User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গর্ভধারিনী..... এই উপন্যাস নিয়ে কথা বলতে বসলে শেষ হবে।। সম্প্রতি খুব পছন্দের একটা উপন্যাস। বলতে গেলে এই গল্প স্বাদ দিবে শ্রেণী বিভাজনের। আপার ক্লাস, মিডিল ক্লাস এবং লোয়ার ক্লাস। এই তিন ক্লাসের কলেজে পড়ুয়া মেয়ে ছেলে যখন একত্রিত হয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ হয় তখন তাদের মধ্যে এই শ্রেণী বিন্যাসের যে ব্যপারটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ভাবনা আসে। যা দেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ডর সাথে জড়িত। তাই তারা দেশের, দেশের মানুষের এবং প্রশাসনের ঘুম ভাঙ্গানোর কিছু চেষ্টা করে। তারা জানতো একদিনে পুরো জাতিকে জাগানো সম্ভব নয়। কিন্তু তারা তাদের মনে নাড়া দেয়ার চেষ্টা করেছিলো মাত্র। যা কিছুটা সফলও হয়েছিলো। কিন্তু এসবের মাঝে তারা জানতো যে এসব করে তারা ঠিকে থাকতে পারবে না। তাই তারা শুরুতেই পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি করে রেখেছিলো। তাদের এই যে পালিয়ে যাওয়ার যাত্রাটা অচেনা অজানা উদ্দেশ্যে এটি গল্পকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলে। সাথে তাদের বন্ধুত্বের সর্ম্পকে কিছুটা ভালো লাগার স্বাদও পাওয়া যায়। খুঁজে পাওয়া যায় এক অসভ্য জাতি। যাদের মধ্যে কোনো আধুনিকতা বা সভ্যতার ছোঁয়াটুকু নেই। তবে আছে একতাবদ্ধ যা আজকালের শহুরের জীবনের মধ্যে নেই। খুব চমৎকার একটি উপন্যাস। সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস নিয়ে পড়তে বসলে কোনটা ছেড়ে কোনটা কে সেরা বলবো তা বুঝা বড় দায় হয়ে যায়।
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া অন্যতম সেরা উপন্যাস। কল্যন-জয়ীতা আর সুদিপদের এই অবর্ণনীয় সুন্দর উপন্যাস আমাকে সান্দাকফু যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছে।প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে অদ্ভুত একটা আকর্ষণ। সমরেশ মজুমদারের বই যারা নিয়মিত পড়েন বা পড়েননা সবাইকেই সাজেষ্ট করব পড়ে দেখতে এ বইটি।
Was this review helpful to you?
or
excellent
Was this review helpful to you?
or
দেশের ভালোমন্দ, রাজনৈতিক দলগুলোর উপর ন্যস্ত।সমাজের মানুষগুলো সবাই যেন কুয়োর ব্যাঙের মত মুখ লুকিয়ে চুপচাপ জীবনটাকে পার করে দিচ্ছে।রাজনৈতিক দলগুলো দেশ পরিচালনার নামে সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে এক কঠিনতম অবস্থায়। আর সবাই সেটা এতোদিন চুপ করে সহ্য করে সয়ে আসছে।কিন্তু সমাজের রাজনৈতিক দলগুলোর এই কারচুপি, কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারেনি চারজন তরুণ-তরুণী। এক দুঃসাহসিক অভিনব সামাজিক মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে সমাজকে, সমাজের ঘুমন্ত মানুষগুলোর বিবেক এর দরজায় কড়া নেড়ে দিতে চারজন যুবক-যুবতী এক হয়ে কাজ করে।চারজনই ছিলো শিক্ষিত,ভদ্র,সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে।কলেজে চার বন্ধু একসাথে পড়াশুনা করে।চার বন্ধুর চিন্তাধারা, চেতনা,আচার-আচরণ,রুচি,মন মানুষিকতা সবই আলাদা আলাদা।কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব, শিক্ষা,মনোভাব দেশের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা সবই একই রকম হওয়াতে তারা এক হয়ে সমাজের এই কালো মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শক্তিধর দলগুলোর পাজড় ভেঙ্গে দেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে এক হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে তৎপর, অনড়,একনিষ্ঠ, ঐক্যবদ্ধ ছিলো।আর সেই জোড়েই তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়। সমাজের,রাজনৈতিক দলগুলোর এই শাসন শোষণ ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ঐ চারজন যুবক-যুবতী। পরপর একেকটা কর্মকাণ্ড হয়ে যাওয়ার পর তারা নিজেকে আত্মগোপন করতে চলে যায় হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ি গ্রামে,যেখানে সভ্যতার ক্রমবিকাশ, আধুনিকতার আঁচড় এখনও কাটেনি।আর সেখানেই শুরু হয় তাদের নতুন আরেক জীবন।তারা সেখানের অশিক্ষিত, সহজ-সরল মানুষগুলোকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে।সেই অজপাড়াগায়ের মানুষগুলো একটু সুখ শান্তিতে বেঁচে থাকার,তাদের গ্রামকে বদলে দেয়ার,প্রত্যেকটা মানুষকে ভাগ্যের সাথে লড়াই করে বাঁচার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে তোলে। তাদের জীবন যাত্রার মান বদলে দেওয়ার তাগিদে চারজন বন্ধু সক্রিয়ভাবে কাজ করে।কিন্তু তাদের দলের একমাত্র নারী জয়িতা সেখানে তার বিচিত্র আত্মত্যাগ ও সাধনা এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত রাখে।জয়ীতা তার সহপাঠী বন্ধুদের চমকে দিয়ে নিজেকে এক নতুন পরিচয়ে,নতুন ভাবে উপস্থাপন করে।আর যার ফলে গর্ভধারিণীর আসল অর্থ ফুটে ওঠে। এই গর্ভধারিণী উপন্যাস সেসব সময়ের স্বপ্ন-সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনীর এক আমূল দৃষ্টান্ত। পাঠ প্রতিক্রিয়া :সমরেশ মজুমদার স্যারের বই বরাবরই ভালো লাগে।এই বইটাও চমৎকার লেগেছে।জয়ীতার কিছু ব্যাপার বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়েছে।যেমন বাবা-মা যখন তাদের ভুল বুঝতে পারে তখনও তাদেরকে পাত্তা না দেওয়াটা আমার কাছে ভালো লাগেনি।আনন্দকে ভালো লেগেছে খুব।কল্যাণ -সুদীপকেও খারাপ লাগেনি।সব মিলে বইটা সত্যিই চমৎকার ছিলো।
Was this review helpful to you?
or
" গর্ভধারিণী - সমরেশ মজুমদার " দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া এই সমাজকে দেখে কখনো সখনো রক্ত গরম হয়ে উঠে। কি হবে এই নষ্ট-পঁচা-গলা সমাজ দিয়ে? খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আর কতদূরই বা যেতে পারবে এই দেশ। মন চাই এক পারমানবিক বোমা ফেঁলে গোটা দেশটাকে শেষ করে দি! আবার নতুন করে গড়ি তুলি পৃথিবীটাকে। কিন্তু থমকে দাঁড়াতে হয় নিজের ক্ষমতা অক্ষমতার যায়গায় এসে। নষ্ট রাজনীতি, নষ্ট সমাজ দেখে হয়তো অনেক যুবকের রক্ত গরম হয়ে উঠে কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নেই ক জন। গর্ভধারিণী ঐ সব রক্ত গরম হওয়া তরুনদের কাহিনী যারা দেশকে নাড়া দিতে চেয়েছিলো একটুকু সুন্দরের আশাতে। না এ কোন এডভেঞ্চার প্রিয় তরুনদের কার্যকলাপ নয়। গোবরের বুকে পদ্ম ফোটা একদল দেবদূতদের কাহিনী। উপন্যাস রচনার সময়কাল ১৯৮৬। কেমন ছিল তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা? রাজনৈতিক দল গুলো নিজেদের ক্ষমতার লড়ায় নিয়ে কাড়াকাড়িতে মত্ত। বামরা যতই অধিকারের কথা বলুক গদি দখলই তাদের একমাত্র লক্ষ। এলিট শ্রেনি আছে তাদের সুবিধে নিয়ে। মেরুদণ্ড ভাঙ্গা মানুষগুলোর এখন আর কোন কিছুতে ভুরুক্ষেপ হয় না। খেটে খাওয়া মানূষদের কচুকাটা করে ক্ষমতার লড়ায়ে মত্ত দুনিয়াতে আর্বিভিত হয় চার দেবদুত। যারা দেশসেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী। সামনে উজ্জ্বল ভবিভবিষ্যত রেখে দেশের জন্য, দশের জন্য ঝাপিয়ে পড়া এ এক অমর গাঁথা। " আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে এই যার পন " জয়িতা, সুদীপ, আনন্দ আর কল্যাণ চার বন্ধু যাদের মন ও মননের মোটেও উপযোজন ঘটছে না তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার সাথে। তরুণ বয়সের উদ্দীপনা, পরিবর্তনের চেষ্টার যে ব্যাকুলতা তার ছাপ স্পষ্ট চরিত্রগুলোর প্রতি কথোপকথনে, কাহিনীতে। হঠাৎ খুঁজে পাওয়া রেনেসাঁর স্পর্শে সব ভেদাভেদ দূর করার প্রচেষ্টায় মত্ত এই চার তরুণ-তরুণী। সব ভেদাভেদকে ছিন্ন করে ধনী, গরিব, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে যেখানে সবাই এক। কিন্তু এরা যে অঙ্কুরিত হওয়া তরুণ-তরুণী, যারা তারুণ্যের উদ্দীপ্তে পরিবর্তন চায়। এরা তো আর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে পরিপূর্ণ হার-না-মানা বিপ্লবীর মতো না। কিন্তু এরা দৃঢ় প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত বিপ্লবী চেতনায় চলতে থাকে সামনের দিকে পূর্ণ উদ্দেশ্যে। কল্যাণ চরিত্রে দেখা যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভাবে বেড়ে উঠা এক যুবককে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ যার কাছে দ্বিধা- দ্বন্দময়। আনন্দ একই সামাজিক কাঠামোতে বেড়ে উঠলেও তার মায়ের বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের কারণে তার মাঝে নেতৃত্বের পূর্ণ পরিস্ফুটন ঘটে। অপরদিকে সুদীপ এবং জয়িতা উভয়েই বিত্তবান বাবা মায়ের অবহেলিত সন্তান। উচ্চ শ্রেণির আরাম আয়েশ তাদের কাছে কাটার মতো বিঁধত। জীবনের অর্থ খুঁজতে চার বন্ধু তাই এক অনিশ্চিত পথে পা বাড়ায়। যে পথে লেখক তাদের সঙ্গী। সেই অমর পথের শ্রষ্ঠা সমরেশ বাবু। জয়িতা, সুদীপ, আনন্দ আর কল্যাণ এই চার বন্ধুর এক দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প নিয়েই গর্ভধারিণী। ঘূণে ধরা সমাজের বিবেক বোধকে নাড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্য একের পর এক অভিযান চালিয়ে যায় তারা। কিন্তু একসময় চার বন্ধুর প্রয়াস বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আইনের হাত থেকে বাঁচতে তারা বেরিয়ে পরে। ছুটে যায় হিমালয়ের পাদদেশে পুলিশের নাগালের বাইরে। সেখানে তাদের পরিচয় ঘটে সভ্যতা বর্জিত জনগোষ্ঠীর তাপল্যাঙদের সাথে। এই তাপল্যাঙ দের কে নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এক নতুন সাম্যের সমাজ গড়ে তোলায় চেষ্টায় রত হয়। এই প্রচেষ্টায় আনন্দ গ্রামবাসীকে নেতৃত্ব দেয়। বাকীরা সাহায্য করে। কিন্তু জয়িতার আত্মবিশ্বাস, গ্রামবাসীর সাথে একাত্ব হয়ে যাওয়া এবং সবশেষে সেই গ্রামেরই সন্তানকে পেটে ধরে জয়িতা বাকী বন্ধুদের চেয়ে এগিয়ে যায় অনেক। নিজেকে নিয়ে যায় এক অনন্য উচ্চতায় । গর্ভধারিণী নামের স্বার্থকতা এখানেই। শুধুমাত্র আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট নয়, সমাজের উন্নয়নে দরকার মানসিক ও ব্যক্তিত্যের পরিবর্তন। মূলত বর্তমান সমাজের এই ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে সমাজকে পুনরায় গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে বইটি। সমাজের মানুষগুলোর বিবেকবোধ আর মানবিকতাকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বইটি পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে। সমরেশ মজুমদারের এক অসাধারণ কীর্তি গর্ভধারিণী যা বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু বাস্তবতার তুলনায় কাহিনীর বর্ণনাতে আছে একটু বেশিই থ্রিল যেন বাংলা সিনেমার মত। সিনেমাতে নায়কের যেমন মৃত্যু নেই তেমনি উপন্যাসের নায়কের। উপন্যাসের এই অতিরঞ্জিত বর্ণনাই একজন পাঠককে ধরে রাখবে কিন্তু এই অতিরঞ্জিত ভাবই উপন্যাসের দুর্বল দিক। এক সময় হয়তো ভুলে যাবে সমাজ তাদের নামগুলো। কিন্তু এই সমাজে তারা যে পদচিহ্ণ এঁকে গেল তা কি রক্ষা করতে পারবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?
Was this review helpful to you?
or
চার বন্ধু। অানন্দ, কল্যাণ, সুদীপ আর জয়িতা। দেশে চলছিল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দলীয় ক্রন্দন ও বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। চার বন্ধুর বিবেক তাড়িত হলো। তারা পদক্ষেপ নিলো বাংলার মানুষের মাঝে সচেতনার ঢেউ তোলার। যেমন ভাবা তেমন কাজ। দেশের বাজে অবস্থার বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক এক অভিযানে নামে সবাই।
Was this review helpful to you?
or
#গর্ভধারিণী #সমরেশ_মজুমদার আমার পড়া সব থেকে ভালো বই গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বই। সমরেশ মজুমদারের বই গুলো বরাবর ভালো লাগতো। সাত কাহন উপন্যাসটা পড়ার মধ্য দিয়ে সমরেশের বইগুলোর মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। তারপর হঠাৎ এই বইটা পেয়ে গেলাম। বই হাতে নেওয়ার পর পড়া শেষ করা না পর্যন্ত উঠতে ইচ্ছা করেনি। বইটার মূল বিষয় সম্পর্কে যদি বলতে চাই, চার জন বন্ধুর এক অভিনব দুঃসাহসী অভিযান এই উপন্যাস। এই চার বন্ধু অসম সামাজিক পরিবেশ থেকে উঠে এসেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রধান যে মিলটা ছিল তা হলো দেশের জন্য কিছু করা,দেশের বর্তমান যে একটি অসমান্তরাল অর্থনৈতিক কাঠামো সেটা তারা ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিল। সেই চার জন বন্ধুর মধ্যে একজন আবার নারী ছিল। আমার পড়া উপন্যাস গুলোর মধ্যে একটি সেরা নারী চরিত্র। এ উপন্যাসে সব থেকে প্রধান চরিত্র বলা যায় তাকে। জয়িতা হলো সেই মেয়ে যে উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তার অর্থের হয়তো অভাব ছিল না কিন্তু বাবা মাকে যেভাবে পাওয়ার কথা ছিল সে তা পায়নি। বরং সে দেখে এসেছে তার পরিবারে অর্থ আসার সাথে সাথে তার বাবা মায়ের যে নৈতিক অবনতি হয়েছে যা তাকে তাদেরকে ঘৃণা করতে বাধ্য করেছে। এবং সাথে সাথে এই সমাজ কাঠামোটাকেও ঘৃণা করতে শিখিয়েছে। অপরদিকে আনন্দ এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা একটি ছেলে। যার মধ্যে নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়েছেন লেখক। আনন্দের বাবা কমিউনিস্ট দলের সাথে যুক্ত ছিলেন, পরে তিনি আত্মহত্যা করেন। আনন্দের মাঝে যে নেতৃত্বের গুণ তা মূলত তার পরিবার থেকেই এসেছে। অপর দুই জন বন্ধু কল্যাণ ও সুদীপ। কল্যাণও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। নানা রকম অভাবের মধ্যে সে বড় হয়েছে। সে তার পরিবারের মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছিল তাদের সেই সংগ্রামে। আর সুদীপ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। সে তার বাবার মধ্যে যে নিষ্ঠুর বিত্তবান মানুষের প্রতিছবি খুঁজে পেয়েছিল। তার মধ্যে তাই উচ্চবিত্ত শব্দটার প্রতি ঘৃণা জমে গেছিল। তাদের অভিযান ছিল একটি সাম্যবাদী সমাজ গড়ার। সেই সাম্যবাদী সমাজ গড়তে গিয়ে তারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তাদের প্রথম যে অভিযান সেটা তার একটা পতিতালয়ে করেছিল। এবং তারা সাফল্যের সাথে সেটা সম্পূর্ন করতে পারে। যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। পড়ে তারা আরো দুইটি অভিযান চালায়। এবং পুলিশের সামনে দৃষ্টিগোচর হয়। তাই তাদেরকে আশ্রয় নিতে হয় হিমালয়ে পাদদেশে ভারত ও নেপালের মধ্যবর্তী একগ্রামে। সেখানে শুরু হয় আরেক সংগ্রাম... বইটি পড়লের বুঝতে পারবেন তাদের দুঃসাহসী সেই সংগ্রামের কথা। আশা করি বইটি আপনাদের ভালো লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
রিভিউঃ সুবিধাবাদী জনগোষ্ঠীর হাত থেকে ক্ষয়ে যাওয়া দেশটাকে রক্ষা করার কথা সকলে না ভাবলেও অনেকেই ভাবে কিন্ত সেই ভাবনা টা কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কারণ, দেশের পরিবর্তন আনতে হলে প্রয়োজন বিপ্লব। আর বিপ্লবে প্রয়োজন ত্যাগ। কিন্ত অধিকাংশ বাঙালী মলমূত্র এবং বীর্য ছাড়া আর কিছুই ত্যাগ করতে জানে না। তবে সেই অধিকাংশের বাইরেও কিছু ত্যাগী তরুণ-তরূণী আছে। যেমন, সুদীপ,আনন্দ,কল্যাণ আর জয়িতা। এদের মধ্যে কারো অশান্তি বেপরোয়া মেলামেশায় বিশ্বাসী বাবা-মাকে নিয়ে, আবার কারো আর্থিক সমস্যা নিয়ে। কিন্ত হাজারো সমস্যার মাঝেও দেশকে নিয়ে স্বপ্ন তাদের আকাশচুম্বী। এরা বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে এমন এক দেশের কল্পণা করে যেখানে মানুষ হবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো। এই উদ্দ্যেশ্য সামনে রেখে চারজন নেমে পড়ে এক সশস্ত্র বিপ্লবে যার লক্ষ্যই হলো বাঙালীর মাঝে গণজাগরণ তৈরী করা। ওরা একে একে ধ্বংস করে ক্ষতিকর ঔষধের কারখানা,অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এমন প্রতিষ্ঠান এবং খুন করে ছত্রাকের মত রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে শোষণ করতে থাকা কিছু জঘন্য চরিত্রের মানুষকে। এরপরে কিছুদিনের জন্য তারা গা ঢাকা দিতে চলে যায় অনেক দূরের এক জনপদে যেখানে সভ্যতার ছিটেফোঁটাও নেই। এমনকি বেচে থাকার জন্য প্রতি মূহুর্ত সংগ্রাম করতে হয়। সেখানে যাবার পর তারা বুঝতে পারে এই জনপদে ভারববর্ষের অন্য রাজ্যের মত কোনো শোষকশ্রেণীর মানুষ নেই কিন্ত তবুও তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি নেই। কিন্ত কেন? এর কারণ হলো অজ্ঞতা আর কুসংস্কার। আর তখনই শুরু হয় তাদের এক নতুন যাত্রা। অবচেতন মনেই তারা চেষ্টা করে এই জনপদের উন্নতি ঘটাতে। সশস্ত্র বিপ্লবের কথা ভুলে গিয়ে শুরু হয় এক নতুন বিপ্লব। চার উদ্যমী তরূণ-তরুণীর সংগ্রামের চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেখকের এই স্বাস্থ্যবান বই। এমন সামাজিক এবং রাজনৈতিক মেলবন্ধন আর কোনো বইয়ে পাইনি। পড়া শেষেও একরাশ মুগ্ধতা এখনো রয়ে গেছে।
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউ বইয়ের নাম:গর্ভধারিণী লেখক:সমরেশ মজুমদার পৃষ্ঠা:৩৮৪ মুদ্রিত মূল্য:৭৬০ দেশের ভালোমন্দ, রাজনৈতিক দলগুলোর উপর ন্যস্ত।সমাজের মানুষগুলো সবাই যেন কুয়োর ব্যাঙের মত মুখ লুকিয়ে চুপচাপ জীবনটাকে পার করে দিচ্ছে।রাজনৈতিক দলগুলো দেশ পরিচালনার নামে সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে এক কঠিনতম অবস্থায়। আর সবাই সেটা এতোদিন চুপ করে সহ্য করে সয়ে আসছে।কিন্তু সমাজের রাজনৈতিক দলগুলোর এই কারচুপি, কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারেনি চারজন তরুণ-তরুণী। এক দুঃসাহসিক অভিনব সামাজিক মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে সমাজকে, সমাজের ঘুমন্ত মানুষগুলোর বিবেক এর দরজায় কড়া নেড়ে দিতে চারজন যুবক-যুবতী এক হয়ে কাজ করে।চারজনই ছিলো শিক্ষিত,ভদ্র,সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে।কলেজে চার বন্ধু একসাথে পড়াশুনা করে।চার বন্ধুর চিন্তাধারা, চেতনা,আচার-আচরণ,রুচি,মন মানুষিকতা সবই আলাদা আলাদা।কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব, শিক্ষা,মনোভাব দেশের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা সবই একই রকম হওয়াতে তারা এক হয়ে সমাজের এই কালো মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শক্তিধর দলগুলোর পাজড় ভেঙ্গে দেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে এক হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে তৎপর, অনড়,একনিষ্ঠ, ঐক্যবদ্ধ ছিলো।আর সেই জোড়েই তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়। সমাজের,রাজনৈতিক দলগুলোর এই শাসন শোষণ ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ঐ চারজন যুবক-যুবতী। পরপর একেকটা কর্মকাণ্ড হয়ে যাওয়ার পর তারা নিজেকে আত্মগোপন করতে চলে যায় হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ি গ্রামে,যেখানে সভ্যতার ক্রমবিকাশ, আধুনিকতার আঁচড় এখনও কাটেনি।আর সেখানেই শুরু হয় তাদের নতুন আরেক জীবন।তারা সেখানের অশিক্ষিত, সহজ-সরল মানুষগুলোকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে।সেই অজপাড়াগায়ের মানুষগুলো একটু সুখ শান্তিতে বেঁচে থাকার,তাদের গ্রামকে বদলে দেয়ার,প্রত্যেকটা মানুষকে ভাগ্যের সাথে লড়াই করে বাঁচার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে তোলে। তাদের জীবন যাত্রার মান বদলে দেওয়ার তাগিদে চারজন বন্ধু সক্রিয়ভাবে কাজ করে।তাদের দলের একমাত্র নারী জয়িতা সেখানে তার বিচিত্র আত্মত্যাগ ও সাধনা এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত রাখে।জয়ীতা তার সহপাঠী বন্ধুদের চমকে দিয়ে নিজেকে এক নতুন পরিচয়ে,নতুন ভাবে উপস্থাপন করে।আর যার ফলে গর্ভধারিণীর আসল অর্থ ফুটে ওঠে। এই গর্ভধারিণী উপন্যাস সেসব সময়ের স্বপ্ন-সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনীর এক আমূল দৃষ্টান্ত। পাঠ প্রতিক্রিয়া :সমরেশ মজুমদার স্যারের বই বরাবরই ভালো লাগে।এই বইটাও চমৎকার লেগেছে।জয়ীতার কিছু ব্যাপার বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়েছে।যেমন বাবা-মা যখন তাদের ভুল বুঝতে পারে তখনও তাদেরকে পাত্তা না দেওয়াটা আমার কাছে ভালো লাগেনি।আনন্দকে ভালো লেগেছে খুব।কল্যাণ -সুদীপকেও খারাপ লাগেনি।সব মিলে বইটা সত্যিই চমৎকার ছিলো। বইটা পড়ে আমি তৃপ্ত হয়েছি। যারা পড়েন নি তারা অবশ্যই বইটা পড়বেন।বইটার পরতে পরতে রয়েছে একরাশ ভালোবাসা,আর মুগ্ধতা।আর হ্যা,বইটা পড়ে ভ্রমণের স্বাদটাও কিছুটা পেয়েছি।চারবন্ধু যখন হিমালয়ের দেশে পাড়ি দিচ্ছিলো তখন আমার মনে হচ্ছিলো আমিও যেন তাদের সাথে চলে যাচ্ছি।সব মিলে বইটা দারুণ লেগেছে আমার কাছে। # বইকে ভালোবাসুন, বইয়ের সাথে থাকুন। হ্যাপি রিডিং।
Was this review helpful to you?
or
সুবিধাবাদী জনগোষ্ঠীর হাত থেকে ক্ষয়ে যাওয়া দেশটাকে রক্ষা করার কথা সকলে না ভাবলেও অনেকেই ভাবে কিন্ত সেই ভাবনা টা কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কারণ, দেশের পরিবর্তন আনতে হলে প্রয়োজন বিপ্লব। আর বিপ্লবে প্রয়োজন ত্যাগ। কিন্ত অধিকাংশ বাঙালী মলমূত্র এবং বীর্য ছাড়া আর কিছুই ত্যাগ করতে জানে না। তবে সেই অধিকাংশের বাইরেও কিছু ত্যাগী তরুণ-তরূণী আছে। যেমন, সুদীপ,আনন্দ,কল্যাণ আর জয়িতা। এদের মধ্যে কারো অশান্তি বেপরোয়া মেলামেশায় বিশ্বাসী বাবা-মাকে নিয়ে, আবার কারো আর্থিক সমস্যা নিয়ে। কিন্ত হাজারো সমস্যার মাঝেও দেশকে নিয়ে স্বপ্ন তাদের আকাশচুম্বী। এরা বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে এমন এক দেশের কল্পণা করে যেখানে মানুষ হবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো। এই উদ্দ্যেশ্য সামনে রেখে চারজন নেমে পড়ে এক সশস্ত্র বিপ্লবে যার লক্ষ্যই হলো বাঙালীর মাঝে গণজাগরণ তৈরী করা। ওরা একে একে ধ্বংস করে ক্ষতিকর ঔষধের কারখানা,অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এমন প্রতিষ্ঠান এবং খুন করে ছত্রাকের মত রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে শোষণ করতে থাকা কিছু জঘন্য চরিত্রের মানুষকে। এরপরে কিছুদিনের জন্য তারা গা ঢাকা দিতে চলে যায় অনেক দূরের এক জনপদে যেখানে সভ্যতার ছিটেফোঁটাও নেই। এমনকি বেচে থাকার জন্য প্রতি মূহুর্ত সংগ্রাম করতে হয়। সেখানে যাবার পর তারা বুঝতে পারে এই জনপদে ভারববর্ষের অন্য রাজ্যের মত কোনো শোষকশ্রেণীর মানুষ নেই কিন্ত তবুও তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি নেই। কিন্ত কেন? এর কারণ হলো অজ্ঞতা আর কুসংস্কার। আর তখনই শুরু হয় তাদের এক নতুন যাত্রা। অবচেতন মনেই তারা চেষ্টা করে এই জনপদের উন্নতি ঘটাতে। সশস্ত্র বিপ্লবের কথা ভুলে গিয়ে শুরু হয় এক নতুন বিপ্লব। চার উদ্যমী তরূণ-তরুণীর সংগ্রামের চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেখকের এই স্বাস্থ্যবান বই। এমন সামাজিক এবং রাজনৈতিক মেলবন্ধন আর কোনো বইয়ে পাইনি। পড়া শেষেও একরাশ মুগ্ধতা এখনো রয়ে গেছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ রিভিউ নংঃ ১০ বইঃগর্ভধারিণী লেখক: সমরেশ মজুমদার প্রকাশনী: আনন্দ পাবলিশার্স প্রচ্ছদ: সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৮৮ মূল্য :৩০০রুপি( রকমারি মুল্য ৬৩০৳) লেখক পরিচিতিঃ সমরেশ মজুমদার বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক। তাঁর অনেক রচনাতেই উত্তরবঙ্গের কথা ঘুরে ফিরে আসে । তিনি বেশ কিছু সফল টিভি সিরিয়ালের কাহিনীকার।সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহন করেন বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন, ১০ই মার্চ ১৯৪২। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। তিনি বাংলায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন কোলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন।অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরষ্কার, ১৯৮৪ সালে সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। স্ক্রীপ্ট লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। কাহিনী সংক্ষেপেঃ চারজন বন্ধু, যারা স্বপ্ন দেখে সমাজ ব্যবস্থাটাকে বদলে দেবার, আর সে অনুযায়ী তারা কাজও শুরু করে। তারা কি পারবে শেষ পর্যন্ত সমাজ ব্যবস্থাটাকে বদলাতে নাকি সমাজের রীতির-নীতির কাছে নত হয়ে নিজেরাই বদলে যাবে?উপন্যাসটা যখন পড়তে শুরু করলাম তখন অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল। ৪জন তরুণ-তরুণী সমাজ-রাষ্ট্র পরিবর্তনের ইচ্ছে যাদের বুকে। তারা একটা একটা করে মিশন সস্পন্ন করে আর ভাল লাগাটা কাজ করতে থাকে...থ্রিলিং টাইপ ব্যাপারটা কাজ করতেছিল। মনে হচ্ছিলো, তারা যে কাজটা করার সংকল্প করতেছে, তা যর্থাথ, ভাল! কিন্তু যতোই কাহিনী এগতে ছিলাম, ততোই তাদের পরিকল্পনার ফাঁক ফোঁকর বের হতে থাকে। কয়েকটা ব্যাপার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আসলেই কি আমাদের দেশের পেক্ষিতে , মধ্যবিত্ত মানসিকতার এই জীবনে বিপ্লব কার্যকরী? কিংবা সকলের অংশগ্রহণ বা সমর্থন থাকবে ? এটা স্পষ্টত দৃশ্যমান যে, লেখক সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট ধ্যান ধারণার ছিলেন। উনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কমই বিশ্বাস করেন, তা তাঁর 'কালবেলা-কালপুরুষ-উত্তরাধিকার' উপন্যাসত্রয়ের মধ্যেও লক্ষণীয়। গর্ভধারিণী উপন্যাসের শেষের দিকে লেখক পাঠকের ধৈর্য্যচুত্যির কারণ হয়েছিলেন, গ্রামের বর্ণনা এত্ত বেশি দেয়ার হেতু পাইনি! পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ আনন্দ, সুদীপ, কল্যাণ এবং সর্বোপরি জয়িতা। পুরো উপন্যাস জুড়ে যত ঘটনা প্রবাহ সব এই চার জন কে ঘিরেই। এদের কেন্দ্রে রেখে অন্যান্য চরিত্রের বিচরণ। জয়িতা তো একমাত্র মেয়ে হ্ওয়াতে তার চরিত্র নিয়ে আলোচনা বেশিই হয়। এমনকি লেখক ও উপন্যাস শেষ করেছেন জয়িতার বিশেষ পরিবর্তনের বর্ননা দিয়ে। তবে আমার কাছে ভিতু কল্যাণ কে কেন জানি ভালো লেগেছে।মায়া লেগেছে। যুগে যুগে এমন্ই হয়েছে যে কিছু মানুষ হয়ে ওঠে আলাদা। তাঁরা অন্যের জন্য হাসি মুখে জীবন দিয়ে দিচ্ছে কিন্তু যাদের জন্য দিচ্ছে তারা বুঝতে ও পারছেনা। এরাই পৃথিবীর সূর্যসন্তান।বেশ মেজাজ খারাপ হয়েছিলো, যখন বইটা পড়েছিলাম। এতো সুন্দর একটা প্ল্যানড বিপ্লব - শেষমেষ কিনা এই হলো? আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম, সমরেশ নিশ্চই আর কোন আইডিয়া খুঁজে পায় নাই। তাই যেনতেন করে বই শেষ করে দিয়েছেন। কিন্তু অনেক পরে, আজ যখন আমিও টিনেজ কিংবা তারুন্য পার হলাম, যখন দেখলাম পরিবর্তন নিয়ে আসার উদ্দীপনা আমার মাঝেও স্তিমিত হয়ে আসছে, বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, তখন বুঝলাম আসলে এটাই বাস্তবতা। সমরেশ এটাই দেখাতে চেয়েছেন। ছেলেবেলার বিদ্রোহী মনোভাব, নির্ভীক চেতনাকেও কিভাবে কিভাবে যেন সমাজ নিজের বশে নিয়ে আসে;
Was this review helpful to you?
or
এক দুঃসাহসী ও অভিনব বিষয়বস্তু নিয়ে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন পরীক্ষার ফলশ্রুতি এই গর্ভধারিণী উপন্যাস। অসম অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, তাদের মধ্যে একজন নারী, এক সময়ে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারও যেন নিজস্ব কোন দায় নেই, দেশটার ভালোমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দলগুলির ওপর দিয়ে অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুঁজছে। এই ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে ঐ চারজন যুবক-যুবতী, পরিণামে তাদের আত্মগোপন করতে হলো হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ী গ্রামে, যেখানে সভ্যতার নখ এখনো আঁচড় কাটেনি। সেখানে শুরু হলো তাদের একজনের- যে একমাত্র নারী তাদের দলে, তার-বিচিত্ৰ আত্মত্যাগ ও সাধনা। এই উপন্যাস তাদের সকলের সেই স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনী।
Was this review helpful to you?
or
#বুক রিভিউ #গ্রন্থ: গর্ভধারিণী #লেখক: সমরেশ মজুমদার #প্রকাশনী: আনন্দ পাবলিশার্স #প্রচ্ছদ: সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় #প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬ #পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৮৮ #মূল্য :৩০০রুপি( রকমারি মুল্য ৬৩০৳) ★★ সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন ★★ তিনটা ছেলে এবং একটা মেয়ে মিলে চারজনের একটা গ্রুপ। আনন্দ, কল্যাণ,সুদীপ, জয়িতা। তারা খুবই ভালো রেজাল্ট করা প্রেসিডেন্সির ছাত্র- ছাত্রী। চারজনের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড চার রকমের। জয়িতার বাবা মা হঠাৎ বড়লোক হয়ে নিজেদের বৈভবের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে অস্থির জীবন যাপনে অভ্যস্ত। জয়িতার সাথে তাদের বিস্তর দুরত্ব। সুদীপের বাবা উকিল। অসৎ পথে বিস্তর টাকা আয় তার। মা বেঁচে নেই। সুদীপের সাথে সম্পর্ক খারাপ। কল্যাণের নিম্ন আয়ের পরিবারে সারাদিন খিটিমিটি খিস্তি লেগেই আছে। একমাত্র আনন্দকে মৃত বাবার, শিক্ষিকা মায়ের সুখী ছেলে হিসেবে মনে হয়। কিন্তু এক জায়গায় এসে চারজন মিলে গেছে। নিজেদের পরিবারের অবক্ষয় দেখা ক্লান্ত ছেলে-মেয়েগুলো যখন বাইরে চোখ মেলে চাই তখন বুঝতে পারে অশ্লীলতা, কদর্যতা, বিবেক হীনতায় শুধু তাদের পরিবার আক্রান্ত নয়, আক্রান্ত পুরো সমাজ, পুরো দেশ। তারা সিদ্ধান্ত নেয় এভাবে আর নয়, সমাজের ঘুম ভাঙ্গানোর সময় হয়েছে। ঘুম ভাঙ্গানোর দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। শুরু হয় তাদের সমাজের দুষ্ট ক্ষত নির্মূল মিশন। প্রথম দিকে একটা দুটো মিশন পরিপূর্ণ ভাবে শেষ করে। পুলিশ ও কোনো দিশা পাইনা তাদের। কিন্তু নারী পুরুষের প্রমোদ উদ্যান প্যারাডাইস ধ্বংস করার পর বুঝতে পারে পুলিশ উঠে পড়ে লেগেছে এবং তাদের পালাতে হবে। তারা জানতো আজ না হয় কাল পালাতেই হবে। মনে মনে তৈরি ছিল সবাই। তবুও আত্মগোপনে যাওয়ার আগে খানিকটা ভিতু কল্যাণ দনোমনো করতে থাকে। কিন্তু উপায় নেই আর। অজানা পথে বেরিয়ে পড়ে চারজন। তিনটা ছেলের সাথে একমাত্র মেয়ে জয়িতা। সুদীপের এক বৃদ্ধা আত্মিয়ার বাড়িতে কিছু দিন লুকিয়ে থাকে। এক্ই ঘরে দিনের পর দিন আত্মগোপন করে আছে কিন্তু চারজনের মাঝে তা নিয়ে কোনো মানসিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় নি। জয়িতা ও মেয়ে বলে কোনো বাড়তি সুবিধা নেবার চেষ্টা করেনি। কিন্তু বৃদ্ধার আশ্রয় ও আর নিরাপদ থাকে না। ম্যাপ দেখে তারা ঠিক করে কিছু দিন দূর নির্জন কোথাও আত্মগোপনে থাকবে, পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরে আসবে কোলকাতা। অজানা পথে বেরিয়ে তারা পৌঁছায় দেশের শেষ সীমান্তের দুর্গম এক পাহাড়ি গ্রামে। যেখানে সৌবভ্যতার কোনো আলো পৌঁছাইনি। অতিরিক্ত ঠান্ডা থাকে বছরের দুই- তৃতীয়াংশ সময়। খাবারের দারুণ অভাব। তবুও এখানে এসে থাকায় শ্রেয় মনে করে চারজন। কিন্তু এ গ্রামের মানুষ তাদের সন্দেহের চোখে দেখে। কেন এসেছে তারা? কি চাই? তিন জন ছেলের সাথে একজন মেয়ে।সেও ছেলেদের মতো পোশাক পরে থাকে। কেমন বন্ধু? অন্যদিকে জয়িতারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা এই গ্রামে থাকবে। তাঁরা যেহেতু মানুষের জন্যই কাজ করতে চেয়েছিল তাই এখানে এই সহজ সরল এবং সকল দিক থেকে বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করবে। শুরু হয় চার বন্ধুর সংগ্রাম। আস্তে আস্তে গ্রামের মানুষ তাদের বিশ্বাস করতে শুরু করে। হাতে নেই তারা নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প। এদিকে হঠাৎ করেই গ্রামে বেশ কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওষুধ কিনতে হবে। গ্রামের কেউ যাবেনা। কিন্তু এদের চারজনের শহরে যাওয়া বিরাট ঝুঁকি। সে ঝুঁকি মাথায় করে ভিতু কল্যাণই ওষুধ কিনতে যায়। ওষুধ নিয়ে ফিরে আসে সাহায্যকারী ছেলেটি। ফেরা হয়না কল্যাণের। সে পুলিশের গুলি খেয়ে মৃত্যুর আগে শুধু জয়িতার মুখটাই ভেসে উঠতে দেখেছে চোখের সামনে। তবে কি কল্যাণ ভালোবেসেছিল জয়িতাকে? প্রশ্ন থেকে যায় মনে। পান্ডববর্জিত এক গ্রামে শহুরে পরিবেশে মানুষ হ্ওয়া তিন বন্ধুর জীবন সংগ্রামের কথা, তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের বর্ননা, আস্তে আস্তে গ্রামের মানুষের ভালোবাসায় জয়িতা কিভাবে দ্রিমিত হয়ে তাদেরই একজন হয়ে ওঠে তার কাহিনী জানতে হলে পড়তে হবে"গর্ভধারিণী"। ★★আমার অনুভব★★ বহুল পঠিত এবং আলোচিত উপন্যাস হলো গর্ভধারিণী। আনন্দ, সুদীপ, কল্যাণ এবং সর্বোপরি জয়িতা। পুরো উপন্যাস জুড়ে যত ঘটনা প্রবাহ সব এই চার জন কে ঘিরেই। এদের কেন্দ্রে রেখে অন্যান্য চরিত্রের বিচরণ। জয়িতা তো একমাত্র মেয়ে হ্ওয়াতে তার চরিত্র নিয়ে আলোচনা বেশিই হয়। এমনকি লেখক ও উপন্যাস শেষ করেছেন জয়িতার বিশেষ পরিবর্তনের বর্ননা দিয়ে। তবে আমার কাছে ভিতু কল্যাণ কে কেন জানি ভালো লেগেছে।মায়া লেগেছে। যুগে যুগে এমন্ই হয়েছে যে কিছু মানুষ হয়ে ওঠে আলাদা। তাঁরা অন্যের জন্য হাসি মুখে জীবন দিয়ে দিচ্ছে কিন্তু যাদের জন্য দিচ্ছে তারা বুঝতে ও পারছেনা। এরাই পৃথিবীর সূর্যসন্তান। এ উপন্যাস নিয়ে আসলে তেমন কিছু বলার নেই। তবে শেষে এসে আমার মনে হয়েছে, ইশ্ এরা কি আর কোন দিনই চেনা জগতে ফিরতে পারবেনা? ওরা নিরুদ্দেশ হবার পর কি ভাবছেন ওদের পরিবারগুলো? এগুলো হালকা ভাবে উপন্যাসে জানতে পারলে মন্দ হত না। **রেটিং** ৪.৫/ ৫
Was this review helpful to you?
or
মূলকথাঃ জয়িতা, সুদীপ, আনন্দ আর কল্যাণ চার বন্ধু যাদের মন ও মানসের মোটেও উপযোজন ঘটছে না তৎকালীন সমাজের সাথে। কেমন ছিল তৎকালীন মেকী সমাজ? কি ছিল তাদের এই মেকীর সংজ্ঞা? আজকের সমাজ থেকে তেমন পার্থক্য দেখি না সেই মেকী সমাজের। শুধু পার্থক্য এই যে, তাদের সময় আট ঘন্টা খাটুনির সাথে চার পাঁচ ঘন্টা ট্রাফিক সহ্য করা লাগতো না হয়তো। কিন্তু দিন/সপ্তাহ শেষে একটু বিনোদনের আশায় মায়া-সামাজিকতা মেনে চলা, বিত্তের চাকচিক্য প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ লাল পানীয়ের গ্লাস, কিংবা আরো কিছুটা উত্তেজনা আর এডভেঞ্চারের স্বাদ এনে দিতে দু-চারটা পরকীয়া? – এই তো, এসবই হচ্ছে এখনকার সমাজের সংজ্ঞা যার শুরু হয়েছিল ভারতবর্ষে রেনেসাঁর আবির্ভাবের পর। যে সমাজে হারিয়ে গেছে সত্যিকারের রোমাঞ্চ; যার বদলে ঠাঁই পেয়েছে ভেজাল-বিনোদন। কিন্তু তারুণ্যের উদ্দীপনায় রক্ত গরম ‘ডিফারেন্ট’ গোছের কিছু তরুণ-তরুণী যখন মেনে নিতে পারলোনা এসব; একই সাথে অভিজ্ঞতার ঝুলি আর দূর-দর্শনের অভাবে আচমকা করে বসলো কোন ধরণের বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসী হামলা; তখন তাদের নাম হয়তো ‘সমাজ-প্রতিবাদীদের’ পরিবর্তে ‘এটেনশন সিকার’ আর ‘টেরোরিস্টদের’ খাতায় নাম উঠে, যেমনটা ঘটেছে এই উপন্যাসেও। তরুণ বয়সের কিছু উদ্দীপনা, পরিবর্তনের চেষ্টায় যে ব্যাকুলতা তার ছাপ চরিত্রগুলোর প্রতি ডায়ালগে, জীবন কাহিনীতে। হঠাৎ খুঁজে পাওয়া রেনেসাঁর স্পর্শে সব ভেদাভেদ দূর করার প্রচেষ্টায় মত্ত এই চার তরুণ-তরুণী। তারা মানবে না কোন ভেদাভেদ; হোক সেটা ধনী-গরীবের, হোক সেটা নারী-পুরুষের। কিন্তু এরা তো মাত্র বিকশিত হওয়া তরুণ-তরুণী; যারা রক্ত গরমের নেশায় পরিবর্তন চায়। তারা তো আর মাসুদ রানার মতো এক্সপার্ট স্পাই কিংবা অভিজ্ঞতার ঝুলিতে পরিপূর্ণ হার-না-মানা বিপ্লবী কুয়াশার মতো না। তাই দ্রুতই তাদের নিঃশেষিত রিসোর্সের সাথে সাথে ভাটা নেমে এলো বিপ্লবী চেতনায়ও। হারিয়ে গেলো তাদের এককালের উত্তেজনায় পূর্ণ উদ্দেশ্য। এক সময় হয়তো ভুলে যাবে সমাজ তাদের নামগুলোও। চরিত্র বিশ্লেষনঃ জয়িতা – নারীবাদী; কিন্তু তার নারীবাদে অনেক টিপিক্যাল চেতনা। জয়িতা সেই শ্রেনির নারীবাদী যারা শক্ত নারী না হয়ে একবারে পুরুষই হতে চায়, এমনটাই মনে হয়েছে আমার। কিন্তু শেষ দিকে তাকে অবশ্য শক্তিশালী নারীতে পরিণত হতে দেখা যায়। সে বুঝতে পারে তার কি করা উচিৎ। সুদীপ – এই চরিত্রটা এমন যাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব ভালো/যোগ্য উদ্দেশ্য লাগে। উদ্দেশ্য হারিয়ে গেলে তাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছেও শেষ হয়ে যায়। অনেক গভীর চেতনা সম্পন্ন মানুষ, কিন্তু শেষমেশ সেই চেতনার শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে না। আনন্দ – গ্রুপে দায়িত্ব নেবার ক্ষমতা রাখা একটা চরিত্র। কল্যাণ – দুর্বল চরিত্র, যে কিনা কিছু করে দেখাতে উৎসুক। ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সে ভুগছে সবসময়ই। আমার অনুভুতিঃ ১। পড়েছি অষ্টম শ্রেণীতে থাকতে। যথেষ্ট থ্রিলড ছিলাম জয়িতাকে নিয়ে। রিভিউ লিখছি তখনকার স্মৃতি হাতড়ে। ২। সুদীপের উপর ক্রাশ খেতাম যদি পরে সে উদ্দেশ্য হারিয়ে না ফেলতো। সব মানুষই আমার ধারণা বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যকে খুঁজে পেতে চায়। আর পেলে সেদিকেই হাঁটতে চায়। কিন্তু যে মানুষগুলো সেই উদ্দেশ্য খুঁজে পাবার চেষ্টাটুকুও করে না, আমার মতে ‘দে আর জাস্ট বোরিং’। ৩। সমরেশের উপর বেশ মেজাজ খারাপ হয়েছিলো, যখন বইটা পড়েছিলাম। এতো সুন্দর একটা প্ল্যানড বিপ্লব - শেষমেষ কিনা এই হলো? আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম, সমরেশ নিশ্চই আর কোন আইডিয়া খুঁজে পায় নাই। তাই যেনতেন করে বই শেষ করে দিয়েছেন। কিন্তু অনেক পরে, আজ যখন আমিও টিনেজ কিংবা তারুন্য পার হলাম, যখন দেখলাম পরিবর্তন নিয়ে আসার উদ্দীপনা আমার মাঝেও স্তিমিত হয়ে আসছে, বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, তখন বুঝলাম আসলে এটাই বাস্তবতা। সমরেশ এটাই দেখাতে চেয়েছেন। ছেলেবেলার বিদ্রোহী মনোভাব, নির্ভীক চেতনাকেও কিভাবে কিভাবে যেন সমাজ নিজের বশে নিয়ে আসে; (হোক সেটা ঝলমলে শহরে কিংবা কোন এক অজো-পাহাড়ী গাঁ); ভীতু, কাপুরুষ, অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ প্রবীণে পরিণত করে দেয়াটাই বোধ হয় সব সমাজের সুপ্ত ক্ষমতা। ৪। এক কথায় সবগুলো চরিত্রের উদ্দেশ্য, কর্মকাণ্ড, পদক্ষেপের পেছনে যুক্তি এবং বেড়ে উঠা সব ভালো হয়েছে। যা শিখলামঃ ১। “এক্সপার্ট লেখকের লেখাকে সমালোচনা করার আগে ১০০ বার ভাবুন।” -_- তাদের লেখার তাৎপর্য ছোটবেলায় বুঝি নাই তো কি সমস্যা? বড় বেলায় বুঝবো। ২। আমি কি হতে চাই এরকম স্তিমিত হয়ে যাওয়া ভীতু-কাপুরুষ-অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন সমাজে্র-বাস্তবতায়-ব্যস্ত এক প্রবীণ? যার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে থাকবে শুধুই হেরে - থেমে যাবার গল্প? জানিনা; যাত্রা শেষ হয়নি যে! কিন্তু হেরে গেলে, সেই গল্প নবীনদের শুনিয়ে তাদের থামিয়ে দেবো না, প্রেরণা দেবো আমার পর থেকে শুরু করার। এমন প্রবীণ কপাল জোরে আমিও দেখেছি, গল্পে কিংবা বাস্তবে। হতেও চাই এমনটাই প্রবীণ; যদি বেঁচে থাকি। বইঃ গর্ভধারিণী; লেখকঃ সমরেশ মজুমদার; ধরন: পশ্চিমবঙ্গের উপন্যাস; প্রকাশক: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ (ভারত)
Was this review helpful to you?
or
বই এর শুরুতে পরিচয় হয় যে মেয়েটির সাথে, সে হল জয়িতা।আর কিছুদূর গেলে ওর তিন বন্ধু কল্যাণ,সুদীপ আর আনন্দ। চার জনই প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। মেধাবী ও স্পষ্ট চিন্তার মানুষ। সমাজের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে তাদের আলোচনা চলে। জয়িতা উচ্চবিত্ত পরিবারের স্বাধীনচেতা এক মেয়ে।। তবে আর দশটা মেয়ের মত বিলাসি নয়। এমন কি নয় মেকাপ আর বিলাসিকতায় গা ভাসানো ঝকমকে কোন ডল বা শোপিজ ও নয়। দাম্ভিকতা আর উচ্চবিত্তদের বৈভব-বিলাসিতার ভেতরকার নোংরা উন্মুখতায় তার দমবন্ধ হয়ে আসে। স্টাইল বা ফ্যাশন নামক নগ্ন উদ্বেলিত নরনারী কে সে ঘৃনা করে, যা থেকে বাদ পরে না তার জন্মদাতা পিতামাতাও। প্রতিবাদী সে আচরণে, প্রতিবাদী তার বেশভূষায়। চরিত্রে নেই ন্যাকামি বা ভণিতাসুলভ কোনো দিক। সুদীপ, তারর বাবা হাই কোর্টের নামজাদা উকিল। কিন্তু আচরণে লোভী ও নোংরা মনমানসিকতার অধিকারী। বাবার সাথে কোন দিনও বনে নি তার। রোগাগ্রস্ত মা একমাত্র তার পিছুটান। কিন্তু একসময় তাকে মুক্তি দিয়ে, তার মা স্বর্গবাসী হন। কল্যান, নিম্ন বিত্ত পরিবারের সন্তান। তার ইচ্ছা একবার বড় হোটেলে পেট ভরে খাবার। পরিবার বলতে সে ছাড়াও তার তিনটে ভাই, দুই ভাবী আর মা বাবা।সারা দিন অভাব এর চাপ লেগেই থাকে.. আনন্দ, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেল। বাবা কে হারানোর পর সংসারের হাল ধরতেই, তার মা গ্রামে চলে আসেন আর সেখানে এক স্কুলে শিক্ষাকতা শুরু করেন। ছেলের কোন কাজে মা অমত করেন না, কিন্তু ভেবে করতে বলেন। অসম অর্থনেতিক কাঠামোয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, একসময় উপলব্ধি করলো অদ্ভুত এক আধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারো কোন দায় নেই, দেশটার ভালমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দল গুলোর উপর দিয়ে অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুজছে। কারো কোন দায়বদ্ধতা নেই। জয়িতার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দিক হলো, তারা কেউই তাকে মেয়ে বলে আলাদা খাতির অথবা বৈষম্য করে না। জয়িতা তাদের চোখে কেবল মেয়ে নয় বরং একটা মানুষ, তাদের বন্ধু। বন্ধুত্বের সম্মানটুকু জয়িতা তাদের চোখে দেখতে পায়। সস্তিবোধ করে তাদের সঙ্গ ও বন্ধুত্বে। চারজনের মধ্যে যে জিনিসটা কমন ছিল, তা হলো - প্রত্যেকে স্বপ্ন দেখতো একটা শ্রেণীহীন সমাজের, যেখানে ধনী-গরীব থাকবে না, সবার জীবনযাত্রার মান একই হবে, মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে না বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে সমান ভূমিকা রাখবে। তারা স্বপ্ন দেখে দুর্নীতিমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, মানুষের ভেতরের কুসংস্কার ও অসচেতনতা মুক্ত সত্যিকারের স্বাধীন এক সমাজের, স্বপ্ন দেখে পরিবর্তনের। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়ানো বৈষম্যের কুৎসিত রূপটা তারা ঘৃণা করে, তাই দুর্নীতিগ্রস্ত ঘুণে ধরা সমাজের ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলোয় সজোরে আঘাত করা ছাড়া আর কোন পথ দেখে না। বয়সে তারা তরুণ, রক্তে পরিবর্তনের নেশা, সমাজ বদলানোর এই গুরুভার তারা নিজেরাই নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। কিছু একটা করতে হবে, এমন কি এখনিই... এরকম একটা টেন্ডেন্সি কাজ করে তাদের মাঝে...ঝোক চেপে বসে মগজে। বেছে বেছে তারা আঘাত করে সমাজের প্রকৃত বাস্তবতার আড়ালে বিত্তশালীদের নির্লজ্জতার প্রধান আখড়াগুলোতে, যা বৈষম্যতার জলজ্যান্ত উদাহারন।প্রথম টার্গেট হিসেবে আনন্দের গ্রামে "প্যারাডাইস" নামক উদ্যান, যা বিত্তশালীদের বিলাসিতার আখড়া। পুরো অন্ধকার নিমজ্জিত গ্রামটাতে একমাত্র জেনারেটর এর আলোয় আলোকিত। নোংরামি তে পরিপূর্ন। এর পর, একের পর এক টার্গেট পুরন করতে থাকে, যা অচিরেই সমাজের প্রচলিত আইন-কানুন ও বিত্তশালীদের আঁতে ঘা লাগায়। ক'টা বিচ্ছিন্ন তরুণ-তরুণীর এই খামখেয়ালী তারা মেনে নেবে কেন...! যাদের মাথায় উপর নেই কোন রাজনৈতিক দল। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার পরিণতি হয় ভয়ানক, আর তাই তারা বাধ্য হয় শহর ছাড়তে। আশ্রয় নেয় দুর্গম, বৈরী জলবাতাস-পূর্ণ হিমালয়ের এক পাহাড়ি কোনে। তাই সেই দুর্গম পাহাড়ি মাটিকেই তারা বেছে নেয় স্বপ্ন পুরণের ভূমি হিসেবে। যেখানে সভ্যতার নখ এখনো আচড় কাটেনি.. ধনী পরিবারের শহুরে ও শিক্ষিত মেয়ে হয়েও জয়িতা গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের তাগিতে নির্দ্বিধায় হয়ে ওঠে তাদেরই একজন। চলে তার বিচিত্র আত্নত্যাগ ও সাধনা। শহরের তথাকথিত আধুনিক মানুষগুলোর ভেতর সে দেখে - "পুরু চামড়ার নখ দন্ত হীণ , চোখের পর্দা-ছেঁড়া আত্নসম্মানহীন, কয়েক লক্ষ বাঙালী গর্তে মুখ লুকিয়ে এ ওকে গালাগাল দিয়ে যাচ্ছে।" গ্রামের পাহাড়ি মানুষগুলো বরং তার কাছে ভণিতাহীন, অকৃত্রিম ও স্বচ্ছ। গ্রাম্য বর্বর লোক গুলোর মধ্যেই প্রাণ সঞ্চার করে চলে অভিযাত্রীরা.. সে এক নতুন মোড়, নতুন গল্পের শুরু... ..... কেউ একজন বলেছিলেন,"আমার কাছে লেখক যদি তার লেখার মধ্যে বাস্তবতাকে তুলে না ধরে, তাহলে তা হবে রূপকথা। আর রূপকথা তে আমার বেশ অরুচি।"" কথাটা আমার ক্ষেত্রেও তাই। পুরো উপন্যাস জুড়ে লেখক নিজের ভেতরের শ্রেণীহীন সমাজের প্রত্যাশা তুলে ধরতে যেয়ে প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেকে অস্বীকার করতে পারেননি। প্রতিক্রিয়া বলতে এত টুকু, সমরেশ এর বই বলে কথা..! প্রিয় লেখকের শীর্ষে থাকা মানুষটার চোখ ভরা জ্যোতি.. সাতকাহন পড়েই যার ভক্ত বনে গেছিলাম, আরও চার বছর আগেই।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃগর্ভধারিনী লেখকঃসমরেশ মজুমদার প্রকাশনীঃমিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স মূল্যঃ৭৬০টাকা " গর্ভধারিনী" তিনজন মানব এবং একজন মানবীর বিপ্লবের উপখ্যান, উপলব্ধি,বিশ্বাস এবং নির্মাণের কাহিনী নিয়ে সমরেশ মজুমদার রচিত অসাধারণ এক উপন্যাস। আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা চার জন মৌলিক চরিত্রের চিন্তার বৈচিত্রতা অথচ চেতনার সম্পৃক্ততা নিয়ে এক সামন্তবাদী সমাজ থেকে সাম্যবাদী পৃথিবীর স্বপ্নের পুথিলিপি হলো গর্ভধারিনী।যেখানে একটা সাম্যবাদী সত্ত্বাকে লালন করে এমন এক গর্ভধারিনীকে তুলে ধরা হয়েছে যার স্পন্দনে জন্ম নেবে অশিক্ষা, লিপ্সা, মিথ্যে সংস্কারমুক্ত একটি নব প্রজন্ম।সত্তরের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি আন্দোলন মুখ থুবড়ে পরলেও ঠিক তার পরবর্তী প্রজন্মের এক দল তরূণ-তরূণী এই আন্দোলনের চেতনা দ্বারা তখনো দেশটাকে শোষণমুক্ত করার স্বপ্ন দেখে। আর আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা ছিলো সেই দলের সদস্য যারা শুধু স্বপ্ন দেখে থেকে থাকেনি, হাতে তুলে নিয়েছিলো অস্ত্র। বারুদের চিৎকারে কাপিয়ে দিয়েছিলো সমস্ত বুর্জোয়া শক্তির শোষকদের।কিন্তু কিছু মানুষ কখনো কখনো তার কর্ম দিয়ে মৃত্যুকেও ছাড়িয়ে যায়। আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা সেই চারজন সেই অচেনা পৃথিবীর প্রতিনিধি যারা তাদের আয়ু দিয়ে বাচে না, বাচে কর্ম দিয়ে। কখনো বিপ্লবী হয়ে, কখনো মানবতার উষ্ণ স্পর্শ হয়ে আবার কখনো গর্ভধারিনী রূপে নতুন নির্মাণের শিল্পকার হয়ে।এমনই এক অসাধারণ কাহিনীর উপন্যাস এটি৷ সমরেশ মজুমদারের শ্রেষ্ঠ লেখনির ছাপ পেয়েছি এ উপন্যাসে। মোট কথায় চমকপ্রদ এক উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
আমার কৈশোরে পড়া সবচাইতে ভালো বাংলা বই এটা। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বই পড়া যাকে বলে- এই বইয়ের ক্ষেত্রে আমার তাই হয়েছিলো। 'জয়িতা'র মত বান্ধবীর দরকার ছিলো একটা... পেলাম না। তবে আক্ষেপ নেই। বইটা পড়ার সময় আমার চিন্তাভাবনার পরিপক্বতা না থাকলেও পরবর্তীতে পড়ে নিয়েছিলাম। তবে প্রথম বারের মত আনন্দ এবং উৎকণ্ঠা পাইনি। উপন্যাসটা যখন পড়তে শুরু করলাম তখন অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল। ৪জন তরুণ-তরুণী সমাজ-রাষ্ট্র পরিবর্তনের ইচ্ছে যাদের বুকে। তারা একটা একটা করে মিশন সস্পন্ন করে আর ভাল লাগাটা কাজ করতে থাকে...থ্রিলিং টাইপ ব্যাপারটা কাজ করতেছিল। মনে হচ্ছিলো, তারা যে কাজটা করার সংকল্প করতেছে, তা যর্থাথ, ভাল! কিন্তু যতোই কাহিনী এগতে ছিলাম, ততোই তাদের পরিকল্পনার ফাঁক ফোঁকর বের হতে থাকে। কয়েকটা ব্যাপার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আসলেই কি আমাদের দেশের পেক্ষিতে , মধ্যবিত্ত মানসিকতার এই জীবনে বিপ্লব কার্যকরী? কিংবা সকলের অংশগ্রহণ বা সমর্থন থাকবে ? এটা স্পষ্টত দৃশ্যমান যে, লেখক সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট ধ্যান ধারণার ছিলেন। উনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কমই বিশ্বাস করেন, তা তাঁর 'কালবেলা-কালপুরুষ-উত্তরাধিকার' উপন্যাসত্রয়ের মধ্যেও লক্ষণীয়। গর্ভধারিণী উপন্যাসের শেষের দিকে লেখক পাঠকের ধৈর্য্যচুত্যির কারণ হয়েছিলেন, গ্রামের বর্ণনা এত্ত বেশি দেয়ার হেতু পাইনি! গর্ভধারিনী উপন্যাস অসম অর্থনৈতিক কাঠামোয় বেড়ে ওঠা চার বন্ধুর কাহিনী, যারা রাষ্ট্র,সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে, আশেপাশের ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন খারাপগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায়, আর সেইমত কাজও শুরু করে তারা|
Was this review helpful to you?
or
গর্ভধারিনী, উপন্যাসটি তিনজন মানব এবং একজন মানবীর বিপ্লবের উপখ্যান নয়, গল্পটি একটি উপলব্ধির, গল্পটি বিশ্বাসের, নির্মাণের। আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা চার জন মৌলিক চরিত্রের চিন্তার বৈচিত্রতা অথচ চেতনার সম্পৃক্ততা নিয়ে এক সামন্তবাদী সমাজ থেকে সাম্যবাদী পৃথিবীর স্বপ্নের পুথিলিপি হলো গর্ভধারিনী। যেখানে একটা সাম্যবাদী সত্ত্বাকে লালন করে এমন এক গর্ভধারিনীকে তুলে ধরা হয়েছে যার স্পন্দনে জন্ম নেবে অশিক্ষা, লিপ্সা, মিথ্যে সংস্কারমুক্ত একটি নব প্রজন্ম। সত্তরের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি আন্দোলন মুখ থুবড়ে পরলেও ঠিক তার পরবর্তী প্রজন্মের এক দল তরূণ-তরূণী এই আন্দোলনের চেতনা দ্বারা তখনো দেশটাকে শোষণমুক্ত করার স্বপ্ন দেখে। আর আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা ছিলো সেই দলের সদস্য যারা শুধু স্বপ্ন দেখে থেকে থাকেনি, হাতে তুলে নিয়েছিলো অস্ত্র। বারুদের চিৎকারে কাপিয়ে দিয়েছিলো সমস্ত বুর্জোয়া শক্তির তোষকদের। সুদীপ বৃত্তবান পরিবারের সন্তান হওয়াই পুজিবাজী মানুষগুলো ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে যে নোংরা আর নির্দয় মূর্তি ধারণ করে রাখে সেটা তার বাবা অবনী তালুকদারের মাঝেই খুজে পেয়েছিলো। তাই বিদ্রোহের আগুন শৈশব থেকেই ওকে তাড়া করেছে। কল্যাণ বাংলার ঘরের নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবারের প্রতিনিধি, যারা নিজেদের দরিদ্র না বলে মধ্যব্রত্ত বলার মাঝে একটু স্বস্তি খুজে নেয়। তাই বিপ্লবের পথে সে তার পরিবারের মুক্তির পথ খুজতে চেয়েছিলো ।আনন্দর গল্পটা একটু আলাদা। বাবা নকশাল আন্দোলোনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো শিকড় থেকে। আর নিজের অজান্তেই করা ভুল এবং শাসক গোষ্ঠীর শিকড় উপড়ানোর বিষ তাকে আত্নহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করে। নেতৃত্ব আনন্দকে রক্ত থেকে টানে। জয়িতা সদ্য নিম্ন মধ্যবৃত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান। আর অর্থের সাথে তার বাব-মায়ের চিন্তার অদ্ভুত এবং অশালীন পরিবর্তন জয়িতাকে বাল্যকাল থেকে একাকীত্বের শিকলে আষ্ঠেপৃষ্ঠে রেখেছে। এই একাকীত্ব ওর ভেতরে মুক্তধারা প্রবাহিত করেছে অজান্তেই। আর কলেজে ওদের প্রাথমিক পরিচয় হয় আর তারপর একটু একটু করে চেতনার সাদৃশ্য ওদের বিপ্লবের পথে ডাক দেয়। প্রথম অভিযান টা হয় প্যাড়াডাইস নামে পতিতালয়ে যেখানে আশপাশের হাজারো মানুষকে আধারে নিমজ্জিত করে আলোর রোশনাইতে চলে সভ্য মানুষের বর্বর আর যৌন ক্ষুধার তান্ডব নৃত্য। সেখানে সফলতা ওদের আত্নবিশ্বাসী করে তোলে। এর পরেই ওরা ভেজাল ঔষধের কারখানা বোমা মেরে পুড়িয়ে দেয় যেগুলো নীরব ঘাতক হয়ে সাধারণ মানুষকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। শেষ অভিযানটি ওরা এক মন্ত্রী আর তার ক্ষমতার ভিত্তি একটি বিশেষ এলাকার শীর্ষ অপরাধী নানুভাইকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু ওদের এই সশস্ত্র বিপ্লব জনমনে ওদের প্রত্যাশিত আলোড়ন করতে ব্যর্থ হয়। পুলিশের তৎপরতা ওদের বাধ্য করে কলকাতা ছেড়ে দূরে আশ্রয় নিতে। আনন্দর সিন্ধান্ত অনুযায়ী ওরা নেপালের উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়। পথে মৃত্যুহিম ওদের চলার পথ রুদ্ধ করে কিন্তু পাহড়ী রূপের স্রোত কাঞ্চনজংগার বিহব্বল রূপ ওদের এগিয়ে নিয়ে চলে অভীষ্ট লক্ষ্যে। অবশেষে ওরা পাহাড় ঘেরা এক সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম তাপল্যাঙে এসে পৌছায়। তাপল্যাঙের অশিক্ষা, সংকীর্ণ জীবনধারা, সেবার অনুপস্থিতি, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা এ গ্রামের মানুষগুলোকে জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। কিন্তু তারপরেও এখানে শাসনের নামে শোষণ নেই, বিত্ত আর দারিদ্রতার গন্ডি নেই আর এই ব্যপারগুলোকে আনন্দকে নাড়া দেয়। আনন্দ স্বপ্ন দেখলো নির্মাণের, এক শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার। আনন্দের নেতৃত্বে ওরা ঠিক করে ওরা এই অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য করবে। জরাগ্রস্থ এই মানুষগুলোর জন্য ঔষধ আনতে নিজেকে এগিয়ে দেয় কল্যাণ। কল্যাণ কি ফিরে এসেছিলো? দিতে পেরেছিলো কি তাপল্যাঙের এই সরল মানুষের আরোগ্যের জন্য ঔষধের নামের মুক্তি? ওরা কি পেরেছিলো তাপল্যাঙে মানুষের একটা নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতে যেখানে কেউ না খেয়ে থাকবে না, জরায় ভুগে মরবে না, সবাই ভাবনার সাথে জীবনধারা একই সাথে প্রবাহিত হবে? জন্ম দেবে এক নতুন প্রজন্মের যার রক্তধারা এই মানুষগুলোকে সুখের পৃথিবীতে বয়ে নিয়ে যাবে যুগ থেকে যুগান্তর। ব্যক্তিগত অভিমতঃ কবি নির্মলেন্দু গুণ উনার স্ববিরোধী কবিতায় একটা ধ্রুব সত্য কথা বলেছিলেন, আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি । কিন্তু কিছু মানুষ কখনো কখনো তার কর্ম দিয়ে মৃত্যুকেও ছাড়িয়ে যায়। আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা সেই চারজন সেই অচেনা পৃথিবীর প্রতিনিধি যারা তাদের আয়ু দিয়ে বাচে না, বাচে কর্ম দিয়ে। কখনো বিপ্লবী হয়ে, কখনো মানবতার উষ্ণ স্পর্শ হয়ে আবার কখনো গর্ভধারিনী রূপে নতুন নির্মাণের শিল্পকার হয়ে। প্রিয় উক্তি - পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না চাইলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদিপ বলেছিল, বাঙ্গালী মল মুত্র এবং বীর্য ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে জানে না। - পুরুষ নতুন প্রজন্ম লালন করতে পারে, বীজ বপণ করতে পারে কিন্তু নির্মাণ করতে পারে না।
Was this review helpful to you?
or
অসম অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, যার একজন মেয়ে। অবশ্য সে নিজেকে ঠিক মেয়ে দাবি করে না, বলে সে একজন মানুষ। তাদের চারজনের মধ্যে মিল একটাই, তারা চারজনই প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। আর একটাই লক্ষ্য সামনে নিয়ে তারা কাজে নামতে যাচ্ছে। প্রথমেই একটু আলাপ করিয়ে দেই ওদের সাথে।।। জয়িতা- রামানন্দ রায় আর সীতা রায়ের একমাত্র সন্তান। মাঝারি ফার্ম থেকে তিনধাপ সামলে এখন যে অবস্থানে আছেন রামানন্দ তাতে পৌছনের জন্য কলকাতার এলিট শ্রেণী সমানে দৌড়ে যাচেছ। সীতা রায় সুন্দরী, শরীরটাকে কেয়ারি করা ফুলের মত সাজিয়ে রেখে দিনরাত ক্লাব-আড্ডা-পার্টি করে যাচ্ছেন। তাদের মেয়ে হিসেবে জয়িতা নিতান্তই বেমানান। সুদীপ- বাবা হাইকোর্টের নামজাদা উকিল অবনী তালুকদার। মা বহুদিন ধরে বিছানায় শোয়া। এ বাড়িতে একমাত্র মায়ের সাথেই সুদীপের কিছুটা টান আছে। অসৎ বাবার সাথে তেমন দেখা সাক্ষাতও হয়না। আনন্দ- মা আছেন শুধু। ডায়মন্ডহারবারের বাড়িতে থাকেন। বাবা মারা যাবার পর শক্ত হাতে একাই মানুষ করেছেন আনন্দকে। গ্রামের স্কুলে পড়াচ্ছেন এখন। কল্যাণ- নিতান্তই ছাপোষা পরিবারের সন্তান। দুই দাদা-বৌদি, ছোট ভাই আর বাবা-মাকে নিয়ে সংসার। অভাবের সংসারে কল্যাণের একমাত্র সাধ বড় হোটেলে একদিন পেট ভরে খাবার। চারটি আলাদা আলাদা পরিবেশে বেড়ে ওঠা চার বন্ধু একটি ব্যতিক্রমী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে প্রতিজ্ঞা করে সমাজের বিভিন্ন অসংগতিগুলো সকলের কাছে তুলে ধরার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। প্রথমে ডায়মন্ডহারবারের মধুযামিমীকেন্দ্র প্যারাডাইস, পরে একটা জাল ওষুধের কারখানায় সফলভাবে অপারেশন চালায়। পরে রেসকোর্সে অপারেশন চালানোর কথা থাকলেও নিরাপত্তার প্রশ্নে পিছিয়ে আসে। এই পর্যায়ে পালাতে হয় তাদের কারণ পুলিশের কাছে পরিচয় প্রকাশ হয়ে যায়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে হিমালয়ের কোলে প্রত্যন্ত গ্রামে আশ্রয় নেয় সবাই। ঈশ্বরও যেন অভিশপ্ত করে রেখেছেন এই পাহাড়ী গ্রামের মানুষগুলোকে। কোন ফসল সহজে ফলে না, সুপেয় পানি নেই, এমন অবস্থায় মানুষগুলো বেচেঁ আছে যে দেখলেও কস্ট হয়। চার বন্ধু ঠিক করে এখানেই এদের মাঝেই শিক্ষা সভ্যতার আলো ছড়িয়ে দেবে তারা। ওরা কি পারবে যে কাজ শুরু করেছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে? পেছনে লেগে থাকা আইনের রক্ষকদের হাত থেকে কি করে বাঁচবে ওরা? জয়িতা কি খুজেঁ পাবে নারী জীবনের মূল সার্থকতা? আমার কথা : উপন্যাসটা শুরুর আগে ভেবেছিলাম এই গর্ভধারিণী মানে মা মাটি আর এই দেশ। কিন্তু শেষটায় আমি একটু হতাশ হয়েছি বলা যায়। তাই উপন্যাস ভাল লাগে নি তা না। ভাল লেগেছে। শুধু মাত্রাটা একটু কম। তবে একদম শেষে আমি নিজেও খুব আপ্লুত হয়েছি জয়িতার আচরণে। এমনটাই হবার দরকার ছিল। উপন্যাসিক সুন্দর একটা সমাপ্তি টেনেছেন। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের পুলিশের দ্রুততা আর কর্মদক্ষতায় আমি মুগ্ধ। এত তাড়াতাড়ি তারা কি করে সব খবর পেয়ে গেলেন এটাই ভাবার বিষয়। মনে হচ্ছিল কোনভাবে তাদের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য ছিল এই কর্মদক্ষতার। মোটের উপর সুপার কপ মনে হয়েছে আমার। আহা এমনটা যদি এযুগেও থাকতো। একটু আক্ষেপ করছি আরকি। আনন্দের মায়ের চরিত্রটা আর জয়িতার বাবাকে অসম্ভব ভাল লেগেছে আমার। আর সুদীপের বাবা আর জয়িতার মাকে করুণা করতে ইচ্ছে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভাল ছিল যাত্রাটা। পাহাড়ী জীবনের কস্ট, সংগ্রাম, রীতিনীতি অনেকটা উঠে এসেছে এ লেখায়। যা খুব মর্মস্পর্শী ছিল। সবাই আমন্ত্রণ।।। হ্যাপি রিডিং।।।
Was this review helpful to you?
or
আপনারা বইয়ের দামগুলো দিন দিন আকাশে তুলে ফেলছেন এক বাংলাদেশের পেয়াজ আর দুই আপনাদের বই দুইটাই এখন সমান পাল্লাপাল্লি দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে
Was this review helpful to you?
or
সঙ্গত কারণেই বইটি পড়ার সময় আমার বারবার এই চিন্তা আসছিলো যে, বইটির নাম গর্ভধারিণী কেন? এই বিপ্লবী চিন্তাধারার গল্পের নাম গর্ভধারিণী কীভাবে হয়? আমার এই প্রশ্নের জবাব পেতে বইয়ের শেষ পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আপনাদের জানার ইচ্ছা থাকলে বইটি পড়ে ফেলতে পারেন। এতটুকু বলতে পারি ভালো সময় যাবে।
Was this review helpful to you?
or
ভিন্ন ধরনের পরিবেশে বড় হয়ে উঠা চার বন্ধু জয়িতা, সুদীপ, আনন্দ, কল্যাণ। তিন ছেলের মাঝে জয়িতা একা একটি মেয়ে। কিন্তু নিজেকে কখনো মেয়ে বলে মনে করে না জয়িতা। তার কাছে নিজের সবচেয়ে বড় পরিচয়, সে একজন মানুষ। এরা চারজন খুব ভালো বন্ধু। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র চারজনই। জয়িতা তার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। তার বাবা রামানন্দ রায় এবং মা সীতা রায়। রামানন্দ রায় সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের একজন। আর মা সীতা রায় একজন ভীষণ সুন্দরী মহিলা। যিনি সারা দিনরাত ক্লাব, পার্টি করে বেড়ানো খুব বেশি পচ্ছন্দ করেন। মেয়েরা সাধারণত মায়ের মতো হয়। মা যেভাবে চলে মেয়েরাও নাকি তেমন ভাবেই চলে। কথাটাকে জয়িতা ভুল প্রমাণ করলো। কারণ জয়িতা তার এই বিত্তশালী পরিবারে একদমই বেমানান। সুদীপ ছেলেটিও তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা অবনী তালুকদার শহরের একজন নামকরা উকিল। সুদীপের মা বহুদিন ধরেই বিছানায় শোয়া। সুদীপের সাথে তার বাবার সম্পর্ক তেমন ভালো না। মায়ের প্রতিই যা একটু টান এছাড়া বাবার সাথে তার ঠিকমতো চোখের দেখাটাও হয় না। আনন্দ ছেলেটার বাবা নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর মা এই ছেলেটিকে বহু কষ্টে বড় করেছেন। কল্যাণের পরিবারে আছে বাবা, মা, দুই দাদা, বৌদি। অন্য তিন বন্ধুদের থেকে তার পরিবার বেশ নিম্নবিত্ত। অভাবের এই সংসারে ঠিক মতো খাওয়া হয় না কল্যাণের। তাইতো ওর স্বপ্ন খুব বড় একটা হোটেলে একদিন পেটপুরে খাবে। পরিবারের অবস্থা যার যেমনই হোক, আর্থিক অবস্থানের দিকে তাদের মিল না থাকলেও মিল আছে তাদের স্বপ্নে। এই একটা জায়গায় তারা ঐক্যবদ্ধ। সমাজের বিভিন্ন অসংগতিমূলক কাজ দূর করে সমাজের মানুষদের সচেতন করার এক বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নেয়। প্রথম অভিযান চালায় ডায়মন্ডহারবারের এক ক্লাবে। তারপর দ্বিতীয় অভিযান হয় এক ওষুধ কারখানায়। নকল ওষুধ তৈরী হতো এখানে। এরপর তৃতীয় আরেকটি অভিযান চালানোর কথা থাকলেও নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার কথা ভেবেই পিছনে সরে আসে। কারণ ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে তাদের পরিচয় চলে যায়। তাহলে এখন কি হবে এই চার তরুণের? পুলিশ কি ওদের ধরে ফেলবে? যেই স্বপ্ন পূরণের অঙ্গিকারে তারা নেমেছিলো সেই স্বপ্ন কি পূরণ হবে আদৌ???? সব প্রশ্নের উত্তর এই বইয়ে পাওয়া যাবে