দহনকাল' একটি সত্যিকারের মাস্টারপিস। লেখকের লেখকজীবনের সেরা লেখা তো বটেই, ভবিষ্যতেও তার যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে থাকবে এটি। এমন লেখা আবারো লিখবার স্পৃহা যদি লেখকের মনে অক্ষুণ্ণ থাকে, তাহলে আশা করা যায় হরিশংকর জলদাশ নামটি বরাবরের মতই বাংলা সাহিত্যের মানচিত্রে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে তুলতে পারবে। আর সেক্ষেত্রে এই উপন্যাসটি বিবেচিত হবে 'এক নতুন কিংবদন্তীর আগমনবার্তা' হিসেবে।
Was this review helpful to you?
or
জেলেসম্প্রদায়ের দিবারাত্রির কাব্য নির্মাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এমন লেখক হিসেবেই আমরা জানি হরিশংকর জলদাসকে । সাহিত্যের বিচারে লেখকের সফলতম লেখার একটি এই ‘দহনকাল’ ! অসাধারণ লেখনীর সাহায্যেই লেখকের নিজের জীবনের সংগ্রামের কাহিনী আমাদের কাছে উঠেছে নিজের সামনে ঘটে যাওয়া কোন বাস্তব ঘটনারূপে । শুধু জেলেদের জীবন সংগ্রাম নয় এ উপন্যাসে লেখক তুলে ধরেছেন অন্য আরেক সংগ্রামকে- স্বাধীনতার সংগ্রাম - ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। যা বইটিকে একটি অন্য রুপ দিয়েছে বলেই মনে হয় ।। উত্তর পতেঙ্গার দুটি জেলেগ্রাম মাউছ্যাপাড়া এবং কৈত্তরপাড়াকে পটভূমি করে লেখক লিখেছেন এই উপন্যাস । অশিক্ষিত রাধানাথ জেলে সমাজের নিয়মের বাইরে যেয়ে প্রায় ২ মাইল দূরে বাসরত শিক্ষকের কাছে পুত্র হরিদাসকে লেখাপড়া শিখানো শুরু করেন।দারিদ্রের কষাঘাতে পিষ্ট রাধানা্থ তার পুত্রের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। হরিদাসের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন দাসের নারী শিক্ষায় সচেতনতা আমাদের ভাবিয়ে তোলে সত্যিই আমরা কতখানি এগিয়েছি ?? অন্যদিকে রাধানাথের মা চন্দ্রকলা এই স্বার্থপর ,সুবিধাবাদী সমাজেরঅনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকেছেন । চন্দ্রকলা চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের এক বিধবার জীবনের নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার । হরিদাসের মা বসুমতী চরিত্রে আমরা দেখি একনিষ্ঠ গৃহিণীর সংগ্রাম যে সামান্য উপার্জন দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে গেলেও হার মানেন নি কখনো ! এছাড়া সর্দার আব্দুল খালেক ও জালাল মেম্বার দরিদ্র, অশিক্ষিত এসব জেলেদের গ্রাস করার চেষ্টা করে।জেলেদের নিজেদের মধ্যে আবার জাতিভেদের শিকার হরবাঁশি। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এদের প্রত্যেকেই যেন জেলেসমাজের বাস্তবতার এক একটি বিমূর্ত প্রতীক। সঙ্গ-নৈঃসঙ্গ্য, মৃত্যু-জীবন চলতে থাকে জেলেদের নিরন্তর। এভাবে জেলেরা জীবনযুদ্ধে দিনদিন কাটাতে কাটাতে চলে আসে এক অন্য যুদ্ধ-মা-বোন-স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করবার জন্য হরিদাস-রাধেশ্যাম-খু-উ বুইজ্যারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়... জীবনযুদ্ধে ভিতু,বঞ্ছিত, নির্জীব,জেলেরা জড়িয়ে পরে দেশের যুদ্ধে।তাদের সর্ব শক্তি দিয়ে তারা প্রতিরোধ করে পাক হানাদার বাহিনীর। নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে। এত সব সংগ্রামের মধ্যেও লেখক অত্যন্ত নিপুন ভাবে তুলে ধরেছেন জেলে সমাজের বিভিন্ন ধর্ম পেশার মানুষের কাহিনী । সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা যেমন পাই তেমনি দেখি ঝড় বন্যার মত প্রাকৃতিক তান্ডবের ভয়াবহতা । যেমন উঠে এসেছে বর্ণপ্রথার বরবতা তেমনি আবার কৃষ্ণ মিলনের গানের আসরে আমরা সবাইকে খুজে পাই একসাথে ! তাই ভিন্নতার স্বাদ পেতে পড়ে ফেলুন ১৪১৬ বঙ্গাব্দে বাংলা ভাষায় বাংলাদেশী লেখকের সেরা সাহিত্যকর্ম 'দহনকাল' ।।
Was this review helpful to you?
or
হরিশঙ্কর জলদাস শিক্ষকতা করেন। আর করেন লেখালেখি। লেখালেখি ও গবেষণার বিষয় জেলেসম্প্রদায়ের জীবন। তাঁর লেখায় উঠে আসে ধীবরশ্রেণীর আনন্দ- কান্না, জন্ম ও মৃত্যুর কথা। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে জলপুত্র, কৈবর্তকথা ও দহনকাল। এবার সৃজনশীল শাখায় তাঁর দহনকাল পেয়েছে প্রথম আলো বর্ষসেরা উপন্যাসের পুরস্কার। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ ইত্যাদি চরিত্রগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় "তিতাস একটি নদীর নাম" বা "পদ্মা নদীর মাঝি"র কথা।তবে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উপন্যাসটিকে দিয়েছে এক অন্য মাত্রা।নদীমাতৃক এই দেশের সাহিত্যে যে নদীতরবর্তী মানুষের জীবনচিত্র এক বিরাট অংশ জুড়ো তা আবারও প্রমান করেছে "দহনকাল"।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যে খুব কম লেখকই প্রান্তজন,হরিজন অথবা জেলেদের নিয়ে লিখেছেন।এবং এদের মধ্যে অন্যতম হল হরিশংকর জলদাস। নিজে জেলে সমাজ এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারনে খুব ভালো করে জেলে সমাজকে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। এবং অসাধারন লেখনীর সাহায্যে সেটি ফুটিয়েও তুলেছেন তার লেখায়।অপূর্ব লেখনী ও অসাধারন বর্ণনায় পরিপূর্ণ দহনকাল বইটি লেখক হরিশংকর জলদাস এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। অশিক্ষিত রাধানাথ জেলে সমাজের নিয়মের বাইরে যেয়ে পুত্র হরিদাসকে লেখাপড়া শিখানো শুরু করে। একদিকে দারিদ্রের কঠিন নাগপাশ এর মধ্যে রাধানা্থ তার পুত্রের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। অন্যদিকে রাধানাথের মা চন্দ্রকলা এই স্বার্থপর ,সুবিধাবাদী সমাজের শেষ পর্যন্ত এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকে গেছে। সেই সাথে সর্দার আব্দুল খালেক ও জালাল মেম্বার দরিদ্র, অশিক্ষিত এসব জেলেদের গ্রাস করার চেষ্টা করসে।জেলেদের নিজেদের মধ্যে আবার জাতিভেদের শিকার হরবাঁশি। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এদের প্রত্যেকেই যেন জেলেসমাজের বাস্তবতার েক এক টি বিমূর্ত প্রতীক। সঙ্গ-নৈঃসঙ্গ্য, মৃত্যু-জীবন চলতে থাকে জেলেদের নিরন্তর। এভাবে জেলেরা জীবনযুদ্ধে দিনদিন কাটাতে কাটাতে চলে আসে এক অন্য যুদ্ধ...মুক্তিযুদ্ধ... জীবনযুদ্ধে ভিতু,বঞ্ছিত, নির্জীব, নির্বীর্য জেলেরা জড়িয়ে পরে দেশের যুদ্ধে।তাদের সর্ব শক্তি দিয়ে তারা প্রতিরোধ করে পাক হানাদার বাহিনীর। নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।শুরু হয় তাদের এক নতুন কাল এর... দহনকালের...