User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গল্পের শুরু হয় ১৯২৩ সালে, জার্মানিতে। ওয়ারডেনব্রাক নামের একটি ছোট্ট শহরে। সে সময় মুদ্রাস্ফীতির দারুণ অভিশাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জার্মানির জনগণ। এক ডলারের দাম হয়েছে ছত্রিশ হাজার মার্ক, আর সে দাম বেড়েই চলেছে প্রত্যেক ঘন্টায়! গল্পের প্রধান চরিত্র লাডউইগ বডমার নামের এক তরুণ, সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করেছে, বয়স তার বিশের কোঠায়। লাডউইগ কাজ করে এক কবরফলক তৈরির দোকানে, দোকানের মালিক তার অভিন্নহৃদয় বন্ধু জর্জ। এনিয়ে সে হীনমন্যতায়ও ভোগে, সে মনে করে মানুষের মৃত্যুর সুযোগ নেয় তারা। লাডুইগ ব্যবসায়ী হলেও তার মনটা নরম, গোপনে সে কবিতা লেখে, আর গির্জার উন্মাদ আশ্রমে রবিবার অরগান বাজায়, কারণ রবিবার গির্জায় ভালো নাস্তা পাওয়া যায়! এভাবেই শুরু হয় এরিক মারিয়া রেমার্কের উপন্যাস “দ্য ব্ল্যাক অবেলিস্ক”। রেমার্কের লেখা প্রতিটি উপন্যাসই ক্লাসিকের মর্যাদাপ্রাপ্ত। যুদ্ধের ময়দানের প্রত্যক্ষ চিত্র, সৈনিকদের মানসিকতা, দুঃখ, আনন্দ, ভালবাসা- সবই চমৎকার উঠে আসে তাঁর কলমে। রেমার্ক নিজে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ছিলেন, যুদ্ধকে দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে, সঠিকভাবে। সেভাবেই তিনি তাঁর গল্পগুলো তৈরি করেন। যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে তাঁর মত কাজ করেছেন খুব কম শিল্পীই। “দ্য ব্ল্যাক অবেলিস্ক”-ও তাঁর এ ধারার এক অনন্য সৃষ্টি হয়ে থাকবে। উন্মাদ আশ্রমের ডাক্তার ওয়ারনিক এর সাথে ভালো বন্ধুত্ব আছে লাডউইগের, ওয়ারনিক তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন জেনেভিব টরোভান নামে এক তরুণীর সাথে। জেনেভিব সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, সে নিজেকে ‘ইসাবেল’ মনে করে। লাডুইগকে সে ডাকে ‘রুডলফ’ নামে। ধীরে ধীরে লাডুইগ রুডলফ হয়ে ‘ইসাবেল’ এর প্রেমে পড়ে যায়... রেমার্ক খুব নিপুণতার সাথে এ উপন্যাসে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের প্রকৃত অবস্থা বলেছেন। তারা এই সমাজের সাথে মিশে যেতে পারেনা। স্বাভাবিক জীবনকে তারা ভয় পায়, আবার ঘৃণাও করে। সবচে বেশি দুর্ভোগ থাকে আহত সৈন্যদের ভাগ্যে। সরকার তাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করেছে ঠিকই, কিন্তু মূল্যস্ফীতির অভিশাপে দুতিনদিন পর সে টাকা যখন তাদের হাতে আসে তখন তার আর কোন মূল্যই থাকে না। ১৯২৩ সালের জার্মানি তখন তাদের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আর এরই মাঝে জার্মানদের চোখে নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে আবির্ভূত হন এক নেতা, অ্যাডলফ হিটলার। জনে জনে জাতীয়তাবাদীরা তার ভক্ত হতে থাকে। লাডউইগের ভাগ্যের পরিবর্তন হল হঠাৎ-ই। বার্লিনের এক পত্রিকা অফিসে ওর চাকরি হয়ে যায়। লাডউইগ বডমার চলে যায় ওয়ারডেনব্রাক ছেড়ে, ওর প্রিয় বন্ধু জর্জকে ছেড়ে, ইসাবেলকে ছেড়ে। ইসাবেল অবশ্য ততদিনে আবার জেনেভিব হয়ে গিয়েছে। ও লাডউইগকে চিনতেও ও পারেনা। পত্রিকা অফিসে ওর বেশ উন্নতি হয়, আর এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের পর, লাডউইগ আবার যায় ওর শহরে, ওয়ার্ডেনব্রাকে। ওয়ার্ডেনব্রাকে ও ফেরে দীর্ঘ সতের বছর পর... পরিচিত মুখগুলোর কোনটাই আর ওর চোখে পড়ে না। ওয়ার্ডেনব্রাক এখন যুদ্ধে বিদ্ধস্ত, মৃত এক শহর। ও জানতে পারে ওর প্রাণের বন্ধু জর্জ যুদ্ধে মারা পড়েছে নাৎসিদের হাতে, পাগলাগারদের ডাক্তার ওয়ারনিক নিখোঁজ, জেনেভিব ওরফে ইসাবেলের খোঁজ কেউ জানে না। ও আবিষ্কার করে ওয়ার্ডেনব্রাকের কিছুই আর আগের মত নেই। শুধু একটুও বদলায়নি কবরস্থানটা। ও শুধু চিনতে পারে এক কালো বিশাল সমাধিফলক, অনেকদিন আগে ও আর জর্জ মিলে বিক্রি করেছিল ওটা। ওই ব্ল্যাক অবিলিস্কই মাথা উঁচু করে থেকে মৃতদের শহর ওয়ার্ডেনব্রাকের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে যেন... বইটা আমি পড়েছি সেবার সংস্করণে, শেখ আব্দুল হাকিমের অনুবাদে। আব্দুল হাকিম যথারীতি ভালো অনুবাদ করেছেন। অনেকদিন মনে থাকবে এরিক মারিয়া রেমার্কের “দ্য ব্ল্যাক অবেলিস্ক”, যুদ্ধের পরের যুদ্ধের গল্প...