User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রূপকল্পের কবি ্ও কবিতা আয়শা ঝর্না কবি ও গল্পকার হোর্হে লুই বোর্হেস যখন বলেন কবিতা ও গল্প আলাদা বলে কিছু নেই কেবল ইমাজিনেশনই পারে গল্প আর কবিতাকে আলাদা করতে তখন এক ভিন্ন ধারার কবিতার কথা আমাদের মনে আসে যেখানে মৃত্যু ছায়া ফেলে রাখে জীবনের উপর। রূপকের ভেতর জন্ম থেকে জন্মান্তর ঘটতে থাকে কবির। আর আমারা সন্ধান পাই এক মেটাফিজিক্যাল কাব্য জগতের। এক সত্ত্বার ভেতর আরেক জীবিত সত্ত্বা তার কাব্য জগতকে করে তোলে ধোঁয়াসাচ্ছন্ন যেন এক বর্ণময় অর্ধচেতন বিশ্বে কবির বয়ে চলা। রায়হান রাইনের কাব্যগ্রন্থ তুমি ও সবুজ ঘোড়া’ এ রকমই এক কবিতার সমাহার যা নব্বই দশকের কবিতায় এনে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। সম্পূর্ন এক ভিন্ন কাব্যজগতের সন্ধান পাই আমারা তার কবিতায় যেখানে কবিতা শুধু ইমেজ কিংবা লিরিক নয় কবিতার আছে গল্পগাথা, কথোপকথন আর দার্শনিক ভাবনার সাথে নিজের কাব্যানুভ’তির বোঝাপড়া। তার কবিতায় ঐতিহ্য আর অনুভূতি জন্ম নেয় উপকথায়। কবি যেন গল্প বলেন পাঠকের সাথে স্বত:স্ফূর্ত ধারায়- আপেল কাহিনীতে, তারপর ঘটে কি যে যাদুর ব্যাপার! বালক খরগোশ হয়ে দৌড় দেয় নালিতার বনে বাগান-প্রহরী তাকে শিকারী কুকুর হয়ে তাড়া করে আসে বালক শফরী হয়ে ঝাঁপ দেয় জলে,” এইভাবে কবি নিজের রূপান্তর ঘটাতে থাকেন কখনো পাখি, কখনো শফরী-এই রূপান্তর অনন্তকালের আর সেইসাথে পৃথিবীর লাল গোধূলীবেলায় নিজেকে খুজে বেড়ান। তার কবিতায় নতুন নতুন শব্দবন্ধ খুজে প্ওয়া যায় যা অদ্ভুত এক কাব্যনুভ’তির জন্ম দেয়। একটা কবিতাতেই তার অনেক নতুন শব্দযোজনা ও রূপকল্প কবিতাকে করে তোলে শক্তিশালী আর সেই কাঠামোর ভেতর থাকে গীতময় ফল্গুধারা যেখানে পাঠককে হোঁচট খেতে হয় না। আমরা বাতাসের ঘরে প্রত্যহ দেখি অলৌকিক ডানার ক’জন দেবদুত ঘোরাফেরা করে।’ তার নিজস্ব কিছু ইমেজ আছে যা কবিতার ভেতর ঘোরাফেরা যেমন দেবদূত, মৃত্যু, বিধুর চেতনা, শাদা ঘোড়া কিংবা করূণ এক দেবতা।--যা এক কল্পময় জগতের আখ্যানভাগ বর্ননা করে আর লাইনের পর লাইনের গ্রন্থি টেনে নেয় পাঠককে মগ্ন চেতনায়। পাঠক ডুব দেয় সেই কবি চেতনায়- আমরা শীতবাতাসের বিধুর চেতনা নিয়ে রূদ্ধবাক দাড়িয়ে থাকলাম বাগানের কিনারে, হঠাৎ তিনি উঠে দাড়াবেন এই দৃশ্য চোখে দেখবার অপেক্ষায়।” তার কবিতা যেন এক ধরনের যেন কোনো গলপউপমা। এতে করে কবিতা অনেক সময় গোলক ধাঁধার মতো মনে হতে পারে। পাঠশেষে পাঠক যেন ঘূর্ণাবর্তে খাবি খান। নির্দিষ্ট কোন ইমজে কিংবা লাইন মনে দাগ কাটতে পারে না তবে পুরো কবিতাটাই যেন বারবার পড়তে হয় যেন এক কুহক। তবে 'সাপ’ কবিতাটি এখানে ব্যতিক্রম। এই কবিতাটি বেশ সাবলিল আর আঁটেসাঁটো তার চল- শকুন্ত তোমাকে বলা যায় আমার মনের চাদ নিভে ক্রমে লাল হলে শরীরে অদেখা এক সুক্ষ দেহ নড়ে- কোন নিমরজনীতে আমার দেহেই তার জেগে ওঠে ফণা।’ .. শকুন্ত তোমাকে বলি, তোমার আঁচড় আছে, চঞ্চু আছে – এই আমাকে তোমার নখরে যদি কোনদিন গেঁথে নিতে পারো। এই কবিতাটিতে অদ্ভুত এক কল্পময় জগত কবি গড়ে তোলেন মিথ আর ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রনে। পাঠক আবিষ্ট হয়ে দেখে চেতনার ঘুম গাঢ় হলে মৃত্যুনাচ জেগে ওঠে আদিত্যমন্ডলে। 'হরিণী’ কবিতা একবোরেই ধোঁয়াসা যেন কবিতা হালকা কৃয়াশাময় জেগে ওঠা অরণ্যকথন। সে অরণ্যে নির্বিঘ্নে বনপথে কবি ঘুরছেন, খুঁজছেন জন্ম আর মৃত্যুর সমাধান- এখানে অশেষ জন্ম ও মৃত্যুর চক্র, অনন্তের ঝিরঝির বাতাস, কোথাও ক্রন্দন আর নাই। যে মৃত্যু নিরাময়ের তার দিকে বৃষ্টির রহস্য নিয়ে ছুটে আসে মেঘ, কোথাও বন্ধন নাই, পথ নাই তবু।’ অথবা- বৃষ্টিতে সবুজ হয়ে উঠছে ঘাস। ঘাসের শরীরে জন্ম নিচ্ছে শাদা দুধ। আমাদের বাসনার ধুলার ভেতর হেটে রাংতা ছড়ানো বিকালে কোড়া শিকারীরা আসে.. তবুও আমাদের ক্রোধের ধোয়ায় ক্রমশ: জেগে ওঠে সুউচ্চ পাহাড়, পাথুরে কাধে অসীমের নির্ভরতা নিয়ে।’ কিংবা 'আমি ও সাধু’, রামায়ন কথা’ কবিতা এক স্বপ্নময় স্বপ্ন অথবা বাস্তব অথবা অতিলৌকিক এক জগৎ এসে ভর করে। কবি নিজের সাথে কথোপকথেনে দ্বান্ধিক হয়ে ওঠেন- --বলো তবে, সিংহ ফিরে যাবে বোধ নিয়ে? সংসারে আসলে কার ভূমিকা যথার্থ? -পিপাসার্ত ঐ যে চাতক-শুধু কি করুণা?’ রামায়ন কথা’ কবিতাটিতে কবি রামায়নকে নতুন ফর্মে দেখতে চেয়েছেন, আর নিজের দেখা চারপাশের সে জগতকে নতুন রূপকল্পে দেখেন- ঐ দিকে তপোবন, যেখানে তমসা নদী ঘিরে আছে মেখলার মতো। অশথ্থের নীচে বসে ধ্যানযোগে দেখেন বাল্মিকী মুনি। মিথ ও বাংলা সাহিত্যো ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে তার ভাষা মরমী চেতনা নিয়ে জেগে ওঠে যেখানে প্রাণসংহার ঘটলেও পাঠক অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করেন নতুন আস্বাদে ভরা এক গতিময় ভাষার গাঁথুনি পাঠক যেন নিরুপায় তাকে টানে সম্পূর্ন কবিতারাশি, নাগেশ্বর কবিতায়- নাগেশ্বর গাছ তার পুষ্পকেশরে ক্রমশ: আটকে ফেলছে শীতের নিষ্ঠুর মনকে। এরই সঙ্গে সহজ সহমরণ হবে তার।’ এই কবিতার ভেতর আবিষ্কার করি এক বোর্হেসীয় জগৎ। এ কাব্যমন্ডলে শিশু ভগবান বসে থাকে ন্যাগ্রোথ ডালে আর পাতাশূন্য গাছের নীচে পাঠক্ও এসে দাঁড়ায় তার ভেতর খেলা করে কি এক ঘোর! এ যেন জন্ম মৃত্যুর এক অচিন্তনীয় কল্পময় বিভাময় জগৎ যা এক শক্তিমান কবির সন্ধান দেয়। রায়হান রাইনের পোক্ত জায়গাটি হোল তার নিজস্ব কল্পময় রূপময় অতিলৌকিক জগৎ আর বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যের প্রতি প্রগাঢ় আসক্তি, দার্শনিক বোধ স্বকয়িতায় ভাস্বর এক জ্বলজ্বলে কবিতাভুবন। তার কবিতা পাঠের পূর্বে পাঠকের পূর্বপ্রস্ততি থাকতে হয় তবে এতে কবিতার লালিত্য ক্ষুন্ন হয় না একটুও। রাখাল, উপকথা কিংবা বাক্যালাপ কবিতাগুলো বলা যায় একেবাওে ভিন্নস্বাদের কবিতা। এই কবিতাগুলোতেও তার মেটাফোর আর কবিতার গল্পভঙ্গির বুননে পাঠক মুগ্ধ হয়ে যেতে পারেন। 'বাক্যলাপ’ কবিতাটিতে কথপোকথন আর রূপকল্পের নিপুন বুনন আর দার্শনিক জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়ে কবি পাঠককে সঙ্গে নিয়ে এগুতে থাকেন আর তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। 'বাক্যালাপ’ কবিতায়- কী দেখতে পাচ্ছ ভেতরে? কাঠঠোকরাকে জিজ্ঞাসা করে কড়ইগাছ। কাঠ ঠোকরা গর্তের ভেতর থেকে তার মাথা বের করে জবাব দেয় একটা কটু স্বাদ পাচ্ছি। ভেতরের দিকটা রক্তিম আর শক্ত।’ কিংবা- ডাঙ্গায় মৃত্যু আছে জেনে কোনদিন নৌকা থেকে নামে না মাঝি, একদিন নদী বলে, আমার কাছে বৈঠা রেখে পিতামহের কবর দেখে আসো।’ অদ্ভুত এক বিষাদগ্রস্থতা কিংবা সিন্ধান্তহীনতা কাজ করে পাঠকের ভেতরে। এই কাঠঠোকরা ও কড়ইগাছ, ধর্মপুত্র ও কুকুর, নদী ও মাঝি, কেউটে ও চাঁদ, আলো ও ছায়ার এই যে নিরন্তর রূপান্তর আর পালিয়ে বেড়ানো এক মানবাত্মার জিজ্ঞাসা মেলে ধরে প্রকৃতির মাঝে কবিতার মাঝে-সমস্ত জিবাত্মার মাঝেই ঈশ্বরের উপস্থিতি টের পাই আমরা, ব্স্তুজগৎ আর জীবাত্মার সংঘর্ষের স্বরূপ খুজে পাই তার কবিতায়। তার ছায়াঘর, সেইবিকালে, দ্রাক্ষাবীজ, উপকথার বাঘ, অবলোকিতেশ্বর,, আনন্দম, এই খেলাঘর, মিত্রভেদ, সম্পুর্ন জ্ঞান, দেহ, অন্ধ লোকটা, রাজ ইচ্ছা-প্রতিটি কবিতাই এক অনন্যস্বাদের কবিতা যেন রূপকথার ঝাপি কবি নিজেই মুগ্ধ হয়ে ডুব দিয়েছেন সেই রূপময় বিকেলে দলছুট কিশোর হয়ে কিন্তু হঠাৎ সে বিষমের মুখোমুখি মৃত লোকদের আত্মা তার চারপাশে ঘোরে নিথর বাতাস হয়ে। মৃত্যু যেন জীবনেরই আরেক নাম পরস্পরকে বুনে চলে। দ্রাক্ষাবীজ’ কবিতায়- আমাদের সেসব মৃত্যুর উপর তোমরা উচু গম্বুজের মতো মাথা খাঁড়া করে দাড়্ও, তারও পাশে আশ্বিনের আকাশের বিস্তার। তাকে ঘিরে দক্ষিনের হু হু বাতাস আসে আর এই রাত্রিতে বাতাসের রূপে যেন মূর্ত হয় বস্তুবিশ্বের প্রাণের আকাঙ্খা।’ রায়হান রাইনের কাব্যজগৎ অনেকটা মায়াজাল বিস্তারী অব্যাখ্যাত এক দূর্মরবোধ নিয়ে কবিতা খোঁজে বস্তজগতের রহস্যকে। তুমি ও সবুজ ঘোড়া-র প্রতিটি কবিতাই পাঠককে মনোযোগী হতে দাবী রাখে। সেইসাথে অদ্ভুত এক অতিন্দ্রীয় জগতের সন্ধান পাই আমরা তার জাগরণ কাহিনী কবিতায়। 'নিত্যধাম’ কবিতা তার অন্যসব কবিতা থেকে আলাদা মনে হয়েছে আমার। এখানে কবি প্রজ্ঞার শাষনমুক্ত, ঝরঝরে.. বৃষ্টি এলে ডুমুরের গাছ হয়ে ভিজলাম – সে এসে ধুয়ে দিলো মহুয়ার গন্ধ, তারপর, আমাকে উড়িয়ে নিলো দখিনা বাতাস। এই কবিতাটির ইনার মিউজিক পাঠককে আবিষ্ট করে রাখে। রূপ, রঙ আর সুরের কম্পোজিশনে কবিতা পায় প্রানের মুক্তি কবি এখানে স্বত:সফূর্ত এখানেই সে হয়ে ওঠে অনন্য সত্তার কবি যা তাকে তার দশকের কবিদের থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করবে এইরকমই প্রতিয়মান হয়। রায়হান রাইন গল্প্ও লেখেন। তার প্রথম বই গল্পের ফলে কবিতায়্ও আমরা সেই গল্পভঙ্গি টের পাই। তার কবিতা নিরিক্ষাধর্মী ফলে তা সহজে পাঠকপ্রিয়তা না পেলেও এই কতিতার রয়েছে দীর্ঘযাত্রা। মননশীল, নতুন উপমানির্ভর শব্দগাথুনি, আর দার্শনিক বিভাময় কাব্যজগৎ তার কবিতাকে স্বকীযতায় করে তোলে ভাস্বর। এছাড়া তার কবিতার রূপকল্প একবারেই বাঙালীর নিজ ঘরানা ও ঐতিহ্য থেকে নেয়া। দার্র্শনিক ভাবনা, মৃত্যুচেতনা, জন্মমৃত্যু রহস্যবোধ কবিকে তাড়িয়ে ফেরে এতে করে পাঠক আড়ষ্টবোধ করতে পারেন এবং পাঠকের সাবলীল চিন্তা ব্যহত হয় কবি সেখানে নিয়ন্তার মতো নিয়ন্ত্রন করে পাঠকের বোধকে ফলে কবিতার স্বত:স্ফুর্ততা ব্যহত হয়। শুধু কবিতা নয়, খুব সুন্দর মলাট আর নান্দনিক প্রচ্ছদের কারণেও বইটি কাছে টানবে পাঠককে। প্রকাশিত: বইয়ের জগত, ২০১১।