User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এ বছর লক ডাউনের প্রথম পড়া এই বইটা শুধু আকারেই বড় নয়। কাহিনী বিন্যাসেও লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্য নিপুনভাবে প্রত্যেক টা চরিত্র কে সাজিয়েছেন। জয়মোহন, আদিত্, কন্দর্প, তিতির, বাপ্পা, ইন্দ্রাণী, শুভাশিস, ছন্দা, টোটো সহ আরো কত চরিত্র এসে উপন্যাসের পাতায় পাতায় মিলিত হয়েছে। মনে হয়েছে এ বুঝি ওর কাছের মানুষ। কিন্তু না, দিন শেষে আসলে সবাই একা।
Was this review helpful to you?
or
বিশাল পরিসরের উপন্যাস 'কাছের মানুষ'। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এমনভাবে গল্প বলে গেছেন যে আপনি বইয়ের ভেতর হারিয়ে যাবেন। ইন্দ্রাণী, তিতির সবাইকেই মনে হবে খুব কাছের মানুষ। আর হয়তো গল্পটা শুধু ইন্দ্রাণী, তিতির এর ই না, এমন গল্প হয়তো অনেকের। কাছের মানুষ কতোটা কাছের সেটাই দেখবেন এই উপন্যাসে। মানুষের এক জীবন কেটে যায় কাছের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাছের মানুষ কি কেউ আসলেই হয়?
Was this review helpful to you?
or
জয়মোহনের তিন ছেলে _ আদিত্য, সুদীপ এবং কন্দর্প এবং মেয়ে জয়শ্রী। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ছেলে, দুই ছেলের বউ, তিন নাতি নাতনি নিয়ে ঢাকুরিয়ায় নিজেদের পুরনো বাড়িতে জয়মোহনের বসবাস। তার স্ত্রী শোভনা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। ছোট দুই ছেলের চেয়ে আদিত্যের প্রতি শোভনার দুর্বলতা ছিল বেশি, এর কারণ ছোটবেলায় আদিত্যের কঠিন অসুখ হয়েছিল। আদিত্য এবং ইন্দ্রাণীর দুই ছেলেমেয়ে - তিতির এবং বাপ্পা। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে তিতিরের বাবার প্রতি মমতা বেশি এবং ইন্দ্রাণী বেশি ভালোবাসেন ছেলে বাপ্পাকে। ইন্দ্রাণীর জীবন সংগ্রামের জীবন বলা যায়। স্কুলের চাকরি ছাড়াও তিনি আদিত্যের প্রেস দেখাশোনা করেন যে প্রেস নিয়ে আদিত্যের একসময় অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেই বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছে অনেকদিন। আদিত্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবসায় হাত দিয়েছেন, কিন্তু কোনোটাতেই সফল হতে পারেননি। এ নিয়ে তার স্ত্রী ইন্দ্রাণী এবং বাবা জয়মোহন তার প্রতি অসন্তুষ্ট। ডাক্তার শুভাশিস, ইন্দ্রাণীর বিয়ের আগে থেকে বন্ধু। তারা কি শুধুই বন্ধু ছিলেন? আর এখন কি শুধুই বন্ধু? বাপ্পাও ভাবে শুভাশিস সবসময় তাদের সাহায্য করেছে। তিতির, বাপ্পা, ইন্দ্রাণী, আদিত্য সকলের জন্যই তার সমান উদ্বেগ। কিন্তু কেন?? শুভাসিসের স্ত্রী ছন্দা এবং একমাত্র সন্তান টোটো। টোটো এবং তিতির দুজনই মাধ্যমিক দিয়েছে। রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় টোটো খুব ভালো করেছে, সন্ধ্যায় শুভাশিসের টোটো এবং ছন্দাকে নিয়ে বাহিরে খেতে যাওয়ার কথা। কিন্তু শুভাশিস কেন সেই প্ল্যান রেখে ছুটে গেলো তিতিরের রেজাল্ট জানতে? তিতির দেখতে সম্পূর্ণ ইন্দ্রাণীর মতোই হয়েছে৷ অথচ এই তিতিরকে কিনা তিনি ভ্রূণ অবস্থাতেই হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কেনো???! আদিত্য, সুদীপ, এবং কন্দর্প, তিন ভাইয়ের মধ্যে সুদীপকেই সফল বলা চলে। আদিত্যের কোনো পরিকল্পনাই টেকেনা, অন্যদিকে কন্দর্পের ঝোঁক অভিনয়ের দিকে। সুদীপ এবং কন্দর্প আলাদা আলাদাভাবে তাদের বাড়িটা ভেঙে ফ্ল্যাট বানানোর চিন্তা করে, আদিত্যকে বলে, কিন্তু আদিত্যের তাতে সম্মতি থাকেনা। জয়মোহনও কিছুতেই রাজি না বাড়ি ভাঙতে। সুদীপ বা কন্দর্প কেউই বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে ইন্দ্রাণীর সাথে আলোচনা করেনা, কিন্তু ইন্দ্রাণীই সেটা নিয়ে আগ্রহ দেখায় এবং জয়মোহনকেও বলে। জয়মোহন খুব বেশি ভালোবাসেন ইন্দ্রাণীকে। তার কথা কি ফেলতে পারেন? ইন্দ্রাণী কেন বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরিতে আগ্রহ দেখালেন?? বাপ্পা জাহাজে চাকরির সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু চাকরি পাকাপোক্ত হবার আগে যে ট্রেনিং তার জন্য প্রয়োজন ৪০ হাজার টাকা। টাকাটা সুদীপ বা শুভাশিস বা আদিত্যের বোনের জামাই শংকরের কাছ থেকে খুব সহজেই নিতে পারতেন। কিন্তু ইন্দ্রাণী তা নিবেননা। সেজন্যই শ্বশুর জয়মোহনের আবেগের বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট বানানোর কথা বলেন তিনিও। বাপ্পার কাছে কলকাতা ভালো লাগেনা। কলকাতায় কিভাবে মানুষ বসবাস করে সেটা সে চিন্তা করতে পারেনা। একবার তার মনে ক্ষণিকের জন্য খুনের চিন্তাও এসেছিল। কাকে খুন করবে সে? ডাক্তার শুভাসিসকে? নাকি আদিত্য রায়কে? এই কলকাতা ছেড়ে তার চলে যেতে ইচ্ছে করে বলেই সে জাহাজে চাকরি নিয়েছে। কিন্তু কমাস জাহাজে থেকেই তার খুব কলকাতার কথা মনে হয়। মায়ের জন্য মন কেমন করে। তিতিরকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে। এমনকি বাবা আদিত্যের কথাও যে তার মনে হয়! বন্ধু বিষ্ণপ্রিয়াকে চিঠি লিখে যদিও সে চিঠি আর পাঠায়না। ইন্দ্রাণীরা দুই ভাইবোন। ইন্দ্রাণী এবং তনুময়। তনুময় কি কারণে যেন ইন্দ্রাণীর উপরই রাগ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কি সেই কারণ? আর শুধু কি ইন্দ্রাণীর উপর রাগ করেই? নাকি আরো কোনো কারণ ছিল? তার বাবা মা উমা ধীরাজ তনুময়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই বুড়ো হয়ে গেলেন। তাদের দায়িত্ব নিয়েছে ইন্দ্রাণী। তনুময় কি ফিরবে? স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে টোটোকে নিয়ে শুভাশিস কলকাতায় থাকেন। তার বাবা মা থাকেন মাধবপুরে। শুভাশিস যখন খুব ছোট তখন এক দুর্ঘটনায় তার মা মনোরমা মানসিক ভারসাম্য হারান। কে তার কে হয় কিছুই তিনি বুঝতে পারেননা। অসুস্থ স্ত্রীকে পাশে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিলেন শুভাসিসের বাবা শিবসুন্দর, তিনিও ডাক্তার। সেখানে তাদের দেখাশোনা করে তুফান এবং তুফানের স্ত্রী অলকা। তুফানকে শিবসুন্দর ছোট থেকে বড় করেছেন ছেলের মতো আদর ভালোবাসা দিয়েই। তুফানও বড্ড ভালোবাসে শিবসুন্দরকে। আদিত্য, নেশা করা যার নেশা। স্ত্রী এবং মেয়েকে কথা দিয়েও সে নেশা করে বাড়ি ফেরে। না সে পেরেছে বাবা মায়ের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে, না স্ত্রীর যোগ্য স্বামী হতে পেরেছে, না পেরেছে সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে। তবুও মেয়ে তিতির তাকে অসম্ভব ভালোবাসে। এই ভালোবাসাও থাকবেতো!? মাধ্যমিকের পর তিতির এবং টোটো একই স্কুলে ভর্তি হয়, যদিও বিভাগ আলাদা৷ শুভাশিস, তিতিরের ডাক্তার আংকেল তিতিরকে খুব ভালোবাসেন, তিতিরও তাকে পছন্দ করে। সেই সুত্রে তিতির টোটোর সাথেও কথা বলতে চায়, কিন্তু টোটো কেন এড়িয়ে চলে? টোটোর মতে যার মায়ের কারণে তাদের পরিবারে অশান্তি, তাকেতো অপমানই করবে সে!! টোটো যে মা ছন্দাকে খুব বেশি ভালোবাসে! তবুও তিতিরের ম্লান মুখ দেখেও টোটোর খারাপও লাগে! একদিন গাড়িতে করে বাড়িতেও নিয়ে যায়। আবার পৌঁছে দিতে গিয়ে যখন দেখলো তিতিরদের বাড়ির সামনে তার বাবা শুভাসিসের গাড়ি, তখন তিতিরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে দিতে কি বললো! কন্দর্প, অভিনয় জগতে ভালোই নাম কুড়িয়েছে, অশোক মুস্তাফির কল্যাণে, আরেক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। আদিত্যদের বাড়িটাও অশোক মুস্তাফিই ভেঙে ফ্ল্যাট বানাচ্ছে। মধুমিতা, কন্দর্পের বন্ধুর বিধবা স্ত্রী। অনেক সময়ই কন্দর্প তার অনেক সাহায্য করেছে। তারা কি ভালোবাসে একে অপরকে? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া ইন্দ্রাণী, তিতির, আদিত্য, বাপ্পা, শুভাশিস, ছন্দা, টোটো, শিবসুন্দর, মনোরমা, তুফান, অলকা, সুদীপ, রুনা, এটম, কন্দর্প, মধুমিতা, উমা, ধীরাজ, তনুময় সবাই সবার কাছের৷ কিন্তু আসলেই কি তারা কাছের মানুষ? কখনো কখনো খুব কাছাকাছি পাশাপাশি অবস্থান করেও আমরা একে অপরের খুব দূরেই থেকে যাই৷। বিশাল পরিসরের উপন্যাস 'কাছের মানুষ'। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এমনভাবে গল্প বলে গেছেন যে আপনি বইয়ের ভেতর হারিয়ে যাবেন। ইন্দ্রাণী, তিতির সবাইকেই মনে হবে খুব কাছের মানুষ। আর হয়তো গল্পটা শুধু ইন্দ্রাণী, তিতির এর ই না, এমন গল্প হয়তো অনেকের। কাছের মানুষ কতোটা কাছের সেটাই দেখবেন এই উপন্যাসে। মানুষের এক জীবন কেটে যায় কাছের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাছের মানুষ কি কেউ আসলেই হয়? এক ঝাঁক চরিত্রের সমাহার ঘটেছে 'কাছের মানুষ' এ। আদিত্য, তিতির বা ইন্দ্রাণী নয়, আমার কাছে শুভাশিস চরিত্রটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। শেষটা পড়ে ধাক্কা খাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটবে। কিন্তু ওই যে কাছের মানুষেরাও বোঝেনা! বেশ কিছুদিন ধরে বইটা পড়বো পড়বো করেও ধরা হচ্ছিলনা সাইজে বড় বলে। দুএকবার ধরেও রেখে দিয়েছি। তারপর কদিনে ৩০০ পেইজের মতো পড়লাম টুকটাক ব্যস্ততার মধ্যে। ৩০০ পেইজের পর থেকে টানা পড়েছি বলা যায়। কেমন লেগেছে? সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। এক ছোট বোন সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ছোটগল্পের বই উপহার দিয়েছিল৷ ছোট গল্পগুলো মোটামুটি লেগেছে। এই বইয়ের অনেক প্রশংসা শুনেছিলাম। এই বইটাও আরেক ছোট বোন দিয়েছে। যা শুনেছিলাম ভুল শুনিনি। এক কথায় বলতে গেলে পড়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর অন্য বইগুলোও পড়তে হবে। #হ্যাপি_রিডিং
Was this review helpful to you?
or
বিশাল পরিসরের উপন্যাস 'কাছের মানুষ'। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এমনভাবে গল্প বলে গেছেন যে আপনি বইয়ের ভেতর হারিয়ে যাবেন। ইন্দ্রাণী, তিতির সবাইকেই মনে হবে খুব কাছের মানুষ। আর হয়তো গল্পটা শুধু ইন্দ্রাণী, তিতির এর ই না, এমন গল্প হয়তো অনেকের। কাছের মানুষ কতোটা কাছের সেটাই দেখবেন এই উপন্যাসে। মানুষের এক জীবন কেটে যায় কাছের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাছের মানুষ কি কেউ আসলেই হয়? এক ঝাঁক চরিত্রের সমাহার ঘটেছে 'কাছের মানুষ' এ। আদিত্য, তিতির বা ইন্দ্রাণী নয়, আমার কাছে শুভাশিস চরিত্রটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। শেষটা পড়ে ধাক্কা খাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটবে। কিন্তু ওই যে কাছের মানুষেরাও বোঝেনা!
Was this review helpful to you?
or
তা বেশ অনেক বছর আগের ব্যাপার, বুঝলেন. Early-mid nineties. আমি তখন ছোট-ই। সবে দেশ পড়া শুরু করেছি। মা রেগুলার পড়তেন-টড়তেন, পড়ার অভ্যেসটাও তিনি-ই তৈরী করেছিলেন, কিন্তু একটুখানি পিউরিটানও ছিলেন। তোমার এখনো এইটা পড়ার বয়েস হয়নি – টাইপের কথা একটু-আধটু শুনেছি। যাকগে , net-net তখন আমার দেশ পড়ার বয়েস সবে হয়েছে , আর দেশে তখন ধারাবাহিক ভাবে বেরোচ্ছে এক সাথে সুনীল গঙ্গেপাধ্যায়ের “প্রথম আলো” , আর সুচিত্রা ভট্টাচার্যের “কাছের মানুষ”। আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “সেই সময়” টিভি সিরিয়াল দেখেছি, তার হিন্দি রূপান্তর যুগান্তরও টিভিতে দেখেছি – কী সুন্দর সুন্দর সব সিরিয়াল তৈরী হতো তখন ! তারপর মায়ের অফিসের লাইব্রেরি থেকে এনে বইটাও পড়ে শেষ করে ফেলেছি তদ্দিনে । যখন বুঝতে পারলাম “প্রথম আলো” literally “সেই সময় ” এর পরবর্তী ভাগ, তো খুব আগ্রহের সঙ্গে দেশের আগের সংখ্যাগুলো নামিয়ে এনে প্রথম থেকে শুরু করে দিলাম পড়তে। দারুন, দারুন – কিন্তু হয়ে গেলো শেষ পুরোনো পর্বগুলো , এখন বসে থাকো পরের কিস্তির জন্যে। কিন্তু সে কি আর হয়? আমি পড়ুয়া ছেলে , পুরোনো দেশ গুলো তো হাতের কাছেই ছিল, শুরু হয়ে গেলো অন্য উপন্যাসটি পড়া। বাঁচোয়া এই, যে প্রথম আলো তখন গল্পের একেবারে মাঝপথে, কাছের মানুষ সবেই শুরু হয়েছে। কিন্তু মজে গেলাম গল্পে – especially কারণ গল্পের পাত্র-পাত্রীরা আমাদের মতনই মিডল-ক্লাস শহুরে সাধারণ লোকজন। “প্রথম আলো” তো আর ঠিক “সেই সময়” নয়, মাঝখানে খানিকটা ঝুলে যায়, যদিও সব মিলিয়ে খুবই উঁচু লেভেলের লেখা – যারা পড়েছেন তারা বুঝবেন কি বলছি। চার পাঁচটা কিস্তির মধ্যে-ই হয় কি, আমি প্রথমে “কাছের মানুষ” দিয়েই নতুন দেশ পড়তে শুরু করি. কী সুন্দর, free-flowing লেখা ! বিপুলকায় উপন্যাস, কত ক্যারেক্টার এর আনাগোনা, তাদের নিজেদের গল্প, একটা কাঠামোয় বেঁধে রাখা খুব একটা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য খুবই দক্ষতার সঙ্গে সেটা করেছেন – narrative flow is super smooth, character arcs are very well-defined. আর ভদ্রমহিলা এতো সুন্দর ডায়ালগ আর সিন লিখতেন ! খুবই visual লেখার style । পড়লে যেন মনে হয় ঠিক চোখের সামনেই সব ঘটনাগুলো হচ্ছে। ইন্দ্রানীকে আপনি নিশ্চয়ই একজন স্ট্রং ক্যারেক্টার বলবেন – স্পষ্টবক্তা , দৃঢ়চেতা , বুদ্ধিমতী, সাহসী। একান্নবর্তী পরিবারের তিনি-ই মাথা – স্কুলে পড়ান, আবার সংসারের যে বংশানুক্রমিক ছোট ছাপাখানার ব্যবসাটি আছেই, তারও কর্মভার সামলান। একটা কিছু অসম্পূর্ণতা যেন তাকে ঘিরে আছে। তাঁর স্বামী আদিত্য বিভিন্ন ব্যবসায় অসফল , মদ্যপ, কুঁকড়ে থাকা এক ব্যর্থ মানুষ ( বলা যায় বেশ শীর্ষেন্দু-উপযোগী এক হেরো লোক). তাদের ছেলে বাপ্পা, মেয়ে তিতির। বাপ্পা কলেজ স্টুডেণ্ট, উদ্যোগী , উচ্চাকাঙ্খী, কিছুটা হয়তো স্বার্থপর। তিতির স্কুলে – শান্ত, বাবা-অন্ত-প্রাণ , নরম-হৃদয়। ঢাকুরিয়া-র কাছে তাদের বাড়ি – তাদের সঙ্গে থাকে আদিত্য-র অশীতিপর বাবা জয়মোহন, তার দুই ভাই, সুদীপ তার স্ত্রী রুনা আর ছেলে এটম-এর সাথে, আর ছোট ভাই কন্দর্প, struggling film actor। আর আছে স্বনামধন্য ডাক্তার শুভাশিস, ইন্দ্রানী-র পুরোনো বন্ধু, আর তার সংসার, স্ত্রী ছন্দা আর ছেলে টোটো। আর আছে কলকাতা, এতো লোক, এতো কথা, এতো বন্ধন, তবুও একাকিত্ব। একদিকে যেমন এই নিস্তরঙ্গ জীবন, তেমনি হঠাৎ কখনো কোনো বিশেষ ঘটনা যেন এই ভিত-টাকে নাড়া দিয়ে যায়। কত চাপান উতর, শ্লেষ, গ্লানি, হতাশা, আবার হঠাৎই মন ভরা আনন্দ । এই নিয়েই তো মানুষ। কেউ বা কিছু দূরের, কেউ বা কাছের। আমি একটু আধটু লিখি , যদিও বাংলায় লেখার ঠিক সাহস হয় না। যে ভাষায় আপনি প্রতিদিন কথা বলেন না, যে ভাষা আপনাকে প্রত্যহ ঘিরে নেই, সে ভাষায় লেখা তো কিছুমাত্রায় দুঃসাহস, তাই না? যাই হোক, যখন কেউ জিজ্ঞেস করে আমার প্রিয় লেখকদের কথা, আমি সাধারণতঃ বলি যে যারই লেখায় পড়তে ভালো লাগুক না কেন, আমি যখন লিখি, তখন খুব চেষ্টা করি আমার লেখাটা যেন Raymond Chandler বা Nick Hornby-র মতো হয়, সহজপাঠ্য কিন্তু কিছুমাত্রায় গভীরতাপূর্ণ (পারি না বেশিরভাগ সময়, বলাই বাহুল্য ) – আর একটা নামকে অনেক সময় বলি না, সেটা কিন্তু এই জন্য-ই যে আমার ভিন্নভাষী বন্ধুবান্ধব এবং সহলেখকরা সবাই তো আর সুচিত্রা ভট্টাচার্য কে চিনবেন না। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মতন-ই লিখতে চাই। কিছুদিন আগেই আবার পড়লাম কাছের মানুষ, একইরকম ভালো লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
সুচিত্রা ভট্টাচার্য মূলত সাংসারিক বিষয়গুলো নিয়ে বেশি লিখেছেন। সাংসারিক বিষয়গুলোতে সময়কালের খুব গভীর প্রভাব না থাকলেও, কিছুটা প্রভাব থাকে। প্রভাব থাকাটাই স্বাভাবিক, সময়ের সাথে মূল্যবোধেরও তো পরিবর্তন হয়। 'কাছের মানুষ' নব্বইয়ের দশকের প্রথম চতুর্ভাগের পটভূমিকায় লেখা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #অক্টোবর : ৪ নাম : কাছের মানুষ লেখক : সুচিত্রা ভট্টাচার্য মূল্য : ৯০০ টাকা পৃষ্ঠা : ৬১৪ গল্পটা ষোল বছরে কিশোরী তিতিরের। যৌবনের দোরগোড়ায় দাড়িয়ে আছে যে।বাইরে উচ্ছল, আনন্দিত, তার সমবয়সী অন্য দশটা মেয়ের মতই। কিন্তু ভেতরে চাপা, নিস্পন্দ, কঠিন। বাবার জন্য তার অপরিশীম ভালবাসা। কিন্তু বাবা আদিত্য মাতাল, আবেগ প্রবন, নিষ্কর্মা। আর মা ইন্দ্রানী যেন লৌহমানবী। গল্পটা ইন্দ্রানীর। সবার চোখে লৌহমানবীর মত কঠিন হলেও, বুকের ভেতর তার সমুদ্র। দ্বায়িত্বহীন স্বামীর সংসারে, সেই একমাত্র খুঁটি। দিন রাত অমানুষিক পরিশ্রম করে, নিজের সংসারের জন্য। কিন্তু মন জুড়ে দখল নিয়ে আছে আরেকজন, যে তার সংসারের কেউ নয়। শুভাশিস সেনগুপ্ত শহরের নাম করা ডাক্তার। পসার প্রতিপত্তির কমতি নেই তার। অঢেল সম্পদের মালিক। একমাত্র ছেলে টোটো, আর স্ত্রী ছন্দা কে নিয়ে তার সুখের সংসার। তবে সে সুখ শুধু মানুষের চোখে। ভেতরে ভেতরে সে ভয়ানক একা। তার হৃদয় অন্য একজনের জন্য তৃষিত। আরো আছে শিবসুন্দর, সুমিত-রুনা, বাপ্পা, কন্দর্প, মধুমিতা। ছেলে হারানো শোক বুকে চেপে রাখা ধীরাজ- উমা। এরা সকলেই সকলের সাথে একেক সম্পর্ক আবদ্ধ। কোন সম্পর্ক রক্তের, কোনটা দ্বায়িত্বের, আবার কোনটি ভালবাসার। কিন্তু ভেতরে সবাই একা, সবাই বিষন্ন। সবার ভেতরেই আত্মদন্দ্বের এক অভিন্ন গল্প। পাঠ প্রতিক্রিয়া : সময়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা পরিস্থিতিগুলো হয়ত বনর্না করা যায়। কিন্তু যে অনুভূতি একান্তই মনস্তাত্ত্বিক, তা কি কোন প্রকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়? সুচিত্রা ভট্টাচার্যের "কাছের মানুষ" শেষ করে মনে হলো, বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে। অদ্ভুত একটা চিনচিনে অনুভূতি হানা দিচ্ছে মনে। কি ভাবে করব এ ব্যাথার বনর্না? ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প এটি। আদিত্য-ইন্দ্রানীর সংসারে তাদের দুটি ছেলে মেয়ে। বাপ্পা আর তিতির। বাপ্পা উচ্চাভিলাষী। বাবা, মা পরিবার কারো প্রতিই তার টান নেই। তিতির ভালবাসা, আবেগে পরিপুর্ন একজন। এই সংসারের কাণ্ডারি ইন্দ্রাণী। স্বামী আদিত্যর প্রতি আপাত দৃষ্টি তে তার কোন টান নেই। বাপ্পার জাহাজে চাকরী হওয়ার পর ট্রেনিং এর জন্য দরকার পড়ে চল্লিশ হাজার টাকার। সেই টাকা যোগার করতে হিমশিম খায় ইন্দ্রানী। ডাক্তার শুভাষিস সেনগুপ্ত আর ইন্দ্রাণীর মধ্যকার সম্পর্ক তাদের দুজনের পরিবারের মধ্যে ওপেন সিক্রেটের মত। বন্ধুত্বের আড়ালে দুজনের মধ্যে রয়েছে তীব্র এক ভালবাসা। কিন্তু তাদের মধ্যে এমন গোপন কিছুও আছে, যা কেউ জানে না। যেই গোপন সত্যের তাড়নায় প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রনায় দ্গ্ধ হয় তারা। প্রতি মুহুর্তে মানুষ নিজের মধ্যে নিজেকে একাকিত্বে আবিষ্কার করে। কাছের মানুষ উপন্যাসের চরিত্র গুলোও তাদের থেকে আলাদা নয়। পড়ার সময় উপন্যাসের চরিত্র গুলো কখন যেন নিজের সাথে মিশে গেছে, তা টেরই পাইনি। শেষে তাদের পরিণতি অদ্ভুত কষ্টে নিমজ্জিত করেছে আমাকে। অনেক উপন্যাস পড়েই মনে হয়, এই অংশ টা বেশ নাটকীয়। কিন্তু কাছের মানুষের ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, যা বাস্তব তাই ঘটছে। দীর্ঘ সময়, বহু চরিত্রের স্বকীয়তা, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ প্রকাশে লেখক পুরোপুরি সার্থক। যারা পড়েননি, পড়ে দেখতে পারেন। ভাল লাগবে, নিশ্চিত।
Was this review helpful to you?
or
সুচিত্রা ভট্টাচার্য মূলত সাংসারিক বিষয়গুলো নিয়ে বেশি লিখেছেন। সাংসারিক বিষয়গুলোতে সময়কালের খুব গভীর প্রভাব না থাকলেও, কিছুটা প্রভাব থাকে। প্রভাব থাকাটাই স্বাভাবিক, সময়ের সাথে মূল্যবোধেরও তো পরিবর্তন হয়। 'কাছের মানুষ' নব্বইয়ের দশকের প্রথম চতুর্ভাগের পটভূমিকায় লেখা।
Was this review helpful to you?
or
জয়মোহনের তিন ছেলে _ আদিত্য, সুদীপ এবং কন্দর্প এবং মেয়ে জয়শ্রী। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ছেলে, দুই ছেলের বউ, তিন নাতি নাতনি নিয়ে ঢাকুরিয়ায় নিজেদের পুরনো বাড়িতে জয়মোহনের বসবাস। তার স্ত্রী শোভনা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। ছোট দুই ছেলের চেয়ে আদিত্যের প্রতি শোভনার দুর্বলতা ছিল বেশি, এর কারণ ছোটবেলায় আদিত্যের কঠিন অসুখ হয়েছিল। আদিত্য এবং ইন্দ্রাণীর দুই ছেলেমেয়ে - তিতির এবং বাপ্পা। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে তিতিরের বাবার প্রতি মমতা বেশি এবং ইন্দ্রাণী বেশি ভালোবাসেন ছেলে বাপ্পাকে। ইন্দ্রাণীর জীবন সংগ্রামের জীবন বলা যায়। স্কুলের চাকরি ছাড়াও তিনি আদিত্যের প্রেস দেখাশোনা করেন যে প্রেস নিয়ে আদিত্যের একসময় অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেই বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছে অনেকদিন। আদিত্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবসায় হাত দিয়েছেন, কিন্তু কোনোটাতেই সফল হতে পারেননি। এ নিয়ে তার স্ত্রী ইন্দ্রাণী এবং বাবা জয়মোহন তার প্রতি অসন্তুষ্ট। ডাক্তার শুভাশিস, ইন্দ্রাণীর বিয়ের আগে থেকে বন্ধু। তারা কি শুধুই বন্ধু ছিলেন? আর এখন কি শুধুই বন্ধু? বাপ্পাও ভাবে শুভাশিস সবসময় তাদের সাহায্য করেছে। তিতির, বাপ্পা, ইন্দ্রাণী, আদিত্য সকলের জন্যই তার সমান উদ্বেগ। কিন্তু কেন?? শুভাসিসের স্ত্রী ছন্দা এবং একমাত্র সন্তান টোটো। টোটো এবং তিতির দুজনই মাধ্যমিক দিয়েছে। রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় টোটো খুব ভালো করেছে, সন্ধ্যায় শুভাশিসের টোটো এবং ছন্দাকে নিয়ে বাহিরে খেতে যাওয়ার কথা। কিন্তু শুভাশিস কেন সেই প্ল্যান রেখে ছুটে গেলো তিতিরের রেজাল্ট জানতে? তিতির দেখতে সম্পূর্ণ ইন্দ্রাণীর মতোই হয়েছে৷ অথচ এই তিতিরকে কিনা তিনি ভ্রূণ অবস্থাতেই হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কেনো???! আদিত্য, সুদীপ, এবং কন্দর্প, তিন ভাইয়ের মধ্যে সুদীপকেই সফল বলা চলে। আদিত্যের কোনো পরিকল্পনাই টেকেনা, অন্যদিকে কন্দর্পের ঝোঁক অভিনয়ের দিকে। সুদীপ এবং কন্দর্প আলাদা আলাদাভাবে তাদের বাড়িটা ভেঙে ফ্ল্যাট বানানোর চিন্তা করে, আদিত্যকে বলে, কিন্তু আদিত্যের তাতে সম্মতি থাকেনা। জয়মোহনও কিছুতেই রাজি না বাড়ি ভাঙতে। সুদীপ বা কন্দর্প কেউই বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে ইন্দ্রাণীর সাথে আলোচনা করেনা, কিন্তু ইন্দ্রাণীই সেটা নিয়ে আগ্রহ দেখায় এবং জয়মোহনকেও বলে। জয়মোহন খুব বেশি ভালোবাসেন ইন্দ্রাণীকে। তার কথা কি ফেলতে পারেন? ইন্দ্রাণী কেন বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরিতে আগ্রহ দেখালেন?? বাপ্পা জাহাজে চাকরির সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু চাকরি পাকাপোক্ত হবার আগে যে ট্রেনিং তার জন্য প্রয়োজন ৪০ হাজার টাকা। টাকাটা সুদীপ বা শুভাশিস বা আদিত্যের বোনের জামাই শংকরের কাছ থেকে খুব সহজেই নিতে পারতেন। কিন্তু ইন্দ্রাণী তা নিবেননা। সেজন্যই শ্বশুর জয়মোহনের আবেগের বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট বানানোর কথা বলেন তিনিও। বাপ্পার কাছে কলকাতা ভালো লাগেনা। কলকাতায় কিভাবে মানুষ বসবাস করে সেটা সে চিন্তা করতে পারেনা। একবার তার মনে ক্ষণিকের জন্য খুনের চিন্তাও এসেছিল। কাকে খুন করবে সে? ডাক্তার শুভাসিসকে? নাকি আদিত্য রায়কে? এই কলকাতা ছেড়ে তার চলে যেতে ইচ্ছে করে বলেই সে জাহাজে চাকরি নিয়েছে। কিন্তু কমাস জাহাজে থেকেই তার খুব কলকাতার কথা মনে হয়। মায়ের জন্য মন কেমন করে। তিতিরকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে। এমনকি বাবা আদিত্যের কথাও যে তার মনে হয়! বন্ধু বিষ্ণপ্রিয়াকে চিঠি লিখে যদিও সে চিঠি আর পাঠায়না। ইন্দ্রাণীরা দুই ভাইবোন। ইন্দ্রাণী এবং তনুময়। তনুময় কি কারণে যেন ইন্দ্রাণীর উপরই রাগ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কি সেই কারণ? আর শুধু কি ইন্দ্রাণীর উপর রাগ করেই? নাকি আরো কোনো কারণ ছিল? তার বাবা মা উমা ধীরাজ তনুময়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই বুড়ো হয়ে গেলেন। তাদের দায়িত্ব নিয়েছে ইন্দ্রাণী। তনুময় কি ফিরবে? স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে টোটোকে নিয়ে শুভাশিস কলকাতায় থাকেন। তার বাবা মা থাকেন মাধবপুরে। শুভাশিস যখন খুব ছোট তখন এক দুর্ঘটনায় তার মা মনোরমা মানসিক ভারসাম্য হারান। কে তার কে হয় কিছুই তিনি বুঝতে পারেননা। অসুস্থ স্ত্রীকে পাশে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিলেন শুভাসিসের বাবা শিবসুন্দর, তিনিও ডাক্তার। সেখানে তাদের দেখাশোনা করে তুফান এবং তুফানের স্ত্রী অলকা। তুফানকে শিবসুন্দর ছোট থেকে বড় করেছেন ছেলের মতো আদর ভালোবাসা দিয়েই। তুফানও বড্ড ভালোবাসে শিবসুন্দরকে। আদিত্য, নেশা করা যার নেশা। স্ত্রী এবং মেয়েকে কথা দিয়েও সে নেশা করে বাড়ি ফেরে। না সে পেরেছে বাবা মায়ের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে, না স্ত্রীর যোগ্য স্বামী হতে পেরেছে, না পেরেছে সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে। তবুও মেয়ে তিতির তাকে অসম্ভব ভালোবাসে। এই ভালোবাসাও থাকবেতো!? মাধ্যমিকের পর তিতির এবং টোটো একই স্কুলে ভর্তি হয়, যদিও বিভাগ আলাদা৷ শুভাশিস, তিতিরের ডাক্তার আংকেল তিতিরকে খুব ভালোবাসেন, তিতিরও তাকে পছন্দ করে। সেই সুত্রে তিতির টোটোর সাথেও কথা বলতে চায়, কিন্তু টোটো কেন এড়িয়ে চলে? টোটোর মতে যার মায়ের কারণে তাদের পরিবারে অশান্তি, তাকেতো অপমানই করবে সে!! টোটো যে মা ছন্দাকে খুব বেশি ভালোবাসে! তবুও তিতিরের ম্লান মুখ দেখেও টোটোর খারাপও লাগে! একদিন গাড়িতে করে বাড়িতেও নিয়ে যায়। আবার পৌঁছে দিতে গিয়ে যখন দেখলো তিতিরদের বাড়ির সামনে তার বাবা শুভাসিসের গাড়ি, তখন তিতিরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে দিতে কি বললো! কন্দর্প, অভিনয় জগতে ভালোই নাম কুড়িয়েছে, অশোক মুস্তাফির কল্যাণে, আরেক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। আদিত্যদের বাড়িটাও অশোক মুস্তাফিই ভেঙে ফ্ল্যাট বানাচ্ছে। মধুমিতা, কন্দর্পের বন্ধুর বিধবা স্ত্রী। অনেক সময়ই কন্দর্প তার অনেক সাহায্য করেছে। তারা কি ভালোবাসে একে অপরকে? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া ইন্দ্রাণী, তিতির, আদিত্য, বাপ্পা, শুভাশিস, ছন্দা, টোটো, শিবসুন্দর, মনোরমা, তুফান, অলকা, সুদীপ, রুনা, এটম, কন্দর্প, মধুমিতা, উমা, ধীরাজ, তনুময় সবাই সবার কাছের৷ কিন্তু আসলেই কি তারা কাছের মানুষ? কখনো কখনো খুব কাছাকাছি পাশাপাশি অবস্থান করেও আমরা একে অপরের খুব দূরেই থেকে যাই৷। বিশাল পরিসরের উপন্যাস 'কাছের মানুষ'। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এমনভাবে গল্প বলে গেছেন যে আপনি বইয়ের ভেতর হারিয়ে যাবেন। ইন্দ্রাণী, তিতির সবাইকেই মনে হবে খুব কাছের মানুষ। আর হয়তো গল্পটা শুধু ইন্দ্রাণী, তিতির এর ই না, এমন গল্প হয়তো অনেকের। কাছের মানুষ কতোটা কাছের সেটাই দেখবেন এই উপন্যাসে। মানুষের এক জীবন কেটে যায় কাছের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাছের মানুষ কি কেউ আসলেই হয়? এক ঝাঁক চরিত্রের সমাহার ঘটেছে 'কাছের মানুষ' এ। আদিত্য, তিতির বা ইন্দ্রাণী নয়, আমার কাছে শুভাশিস চরিত্রটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। শেষটা পড়ে ধাক্কা খাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটবে। কিন্তু ওই যে কাছের মানুষেরাও বোঝেনা! বেশ কিছুদিন ধরে বইটা পড়বো পড়বো করেও ধরা হচ্ছিলনা সাইজে বড় বলে। দুএকবার ধরেও রেখে দিয়েছি। তারপর কদিনে ৩০০ পেইজের মতো পড়লাম টুকটাক ব্যস্ততার মধ্যে। ৩০০ পেইজের পর থেকে টানা পড়েছি বলা যায়। কেমন লেগেছে? সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। এক ছোট বোন সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ছোটগল্পের বই উপহার দিয়েছিল৷ ছোট গল্পগুলো মোটামুটি লেগেছে। এই বইয়ের অনেক প্রশংসা শুনেছিলাম। এই বইটাও আরেক ছোট বোন দিয়েছে। যা শুনেছিলাম ভুল শুনিনি। এক কথায় বলতে গেলে পড়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর অন্য বইগুলোও পড়তে হবে।
Was this review helpful to you?
or
বিশাল পরিসরের উপন্যাস 'কাছের মানুষ'। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এমনভাবে গল্প বলে গেছেন যে আপনি বইয়ের ভেতর হারিয়ে যাবেন। ইন্দ্রাণী, তিতির সবাইকেই মনে হবে খুব কাছের মানুষ। আর হয়তো গল্পটা শুধু ইন্দ্রাণী, তিতির এর ই না, এমন গল্প হয়তো অনেকের। কাছের মানুষ কতোটা কাছের সেটাই দেখবেন এই উপন্যাসে। মানুষের এক জীবন কেটে যায় কাছের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাছের মানুষ কি কেউ আসলেই হয়?
Was this review helpful to you?
or
কাছের মানুষ লেখকঃ সুচিত্রা ভট্টাচার্য প্রকাশনিঃআনন্দ পাবলিশার্স মূলঃ৯০০৳ ধরনঃ সামাজিক/বাস্তবতা ভিত্তিক উপন্যাস কাহিনিঃতিতির আর বাপ্পার মা ইন্দ্রাণী । পেশায় শিক্ষিকা এবং প্রেস আছে। স্বামী আদিত্য বেকার, মাদকাসক্ত। অসুস্থ শ্বশুর, এক অভিনেতা দেবর কন্দর্প, আরেক চাকুরীজীবী দেবর সুদীপ ও তার স্ত্রী রুনা, পুত্র অ্যাটম আর জয়া দুয়েক কাজের লোক। এই মিলেই ঢাকুরিয়া রোডের বাড়ী। সুদীপ আর আদিত্য আলাদা, এক বাড়িতে থেকেও। ইন্দ্রাণীর সাথে শুভাশিস ডাক্তারের একটা সম্পর্ক ছিল, সেটা নিয়ে ইন্দ্রাণীসর পরিবারে তেমন কিছু না হলেও শুভাশিসের পরিবারে চলে দ্বন্দ। প্রায় রোজ। শুভাশিস বোঝে, জানে, তবে কিসের টানে যেন বার বার ইন্দ্রানীর বাড়িতে ফিরে আসে। পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছে এই বাড়ির। তিতির কলেজে উঠল এবছর, সেই সাথে শুভাশিস ডাক্তার এর ছেলে টোটোও । সমবয়েসী এরা। ছোটবেলায় বেশ ভাল সম্পর্ক থাকলেও, কলেজে টোটো তিতির কে এড়িয়ে চলছে, সেটা কেন তিতির ঠিক বোঝে না। তিতিরের পোস্তদানা মন তিতির কে কাজে অকাজে সাবধান করে দেয়। এদিকে ইন্দ্রানী বেশ হিমসিম খাচ্ছে সংসার আর পারিপার্শিক পরিস্থিতি নিয়ে। একটা সময় বাড়ি ভাঙ্গা নিয়ে নানা মত-দ্বিমতের রাস্তা পেরিয়ে জয়মোহন তথা ইন্দ্রাণী র শ্বশুর বাড়ি ভাঙতে মত দিয়ে দেয়, সই করে পেপার এ। আর সই করার পর কলম টা ভেঙ্গে ফেলে,সেই সাথে সাথেই বোধহয় দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক তাও ছেদ করে। একে একে সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাড়ি ভাঙ্গার জন্য ভাঙ্গা পড়বে প্রেস, তাই আগে ভাগেই ইন্দ্রাণী সেটা কে বিক্রি করে দেয়। এদিকে মানসিক চাপে পড়েই হোক আর পরিশ্রমেই হোক ভেঙ্গে পড়তে থাকে ইন্দ্রাণীর শরীর। অন্যদিকে শুভাশিসের স্ত্রী ছন্দা গুরুতর অসুস্থ খুব দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। বেশ বড়লোক শুভাশিসের কাছে টাকা ব্যাপার না। কিন্তু ছন্দার সাথে হাজার হাজার মাইল দূরত্ব টাকার পাহাড় কমাতে পারেনি। ছন্দার অভিযোগ কেবল ওই ইন্দাণীকে নিয়েই। নিজের সংসারে সুখী কম না হলেও প্রাক্তন প্রেমিকা ইন্দ্রাণী কে দূরে রাখতে পারেনা শুভ। আর তিতির কেও না। তিতির আর ইন্দ্রাণী মূল চরিত্র, আর বাদ বাকি সব এসেছে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে। এসেছে, থেকেছে, চলেও গেছে। আশেপাশে সবাই আছে তবু এরা একা। একদিন তিতির জানতে পারে এক ভয়াবহ সত্য। যার কারনে বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয় সে। সাথে প্রেমিক সুকান্ত ছিল যদিও, কিন্তু পালানোর আসল কারন প্রেম ছিল না, ছিল একটা ভয়াবহ সত্য , যেই সত্য সব সম্পর্কের ভিত এক ধাক্কায় ফেলে দিতে সক্ষম। পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ অনেক আগে কাছের মানুষ নাটক তা হত, দেখা হয়নি,কিন্তু শুনেছিলাম কোন উপন্যাস থেকে নেয়া। এখন দেখার ইচ্ছা আছে। যায় হোক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের বেশ কিছু লেখা পড়েছি, খুব বেশি বাস্তব কে নিয়ে লেখেন উনি। বিশেষত মধ্যবিত্ত জীবন। লেখাগুলো একদম জীবন থেকে নিয়ে বইএর পাতায় তোলার মত। তিতির আর ইন্দ্রাণী এরায় মূল চরিত্র। এদের কে ঘিরেই সব গল্প, সব নাটকীয়তা। বইটা অনেকদিন আগে ধরেছিলাম, এদিক সেদিক করে করে পরা হয়নি, এখন শেষ করলাম। ভাল লেগেছে, খারাপ লাগা তেমন নেই। ইন্দ্রাণী আর শুভর সম্পর্ক্ বেশ অদ্ভুত লেগেছে। ওদের ভালোবাসাটা একটু আলাদায়। দুজনেয় বিবাহিত। আবার নিজ নিজ জীবনেও সুখী , কিন্তু কোথাও একটা আলগা সুতো। ভালো লাগবে পড়ে ফেলুন। তবে ৬৫০ পেজ এর উপন্যাস টানা পড়া যায় না আসলে, কাজ কাম থাকে মানুষের। আস্তে ধীরে হলেও পড়ে ফেলুন। রেটিং আর কি দেব জানিনা। এক এক জনের কাছে রেটিং এক এক রকম, ৫/৫ দিব আমি। কিছু কিছু লাইন এত সুন্দর! “বালিকা হওয়ার সাধ হলেই কি বালিকা হওয়া যায়”? “শরীর কি শুভ! খাঁচা ! কাঠামো! খোলস! প্রাণ কি শুধুই এক চিলতে বাতাস!” আর কত কত লাইন আছে ভাল লাগার!স রকমারিঃ https://www.rokomari.com/book/51097/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7
Was this review helpful to you?
or
সুচিত্রা ভট্টাচার্য 'কাছের মানুষ'দের উপাখ্যান লিখতে লিখতে কী লিখেছেন তা হয়তো নিজেও জানেন না। পুরোটা তো নয়ই! হৃদয়ের কাছাকাছি না হোক, রক্তের বাঁধনের অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ যারা, তারাও কি সবাই ঠিক কাছটায় থাকে? রাখা যায় সবসময়?বলা যায় কে আমার কতটা আপনার? মনে হয় না। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাছের মানুষরাই আদপে দূরের বহু দূরের জন। পরও। আপনও। এও এক অদ্ভুত সম্পর্কের খেলা। যে খেলা খেলছে তিতির, ইন্দ্রাণী, শুভাশিস, আদিত্যরা আর টোটো, বাপ্পারা। যিনি রেফারি, তিনি সবার অলক্ষে মনুষ্যসন্তানদের নিয়ে মেতেছেন খেলায়। সম্পর্কের নামে নানা বিচিত্র সব ঘটনা নিরন্তর ঘটছে সে খেলায়। দুইটি পরিবারের হাতগোণা কয়েকজন মানুষের জীবন নিয়েই এই ঢাউস উপন্যাস। মানবজীবনের সকল উপাদানের উপস্থিত হয়তো সবার জীবনেই থাকে। কিছু হাসি, কতক কান্না, পাওয়ার সুখ, হারাবার বেদনা - এ সবই আছে 'কাছের মানুষ'এ। আর আছে উপন্যাস শেষ করে উঠবার পর এক অনির্বচনীয় শূন্যতা। কয়েকটি দীর্ঘশ্বাস। আর হৃদয় আর্দ্র হয়ে যাওয়ার গরল অনুভূতি ।