User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মন ১৯১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের নিকটবর্তী তিতাসপাড়ের গোর্কণঘাট গ্রামের এক মালো পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। দারিদ্রের সাথে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে। 'তিতাস একটি নদীর নাম ছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অচিন্ত্য বিশ্বাসের সম্পাদনায় রাজনৈতিক উপন্যাস "সাদা হাওয়া" ১৯৯৬ সালে এবং রাঙামাটি ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়। তিতাস একটি নদীর নাম অদ্বৈত মল্লবর্মণের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি আর বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণোজ্জ্বল উপন্যাস। উপন্যাসটি ইতোমধ্যে ইংরেজি, ফারসি, উড়িয়া ইত্যাদি ভাষায় অণূদিত হয়েছে। শ্রমজীবী মালোদের শ্বাশত জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসে। অনেক সুধীজনের মতে "তিতাস একটি নদীর নাম সমগ্র বিশ্বের নদীমাতৃক জেলে জীবনোপাখ্যানের মহাকাব্য। উপন্যাসের কাহিনীকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রস্রষ্টা ঋত্বিক কুমার ঘটক ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ উপন্যাসের প্রধান দুটি প্রধান চরিত্র হলো- একটি বাসন্তি, অপরটি তিতাস নদী। বাসন্তি বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদি চরিত্র এবং তিতাস নদী জেলে জীবনের উৎস ও প্রতীক। লেখকের ভাষায় তিতাস একটি নদীর নাম। কুলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণ ভরা উচ্ছাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়, রাতের চাঁদ ও তারারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াতে বসে, কিন্তু পারে না। তিতাস নদীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এ উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে কিশোর, সুবল, তিলক চাঁদ বাসন্তী ও অনন্তর মা প্রধান। বাসন্তী এ উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রগুলোর বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেছে। উপন্যাসটি ৪টি অংশে বিভক্ত এবং প্রত্যেকটি অংশে ২টি করে উপ-অংশ রয়েছে। অর্থাৎ মোট ৮টি অংশে উপন্যাসটি বিস্তৃত। অংশগুলো হলো- ১। তিতাস একটি নদীর নামঃ এ পর্বে তিতাস নদীর উৎপত্তি ও তার বর্ননা দেয়া হয়েছে এবং মালোদের আর্থিক ও শারিরীক অবস্থার দৈন্য ভাবে বর্নিত হয়েছে। ২। প্রবাস খণ্ডঃ এ পর্বে কিশোর ও বাসন্তির বিয়ে। ডাকাত কর্তৃক বাসন্তী হরণ এবং কিশোরের পাগল হওয়ার বর্ননা দেওয়া হয়েছে। ৩। নয়া বসতঃ এ পর্বে চার বছর পরের কাহিনী বর্নিত। কিশোরের বউ হয় অনন্তরের মা। সে সুবলদের গ্রামে ফিরে আসে এবং সেখানে বসবাস শুরু করে। ৪। জন্ম মৃত্যু বিবাহঃ এ পর্বে কিশোর ও অনন্তের মায়ের মারা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৫। রামধনুঃ বাসন্তীর বাড়ি থেকে অনন্তকে তাড়ানো এবং বনমালী কতৃর্ক অনন্ত কে নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার বর্ননা দেয়া হয়েছে এ পর্বে। ৬। রাঙা নাওঃ এ পর্বে আছে নৌকা বাইচের বিবরন এবং সুবলার বউকে মারধরের কথা। ৭। দুরঙা প্রজাপতিঃ এ পর্বে মালোপাড়ায় যাত্রাদলের রমরমাতে মালোরা দুদলে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা। ৮। ভাসমানঃ এ পর্বে নিজস্ব সংস্কৃতি লোপ, মালোদের বিলাসিতা এবং তিতাসের চর দখলের জন্য মারামারি করার কথা, বাসন্তীর বাবা-মা, মোহনের বাবা মারা যাওয়া, বনমালীর মারা যাওয়া এবং সুবলার বউ এর মারা যাওয়ার বর্ননা আছে। তিতাসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে গ্রাম বাংলার মালোদের জীবন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের কাহিনী। এ উপন্যাসে মালোপাড়ার বর্ননা, মসজিদ ও মক্তবের বিবরন তিতাসের সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে গেছে। বিজেশ্বর গ্রাম, বিরামপুর, সাদকপুর,আনন্দ বাজার, জগৎ বাজার, কালীসীমার ময়দান, ও গরীবুল্লার বটগাছের উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে গগণ মালোর অবস্থার বিবরণে মালোদের জীবনচিত্র ধরা পড়ে। ব্যাক্তিগত মতামতঃ বইটা অনেক আগে একবার পড়া শুরু করলেও অর্ধেকের বেশী পড়ে কোনকারনে তখন সম্পূর্ন পড়া হয়ে ওঠে নি। এবার বইটা পুরোপুরি শেষ করেছি। শেষ করে একটাই অনুভূতি বইটা নদীমাতৃক বংলাদেশ তথা সমগ্র জেলে জীবনোপাখ্যানের মহাকাব্য। এ উপন্যাসে প্রত্যেকটি চরিত্র নিঃস্ব জীবনের প্রবাহমান দ্বন্ধে বিকশিত হয়েছে। এ উপন্যাসে জেলে পল্লীর খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিত্রিত হয়েছে। সাবলীল বর্ননায় এর চরিত্রগুলো বাস্তবতাকে হার মানায়। তিতাস একটি নদীর নাম যেন বাংলাদেশের একান্ত ঘরের মানুষ ও চেনাজানা মানুষের জীবন্ত প্রতিধ্বনী।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৫ বইয়ের নামঃ তিতাস একটি নদীর নাম লেখকঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণ প্রকাশনীঃ দি স্কাই পাবলিশার্স পৃষ্ঠাঃ ২০৩ মূল্যঃ ২৫০ কিছু কিছু উপন্যাস যেনো লেখকের হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত । পাঠককে কেবল অভিভূত করে আর কল্পনার জগৎকে করে প্রসারিত । তেমনি একটি উপন্যাস ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মনের রচিত 'তিতাস একটি নদীর নাম' । উপন্যাসটিতে বিধৃত হয়েছে বাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মালোদের জীবনচরিত । তিতাস নদীর তীরবর্তী মালোগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের অপূর্ব আখ্যান । চিরাচরিত বাংলার প্রেম-ভালোবাসা, দ্রোহ-বিদ্রোহ , আশা-নিরাশাসহ মালো জনগোষ্ঠীর একান্ত নিজস্ব সংস্কৃতি ও জীবনবোধ স্থান পেয়েছে এতে । কিশোর, সুবল, বাসন্তি ও অনন্ত প্রমুখ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র । কিশোরের বাবা রামকেশব নদীতে জীবনভর সংগ্রাম করে ক্লান্ত । জীবনের পড়ন্ত বেলায় কিশোরই তার একমাত্র সম্বল । ওদিকে বাসন্তির মা-বাবা কিশোরের সাথে বাসন্তির মালা বদলের চিন্তা করছেন । এরমধ্যে একদিন রামকেশব কিশোর ও তার অনাথ বন্ধু সুবলকে মাছ ধরার জন্য প্রবীণ তিলককে সঙ্গী করে বহুদূরের নদীতে পাঠিয়ে দিলেন । তারা বহুদূরের অন্য এক মালোপাড়ায় প্রবাসী হলেন । সেখানে দোল উৎসবে এক তরুণীর সাথে কিশোরের প্রণয় হলো । তারপর তরুণীর মা কিশোরের সাথে মেয়ের মালাবদল করিয়ে তাকে বলল , এবার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে বিয়ে করো । কিশোররা বাড়িতে রওনা হলো । পথে পথে কত বাধা কত বিপত্তি ! রাজপুত্র আর রাজকন্যাকে যেন দৈত্যদানব গ্রাস করল । নববধূ অপহৃত হলো পথে । তারপর আরো বিচিত্র আরো রোমাঞ্চকর কাহিনী । সুবল , বাসন্তি ও অনন্ত কাহানীর স্রোতে তিতাসের মতো স্রোতস্বনী রূপ ধারণ করল । পরবর্তীতে ঘাটে ঘাটে সাক্ষাৎ ঘটল কালাবরণের বৌ , মঙ্লা, বনমালী আকাশতারা নয়নতারা ও কাদিরসহ আরো নানাজনের । নিছক কল্পকাহিনী নয়, নিভৃত এক জনপদের প্রামাণ্য জীবনালেখ্য রচনা করেছেন কথাকার অদ্বৈত মল্লবর্মণ । যে জনপদের বাসিন্দা স্বয়ং তিনি। উপন্যাসের পরতে পরতে জীবনবোধের অনুপম পংক্তিমালা মুক্তোর মতো ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি । পাঠক তার কল্পনার স্বপ্নজগৎকে ছাড়িয়ে আরো উর্ধ্বে চলে যাবেন নিশ্চিত। কবিতার দুর্বোধ্য উপমা রূপক থেকে বিতৃষ্ণ যারা, তারা উপন্যাসের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া সহজ সরস উপমায় হবেন পরিতৃপ্ত । উপন্যাসের প্রতিটি প্যারা যেন অদ্বৈত মল্লবর্মণের আন্তরিক সহৃদয়তা থেকে বেরিয়ে এসেছে । এমন গদ্যশৈলীর তুলনা হয় না । বাংলার প্রান্তজন আজো সর্বত্র অবহেলিত । সমাজে তাদের মর্যাদা ঝুবই ক্ষীণ । তারা বাংলাসাহিত্যেও নিদারুণ অবহেলিত । যদিও আজকে তাদের নিয়ে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে , তবে প্রাথমিক যারা তাদের নিয়ে কলম হাতে নিয়েছেন , অদ্বৈত মল্লবর্মণ তাদের একজন । তিনি কথিত সভ্য সমাজে গিয়েও শেকড় ভুলে যান নি । 'তিতাস একটি নদীর নাম' আজ প্রথমশ্রেণীর বাংলা-সাহিত্যের মর্যাদায় ভূষিত উপন্যাসগুলোর একটি । লিখেছেনঃ কাওছার মজুমদার