User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই - পদ্মানদীর মাঝি লেখক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনী - দি স্কাই পাবলিশার্স মূল্য - ১২৫ (মুদ্রিত) রেটিং - ৫/৫ ....... 'আমারে নিবা মাঝি লগে?' বাংলা সাহিত্যে যদি কিছু উক্তি আলাদা করে সাজিয়ে রাখা যায় তবে এই উক্তি অবশ্যই প্রথমদিকে থাকবে। কপিলার বলা এই এক কথায় যেমন প্রকাশ পেয়েছে তার গোপন ভালবাসা, পূর্ণতা পেয়েছে দুজন মানুষের একে অন্যের প্রতি নিষিদ্ধ আকর্ষণ। নিশ্চিত হয়েছে একজন আসামীর পলাতক জীবনের সূচনার... *** প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নামের একজন মানুষ। জন্ম ১৯০৮ সালে বিহারের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে। প্রেসিডেন্সি কলেজের বিজ্ঞানের ছাত্র হঠাৎ লিখে ফেলে একটি গল্প। নাম 'অতসী মামী।' প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিলো সাহিত্য নিয়ে। হয়ে উঠলো বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী। 'পদ্মানন্দীর মাঝি' 'দিবারাত্রির কাব্য', ' পুতুলনাচের ইতিকথা', 'চতুষ্কোন'এর মত ১৯ টি উপন্যাস কিংবা 'অতসী মামী', 'প্রাগৈতিহাসিক', ফেরিওয়ালা'র মত গল্পগ্রন্থ তাকে এনে দিয়েছে বাংলা সাহিত্যের অনন্য এক সম্মান। বামপন্থি বা বস্তুবাদী এই লেখকের সব লেখাতেই ছিল আদর্শ ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির সার্থক বহিঃপ্রকাশ। ফ্রয়েডীয় তত্ত্বে বিশ্বাসী মানিকের রচনার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল যৌন ক্ষুধার বিকৃতি। তবে ড. কাজী দীন মুহম্মদের কথায় বলতে গেলে, 'যৌন ক্ষুধার বিকৃতিও যে শিল্পকর্মে স্থান লাভের উপযোগী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা তার সাক্ষর।' ১৯৫৬ সালে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই লেখক। ***** ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত পদ্মানদীর মাঝি লেখকের সবচেয়ে বেশি পঠিত ও জনপ্রিয় উপন্যাস। ১৯৪৮ সালে অনুদিত হয় ইংরেজি ভাষায়। যার নাম ছিল 'The Boatman of Padma.' পদ্মানদীর মাঝি নিয়ে প্রথম যে প্রশ্ন আসে তা হলো এটি কি সামাজিক উপন্যাস? নাকি আঞ্চলিক? সন্দেহাতীতভাবেই এটি আঞ্চলিক উপন্যাস। যা প্রকাশ করেছে পদ্মাতীরের কেতুপুর গ্রাম আর তার পাশের গ্রাম নিয়ে। ঘটনাপ্রসঙ্গে চলে আসে আরো কিছু গ্রাম। আর ময়নাদ্বীপের কথা... উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র চার সন্তানের জনক পদ্মার মাঝি কুবের। যাকে উপন্যাসের ভাষায় বলা চলে 'গরীবের মধ্যে সে গরীব। ছোটলোকের মধ্যে আরো ছোটলোক।' অভাবের তাড়নায় সে চুরি করে, চুপিসারে মাছ বিক্রি করে অন্যের কাছে। তবে বড় চুরির বেলায় তার বিবেক গর্জে উঠে। যার কারণেই হয়ত সে প্রথম যাত্রাতেই হোসেন মিয়ার নৌকার সর্দার বনে যায়। কুবেরের আছে প্রেমিকপ্রবর মন। তার ঘরে সুন্দরি স্ত্রী মালা। যার পা বাঁকানো, তা না হলে সে হয়ত বাবুদের ঘরেই যেতো। মালাকে সে আঁকড়ে রাখতে চায়। কিন্তু নিজের অতৃপ্ত মন পড়ে থাকে শ্যালিকা কপিলার কাছে। কপিলার সংসার আছে। স্বামী শ্যামাদাসের কাছ থেকেও বিতাড়িত হয়ে যার মন পড়ে থাকে স্বামীর কাছে। তবু মনের গহীন কোণে হয়ত সে দূর্বল কুবেরের প্রতি। ভাই নিতে এলে ফিরতে চায় না বাবার বাড়ি, আশ্বিনের ঝড়ে কুবের যখন দিশা পায়নি, কপিলা ছিল তার পাশে। তবু কোন একসময় সে চলে যায় শ্যামাদাসের বাড়ি। কুবেরও ছুটে যায়। কিন্তু নিরাশ হতে হয় শ্যামাদাসের বিত্তের কাছে। চুপিচুপি আফিমের ব্যবসা করা হোসেন মিয়ার নৌকায় মাঝির কাজটা সে ছাড়তে পারেনা। ছাড়বে কি করে? মানুষটা যে জাদু জানে। বড়ই রহস্যময় লোক এই হোসেন মিয়া। ছিন্ন লুঙ্গি নিয়ে কেতুপুর জেলেপাড়ায় এসেছিল। কিন্তু এখন সে বড় ব্যবসায়ী। নিত্যনতুন উপায়ে চলে তার ব্যবসা। আর আছে একটা দ্বীপ। ময়নাদ্বীপ। যেখানে একসাথে বাস করে হিন্দু মুসলিম সবাই। যেখানে মসজিদ মন্দির নিয়ে বিভেদ নেই। জমি, বাড়ি, খাদ্য বস্ত্র সবই হোসেন দেয়। সে শুধু চায় জমিন আবাদি হোক, লোকে ভরে উঠুক তার দ্বীপ। সেজন্য সে ভাবেনা ন্যায় অন্যায়। মালুর চরের খুনী রসুল ঠাঁয় পায় তার দ্বীপে। রসুলের বোনের সাথে বিয়ে হয় সদ্য বিপত্নীক আমিনুদ্দির। তারপর... একদিন কুবেরকেও যেতে হয় ময়নাদ্বীপ। যার মাথার উপর চুরির অপবাদ। একাকী সময়ে সেও উঠে হোসেনের নৌকায়। পিছনে থাকে তার ঘর সংসার, স্ত্রী, পুত্র। তার জেলে জীবনটা। কেবল থেকে যেতে চায় কপিলা। শেষ যাত্রার আগে যে প্রশ্ন করে 'আমারে নিবা মাঝি লগে?' ****** এই উপন্যাসের সাথে প্রথম পরিচয় কৈশোরে। একটা সময় ছিল পাঠ্য। তবে সেসময় বোঝা হয়নি এই উপন্যাসের মাহাত্ম্য। তখন কুবের আর কপিলা ছিল আমাদের মত সবার আকর্ষণ। কিন্তু জেলেপাড়া, পদ্মা, মহাজনী প্রথা সবমিলিয়ে 'পদ্মানদীর মাঝি' এক অনবদ্য সৃষ্টি। এখানে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে দারিদ্র্যতার সীমানা, প্রশ্ন উঠেছে ঈশ্বরের অবস্থান নিয়ে। সমাজে নারী আর মাতৃত্বের জায়গা কত সংকীর্ণ ছিল সেই যুগে, কিংবা মেলা আর দোলের উৎসব কতখানি আনন্দের ছিল... পদ্মানদীর মাঝি তুলে ধরেছে জেলে জীবনের সবকিছু। আর তাই হয়তো সমকালীন সময়ের সেরা লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা কীর্তির নামটা 'পদ্মানদীর মাঝি।'