User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একটি থ্রিলার উপন্যাসের সর্বশেষ পরিণতি কী? অপরাধী খুঁজে পাওয়া, এই তো? যখন জানা যায় আসল খুনি কে, তখনই দ্য এন্ড। কাহিনি শেষ। কিন্তু না, সবকিছু এত সহজে শেষ হয় না। জীবন আরো করল। খুনি কে, জানা আছে। কেন খুন করেছে, তাও জানা আছে। তারপরও গল্পটা এগিয়েছে। রহস্য ছড়িয়েছে। নিখুঁত প্ল্যানের সেই খুনের পর, অপরাধীর কী হয় তা তো জানতে হবে। সেই গল্পই বলবে “ব্যাড কিডস”। “ব্যাড কিডস” নামেই হয়তো অনুমান করা যাচ্ছে, এই গল্পে এমন কতক দস্যু ছেলেমেয়ের থাকবে। যারা ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে পুরো ঘটনাকে। ঘটনা প্রবাহ যেন তাদের হাতেই সচল। সুতোর টানে গল্পের গতিপ্রকৃতি পাল্টাবে হরহামেশাই। তবে শেষটা হয়তো রহস্যের চাদরে আবৃত থাকব। যা ঘটছে, বা ঘটবে — কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে না। ঝ্যাং ডংশেং খুন করেছে তার শ্বশুর-শাশুড়িকে। সম্পত্তির লোভে উঁচু পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে দুর্ঘটনার আদল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। নিখুঁত পরিকল্পনা। কিন্তু যত বড় অপরাধী হোক না কেন, ছোট্ট ভুল সে সবসময় করেই। সবার চোখ এড়িয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একটা ভুল হয়েই গেল। সেদিন সে জায়গাতে তিনজন ছেলেমেয়ে ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিল। তাদের ক্যামেরার ভিডিওতে ধারণ হয়ে গেল ঝ্যাংয়ের অপকর্ম। এই তিনজন হলো — ঝু চাওইয়াং, পুপু আর ডিং হাও। ঝু সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। ছেলেটা ম্যাথমেটিকাল জিনিয়াস। প্রচুর পরিশ্রমী। পড়াশোনাতেও ভালো। স্কুলে সবার চেয়ে বেশি নম্বর তার ঝুলিতেই জমা হয়। কিন্তু তার জীবনে দুঃখও আছে। তার বাবা তাকে ও তার মাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের ছেলেকে গুরুত্ব দেয় না। আকারে বয়সের তুলনায় বেজায় খাটো ঝু। এ নিয়ে সহপাঠীদের উপহাস শুনতে হয়। তবে, পড়াশোনায় দারুণ করার কারণে সবার মনোযোগ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে ডিং আর পুপু এতিমখানা থেকে পালিয়ে এসেছে। দুইজনেরই বাবা-মা নেই। ডিং একসময় ঝুয়ের সহপাঠী ছিল। বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল দুইজনের। ফলে এতিমখানা থেকে পালিয়ে এসে বন্ধুর খোঁজ করে সে। আর মিলেও যায়। কিন্তু তাদের পরিবারের পরিণতি, এতিমখানা থাকে পালিয়ে আসা দুইজন, এসব উটকো ঝামেলায় বেশ বিপাকে পড়ে ঝু। তারপরও বন্ধুদের তো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। সে কারণে তাদের আশ্রয় দেয়। তাদের সাথে ঘুরতে গিয়েই এমন এক ঘটনার সাক্ষী হয়, যা বদলে দেয় সকল সমীকরণ! ওরা সিদ্ধান্ত নেয় ঝ্যাংকে ব্ল্যাকমেইল করার। এতিমখানায় ফিরে যেতে পারবে না কিছুতেই। নিজেদের কিছু করতে হলে টাকার প্রয়োজন। যে ব্যক্তি বিএমডাব্লিউ গাড়িতে চড়ে, তার নিশ্চয়ই অঢেল টাকা আছে। ফলে নিজেকে বাঁচাতে যেকোনো অর্থ খরচ করতে রাজি হবে বলেই বিশ্বাস তিন বিচ্ছুর। ওদিকে ঝ্যাংয়ের স্ত্রী তার মা-বাবার মৃত্যুর জন্য স্বামীকেই দায়ী করে। সে বিশ্বাস করে এভাবে তার স্বামী একদিন তাকেও মেরে ফেলবে। সেই সময়টা ঠিকই আসবে। ঝুয়ের কাছে তার সৎ মা ও সৎ বোন অপরিচিত। দুইজনই ঝুকে দেখতে পারে না। ঝু নিজেও এই দুইজনকে ঘৃণা করে। একদিন এক দুর্ঘটনা ঘটে যায় ঝুয়ের সৎ বোনের সাথে। যার জন্য ঝুকেই দায়ী করে তার সৎ মা। শুধু দায়ী না, নানানভাবে নানান কটু কথা, আক্রমণাত্মক মনোভাব, বিভিন্ন পদ্ধতিতে উত্যক্ত করার চেষ্টা ঝুয়ের মনে সৎ মায়ের প্রতি কেবল ক্ষোভেরও জন্ম দিয়েছে। বাবা যেন থেকেও নেই। ডাইনিকে বাঁচাতে বারবার চেষ্টা করে চলেছে নিজের বাবা। প্রথম স্ত্রী কিংবা নিজ সন্তানের প্রতি মায়া মহব্বত বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তাই বাবাকে আর বাবা বলতে বড্ড বাঁধে ঝুয়ের। এভাবেই ক্ষোভ জমতে জমতে জমতে পাহাড়সম হয়ে ওঠে। একদিন ঘটে বিস্ফোরণ। আর তখন যা ভাবনাতেও আসে না, তাই ভবিতব্য হয়ে দেখা দেয়। ▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া : চৈনিক থ্রিলার এর আগে পড়া হয়নি। এই প্রথম পাঠ অভিজ্ঞতায় “ব্যাড কিডস”কে কি থ্রিলার বলা যায়? থ্রিলার উপাদান অবশ্যই আছে, তবে গল্পটা আমার কাছে অনেক বেশি সামাজিক মনে হয়েছে। যে গল্প চীনা সমাজের এক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে। খুব সাদামাটা ভাবে গল্প এগিয়েছে। টানটান থ্রিলার যাকে বলে, তেমন কিছু এখানে ছিল না। চমকের পর চমক এখানে রাখা হয়নি। মাথা ঘোরানো টুইস্ট ছিল না। তারপরও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক দুর্দান্ত গল্প পড়লাম। যে গল্প এক বা একাধিক শিশুর মনস্তত্ত্ব, সমাজে তাদের অবস্থান, বয়সের তুলনায় অধিক চিন্তা করার পরিণতি তুলে ধরেছে। এই গল্পের শুরুটাই একটা খুন দিয়ে। অন্য যেকোনো থ্রিলার গল্পে এই খুন নিয়েই ঘটনা অতিবাহিত হবে। খুনি খোঁজার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এখানে সেই চেষ্টা ছিল না। কেননা খুনি কে, খুনির উদ্দেশ্য কী, তা আগেই বলে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকেই রহস্যের সূত্রপাত। রহস্যটা আসলে কোথায়? এই যে একজন খুন করেছে, কোনো সূত্র ছেড়ে যায়নি। একেবারে নিখুঁত প্ল্যান। তারপরও তার পরিণতি কী হবে, সে কি আদৌ ধরা পড়বে? এমন কৌতূহল বইটি ধরে রাখতে পেরেছিল। পরবর্তীতে দেখা যায়, যে পরিকল্পনা নিখুঁত বলে মনে করা হয়েছিল, তা আসলে নিখুঁত না। ভিডিয়ো ক্যামেরায় ঠিকই ধারণ হয়ে যায় ঘটনাটি। এখানেই চলে আসে তিন বিচ্ছুর কথা। তাদের প্রত্যেকে এমন এক সামাজিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এখানে ব্যাহত হয়েছে। তাদের সামাজিক দিক দিয়ে অনেক অবজ্ঞা, অপমান সহ্য করতে হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তাদের মনস্তত্ত্ব এমনভাবে গড়ে উঠেছে, তারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ভুল পথে পা বাড়িয়েছে। এখানে একটা বিষয় আলোচ্য। একজন শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে ছোটকাল অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। ছোটবেলায় একজন শিশু যে পরিবেশে বড় হয়, তাকে যেভাবে অন্যরা গ্রহণ করে, তার মনস্তত্ত্ব ঠিক সেই দিকেই ধাবিত হয়। যদি খারাপভাবে জীবনের শুরুটা শুরু হয়, তখন তার মানসিকতা অপরাধের দিকে ধাবিত হয়। এখানে যে তিন শিশুর কথা বলা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে সমাজের অন্ধকার দিক দেখেছে। এতিমখানায় থাকার সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে পুপু। ডিও হাং বাবা-মাকে হারিয়ে এতিমখানায় ছোটখাট চুরি, মারামারির মত কান্ড ঘটিয়েছে। অন্যদিকে ঝু আকার-আকৃতিতে ছোট। তাই স্কুলে সহপাঠীরা উপহাস করে। বাবা থেকেও নেই। সৎ মা বা বোনের সাথে দেখা হলে অবজ্ঞা করে। এগুলো একজন শিশুর ভালো কিংবা খারাপ বিকাশের জন্য যথেষ্ট। লেখক জিযিন চেনের লেখা যথেষ্ট ভালো লেগেছে। তিনি স্বাভাবিক থ্রিলারের মতো গল্প বলেননি। বরং থ্রিলারের আড়ালে তিনি তুলে এনেছেন চীনা সমাজের এক চিত্র। যেখানে ধনী, গরীবের এক ধরনের পার্থক্য বিরাজ করে। সব সমাজেই এমন পার্থক্য দেখা যায়। আর এই পার্থক্যের কারণে মানুষের মনে লোভের বাসা বাঁধে। তাছাড়া একটু দরিদ্র হলে তাকে উপহাস করা অবধারিত। এই যেমন ঝ্যাং ডংশেংয়ের স্ত্রী বড়লোক পরিবারের সন্তান। প্রতিনিয়ত অর্থের বড়াই করে। ঝ্যাংয়ের বাবা-মা গ্রাম্য পরিবেশে মানুষ বলে একসাথে থাকতেও এক ধরনের অবজ্ঞা করে। মূলত এই কারণেই হতে পারে ঝ্যাং এক বড় ধরনের ভয়ংকর পরিকল্পনা করে। তাছাড়া সমাজে লোভ-লালসা, তাকে হাসিল করার প্রাণান্ত চেষ্টা এখানে উল্লেখযোগ্য। বড়দের দেখেই ছোটরা শেখে। এই লোভের বশবর্তী হয়ে অপকর্ম করার চিন্তা, সেটা ত্রিশ বছরের কাউকে দেখে তার পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা তেরো বছরের কেউ করলেও করতে পারে। তবে এত ছোট বয়সের কেউ কি নিখুঁত প্ল্যান করতে পারে? যেহেতু খুনের ঘটনা এই বইয়ের প্রাধান্য, সেহেতু পুলিশের কথা এখানে চলে আসে। এখানেই মূল পুলিশ চরিত্র ছিল ক্যাপ্টেন ইয়ে জুন। ইয়ে নামটা আমার কেমন যেন লেগেছে। পড়ার সময় ইয়ে এইটা বলছে, ওইটা করছে; এক ধরনের ধন্ধে ফেলে দেয়। সে যাই হোক, পুলিশের ক্ষেত্র থেকে বেশ কিছু বিষয় মানবিক দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একজন মানুষ যখন একটি নিজের জীবন বদলে নতুন মানুষ পরিণত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে, তখন একবার সে সুযোগ দিতে হয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুটা দায়সারা গোছের তদন্ত মনে হয়েছে। ঠিকঠাক তদন্ত করার চেয়ে হাইপোথিসিসের মাধ্যমে সমাধানের একটা চেষ্টা ছিল। ফলে সেই দিকটা আড়ালে থেকে গেছে। কিংবা পুলিশের দৌরাত্ম্যের দুর্বল দিক এখানে প্রতিফলিত হয়। এখানে চীনের আইন ব্যবস্থার দিকেও আলোকপাত করা হয়েছে। অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা ফায়ারিং স্কোয়াড তার কাজটা ঠিকই করে। বইয়ের শেষে বেশ ভালো চমক ছিল। লেখক খুব বেশি মাথা ঘোরানো চমকের অবতারণা করেননি। তারপরও শেষ চমক একজন শিশুর মনস্তত্ত্ব বোঝার কোন যথেষ্ট। কতটা অপরাধী মানসিকতার হলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার সবরকম প্রয়াস চলে। কেউ ধরতেই পারবে না কার মাথা থেকে এমন বুদ্ধি আসতে পারে! মৃত মানুষ তো অভিযোগের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে পারে না। ফলে সকল দায় মৃত মানুষের উপর চাপিয়ে দিলে, নিজের বেঁচে থাকার পথ উন্মুক্ত হয়। ▪️অনুবাদ, সম্পাদনা ও অন্যান্য : অনুবাদক হিসেবে আহনাফ তাহমিদকে আমার বর্তমান সময়ের সেরা তিনজন অনুবাদকের একজন বলে মনে হয়। তার অনুবাদ নিয়ে নির্ভার থাকতে পারি। “ব্যাড কিডস” বইয়েও তিনি তার সেরা কাজ দেখিয়েছেন। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল। ভাষাগত দিক দিয়ে এমন এক মনস্তত্ত্ব বিষয়ক বই, চীনা সমাজ বেশ ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। অনুবাদ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। সম্পাদনা নিয়েও অভিযোগ নেই। বানানের ক্ষেত্রে, ছাপার ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করেছে প্রকাশনী। তবে বইটার প্রচ্ছদ আমার বেশ পছন্দ। লাল প্রচ্ছদ প্রিন্টে ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। ▪️পরিশেষে, বইটির ইংরেজি অনুবাদের প্রচ্ছদে একটা ট্যাগলাইন লেখা ছিল — Perfect crime doesn't exist. আমি বইটা শেষ করে এই বিষয় অনুভব করতে পারছিলাম। তারপর খুঁজতে গিয়ে এই ট্যাগলাইন পাই। অপরাধী যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন, যতই নিখুঁত পরিকল্পনা করুক না কেন! একটা না একটা ভুল ঠিকই হয়ে যায়। হয়তো নিজে সে ভুল করে, কিংবা মনের অজান্তে। সৃষ্টিকর্তা বোধহয় চান কোনো অপরাধী নিজের অপকর্ম থেকে পার না পেয়ে যায়। তাই কোনো না কোনো ভুল সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বলেই দিনশেষে দৃষ্টিগোচর হয়। ▪️বই : ব্যাড কিডস ▪️লেখক : জিযিন চেন ▪️অনুবাদ : আহনাফ তাহমিদ ▪️প্রকাশনী : গ্রন্থ রাজ্য ▪️প্রকাশ সাল : মার্চ ২০২৫ ▪️ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৫/৫