User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ যেন সময়ের দলিল বাসায় রাখা পত্রিকার পাতা থেকে জানলাম বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা ডায়েরির সংকলন বাজারে আসছে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' নামে। সপ্তাহান্তে দৌড়ালাম শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের এক ঐতিহ্যবাহী বইয়ের দোকানে। যেয়েই বইটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে শুরু করলাম। বইয়ের মধ্যে ঐতিহাসিক কিছু ছবি ছিলো। এরপর বইয়ের দামটা দেখে চুপসে গেলাম কারণ পকেটে অত টাকা নেই। মনের মধ্যে একটা প্রচন্ড আক্ষেপ তৈরি হলো। বইটা তাকে রেখে দোকানিকে বললাম, এই বই সরকারিভাবে প্রত্যেক পরিবারে এক কপি করে বিনামূল্যে বিতরণ করা উচিৎ। দোকানি আমার কথা শুনে এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন যেন আমি এইমাত্র টুপ করে খসে পড়েছি মঙ্গল গ্রহ থেকে। বইটা কিনতে না পেরে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাসায় ফিরে আসলাম। এরপর হয়তোবা মনের ভেতরের রাগ থেকেই বইটা আর সংগ্রহ করা হয়ে ওঠেনি। অবশেষে প্রবাসে আসার পর এক বড় ভাইয়ের আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। তবুও বইটা পড়া হয়নি। অবশেষে এইবার পড়া শুরু করলাম জাতীয় শোক দিবসের পর। যেই শুরু করলাম এরপর একটানা পড়ে শেষ করলাম। প্রবাসের যান্ত্রিক জীবনে বই পড়ার সময় বের করা মোটামুটি অসম্ভব। তবুও আমি ট্রেনে, অফিসের কম্পিউটারে পিডিএফ আর বাসার অবসর সময়টুকু মিলিয়ে বইটা পড়লাম। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্যান্য লেখকদের লেখা পড়েছি তন্মধ্যে এ বি এম মুসার লেখা 'মুজিব ভাই' বইটা মনে দাগ কেটেছিল। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শুনেছি কত না গল্প। এর বাইরেও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় উনাকে নিয়ে পড়েছি ছোটখাটো অনেক লেখাই। কিন্তু উনার নিজের হাতে লেখা একটা বই সেইসব আনন্দ উত্তেজনাকে ছাপিয়ে গেছে। বইয়ের শুরুতে শেখ হাসিনার লেখা একটা ভূমিকা আছে। সেখানে তিনি লিখেছেন - "আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময়গুলো কারাবন্দী হিসেবেই কাটাতে হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়েই তাঁর জীবনে বারবার এই দুঃসহ নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে। তবে তিনি কখনও আপোষ করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণউ ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তাঁর মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন - এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত।" এরপর আছে এই ডায়েরি হাতে পাওয়ার গল্প। এবং হাতে পাওয়ার পর উনাদের দুবোনের মনের অবস্থার বর্ণনা। আরও আছে পাঠোদ্ধারের গল্প। উনি আরও লিখেছেন - "এই লেখাগুলো বারবার পড়লেও শেষ হয় না। আবার পড়তে ইচ্ছা হয়। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, একজন মানুষ কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, জীবনের ঝুঁকি নিতে পারেন, জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে পারেন তা জানা যায়। জীবনের সুখ-স্বস্তি, আরাম, আয়েশ, মোহ, ধনদৌলত, সবকিছু ত্যাগ করার এই মহান ব্যক্তিত্বকে খুঁজে পাওয়া যায়।... তথ্যবহুল লেখায় পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা চক্রান্ত ইত্যাদি বিভিন্ন ঘটনা ও ইতিহাস জানার সুযোগ হবে।" এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন। বইয়ের শেষে সংক্ষিপ্ত আকারে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে যেটা লেখকের লেখা না। বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতের লেখাটার তীব্র স্রোতে ভেসে এসে পাঠককে তাই ধাক্কা খেতে হয়। এমন পরোপকারী, জনদরদি একজন মানুষের এমন পরিনতির কথা পড়ে। আমি বই পড়তে বসলে হাতের কাছে কয়েক রঙের হাইলাইটার রাখি চুম্বক অংশগুলো মার্ক করার জন্য। এই বইটা পড়ার সময় এমন হয়েছে যে প্রায় প্রতিটা পাতাতেই আমি কিছু না কিছু লাইন মার্ক করেছি। কারণ এই বইটা শুধুই বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী না বরং সময়ের দলিল। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালে যখন এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন চলছে। ব্রিটিশদের তাড়িয়ে এরপর ক্ষমতায় আসে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু শুরু থেকেই তারা আমলা নির্ভর একটা জনবিচ্ছিন্ন সরকার গঠন করে। এরপর তারা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে যায় যে তারা একসময় জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেটা আর খেয়াল করেনি। যখন আওয়ামীলীগ একমাত্র বিরোধীদল হিসেবে আবির্ভুত হলো তখন আবার জোরপূর্বক তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র একই সময়ে জন্ম নিলেও পাকিস্তান তার লক্ষ্য থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছিলো। দীর্ঘ সময় পার করেও তারা একটা শাসনতন্ত্র দেশের জনগণকে দিতে পারেনি যার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা হবে। বইয়ের শুরুটা খুবই আগ্রহোদ্দীপক। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় - "বন্ধুবান্ধবরা বলে, তোমার জীবনী লেখ। সহকর্মীরা বলে, রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী। বললাম, লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।...হঠাৎ মনে হল লিখতে ভালো না পারলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি? সময় তো কিছু কাটবে। বই ও কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে চোখ দুইটাও ব্যাথা হয়ে যায়। তাই খাতাটা নিয়ে লেখা শুরু করলাম।... আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু-আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।" পুরো বইটার সবচেয়ে উপভোগ্য দিক হলো বইটা প্রথম পুরুষে লেখা। প্রথম পুরুষে লেখা যেকোন বই দ্রুতই পাঠককে তার বইয়ের পাতায় একতাবদ্ধ করে ফেলে। পাঠক দিব্যদৃষ্টিতে সকল ঘটনা নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখেন। আমিও এই বই পড়তে যেয়ে বঙ্গবন্ধুর একেবারে শৈশব থেকে শুরু করে সমস্ত ঘটনাবলীই যেন দেখতে পেলাম। এছাড়াও বইতে লেখক অনেক ঘটনা নিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যেটা ভবিষ্যতে এসে ফলে গিয়েছে। এতেকরে লেখকের দূরদৃষ্টির পরিচয়ও পাওয়া যায়। এছাড়াও আমাদের মানসিকতা গঠনের বিষয়টাকেও দেখেছেন খুবই গভীর দৃষ্টিতে। বাংলাদেশিদের চরিত্রের এমন অনেক বিষয়ে লেখক আলোকপাত করেছেন যাতেকরে সহজেই আমাদের ব্যক্তিগত এবং জাতিগত চরিত্রের মনস্ত্বাত্বিক বিশ্লেষণ সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব কর্তব্য কেমন হতে হবে সেই বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও সরকারি আমলা এবং মিলিটারির কর্মপরিধি কেমন হবে সেটাও বুঝতে পারা যায়। আর এর অন্যথা হলে দেশ ও জাতির কপালে কি ঘটতে পারে সেই বিষয়েও লেখক আলোকপাত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তারিখে। তাঁর আব্বার নাম শেখ লুৎফর রহমান। এরপর লেখাপড়ার পাঠ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন - "আমার ছোট দাদা খান সাহেব শেখ আব্দুর রশিদ একটা এম ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের অঞ্চলের মধ্যে এই একটা মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল, পরে এটা হাইস্কুল হয়, সেটি আজও আছে। আমি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ালেখা করে আমার আব্বার কাছে চলে যাই এবং চতুর্থ শ্রেণীতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হই।... ১৯৩৪ সালে আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে।... ১৯৩৬ সালে আমার চক্ষু খারাপ হয়ে পড়ে। গ্লুকোমা নাম একটা রোগ হয়। ডাক্তারদের পরামর্শে আব্বা আমাকে নিয়ে আবার কলকাতায় রওয়ানা হলেন চিকিৎসার জন্য।...দশ দিনের মধ্যে দুইটা চক্ষুই অপারেশন করা হল। আমি ভাল হলাম। তবে কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হবে, চশমা পরতে হবে। তাই ১৯৩৬ সাল থেকেই চশমা পরছি।... ১৯৩৭ সালে আবার আমি লেখাপড়া শুরু করলাম।" বঙ্গবন্ধুর জীবন বয়ে চলেছে খরস্রোতা নদীর মতো। সেই নদী যেয়ে মিশেছে অন্য অনেক নদীর সাথে। কখনও তারা বয়ে চলেছে একসাথে আবার কখনও বা আলাদা পথে। সেভাবেই বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের এবং মাওলানা ভাসানীর মতো ব্যক্তিত্বের। উনারা সবাই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর মাথার উপর ছায়া হয়েছিল তাঁর বাবা। হয়তোবা পরিবারের বড় সন্তান হওয়াতেই বঙ্গবন্ধু তাঁর বাবার আদর কিছুটা বেশি পেয়েছিলেন। দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর বাবা অনেকবার সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর মুখ দর্শনের পরপরই। বঙ্গবন্ধুও তাঁর বাবাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসতেন। সকল প্রকার আবদারের কেন্দ্র ছিলেন অন্তঃস্থলবাবা। বঙ্গবন্ধুর বাবা বলেছিলেন - 'sincerity of purpose and honesty of purpose' থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না। আরেকদিন কথা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বাবা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলেছিলেন - "দেশের কাজ করছে, অন্যায় তো করছে না; যদি জেল খাটতে হয়, খাটবে; তাতে আমি দুঃখ পাবো না। জীবনটা নষ্ট নাও তো হতে পারে, আমি ওর কাজে বাধা দিব না। আমার মনে হয়, পাকিস্তান না আনতে পারলে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না।" বঙ্গবন্ধুর বাবা অনেক সময় তাঁর সাথে রাজনৈতিক আলাপ করে প্রশ্ন করতেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসতেন। আর বঙ্গবন্ধুও তাঁকে ত্যাগী নেতা হিসাবে অন্তরের অন্তঃস্থতল থেকে শ্রদ্ধা করতেন। এমন না যা শহীদ সাহেবের সাথে বঙ্গবন্ধুর কখনও মনোমালিন্য হয়নি কিন্তু সেটা সাময়িক। আসলে দুজনের মনের এবং নীতির মিল থাকলে ভুল বুঝাবুঝিগুলো হয় নিতান্তই সাময়িক। শহীদ সাহেবকে নিয়ে এই বইয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয়েছে। তাঁর পাকিস্তান আন্দোলন, পাকিস্তানের ঐক্যে নিজেকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া আবার পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে মন্ত্রিত্ব গ্রহণসহ অনেক বিষয় এসেছে প্রাসঙ্গিকভাবেই। বঙ্গবন্ধু বারবারই শহীদ সাহেবের ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় - "তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল অসীম। তাঁর সাধুতা, নীতি, কর্মশক্তি ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাইতেন।… অনেক শুনে আশ্চর্য হবেন, শহীদ সাহেবের কলকাতায় নিজের বাড়ি ছিল না। ৪০ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়ি, ভাড়া করা বাড়ি। তিনি করাচিতে তাঁর ভাইয়ের কাছে উঠলেন, কারণ তাঁর খাবার পয়সাও ছিল না।... বাংলাকে তিনি যে কতটা ভালবাসতেন তাঁর সাথে না মিশলে কেউ বুঝতে পারত না।... শহীদ সাহেব ছিলেন সাগরের মত উদার। যে কোন লোক একবার তাঁর কাছে যেয়ে হাজির হয়েছে, সে যত বড় অন্যায়ই করুক না কেন, তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।" এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে নানা বলে সম্বোধন করেছেন আর মাওলানা ভাসানীকে বলেছেন মাওলানা। এই বইটা পড়লে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক চরিত্রের মাত্রা স্পষ্ট হয়ে উঠে। বঙ্গবন্ধু একাধারে ছিলেন দুরন্ত আবার অন্যায় দেখলে প্রতিবাদী। একদিকে প্রকৃতিপ্রেমী আবার অন্যদিকে তাঁর হাস্যরসও ছিলো ঈর্ষণীয়। একবার দিল্লিতে একটা কনভেনশনে যোগ দিতে যেয়ে সেখানে ভ্রমণের সুযোগ পান। সেই সুযোগে দিল্লির সব দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শণ করেন। সেইসব জায়গার চমৎকার বর্ণনা আছে এই বইতে। তাজমহলের সৌন্দর্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন - "কি দেখলাম ভাষায় প্রকাশ আমি করতে পারবো না। ভাষার উপর আমার সে দখলও নাই। শুধু মনে হল, এও কি সত্য! কল্পনা যা করেছিলাম, তার চেয়ে যে এ অনেক সুন্দর এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ। তাজকে ভালোভাবে দেখতে হলে আসতে হবে সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যাবার সময়, চাঁদ যখন হেসে উঠবে তখন।... সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে দিয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারব না। দারোয়ান দরজা বন্ধ করার পূর্ব পর্যন্ত আমরা তাজমহলেই ছিলাম।" এছাড়াও এই বইয়ে বাঙালিদের চরিত্র নিয়ে আছে গূঢ় বিশ্লেষণ। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় - "আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল 'আমরা মুসলমান' আর একটা হল আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাস ঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, 'পরশ্রীকাতরতা'। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে 'পরশ্রীকাতর' বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে 'পরশ্রীকাতরতা'। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।... অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।" এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিষয়ে লিখেছেন - "সাধারণত দোষী ব্যক্তিরা গ্রেফতার বেশি হয় না। রাস্তার নিরীহ লোকই বেশি গ্রেফতার হয়। তাদের কাছে বসে বলি, দাঙ্গা করা উচিত না; যে কোন দোষ করে না তাকে হত্যা করা পাপ। মুসলমানরা কোন নিরপরাধীকে অত্যাচার করতে পারে না, আল্লাহ ও রসুল নিষেধ করে দিয়েছেন। হিন্দুদেরও আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তারাও মানুষ। হিন্দুস্তানের হিন্দুরা অন্যায় করবে বলে আমরাও অন্যায় করব-ইটা হতে পারে না।" বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। সেই বিষয়ে 'কারাগারের রোজনামচা' বইটা পড়ার পর লেখার ইচ্ছা আছে। কারাগারে বন্দি থাকা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন - "কারাগারের অন্ধকার কামরায় একাকী থাকা যে কি কষ্টের, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না।" এভাবে কারাগারে বন্দি থাকতে থাকতে তিনি পরিবার পরিজন থেকে বেশিরভাগ সময়ই বিচ্ছিন্ন থাকতেন। আবার কারাগারের বাইরে থাকলেও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারতেন না। পরিবারের মানুষদের সাথে বন্ধনটা কেমন হয়ে গিয়েছিলো তার একটা মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে এই বইতে। একটা ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় - "একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, হাচু আপা, হাচু আপা, আমি তোমার আব্বাকে একটু আব্বা বলি। আমি আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা। কামাল আমার কাছে আসতে চাইতো না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়।" বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম ধাপ ছিলো ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং কারাবরণ করেছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি ছিলো বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম টান। এই বইয়ে বঙ্গবন্ধু একদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে - "নদীতে বসে আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ভাটিয়ালি গান তাঁর নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গাইতেছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলিও যেন তাঁর গান শুনছে। তারই শিষ্য সোহরাব হোসেন ও বেডারউদ্দিন তাঁর নাম কিছুটা রেখেছিলেন। আমি আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম।" আব্বাসউদ্দিন সাহেব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন - "মুজিব বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলা রাষ্ট্রভাষা না হলে বাংলার কৃষ্টি, সভ্যতা সব শেষ হয়ে যাবে। আজ গানকে তুমি ভালবাস, এর মাধুর্য ও মর্যাদাও নষ্ট হয়ে যাবে। যা কিছু হোক, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতেই হবে।" বঙ্গবন্ধু আব্বাসউদ্দিন সাহেবকে কথা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তো আসলে ছিলেন বাংলার জনসাধারণের বন্ধু। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ তাকে ভালোবাসতেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ের একটা ঘটনা আমার মনে খুব দাগ কেটেছে। এই বই থেকে বঙ্গবন্ধুর জবানিতে লেখাটা হুবহু তুলে দিচ্ছি - "আমার মনে আছে খুবই গরিব বৃদ্ধ এক মহিলা কয়েক ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, শুনেছে এই পথে আমি যাব, আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বলল, বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমাকে একটু বসতে হবে। আমি তার হাত ধরেই তার বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সাথে, আমাকে মাটিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমার সামনে ধরে বলল, খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছুই নাই। আমার চোখে পানি এল। আমি দুধ একটু মুখে নিয়ে, সেই পয়সার সাথে আরও কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বললাম, তোমার দোয়া আমার জন্য যথেষ্ট, তোমার দোয়ার মূল্য টাকা দিয়ে শোধ করা যায় না। টাকা সে নিল না, আমার মাথায় মুখে হাত দিয়ে বলল, গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা। নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল, যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। সেইদিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারবো না।" বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের বিষয়টা সর্বজন বিদিত তাই আমি ইচ্ছে করেই সেদিকটা এড়িয়ে গেছি। এই বইটা পড়ে আমি যেন বঙ্গবন্ধুর সাথে সেই সময়ে পরিভ্রমণ করে আসলাম। এই বইয়ে বঙ্গবন্ধুর বেশকিছু দুর্লভ স্থিরচিত্র স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি আছে উনার হাতে লেখা ডায়েরির প্রতিলিপি। এটা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। কেমন ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির হাতের লেখা। বারবার ছুঁয়ে দেখেছি। পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই বাংলাদেশি হিসেবে জন্ম নেয়া প্রত্যেকের অবশ্য পাঠ্য এই বইটি। এই বই নিয়ে হোক অনেক পাঠ সমাবেশ। হোক আলোচনা। শুরুতে যে কথাটা বলেছিলাম সেখানে ফিরে আসি। সরকার অন্ততঃপক্ষে এই বইয়ের একটা করে কপি প্রতি পরিবারকে বিনামূল্যে দিয়ে পাঠে উৎসাহিত করতে পারে।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ লাগলো বইটা।
Was this review helpful to you?
or
Thank you
Was this review helpful to you?
or
khuuuub sundr
Was this review helpful to you?
or
Awesome
Was this review helpful to you?
or
ভালোই
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা, অসাধারণ!!
Was this review helpful to you?
or
Nice
Was this review helpful to you?
or
Interesting
Was this review helpful to you?
or
great
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ।।।
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
খুব ভালো!
Was this review helpful to you?
or
Very Good
Was this review helpful to you?
or
Excellent
Was this review helpful to you?
or
নাম: শামসে আরা ঈশিকা শ্রেণি: এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২১ প্রতিষ্ঠান: বীনাপাণি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ । বিষয় : বুক রিভিউ ই-মেইল : kasfiatabassum12 @gmail.com # sorone_ mohanayok_ book_ review _2021 অসমাপ্ত আত্মজীবনী: মৃত্যুঞ্জয়ীর মহা-উপাখ্যান "তোমার কৃত্য, চির সত্য অক্ষয় তোমার সৃষ্টি, তুমি এক শাণিত বর্শা, অগ্নিঝরা বৃষ্টি....... হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ তুমি, রক্তে চির অম্লান, হে, বঙ্গবীর! উদ্ধত শির শেখ মুজিবুর রহমান।" ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। এবডো-প্রোডো আইনের বেড়াজালে পড়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের কারা-প্রকোষ্ঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে অবস্থানকালে সহধর্মিণী রেণুর অনুরোধেই সূচনা করেছিলেন 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র যুগান্তকারী উত্থান। এরপর শৈশব থেকে শুরু করে কৈশোর আর যৌবনের রাজনৈতিক জীবনের উপাখ্যান খুব সহজ আর সাবলীল ভাষায় কাগজে চিত্রায়িত করেছেন তিনি। বীরদের জন্ম হয় ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে। আর, তারা ইতিহাস গড়ার অনুপ্রেরণা নেয় পূর্ববর্তী পুরুষদের কীর্তিময় অতীতের দ্বারা। ঠিক এভাবেই চমৎকার স্মরণশক্তি ও শেকড়ের প্রতি টানের পরিচয় দিয়েছেন বংশের ইতিহাস এবং নিজের বিস্তৃত জীবনে প্রিয় রেণুর আগমনের কথা লিখে। এরপর ক্রমেই কখনো সংক্ষিপ্ত কখনো বিস্তর বয়ানে উঠে আসলো তার ঘটনা ও স্মৃতিবহুল ছেলেবেলা, স্বদেশী আন্দোলন, সেবা ও ত্যাগের পথে প্রথম পদার্পণ, খেলাধুলা, রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে সাক্ষাৎ আর সহপাঠী মালেককে উদ্ধারে প্রথমবারের মতো সক্রিয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও জেল যাপন। বঙ্গবন্ধু যখন প্রথমবারের মতো জেলে গেলেন, তখন তার বয়স মাত্র ১৮ বছর। এরপর থেকে ক্রমেই আবির্ভূত হতে থাকে তাঁর জীবনের উত্থান-পতন। পাকিস্তান আন্দোলনের নবযাত্রা শুরু হয় আর এর সাথে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদ আর মিছিলের অনিঃশেষ যাত্রা। ক্রমেই নিষ্ঠা, কর্মস্পৃহা, একাগ্রতা, পরিশ্রম আর জনবান্ধব হিসেবে শহীদ সাহেবের স্নেহের মানুষে পরিণত হওয়ার ঘটনার সাথে সাথে উঠে এসেছে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের রাজনৈতিক জীবন আর ছাত্রদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার চমৎকার সব রোমাঞ্চকর ঘটনা। জীবন্ত ভাষায় উঠে এসেছে চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ের দুর্ভিক্ষ আর দাঙ্গায় মানুষের অজস্র প্রাণহানি, নানাবিধ করুণ ভোগান্তি আর হতাহতের ঘটনা। উঠে এসেছে মাদারীপুর, ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জ জুড়ে তার পাকিস্তান আন্দোলনকে জনগণের হৃদয়ে নিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। এরপর সসম্মানে তুলে এনেছেন বাংলার মুসলিম লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, তথা শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, খাজা নাজিমুদ্দিন আর আনোয়ার হোসেনদের পাকিস্তান গড়ার বুদ্ধিদীপ্ত রাজনীতি। লিখেছেন, চল্লিশের লাহোর প্রস্তাবের সাথে States এর 'es' এর ছোট্ট একটু পরিবর্তনের কথা, যা কি না বাংলা ও সেভেন সিস্টার্সের একীভূত হওয়ার স্বপ্ন বাতিল করে দিয়েছে। এরপর ছেচল্লিশের নির্বাচনে মুসলিম লীগের অভূতপূর্ব বিজয়। অতঃপর বঙ্গবন্ধুসহ আপামর জনতার স্বপ্নের পাকিস্তানের সৃষ্টি, যে স্বপ্ন ভেঙে যেতে বছরখানেকের বেশি সময় লাগেনি বাংলার সচেতন সমাজের। তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে একাগ্রচিত্ততার রাজনীতি। যখন মুসলিম লীগের রাজনীতি করতেন, তখন পাকিস্তানের দাবিতে ছিলেন অবিচল। যখন বাঙালির স্বাধিকার-প্রতিষ্ঠাকে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করলেন, তখন মুসলিম লীগ ত্যাগ করতে একটুও ইতস্তত বোধ করেননি। এর মাঝে বল্লভ ভাই, প্যাটেল আর শ্যামা-প্রসাদদের তথা কংগ্রেসের ষড়যন্ত্রে ন্যায়সঙ্গত এক বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলো সেটাও তুলে ধরেছেন ব্যথাতুর মনে। নতুন জন্ম নেওয়া শিশুটির ক্ষমতায় বসলো পুরনো ভক্ষক জমিদার, পা চাটা আমলা আর জনবিমুখ সুবিধাবাদীর দল। একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে বড্ড করুণ হৃদয়ে তুলে ধরছেন তার ডায়েরীর পাতায়। শুরু হলো অন্যায়, অবিচার আর শোষণের প্রতিবাদ। কিছুদিনের মাঝেই জেল-জীবনটাকে আসল জীবন বানিয়ে নেয়ার যাত্রা শুরু হলো '৪৯ এর বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘট থেকে। বের হয়ে শুরু হলো নতুন সূচনা। মাওলানা ভাসানি, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক খান আর আমাদের মহান নেতার নেতৃত্বে জন্ম নিলো আওয়ামী মুসলিম লীগ৷ সেই সাথে সারা দেশে চললো কমিটি আর জনসংযোগের কাজ। একে একে উঠে আসে লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমুদ্দিন, চৌধুরী গোলাম মোহাম্মদ, মোহাম্মদ আলীদের ষড়যন্ত্র আর অগণতান্ত্রিক কূপমন্ডক শাসনের ইতিবৃত্ত। সবচেয়ে অসাধারণ ছিল জিন্নাহ ব্যতীত সকল প্রধানমন্ত্রী কিংবা গভর্নর জেনারেলের সাথে লেখকের বৈঠক বা মুখোমুখি সাহসী পরামর্শ কিংবা সমালোচনার বজ্র কঠিন হৃদয়ের প্রকাশ। অথচ তখনো তার বয়স ঘোরাফেরা করছে ত্রিশের আশেপাশে! এছাড়া দ্বিতীয়বার জেলে গিয়ে দীর্ঘ ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে আটকে থাকাকালীন তার আমৃত্যু অনশন সিদ্ধান্ত আর প্রায় মৃত্যুশয্যায় পৌঁছে যাওয়ার বর্ণনা। এমতাবস্থায় মুক্তির সময়েও বিরোধী নেতা মহিউদ্দীনের জন্য তার ব্যকুলতা সত্যিই অসামান্য। এতে তিনি আরো তুলে ধরেছেন, শহীদ সাহেবকে নিয়ে রাজনীতি কিংবা কলকাতায় তার দাঙ্গা থামানোর সাহসী পদক্ষেপ কিংবা দুজনের পারস্পরিক মতানৈক্য কোনো কৃপণতা ছাড়াই তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়া তার বিভিন্ন সময়ের ভারত, পাকিস্তান আর নয়াচীন সফরের ইতিবৃত্ত। পুরো বইটা পাঠ করতে গিয়ে বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম বঙ্গবন্ধুর অসামান্য স্মৃতিশক্তির পরিচয়। দেশ থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান, চীন যেখানেই গিয়েছেন সেখানকার সাক্ষাত কিংবা সঙ্গী হওয়া নানা বয়সের নানা পেশার মানুষের সমৃদ্ধ পরিচয় তুলে ধরেছেন বইটিতে শুধুমাত্র মস্তিষ্কের জমানো স্মৃতি থেকে। মানুষকে মনে রাখার এই ক্ষমতা তার জনপ্রিয়তার এক অন্যতম কারণ। বঙ্গবন্ধু পুরো বই জুড়ে তার বিরোধী-পক্ষ, যাদের নির্যাতনে তার জীবনাবসানের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, কিংবা আওয়ামী লীগে সুবিধাবাদী পক্ষ, যাদেরকে আমরা গালি দিতেও কুণ্ঠাবোধ করি না, সেরকম মানুষদের তুলে ধরেছেন বিনয় ও যথাযোগ্য সম্মানের সাথে। কখনো সাহেব বলে, কিংবা তার পদমর্যাদা বলে, যেমন- মোহাম্মদ আলী সাহেব, আবদুস সালাম জমিদার! কী অসাধারণ শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি তখনও ছিলো। আর আজ? অভিজ্ঞতা কিংবা লেখার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা করেছে বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'কে। যদিও আবুল মনসুর আহমেদ কিংবা অলি আহাদ সাহেবের বইগুলোও অনেকটা কাছাকাছি চিন্তা ও বিশ্লেষণের। তবুও বারবার তাদের চিন্তাগত প্যারাডাইম পরিবর্তনের মতো পরিবর্তন বঙ্গবন্ধুর না হওয়াতে তিনি এদিক থেকে স্বতন্ত্র হয়েছেন। সব মিলে অসম্ভব সুখপাঠ্য! বেঁচে থাকুক ইতিহাসের নির্মোহ যাত্রা, বেঁচে থাকুক এই মহান অবিসংবাদিত নেতা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী -শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশক- ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রথম প্রকাশ: ১৮ই জুন, ২০১২ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৩৩০ ব্যক্তিগত মতামত- ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
#Sorone_mohanayok_book_review_2021 বইয়ের নামঃ অসমাপ্ত আত্নজীবনী লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনীঃ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ধরনঃ আত্নজীবনী/রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রচনাকালঃ ১৯৬৭ প্রথম প্রকাশঃ ২০১২ রিভিউ লেখকঃ ফাতেমা হেলালী আজ এমন এক ব্যক্তিত্বের কথা লিখতে বসেছি যার স্মরণে আজও কোটি কোটি হৃদয় কেঁদে ওঠে, কেঁপে ওঠে। তিনি আর কেউ নন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাঠ্যবইয়ের রচনা পাঠের মাধ্যমে উনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরও বাড়ে যদিও লোক মুখে অনেক গল্প শুনেছি কিন্ত বই পড়ার আলাদা মজা। প্রথম পড়া বইটিই হলো 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী '।বইটি হাতে নিয়েই মনের মধ্যে শিহরণ কাজ করে। বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা পড়তে যেন আর তর সয় না। তাঁর সাবলীল লেখা কবি না হয়েও কবি প্রতিভার প্রতিফলন ঘটায় প্রতিটা পাতায়। বইটি পড়ার মাধ্যমে নিজেকে আবিষ্কার করেছি সেই মধুমতী নদীর তীরের গ্রামটির মধ্যে। মনে হচ্ছে এইতো সব যেন আমার চোখের সামনে ঘটা ঘটনা। বঙ্গবন্ধু এই জীবনীটি লেখা শুরু করেছিলেন তাঁর কাছের মানুষদের প্রেরণায়। তাই হয়তো লেখাগুলি চমকপ্রদ হয়েছে একটু বেশি। জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি লেখা শুরু করেন।১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনা বলী এই বইতে আছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, তাঁর জীবনের লক্ষ্য সবই পরিলক্ষিত হয় বইটির মধ্যে। বইটি পড়ার সময় যেকোন পাঠক হারিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনের মাঝে। কত ত্যাগ, কত মায়া, কত কিছু তিনি করেছেন তাঁর প্রাণ প্রিয় বাংলার মানুষদের জন্য৷ তাঁর সন্তান, সহধর্মিণী, পরিবার তাঁকে খুব কম কাছে পেয়েছেন। যখন নিজের ছেলে পিতাকে কখনও দেখে নি বলে চিনতে পারে না তখন বাবার কেমন অনুভূতি তিনি তা এই বইতে দেখিয়েছেন৷"হাচু আপা, হাচু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি? " এই উক্তিটি তাঁর ই প্রতিফলন৷ একজন স্ত্রীর অনুভূতি কেমন হয় যখন তাঁর স্বামী জনগণের জন্য প্রাণ টাও বিলিয়ে দিতে চান?বেগম মুজিবের অনুভূতির কিছু অংশ "কেন তুমি অনশন করতে গেছিলা?এদের কি দয়া মায়া আছে?আমাদের কারও কথা তোমার মনে ছিলো না?কিছু একটা হয়ে গেলে আমাদের কি উপায় হতো?হাচিনা,কামালের কি অবস্থা হতো?তুমি বলবা খাওয়া দাওয়ার কষ্ট তো হতো না। মানুষ কি শুধু খাওয়া পরা নিয়ে বাঁচতে চায়?মরে গেলে দেশের জন্যই বা কি করতা?" এই বইতে প্রকাশ পেয়েছে সেই মহীয়সী নারী বেগম মুজিবের আত্নত্যাগ, ভালোবাসা, মায়ার টান৷ প্রকাশ পেয়েছে সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা। প্রকাশ পেয়েছে কিভাবে মহীউদ্দীন তাঁর প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য কষ্ট করেছেন৷ "বাবার কালের জীবন টা যেন রাস্তায় না যায়" এই উক্তিটি দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন বাবার দায়িত্ব ঠিক কতখানি।রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও যে তিনি আদর্শ পিতা তাতে কোন সন্দেহ নেই । কারাভোগের যন্ত্রণা তাঁকে কাবু করে নি তিনি দিনের পর দিন অনশন করেছেন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। কারাগারের প্রতিটা দিন, ক্ষণ, অনুভূতি সবই আছে বইটিতে। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ঠিক কেমন হওয়া উচিত বইটি না পড়লে বুঝা যাবে না৷ নিজের জীবনের কথা একজন নেতার ভাবতে নেই,নেতা যে জনগণের জন্য প্রাণ দিতে পারেন তা তিনি বুঝিয়েছেন৷তাই আজ অর্ধ শতাব্দী পরেও তাঁর লেখাগুলো জীবন্ত। বইটি পড়ে সকল শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি কিভাবে যোগ্য নেতা হওয়া যায়, কিভাবে একজন নেতার স্ত্রীকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়,সন্তান যদি দীর্ঘদিন বাবাকে না দেখে সেসব সন্তানদের অনুভূতি কেমন হয়, কারাভোগ এর যন্ত্রণা বাংলার মানুষের মুখের হাসির কাছে যে তুচ্ছ তার সবকিছু জানা যাবে বইটি পড়ার মাধ্যমে। বইটি পড়ার পর বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে। কেন জীবনীটা অসমাপ্ত হলো? কেন তিনি লিখে যেতে পারলেন না আরও কিছু? এজন্যই কবি বলেছেন"যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই, তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা। আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা "।আমরা কাকে হারিয়েছি বইটি না পড়লে অনুধাবন করা অসম্ভব। যারা বইটি পড়েন নি পড়ে ফেলুন জীবনের মর্মার্থ বুঝতে পারবেন, আত্নবিশ্বাসী হতে পারবেন,বিপদ মোকাবিলা, বিপদে ধৈর্য্য ধারণ কিভাবে করতে হয় সব জানা যাবে বইটি পড়ে অনুধাবনের মধ্য দিয়ে।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা খুব কমই লেখালেখির সাথে জড়িত। রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে জীবনী লিখেছেন, এরকমটাও চোখে পড়ার মত হয়নি। বঙ্গবন্ধুও যে স্বেচ্ছায় আত্মজীবনী লিখেছেন, সেটাও না। "বন্ধুবান্ধবরা বলে- তােমার জীবনী লেখ, সহকর্মীরা বলে রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, 'বসেই তাে আছ, লেখ তােমার জীবনের কাহিনি।" বইয়ের শুরুতেই এসব কথা প্রমাণ করে যে, বন্ধুবান্ধব এবং সহধর্মিণীর অনুপ্রেরণায় জেলে বসেই তাঁর লেখালেখি শুরু হয়। এখানে একটা ব্যাপার না বললেই নয়, কেউ জীবনী এবং কেউ কেউ রাজনৈতিক ঘটনাবলী লিখতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এই দুটো ব্যাপারের কোনটায় কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছিলেন সেটি আমরা আলােচনা করব। লেখার সাড়ে চার দশক পরে বইটি প্রকাশিত হয়। তিন শতাধিক পৃষ্ঠার এ বইকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়- শৈশব ও পারিবারিক বর্ণনা, পাকিস্তান আন্দোলন এবং পাকিস্তান পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন। অন্যান্য আত্মজীবনীর মত শেখ মুজিবও তাঁর শৈশব এবং পারিবারিক ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েই শুরু করেছেন। পূর্ব পুরুষদের উত্থান-পতন এবং পরিবারের হালহকিকতের বাইরে শৈশব সম্পর্কে আর খুব বেশি কিছু বলা হয়নি। রােগাক্রান্ত হওয়ার কারণে পড়াশােনায় সাময়িক বিরতির পরে তিনি যখন আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন, ততদিনে তিনি বিভিন্নভাবে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন মূলত কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময়। ঘটনাক্রমে তিনি বেশ আগে থেকেই হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচিত হন এবং নিয়মিত যােগাযােগ রাখতে শুরু করেন। শহীদ সাহেবের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা কলেজের ছাত্ররাজনীতিতে এবং পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে। শুরু থেকেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং ১৯৬৭ সালে জেলে বসে আত্মজীবনী লেখার সময়ও পাকিস্তানের প্রতি তার কোনাে ক্ষোভ বা অনুযােগ ছিল না। বরং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শাসকদের সমালােচনা করেছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েমের জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি জনমনে পাকিস্তানের প্রতি আবেগ সৃষ্টিতেও বঙ্গবন্ধু কাজ করেছেন। পাকিস্তান কায়েম হলে মুসলমানদের দুর্দশা লাঘব হবে- এমন বিশ্বাস স্থাপন করেছেন সাধারণ মানুষের মনে। দেশভাগের পূর্ব পর্যন্ত মুসলিম লীগের রাজনীতি ছিল একটা সরলরেখার মত। লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে তেমন কোনাে মতানৈক্য না থাকায় দল হিসেবে মুসলিম লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। এই কারণে পূর্ব বাংলার ও পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সাথে বঙ্গবন্ধুর কাজ করার সুযােগ হয়েছে এবং পরবর্তীতে এই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে মুজিবের নেতৃত্ব উল্লেখযােগ্য হতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের পূর্ণ বিকাশ ঘটে মূলত পাকিস্তান সৃষ্টির পর। মুসলিম লীগে ভাঙ্গন এবং শাসকদের আদর্শিক পদস্খলনের ফলে আলাদা একটা দলের সৃষ্টি হয় এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সেটা প্রধান বিরােধী দল হয়ে যায়। যে পাকিস্তানের জন্য এত আন্দোলন, এত ত্যাগ স্বীকার করা হল, সেই পাকিস্তান আমলেই বঙ্গবন্ধুকে বারবার জেলে যেতে হয়। এই বইয়ে পাকিস্তান পর্বের যতটুকু আলােচনা আছে, তাতে অধিকাংশ সময় তিনি জেলেই কাটিয়েছেন। স্বপ্নের পাকিস্তানের থেকে পাওয়া এমন আচরণে তিনি কতটুকু কষ্ট পেয়েছিলেন সেটা খােলাখুলিভাবে না বললেও একটা চাপা বেদনা তাঁর মধ্যে ছিল। বায়ান্ন, চুয়ান্ন'র ঘটনাপ্রবাহের সময় তিনি একজন ব্যস্ত, আলােচিত এবং মােটামুটি পরিণত একজন রাজনীতিবিদ। লেখকের ভারত, পাকিস্তান এবং চীন ভ্রমণের উপাখ্যান বইটিতে নতুন একটা মাত্রা যােগ করেছে। একটা ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্যের কারণে বইটির গুরুত্ব বেড়েছে। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় দিল্লির আজমির শরিফ, তাজমহল, আগ্রার দুর্গ, ফতেহপুর সিক্রি ও সেকেন্দ্রা এবং তানসেনের বাড়ি দেখার বর্ণনা আছে। ভ্রমণের সময় অর্থসংকট এবং উদ্ভূত কিছু সমস্যার বর্ণনা লেখক বেশ নিপুণভাবেই করেছেন। পাকিস্তান সরকারের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে কমিউনিস্ট চীনে একটা সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধুরও যাওয়ার সুযােগ হয়েছিল। যাত্রাপথে রেসুন, হংকং, সাংহাই প্রভৃতি শহরে স্বল্প সময়ের জন্য অবস্থান করার সুযােগ হয়। কারেন বিদ্রোহী, চীনের কমিউনিস্ট সরকার এবং সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন জানার ক্ষেত্রে তাঁর এইসব মন্তব্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে। একটা সময় ছিল যখন শেখ মুজিব ফেরারি ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী তখন পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন। পুলিশের হাত থেকে নিজেকে আপাতত রক্ষা করতে এবং শহীদ সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য তিনি লুকিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহােরে যান এবং সেখানে বেশকিছু কাল অবস্থান করেছিলেন। একই দেশের দুই অংশের ভৌগােলিক এবং সংশ্লিষ্ট বেশকিছু পার্থক্যের আলােচনা এখানে করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান ভ্রমণের আলােচনা ভারত এবং চীন ভ্রমণের মত প্রাণবন্ত হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক বয়ানে আবৃত সেই ভ্রমণ উপাখ্যান ম্লান-ই থেকে গেছে। উপমহাদেশের তিন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদের সাহচর্য পাওয়ার সুযােগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর। সবচেয়ে বেশি হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর, একটা উল্লেখযােগ্য সময় মওলানা ভাসানীর এবং একেবারে সীমিত সময়ের জন্য হলেও শেরে বাংলার সাহচর্যে তিনি যেমন ঋদ্ধ হয়েছিলেন, তেমনি এই বইয়ে সেসবের উল্লেখ নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে পুরাে বইয়ে হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষ উপস্থিতি ছিল। পুরাে বইয়ে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক সত্তার খােলসে থাকলেও কিছু জায়গায় তাঁর সাহিত্যিক সত্তা আশ্চর্য রকমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ব্যক্তিগত প্রণয় এবং বিচ্ছেদের বর্ণনায় লেখক আবেগের যথাযথ ব্যবহার করতে পেরেছেন। এক জেল থেকে আরেক জেলে বদলির সময়ে লেখকের সহধর্মিণীও তাকে দেখার উদ্দেশ্যে নদীপথে ঢাকায় রওনা হন। কিন্তু মাঝপথে দুই জাহাজের দেখা হলেও দুজনের দেখা হয়নি। সেই বর্ণনার “কিন্তু দেখা হল না কেবল আমাদের" কথাটুকু পুরাে বইয়ের একটা উজ্জ্বল অংশ। একজন রাজনীতিবিদের এই আকস্মিক সাহিত্যিক মুন্সীয়ানা এবং আবেগের ঘনত্বে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। বেশ ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বর্ণনা করলেও, ব্যক্তিগত জীবনের আলােচনার ব্যাপারে লেখক যথেষ্ট অবহেলা করেছেন। খুব অল্প সময়ের কথা বাদ দিলে পরিবার এবং ব্যক্তিজীবন ছিল একেবারেই অনুপস্থিত। যদিও রাজনৈতিক জীবন ব্যক্তিগত জীবনের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযােগ্য, তবু তিনি চাইলে ব্যক্তি মুজিবকে আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারতেন। নেতা মুজিব বাঙালিদের জন্য নিজের সবটুকু দিলেও, লেখক মুজিব তাঁর পাঠকদের বেশকিছু ক্ষেত্রে বঞ্চিত করেছেন। বইটির একটা দুর্বলতা হল এখানে বঙ্গবন্ধুর লেখকসত্তা ও ব্যক্তিসত্তার চেয়ে রাজনৈতিক সত্তা প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। ফলে খুব সহজেই রাজনৈতিক ইতিহাসের বই বলা গেলেও, সাহিত্যের বিচারে একটু পিছিয়ে থাকবে। রাজনীতিবিদ হওয়ায় নেতাসুলভ বর্ণনাই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে, বইটির কাহিনি এগিয়েছে রাজনৈতিক বক্তৃতার মত করে। বইটির উপযােগিতার কথা বলতে গেলে অন্তত দুটো বিষয় উল্লেখ করতেই হবে। প্রথমত, আমাদের দেশ কিংবা পুরাে পৃথিবীতে রাজনৈতিক ইতিহাস লিখিত হয়েছে সাংবাদিক, গবেষক এবং ঐতিহাসিকদের দ্বারা। রাজনীতিকরা নিজের জীবনে করে আসা রাজনীতি নিয়ে কমই লিখেছেন। সেদিক থেকে অসমাপ্ত আত্মজীবনী ইতিহাসের একটি অনন্য এবং জীবন্ত প্রামাণ্যচিত্র। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে ভক্তির আতিশয্যে ব্যক্তিপূজা এবং কেবল বিরােধিতার জন্যই বঙ্গবন্ধুর যে মাত্রাতিরিক্ত বিরােধিতা করা হচ্ছে, তাতে এই বইটি উভয়ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিধান করতে পারে। "সহকর্মীরা বলে রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।”- এই কথাটা যে যথার্থ ছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধু ও সমকালীন ইতিহাস পরস্পরের পরিপূরক। পাকিস্তান আন্দোলন কিংবা পাকিস্তান পরবর্তী আন্দোলন না থাকলে বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবে নিজের বিকাশ হয়তো করতে পারতেন না। পরিস্থিতির দাবি-ই তাঁকে যােগ্যতর করে তুলেছে। আবার, তাঁর সিদ্ধান্ত এবং কাজের মাধ্যমেই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্ম হতে পেরেছে। তাই সমকালীন ইতিহাসের আলােচনা ব্যতীত বঙ্গবন্ধুর সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়। আর এই কাজটি সহজভাবে করার সুযােগ তৈরি করে দিয়েছে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' নামক বইটি। বইটির প্রকাশভঙ্গি যেমনই হােক; সাহিত্যিক এবং দালিলিক মান যেরকমই হােক; ব্যক্তি, লেখক কিংবা রাজনীতিক বঙ্গবন্ধুর যে সত্তাই এখানে প্রাসঙ্গিক হােক, তিনি মিশে আছেন আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশে। আর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' সেই ইতিহাসের জানালা। একনজরে- বই: অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশক: মহিউদ্দিন আহমদ প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫ রিভিউ: মোস্তফা কে মুরাদ আহমেদ
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” কেবল বইই নয়, বইয়ের আদলে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতির এক মহান নেতার অনবদ্য স্মৃতিগাঁথা। আর এই বইটিই মহান এই নেতাকে বাঙালির স্মৃতিতে ধরে রেখেছে স্থির সেলুলয়েডে। বইয়ের কাহিনী যখন শুরু হয়, গোপালগঞ্জ তখনো জেলা হয়নি। ফরিদপুর জেলার একটি মহকুমা। তারই অন্তর্ভুক্ত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। অতীতে শেখ বংশের বেশ নামডাক থাকলেও শেখ মুজিব যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন বংশের সেই জৌলুস আর আগের মতো নেই। অন্য দশজন মধ্যবিত্তের মতোই জীবন শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমান মেট্রিক পরীক্ষা দেন ১৯৪১ সালে। কিন্তু তার আগেই জীবনে কত চড়াই-উৎরাই, কত বাধা বিপত্তি! স্থানীয় স্কুলে পড়া শুরু করার পর একাধিকবার স্কুল থেকে ছিটকে পড়েছেন। আবার শুরু করেছেন নতুন করে। স্কুলে থাকতেই জড়িয়ে যান রাজনীতির সাথে। তখন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেতে হয় জেলে। সাত দিনের জেল খাটেন। জীবনের প্রথম জেল। পরবর্তীতে এই জেলে তাঁকে বহুবার যেতে হয়েছে। ফলে সংখ্যাটাও আর সাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। মেট্রিক পাশের পর পুরোদমে রাজনীতিতে যোগ দেন। মিছিল, মিটিং আর বক্তৃতা ছাড়া কোনোদিকে নজর নেই। তখন লক্ষ্য একটাই- যে করেই হোক পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই। ১৯৪৩ সালে দেখা দিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। মা মরে রাস্তায় পড়ে আছে, ছোট বাচ্চা সেই মরা মায়ের দুধ খাচ্ছে। কেউ কেউ পেটের দায়ে নিজের ছেলেমেয়েকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ চিৎকার করছে-“মা, বাঁচাও। কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, একটু ফেন দাও।” বলতে বলতে সেখানেই পড়ে মরে যাচ্ছে। ভয়াবহ সেসব দৃশ্য দেখে আর ঠিক থাকতে পারলেন না মাটির মানুষ শেখ মুজিব। ঝাঁপিয়ে পড়লেন দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায়। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ১৯৪৭ সালে করা হলো পাকিস্তান। কিন্তু একি! পাকিস্তান হবার সাথে সাথেই শুরু হলো ষড়যন্ত্রের নতুন রাজনীতি। দাসত্বের শৃঙ্খলে চক্রাকারে ঘুরতে লাগল হতভাগা বাঙালির দল। আবার শুরু হলো চড়াই-উৎরাই। দুর্গম পথচলা, জেলখাটা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অনলে একে অন্যকে পুড়িয়ে ছারখার করার পাঁয়তারা। সামনে এসে দাঁড়াল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। পূর্ব বাংলার মানুষ ততদিনে বুঝে গেছে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে না পারলে দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি। কিন্তু তাতে কী? সেখানে থেকেই দিয়ে গেলেন একের পর এক নির্দেশনা। আন্দোলন হলো, মিছিল-মিটিং হলো, গুলি হলো, তাতে তাজা প্রাণও ঝরল; এরপরই না মাতৃভাষা বাংলা হলো। কিন্তু সংগ্রাম থেমে থাকেনি। বরং আরো ঝেঁকে বসেছে। এরপর একে একে সামনে এসেছে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান এবং সবশেষে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার ইতিহাস। প্রতিটি ঘটনাই বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনাই আবির্ভূত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে। তিনিই ছিলেন কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ভেবেছিলেন সংগ্রাম বুঝি এবার শেষ হবে। কিন্তু হলো না। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যে বাংলাদেশকে পেলেন সে এক অন্য বাংলাদেশ। যেন এক ধ্বংসস্তূপ। চারিদিকে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা আর অপুষ্টি। কিন্তু যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি কি আর পিছু হঠবেন? বাংলার আপামর জনগণকে নিয়ে শুরু করলেন নতুন এক সংগ্রামের। স্বপ্ন তখন একটাই- একটা সোনার বাংলা। “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” মধুমতি তীরের জনপদ থেকে উঠে আসা এক মানুষের গল্প, সফল এক রাষ্ট্রনায়কের আত্মজীবনী। আত্মজীবনী হলেও লেখকের কলমের আঁচড়ে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়ের নানান প্রেক্ষাপট। তাই এটি শুধু একটি আত্মজীবনীই নয়, বাঙালি জাতির বিশাল এক ইতিহাসও বটে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বইটির লেখা শুরু করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বইটিতে বর্ণিত হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শৈশব থেকে যৌবনের শুরুর দিককার কথা। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বংশপরিচয়, শৈশব, শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশভাগের পর থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতির সংক্ষিপ্ত খতিয়ান এই বইটি। ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন বিষয়গুলো উঠে এসেছে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনায়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেখতে পাওয়া যায় কাগজের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন। আছে তাঁর কারাজীবন, পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সবসময় পাশে ছিলেন যে মানুষটা তিনি ফজিলাতুন্নেসা। সমকালীন বৃহত্তর জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বইটি একটি অমূল্য সম্পদ। আন্দোলন আর সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাদের পরিচয়ই বইটিতে পাওয়া যায়। ঘুরে ফিরেই এসেছে ভাসানী, ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দীর নাম। বইটি পড়ে ব্যক্তি মুজিবকে অনেকখানি উদ্ধার করা সম্ভব। মাঠের রাজনীতিতে যারা ব্যর্থ তাদের পদাঙ্ক তিনি অনুসরণ করতেন না। তিনি কাজ করতেন, ভুল হলে স্বীকার করতেন, সংশোধনের চেষ্টা করতেন। বইটিতে অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর পাবেন। কেন কংগ্রেস থেকে মুসলিম লীগ? কেন তা থেকে আওয়ামীলীগ? কেনই বা বাদ দেওয়া হলো মুসলিম শব্দটি? তবে বইটি শেষ হয়েছে কিছুটা অতৃপ্তি দিয়ে। এর কারণ আসলে নামেই বুঝা যায়-অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারে হুট করে শেষ হয়ে গেল। গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী কিশোর শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার আভাস কেবল বইটিতে আছে। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় সবটাই অজানা রয়ে গেল। স্তম্ভিত হতে হয় বঙ্গবন্ধুর লেখনীর ধার দেখে। মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়ানো মানুষটির কলমের ভাষা কতই না সাবলীল! শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে, ভাষা আর রূপকের কারুকার্যে মন ভোলানো লেখা তাঁর ছিল না। তবু মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। সহজ বাক্য, হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা সহজ ভাষা। একজন দক্ষ ঔপন্যাসিকের মতো বর্ণনা করে গেছেন সব; যেখানে ইতিহাস আর একজন মহামানুষের জীবন এক হয়ে গেছে। বইটির শুরুতে শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা এবং বইয়ের বিভিন্ন অংশে জুড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির টুকরো ছবিগুলো বইটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এই বই। অসাধারণ তথ্যে সমৃদ্ধ প্রতিটি পাতা। বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, জাপানি, আররি, ফারসি, অসমীয়া, রুশসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে তাঁকে উপলব্ধি করেছি। পড়ার সময় মনে হয়েছে আলগোছে মহান মানুষটি যেন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তর্জনী নাড়িয়ে দরাজ কন্ঠে বলে গেছেন জীবনের কথা। কানের কাছে ধ্বনিত হয়েছে সেই বজ্রকন্ঠ- জয় বাংলা। বইঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান প্রচ্ছদঃ সমর মজুমদার প্রকাশনীঃ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড পৃষ্ঠাঃ ৩২৯ মূল্যঃ ২২০ টাকা। রিভিউকারীঃ মোঃ জামাল উদ্দিন
Was this review helpful to you?
or
যে নামের অক্ষর কখনো মোছেনা,ধূলো জমেনা যার নামে,ইতিহাসের অবিনশ্বর এক অধ্যায়ে চির ঔজ্জ্বল্য এক নাম আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।যার মহিমায় হয়নি বাংলা বিভক্ত,ভাঙেনি জাতির মেরুদন্ড। তিনিই যে অণুপ্রেরণার মানদন্ড,হে জাতির পিতা।এই মহান নেতারই বেড়ে ওঠার গল্প ফুঁটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী নামক এই ছোট্ট গ্রন্থটিতে।রাজনৈতিক আদর্শ,দর্শন, চিন্তাবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা, নীতি- নির্ধারন,রাজনৈতিক স্বচ্ছতা যেগুলো কোন দলকে বোঝায়নি, বোঝায় এক স্বাধীনতাকে পাবার অদম্য স্বাদ। এখন আসি আত্মজীবনী মানে কি? মানে হলো নিজের জীবনাধারণকে প্রতিফলিত করা জীবদ্দশায়। আত্মজীবনীতে কিন্তু তিনি নিজের কথা বলেন নি,বলেছেন এক খন্ড রক্তে জর্জরিত ভূখন্ডের দীর্ঘ ইতিহাস।নিজেকে হিরো বানান নি,বারবার বলেছেন হোসেন সোহরাওয়ার্দী এর কথা।অধিকাংশ অধ্যায় জুড়েই সোহরাওয়ার্দীর কথা তিনি বলেছেন।তার রাজনৈতিক জীবন বঙ্গবন্ধুর জীবনে যে কতটাই প্রভাব বিস্তার করে তা জানা যায় এই বইটিতে।আত্মজীবনীর শুরুতেই তিনি বলেন....' ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা।কেমন করে তার সাথে আমার পরিচয় হলো,কেমন করে তার সান্নিধ্যে আমি পেলাম।কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তার স্নেহ আমি পেয়েছিলাম। বইয়ে বঙ্গবন্ধু নিজের পরিচয় দিয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা বারবারই বলেছিলেন। তাছাড়া অসমাপ্ত আত্মজীবনী (ইউপিএল ১২)- এ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। যে কজন তার জীবনকে অগনিত প্রতিভাবান্বিত করেছিলো তার মধ্যে বঙ্গমাতা মুজিবের নাম অগ্রগণ্য।বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর পাতায় এ বিষয়টি যেভাবে ফুঁটে উঠেছে তার বিশেষ অংশ তুলে ধরা হয়েছে ...'আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে এসে বলল, "বসেই তো আছো,লেখো তোমার জীবনের কাহিনী"।বললাম লিখতে যে পারিনা; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়!আমার জীবনের ঘটনাগুলো কি আর জনসাধারণের কাজে লাগবে?কিছুইতো করতে পারলাম না..... আমার স্ত্রী রেণু আমাকে কয়েকটা খাতা কিনেও নিয়ে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিলো।রেণু আরো একদিন বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম(অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃঃ ১)।এছাড়া আত্মজীবনীতে বঙ্গমাতার দূর্যোগ-দূর্বিপাকে, সংকট -সংগ্রামে যে অকৃত্রিম অবদান ছিল তা তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু (পৃঃ৭২, ১২৬ , ১৪৬, ১৬৪, ১৬৫, ১৯১, ২০৫, ২০৭, ২১০, ২১১)। এছাড়াও দাঙ্গা,দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগ রাজনীতি,দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অব্দি পূর্ব বাংলার রাজনীতি,কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপসারন, ভাষা আন্দোলন,ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা,যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন,আদমজীর দাঙ্গা,পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতার বর্ণনা করা হয়েছে।এমনকি কারাজীবন, পিতামাতা,সন্তান-সন্ততি এসবের কথাও তিনি সাধারনভাবে উল্লেখ করেছেন।একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চীন,ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমনের বর্ণনা এই বইয়ে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। রাজনৈতিক কুটচাল,পার্টি ম্যানিপুলেশ্যান,টাকার খেলা,দল বদলানো,মানুষের আদল বদলানো এসব তীক্ষ্ণতার সাথে ফুঁটে উঠেছে আত্মজীবনীতে। আরো আছে দূর্ভিক্ষ।শুধু তাই নয় কলকাতা ও সিলেট নিয়ে যে দাঙা ব্রিটিশরা করেছে তাও বর্ণিত আছে। কলকাতাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী না করে ভারতের সীমানায় দিয়ে দেয়াটা হঠকারিতার সাথেই তুলনীয় তা বোঝায়।অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই পশ্চিম পাকিস্তানে যে ষড়যন্ত্র করা হয়। সেখানেরও নায়ক ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আত্মজীবনী গ্রন্থখানি সম্পদনার কাজে জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা।একই সঙ্গে বইটির ভুমিকা লেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,যখন লেখেন তখন তিনি কারাগারে ২০০৭ সালে। প্রধানমন্ত্রী ভূমিকার এক জায়গায় বলেন,..' এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে নিরিবিলিতে তিনি লিখেছেন। শুধু রাজনীতি কিংবা নিজের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ ছাড়াও কখনো কখনো বঙ্গবন্ধুর কবি সত্তা যে জেগে উঠেছিল তা দেখা গেছে এ গ্রন্থে।তাজমহলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভিতরের রোমান্টিকতার প্রকাশ ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে তার ইসলামপ্রিয়তা সম্পর্কে বেশ তথ্য পাওয়া যায়।ভাসানীর সাথে এক জেলে থাকার বর্ণনায় তিনি বলেন...' মওলানা সাহেবের সাথে আমরা তিনজনই নামাজ পড়তাম।মওলানা সাহেব কোরআন শরীফের অর্থ আমাদের বোঝাতেন।রোজই এটা আমাদের বাঁধা নিয়ম ছিল।কোরআন শরীফের বাংলা তরজমাও কয়েক খন্ড ছিল আমার কাছে.....' ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে চীনে গিয়ে চীনের অর্থনীতি সহ সামগ্রিক উন্নতিতে অভিভূত হন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে চৌধুরী সাহেবের কথা বারবারই এসেছে।যার কথা না বললেই নয়।তিনি হলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু নিজেই তার কথা উল্লেখ করে বলেন.. চৌধুরী সাহেব ছিলেন একগুঁয়ে, স্বার্থপর। এজন্য যারা তাকে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলো তারা সকলেই তাকে ত্যাগ করেন।চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে যে বঙ্গবন্ধু ভারতও ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং চৌধুরী সাহেব যে পুরানো ধনী ছিলেন তা বর্ণনা করা হয়েছে এই বইটিতে। স্বাধীকার আন্দোলনে মাওলানা আকরাম খা এর আজাদ, আবুল হিশামের মিল্লাত,আবুল মনসুর আহমেদের ইত্তেহাদ, ভাসানীর উদ্যেগে মানিক মিয়ার ইত্তেহাদ প্রভৃতি পত্রিকার অবস্হান এখানে জোরালো ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি যে এই ' অসমাপ্ত আত্মজীবনী 'র গুরুত্বপূর্ণ নথি ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত অজস্র দলিলপত্র পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এই মূল্যবান নথিপত্র যদি তখন রক্ষা করা না হতো আমরা এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জাতির মেরুদন্ড টা নুয়ে থাকত।তাছাড়াও এই মহান জাতিস্বরের প্রজ্জ্বলিত ভাস্কর্য মানব থেকে মানবের হৃদয়ে শ্রদ্ধায় বরণীয়।তার এই যে মহান ত্যাগের মহিমা, কর্ম,দীক্ষা সারা বাংলার আকাশ বাতাসে আজ প্রতিফলিত,স্বাধীনতার আপন স্বাদে পতাকা আজ দোদুল্যমান। তরুণ সংগ্রামী প্রজন্মের এক মৌলিক দলিল। যা এই বইটিতে সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রিভিউটি খুব সাধারন।আশাকরি ভালো লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 বই - অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক - শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী - ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রচ্ছদ মূল্য - ৫৫০৳ পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৩২৯ প্রথম প্রকাশ - ১৮ জুন ২০১২ (ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।) রিভিউ লেখক - ওয়াহিদা আখতার শুরুটা ঠিক উপন্যাসের মত। গ্রামের শেখ বংশের একটি ছেলে বর্ণনা দিচ্ছে তার বংশের, তারপর মাত্র ১২ বছরে বাল্য বিবাহের কাহিনী বলে গেছেন অবলীলায়। লেখকের ভাষায় - "আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স বোধহয় তিন বছর হবে।" এখানে মোটা দাগে, বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর, পরিবারের কথা, ছাত্রজীবনের আন্দোলন, পাকিস্তান-আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা চক্রান্ত, দুরভিসন্ধি ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসার কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। বইয়ে নিজ পরিবারের পরিচয়পর্ব থেকে শুরু করেছেন লেখক, তুলে ধরেছেন রাজনীতিতে নিজের হাতেখড়ির ঘটনা আর তার ক্রমবিকাশ।পিতা শেখ লুৎফর রহমানের সততা ও সচেতনতার বাণীকে মর্মে ধারণ করে পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি। নিজের বাল্যকালেই পেয়েছেন স্বদেশী আন্দোলন, তারপর স্কুলজীবনেই পরিচিত হয়েছেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতার সাথে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু বলা যায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। নিজের লেখার মাধ্যমে তিনি যেন তাই ক্ষণে ক্ষণে প্রকাশ করে গেছেন। তবে সোহরাওয়ার্দীর অন্ধ অনুকরণ তিনি করেননি। অন্যায় মনে হলে সেটার প্রতিবাদ করেছেন; আবার সেটা যেনো বেয়াদবির পর্যায়ে চলে না যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছেন। পাকিস্তান আন্দোলনে নিজের এবং সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকা বর্ণনা করেছেন স্পষ্টভাবে। সে সময়কার মুসলমানদের একমাত্র দাবি ছিল ‘পাকিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই দাবী প্রতিষ্ঠায় নিজের ভূমিকা পালন করতে গিয়েই মূলত তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন বাংলার রাজনীতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ। আবার পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলেছেন। সেসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বার বার কারাবরণ করতে হয়েছে তাঁকে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিলো যে নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্র পর্যন্ত ছোট বেলায় পিতাকে চিনতো না। তবে এত কিছুর মধ্যেও পরিবার, স্ত্রী আর সন্তানদের প্রতি তার ভালোবাসা, গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। জেলে থাকতে থাকতে লিখেছেন, 'জেলের মধ্যে জেল, তাকেই বলে সেল।' আবার প্রেসের কর্মচারীদের দেখে ভাবতেন, 'ওরা বড় জেলে, আর আমরা ছোট জেলে আছি। স্বাধীন দেশের মানুষের ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আরকি হতে পারে?' বইটি পড়লে যে কেউই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তির প্রশংসা করতে বাধ্য হবে। হাতেগোনা দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের নাম, এমনকি কখনও কখনও সময় পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। কারো সামান্যতম উপকারের কথা তিনি ভুলে যাননি। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নিজের আসনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে জনগণের ভালোবাসায় তিনি অভিভূত হয়েছেন বারবার। একটি ঘটনা সরাসরি তুলে দিচ্ছি - "আমার মনে আছে খুবই গরিব এক বৃদ্ধ মহিলা কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, শুনেছে এই পথে আমি যাব, আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললো, " বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমায় একটু বসতে হবে।" আমি তার হাত ধরেই তার বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সাথে, আমাকে মাটিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমার সামনে ধরে বলল, "খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছুই নাই।" আমার চোখে পানি এল। আমি দুধ একটু মুখে নিয়ে, সেই পয়সার সাথে আরও কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বললাম, "তোমার দোয়া আমার জন্য যথেষ্ট, তোমার দোয়ার মূল্য টাকা দিয়ে শোধ করা যায় না।" টাকা সে নিল না, আমার মাথায় মুখে হাত দিয়ে বলল, "গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা।" নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল, যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। সেইদিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, 'মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।' " এত ভালোবাসার ভিড়েও বাঙ্গলিদের কিছু খাপছাড়া বিষয় তাকে হতাশ করতো। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তির মধ্যে সে বিষয়ে আমরা ধারণা পাই, "আমাদের বাঙ্গালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হল, আমরা বাঙ্গালি।' পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।" হয়তো মুজিব ১৯৭৫ সালে নিজের এ কথার মর্মার্থ বুঝেছিলেন আরো একবার। পালিয়ে থাকার রাজনীতি তিনি পছন্দ করতেন না। কিন্তু কখনো কখনো দলের প্রয়োজনে এবং উর্ধতন নেতার নির্দেশে গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে হয়েছে তাকে। এ সংক্রান্ত কিছু মজাদার ঘটনার উল্লেখ আছে লেখনীতে, "সকল যাত্রী নেমে যাওয়ার পরে আমার পাঞ্জাবি খুলে বিছানার মধ্যে দিয়ে দিলাম। লুঙ্গি পরা ছিলাম, লুঙ্গিটা একটু উপরে উঠিয়ে বেঁধে নিলাম। বিছানাটা ঘাড়ে, আর সুটকেসটা হাতে নিয়ে নেমে পড়লাম। কুলিদের মত ছুটতে লাগলাম, জাহাজ ঘাটের দিকে। গোয়েন্দা বিভাগের লোক তো আছেই। চিনতে পারল না।" এ ধরনের আরও একটা মজার ঘটনা হচ্ছে, তাজউদ্দীনের হঠাৎ প্রেস রিপোর্টার বনে যাওয়া! রাজনীতি-ইতিহাস আর হাজার হাজার মানুষের নাম-ধাম পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গেলে, এমন ঘটনা আপনাকে হাসতে বাধ্য করবে। আর এগুলো কোনো নাটক-সিনামার কাহিনী না, একজন দেশপ্রেমিক নেতার জীবনের বাস্তব ইতিহাস। লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।তিনি যেখানেই গিয়েছেন, খুঁজেছেন বাংলাকে, বাংলার সাথে মিল পেলেই করেছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। বাবা বলেছিলেন পড়াশুনা করতে; বাবা-মা দুজনই নিষেধ করেছিলেন, শেরে বাংলার বিরুদ্ধে কথা না বলতে, তাঁকে অসম্মান না করতে; মুজিব তাঁদের কথা শুনেছেন। যখনই টাকার প্রয়োজন হয়েছে, নির্দ্বিধায় হাত পেতেছেন বাবা, মা, বোন কিংবা স্ত্রীর কাছে। যতজন মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন, প্রত্যেকের নাম নিয়েছেন যথাযোগ্য সম্মানের সাথে। "কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগনের আছে।" - একজন আদর্শ-নিরপেক্ষ নেতার মুখেই এ বচন শোভা পায়। দেশের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্রকর্মীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বলে বিবেচিত হতে পারে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। একজন আদর্শ ছাত্রনেতার কেমন হওয়া উচিত, তার দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-কর্মী জীবনে আছে। বইয়ের শেষে টীকা, (১৯৫৫-১৯৭৫) পর্যন্ত লেখকের রাজনৈতিক জীবন পরিচয়, লেখনীতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকা এবং নির্ঘণ্টের সংযোজনী বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, টীকাগুলো বইয়ের শেষে না দিয়ে ফুটনোট আকারে লেখার সাথে দিয়ে দিলে পাঠকের পড়তে সুবিধা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন।’ বাকি জীবনের কাহিনী আর লিখে যেতে পারেননি তিনি। তাই পড়া শেষেও অতৃপ্তি থেকেই যায়! পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী মুজিব থেকে তিনি কিভাবে বাঙালির হয়ে উঠলেন, কিভাবে হয়ে উঠলেন' বঙ্গবন্ধু', সেই বর্ণনা তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। পড়া শেষে বারবার এটাই মনে হচ্ছিলো যে, এই ঘটনাগুলোও যদি তাঁর লেখনীতে জানার উপায় থাকতো, কত ভালোই না হতো! আর বাঙালি পেতো বাংলাদেশের জন্মের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস।
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ✍বইয়ের পরিচিতিঃ বই: অসমাপ্ত আত্নজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড রিভিউ লেখক :মো:অারিফুল ইসলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা (১৯২০থেকে ১৯৫৫) গুলো লিখেছেন (১৯৬৭) ঘারাগারে বসে। এটি একটি অাত্মজীবনি মূলক গ্রন্হ হলেও এখানে প্রকাশ পেয়েছে বাঙালি জাতির সংগ্রামী প্রকৃত স্বাধীনতার ইতিহাস স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি জাতি অনেক জুলুম অত্যাচার সয্য করছে কিন্তু কখনো যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে স্বাধীনতা পায় নি। অাল্লাহর অসেস রহমতে (১৯৩৮)সাল থেকে বাঙ্গালি জাতি অবিসংবাদিত এক নেতা পেল।এই বইটি পরে অামি বুজতে পেরেছি বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয়ত বাংলাদেশ স্বাধীন হত না,।এই মানুষটি কিভাবে দেশের জন্য তিলে তিলে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছন তা এই বইতে প্রকাশ পেয়েছে। লেখক তার নিজের এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন পপরিস্থিতি মুসলিম লীগের প্রতি জনগনের বিশ্বাস ভরসা উঠে গেছে কিভাবে, আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার মূল কারণ, ১৯৫৪সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক চিত্র ,লেখকের বংশ পরিচয় স্কুল কলেজের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক ককর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,দেশভাগ ইত্যাদি কথা ,লেখকের ব্যাক্তিগত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাও বর্ণনা করেছেন,পারিবারিক বিভিন্ন ঘটনা,পাকিস্তানের বিভিন্ন নির্বাচন সরকার গঠন নিয়ে তিনি নানা বিষয়, বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাভোগের তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন বইটিতে। যে কাথাটি অামার হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ করেছেঃ- একদিন সকালে আমি আর রেণু বসে গল্প করছিলাম।হাচু আর কামাল নিচে খেলা খেলছিল।হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে এসে আব্বা আব্বা বলে ডাকে।কামাল চেয়ে থাকে।একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে "হাচু আপা, তোমার আব্বারে আমি আব্বা বলি"। আমি আর রেণু দুইজনে শুনলাম।আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ওকে কলে নিয়ে বললাম আমি তো তোমারও আব্বা।কামাল আমার কাছে আসতে চাইতো না। আজ গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে রইলো।বুঝতে পারলাম এখন আর ও সয্য করতে পারছে না।নিজের ছেলে অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়। "আমি যখন জেলে যায় তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস মাত্র। আমার পড়া বইয়ের মধ্য "অসমাপ্ত আত্মজীবনী "বইটি ছিল অন্যতম।বইটি পড়ে আমার দেশের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারি।
Was this review helpful to you?
or
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়াবারাকাতহু ?বইয়ের পরিচিতিঃ বই: অসমাপ্ত আত্নজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড রিভিউ লেখক :সাব্বির আরাফাত ?ভৃমিকা: “থালা-বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল।” —বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশই কেটেছে কারাগারে।বঙ্গবন্ধু! স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে লিখলে লেখার যেন শেষই হবে না।বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু মানে প্রশংসার ঝুড়ি। ?কিছু কথা -বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—“চিন্তা করিও না।জীবনের বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে।আরও কত হবে ঠিক নেই! তবে কোনো আঘাতেই আমাকে বাঁকাতে পারবে না।খোদা সহায় আছে।” এটি ছিল ঈদের সময় বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি।তার এই উক্তি দ্বারা বোঝা যায় অমন কঠিন সময় তার আত্মবিশ্বাস গলে পড়েনি বরং দৃঢ় থেকে দৃঢ়তম হয়ে রূপান্তর ঘটেছে । শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণ প্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অস্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। ?️বইটি পড়ে যে বিষয় গুলো জানতে পারবেন- ১)বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট। ২ লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ৩) দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি। ৪)দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি। পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন। ৫)ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন। ৬)আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে । ৭)লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন । ৮)একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। ৯)"অসমাপ্ত আত্মজীবনী" গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাঙালীজাতিরভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাগ্রচিত্ততা, তাঁর রাষ্ট্রভাবনা, ইতিহাস চেতনা, নেতৃত্ব, নেতৃত্বের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ, কারাস্মৃতি। ১০)পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রভেদ ও বৈষম্য, ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সংগঠন বিস্তার ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণিত হলেও, ?একটা বিষয় আমাকে বেশ চমকিত করেছে, আর তা হচ্ছে তাঁর শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গনচীন ভ্রমন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীন শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। মাও সেতুং-এর দেশ নয়াচীনে তিনি চীনা মানুষের শিক্ষা, আচার, দেশপ্রেম আর দেশ গড়ার একাগ্রতা দেখে অভিভূত হন, এমনকি পশ্চিমা ব্লেন্ডও তিনি পাননা সেখানে 'সেভ' করতে, যেহেতু চীনারা দেশেপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমা ব্লেডের পরিবর্তে শেভ করেন নিজ দেশের খুর দিয়ে। ?অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই টি কেন পড়বেন?- এই বইটি পড়ে জানতে পারবেন কেন বঙ্গবন্ধুর নামে এত উপাধি দেওয়া হয়েছে।কেন তাকে বঙ্গের বন্ধু বলা হয়।তার দৃষ্টিকোণে মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল।তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল।এছাড়াও চীনের মানুষদের দেশপ্রেম সম্পর্কে জানবেন। এই দেশপ্রেমের কারণেই হয়তো তাদের রাষ্ট্র এত উন্নত।যারা রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চায় তাদের অবশ্যই এই বইটি পড়া।সেসময়কার রাজনীতি সম্পর্কে জানবেন।লেখক এই বইয়ের মাধ্যমে সেই সময় তার সাথে ঘটে যাওয়া সব বিষয় লিখে রেখেছেন।এটি একটি অসাধারণ বই।আমরা বাঙালি আমাদের তো এই বই সম্পর্কে জানতেই হবে, কেননা কোন বিদেশি লোক যদি কখনো জানতে চায় তোমার দেশের জাতিরপিতা সম্পর্কে কিছু বলো তখন যেন আমরা অপারগতার জন্য লজ্জায় মাথা নিঁচু না করি। ?বই কোথা থেকে কিনবেন-এখন ঘরে বসেই রকমারি. কমে বই অর্ডার করা যায়।তাই আর দেরি না করে অর্ডার দিয়ে ফেলুন রকমারি তে। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়াবারাকাতহু ?বইয়ের পরিচিতিঃ বই: অসমাপ্ত আত্নজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড রিভিউ লেখক :সাব্বির আরাফাত ?ভৃমিকা: “থালা-বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল।” —বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশই কেটেছে কারাগারে।বঙ্গবন্ধু! স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে লিখলে লেখার যেন শেষই হবে না।বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু মানে প্রশংসার ঝুড়ি। ?কিছু কথা -বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—“চিন্তা করিও না।জীবনের বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে।আরও কত হবে ঠিক নেই! তবে কোনো আঘাতেই আমাকে বাঁকাতে পারবে না।খোদা সহায় আছে।” এটি ছিল ঈদের সময় বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি।তার এই উক্তি দ্বারা বোঝা যায় অমন কঠিন সময় তার আত্মবিশ্বাস গলে পড়েনি বরং দৃঢ় থেকে দৃঢ়তম হয়ে রূপান্তর ঘটেছে । শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণ প্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অস্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। ?বইটি পড়ে যে বিষয় গুলো জানতে পারবেন- ১)বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট। ২ লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ৩) দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি। ৪)দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি। পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন। ৫)ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন। ৬)আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে । ৭)লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন । ৮)একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। ৯)"অসমাপ্ত আত্মজীবনী" গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাঙালীজাতিরভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাগ্রচিত্ততা, তাঁর রাষ্ট্রভাবনা, ইতিহাস চেতনা, নেতৃত্ব, নেতৃত্বের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ, কারাস্মৃতি। ১০)পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রভেদ ও বৈষম্য, ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সংগঠন বিস্তার ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণিত হলেও, ?একটা বিষয় আমাকে বেশ চমকিত করেছে, আর তা হচ্ছে তাঁর শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গনচীন ভ্রমন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীন শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। মাও সেতুং-এর দেশ নয়াচীনে তিনি চীনা মানুষের শিক্ষা, আচার, দেশপ্রেম আর দেশ গড়ার একাগ্রতা দেখে অভিভূত হন, এমনকি পশ্চিমা ব্লেন্ডও তিনি পাননা সেখানে 'সেভ' করতে, যেহেতু চীনারা দেশেপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমা ব্লেডের পরিবর্তে শেভ করেন নিজ দেশের খুর দিয়ে। ?অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই টি কেন পড়বেন?- এই বইটি পড়ে জানতে পারবেন কেন বঙ্গবন্ধুর নামে এত উপাধি দেওয়া হয়েছে।কেন তাকে বঙ্গের বন্ধু বলা হয়।তার দৃষ্টিকোণে মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল।তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল।এছাড়াও চীনের মানুষদের দেশপ্রেম সম্পর্কে জানবেন। এই দেশপ্রেমের কারণেই হয়তো তাদের রাষ্ট্র এত উন্নত।যারা রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চায় তাদের অবশ্যই এই বইটি পড়া।সেসময়কার রাজনীতি সম্পর্কে জানবেন।লেখক এই বইয়ের মাধ্যমে সেই সময় তার সাথে ঘটে যাওয়া সব বিষয় লিখে রেখেছেন।এটি একটি অসাধারণ বই।আমরা বাঙালি আমাদের তো এই বই সম্পর্কে জানতেই হবে, কেননা কোন বিদেশি ভদ্র লোক যদি কখনো জানতে চায় তোমার দেশের জাতিরপিতা সম্পর্কে কিছু বলো তখন যেন আমরা অপারগতার জন্য লজ্জায় মাথা নিঁচু না করি। ?আরো একটি কথা_ এই বইটির ভৃমিকা লিখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাব জেলে থাকাকালীন সময় বইটির ভৃমিকা লেখেন।পরর্বতীতে বই টি প্রকাশ করেন।আর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হলে শুধু এই একটি বই পড়লে হবে না জানার শেষ নাই। ?বই কোথা থেকে কিনবেন-এখন ঘরে বসেই রকমারি. কমে বই অর্ডার করা যায়।তাই আর দেরি না করে অর্ডার দিয়ে ফেলুন রকমারি তে। #sorone_mohanayok_book_review_2021
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 "সমবেত সকলের মতো আমারো স্বপ্নের প্রতি পক্ষপাত আছে, ভালোবাসা আছে_ শেষ রাতে দেখা একটি সাহসী স্বপ্ন গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি। আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি। . . আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি, আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।" - নির্মলেন্দু গুণ শুরুর কথা: শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণ প্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অস্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি। পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে । আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন । একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। বই নিয়ে আলোচনা: "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাঙালী জাতির ভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাগ্রচিত্ততা, তাঁর রাষ্ট্রভাবনা, ইতিহাস চেতনা, নেতৃত্ব, নেতৃত্বের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ, কারাস্মৃতি, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রভেদ ও বৈষম্য, ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সংগঠন বিস্তার ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণিত হলেও, একটা বিষয় আমাকে বেশ চমকিত করেছে, আর তা হচ্ছে তাঁর শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গনচীন ভ্রমন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীন শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। মাও সেতুং-এর দেশ গণচীনে তিনি চীনা মানুষের শিক্ষা, আচার, দেশপ্রেম আর দেশ গড়ার একাগ্রতা দেখে অভিভূত হন, এমনকি পশ্চিমা ব্লেন্ডও তিনি পাননা সেখানে 'সেভ' করতে, যেহেতু চীনারা দেশেপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমা ব্লেডের পরিবর্তে শেভ করেন নিজ দেশের খুর দিয়ে। একই সঙ্গে তিনি ব্যঙ্গ সমালোচনা করেন বৃটিশ শাসিত প্রতারণাপূর্ণ হংকংয়ের। চীন ভ্রমণ উপলক্ষে তিনি তাঁর এ আদর্শিক অবস্থান ব্যক্ত করেন এভাবে, আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসেবে মনে করি। এই পুঁজিবাদ সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে, ততদিন দুনিয়ার মানুষের ওপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না”। বায়ান্ন সনেই চীন সফরে সাহসী বঙ্গবন্ধু লাখো মানুষের সম্মেলনে তাঁর বাংলায় প্রদত্ত ভাষণে আরো বলেন, “পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধ পরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্ব শান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবদ্ধ ছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে- তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগণের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মুক্তির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিশ্বশান্তির জন্য জনমত সৃষ্টি করা তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে”। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে জনগণের শোষণ মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর কথায়, 'দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।' সে বিশ্বাসকে ধারণ করে স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২ সালের সংবিধানে তিনি 'সমাজতন্ত্র’কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন, পশ্চিমের অবাধ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নয়। এবং এ বিশ্বাসের বলেই তিনি চীনা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মতো বাঙালি জাতির মুক্তির পথ নির্দেশনা হিসেবে প্রবর্তন করেন 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ’ বা বাকশাল। এখন বামপন্থী (ডানপন্থীতে রূপান্তরিত) জ্ঞানপাপীরা কেবল ‘১-দলীয় বাকশালের’ সমালোচনায় মুখে ফেনা তুললেও, চীনের বিশ্ব কাঁপানো এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নের চূড়ান্ত শিখায় আরোহণকে দেখে মুখে কুলুপ লাগিয়ে চুপ থাকেন। তখন একবারও বলেনা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা খারাপ বা উন্নয়নের অন্তরায়! হায় এদেশের রাজনীতি আর ধর্ম নিয়ে খেলছে ভন্ড খেলোয়াররা, কবে সাধারণের কাছে উন্মোচিত হবে এদেশের মুখোশ? বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বাঙালি জাতির এক অনুন্মোচিত পথদিশা, যা পাঠককে দেখাতে পারে এক অনারম্ভর নেতার ক্লান্তিহীন পথচলা, যা ধাবিত হয় কেবলই অসাম্প্রদায়িকতা, স্বদেশপ্রেম আর মানবিকতার দিকে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর এ লেখকের সঙ্গে কি তুলনীয় হতে পারে এ মাটির, এ নদীর, এ বাতাসের কারো সঙ্গে? কখনোই নয়! এবং অদ্যাবধি জন্মাননি এ মাটিতে তাঁর সমতূল্য কেউ। ******* বই: অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রথম প্রকাশ: জুন ২০১২ মুদ্রিত মূল্য: ২২০৳ (পে: ব্যাক) রিভিউ লেখক: অনিরুদ্ধ আকাশ
Was this review helpful to you?
or
#Sorone_Mohanayok_Book_Review_2021 বইয়ের নাম- "অসমাপ্ত আত্মজীবনী " লেখক- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রিভিউ লেখক- রাকিব হাসান রাব্বি। . "যবে উৎপীড়িতে ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপান ভীম রণ-ভূমে রনিবে না- বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেইদিন হব শান্ত।" (বিদ্রোহী, কাজী নজরুল ইসলাম) এক মহাবীর, এক যোদ্ধা, যাকে দেখে কিউবার বীর ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন- "আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি (...) দেখেছি", সেই মহানায়ক যার কারণে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, পেয়েছি লাল সবুজের একটা পতাকা, যিনি আমাদের আমাবস্যার রাতে জোৎস্না, যিনি বঙ্গের বন্ধু, যিনি উৎপীড়িতের সঙ্গী, দুঃখীর আশ্রয় এবং অত্যাচারীর চিরশত্রু এবং শত্রুকে বিনাশ না করা পর্যন্ত যিনি শান্ত হননি তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বাংলা এবং বাংলার মানুষকে ভালবাসার দায় হিসেবে যিনি দিনের পর দিন কাটিয়েছেন জেলে, যিনি শ্রীঘরকে বানিয়েছিলেন দ্বিতীয় আবাসস্থল সেই মহামানবের জীবনী লুকিয়ে আছে " অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটিতে। যার লেখক তিনি নিজে, যার লেখার স্থান জেলখানা। তাকে যখন তার প্রিয়তমা সঙ্গিনী লেখার অনুরোধ করলেন তখন সরলমনা মানুষের মতই তিনি বলে উঠলেন- "লিখতে যে পারিনা;আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।" মহৎ মানুষের মহত্ব এখানে। মানুষের জন্য পুরো জীবনটাও উৎসর্গ করে দিলেও তারা ভাবে যে কিছুই করে নি। আরেকটু করতে পারলে ভালো হত। ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে, বাক্যে জন্ম নিল এক ইতিহাস যার নাম "অসমাপ্ত আত্মজীবনী"। রাজনীতির কবির হাতে জন্ম নেওয়া এই বইটির প্রতিটি শব্দের মধ্যে আছে যাদু, যা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে যেতে বাধ্য করবে। তার এই বই পড়ে আমি মেনে নিয়েছি- " Political leaders are like poets,born,not made." আত্মজীবনী বলতে আমরা বুঝি যে গল্পের নায়ক নিজের ঢাকঢোল নিজে পেটাবে,নিজেকে সেরা প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই বইটিতে তিনি নিজেকে রেখেছেন একপাশে আর কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছেন হোসেন সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে। তার আত্মজীবনী নামক গল্পের নায়ক তিনি তাকেই করে রেখেছেন। বইয়ের শুরুতেই তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রতি ব্যক্ত করেন নিজের ভালবাসা। তিনি লেখেন- ".....ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা।....কেমন করে তার স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।..." রাজনৈতিক জীবনে তিনি সবসময় বাবার আদর্শকে মাথায় রেখে কাজ করেছেন। মেনে চলেছেন তার শেখানো "Sincerity of Purpose" এবং "Sincerity of Honesty"। সততা এবং দেশের ব্যাপারে তিনি মাথা নত করেননি কারও কাছে। তার সবচেয়ে প্রিয় হোসেন সোহরাওয়ার্দীর কাছেও। তিনি লিখেছেন- " শহীদ সাহেবের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। তিনি আনোয়ার সাহেবকে একটা পদ দিতে বলেন, আমি বললাম -তা কখনোই হতে পারেনা। সে প্রতিষ্ঠানে কোটারি করেছে, ভাল কর্মীদের জায়গা দেয় না। শহীদ সাহেব বললেন- Who are You? You are nobody. মুজিব বলেন- If I am nobody, then why you have invited me? You have no right to insult me. I will prove that I am somebody. Thank you sir. I will never come to You." কি রকম সাহস আর তেজ থাকলে এত বড় একজন নেতার সামনে এরকম কথা বলা যায় তা একবার ভেবে দেখুন। আর এই তেজের কারণেই মুজিব টুঙ্গিপাড়ার মুজিব থেকে বাংলার মুজিব হয়ে ওঠে। বইটিতে মুজিবের শুরু থেকে শুরু হওয়ার গল্প রয়েছে। একজন কিশোর কিভাবে তার বুদ্ধিদীপ্ততা,সাহসিকতা আর তেজ দিয়ে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তা এই বইটিতে লিপিবদ্ধ আছে। তাই এই বইটিকে আমি মনে করি- "The Embryo of creating Bangabandhu and Bangladesh " হিসেবে। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস আর ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও লিখেছেন তার ভাললাগা আর মন্দ লাগা নিয়ে। যে বাঙ্গালিকে তিনি প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, সেই বাঙ্গালির চরিত্রও তাকে হতাশ করেছিল। তিনি লিখেছেন- "আমাদের বাঙ্গালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল আমরা মুসলমান আর একটা হল আমরা বাঙ্গালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।" তার এই কথার প্রমাণ বাঙ্গালি দিয়েছে এবং আমরা পেয়েছি ১৯৭৫ সালে। রাজনৈতিক মানুষ হয়ে লিখতে লিখতে তিনি কখন যে কবি হয়ে উঠলেন তা বুঝা ই গেল না। শব্দে শব্দে তিনি সাজিয়ে তোলেন তার ভালবাসার অনুভূতিগুলো। তার বেদনার কথা গুলো ছবির মত ফুটিয়ে তুলেছেন শব্দে। তার পরিবারের কথা এঁকেছেন বাহারি শব্দে। বাঙ্গালি আর বাংলাকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা লিখেছেন বারবার। রবার্ট ফ্রস্টের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইনের মত- "And miles to go before I sleep." শেখ মুজিবও তার শেষযাত্রার আগে বাংলা এবং বাঙ্গালিকে নিয়ে অনেকটা পথ যেতে চেয়েছিলেন। জেলে থাকাকালীন সময়ে বইটি লেখেন শেখ মুজিব। তারই অনেক বছর পর জেলে থাকাকালীন সময়ে তার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে আসে তার এই লেখনী। শেখ হাসিনা পরম স্নেহে বাবার বইয়ের ভূমিকা লেখেন। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে ২০১২ সালে জনসাধারণের কাছে আসে এই বইটি। বাপ-বেটির পরশে বইটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম একটি দলিল। ইংরেজি সাহিত্যে এডমন্ড স্পেন্সার কে বলা হয় "Poet's Poet", বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন বিশ্বকবি। তেমনি রাজনীতির অঙ্গনে শেখ মুজিব হলেন " Poet of Politics " এবং " Leader of Leader's" বইটি অতৃপ্ততা নিয়েই শেষ হল। যখন আপনি বইয়ের পাতায় বুদ হয়ে আছেন ঠিক তখুনি শেষ হয়ে গেল বইটি। একটা চরম পিপাসার মাঝে ছেড়ে বইটি শেষ হয়ে যায়। ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সালের পূর্ব বাংলার সংগ্রাম মুখর পরিবেশের বর্ণনা, বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের গল্প, তার জীবনে আসা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাহিনী, তার চাওয়া পাওয়ার গল্পের বিবরণ আর একটু একটু করে তার বঙ্গবন্ধু হওয়ার গল্প লুকিয়ে আছে এই বইটিতে। বইটি শেষ করে কিছুক্ষণ বসে রইলাম আর ভাবলাম এভাবে পাঠকদের নিয়ে খেলার মানে কি? এমন জায়গায় কেন বইটা শেষ হল, যেখানে জানার ক্ষুধাটা তীব্র হয়ে গেল। নজরুলের "অভিশাপ" কবিতায় পড়েছিলাম- " যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে বুঝবে সেদিন বুঝবে! " বাঙ্গালি আজ বুঝতে পেরেছে হয়তো, হয়তো আফসোসে তাদের হৃদয়টা এখন জরাগ্রস্ত। সেদিন যদি হায়েনারা জানত বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, তাহলে হয়তো তাকে হত্যা করার সাহস পেত না। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় তাইতো লিখেছিলেন - "যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।" বইটি কেন পড়বেন? বাংলাদেশকে জানতে বইটি পড়তে হবে। এই বই না পড়লে বাংলাদেশকে যে পুরোপুরি জানতে পারবেন না কখনোই।
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 বই:-অসমাপ্ত আত্মজীবনী লেখক:-শেখ মুজিবুর রহমান রিভিউ:-আরাফাত হক বিশ্বাস আত্মজীবনী মানে নিজের ঢোলটা বেশি পেটানো। নিজেকে ফুটিয়া তোলা। নিজের ভালো দিকগুলা সবার সামনে তুলে বলা, ‘এই হইলাম আমি’। সবকিছুর উর্ধ্বে আমিই ছিলাম। আমি হইলাম আসল হিরো। তবে সত্যি কথা বলতে হইলো, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু হিরো নন। হিরো হইলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। অধিকাংশ অধ্যায় জুড়েই সোহরাওয়ার্দীর কথাই বলতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তার রাজনৈতিক জীবনে শহীদ সাহেবের প্রভাব যে কতটা স্পষ্ট তা বইটি পড়লেই ঝকঝক হয়ে উঠবে। আত্মজীবনীর শুরুতেই তিনি বলে ফেলেন, ‘…ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।…’ শহীদ সাহেবের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটে ওঠে এই লাইনগুলোর মধ্যে দিয়েই। বইয়ে নিজ পরিবারের পরিচয়পর্ব থেকে শুরু করে শহীদ সাহেবের সঙ্গে পরিচয় পর্বটিও স্পষ্ট উল্লেখ করেছে বঙ্গবন্ধু। শহীদ সাহেবের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ১৯৩৮ সালে। একসঙ্গে দুই নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ আসেন। সেখানেই পরিচয় পর্ব দিয়ে রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ মুজিবুর রহমানের যাত্রা শুরু। এরপর সেই কলেজ ছাত্র ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তান আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা স্পষ্ট। সেসময়কার মুসলমানদের একমাত্র দাবি ছিল ‘পাকিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই দাবী প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা তার ছিল তা তিনি খুব সহজেই বলে গেছেন। এমনকি সেখানেও শহীদ সাহেবের ভূমিকার স্পষ্ট বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু। তবে এসব বর্ণনা তার নিজের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই ধরে নিতে হবে। আত্মজীবনী গ্রন্থখানি সম্পাদনা কাজে জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। একইসঙ্গে বইটির ভূমিকা লিখেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভূমিকাটি তিনি লিখেছেন জেলে থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালে। এ নিয়ে আমার একখানা মতামত হলো, নেতারা সবসময় জেলে বসেই লেখতে পছন্দ করেন। নিজের মতো করে সময় পান। যা তারা লেখালেখিতে হয়তো ব্যয় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন।’ বলাই যায়, বঙ্গবন্ধুও আত্মজীবনী লেখেছেন কারাবন্দি থাকা অবস্থায়। যাইহোক, যে কথা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থে বহুবার চৌধুরী সাহেবের প্রসঙ্গ এসেছে। এই চৌধুরী সাহেব হলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। সম্পাদনার ভালো দিকটি হলো, সম্পাদক চাইলে বইয়ে এই বিতর্কিত লোকটির চরিত্র ম্যানুপুলেশন করতে পারতেন। কিন্তু সেটা হয় নাই। বরং স্বচ্ছভাবেই চৌধুরী সাহেবের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন তার কথা প্রথম আসে ‘অল বেঙ্গল মুসলিম ছাত্রলীগ’- এর সভাপতি ওয়াসেক সাহেবের সূত্র ধরে। এই ওয়াসেক সাহেবের সঙ্গে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সব সময় বিরোধ লেগে থাকতো। ওয়াসেক সাহেব একচেটিয়ে রাজনীতি করতে চাইতেন। তাই তার সঙ্গে বিরোধ। একবার এক গন্ডগোলে চৌধুরী সাহেবের দলকে বঙ্গবন্ধু সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদেও অংশ নেন। এমনকি চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে ভারত ঘুরার বর্ণনাও আছে বইটিতে। চৌধুরী সাহেব যে পুরানো ধনী সেটিও বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর বর্ণনায়। তবে চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, ‘চৌধুরী সাহেব খুবই স্বার্থপর হয়ে ওঠেন এবং একগুঁয়েমি করতেন, সেজন্য যারা তাকে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরে তারা সকলেই তাঁকে ত্যাগ করেন।’ রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুল্যাশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন এসবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। সঙ্গে আছে দূর্ভিক্ষ এবং হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটও উঠে আসে বইয়ে। শুধু তাই নয়, কলকাতা ও সিলেট নিয়ে যে রাজনীতি ব্রিটিশরা করেছে সে বর্ণনাও আছে। কলকাতাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী না করে ভারতের সীমানায় দিয়ে দেওয়াটা হঠকারিতার সামিল বলেই বোঝা যায়। অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলেছেন। সেখানেও মূল নায়ক সোহরাওয়ার্দী। বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কারণ, বাংলাদেশ ভাগ হলেও যতটুকু আমরা পাই, তাতেই সিন্ধু, পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের মিলিতভাবে লোকসংখ্যার চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা বেশি। সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও কর্মক্ষমতা অনেককেই বিচলিত করে তুলেছিল। কারণ, ভবিষ্যতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন এবং বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।’ শুধু রাজনীতি কিংবা নিজের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদেও কখনও কখনও বঙ্গবন্ধুর ভেতরের কবি সত্ত্বাও জেগে উঠতে দেখা গেছে এ গ্রন্থে। তাজমহলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভেতরের রোমান্টিকতার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালী রঙ আমাশে ছুটে আসছে। মনে হল, তাজের যেন আর একটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে দিয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারব না।’ প্রতিটি মানুষের মনে কবি বাস করে। কথাটি হয়ত ঠিক। অপরূপ মায়া ও রোমান্স উঠে এসেছে লাইনগুলোতে। যাইহোক, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তিরও বেশ প্রশংসা করতে হয়। প্রতিটি মানুষের নাম। এমনকি কখনও কখনও সময়ও উল্লেখ করেছেন। প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তিনি বর্ণনা করেছেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ। যে গ্রন্থখানি লেখেছেন একজন নেতা। নেতার লেখায় রাজনীতি উঠে আসাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সাহিত্যবোধ্যারা তাকে সাহিত্যিকের মর্যাদায় দিয়ে ফেলছেন। যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। বঙ্গবন্ধু একজন নেতা। বাংলাদেশ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রধান নেতা। এবং তার রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী একজন নেতার বেড়ে ওঠার গল্প। তার রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবনার মিশেলে বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। ভাষা ঝরঝরে। বাক্য সাধারণ। শব্দ নির্বাচনে সাদামাটা। কোনো সাহিত্য করার জন্য এ জীবনী তিনি লেখতে বসেননি। নেহায়েত বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং স্ত্রী রেণুর অনুরোধে নিজের জীবন লেখতে বসেছিলেন কারাবন্দী অবস্থায়। যা আজ আমাদের সামনে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ হাজির হয়েছে। অতএব আমার এ লেখাও একটি অসমাপ্ত রিভিউ হিসেবেই আপনারা নিতে পারেন। এটি কোনো ন্যারেটিভ রিভিউ নয়। নিছক সাদামাটা একটা রিভিউ।
Was this review helpful to you?
or
বইটি মোটামুটি ভালোই
Was this review helpful to you?
or
এই বই টাকে লীগ ফ্যানাটিক, লীগ বিরোধী, বাকশাল পন্থী, বাকশাল বিরোধী - কোন এংগেল থেকেই পড়া উচিত না। একজন মানুষ, যাকে আমরা চিনি না, তার সম্পর্কে জানতে হলে আমরা তার কাজ যেভাবে দেখি, ঠিক সেভাবে পড়া উচিত। কারিকুলাম বা বড়দের থেকে শোনা ইতিহাস জুড়ে আমাদের সামনে বঙ্গবন্ধু এর যেই অবয়ব টা সামনে থাকে, তা ১৯৬০-৭৫ এর সময়কালের। কিন্তু তার আগের বঙ্গবন্ধুকে চেনা টা কম জরুরী না। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, মধ্যবয়স এর মানুষ টাকে জানলে তার চিন্তা চেতনা, Series or Film এর ভাষায় যাকে Character Development বলা হয়, সেই Metamorphosis টা খুব ভালভাবে জানা যায়। একরোখা, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, মৃত্যুকে না গোণা, আদর্শের জন্য জেল এ যাওয়াকে ডালভাত মনে করা, Go-get-it attitude এর অধিকারী একজন মানুষ কে জানার জন্য এই বই টা অবশ্যপাঠ্য। নিজের চোখের সামনে যেন ব্রিটিশ আর পাকিস্তান আমল কে দেখা হয়ে গেল। বি দ্র - বইটি আমার বাসাই আগে থেকেই রয়েছে, অনেক আগেই বই টি পরে শেষ করেছি ?
Was this review helpful to you?
or
১৫ আগস্ট বাঙ্গালি জাতির শোক দিবস। এই দিনটিতে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ইতিহাস মানে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। তার জীবন ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। এই মহান মানুষটি জীবনে যাই করেছেন তার সবই দেশের জন্য করেছেন। তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল দেশের সার্থে। তার জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীনতা পেতাম না।
Was this review helpful to you?
or
✨
Was this review helpful to you?
or
Outstanding
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
Such a Good Book
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার বই।
Was this review helpful to you?
or
ভাল বই। অনেক কিছু জানলাম।
Was this review helpful to you?
or
খুব ভালো
Was this review helpful to you?
or
Excellent Book. Thanks Rokomari.
Was this review helpful to you?
or
আমি মনে করি বইটি সকল বাঙ্গালীর পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
খুবই ভাল তিনটা বই পরলে অনেক কিছু জানা যাবে।
Was this review helpful to you?
or
এটা ইতিহাস জানার জন্য খুব ভালো বই। এই বইটা আমিও পড়েছি এবং আমার বন্ধুদেরকেও গিফট করেছি।
Was this review helpful to you?
or
শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম আগে থেকেই ছিল। পড়ার পরে তা শতগুণে বেড়ে গেল।
Was this review helpful to you?
or
জাতির পিতার লিখা নিজের জীবনী। বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য শ্রেষ্ট বই।
Was this review helpful to you?
or
I did not know until I read the book how much a man can accept for politics. He was a law student at Dhaka University. And like ten people who finished writing and got into a career, they got money, money, influence. But for the sake of the liberation of the Bengali nation, the Pakistani military went against the junta. Chhatra University of Dhaka was canceled. We who know the opportunity to attend university know how much strength and patriotism it takes for a middle-class family to walk that path. He did, because he was Bangabandhu. This book introduces us to the role of some more leaders and individuals including Suhrawardy, Sher Bangla, Bhasani. As many recognize the true appearance of many, the outstanding contributions of many others like Manik Mia or Shamsul Haque have brought to our attention those who are still undervalued. The most difficult thing - the nation for which he gave up everything in his life, killed him three years after the country became independent. Some Kulangars of that nation still want to shorten him, refuse him, say abusive words in his name. The unfinished autobiography will shed light on us for ages, teaching us how to love the country.
Was this review helpful to you?
or
it is a good book.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই
Was this review helpful to you?
or
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জেল জীবনে বসে বইটি লিখেছেন৷ কিন্তু বইটি তার জেলের জীবনের কথা নয়। তৎকালীন সময়ে বসে জাতির পিতা তার দেশের মানুষের চরিত্র, রাজনীতি, সাইকোলজি, মানসিক অবস্থা সবকিছুই ছুঁয়ে গেছেন এই বইয়ে। খুব সহজ ভাষায় নিজের মতো করে তিনি লিখেছেন। শেখ মুজিব যে আমাদের খুব কাছেরই একজন মানুষ তা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে বইয়ে রয়েছে বাঙালির ইতিহাস এবং সমাজ চিত্র।
Was this review helpful to you?
or
প্রথমে ধন্যবাদ এই বইটি লেখার জন্য আমরা যারা নিউ জেনারেশন আছি আমাদের জন্য বইটি পড়া অত্যান্ত কার্য কর বলে আমি মনে করি
Was this review helpful to you?
or
Read it for the historical value. Language is pretty plain and typically Bengali style of writing. The book gives a perspective of the partition from a Muslim League point of view, something starkly missing in Indian history narratives. The memories Bhasha Andolan do not fail to inspire you and loathe the West Pakistanis.
Was this review helpful to you?
or
বাংলার স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর এর আত্মজীবনী পুরোটা লেখার আগে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার লেখা বইটির যে আংশিক অংক পাওয়া যায় সেটি প্রকাশ হয়েছে বঙ্গবন্ধু কারাবাস থাকা অবস্থায় লেখা। আত্মজীবনী বেশিরভাগ সময় ফুটে উঠেছে কারাবাস থেকে লেখা বিষয়গুলি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জীবনী জানা প্রত্যেক বাঙালির উচিত আমি মনে করি। এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। যার জন্যই আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করতে পারছি।
Was this review helpful to you?
or
বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
Bongobondhu Sheikh Mujibur Rahman who is one of the most famous political leaders in the history. He was the pioneer leader of our freedom fight. His early age, beginning of political life, contribution of Hossen Shahid Shohrawardi and Maulana Vasani in his life, the dictatorship and oppression of then Pakistani rulers to Bangali nation etc have been described in this autobiography. He is really an inspiration to the oppressed people in the world. Every political person in our country, whoever he is, should read this valuable book of Bongobondhu.
Was this review helpful to you?
or
বইটির শুরুর অংশেই বিমোহিত হয়েছিলাম। আমরা যারা ঘরের খবর রাখতে শিখিনি, তাদের জন্যই লিখা বইটি। বইয়ের শুরুতে বঙ্গবন্ধুকন্যা ছোট একটা ভুমিকা দিয়েছেন। আবেগ উৎকণ্ঠার স্থান দখল করে আছে তার লিখিত পাতাগুলোতে। আর বইয়ের মুল অংশ পড়ে মনে হয়েছে কোন বাস্তবধর্মী উপন্যাস পড়ছি। হাসি-কান্না আর দুষ্টুমি খেয়ালিপনার গল্পগুলো যেভাবে ফুটে উঠেছে, ঠিক একইভাবে এদেশের রাজনীতির প্রারম্ভিক ইতিহাস ও সংশ্লিষ্টদের জীবনচরিত বিশেষভাবে উল্লেখ্য হয়েছে। সবচে' দারুণ বিষয় হচ্ছে, বইটিকে অতিরিক্ত মোডিফাই করা হয়নি। বলতে গেলে লেখকের সাচ্ছন্দ্যবোধের স্থানকে পুরো স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সামনে বসে গল্প শুনছি। দেশটাকে যেহেতু ভালোবাসি, দেশের জন্য যারা লড়ে গেছেন তাদের তো জানতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। এজন্য একজন বাঙালী হিসেবে প্রত্যেকের বইটি পড়া উচিত। বঙ্গবন্ধু মানে শুধু 'শেখ মুজিবুর রহমান' একটি নাম নয়, বঙ্গবন্ধুর জীবনযাত্রার ইতিহাসের এই বই পড়লে আপনার মনে হতে পারে, বঙ্গবন্ধু অনন্য। আমরা যে সুজলা সুফলা ভূমিতে বাস করছি, তার নেপথ্যে কিছু মানুষ একটু বেশী ভাবতেন, মাঠ থেকে শুরু করে রাজপথ অতঃপর রণাঙ্গন দাপিয়ে বেড়াতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী রিভিউ. আব্দুল্লাহ আল মুনীর
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণএকটা বই । বাংলাদেশকে জানার আগে বঙ্গবন্ধুকে জানা উচিত। প্রত্যেক দেশপ্রেমিকে এই বই পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
অসমাপ্ত আত্মজীবনী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর লেখা। তিনি জেলে থাকতে লেখা গুলো ডাইরি আকারে লিখেছেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বই গুলো পুনরুদ্ধার করে বই আকারে বের করেছেন। এই বইটি ৫২ পরবর্তী রাজনৈতিক নানা উত্থান পত্তন নিয়ে লেখা আছে। বইটি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়া উচিত। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিযোগীতার পুরস্কার হিসেবে বইটি দেয়া হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের উৎপত্তি নিয়ে জানতে বইটি পড়া উচিত!
Was this review helpful to you?
or
বইটি পড়ে খুব ভাল লেগেছে। অনেক কিছুই অজানা ছিল তা জানতে পেরে ভাল লাগছে। ধন্যবাদ রকমারিকে।
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধুর "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটা আমাকে আমার ছোট কাকা ২০১৮ সালে গিফট করে। এই বইটা যখন পড়া শেষ করি তখন ভাবতে থাকি বইটা যদি সমাপ্ত হতো তাহলে অসাধারণ হতো। কিন্তু কি আর করা বইটা যে অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বইটা পড়ে মনে হয় যে, আমরা কি সৌভাগ্যবান যে বঙ্গবন্ধুর মতোন একজন জাগরণী নেতা পেয়েছিলাম। অপর দিকে আপসোস করি তার মতোন নেতাকে হারিয়ে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কি শেষ করতে পারেনি। সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখাছেনও, এই বইটি তার স্বাক্ষর বহন করছে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলোজের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দেশ ভাগের পর থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্থান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ বর্ণনা রয়েছে। আরো আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চীন, ভারত, পশ্চিম পাকিস্থান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। ধন্যবাদার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুর এই অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। এই বইটার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে ভালোভাবে জানা ও অনুভব করার সুযোগ।
Was this review helpful to you?
or
thanks for the book.my brother
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবাদিত নেতা এবং একই সাথে বাংলাদেশের জাতির পিতা।তার জীবনে তিনি যেমন অনেক সময় গিয়েছেন আনন্দ হাস্যোজ্জ্বল সময়ের মধ্য দিয়ে আবার তেমনি অনেক সময় গিয়েছেন গভীর বেদনা দুঃখময় জীবনের মধ্য দিয়ে। তিনি আমাদের দেশকে মুক্ত করার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে বাঙ্গালীদের পথ দেখিয়েছেন। তার জন্যই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশ তারি দেওয়া উপহার।তার এই সংগ্রামী জীবনে তিনি যে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন এই কথাগুলোই তিনি প্রতিনিয়ত ডাইরিতে লিখতেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্যোগে এই বইটি শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় নয় বিশ্বের আরও বেশকিছু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।বইটি পড়ে আপনারা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং তার জীবন থেকে নিজেও শিখতে পারবেন।বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই আমি বইটি পড়তে বলব।
Was this review helpful to you?
or
অসমাপ্ত আত্মজীবনী (স্ট্যান্ডার্ড) by শেখ মুজিবুর রহমান বইটি বাংলার সাহিত্যের আকাশপটে এক নতুন সূর্য। বইটির রিভিউ লিখে এর সারসংক্ষেপ ফুটিয়ে তোলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বইটি অসাধারন। শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০ - ১৫ আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব , ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের " জাতির জনক " বা " জাতির পিতা" বলা হয়ে থাকে। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব এবং শেখ সাহেব হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং তার উপাধি " বঙ্গবন্ধু"। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ!
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের অজানা সত্য প্রকাশিত হলো ২০১১ খ্রিস্টাব্দে। গেল দশকের ঘটনাবহুল টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির অন্ধকারের মধ্যে ২০০৪ খ্রিঃ যে অতখানি ইতাহাসে আলো ছড়াবে, কেইবা ভেবেছিল? সত্যিই বোমা ফাটানোর মতই ঘটনা। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যখন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা অনেকটা মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন তখনই হাতে পান পিতার স্বহস্তে লেখা চারটি খাতা-যা ভূমিকায় শেখ হাসিনা লিখেছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি ও বাংলাদেশিদের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)। তাঁর শৈশব, ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন, আওয়ামীলীগ গঠন ও বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের জন্য উতসর্গীকৃত জীবনের ইতিহাস নিজ হাতে ঢাকা জেলে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় লিখে যান। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে নয় বারং দেশি-বিদেশি ইতিহাস গবেষণায় এক অক্ষয় কীর্তি হয়ে থাকবে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও সম্প্রতি জাপানি ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একজন পাঠক হিসেবে আমি মনে করি বইটি পাঠে শুধু ইতিহাস উদ্ধারই নয় বরং পাঠকের আত্নসচেতনতা, জাতীয়তাবোধ, দৃঢ়চেতা ও মানব প্রেমিক হতে উদ্বোদ্ধ করবে। ৫২ ভাষা আন্দোলনে যারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করতে চান কিংবা যারা অপরাপর সবাইকে ছাপিয়ে তাঁকে ভাষা আন্দোলনের একক নায়ক ভাবতে চান তাদের জন্যও অসমাপ্ত আত্নজীবনী একটি প্রামাণ্য দলিল। তিনি যে কতটা বড় মাপের ও মনের মানুষ ছিলেন তার পরিচয় বইটির শুরুতেই পাওয়া যায়। বইটির শুরু করেছেন এভাবে, “বন্ধু-বান্ধব বলে, তোমার জীবনী লেখ। সহকর্মীরা বলে, রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলো লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আমার সহধর্মী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী। বললাম, লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনা গুলো জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগব? কিছুই তো করতে পারলাম না……। মহৎ মানুষ বোধকরি এমনই বিনয়ী হয়। তিনি যে শুধু দেশকেই ভালবাসতেন তা নয়, দেশের মানুষের প্রতিও ছিল তার প্রগাঢ় ভালবাসা। গোপালগঞ্জের ৫৪ খ্রিস্টাব্দের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রচারে এক বৃদ্ধ মহিলার তার প্রতি ভালবাস এবং এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর অশ্রুসিক্ত নয়নে মনে মনে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাতে তার মানুষের প্রতি ভালবাসা ফুটে উঠে। সেই পরিস্থিতির বর্ণনায় তিনি বলেন, “নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল, যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। সেইদিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না (পৃঃ ২৫৬)।‘ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় শুধু মুসলিমদের পক্ষই নেননি। হিন্দুদেরকেও সাধ্যমত দাঙ্গা থেকে বাঁচিয়েছেন। আদমজির বাঙ্গালি-অবাঙালিদের দাঙ্গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিলের ভিতরে প্রবেশ করে দাঙ্গাকারীদের শান্ত করেছেন এবং কয়েকজন পুলিশ ও মোহন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় তিনশত আহত লোককে হাসপাতেলে পাঠিয়েছিলেন। বিহার দাঙ্গায় অক্লান্ত ভাবে যেচ্ছাসেবী হিসেবে পড়াশুনা রেখে ত্রাণকাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাইতো হিন্দু সহপাঠীদের বাড়িতে অপমানিত হয়েও হিন্দু বন্ধু ননীকুমার দাসকে নিজের বাড়িতে ঢুকার ব্যপারে কোন রূপ বাঁধা-নিষেধ রাখেননি। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “ননী আমাকে বলল, তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ তুই চলে আসার পরে কাকীমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে আনার জন্য এবং সমস্ত ঘর আবার পরিস্কার করেছ পানি দিয়ে ও আমাকেও ঘর ধুতে বাধ্য করেছে। বলালাম, ‘যাব না, তুই আসিস (পৃঃ ২৩)।’ ৪৭ এর দেশ বিভাগের পরও তাইতো দেশ ছেড়ে যাওয়া লোকদের ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। এমকি কলকাতায় শহিদ সহরোয়ার্দীর সরনাপন্ন হয়েছেন। তিনি যে সত্যিকারের এক অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তার প্রমাণ আর একবার পাওয়া যায় আওয়ামী মুসলিমলীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ লিয়ে আওয়ামীলীগ গঠনের মাধ্যমে। সাহিত্যিক না হয়েও তাঁর শৈশব থেকে ছাত্র জীবনের নানা বাঁকে রাজনৈতিক চর্চা, বিহার দাঙ্গা, ৪৩’র দুর্ভিক্ষ, ৪৭’র দেশ ভাগ, আওয়ামীলীগ গঠন এবং লালকেল্লা ও তাজমহল দর্শন, চীন সফর ও পশ্চিম পাকিস্তান সফরের বর্ণনায় মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে, পাকিস্তান সৃষ্টি ও নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সাথে অধিকার ও প্রাপ্তির প্রশ্নে যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে তা সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক জীবনে গান্ধীজী থেকে শুরু করে, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, পীর মানকি, মাওলানা আকরম খাঁসহ পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ, এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাষানী, শামসুল হক, মানিক মিয়াসহ রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে অন্তরঙ্গতা ও মতের মিল-অমিল সবিস্তারে উঠে এসেছে তার এই গ্রন্থে। ছাত্র রাজনীতির সময় থেকেই তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার দৃঢ়তা ও প্রজ্ঞা এতটাই দূরদর্শী ছিল যে তৎকালীন ঝানু নেতৃবৃন্দেরও প্রশংসা কুড়াতো। হোসেন শহিদ সাহেব গোলাম মোহাম্মদ আলীর আইনমন্ত্রী হওয়া ও তার পরিণতি তিনি কতটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সেটা জানা না গেলেও শেখ মুজিব যে আদ্যপান্ত সইব অনুধানব করতে পেরেছিলেন তার বর্ণনা শহিস সাহেবের সাথে সাক্ষাত পর্বেই বুঝা যায়। তার বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “পূর্ব বাংলায় যেয়ে সকলের সাথে পরামর্শ করে অন্য কাউকেও তো মন্ত্রিত্ব দিতে পারতেন। আমার মনে হয় আপনাকে ট্র্যাপ করেছে (পৃঃ ২৮৬)।“ গান্ধীজিকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় সহকর্মী মিস্টার ইয়াকুবের তোলা ছবি কৌশলে উপহার দেয়া তার দূরদর্শী প্রজ্ঞাকেই সমর্থন করে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ছয় দফা দাবী উত্থাপন তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই প্রতিফলন। বইটি পড়ে তিনি যে কতটা সৎ ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়। শুধু দেশ প্রেমের প্রশ্নেই নয়, যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দিয়ে তিনি ছাত্রজীবনে যে মারামারি পর্যন্ত করেছেন সে কথাও অকপটে কৃত্রিমতা বর্জিত ভাবে স্বীকার করেছেন। অথচ চাইলে নিঃসংকোচে তিনি তা গোপন করে যেতে পারতেন। তার বর্ণনায় লিখেছেন, “আমার একটা দল ছিল। কেউ কিছু বললে আর রক্ষা ছিল না। মারপিট করতাম (পৃঃ ১০)।“ রাজনৈতিক পথ-মতের পার্থক্য থাকবেই। গণতান্ত্রিক রাজনীতির এ এক সৌন্দর্য। তা বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় চর্চা করে গেছেন। তাইতো বিরোধী রাজনীতিকদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলেছেন এমনকী অনৈতিক ভাবে ভোট কেনা বেচার মাধ্যমে প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচনে হেরে গিয়ে তাদের সমালোচনা করলেও অপামান-অপদস্ত হয় এমন কিছু করেননি। এমনকি তাদের নাম পর্যন্ত গোপন রেখেছেন। তিনি তার আত্নজীবনীতে যে সুরুচিবোধের পরিচয় দিয়েছেন, অগ্রজ রাজনীতিবীদদের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন দেখিয়েছেন তা যুগে যুগে অনুকরনীয়। বইটির নাম “অসমাপ্ত আত্নজীবনী” প্রায়োগিক অর্থেই যথার্থ হয়েছে। একদিকে দিয়ে বইটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি অন্য দিক ভাবতে গেলে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতি গঠনের কাজও তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। তার আগেই ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাসী বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হত। সেই অর্থে বইটির নাম যথার্থ হয়েছে এবং বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। বইটিতে তিনি বাঙালি জাতিকে পরশ্রিকাতর ও বিশ্বাসঘাতক বলে উল্লেখ করেছেন (পৃঃ ৪৭)। রাগে ক্ষোভে এমনটি হয়তো করেছেন। কিন্তু আত্নজীবনীতে এমন করে বিষোৎগার না করলেও পারতেন। এছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চললে সফরের সময় নেতা-কর্মীদের সাথে কথোপকথনের বর্ণনা আঞ্চলিক ভাষায় বিধৃত হলে সাহিত্যিক গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়তো। ছাত্র জীবনের শুরুতে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে উদ্বোদ্ধ হন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন। কিন্তু তাঁর মতো অসাম্প্রদায়িক একজন নেতা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাগকে কী করে সমর্থন করলেন, তা পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। তবে আওয়ামী মুসলিমলীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি যে সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ, তাই শেষের দিকে পাঠকের কাছে পরিদৃষ্ট হবে। বইটিতে মাওলানা ভাসানীকে তিনি কটাক্ষ করেছেন এই বলে যে, তিনি কাজের সময় পালিয়ে বেড়ান। মুরিদদের বাড়ি থেকে তাকে খোঁজেও নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস পড়ে এবং “অসমাপ্ত আত্নজীবনী” সূত্রেও আমরা জানি, পাকিস্তানের রক্ত চক্ষু ও নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে জামালপুরে মোনাজাতের মাধ্যে মিটিং শেষ করে কি অসীম সাহসীকতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এমন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তির নামে পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ পাঠকের কানে বাজবে। জানিনে, শেখ মুজিব ব্যক্তিগত আক্রোস থেকে এমন কথা বলেছেন কিনা। সর্বোপরি গ্রন্থটি শুধু শেখ মুজিবের আত্নজীবনী হয়েই থাকবে না, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাংলাদেশ অভ্যুদয় ও এ অঞ্চলের মানুষের জাতিসত্তার আত্নপরিচয়ের একটা আত্নজীবনী হয়ে থাকবে।
Was this review helpful to you?
or
সর্বকালের সেরা বই
Was this review helpful to you?
or
২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে।
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক না জানা বিষয় জেনেছি এই বই থেকে। বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য জীবন সম্পর্কে জেনে তাঁর প্রতি সন্মান বহুগুণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ এর মানুষ হিসাবে বইটি সবার অবশ্যপাঠ্য বলে আমি মনে করি। মাথা উচু করে বেঁচে থাকার জন্য ইতিহাস জানা জরুরী, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরী। সামরিক শাসন ও দেশবিরধীদের শাসন আমলে বেড়ে উঠা প্রজন্মকে অনেক ভুল ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রিয়ভাবে। এই বইটি আমদের ভুল ভাঙ্গতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি। বাচ্চাদের গিফট হিসাবে এই বইটি আমার কাছে আসাধারন মনে হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিচরিত্র একটি অখণ্ড সংগ্রামের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র প্রকাশ এ জন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্যে অর্থবহ হয়ে উঠেছে। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ৩৩০ পৃষ্ঠার গ্রন্থ। তবে আত্মজীবনী অংশ ২৮৮ পৃষ্ঠায় শেষ হয়েছে; বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার পরে মূল প্রসঙ্গের অবতারণা-অর্থাৎ আত্মজীবনীর সূচনা। ২৮৯ পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়েছে টীকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পরিচয় (১৯৫৫-১৯৭৫); আরো আছে জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকা ও নির্ঘণ্ট। গ্রন্থটি প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ও আনুষঙ্গিক তথ্য বিবৃত করা হয়েছে ফ্ল্যাপে। একটি অংশ স্মরণীয়-'২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলো অতি পুরনো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলো পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার স্বাক্ষর বহন করে।' এ গ্রন্থে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবনী লিখেছেন। তবে অনুপুঙ্খ বর্ণনায় উপস্থাপিত হয়েছে অনেক বিষয়। আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশপরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশ ভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আরো আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সব দুঃসময়ে অবিচলভাবে পাশে ছিলেন। একই সঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'কে কারা-সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র রূপ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়। কারণ লেখক শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ কয়েদির মতো জেলহাজতে বন্দি ছিলেন। সে সময় তিনি এটি রচনা করেছেন। তা ছাড়া গ্রন্থটিতে ব্যক্তির 'কারাজীবনের অন্তরালের ঘটনা, জেলখানার রীতিনীতি, শাসনপ্রণালি, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সেখানকার অন্যান্য বন্দি ও কর্মচারীর' সব কিছু উন্মোচিত হয়েছে। বলা যায়, কারা-সাহিত্য কারাগারের ভেতরের চিত্র তুলে ধরে। তবে বন্দিশালা সব সময়ই লেখকের জন্য একটি সংকীর্ণ পরিসর। তাঁর স্বাধীনতা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও সমঝোতার সুযোগ সেখানে সংকুচিত। যদিও অবারিত তাঁর কল্পনার আঙিনা। এ জন্য এই কারা-সাহিত্যকর্মটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভাষ্যে পরিণত হয়েছে। গ্রন্থটি বাস্তব রাজনীতির বহুকৌণিক পাঠের জন্যও মূল্যবান। রাজনীতি করতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা ও সংকটময় পথপরিক্রমণ করতে হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি লিখেছেন, 'রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তাঁর আত্মীয়স্বজন, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ, তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।' একই সঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আদর্শ। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আচরণের সমালোচনা করার সময় কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছাত্রদের কর্মকাণ্ডকেও তিনি একটি মন্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। 'দু-চারজন কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছাত্র ছিল, যারা সরকারকে পছন্দ করত না। কিন্তু তারা এমন সব আদর্শ প্রচার করতে চেষ্টা করত, যা তখনকার সাধারণ ছাত্র ও জনসাধারণ শুনলে ক্ষেপে যেত।' (পৃ ১০৯) এমনকি 'পাকিস্তান টাইমস' অফিসে মিয়া সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছিলেন পাকিস্তানের দুশমন হিসেবে, সেই সংবাদও জানিয়েছেন লেখক। (পৃ. ১৪১) তবে এসব সত্ত্বেও জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি সাহসের সঙ্গে; পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন দৃঢ়চিত্তে। কারাগারে বন্দি লেখকের স্মৃতি গ্রন্থটিতে ঘুরেফিরে এসেছে। বঙ্গবন্ধু নিজেই ঐতিহাসিক চরিত্র। তাঁর আত্মজীবনী এ জন্য নানা তথ্যের আকর। তবে রাজনৈতিক ইতিহাসের মলাট ছেড়ে এই যশস্বী ও বর্ণময় চরিত্রের নিভৃত মনের অনেক সংবাদ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে গ্রন্থটির সাবলীল ভাষার বর্ণনায়। সমকালীন বৃহত্তর জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' একটি অমূল্য সম্পদ। তা ছাড়া গ্রন্থটিতে বর্ণিত ঐতিহাসিক কালানুক্রমিক ঘটনাধারা মনে রাখলে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র ঐতিহাসিক গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব। বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহাকালিক ইতিহাসের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারিরিভিউপ্রতিযোগিতা বই-অসমাপ্ত আত্মজীবনী(স্ট্যান্ডার্ড) লেখক-শেখ মুজিবর রহমান মূল্য-৫২৫ ঘরনা-জীবনী ও স্মৃতিকথা পৃষ্ঠা-৩২৯ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড "একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর 'আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, "হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।" আমি আর রেণু দু'জনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, "আমি তো তোমারও আব্বা।" কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।" একজন পিতার ঔরশজাত সন্তান। সে তার নিজের বাবাকে চিনতে পারছে না! ভাবা যায়? বিনা কারনে তার এই কারাভোগের দিনগুলো মুজিব আর তার পরিবার মিলে যেভাবে পার করেছিলেন, আমাদের পক্ষে কখনো সেই অনুভূতি গুলো বুঝতে পারা সম্ভব নয়। কোনদিন না। আমি যেদিন প্রথম জানলাম শেখ মুজিবের একটা জীবনী প্রকাশিত হয়েছে, যদিও তা পূর্ণাঙ্গ নয়।তবুও চোখ চকচক করছিলো। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানুষটাকে এতো পছন্দ করি। এতো বেশি! আমি তা কখনই প্রকাশ করতে পারবো না । তার কারণও হয়তো অনেক যা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতা থেকে তাকে একটু একটু করে জেনেছি ঠিকি। তবে অপূর্ণতাও কম ছিলো না। সেটা আংশিক পুরণ করবার জন্যই বোধহয় এই বই সাহায্য করেছে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অনেক অন্বেষণের পর হঠাৎ করে ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখহাসিনা তার পিতার চারটে আত্মজীবনী লেখার খাতা পান। এগুলো পাওয়ার পিছনেও আছে বিশাল ইতিহাস। যদিও সেগুলো পুরোনো কিন্তু সেগুলো পড়ে বুঝা গিয়েছিলো এগুলো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এগুলো তিনি লিখেছিলেন ১৯৬৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালীন সময়। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে তিনি লেখা শুরু করেন।এরপর লিখে যান পরিবার, দেশ, দেশের মানুষ সব কিছু। ১৯৫৫ সালে এসে লেখাটা থেমে যায়। আর আগায়নি। হয়তো এগিয়ে যেতো আরো অনেক খানি । আমরা হয়তো আরো অনেক না জানা কাহিনী জানতে পারতাম। কিন্তু আমাদের বঞ্চিত করেছে কতিপয় স্বার্থলোভী, পাষান্ড লোকগুলো। বাঁচতে দেয় নি তাকে। মেরে ফেলেছিলো ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শুধু একটি আত্মজীবনী নয় বাঙালী জাতির জন্য এক বিশাল ইতিহাসও বটে। একে জীবনী সাহিত্যও বলা চলে। অন্যান্য সাধারণ আত্মজীবনীমূলক রচনা গুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে রয়েছে ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৪-৫৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের নিরপেক্ষ তথ্য এবং বিশ্লেষন। অসাধারণ ভাষারীতি অত্যন্ত সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল। আত্মজীবনী হলেও পড়ার সময় মনে হবে কল্পনিক কোন গল্প শুনছি বোধহয়। এর শুরটা হয় একবারে সহজভাবে মুজিবের বংশের পরিচয় দিয়ে। এরপর শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো। গ্রামের আর পাঁচটা কিশোর ছেলের মতো দুরন্তপনার কান্ডকাহিনীর মাঝেও স্পষ্ট হয় মুজিবের আপোষহীন চরিত্র। যে কখনও কোন অন্যায় এর সাথে আপোষ করেনি। চলতে থাকে তার জীবনের গল্পবলা। তার বিয়ের গল্প। কলকাতা কলেজের গল্প। রাজনীতি প্রবেশের গল্প। রাজনীতিতে সক্রিয় হবার ফলে পরিবার পরজনদের থেকে দূরে থাকার গল্প। সময় অসময়ের গল্প। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে হার্ট দুর্বল হওয়া, দুই বছর পর চোখের অসুখ গ্লুকমায় আক্রান্ত হয়ে চশমা নেয়ার সহ কৈশরেই হিন্দু সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শেখ মুজিব প্রথম জেলে যান। রাজনৈতিক জীবনে আপোসহীন ও নির্লোভী চরিত্রের জন্য তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।১৯৩৬ সালে সুভাষ বসুর অনুকরনে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও , সক্রিয় হন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে। বংশ পরিচয়ের পর সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয়ের অংশটাও তিনি বর্ণনা করেছেন। একেকটি গল্পের সাথে আরেকটি গল্প তিনি এমন ভাবে জুড়ে দিয়েছেন, তাতে কোন ফাঁক নেই প্রতিটা পৃষ্ঠা সমান আকর্ষনীয়। প্রতিটা পৃষ্ঠায় চমক। একটা মানুষ এতো সারল্য এতোটা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের হতে পারে! আছে তার সততা, ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা। একজন দক্ষ ঔপন্যাসিকের মতো বর্ণনা করে গেছেন, যেখানে ইতিহাস আর একজন মহামানবের জীবনী এক হয়ে গেছে। একটা থেকে অন্যটা আলাদা করবার কোন জো নেই। আছে অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর। অনেক সমালোচনা । নিজের এবং রাজনৈতিক প্রতিটা ব্যক্তি বর্গের। দলের বিভিন্ন কাহিনী। কেন কংগ্রেস থেকে মুসলিম লীগ? কেন মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলীম লীগ? কেন আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম বাদ হলো? যে পাকিস্তান গড়ার জন্য এতো কিছু। সেই পাকিস্তান হওয়ার পর তাকে কেনই বা সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করতে হয়েছে? তাছাড়া আত্মজীবনীটি লেখার প্রেক্ষাপট, তার জন্ম-বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল-কলেজের শিক্ষাজীবন, তার সংগ্রাম, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে তার কর্মকাণ্ড, কলকাতায় হিন্দু মসলিম দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, ৪৭ দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, তাঁর অংশগ্রহণ, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তানের বিমাতা সুলভ আচরণ। ষড়যন্ত্রের এবং এসব বিষয়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। তাছাড়া এরই ফাঁকে ফাঁকে তার সহধর্মিনী এবং পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তিনি কেন জাতির পিতা। কেনইবা তাকে জাতির স্থপতি বলা হয়, তার পরিচয় মিলবে পৃষ্ঠার বইটাতে। না, তিনি সেটা দাবী করেন নি নিজের সততা সংগ্রাম দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র তিনিই হতে পারেন একটি জাতির যোগ্য নেতা। এই মলাটবন্দী বইটাকে শুধু মাত্র জীবনী ভাবলে ভুল হবে। কেননা এটা একটা জাতির সূচনা লগ্নের ইতিহাস।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা " অসমাপ্ত আত্নজীবনী " বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা তার জীবনী নিয়ে বই সেটা শুনার পরই বইটির প্রতি এক প্রকার আগ্রহ জমে গিয়েছিল, ২০১৬ বইমেলায় যখন বের হয় সেবার কিনা হয়নি ইচ্ছা ছিলো ২০১৭ তে কিনে ফেলবো কিন্তু মজার বিষয় হলো বইটি কিনার আগেই বইটি কারো কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম (১৮-২-১৭ ইং) ৷ তারপর শুরু করলাম পড়া-সত্যি বলতে অনেক অজানা তথ্য ছিলো বইটিতে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে, আর তার থেকে বড় ফিলিংস ছিলো তা বঙ্গবন্ধুর নিজ লেখা হতেই জানতে পারছি ৷ তার - পরিবার,তার বিয়ের মজার ঘটনাটি যা অন্যসব বিয়ের মতো নয়, তারপর আস্তে আস্তে সময়ের প্রয়োজনে রাজনীতি তে যোগদান এবং কিভাবে একজন আদর্শ নেতা তৈরি হয় তাও জেনেছি ৷ স্বার্থহীন রাজনীতিও যে মানুষকে অর্থের চেয়ে অনেক বেশি মুল্য দিতে পারে তা এই কিংবদন্তীর বই না পড়লে জানতামনা, এখনতো বিশ্বের যত কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ বা বিশ্ব নেতা যারা ছিলো মহাত্না গান্ধী,নেলসন মেন্ডেলা ইত্যাদি সবার জীবনীর বই পড়তে কারন একজন বিশ্বনেতা হওয়ার পিছনে কতো ত্যাগ,সংগ্রাম আছে তা বুঝলাম ৷ স্বার্থহীন নেতারা যে কতো প্রভাবশালীও হয় মায়া মমতায় তা এই বই থেকেই জানা, শহীদ সাহেব,হক সাহেব,মাওলানা সাহেব বাঙ্গালির চিরস্বরনীয় নেতাদের কতো স্নেহ্ভাজন ছিলেন এবং একজন প্রখর ছাত্রনেতার মুল্যও কতো তাও শিখলাম,বঙ্গবন্ধু কোন সেমিনারে রাগ করেছিলেন দলনেতা শহীদ সাহেব তার রাগ ভাঙ্গিয়ে ছিলেন এসব বর্তমানে খুব একটা দেখা যায় না, কিন্ত তখনকার রাজনীতি যে কতটা নিষ্ঠার ছিলো তা বুঝা যায়, রাজনীতির খারাপ দিক যেমন তুলছিনা তেমনি বলব রাজনীতি সৎ-নিষ্ঠার ও স্বার্থহীনও হয়, যাদের এটির বিরুপ ধারনা তারা এই কিংবন্দন্তির বইটি পড়বেন ৷ এই বইটিতে যেমন অনেক ইতিহাস জানতে পেরেছি তেমনি অনেক কিছু শিখেয়ছি, ন্যায়ের জন্য লড়াই,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যা জীবন ঝুকি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ঐক্য সৃর্ষ্টি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হয়ে , ভাড়া না থাকায় হেটে দিল্লির সমাবেশে রওনা, এস্মিলি সফলের জন্য কষ্ট করে মাঠে তাবু করে থাকা , ঐক্য সৃষ্টি ইত্যাদি সত্যিই শিক্ষনীয় যার কষ্টের ফলস্বরুপ বিশ্ব জানে আজ বাঙ্গালি জাতির পিতা হিসেবে ,বইয়টির অন্যতম আকর্ষন ছিলো বঙ্গবন্ধুর পান্ডুলিপি তুলে ধরা এবং কিছু অতি মুল্যবান ছবি যা কেউ আগে দেখেনি - মহাত্না গান্ধী,মাওলানা ভাসানী,শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক,হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী দের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি গুলো সত্যিই ভালো লেগেছিল ৷ বেশী কিছু লিখতে পারলামনা কিন্তু সবাই জাতি-ধর্ম,রাজনৈতিক দন্দ্ব নির্বিশেষে বইটি পড়ে দেখবেন,অনেক ইতিহাস জানতে পারবেন ৷ বই লিংক - https://m.facebook.com/rokomari/photos/ a.184264648342150.30268.164315863670362/ 913723735396234/?type=3&source=5 6&ref=opera_speed_dial
Was this review helpful to you?
or
best books ever...every politicians of Bangladesh need to read this books
Was this review helpful to you?
or
বইটির বাইন্ডিং ও ছাপা খুবই সুন্দর
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 বুক রিভিউ :-(০২) ?বই:- অসমাপ্ত আত্মজীবনী ✒️লেখক:- শেখ মুজিবুর রহমান ♂️জনরা:- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ♂️প্রকাশনা:- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ♂️ব্যক্তিগত রেটিং:-[১০/১০]? 〰️রিভিউ করছি:- Himadri Sharma সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে সাহসী সংগ্রামের কথা, দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বারংবার বিনাদোষে কারাগারে নিক্ষেপিত হওয়ার বেদনা, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার কথা, নিগ্রহ-নিপীড়ন এর সাগরে ভাসতে ভাসতে তীরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতার দিকে দুহাত বাড়ানোর কথা। মহান এই কিংবদন্তি জন্মেছিলেন বলেই আজ আমরা বাঙালি হতে পেরেছি। তিনি সামনে থেকে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন বলেই আজ আমাদের দেশে স্বাধীনতার সুবাতাস বইছে। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সুবাদে আজ আমরা বিশ্ব মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, আমি একটি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক। ?? অসমাপ্ত আত্মজীবনী! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। বইটি বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্ত্রী রেণুর অনুরোধে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বসে লিখা শুরু করেছিলেন। এই বইটিতে মূলত ১৯৩৪-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সময়কালের ঘটনাপ্রবাহ জায়গা পেয়েছে। প্রতিটি ঘটনাপুঞ্জ এতটা নিরেট যে এর কোথাও যেন এতটুকুও ফাঁকফোকর নেই। সাবলীল ভাষা ও সহজবোধ্য উপস্থাপন-দুইয়ে মিলে গ্রন্থটি আমার কাছে মনে হয়েছে অনবদ্য এক আখ্যান। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে চারটি খাতা খুবই জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় খুঁজে পান, যা ছিল মূলত ১৯৬৭ সালে কারাবন্দী থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর লিখে রাখা বাঙালির ইতিহাসের কিছু অপ্রকাশিত দলিল। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২০১২ সালে এসে বঙ্গবন্ধুর লেখা সেই দলিলপত্রগুলো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামে প্রকাশিত হয়। অদম্য এক বালকের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্পই মূলত উঠে এসেছে অসমাপ্ত আত্মজীবনী-তে। বালকটি তাঁর নৈপুর্ণ্য-দক্ষতা দ্বারা জয় করে নিয়েছিলেন হাজারো অসহায়-নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত বাঙালির হৃদয়। হয়ে ওঠেন ধনী-গরিব সকলের বন্ধু, জাতীর বন্ধু, দেশের বন্ধু, প্রিয় বঙ্গবন্ধু! বইটিতে লেখকের কারাজীবনের গল্পই প্রাধান্য পেয়েছে। আর পাবেই বা না কেন? তিনি যে তাঁর জীবনের বিশাল একটা সময় (পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরের ১২ বছরই) কাটিয়েছেন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কারাজীবনের পাশাপাশি তাঁর পরিবারের লোকের কথা উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি, সহধর্মিণীর কথা বর্ণিত হয়েছে বইয়ে। এছাড়াও লেখকের শৈশব, সামাজিক-রাজনৈতিক নানান কর্মকান্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতা কেন্দ্রিক প্রাদেশিক মসুলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ সহ বেশকিছু বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সব অতিমানবীয় ঘটনাগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। বইটির বিশেষ দিক ছিল বইয়ের শুরুতে ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার লেখা। এছাড়া বইয়ের বিভিন্ন অংশে শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতের লেখা টুকরো ছবিগুলোর সংযুক্তিকরণ পাঠককে লেখকের জীবনের আরো কাছাকাছি নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য এই প্রজন্মের হয়নি ঠিকই, কিন্তু এই গ্রন্থটি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর একাগ্রতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দেশপ্রেম, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, স্থির লক্ষ্য সহ ব্যক্তি মুজিবকে চেনাবে। তারা অনেকটাই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন, কিভাবে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সাহসী নেতা একটি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। বইয়ের যে প্যারা পড়তে যেয়ে আমি খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম, ❝ একদিন সকালে আমি আর রেণু বিছানার পাশে বসে গল্প করছিলাম। হাচু আর কামাল তখন নিচে বসে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে দিয়ে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। ওদিকে কামাল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি!’ ছেলের এমন কথায় বাবা কিছুটা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। ছেলেটার জন্মলগ্ন থেকেই তাঁকে জেলে যেতে হয়ে বারংবার। পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল কামাল। ❞ বঙ্গবন্ধু বলতেন—“ আমার প্রাণপ্রিয় বস্তুর চেয়ে আমার দেশের স্বাধীনতা বড়। আমার হাসির চেয়ে আমার দেশের সব মানুষের হাসি বড়।” ? এই গ্রন্থটি বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আমার নেই, আর কখনো হবেও না। তবুও নিজের উপলব্ধির জায়গা থেকে এতটুকুই বলতে পারি, একজন বাঙালি হিসেবে এই কীর্তিমানের জীবনের ছোট-বড় সকল ঘটনাপ্রবাহ আমাদের জানা উচিত। তাই এই জীবনীগ্রন্থটি যেকোনো মূল্যেই বাঙালিদের কাছে শ্রেষ্ঠ একটি গ্রন্থ হয়ে থাকবে আজন্মকাল। বইতে হাসি, বইতে বাঁচি।❣️ #happyreading
Was this review helpful to you?
or
বই গুলো অসাধারণ। ডেলিভারিও সুন্দর মতো হয়েছে
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু শুধু একটি জাতির পিতা নন বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি অসমাপ্ত চরিত্র যার পূর্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের অত্যাচার ঠেলে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখানো মুজিব আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা থেকে ছাত্রজীবন,ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতির হাতে খড়ি থেকে ৫২ র ভাষা আন্দোল, ৬২ র আইয়ুব বিরোধী শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ র ৬ দফা আন্দোল, ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এই প্রত্ত্যেকটার কথা কে না জানে কিন্তু এই বইয়ে বঙ্গবন্ধু নিজের লেখনীতে তা এতটা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন যেন তা নিজের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটি যুদ্ধবিঃধ্বস্ত দেশ যেভাবে তিনি নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন তা পৃথিবীতে বিরল। একজন সাধারণ মানুষ থেকে রাষ্ট্রনায়ক আর মহানায়কের গল্প কেবলই তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী। তাই আমি বলব এই বইটি ছোটো বড় সবার অন্তত একবার হলেও পড়া উচিত যাতে করে তারা একজন স্বপ্নদ্রষ্টা আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সংগ্রামী জীবনের কিছুটা জেনে নিজের জীবনের আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করতে পারে...
Was this review helpful to you?
or
অসমাপ্ত আত্মজীবনী!!! সত্যিই অসমাপ্ত,একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক তার দেশের জন্য ঠিক কতটা আত্মোৎসর্গ করতে পারে এই বইয়ের প্রতিটি লাইনে তারই স্পষ্ট উদাহরণ দেখা যায় এই বইটি আমি ৩ বার পড়েছি,কিন্তু যতই পড়ি মুগ্ধ হই একজন দেশনেতার মধ্যে কতটুকু সাহস থাকলে তিনি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতেও পিছপা হননি এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় খুজে পাওয়া যায় নিয়ম নৈতিকতা, আদর্শ।একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি যে মানবিকতার আদর্শ ধারন করতেন এই বই তার একটি জীবন্ত প্রমাণ আর এই বইটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে করবে আদর্শবান,নীতিবান,অন্যায়ের প্রতিবাদী যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের পথে আরেকটি সফল ধাপ হয়ে থাকবে....
Was this review helpful to you?
or
বইটা অনেক চমৎকার।বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে এই বইটি অনেক ভালো ভূমিকা পালন করবে।এ থেকে জাতির পিতার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কেও জানা যাবে।প্রতিটি বাঙালির বইটি পড়া উচিত।আমার বইটি খুব ভালো লেগেছে।লেখকের লেখনীটা ভালো।বাংলাদেশ যে কত সংগ্রামের ফল তা আমরা এই বই থেকে জানতে পারি।
Was this review helpful to you?
or
?রিভিউ লেখক: মাহির আব্দুল্লাহ ?বইয়ের নাম। :- অসমাপ্ত আত্মজীবনী। ?লেখকের নাম:-শেখ মুজিবুর রহমান। ?দেশ : বাংলাদেশ ?? ?ভাষা : বাংলা ?বিষয় : ইতিহাস রাজনীতি ?ধরন : আত্মজীবনী ?প্রকাশনী:- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ?প্রকাশক:- মহিউদ্দিন আহমেদ। ?প্রথম প্রকাশ:- জুন, ২০১২। ?পৃষ্ঠা:- ৩২৯। ?মূল্য:-২২০ টাকা মাত্র। ?ISBN: 9789845061957 অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। এ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।❤️? বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।? ⭐ বইটির শুরুর একটু অংশ যেটা আমার অনেক ভালো লেগেছে:- বন্ধুবান্ধবরা বলে, "তোমার জীবনী লেখ"। সহকর্মীরা বলে "রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।" আমার সহধর্মিনী একদিন জেল গেটে বসে বললো, বসেই তো আছি লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।" বললাম, লিখতে যে পারিনা; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না । শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।" একদিন সন্ধায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট কোথায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তার সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্যে পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তা স্নেহ আমি পেয়েছিলাম। হঠাৎ মনে হল লিখতে ভালো না পরলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি? সময় তো কিছু কাটবে। বই ও কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে দুই চোখ দুটো ব্যথা হয়ে যায়। তাই খাতাটা নিয়ে লেখা শুরু করলাম। আমার অনেক কিছুই মনে আছে। স্মরণশক্তি ও কিছুটা আছে। দিন-তারিখ সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে, তবে ঘটনা গুলো ঠিক হবে বলে আশা করি। আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেনু— আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেনু আরো এক দিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম বইয়ের সংক্ষিপ্তসার:- আত্মজীবনী সাধারণত শুরু হয় নিজের কথা বা নিজের গুণকীর্তন দিয়ে।কিন্তু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র শুরুটা হয়েছে একটু অন্যভাবে। এখানে তিনি নিজের কথা না বলে তাঁর রাজনৈতিক গুরু শহীদ সাহেবের( হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) কথা দিয়ে শুরু করেছেন–’ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা।কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম।কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি একইসাথে আত্মজীবনী ও রাজনৈতিক দলিল। নিজের জীবন কাহিনীর মধ্য দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিবরণ। অসমাপ্ত এ লেখায় ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সালের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী শহীদ সাহেব ( হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) একটি সভা উপলক্ষে গোপালগঞ্জ যান। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক্সিবিশনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। সভাশেষে মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলে তার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম কথা হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই শহীদ সাহেবকে তিনি নিয়মিত চিঠি লিখতেন। ১৯৩৯ সালে কলকাতায় বেড়াতে গেলে তাদের আবার দেখা হয়। সেখান থেকে ফিরে এসে গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন এবং তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। এভাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৪১ সালের পর পুরোপুরিভাবে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে পরিবার কর্তৃক কখনো বাধাপ্রাপ্ত হন নাই বরং সবসময়ই অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন; যা বোঝা যায় তার পিতার এ উক্তিটির মাধ্যমে —’ বাবা রাজনীতি করো আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এতো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতেও ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবা না। আরেকটা কথা মনে রেখো Sincerity of purpose and honesty of purpose থাকলে জীবনে পরাজিত হবে না।’তাছাড়া তার স্ত্রীও পাশে থেকে সবসময় সাহস যুগিয়েছেন। প্রথমদিকে বাবার কাছ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক কাজে খরচ করতেন পরবর্তীতে স্ত্রী রেণু সংসারের খরচ বাঁচিয়ে তাঁর জন্য টাকা জমিয়ে রাখতেন। রাজনীতির সাথে জড়ানোর পর থেকে সব ধরনের জাতীয় ও গণতান্ত্রিক এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।আলোচ্য গ্রন্থে এর কালক্রমিক বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন তেতাল্লিশ এর দুর্ভিক্ষের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছি। তিনি তখন পুরোপুরি মাঠ পর্যায়ের কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শহীদ সাহেবের সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় লঙ্গরখানা খুলেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে দুর্ভিক্ষ এবং তারপর বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা প্রশমনে শেখ মুজিবের সক্রিয় ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।বিশেষত’ ৪৬ এর কলকাতার দাঙ্গার বিবরণ বেশ বিস্তৃতভাবে এসেছে এই বইয়ে। সে সময় দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি দিনরাত কাজ করে গেছেন। দেশবিভাগের পরপরই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন— স্বাধীন দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে যাচ্ছে। দেশ বিভাগের পর তার রাজনীতির গুরু শহীদ সাহেব পশ্চিমবাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে সেখানেই থেকে গেলেন। এদিকে নাজিমুদ্দিন নেতা নির্বাচিত হয়ে ঢাকা চলে এলেন। শুরু হল মুসলিম লীগের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির খেলা। এসময় তিনি তার অবস্থান থেকে সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, কথা বলেছেন নিপীড়িত মানুষের পক্ষে।সে সব বর্ণনা অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে এই বইয়ে উঠে এসেছে।শুধু তাই নয় কলকাতা সিলেট নিয়ে ব্রিটিশদের রাজনীতির বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়া যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা, আদমজী জুট মিলের দাঙ্গার কথা তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা করেছেন। রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুলেশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন, সবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। যুক্তফ্রন্ট হবার পর থেকে আরও নানাবিধ কিছু গন্ডগোল ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে কাহিনী প্রবাহ আগাতে গিয়ে হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। অসমাপ্ত এ লেখা আর শেষ করা হয় না। পুরো বইয়ে তিন-চারবার বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণের বিবরণ এসেছে। ভ্রমণকাহিনী গুলোর খুঁটিনাটি সব গুছিয়ে লেখা। যেমন ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনের শান্তি সম্মেলনে যোগদান এবং পুরো চীন ভ্রমনের কাহিনী খুব সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে। চীনের সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে।আজমিরে মাজার জিয়ারত, দিল্লি ভ্রমণ ও আগ্রার তাজমহল ভ্রমণের বর্ণনা আছে আত্মজীবনীতে। ⭐?নিজস্ব মূল্যায়ন/মন্তব্য: রাজনীতির কবি হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখের ভাষার মতোই বইটির ভাষারীতি অন্তত সহজ সুন্দর ও সাবলীল। বইয়ের শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে পাণ্ডিত্য কিংবা উপমা,রূপকের ব্যবহারে চমৎকারিত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা নাই, নাই জ্ঞানগর্ভমূলক বা কোন উপদেশবাণী দেওয়ার চেষ্টা। তবুও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। অন্তত সহজ ও নির্লিপ্ত ভাষায় পুরো ঘটনাপ্রবাহ তিনি লিখে গেছেন। কিছু জায়গায় ঘটনার প্রয়োজনে কিছু আবেগ তাড়িত কথাবার্তা এসেছে। কিন্তু সেটার পরিমাণ খুব বেশি নয়। এছাড়াও আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, সৌন্দর্যবোধ ও সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ এর পরিচয় পাওয়া যায়। ⭐⭐বই হচ্ছে মানুষের সেই বন্ধু যে কখনো ক্ষতি করে না।বই-ই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । যার সাথে পার্থিব কোনো সম্পদের তুলনা হতে পারে না । একদিন হয়তো পার্থিব সব সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাবে , কিন্তু একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনও নিঃশেষ হবে না , তা চিরকাল হৃদয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে । আরবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির আবেদন বহুমাত্রিক। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটিতে ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের বিশেষত পূর্ব বাংলার সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পূর্বে বাঙ্গালি জাতীয়তাবোধের চেতনা কোথায় এবং কখন থেকে উন্মেষ হয়েছিল তা জানার জন্য হলেও অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি পাঠোদ্ধার করা জরুরী। এছাড়াও বিসিএস ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী আপনাকে পড়তেই হবে। ব্যক্তিগত রেটিং : ১০/১০ সবাই ভাল থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম ??
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু যে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্যের পাশাপাশি একজন দারুন লেখকও ছিলেন, সেটি বইটি পড়ে ভালোভাবে বোঝা যাবে। অসাধারন!! জয়তু শেখমুজিব!
Was this review helpful to you?
or
অসমাপ্ত আত্মজীবনী হলো বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী।অসমাপ্ত আত্মজীবনীঃ শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। ২০১২ সালের জুনে এ বইটি প্রকাশিত হয়।এ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
এটি একটি অসাধারণ বই।
Was this review helpful to you?
or
বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে
Was this review helpful to you?
or
আমি কয়েকদিন বাড়িতে ছিলাম। আব্বা খুবই দুঃখ পেয়েছেন। আমি আইন পড়ব না শুনে বললেন, “যদি ঢাকায় না পড়তে চাও, তবে বিলাত যাও। সেখান থেকে বার এট ল' ডিগ্রি নিয়ে এস। যদি দরকার হয় আমি জমি বিক্রি করে তােমাকে টাকা দিব।” আমি বললাম, “এখন বিলাত গিয়ে কি হবে, অর্থ উপার্জন করতে আমি পারব না। আমার ভীষণ জেদ হয়েছে মুসলিম লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন দেখি তার উল্টা হয়েছে। এর একটা পরিবর্তন করা দরকার। জনগণ আমাদের জানত এবং আমাদের কাছেই প্রশ্ন করত। স্বাধীন হয়েছে দেশ, তবু মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে না কেন? দুর্নীতি বেড়ে গেছে, খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিনা বিচারে রাজনৈতিক কর্মীদের জেলে বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মুসলিম লীগ নেতারা মানবে না। পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প কারখানা গড়া শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। রাজধানী করাচি। সব কিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব বাংলায় কিছু নাই। আব্বাকে সকল কিছুই বললাম। আব্বা বললেন, “আমাদের জন্য কিছু করতে হবে না। তুমি বিবাহকরেছ, তোমার মেয়ে হয়েছে, তাদের জন্য তো কিছু একটা করা দরকার।” আমি আব্বাকে বললাম, “আপনি তাে আমাদের জন্য জমিজমা যথেষ্ট করেছেন, যদি কিছু না করতে পারি, বাড়ি চলে আসব। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া চলতে পারে না। আমাকে আর কিছুই বললেন না। রেণু বলল, “এভাবে তােমার কতকাল চলবে।” আমি বুঝতে পারলাম, যখন আমি ওর কাছে এলাম । রেণু আড়াল থেকে সব কথা শুনছিল। রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্যে টাকা পয়সা জােগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয়।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও অবদান অবিসংবাদিত। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং তার পূর্বের প্রেক্ষাপট বিশেষতঃসাতচল্লিশের দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহ দিন,বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন,চুয়ান্নর নির্বাচন,ছেষট্টির ছয়দফা,ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান,সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, সর্বত্রই— সক্রিয় ও অভিভাবকসুলভ নেতৃত্ব লাভের সৌভাগ্য বাঙ্গালির হয়েছে। কেমন ছিল সেসব দিনগুলো? কিভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন? সেসব দিনে, সংকটে,আন্দোলনে কিভাবে নেতৃত্ব দিতেন,নীতিনির্ধারণ করতেন সব বিবরণই বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লিপিবদ্ধ আছে এ বইয়ে, বিশেষত চুয়ান্ন পর্যন্ত পাবেন বিস্তৃত বিবরণ,বাকিটা আছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন(৫৫-৭৫) অধ্যায়ে। বঙ্গবন্ধুর এই অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। বইটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন, আত্মজীবনীটি লেখার প্রেক্ষাপট, বঙ্গবন্ধুর জন্ম, পিতামাতা,বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবন,সংগ্রাম,সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড,কলকাতার হিন্দু মসলিম দাঙ্গা,দুর্ভিক্ষ, সাতচল্লিশের দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি,তাঁর অংশগ্রহণ, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে, জানতে পারবেন তার সহধর্মিনী এবং পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও। ফ্ল্যাপে রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ জীবনী সংক্ষেপে অথচ প্রয়োজনীয় তথ্যে সমৃদ্ধ। বাইরের ফ্ল্যাপে তাঁর নিজস্ব বর্ণনার একটি অংশ— "একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম।হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝেমাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, 'হাচু আফা,হাচু আফা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।' আমি আর রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, 'আমি তো তোমারও আব্বা' কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই , তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস।রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বগ জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।" তাছাড়া, এ বইয়ের বিশেষ কিছু সুবিধা হলো- বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কর্মকান্ডের কিছু দুর্লভ ছবি, রয়েছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা, জীবনবৃত্তান্তমূলক টিকায় পাবেন সমসাময়িক রাজনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের পরিচিতি- যা সমৃদ্ধ করবে আপনার জানার জগৎকে।
Was this review helpful to you?
or
"অসমাপ্ত আত্মজীবনী" গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাঙালী জাতির ভাষা-সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাগ্রচিত্ততা, তাঁর রাষ্ট্রভাবনা, ইতিহাস চেতনা, নেতৃত্ব, নেতৃত্বের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ, কারাস্মৃতি, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রভেদ ও বৈষম্য, ভাষা-আন্দোলন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সংগঠন বিস্তার ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণিত হলেও, একটা বিষয় আমাকে বেশ চমকিত করেছে, আর তা হচ্ছে তাঁর শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গনচীন ভ্রমন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীন শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। মাও সেতুং-এর দেশ গণচীনে তিনি চীনা মানুষের শিক্ষা, আচার, দেশপ্রেম আর দেশ গড়ার একাগ্রতা দেখে অভিভূত হন, এমনকি পশ্চিমা ব্লেডও তিনি পাননা সেখানে ‘সেভ’ করতে, যেহেতু চীনারা দেশেপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমা ব্লেডের পরিবর্তে সেভ করেন নিজ দেশের খুর দিয়ে। একই সঙ্গে তিনি ব্যঙ্গ সমালোচনা করেন বৃটিশ শাসিত প্রতারণাপূর্ণ হংকংয়ের। চীন ভ্রমণ উপলক্ষে তিনি তাঁর এ আদর্শিক অবস্থান ব্যক্ত করেন এভাবে, “... আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসেবে মনে করি। এই পুঁজিবাদ সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে, ততদিন দুনিয়ার মানুষের ওপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না”। বায়ান্ন সনেই চীন সফরে সাহসী বঙ্গবন্ধু লাখো মানুষের সম্মেলনে তাঁর বাংলায় প্রদত্ত ভাষণে আরো বলেন, “পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধ পরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্ব শান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবদ্ধ ছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে- তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগণের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মুক্তির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিশ্বশান্তির জন্য জনমত সৃষ্টি করা তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে”। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে জনগণের শোষণ মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর কথায়, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।’ সে বিশ্বাসকে ধারণ করে স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২ সালের সংবিধানে তিনি ‘সমাজতন্ত্র’কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন, পশ্চিমের অবাধ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নয়। এবং এ বিশ্বাসের বলেই তিনি চীনা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মতো বাঙালি জাতির মুক্তির পথ নির্দেশনা হিসেবে প্রবর্তন করেন ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ’ বা বাকশাল। এখন বামপন্থী (ডানপন্থীতে রূপান্তরিত) জ্ঞানপাপীরা কেবল ‘১-দলীয় বাকশালের’ সমালোচনায় মুখে ফেনা তুললেও, চীনের বিশ্ব কাঁপানো এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নের চূড়ান্ত শিখায় আরোহণকে দেখে মুখে কুলুপ লাগিয়ে চুপ থাকেন। তখন একবারও বলেনা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা খারাপ বা উন্নয়নের অন্তরায়! হায় এদেশের রাজনীতি আর ধর্ম নিয়ে খেলছে ভন্ড খেলোয়াররা, কবে সাধারণের কাছে উন্মোচিত হবে এদেশের মুখোশ? বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বাঙালি জাতির এক অনুন্মোচিত পথদিশা, যা পাঠককে দেখাতে পারে এক অনারম্ভর নেতার ক্লান্তিহীন পথচলা, যা ধাবিত হয় কেবলই অসাম্প্রদায়িকতা, স্বদেশপ্রেম আর মানবিকতার দিকে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর এ লেখকের সঙ্গে কি তুলনীয় হতে পারে এ মাটির, এ নদীর, এ বাতাসের কারো সঙ্গে? কখনোই নয়! এবং অদ্যাবধি জন্মাননি এ মাটিতে তাঁর সমতূল্য কেউ। ----- আলাল হোসেন আবির, জিয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মোবাইল- ০১৬৮৪-১৫৬৬৭৮ ।
Was this review helpful to you?
or
I love the Father of the Nation at core of my heart for being a Bangladeshi, so that i want to know about him by reading his book.
Was this review helpful to you?
or
সুন্দর লেগেছে বইটি। অনেক কিছু জানার বোঝার আছে। তবে মনেহয় না ততকালীন সকল সত্য ঘটনা গুলো এতে লেখক লিখেছেন! হয়তো সরকার এর কারসাজি।
Was this review helpful to you?
or
একটা অসাধারণ বই। আর বঙ্গবন্ধুর লেখনীর হাত ও চমৎকার। রাজনীতি বড় জটিল বিষয়। এই রাজনীতির বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে একটা দেশ ও জাতির স্বাধীনতা আনয়নকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বইটি ছোটো বড় সবারই পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারন, অসাধারন............
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের পড়া উচিত কারন এতে উঠে এসেছে দেশপ্রেম ও দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার ইতিহাস এতে আরো উঠে এসেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা যে চেতনাকে আকড়ে ধরেই স্বাধীন হয়েছে এই সোনার বাংলা পাশাপাশি উঠে এসেছে ৭১ এএর ঘাতক-দালালদের কথা বইটি এককথায় চমৎকার
Was this review helpful to you?
or
আমি এক জন নতু ইউজার, আপনাদের সাইটের কিন্তু, আমি আপনাদের সাইট থেকে এই বই টা পর পর ১০ অর্ডার করেছি এবং ১০ টা ই আমার পড়ার জন্য। ১০ টা কিনে যে আমি একা পড়েছি তা কিন্তু নয়। এ গুলোর কোন টি আমার ভাইকে দিয়েছি আবার কোনটি আমার ফ্রেন্ডকে দিয়েছি। বই টি পড়ে আমার মনে হলো বই টা অসম্বব ভালো।