User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
best
Was this review helpful to you?
or
“মহাবিশ্বে মহাকাল-মাঝে আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিগুরুর মতোই মহাবিশ্বের বিশালতার কথা ভেবে আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো এক সময়ে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি। আমাদের পূর্বসূরিরাও মহাকাশ এবং মহাবিশ্ব নিয়ে ভেবে ভেবে বিস্মিত এবং চিন্তিত হয়েছেন। প্রাচীন অনেক দার্শনিকই মহাবিশ্বের কার্যকারণ নিয়ে ভাবতে গিয়ে নানান অনুমান করেছেন, নানান হাইপোথিসিসের জন্ম দিয়েছেন। আসলে মহাবিশ্ব এবং এতে প্রাণের সন্ধানের যে ধারা তা খুব একটা নতুন নয়, বরং বলা চলে একেবারেই সুপ্রাচীন। অনুসন্ধানের সেই ধারা বর্তমানে যে কোনো সময়ের চেয়েই প্রবল। মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে বিজ্ঞানীদের যে অনুসন্ধান-তাঁর নাড়িনক্ষত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন রেজাউর রহমান,তাঁর “মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান” বইটি নিয়ে। প্রথমা থেকে ২০১০ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে রেজাউর রহমান আমাদের অনন্ত মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গবেষণা তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সর্বমোট এগারোটি অধ্যায়ে বিস্তৃত এই বইটি হাল জমানার বিজ্ঞানীদের মহাকাশে প্রাণ অনুসন্ধানের খোঁজখবর পাঠককে তুলে ধরতে সচেষ্ট। যদিও আলোচ্য প্রসঙ্গটি নিয়ে মোটা বই লিখে ফেলা যায়, তবু লেখক তার বইয়ের পরিসর মাত্র ৭২ পৃষ্ঠায় রেখেছেন- যেটি এই বইয়ের একটি দুর্বলতা হিশেবে চিহ্নিত হতে পারে। আবার কেউ কেউ হয়ত ছোট্ট পরিসরে এমন প্রসঙ্গের উপস্থাপন লেখকের শক্তিমত্তার প্রকাশ হিশেবেই ভাবতে পারেন- বিতর্কটা ব্যক্তি পাঠকের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত বলেই মনে করি। মহাজাগতিক প্রাণের অনুসন্ধানের গল্প শোনাতে গিয়ে লেখক শুরুতেই পাঠককে অতীত ঘুরিয়ে আনেন। সেই আদিকাল থেকেই মহাবিশ্বকে জানান-বুঝার যে মানব-প্রচেষ্টা তা লেখক তুলে ধরতে চান আলোচ্য বইয়ের ‘বহির্বিশ্বে প্রাণের আদি সূত্র’ অংশে। মাত্র চার পৃষ্ঠায় কয়েক হাজার বছরের অনুসন্ধানের খবর তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা লেখক চালিয়েছেন তা পাঠক হিশেবে আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই অপ্রতুল। পরিসরটা আরো বাড়ালে লেখক পাঠকদের আরো অনেক প্রসঙ্গের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতেন বলেই আমার মত। মহাবিশ্বের প্রাণ খোঁজ চালাতে গেলে প্রথম যে সকল প্রসঙ্গ সামনে চলে আসবে তা হলো- ‘প্রাণ কী?’, ‘এর পেছনের রয়াসনটা কী?’, ‘এর প্রকৃতি কেমন?’, ‘কীভাবে এর বিবর্তন হয়?’- ইত্যাদি ইত্যাদি। সকল প্রশ্নের উত্তরই বিস্তারিত দেয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক। ‘জীবনের সংজ্ঞায়ন’ অধ্যায়ে প্রাণের প্রকৃতি এবং সংজ্ঞায়ন নিয়ে বেশ কিছুটা আলোচনা রয়েছে। জীব ও জড়ের পার্থক্যগুলো নিয়ে যেমন আলোচনা রয়েছে, তেমনি জীব ও জড়ের সীমানা ঘুচে গিয়ে যে অস্বচ্ছ অঞ্চলের দেখা মেলে তাও আলোচিত হয়েছে এ অধ্যায়ে। জীবের নানা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে লেখক যুক্তি দেখিয়েছে যে, মহাবিশ্বের কোথাও প্রাণের সন্ধান মিললে তাদেরও জীবনের এই সকল সূত্রই মেনে চলা উচিত। পরের অধ্যায়ে কোষ নিয়ে ছোট পরিসরে একটি আলোচনা রয়েছে। যদিও এই অধ্যায়টি বইয়ের মূল প্রসঙ্গের সাথে খাপ খায় না বলেই মনে হয়। পরবর্তীতে ‘আকাশভরা সূর্যতারা, বিশ্বভরা প্রাণ’ অধ্যায়ে জীবের বেঁচে থাকার মূল উপাদান শক্তি সংগ্রহ এবং উৎপাদন নিয়ে মনোমুগ্ধকর একটি অধ্যায় রয়েছে। মহাবিশ্বের যদি আরো প্রাণের উদ্ভব হয় তাহলে প্রকৃতি থেকে তাদের শক্তি সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি কেমন হতে পারে- সে প্রশ্নের উত্তর পৃথিবীর জীবের দিকে তাকিয়ে খোঁজার তাগিদ অনুভব করেছেন লেখক। এরপরে প্রাণীর জৈববিবর্তন নিয়ে একটি অধ্যায় আছে যাতে আলোচিত হয়েছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব। ‘জীবনের জৈব রাসায়নিক উপাদান’ নামের অধ্যায়ে প্রায় চারশো’ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির বিজ্ঞানটুকু তুলে ধরা হয়েছে। লেখক নিজে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক বলেই এই কয়েকটি অধ্যায়ের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো চমৎকারভাবে তুলে আনতে পেরেছেন। সত্যি বলতে- এই কয়’টি অধ্যায়ই “মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান” বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। মহাজাগতিক প্রাণ নিয়ে অনুসন্ধানের কথা যখন উঠে আসে তখন মঙ্গল গ্রহকে কীভাবে বাদ দেয়া যায়? তাই মঙ্গলে গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানের অধ্যায়টুকুও উঠে আসে আলোচ্য বইটিতে। এর পরবর্তী দু’টি অধ্যায়ে বহির্জগতের প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার আধুনিক ধ্যানধারণা এবং অনুসন্ধানের পর্বটি তুলে ধরেছেন লেখক। যদিও এই অংশটুকুই পাঠককে হতাশ করবে। ছোট পরিসর, অপ্রতুল তথ্য, আকর্ষণীয় ছবির অভাব ইত্যাদির কারণে- অধ্যায় দু’টি যে গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে- তা পূরণ হয় নি। মহাবিশ্বের প্রাণ অনুসন্ধান এবং বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান নিয়ে কোনো বই লেখা হলে সেখানে অবশ্যই ‘ড্রেক সমীকরণ’ এবং ‘ফার্মির বিভ্রান্তি’ নিয়ে আলোচনা থাকতেই হবে, নয়ত বইটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। “মহাবিশ্ব জীবনের সন্ধান” বইটিতে এই দু’টি প্রসঙ্গে কোনো আলোচনাই নেই। নিঃসন্দেহে এটাই এই বইয়ের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা। বইয়ের ভাষা নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে বলব- বিজ্ঞানের বইয়ের ভাষা যেমন সহজ-সরল হওয়া উচিত তেমনটাই রাখার চেষ্টা করেছেন লেখক। যদিও কিছু কিছু প্রচলিত ইংরেজি শব্দের বদলে অপ্রচলিত বাংলা শব্দের ব্যবহারে পাঠককে হোঁচট খেতে হয়। কিছু জায়গায় বেশ বিভ্রান্তির জন্ম হয়েছে। যেমন- বইয়ের ৬১ পৃষ্ঠায় অষ্টম লাইনে “ মহাবিশ্বের ছায়াপথে ৪০০ বিলিয়ন তারকারাজি আছে” বাক্যাংশটুকু পাঠকের মনে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আবার ৬৯ পৃষ্ঠায় বৈজ্ঞানিক-তথ্যগত ভুল চোখে পড়ে। লেখক লিখেছেন- “কিন্তু আমাদের এখান থেকে সেই হারকিউলিসের দূরত্ব ২৫ হাজার আলোকবর্ষ। এ পৃথিবীর যেকোনো শব্দ বা সংকেত সেখানে পৌঁছাতে লাগবে ৫০ হাজার বছর। অর্থাৎ যেতে লাগবে ৫০ হাজার বছর এবং আসতে আরও ৫০ হাজার বছর”। তথ্যটিভুল, আসলে এটা হবে-‘যেতে লাগবে ২৫ হাজার বছর এবং আসতে আরও ২৫ হাজার বছর’। এটা কি ছাপার ভুল নাকি লেখকের ভুল তা বুঝতে পারছি না, তবে আসা করি পরবর্তী সংস্করণে লেখক উদ্যোগী হয়ে বইয়ের ভুলগুলো শুধরবেন এবং সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন।