User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ami kokhono kono golpo pore kadi ni. Ei golper plot eto ta sundor chilo.Bondhutto jinish ta k evabe futiye tula hoyeche ja amk kadiyeche.Golpo ta onk sundor.Bondhutter bondhon r valobasha niye ei golpo ta amr kase sob thke priyo...
Was this review helpful to you?
or
আর কিছু দিনের অপেক্ষা,
Was this review helpful to you?
or
#নীল_চিরকুট #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ নীল চিরকুট •লেখকঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা •ধরনঃ রোমান্টিক, সামাজিক •প্রকাশনীঃ অন্যধারা •প্রচ্ছদঃ মো. সাদিতউজ্জামান •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৬০৮ •প্রকাশকালঃ এপ্রিল ২০২৫ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ তীব্র ঝড়বৃষ্টির অধিক অন্ধকার হয়ে আসা রাতে আমার কখনও কখনও ছাদে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে । ইচ্ছে করে অগণিত বার ভিজতে ভিজতে খোলা আকাশের নিচে এক নিবিষ্ট মন নিয়ে তাকিয়ে থাকি । বৃষ্টির সেই অবিরত জলধারা পড়তে থাকলেও চোখ না সরাতে চেষ্টা করি । এরকম অবিরাম মুহূর্তে আমার ভাবতে ইচ্ছে করে, এই আকাশ এরকম কেনো! কতশত জীবন, তার গল্প এবং তাকে ঘিরে রাখা জীবনের অদ্ভুত এক টান শুধু নিস্পৃহ ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে । আর কখনও মন খুলে হয়ে আসা বিশেষণগুলো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে দিতে শুধু ক্লান্ত হয়ে তাকিয়ে থেকে যায় । এই অদ্ভুত রাতগুলোতে এই বৃষ্টি গুলোকে আমার ভীষণ মায়াবী বলে মনে হয় । মনে হয় যেন এর থেকে সৌন্দর্য পৃথিবীতে আর কোথাও নেই । কোথাও আকর্ষিত হওয়ার কিছু নেই । এই সৌন্দর্যে তিলক এঁকে আটকে রাখার যত্নে আমি বই খুলে পড়তে বসি কখনও । যাতে এই অদ্ভুত সৌন্দর্য কখনও শেষ না হয়ে যায় । তীব্র ঝড় বৃষ্টি হওয়া রাতে জানালার পাশে বসে বই পড়তে পড়তে অদ্ভুত ক্ষীণ হয়ে আসা সুরে হালকা রবীন্দ্র সঙ্গীত কখনও বিরহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকা মোমবাতির সামান্য আলো এক মোহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করে যেন । যা কখনও কোথাও শেষ হওয়ার কথা ছিল না । ♦নামকরণঃ এই পৃথিবীতে ভালোবাসা কিভাবে আসে জানো? অনুভূতির প্রতিটা আলোড়নে এক অদ্ভুত কেমন এক বেদুইন টান এসে যাওয়ার কারণে । পৃথিবীটাকে ভীষণ ছন্নছাড়া বলে মনে হয় । এই টানে কারো প্রতি মন কেড়ে নেয়া ভীষণ এক ব্যথা তৈরি হয় । হয়তোবা তীব্র আকর্ষণে । হয়তোবা কিছু চাহনিতে । হয়তো সাময়িক এক বিশেষণের খেয়ালে কখনও ভুলতে না পেরে । তবুও ভালোবাসা হয়ে যায় । এরকম হুটহাট বিভিন্ন পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন মন খেয়ালের আনমনে পরিস্থিতিতে । পৃথিবীতে নীল বলা হয় বিরহের রং । বিষাদের তীব্রতাকে গভীরতা নিয়ে আঁকড়ে ধরা চিহ্ন । কিন্তু আমি যেন খুঁজে পাই এই নীলে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, কান্না, হাসি, অদ্ভুত এক নিঃশ্বাস, জড়িয়ে ধরা পৃথিবীর সমস্ত মুহূর্ত যা মানুষকে আলোড়িত করে তা যেন নীল রঙে ভেসে আসে । নীলে আচ্ছন্ন হওয়া কাগজের চিরকুটে এই অনুভব যেন কালিতে লিখে যাওয়া শব্দগুলোর আড়ালে বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করার তীব্র আকর্ষণ । ‘নীল চিরকুট’ যেন তাই কোথাও কাউকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা । কাউকে খোঁজার নিঃশ্বাস । এবং অনুভূতির ছন্দে কালির শান্ত চাহনি । অপরদিকে আলোড়িত করে ফেলা ভেসে যাওয়া বৃষ্টির পানির মতো বন্ধুত্বের আকাঙ্ক্ষা । এক হয়ে দৃষ্টি মেলে ধরা সুখ সুখ টান । এরকম বহুমুখী আলোড়ন নিয়ে ভেসে আসা নীল চিরকুট’কে তাই মন কেড়ে নেয়া আবেশ বলে দেয়া যেতে পারে । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ টিএসসির উচ্ছ্বাস, কলরব, গিটারের হুল্লোড় আর ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে শুরু হয়েছিল যে বন্ধুত্ব, তা হঠাৎ বন্দি হয়ে গেল একটি নীল চিরকুটের খামে । শাহবাগ গণগ্রন্থাগারের পুরোনো ফিলোসোফির বইয়ে সুবাস ছড়াল ঝরা বেলি । ক্যাফেটেরিয়া ছাড়ল দীর্ঘশ্বাস । অনেকগুলো জীবনের কথা, দুঃখ, হাসি, সুর, অপেক্ষা ধূসর আলোর মতোন চিরন্তন হলো গোধূলিসন্ধ্যায় । মুক্ত পাখিরা গুটিয়ে নিলো ডানা । গাঢ় বিষাদের অবেলায় সকলেরই সেকি উন্মুখ অপেক্ষা! কখন আসবে ডাকপিয়ন? কাটবে আঁধার । আসবে চিঠি । একটা গাঢ় নীল চিঠি । ওরা ওকে আদর করে বলে, চিরকুট । এই প্রবল অপেক্ষার নামই কী তবে ‘নীল চিরকুট’? ♦প্রচ্ছদঃ বেলি ফুলের তীব্র সুবাসে পৃথিবীতে এক মনোজগত তৈরি হয় । যে জগতে আবেশিত হওয়ার এক চেষ্টায় সবকিছুকে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে । ইচ্ছে পৃথিবীতে সব বিশেষণে বিশেষায়িত করতে দিতে । একটি চিঠি আসবে । চিরকুটের খামে মোড়া জীবনে বড্ড আলগোছে আদর নিয়ে মাথা নাড়িয়ে দিতে দিতে বলে যাবে পৃথিবীর প্রতি সমস্ত টানের এক অদ্ভুত চূড়ান্ত রাশ । পলেস্তরা খসে পড়ে যাওয়া দেয়ালে ঝুলতে থাকা জীবনের আলগোছে চিন্তায় এবং টানাপোড়েনে বেলি ফুলের সুবাসে ভেসে আসা এই চিঠিকে তাই দেখলেই কেমন একটা সর্বগ্রাসী চিন্তা বলে মনে হয় । মনে হয় বড্ড আয়েশ করে হঠাৎ করে একাগ্র হয়ে যাওয়ার তীব্র আলোড়ন । এবার তারা মুক্ত হোক, দুদণ্ড শান্তি ফেলে সুখ সুখ দুঃখ দিয়ে হলেও এক হওয়ার নিঃশ্বাস গড়ুক । কোথাও গিটারের সুরে হাসির মতো নিঃশ্বাসে কান্না না ভিজে আসুক । ভিজে আসা কান্নায় যেন দুঃখ থাকলেও গিটারের সুরে জমাটবদ্ধ এক সুখ সুখ দুঃখ তা ধরা দেয় । বন্ধুত্বের বিভিন্ন মুহূর্ত এবং পরিবেশকে নিয়ে গড়ে তোলা মুহূর্তগুলোতে বন্ধুদের সবার এক হওয়া হোক । আয়েশ করে জীবনের ব্যস্ততায় এক অদ্ভুত টান লেগে পড়ুক । দরজায় কড়া নেড়ে বলার মতো করে কেউ বলুক, চিঠি এসেছে চিঠি । যে চিঠি সব বিশেষণে থাকা অনুভূতিকে একচ্ছত্র করে দেয়ার আধিপত্য বিস্তার করুক । সেই চিঠিকেই পৃথিবীর ইতিহাসে নীল চিরকুট নামে আহ্বান করা হয় । যা পৃথিবীতে সব আহ্বান আলগোছে লিখে দিয়ে জানান দিয়েছিল । এই অদ্ভুত পলেস্তরা খসে যাওয়া ছনের মতো হওয়া দেয়াল, ঝুলতে থাকা চিঠির অদ্ভুতুড়ে খাম এবং বেলি ফুলের আচ্ছন্নতা কোথাও একটা গিয়ে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করে দেয় । তীব্র আকর্ষিত হওয়ার তুমুল এক ধরনের টান বাড়ায় । অদ্ভুত ধরনের এই প্রচ্ছদটি তাই সারাজীবনের জন্য মনে লেগে যায় । মনের এক কোঠায় আটকে বসে থাকে গভীরতা সম্পন্ন মুগ্ধতা নিয়ে । ♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ছোট বেলার কথা আমার তেমন একটা মনে পড়ে না । শুধু মনে পড়ে কিছু খণ্ড খণ্ড ইচ্ছে । আর কিছু কিছু কাজ । যেগুলো করা হতো বলে যখন হঠাৎ বয়সের অভ্যাসহীনতার জন্য একটা সময় পরে এখন বড় হয়ে যেতে হয়েছে তখন তা ভালো লাগায় আকর্ষণ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । ছোটবেলায় আব্বুর দূরে থাকার সুবাদে আব্বু প্রচুর চিঠি পাঠাতো বাড়িতে । বাংলা দাগ টানা কাগজের মতো পৃষ্ঠার বড় বড় কাগজগুলোতে দুই তিন পৃষ্ঠা করে করে চিঠি । সবাইকে আলাদা করে পাঠানো চিঠিগুলোতে আমাদের সবার জবাব দিতে হতো । সেই চিঠিগুলোতে একটা সময়ে আকর্ষণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হতো, আমি এই ধরনের চিঠি, ছোট ছোট অনুভব প্রকাশ করা চিরকুটগুলোকে ভীষণ পছন্দ করি । এই ধরনের লেখাগুলোতে সবকিছু অনুভব করতে চাই । তাই যখন একটা দিন হঠাৎ করে আমি ফেসবুকে নীল চিরকুট পড়ে ফেলেছিলাম, আমার মনে হয়েছিল আমি আমার নিজস্ব গণ্ডিতেই অনেকগুলো জীবনের গল্প যেন মিলেমিশে যেতে দেখলাম । ✓পটভূমিঃ নীল চিরকুট নামে মনে হতে পারে এই উপন্যাস চিরকুট, চিঠির গল্প বলা এক নীল রঙের কাগজের অগোছালো হয়ে থাকা আখ্যান । কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এই উপন্যাসটি যেন অনুভূতির খেলাঘরে সব অনুভবকে নীল চিরকুটের খামের ভেতরে আচ্ছাদিত করা এক নিরবচ্ছিন্ন সুর । যেখানে সবকিছু একই স্রোতে বেঁধে পড়ে জীবনের তরে ভেসে গিয়েছে । উপন্যাসের পটভূমিতে ভেসে আসা বন্ধুত্বের টান, বন্ধুত্বের গল্পে এক হওয়াকে তাই ভীষণ অর্থবহ জীবনের গল্প বলে মনে হয় । যেখানে বন্ধুরা ভালোবেসে সময়ের অনুভূতিহীন খেলায় বন্ধুদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় । সময়ের প্রয়োজনে সেই ভাসানোর খেলায় কখনও মায়া জয়ী হয় । কখনোবা ছন্দ । কিন্তু বন্ধুত্ব ভেসে আসা এই পটভূমিতে ভালোবাসা যেন ভেসে আসে নিজস্ব ছন্দে, নিজস্ব টানে । ক্লান্তিতে ভেসে আসা বন্ধুদের এক হয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া স্মৃতিচারণের সুরে কখনও এই উপন্যাসের পটভূমিকে তাই ভীষণ কাছের বলে জীবনের গল্প মনে হয় । সবার জীবনেই যেন এরকম বন্ধুত্ব আসে । স্বকীয়তা মেনে চলা গল্পে অদ্ভুত এক টানে বিদায় হওয়ার ভয়ে কোথাও কঠিন এক কষ্টের নিঃসঙ্গতা অদ্ভুত এক ব্যথা টেনে আনে । এই উপন্যাসের পটভূমিতে ব্যবহৃত হওয়া একই ধাঁচের, সুরে বয়ে যাওয়া সেই গিটারের নিস্তরঙ্গ জীবনেও কখনও ঝড় নামার মতো করে অদ্ভুত কিছু পালাবদল আসে । কখনও উপন্যাসে গভীরতা বয়ে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ আসে । কখনোবা গভীর এক উদাসীন টান । আবার কখনও সহজ হওয়ার অবিরত এক ভাষা । এই অদ্ভুত দ্বৈরথে উপন্যাসকে তবুও কখনও অন্যরকম মনে হয়নি । বরং নিজের মতো করে বয়ে চলা জীবনের গল্পে নদীর জলে ভেসে যাওয়া অদ্ভুত নীল চিরকুট এর আখ্যান বলেই মনে হয়েছে । যে আখ্যানে ভালোবাসা আসে, বিরহ আসে, দুঃখ, সুখ সব আসে । কিন্তু একটা সময়ে তা সব একত্র হয়েই পথ চলতে শিখে যায় । ✓আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ভীষণ গভীরতা পূর্ণ । বেশ খেয়াল করে গড়ে তোলা পটভূমি এবং ঘটনাপ্রবাহের এক অদ্ভুত টানে যেন আবহ সৃষ্টি এক ধরনের মায়া তৈরি করে দেয়ার কাজ করে যায় । বড্ড বেশ ভারসাম্যপূর্ণ মায়া । জীবনের পরিস্থিতি অনুযায়ী, সমাজের চিরাচরিত জীবনের সমান্তরাল এবং টানাপোড়েন, কঠিন গ্রাম্য জীবনের কুসংস্কার সব কিছু মিলিয়ে তা পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যেভাবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে তা বেশ প্রভাবিত করার এক অদ্ভুত ছাপ রেখে যাওয়ার চেষ্টা করে যায় । ♦চরিত্র গঠনঃ এই উপন্যাসে বেশ অনেকগুলো চরিত্র আছে । সবার জীবনেই কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে এক ধরনের ছাপ । এক ধরনের আলগোছে নিশ্চুপ নীরবতা । এই চরিত্রগুলো গঠন করার সময়ে উপন্যাসের পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যেভাবে সাজানো হয়েছে তা বেশ ভালো ছিল । ♦চরিত্র বিশ্লেষণ এবং অনুভবঃ ♣নীরাঃ সমাজের এক অদ্ভুত চিরাচরিত দ্বন্দ্বে মেয়েটির জীবনে কষ্টে ছাপ আসে । সেই ছাপে ধৈর্য ধরে জীবন নামক খেলায় এগোতে গিয়ে টের পায় তার জীবনের কষ্টে কোনো সুখ নামক বোতাম নেই । যে বোতাম ধরে রাখলেই বুঝি অদ্ভুতুড়ে এক সুখ আসবে । নীরবে জীবনের গল্পে দুঃখ ভুলতে যাওয়া নারীটি তবুও চেষ্টা করে যায় । সেই চেষ্টায় আত্মসম্মানবোধ একটু কম থেকে গেলেও তবুও অবিরত এক চেষ্টায় মেয়েটা নিঃশ্বাস ছাড়ে তার সাময়িক ফিরে আসা সুখের রাজ্যে হাওয়া দিতে দিতে । ✓এই পৃথিবীতে নিজেকে দেখার ছায়া খুঁজে ফেরা জীবনে কারো চোখে নিজের ছায়া দেখতে পেয়েছিল সে । অদ্ভুত, সেই ছায়া প্রকাশ পাওয়ার ভয় । রৌদ্রোজ্জ্বল আবছায়ায় তা সামনে আসার ভয় । এই নিয়েই নীরা এগিয়ে যেতে চায় জীবনের পথ । কষ্টের পথ । ✓পৃথিবীতে একটা পরিস্থিতিতে সমাজের কাছে আসলে দায়বদ্ধতার এক ধরনের ছাপ এসে যায় । তখন সুখে থাকার সংজ্ঞা খুঁজে না পেলেও বলতে হয়, মানিয়ে নিতে হয় । এই আহ্বান জীবনে ধৈর্য ধরে এগিয়ে চলার এক চেষ্টা । ♣নম্রতাঃ অদ্ভুত আলগোছে সুখ সুখ অনুভবে বড় হওয়া মেয়েটির জীবনে বন্ধুদের প্রতি তীব্র ভালোবাসা রয়েছে । তবুও বন্ধুত্ব এবং জীবনকে উপভোগ করার জন্য চেষ্টা করে যাওয়া মেয়েটির জীবনে অপেক্ষা এক ধরনের ভালোবাসার নাম হয়ে দাঁড়ায় । ভালোবাসার প্রতি অদ্ভুত সুন্দর মূল্যবোধ তাকে যেন কষ্ট দিতে চায় । এই পৃথিবীতে অপেক্ষা এবং ভালোবাসা কি একই সূত্রে গাঁথা এবং তা অনুভূতিতে কষ্ট এবং ধৈর্যের মূল্যবোধ নিয়ে খেলা করে তা যেন টের পাওয়া যায় । ✓নীল রঙের কাগজের প্রতি থাকা তীব্র আকর্ষণে কাগজে কালি দিয়ে ছেয়ে যায় মনের অনুভূতি প্রকাশ । এই পৃথিবীতে অনুভূতি প্রকাশ করে ফুটিয়ে তোলাই যেন মনের কাছাকাছি কোনো বিশেষ বিশেষণকে ব্যাখ্যা করা । তা যেভাবে পত্রমিতার মাধ্যমে অচেনা বন্ধুকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা তা যেন ভীষণ অন্যরকম হয়ে ধরা দেয় । ✓তার কিছু সুন্দর পছন্দ আছে । জ্যোৎস্না এবং চাঁদ নিয়ে থাকা স্বপ্নের মতো পছন্দ । সেই স্বপ্নে ভাসতে গিয়ে তার পৃথিবীতে ভালোবাসার নতুন এক খেয়াল যেন আসে । সেই পছন্দে পৃথিবীতে সে অপেক্ষা করতে থাকে কোনো এক রাতের প্রেমের, কোনো এক রাতের জ্যোৎস্নামাখা রাতে চাঁদের সাক্ষী হওয়ার । ✓এছাড়াও তার কিছু অদ্ভুত সুন্দর ইচ্ছে আছে । এই পৃথিবীতে পছন্দ এবং ইচ্ছে যেভাবে এক হয় না । কিন্তু সব ইচ্ছে আবার সেভাবে পূরণও হয় না । তবুও প্রিয় মানুষটির প্রতি তার ইচ্ছেগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা সে করে যায় । প্রিয়তম মানুষটির ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করাও সেখানে রয়ে যায় । ♣রঞ্জনঃ ভীষণ দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন একজন অসাধারণ পুরুষের জীবনে যেন সবকিছুকে নিয়ে ধীরে সুস্থে জীবনে এগোনোর তাড়া । ধৈর্যশীল স্বভাবের মানুষটি বড্ড সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে জীবনে এগিয়ে যায় । ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে যত্ন করে ভালোবাসার আবছায়ায় এগিয়ে যায় জীবনভর । ✓প্রতিটি পরিস্থিতিতে অনুধাবন করা মুহূর্তগুলোতে পদক্ষেপগুলো তার ভীষণ ভালো ভাবে টের পাওয়া যায় । কোথাও যেন পরিস্থিতিগুলো খাপ খাইয়ে ধীরস্থির ভাবে চেষ্টা গুলো করা । জীবনের মায়ায় পাশের মানুষদেরকে বুঝতে পারার এক দারুণ প্রতিভা নিয়ে এসেছে যেন সে । ✓ভালোবাসার মানুষটিকে তার জীবনে পাওয়ার জন্য এবং গুছিয়ে দেয়ার জন্য অদ্ভুত এক শান্তি পাওয়া অনুভব করা যেন । ♣নাদিমঃ ভীষণ ছন্নছাড়া, অগোছালো পুরুষটির জীবনে এক অতীত নিয়ে উদাসীনতা । কোথাও এক ধরনের অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা নিয়ে জীবনের পথে চলতে গিয়ে মানুষটি দেখতে পায় তার জীবনের মনের বন্দরে নোঙর ফেলার টান কোথায়! অদ্ভুত এক ধরনের কষ্ট মানুষটিকে জীবনের পথে চলতে শিখিয়ে দেয় । ✓আরব্য বেদুইনের নিঃসঙ্গ এক জীবনে চলার মতো করে রাস্তায় অগুনতি পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায় । কত নিঃসঙ্গতা নিয়ে জীবনের মায়ায় সুতোর মতো জড়াতে গিয়ে দেখা যায়, হায়রে জীবন! সুতো জীবনের সাথে জড়ানো যাচ্ছে না । ✓অদ্ভুত এক বৃষ্টির মতো দুঃখ নিয়ে চলতে গিয়ে কখনও দেখতে পায় এই বৃষ্টির মতো তীব্র জলধারা অভিমান আর উদাসীনতা তার জীবনের সাথেও যেন জড়িয়ে যায় । ✓গিটারের সুর তুলে ভেসে যাওয়া কুয়াশার মতো করে যখন সে পিছনে তাকিয়ে দেখা হয়, জীবনের কক্ষপথে ঘুরতে গিয়ে বড্ড অদ্ভুতুড়ে । বড্ড সুখ লাগার ভয় । এই পৃথিবীতে দুঃখ পেতে পেতে তা সয়ে নিয়ে থাকা যায়, কিন্তু সুখ চলে এলে তা চলে যাওয়ার জন্য কেমন কেমন অনুভব করা যেন ভয়ের, ক্লান্তির । ♣অন্তুঃ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দ্বিধান্বিত কাজ করে ফেলা মানুষটির জীবনে ভালোবাসা হুট করে চলে আসে । বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে না পারা মানুষটির হঠাৎ করে রাগ উঠে যাওয়ার ভয়ে মারাত্মক কিছু ঘটে জীবনে । এই অদ্ভুতুড়ে জীবনে কখনও ঝড়ের মতো, কখনও বরফের মতো মানুষটিকে তাই পরিস্থিতির পালাবদলে ভীষণ ভয়ের বলে মনে হয় । ✓হুটহাট রাগ উঠে গেলে পাশের মানুষটিকে নিয়ে ভাবতে না চাওয়া মানুষটি অদ্ভুত বিভিন্ন কাজ করে ফেলে । সেই কাজগুলো করতে গিয়ে কখনও ভুল হয়ে যায় । ✓এই পৃথিবীতে তাকিয়ে ফেলার বড্ড ভয় । চোখ পৃথিবীতে সব কিছু বলে দেয় । কারো দিকে তাকিয়ে থেকে জীবনটা বুঝে নেয়ার দরকার ছিল যেন । ♣ছোঁয়াঃ চিরাচরিত জীবনের অদ্ভুত এক উদাসীন জীবনের ছাপ বয়ে নিয়ে যাওয়া মেয়েটির জীবনে কাজ করে ফেলার ভয় । কোথাও একটা চুপচাপ মেয়েটির জীবনে পরিস্থিতি সামলানো হয় না । অনুভূতি পাওয়া হয় না । পাথুরে জীবনে তাকানো হয় না । ✓অদ্ভুত মেয়েটির হাসি এবং কান্না দেখার জন্য তীব্র এক ধরনের তাড়া ছিল । মনে হয়েছিল এই মেয়েটির আজন্ম এক কান্না এবং হাসি দেখার জন্য অপেক্ষা করছি । ইশ্ মেয়েটি কবে কবে কাঁদবে । জীবনানন্দের কবিতার মতো আমি দুদণ্ড কান্না এবং হাসি চেয়েছিলাম যেন । ✓বন্ধুদেরকে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী দেখে যে মেয়েটির মনে নিজের জন্য কষ্ট আসে । সেই মেয়েটিই তাদের সাথে থাকার জন্য ক্ষণস্থায়ী পাখি হয়ে উঠে । তার আকাশে ক্ষণস্থায়ী উড়ে যাওয়া পাখিতে বন্ধুদের সাথে বসে এলোমেলো কথা বলে । এই সমাজে যে তাকে মানিয়ে চলার তীব্র চেষ্টা । ✓অদ্ভুত বিষণ্ণতা নিয়ে জীবনে মেয়েটির সিদ্ধান্ত নিতে বেশ ভয় । মেয়েটির জীবনে সুখ দুঃখ আসবে তো! জড় পদার্থের মতো জীবনে চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থেকে চোখ নাড়ানো হবে তো । ♣পূজাঃ বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের মিষ্টি, হাসিখুশি মেয়েটি ভালোবাসার মানুষটির জগতকে সাজিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যায় । ভালোবাসার মানুষটির যা পছন্দ, তারও তা পছন্দ । অদ্ভুত সুন্দর মানসিকতার মেয়েটির দায়িত্ববোধ, অপেক্ষা এবং ভালোবাসা বেশ মনে রাখার মতো । ✓ভালোবাসার মানুষটির জন্য হাসিমুখে অপেক্ষা করা মানুষটি বড্ড পরিস্থিতি অনুযায়ী ভেবেচিন্তে কাজ করে । জীবনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় খেয়াল করে এগিয়ে যায় । ✓প্রিয় মানুষদেরকে শান্তি এবং সুখ দেয়ার অসাধারণ এক চেষ্টা যেন সবসময় করে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলা নারীটি হাসিমুখে কথা বলে যায় । ♣মৌশিঃ অদ্ভুত আলগোছে বড় হওয়া মেয়েটির জীবনে ভালোবাসা আসে সুখের মতো করে । বাসা বাঁধতে আসা ঘরের কাছে হওয়া পাখির মতো । অদ্ভুত সুখ সুখ টানে ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে ইচ্ছে করে । জীবনের প্রতি একরাশ কথা বলার ইচ্ছে নিয়ে মেয়েটি একসময়ে নারী হয়ে উঠে । ✓ভালোবাসার মানুষটির প্রতি তীব্র গভীরতা সম্পন্ন ভালোবাসার আকুতি নিয়ে কেউ ইচ্ছে পোষণ করে যায় । সময়ের প্রয়োজনে দূর থেকে পাশে থাকার মানসিকতা রেখে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে কেউ অদৃশ্যে প্রতিশ্রুতি ঠেলে এগিয়ে যায় । প্রতিশ্রুতি রাখে বাতাসের সাথে । নিঃশ্বাসের সাথে । ভালোবাসার মতো সুখ সুখ দুঃখেও সে নীরবে ছায়া হবে । দূরে থেকে চাহনি দিয়ে যাবে । ✓কান্নাভেজা চোখের পানি নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া মানুষটির পৃথিবীর প্রতি ঋণ নিয়ে থাকা । এই পৃথিবীতে কান্নার পানির ঋণ নিয়ে দায়গ্রস্থ করে যাওয়া নারীটির জীবনে সুখ আসতে চায় নাকি দূরেই রয়ে যায়! ♣আরফানঃ গম্ভীর, সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পথ চলা মানুষটির জীবনের ধাপে হঠাৎ করে পরিবর্তন আসে । হঠাৎ করে কোথাও গিয়ে সুখের মুহূর্তের মতো পরিস্থিতি ঘটে । পেশায় ডাক্তার মানুষটির জীবনের অদ্ভুত সময়ের খেয়ালের পরিবর্তনে তাকে দুই ধরনের আবছায়ায় টের পাওয়া হয়ে উঠে খুব । ✓পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে থাকা মানুষটি সময়ের সাথে চলতে চলতে এক ধরনের গম্ভীর মনোভাবের হয়ে উঠে । ✓জীবনের সমস্ত সুখ, আনন্দ অনুভবগুলো মনের কোণে একজনের জন্যেই জড়ো করে রেখে অপেক্ষা করে যাওয়া পুরুষটি দারুণ অনুভূতি প্রকাশ করতে পারার চেষ্টা করে যায় । ♣শ্যামলতাঃ হঠাৎ পৃথিবীতে চলা এক অদ্ভুত চিন্তায় হঠাৎ করে কিছু পাওয়ার আগ্রহে একটা কাজ করে ফেলা একজন নারী । যার আগ্রহ নিয়ে করা কাজে কল্পনার মতো অনুভব ভেসে আসতে থাকে । •টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসে চলে আসে আরো কতগুলো চরিত্র । যারা গল্পের প্রয়োজনে ভেসে আসে । সামাজিক টানাপোড়েনে, গল্পের পরিবেশে তাদেরকে যেন মানিয়ে যায় । এই উপন্যাসে আছে বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের হাস্যোজ্জ্বল নারী, নিদ্রা । আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন, আত্মবিশ্বাসী একজন নারী সে । উপন্যাসে আছেন সন্তান মানুষ করা, সন্তানের প্রতি অত্যাধিক পরিমাণে করা বিভিন্ন সিদ্ধান্তে এলোমেলো করে দেয়া সিঁথি । আছে বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের, হাসিখুশি নিষাদ । এছাড়াও উপন্যাসে আছেন মধ্যবয়স্ক, গাম্ভীর্য বজায় রাখা একজন বাবা ইমায়েত সাহেব । সন্তানের কর্মকাণ্ডের প্রতি যার তীব্র নজর । আছেন সংসারের কাজে সংসারের দিকে মানিয়ে নেয়া, জাহানারা বেগম ।যার মনের দিক থেকে দ্বিধান্বিত দেখতে লাগা অনুভব তাকে নিয়ে দ্বিধায় ফেলে দেয় । এছাড়াও উপন্যাসে আছেন নিজেকে নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা, সাইম । সোজাসুজি ধরনের কথা বলতে পারা মানুষটাকে বেশ লাগে । এছাড়াও উপন্যাসে আছে ইরা, যে অন্যায় কিংবা কথা বলার মতো পরিস্থিতি দেখলেই হুটহাট কথা বলে দেয় । আছে হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুত্বপূর্ণ অয়ন । এছাড়াও আছেন বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের অসাধারণ একজন বাবা, নুরুল মাহমুদ । যিনি তার মেয়েদেরকে যত্ন করে, মানুষ করেছেন । আছে হঠাৎ নতুন সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়ে যাওয়া, মিষ্টি । যে সম্পর্কগুলোর প্রতি মায়া অনুভব করে খুব । এই এত এত চরিত্র নিয়ে গড়ে ওঠা উপন্যাসে আরো কিছু চরিত্র এসে যায় গল্পের প্রয়োজনে । সময়ের সমান্তরাল টানাপোড়েনে । ♦প্রিয় চরিত্রঃ এই ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত লাগে আমার কাছে । এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র হিসেব করলে হঠাৎ করে ভাবতে গিয়ে মনে হচ্ছে নাদিম একটা প্রিয় চরিত্র হতে পারে । কিন্তু উপন্যাসে তৈরি হওয়া অনুভূতি, মনস্তাত্ত্বিক কিছু অনুভবের জন্য দুইজন চরিত্রকে বিশেষ প্রিয় মনে হয় । মৌশি এবং ছোঁয়া । এদের চরিত্রের বিভিন্ন অনুভব এবং অদ্ভুত কিছু মুহূর্তগুলো কেমন একটা আকর্ষণের মতো করে আমাকে টানে । মৌশির ভালোবাসায় তাকিয়ে থাকা, ছোঁয়ার একাকী জীবন কোথাও যেন একই সূত্রে গেঁথে রাখা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ মনে হয় । ভীষণই প্রিয় কতগুলো চরিত্রের মধ্যে তাই বিশেষ করে প্রিয় অনুভব হওয়া মুহূর্তগুলো আসে না । তবুও ভাবতে বসতে গিয়ে বারবার মৌশি এবং ছোঁয়ার কথা মনে পড়ে যায় যেন খুব । ♦প্রিয় অংশঃ •এই উপন্যাসের প্রিয় অংশ নিয়ে ভাবতে গিয়ে হঠাৎ করে মনে হলো, এই উপন্যাসে পত্রপ্রেম আছে । চিরকুটে অনুভূতি আছে । পুরোনো খসখসে দর্শন বইয়ের অদ্ভুত উদাসীনতা আছে । বন্ধুদের একসাথে থেকে যাওয়ার মূল্যবান কিছু মুহূর্তগুলো আছে । কিছু কথোপকথন আছে । কিছু দারুণ স্মৃতিচারণ আছে । কিছু পড়ে থাকা নীল রঙের কাগজ আছে । তবুও এই উপন্যাসটি যেন অদ্ভুত এক অনুভূতি প্রকাশের দারুণ মেলবন্ধন । মানুষ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে চিঠির মতো করে লিখে । তা প্রকাশ করতে গিয়ে সুখে কেঁদে দেয় । কষ্টে ছন্নছাড়া হয়ে হাতড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে । গান এবং কবিতাতেও কিছু প্রকাশ করে ফুটিয়ে তুলতে চায় । তা যেন তাই এই উপন্যাসের মাঝে চলে আসে । এই উপন্যাসকে চিঠি বা পত্রোপন্যাস নামে আখ্যায়িত করা যায় না কারণ এই উপন্যাসে সেগুলো ছাড়া যে মনের দিক থেকে মানসিক অদ্ভুত টানাপোড়েন ভেসে আসে, কথোপকথন আসে তা আরো বেশ ভালো লাগার মতো আবেগ নিয়ে আসে । তবুও খুব করে বলতে ইচ্ছে করে এই উপন্যাসে অনুভূতি প্রকাশে ভাবাবেগ স্থাপনে যা আসে তা আছে মুগ্ধতার মতো করে । এই উপন্যাস ২৭টা চিঠি এবং চিরকুট নিয়ে গড়ে ওঠা আখ্যান । ১টা অদ্ভুত সুন্দর ছন্দে নিয়ে গড়ে ওঠা কবিতা, ১টা স্থিরচিত্র নিয়ে থাকা আখ্যান । এছাড়াও এই উপন্যাস ২৫টা গান, ৬টা কবিতা ফুটিয়ে তোলার আখ্যান । এই এত এত চিঠি, এত সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ ওগুলো শুধু ভেসে আসে যেন অনুভূতি প্রকাশের নামান্তর হিসেবেই । মানুষ মনের অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কথা সাজায়, অভিমান বুঝাতে গিয়ে কান্না ঝড়ায় কিন্তু শুধু পাশে থাকার বন্ধুত্বের আহ্বানে নীল চিরকুট এর নীল নামক রংয়ের আহ্বানে মনের ভেজা খামে চিঠি সাজায় । সেই চিঠিতে এত এত বিশেষণে ঘেরা আড়ালে মনে অদ্ভুত নিঃশ্বাস বাজে । যে চিরকুটের অদ্ভুত সুর এবং ভেসে আসা শব্দচয়নে দেশে বিদেশে মনের মাঝে কেঁপে ওঠা আবেগ তৈরি হয় । •যাহোক তবুও কিছু প্রিয় মুহূর্ত বলতে ইচ্ছে করে । বলতে ইচ্ছে করে, এই উপন্যাসের কিছু কিছু চিঠি বেশ মনের কাছে গিয়ে জড়ো হয়ে থাকে । অদ্ভুত নামের সম্বোধনে কারও ভালোবাসা শ্যামলতার চেয়ে কম হয় সম্বোধন নামক মায়ার জন্যে । কারও ভালোবাসা নীল চিরকুট এর থেকে বেশি হয় । এই উপন্যাসে আসে ইচ্ছেপূরণে সেই টিয়া যাকে মনে পূর্ণ হওয়া সুখ পাখি বলে মনে হয় । কোনো বৃষ্টির তীব্রতা কষ্টের মতো মনে হয় । আবার কোনো অদ্ভুত আকর্ষণে কেউ হোজপানা বলে ঝড়ের মধ্যে রাতের আঁধারে সুখ নামক মায়া নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় । এই পৃথিবীর অদ্ভুত মায়া তাই কোথাও কান্নার জলে তাকিয়ে থেকে ভেসে আসে । কেউবা তা চোখের সামনে দৃষ্টিতে মেলে ধরে তাকিয়ে থেকে মনে ধরে রাখে । ✓বিশেষ পৃষ্ঠা নির্দেশঃ ২৩-২৪, ৫৫, ৬৬, ১১৫, ১২৩, ১৭৫-১৭৬, ২৩৫, ৩২৮, ৪১৮, ৪২৪, ৫২৩-৫২৪, ৫৯২-৫৯৩ ♦সংলাপঃ যেহেতু বন্ধুদের নিয়ে উপন্যাস, ছয় বন্ধুর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে কথোপকথনে জীবন কেটে যাওয়া উপন্যাস, তাই কথার প্রয়োজনে চারিত্রিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী উপন্যাসে সংলাপ ধারণ হয়েছে । শব্দ প্রয়োগ এবং বাক্যালাপ হয়েছে । বন্ধুদের মধ্যে যেরকম হাস্যরসাত্মক কথা ভেসে আসে । দূর অদূরের প্রেমের টানে কাব্যিক আবেগতাড়িত মোহমায়া সৃষ্টি হয় । তাই উপন্যাসের প্রয়োজনে যেভাবে তা ব্যবহার হয়েছে তা বেশ ভালো । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘নীল চিরকুট’ লেখক নৌশিন আহমেদ রোদেলা এর প্রকাশিত হওয়া প্রথম উপন্যাস । বেশ কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে একদিন ফেসবুকে লেখকের লেখা পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল লেখকের লেখার লিখনশৈলী ধীরে ধীরে যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, যেভাবে গোছালো হচ্ছে তা মাঝে মাঝে উপন্যাস হয়ে আসতে পারে কখনও । সেরকম করেই একদিন হঠাৎ টের পেলাম লেখকের প্রথম বইয়ের অপেক্ষায় আছি খুব । কোথাও আমি বইয়ের প্রচ্ছদে একটা লেখক নামলিপিতে লেখক নৌশিন আহমেদ রোদেলা দেখতে চেয়েছিলাম খুব । সেরকম ভাবেই এতদিনের অপেক্ষা এর পরে অবশেষে এই বইটা এলো । এই বইটা দারুণ ভাবে আমার কাছে বিশেষ হয়ে রইলো । যাহোক উপন্যাসটির ব্যাপারে বলি, উপন্যাসের পটভূমি এবং প্রেক্ষাপটে যেহেতু আগে ফেসবুক গল্পের থেকে কিছু কিছু দৃশ্যপট সংযোজন করা হয়েছে তা উপন্যাসের দৃশ্যপটের সাথে যেভাবে খাপ খাইয়ে করা হয়েছে তা বেশ ভালো । পড়তে গিয়ে কোথাও যেন নতুন এক নীল চিরকুট পড়ার মতো আবেগ তৈরি হয়েছে কোথাও । এই মুহূর্তগুলো দারুণ ভাবে প্রিয় হয়ে রইলো আমার কাছে । ♦প্রকাশনীঃ অন্যধারা! প্রকাশনী হিসেবে অন্যধারার ক্ষেত্রে বলবো এই বইটির ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে আমার । যেভাবে একটা ৬০০ পৃষ্ঠার বই বাঁধাই করে এবং প্রচ্ছদটা ফুটিয়ে তুলে সাজানো হয়েছে তা বেশ অসাধারণ । এত দীর্ঘকায় বইয়ের পৃষ্ঠা বাঁধাই এবং বই বাঁধাই যেভাবে করা হয়েছে তাছাড়া বই সাজানোর যেভাবে স্মৃতিচারণ করতে যা ব্যবহার করা হয়েছে তা ভালো লাগার মতো । সাধারণত এত বড় বইয়ের এত সুন্দর বাঁধাই বেশ ভালো । তবে বই ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে পৃষ্ঠার ফর্মা ধরনের ভুল বোঝাবুঝির কারণে অদ্ভুত ধরনের ত্রুটি চোখে পড়েছে যা বেশ অদ্ভুত লেগেছে আমার । আর ছাপাখানার কিছু ভুলে নামলিপিতে অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হয়েছে । এছাড়া এই বইটিতে তেমন কোনো বানান ত্রুটি নেই । তবে চরিত্রের নামে একটি জায়গায় ভুল করে একটি চরিত্রের নাম ব্যবহার করা হয়েছে । ♦উপসংহারঃ উপন্যাসটির শেষ দিকে যখন বন্ধুরা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিল আমার ঠিক তখন হঠাৎ করে টের পেলাম, এ আমি কি করেছি! আমি তো বইটা পুরোটাই পড়ে ফেললাম । এখন ভবিষ্যতে রেখে দেয়ার জন্য আমার কাছে আর কী অবশিষ্ট রইলো! এরপরে মনে হলো, আমি আলাদা আলাদা যেমন বই পড়ার মতো করে এই বইটা পড়বো, তেমন আলাদা অদ্ভুত সুন্দর রাতগুলোতে বসে পড়বো বইটা নিয়ে । আলাদা আলাদা অনুভূতিগুলোও সেভাবে পড়ে মনের কোণে কোণে পড়া জড়ো করবো । আমার তাই বলতে ইচ্ছে করছে, আমার নীল চিরকুট পড়ার কোনো উপসংহার নেই...