User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
র্কবিতার পাঠক বিশ্বময়। কবিতার মাধ্যমে একজন কবি তার চলতি সময় ও ভবিষ্যৎ সময়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। কবির উপলব্ধি যখন পাঠকের উপলব্ধিতে নাড়া দেয় তখনই পাঠক সেই কবিতার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন। ফলে পাঠকের সঙ্গে কবির সম্পর্ক সূচিত হয়। বাংলাদেশের একজন কবির ভাবনার সঙ্গে মিলে যেতে পারে আফ্রিকার পাঠকের ভাবনা, তেমনি আরব কিংবা আমেরিকার কবির ভাবনার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে পারেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা ভারতের পাঠক। ফলে কবিতার এই সর্বজনীন আবেদনে সাড়া দেন ধীমান পাঠক। বহু দেশ এবং কাল থেকে তিনি গ্রহণ করতে চান তার আরাধ্য পঙিক্তগুলো। এ কারণেই একটি ভাষার কবিতা অনূদিত হয় অন্য ভাষায়। স্থান এবং কালের সীমানা ছেড়ে কবিতা উড়াল দেয় অন্য সময়ে, অন্য ভূগোলে। চিরন্তন কবিতার স্বভাব এমনই। একজন বড় কবি স্বাভাবিকভাবেই একজন ভালো পাঠক। নিরন্তর পাঠের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি তার বোধকে শাণিত করেন। উত্তরোত্তর ঋদ্ধ করেন নিজেকে। অতীত এবং সমকালীন কবিতা আত্মীকরণের মাধ্যমে তিনি আয়ত্ত করেন তাঁর নিজস্ব ভাষা-প্রকরণ, তার প্রকাশের কৌশল। বাংলাদেশের কবিতার আলাদা চরিত্র নির্মাণ করে দিয়েছেন শামসুর রাহমান। সম্ভবত জীবদ্দশায় সেরা কবির ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সেটা। বাংলাদেশের কাব্যভাষার প্রধানতম বিবর্তনও এসেছে তাঁরই মাধ্যমে। তাঁর হাতেই স্থিতি পেয়েছে বাংলাদেশের কবিতা। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে শামসুর রাহমান যখন তাঁর লেখালেখি শুরু করেন, সেই সময়টা বাংলা কবিতার জন্য খুব একটা অনুকূল ছিল না। নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন চলছিল বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ওপর। খুব বাজে ধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ঘটানোর জোর প্রচেষ্টা ছিল তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্রের। শামসুর রাহমান তখন সেই পরিস্থিতির বিপক্ষে এক প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি লিখেছেন অসাধারণ সব কবিতা। ‘দুঃখিনী বর্ণমালা’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘আসাদের শার্ট’ এসব কবিতায় প্রকৃতপক্ষেই সময়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘তাঁর সব রচনা বিশ্বসাহিত্যের অন্তর্গত, তাঁর পা সব সময় গাঁথা থেকেছে স্বদেশের মাটিতে।’ শামসুর রাহমানের প্রিয় কবির তালিকাটি ছিল বেশ দীর্ঘ। তার মধ্যে তিনি প্রায়ই বলতেন ডব্লিউ বি ইয়েটস, টি এস এলিয়ট, ডব্লিউ বি অডেন প্রমুখের নাম। ইউরোপের বাইরের কবিরাও ছিলেন তাঁর পাঠের তালিকায়। কোনো এক বিচিত্র কারণে শামসুর রাহমান পল এলুয়ারের একটি কবিতা ছাড়া তাঁর প্রিয় কবির তালিকায় থাকা আর কারও কবিতাই অনুবাদ করেননি। আমরা জানি, কবিতার অনুবাদ সহজসাধ্য নয়। একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় কবিতার এই রূপান্তর আসলে সে কবিতাটির পুনর্লেখন। সে অর্থে কবি ছাড়া কবিতার অনুবাদ অসম্ভব। প্রধান কবিদের তাই একধরনের দায় থাকে ভিন্ন ভাষার কবিতার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটানোর। দেশের প্রধান কবি হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় তাঁকে অনুরুদ্ধ হয়ে অনুবাদ করতে হয়েছে বিভিন্ন কবির কবিতা। এ রকম অনেক কবিতাই ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে নানা দৈনিক পত্রিকা ও সাহিত্যপত্রগুলোতে। শামসুর রাহমানের অনূদিত তিনটি কাব্যগ্রন্থ রবার্ট ফ্রস্টের নির্বাচিত কবিতা (১৯৬৮), খাজা ফরিদের কবিতা (১৯৬৯) ও বিভিন্ন ভাষার ১১ জন কবির কবিতার অনুবাদ হাওয়ায় ভেসে আসা স্বর (২০১০) একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে অনুবাদ কবিতাসমগ্র। যার মাধ্যমে বিভিন্ন ভূগোলে সঞ্চরণশীল কবির পাঠাভ্যাসের একটি ইশারা খুঁজে পাওয়া যায়। খাজা ফরিদ পাকিস্তানের মুলতানের একজন মরমি কবি। ‘সেরাইকি’ ভাষায় রচিত তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজ গীতলতা। সে কারণে ফরিদের কবিতা সেরাইকি ভাষাভাষীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। শামসুর রাহমান খাজা ফরিদের কবিতা প্রকাশ করেছেন আধুনিক কবিতার ভাষায়। অনুবাদের ভূমিকায় তিনি খাজা ফরিদ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন। রবার্ট ফ্রস্টের ওপর লুই আনটারমেয়ার ও কবীর চৌধুরীর একটি করে লেখা, অন্যান্য কবিদের পরিচিতি ইত্যাদি রাখা হয়েছে বইয়ের শেষ দিকে, পরিশিষ্ট অংশে। বইটির শুরুতেই কবি সাজ্জাদ শরিফ ‘কবিতার পর্যটক’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লিখেছেন। মূল বইয়ে প্রবেশের আগে তাঁর ভূমিকাটি খুবই কার্যকর বিবেচিত হবে। খুব অল্প কথায় শামসুর রাহমানের কাব্যকৃতির নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে সেখানে। তাঁকে উদ্ধৃত করে আলোচনার শেষ টানছি আপাতত, ‘এই বইয়ে ধরা পড়েছে কবিতাবিশ্বে শামসুর রাহমানের পর্যটকবৃত্তি ও বৈচিত্র্যে উৎসুক তাঁর সতৃষ্ণ মনের পরিচয়। শামসুর রাহমানের যে কবিপরিচয় তৈরি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তৈরি হতে থাকবে, তাতে ভূমিকা রাখবে এই অনুবাদগুলোও।’