User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই নামক গ্লোবাল সোসাইটি ‘মানুষের মর্ম গিলে খায়’..........দ্বীপ সরকার......... আধুনিক বাংলা কবিতায় ঘোর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কবিতায় ঘোর না থাকলে সে কবিতা পানসে। তেমনি আড়াল একটা ঘোর। যে কবিতায় আড়াল না থাকে সে কবিতাও কেমন সোজাসাপ্টা লাগে। সে কারণেই কবিতার রস-রস্বাদন স্পর্শ করতে পাঠককে বই নামক গ্লোবাল সোসাইটিতে ঘুরতে হয়। সেখানে বুঁদ থেকে সোসাইটির অতলে যেয়ে খুটিনাটি বিষয় তুলে আনতে গিয়ে পাঠককে বেশ শ্রম দিতে হয়। এটা ঘোর এবং আড়ালের একটা বিপরীত দিক। তবে সেই পরিশ্রমে যদি স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায় পাঠক তাতেও রাজি। অন্যথায় অহেতুক এবং পন্ডুশ্রম মাত্র। কবিতার ভেতর যেমন প্রবেশ সহজে করা যায় না, তেমনি ঢুকে ফের বেরোনো যায় না। কারণ,একটাই এখানে আয়না পুঁতে রাখা নাই। পাঠককেই সেই আয়না তৈরি করে খোলাসা করতে হয়। আমি সেরকম একটি কবিতা বইয়ের আয়না তৈরি করতে কলম ধরেছি বটে। কবি খৈয়াম কাদের একজন সচেতন প্রজ্ঞাবান কবি। তার সর্বশেষ কবিতার বই ‘মানুষের মর্ম গিলে খায়’ পুন্ড্রপ্রকাশন থেকে প্রকাশিত, ফেব্রুয়ারি/২০২৫। গ্রন্থের নাম করণ চমৎকার তবে এটি অসমাপ্ত কোন ঘটনাপ্রবাহের দিকে ইঙ্গিত করে। পরিপূর্ণ এবং পূর্নাঙ্গ অর্থ বহন করছে না। বইয়ের ফ্ল্যাপ কবির নিজস্ব চিন্তার প্রয়োগ খুব চমৎকার,তবে ফ্ল্যাপ নির্মাতার নাম উল্লেখ না থাকায় পাঠক একটু বিপাকে পরতে পারে। বইয়ের মুল জায়গা হলো কবির চিন্তা,দর্শন কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে সেটা। বইটির অনেকগুলো কবিতা এর দাবি রাখে। যেমন তিনি বলেছেনঃ নিজের ভেতরে ডুব দাও/বিস্তৃত প্রান্তর পাবে... (মানুষের মায়া)। এখানে সক্রেটিসের থিউরি দারুনভাবে স্বীকার করে কবি মানুষকে আহবান করেছেন, নিজের ভেতর ডুব দিলে নিজেকে চেনা যাবে। নিজেকে জানলেই পৃথিবীকে জানা সহজ হবে। পরক্ষণেই বলছেন,ঘুচে যাবে/শাদা কালো বাদামী বর্ণের ভুগোল। এখানে ভুগোলের মেটাফরিক সিম্পটমের ভেতর মুলত প্রত্যেকটা মানুষের ভেতর যদি অন্ধকার কিছু থাকে তা ঘুচে যাবে। এটা একটা অসাধারণ আবেদন। আরো অনেক কবিতা আছে যা পাঠককে নিয়ে যাবে এক অতল বিশ্বাস আর দোলাচলের জগতে। যেমন কবি বলেছেনঃ ‘মানুষকে ভালোবেসে মানুষেই লীন হও’... (পূণ্যপূর্ণ খাতা)। এটা একটা সাংঘাতিক বোধের গভীরে প্রথিত করার আহবান। কবি সবশেষে মানুষের মাঝেই সব খুঁজে পেতে চান এবং মানুষই শেষ আশ্রয়। কবি বলেছেন ‘মানুষ-গ্রন্থেই খোঁজো/পূণ্যপূর্ণ জীবনের খাতা’..(পূণ্যপূর্ণ খাতা)। মানুষ সত্যকে কবি নিছক মানুষ হিসেবে দেখতে চাননি-বরং মানুষ হতে পারে মহাভারত বা পৃথিবীজোড়া গ্রন্থের সমান ভান্ডার। এটাই বোধ ও বোধের নিকটে নিয়ে যাবার শেষ উদাহরণ নয়। এরকম অনেক কবিতা ও পঙক্তি পাঠককে ঘোরের অতলে নিয়ে যাবে। ‘মানুষের মর্ম গিলে খায়’ এমন একটা চিন্তার ফসল যা পাঠক না পড়লে বুঝতে পারবে না। এখানে স্বল্পায়তনে বলা মুশকিল। এভাবে মাপজোখ করে বলা কঠিন যে এই এই কবিতা অসাধারণ। তবে অধিকাংশ কবিতার ভেতর ফুটে আছে রিয়েলিটি। রিয়েলিটি না থাকলে সেটা মানুষের মঙ্গলের জন্য হতে পারে না। পাঠক যদি নিজের জীবনের খোঁজ না পান তবে কবিতার শর্তে যায় না। সে রকম বাস্তবতার নিরীক্ষণ অনেক কবিতাকে ছুঁয়ে গেছে। যেমনঃ কবি বলেছেন ‘তাদের ধর্মত্ব দেখে/ধর্মও লজ্জিত হয়’...(লোভের তরিকা)। এটা খুব সত্য যে চলমান বিশ্বে বকধার্মিকের উপস্থিতি এবং ধর্মীয় লেবাসবদ্ধ আয়নায় যা দেখা যায় তা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। ফলে ধর্ম নিজেও লজ্জিত। এখানে মানুষের বিশ্বাস আর জীবন ঘনিষ্টতার আঁচ ফুটে উঠেছে। অন্য আরেক কবিতায় লিখেছেনঃ ‘টাকার সুবাস পেলে/ঝোলার উষুমে গলে আদর্শের বুলি’...(টাকার সুবাস)। এখানে অর্থের প্রয়োজনীতা,জীবনের লেন দেন বিশ্বাস অবিশ্বাসের গোড়ার কথা উঠে এসেছে। টাকার কাছে আদর্শও টিকে না শেষমেষ। তবে এই উৎপ্রেক্ষার মধ্যে কবি অর্থের কাছে হেরে যাবার শঙ্কায় ছিলেন। এবং এটা রিয়েলিজম। অর্থের নিকটে হারজিতের বোধন সব সময় ঘটে। কবি এই গ্রন্থে মানুষকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় মহান করে তুলতে চেয়েছেন। যেমন বলেছেন ‘মানুষই একটা গ্রন্থ বিতান/বহুবিদ পঠনের সমাহার’... (যত বিশ্বাস তত ঈশ্বর)। এরকম অনেক উপমা ও রুপকের মধ্যমে মানুষকেই শ্রেষ্ট হিসেবে বিবেচিত করেছেন। যেমন অন্য আরেক কবিতায় বলেছেন-'প্রসব বেদনা প্রসবেই প্রশমিত হয়/ঠেকানোর চেষ্টা হলে জন্মের বিকৃতি ঘটে’...(কী সুন্দর অন্ধকার)। এখানেও মানুষের বার্তা পাওয়া যায়। মানুষের জন্ম মৃত্য- আগমনকে অন্ধকার চিড়ে আলোকময় দ্যুতি এবং মৃত্যকে ধিরে ধিরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার যে ইঙ্গিত তা এই চিত্রকল্পে পাওয়া যায়। একই কবিতায় পরের স্তবকে বলেছেন,‘কর্ষিত ভূমিই জানে/কোনখানে জিইয়ে থাকে শস্যের প্রনয়/কখন চমকে ওঠে লাঙলের প্রেম’ (কী সুন্দর অন্ধকার)। এখানে অনেক উপমা ও রুপকের ব্যবহার ঘটিয়ে কবিতাকে আরো শক্ত পোক্ত এবং শ্রীবর্ধনের কাজ করেছেন। ভূমি যেমন জানে কোথায় কোথায় তাকে লাঙ্গল ছুঁয়েছে,ঠিক তেমনি একজন নারী জানেন সন্তান প্রসবের কারিশমাটিক লাঙ্গল তাকে কোথায় কোথায় বিদ্ধ করেছে। এই কবিতায় ভূমির কর্ষন এবং বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে কৃষক এবং নারী জাতকের যে পরস্পর গভীর সম্পর্ক তার একটা ইমেজারি পাওয়া যায়। কবি প্রেমকে জ্ঞাত করে বলেছেনÑ‘মনে মনে বলেছি কানে কানে নয়/তবুও জেনে গেছো তুমি’ (দুস্থ ভারোবাসা)। এখানে শুধু ভালোবাসা ফুটে ওঠেনি বরং প্রেমিক প্রেমিকার বিনা তারের যোগাযোগ যে রিয়েলিজমকে ধারণ করে তা ফুটে উঠেছে। কানে কানে বললে শুনতে পেতো অথচ,তিনি মনে মনে জপেছেন মাত্র-তবুও প্রকৃত প্রেমিক সব শুনতে পান। আবার অন্য আরেকটি কবিতয় বলেছেন-‘জানি,বলতে চেয়েও পারো না/বলো না শব্দ করে/ভেতরের কথাগুলো অরব তরঙ্গে বয়ে চলে’...(সুখের ব্যঞ্জন)। এখানে ভালোবাসার অনুচ্চারিত ,অব্যক্ত ভাষা যে প্রকট-নদী তরঙ্গের মতো ভেতরে ভাঙ্গে তার একটা বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। ‘মানুষের মর্ম গিলে খায়’ গ্রন্থে ৬৪টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রত্যেকটি কবিতা মুক্তক ছন্দে রচিত। কবিতায় কিছু বানান বিভ্রাট আছে,আছে কিছু লাইনবিন্যাসের ত্রুটি। বানান এবং লাইনবিন্যাস দুটিই কবিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে কবির প্রতি পাঠকের একটা নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে। একজন পাঠক হিসেবে আমি আশা করছি কবি পরবর্তী সংস্করণে আরো যত্নবান হবেন। এসব মাইনর ত্রুটি বাদ দিলে এই বইটি পাঠে চিন্তার দিগন্ত বিচরন করা সম্ভব। তার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা যত যত সুন্দর সুন্দর ধারণার গাঁথুনি-তাতে একজন পাঠক নিজেকে সমৃদ্ধ করার রসদ পাবে।
Was this review helpful to you?
or
প্রসঙ্গ : খৈয়াম কাদেরের 'মানুষের মর্ম গিলে খায়' হাতে এল বিশিষ্ট কবি খৈয়াম কাদেরের সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ 'মানুষের মর্ম গিলে খায়'। কাব্যগ্রন্থটি হাতে পেয়ে বিস্মিত হয়েছি, কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমাকে। এটা আমার জন্য পরম প্রাপ্তি। উৎসর্গপত্রে কবি লিখেছেন: 'শব্দ ছেনে সৃষ্টি করেন ধ্বনি ও ভাবের আমেজ মননের মূর্ত বিভা প্রিয় কবি খসরু পারভেজ' খৈয়াম কাদের আপদমস্তক কবি। কবিতা নিয়ে তিনি ভাবেন। নিবিড় নিরীক্ষা করেন কবিতা নিয়ে। কবিতা নিয়ে তাঁর ভাবনা আমরা উল্লেখ করতে পারি তাঁর বইয়ের ফ্লাপি থেকে। সেখানে বলা হয়েছে-" কবিতা শব্দচারুত্বের নান্দনিক খেলা, মননস্পর্শী ভাব ও চিন্তার চমক। কবিতা কবির চিত্তজারিত কল্পবোধের ভাস্কর্য, অনুমিত সত্যের প্রমিত বয়ন। কবিতার বিষয়বস্তু জগৎ-যজ্ঞের বিচিত্র আখ্যান-উপাখ্যান, জীবনলগ্ন নিত্য রহস্যের চৈতনিক সারাৎসার। কবিতায় উৎকীর্ণ হয় বস্তু ও বাস্তু যাপনের পাঠ-পরাপাঠ, মূর্ত প্রকৃতির বিমূর্ত আধ্যান। কবিতার ভাষায় থাকে ইঙ্গিতি ও অর্থব্যঞ্জনা ও ধ্বনি-দ্যোতনার প্রতীকী চিত্ররূপ। কবিতায় উৎপন্ন হয় সৌখিন সৌন্দর্য, ছন্দরঞ্জনের মোহনীয় আবেশ।" তাঁর এই কবিতাচিন্তা তাঁর কাব্যের উদ্ধৃতির সম্পূরক। তিনি লেখেন: "হার্ডডিস্কে ধুলো, ধূসর হয়েছে মনিটর কী ক'রে এখন আর স্পষ্ট ছবি আসে বুকের ভেতরে শুধু স্বপ্নের লাশেরা ভাসে জলের বদলে ঝরে অগ্নিবৃষ্টি নিরন্তর !" ( মানুষের মর্ম গিলে খায় ) কবির এই চিত্তজারিত কল্পবোধের ভাস্কর্য আমাদেরকে চমকিত করে। কবি নির্মাণ করেন জীবন সখ্যের বর্ণিল পরশে বোধিদর্পণ। সংবেদ অষ্পষ্ট, তবু তিনি পুনর্বার অদৃশ্যের মুকুরে মন্থন করেন সুদৃশ্য ঘড়ির সকাল।তিনি বলেন: "শূন্যের সকাশে পরিব্রাজন শেষে এখনো সতত ক্ষুধাতৃষ্ণা বুঝি; নিদ্রা যাই, জেগে উঠি, প্রত্যক্ষণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্বপ্প আঁকি, স্বপ্ন ভাঙ্গি আর আপনার সাথে করি মগ্ন সংলাপ।" ( বেলুন-সত্যের দেহ ) কবির সঙ্গে কবি মগ্ন আলাপন কবির সামনে উন্মোচন করে বেলুন-সত্যের বায়বীয় দেহ। আর দশজনের মতো কবির গন্তব্য এক নয়। মাটিলগ্ন কবি সব প্রতীক্ষার শেষে নিজের ঠিকানা খুঁজে ফেরেন, খুঁজে ফেরেন আলোর উঠোন। কবিতায় উচ্চারিত হয়: "সন্ধ্যার সাকিনে ব'সে আলোর উঠোন খুঁজে ফিরি, ধুলোর ধরিত্রী পথে থেমে থেমে হাঁটি, হাঁটতে হাঁটতে থেমে যাই: আবার কখনো ধূসর নিলয়ে ঢুকে বেমালুম ভুলে যাই প্রস্তাবিত গন্তব্যের কথা অথবা আতীব্র জনতার ভিড়ে মাটির পাটিতে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাই।" ( নিশ্চিন্তে ঘুমাই ) এক দুঃসময়ে কবির বসবাস। সমকালীন সভ্যতার যে অবক্ষয় তা কবিকে বিচলিত করে। কবি তাই নিজেই নিজেকে ব্যাঙ্গ করে বলেন: "খিদের মর্মরে সেজে প্রভুর বন্দনা করি ছানিপড়া চোখে দেখি আমার আমিটা খুলে খুলে প'ড়ে যায় ভুল মনিবের প্যানের ভেতর আমি আনন্দিত হই, আয়েশে চাটতে থাকি তার পাদুকার সুকতলা; আমার মৃত্যুর কথা ভুলে যাই পূর্ব এবং উত্তর প্রজন্মের কথা ভুলে যাই তার দিকে চেয়ে চেয়ে হাততালি দেই তাকেই আরাধ্য মানি তার আয়াতই যেন ঐশী বাণী!" ( স্তন্যপায়ী প্রেম ) মানুষ নিয়ে কবির ভাবনার যেন শেষ নেই। বিস্তীর্ণ দুপুর গোধূলি-সায়াহ্নে ঢলে পড়ে, কবিকে যেন ঝুলিয়ে রাখে মধ্যবর্তী বিকেলের আ'লে। তাঁর কবিতায় মানবদর্শন: "মানুষের মনোধামে আততায়ী জিঘাংসা ঢুকে পড়ে অপ্রেম বিমারে ভোগে আলোর প্রতিমাসম চন্দ্রজ্যোতি পৃথিবী বোঝে না আর কার নামে জ্বলে তার মাটির প্রদীপ, কেন সে হারিয়ে খোঁজে জন্মলগ্ন গতি।" ( নিষিদ্ধ বৃক্ষের ছায়াতলে ) কবি বিশ্বময় মানুষ খুঁজে ফেরেন। সাগর, নদী, গিরি, গুহায় সবখানে মানবের জনপদ খুঁজে ফেরেন। পণ্ডিত,ধার্মিক, তাত্ত্বিক, সাত্ত্বিক,মুনি, শৌনক, ধীমান ভাস্কর, চিত্রকর দেখেছেন, মানুষ দেখেননি। তিনি বলেন: "যত্রতত্র এমন মানুষ দেখেছি অনেক ছায়া ও কায়ায় বারবার, কিন্তু দেখিনি মানুষের ভেতরের মনুষ্য মানব কোথাও একটিবার।" ( মনুষ্য মানব ) মানবতা যখন পর্যুদস্ত, মানুষ বিভ্রান্ত ; কবির কবিতায় তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে মানুষের চেহারা। তিনি বলেন: "মানুষ ও মানবতা একসাথে নেই ধর্মের আচারে নেই হৃদয়ের ওম রঙের আবিরে দেখি মেকিটাও আসল হয়ে যায় জীবনের মঞ্চে ভাসে নানা অভিনয়!" ( জরির পোশাক ) অথবা "মানুষ মানুষ ক'রে মানুষের কাছেই গেলাম মানুষের মাঝেই হাঁটলাম চিরকাল নানাজাত মানুষের ভিড়ে। কিন্তু--- পোশাক পরিয়ে যে-ই শৈল্য দর্শন নিলাম দেখলাম---মানুষের ভেতর আর মানুষ নেই। ( মেনব দহন ) কবির বেদনাবোধ কত তীব্র হয়ে ওঠে। যখন তিনি বলেন: "কী সুন্দর থিকথিকে অন্ধকার সত্যকে লুকিয়ে রাখার দুর্ভেদ্য প্রাচীর সে এক সান্ধ্য সোহাগের ফকফকা হাটে।" ( কী সুন্দর অন্ধকার ) মানুষ স্বপ্ন দেখে আলোর। সে স্বপ্ন যেন শেষ হয় না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন: "অন্দরমহল থেকে দরবার খানা গানের আসর থেকে ধর্মালয় সবকিছু রাত্রিময়, শুধু রাত্রিময়। অসিত বিষাদে বসে মানুষেরা স্বপ্ন দেখে নতুন ভোরের, কিন্তু সে রাতের শেষে প্রভাত আসে না, নতুন চমকে আরেক রাত্রি ভাসে।" ( রাতের পুরাণ ) পুরো কাব্য জুড়ে কবির মানবদর্শন অনুরণিত হয়েছে। কবি যেন বারবার বাউলের সুরে সুরে বলেন আত্মদর্শনের কথা। কবিতায় উচ্চারিত হয়েছে: "নিজের ভেতরে ডুব দাও বিস্তৃত প্রান্তর পাবে ঘুচে যাবে শাদা কালো বাদামী বর্ণের ভূগোল। ( মানুষের মায়া ) শেষ পর্যন্ত মানুষেই কবির ভরসা। কবি বলেন: "মানুষই শেষ কথা শুরুতেই মানুষের নাম সংসারে যা কিছু আদি, যা কিছু নব নবতর সব তার মানুষের সর্বনাম।" ( পুণ্যপূর্ণ খাতা ) কবি মানব ভজনা করেন: "মানুষকে ভালোবাসা ইবাদাত মনে হয় মানুষের কল্যাণ করাই এ জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয়" ( মৃত্তিকার কাছে ) খৈয়াম কাদেরের কবিতায় উঠে এসেছে ক্ষরণের কাল। মানুষের দুঃসময়, দেশ, মা, মাটি, প্রেম,সভ্যতার সংকট। বইয়ের নাম মানুষ নিয়ে, তাই অধিকাংশ কবিতায় তাঁর মানববিশ্লেষণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। —খসরু পারভেজ।