User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মানিক বন্দোপাধ্যায়।নামটাই অনেকের মনে শিহরণ তুলতে যথেষ্ট।আমার মনেও এই নামটা ঢেউয়ের তরঙ্গ তুলতে পারে।তার লেখা যখনই পড়ি মনে হয় গায়ের কাদামাটির সঙ্গে মিশে আছি।তখন সমাজের উচু স্তর নিচু স্তরের পার্থক্যটা ক্রমশই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।পার্থক্যটা অন্ধকার ভেদ করে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে।কিন্তু অবাক করার বিষয় সমাজের উচু স্তর নিচু স্তরে থাকলেও আনন্দ সুখের কোন স্তর থাকে না।সকলের আনন্দের অনুভূতিটা এক রকমের।আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন চাইলেই সেখান থেকে সবটুকু সুখ নিংড়ে নিতে পারি।লেখক তার "প্রাগৈতিহাসিক " গল্পে এটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার মতে লেখক একইসাথে তার দুটো ইজমেরই(মার্ক্স এবং ফ্রয়েড) সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।তার প্রমাণ এই উদ্ধৃতিটির মাধ্যমেই পাওয়া যায়,"নদীর ধারে খ্যাপার মতো ঘুরিতে ঘুরিতে তাহার মনে হয় পৃথিবীর যত খাদ্য ও নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না।" কাহিনী সংক্ষেপঃ ভিখু এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ছিল।এক রাতে ডাকাতি করতে গিয়ে দলের সবাই ধরা পড়ে শুধু সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।কিন্তু তার ডানহাতে একটা কোপ লাগে। সে সুস্থ হলেও তার হাতের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।এক হাত নিয়ে তার পক্ষে আর ডাকাতি সম্ভব নয় তাই সে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেয়।একটা সময় সে নারী সঙ্গের অভাব বোধ করে।তার পাশের ভিখারিনী পাঁচীকে তার ভাল লাগে।কিন্তু পাঁচীকে পেতে হলে পাঁচীর বর্তমান সঙ্গী বসিরকে হটাতে হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।এক রাতে সে বসিরকে খুন করে পাঁচীকে নিয়ে পালিয়ে যায়।শুরু করে নতুন জীবন। কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিখুর চারিত্রিক বিশ্লেষণঃ ভিখুর প্রথম পেশা ছিল ডাকাতি।সে এতই দুর্ধর্ষ ছিল যে দীর্ঘ ডাকাতি জীবনে সাধারণ জনগনের কাছে কোনোদিনই ধরা পরে নি।পুলিশ তাকে সর্বসাকুল্যে মাত্র একবার পাকড়াও করতে পেরেছিল।সাত বছরের জেল হয়েছিল কিন্তু দু-বছর খাটতে হয়েছিল।দু-বছর পরে সে জেল থেকে পালিয়েছে।ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করলেও এটা তার ধাতে ছিল না মনও চাইত না।যার প্রমাণ পাওয়া যায় এই উক্তির মাধ্যমে,"অবরূদ্ধ শক্তির উত্তেজনায় ক্রমে ক্রমে তাহার মেজাজ উদ্ধত ও অসহিষ্ণু হইয়া পড়িল।" "সংসারে অসংখ্য ভীরু ও দুর্বল নরনারীর মধ্যে এতবড় বুকের পাটা আর এমন একটা জোরালো শরীর নিয়ে শুধু একটা হাতের অভাবে সে যে আজ মরিয়া আছে!এমন কপালও মানুষের হয়?" ডাকাতি জীবনে ভিখু তার মনের অনৈতিক খায়েসগুলো একপ্রকার সব গায়ের জোরেই করেছে।ভিক্ষুক জীবনেও তার সেই খায়েসের কোনো কমতি নেই।এটা স্পষ্ট হয় এই বর্ননার ভিতর দিয়েঃ"নদীর ঘাটে মেয়েরা স্নান করিতে নামিলে ভিক্ষা চাহিবার ছলে জলের ধারে গিয়া দাঁড়ায়।মেয়েরা ভয় পাইলে সে খুশি হয় এবং সরিয়া যাইতে বলিলে নড়ে না,দাত বাহির করিয়া সে দুর্বিনীত হাসি হাসে।" "নদীর ধারে খ্যাপার মত ঘুরিতে ঘুরিতে তাহার মনে হয় পৃথিবীর যত খাদ্য ও নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না।" সর্বোপরি বসিরকে খুন করে পাঁচীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তার খায়েসের পূর্ণতা পায়। গল্পের দৃষ্টিপাতঃ সমাজের নিচু স্তরের মানুষের ভাব বিনিময়ের যে ভিন্ন একটি ভাষা রয়েছে লেখক সেদিকে দৃষ্টিপাত করেছেন এই গল্পে।তিনি ভিখু ও পাঁচীর মধ্যেকার আলাপের একটা ক্ষণ এভাবে বর্ননা করেছেন,"ওদের স্তরে না গেলে সে আলাপকে কেহ আলাপ বলিয়া চিনিতে পারিবে না।মনে হইবে পরস্পরকে তাহারা যেন গাল দিতেছে।"বসির ও পাঁচীর গল্পকেও এভাবেই বর্ননা করেছেন,"বাঁশের খাটে পাশাপাশি শুইয়া তাহাদের কাটা কাটা কদর্য ভাষায় গল্প করিতে করিতে তাহারা ঘুমাইয়া পড়ে।" আমরা যাদের মানুষ বলে স্বীকার করতে চাই না তাদেরও মানবীয় গুণাবলি রয়েছে।তারাও পরস্পরকে ভালবাসতে জানে।পাঁচীর পায়ে হাটু থেকে নিচ পর্যন্ত থকথকে ঘা।ঘা থেকে বের হয় প্রতিনিয়ত পচা দুর্গন্ধ। তবুও বসির পাঁচীকে ছেড়ে যায় না আবার ভিখুও তাকে চায়।লেখকের বর্ননায়,"তাহাদের নীড়,তাহাদের শয্যা ও তাহাদের দেহ হইতে একটা ভাপসা পচা দুর্গন্ধ উঠিয়া খড়ের চালের ফুটা দিয়া বাহিরের বাতাসে মিশিতে থাকে।ঘুমের ঘোরে বসির নাক ডাকায়।পাঁচী বিড়বিড় করিয়া থাকে।" এভাবেই লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায় তার "প্রাগৈতিহাসিক" গল্পে সমাজের উপেক্ষিত একটা গোষ্ঠীর যাদের কথা আমরা ভাববার সময় পাই না,প্রয়োজন বোধ করি না তাদের জীবনধারনের গল্প সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মার্কসবাদী সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।নির্দোষ সন্ধানে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন জীবনসত্য।এই জীবনসত্য তার দক্ষতায় হয়ে উটেছে শিল্পসত্য।এই জীবনসত্য এর শিল্পসত্যের রুপান্তর হয়েছে তার প্রাগৈতিহাসিক গল্পগ্রন্থে... প্রাগৈতিহাসিক গল্পগ্রন্থে নয়টি ছোট গল্পের সংকলন প্রাগৈতিহাসিক,চোর,যাত্রা,প্রকৃতি ,ফাসি,ভূমিকম্প,অন্ধ,চাকরি ,মাথার রহস্য। প্রাগৈতিহাসিক গল্পে দেখা যায় দুর্ধর্ষ ডাকাত ভিখু ডাকাতি করতে গিয়ে আহত হয়।বিনা চিকিৎসায় কেবল প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে সে ম্রতে ম্রতে বেচে ওঠে কিন্তু তার ডান হাতটি অকেজো হয়ে যায়।এরপর শহরে এসে ভিক্ষা করা সুরু করে।কিন্তু তার স্বভাবের পরিবর্তন হয়না।পথিককে গালি দেয়।দোকানিকে মারতে যায়।নারীদের বিরক্ত করে।সেই সাথে তার অতীতের উদ্দাম জীবনের জন্যে হাহাকার করে।এতিমধ্যে তার পরিচয় হয় ভিখারীনি পাচী এর সাথে।কিন্তু পাচী আরেক ভিক্ষুক বশির এর স্ত্রি।পাচী বশিরের স্ত্রী এটা মানতে পারেনা ভিখু।প্রস্তাব দেয় পাচীকে কিন্ত প্রত্যাখ্যাত হ্য।এরপর একরাতে বশিরকে হত্যা করে ভিখু।এবং পাচীকে নিয়ে যাত্রা করে সদরে।...প্রাগৈতিহাসিক হচ্ছে ইতিহাসের পূর্বের কথা।মানুসের সংগ্রাম,অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা ও দেহজাত আখাঙ্খার ইতিহাস।গল্পে ভিখু চরিত্রের মাধ্যমে লেখক সেই সত্যকে তুলে ধরেছেন চোর গল্পটিতে মধু চোর এক বরশার রাতে চুরি করতে যায় রাখালের বারিতে।কিন্তু চুরি করে ফিরে আসার পর দেখে তার স্ত্রী কাদু ও চুরি হয়ে গেছে।কাদুকে চুরি করেছে রাখালের ছেলে পান্না।......তার তখন মনে হয় এই জগত সংসারের সবাই চোর এর পরের গল্প যাত্রা।এখানে দেখা যায় দরিদ্র পিতার কন্যা ইন্দু এর বিবাহদিন এর বিভিন্ন ঘটনা এবং তার শশুরবাড়ীতে যাত্রা।এই গল্পটি মুলত যোতুকপ্রথার নিশঠুরতা,লোভী বরপক্ষের নির্মমতা,নারীর প্রতি অবহেলার বেদনাদায়ক চিত্র। প্রকৃতি গল্পে লেখক শ্রেনী দ্বন্দ্বময় মানসিক সংকটকে স্পষ্ট করেছেন অম্রত চরিত্রের মাধ্যমে। পরের গল্প ফাসি।এ গল্পে ফাসিপ্রাপ্ত আসামী গণপতির স্ত্রীর মানসিক সংকটকে তুলে ধরা হয়েছে ভূমিকম্প একটি মনস্তাত্মিক গল্প যেখানে গল্পের নায়ক প্রসন্ন এক ভূমিকম্পের রাতে শারিরীকভাবে আহত হয়না কিন্তু মানসিক ভাবে আহত হয় অন্ধ গল্পে বাহ্যদৃষ্টির চাইতে লেখক অনেক গুরুত্তপুন বলেছেন অন্তরদৃষ্টি কে। রূঢ় কঠিন বাস্তবতা ও জীবন সংগ্রামের অপূর্ব চিত্র চাকরি গল্পটি সর্বশেষ গল্প মাথার রহস্য।মানব মস্তিস্কের অমীমাংসিত এক রহস্য নিয়ে রচিত হয়েছে গল্পটি। সমাজের সর্বহারা শ্রেণীর নরনারী নিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার লেখাকে ফুটিয়ে তুলেছেন অপূর্ব শৈল্পিক সুষমায় ।যারা ভিক্ষা করে,চুরি বা ডাকাতি করে বেচে থাকে তাদের কথা বলেছেন তার লেখায়