User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
লেখক কিছু কিছু সৃষ্টি থাকে যাকে কোনো মাপেই পরিমাপ করা সম্ভব না। মুরাদ কিবরিয়ার নিনাদ তেমনি একটি সৃষ্টি। নিনাদ – মুরাদ কিবরিয়া: এক গভীর জীবনবোধের উপন্যাস নিনাদ মুরাদ কিবরিয়া’র একটি বাস্তবিক এবং আবেগপ্রবণ উপন্যাস, যেখানে প্রতিটি চরিত্রের জীবনদর্শন, একাকীত্ব এবং সংকটগুলো পাঠকের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে যায়। কিবরিয়া গল্প বলার যে অদ্ভুত ক্ষমতা দেখিয়েছেন, সেটা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। তাঁর লেখায় এমন এক ধরনের সত্যবোধ ও অনুশীলন রয়েছে, যা প্রতিটি পৃষ্ঠায় পাঠককে একটি অনুভূতিপূর্ণ ভ্রমণে নিয়ে যায়। এখন কথা বলা যাক চরিত্র নির্মাণের ব্যাপারে, যা প্রতিটি ফিকশন লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কিবরিয়া যেন জানেন ঠিক কীভাবে চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তোলা যায়। নিনাদ এর চরিত্রগুলি শুধু গল্পের অংশ নয়, তারা যেন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বাস্তব জীবনযাপন করছে। তাদের সংকট, তাদের দুঃখ, তাদের হাসি—সবই আমাদের মনে স্থান করে নেয়। এমনকি তাদের একাকীত্বও যেন পাঠকের হৃদয়ের গহীনে প্রবেশ করে, যেখানে নিজের জীবনের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। আর এই চরিত্রগুলির মধ্য দিয়ে যে মানবিকতা ফুটে উঠেছে, তা একে অন্যের প্রতি সহানুভূতির অনুভূতি জাগায়। কিবরিয়া তাঁদের শুধু জীবন্ত করে তোলেননি, বরং আমাদের সামনে এমন এক পৃথিবী তুলে ধরেছেন যেখানে সত্যিকারের মানুষরা নিজেদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং সেই পথে নিজেদের খুঁজে পায়। এখানে নিনাদ এর মূল থিম—ভাগ্য, একাকীত্ব, এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি নির্ভরশীলতা। উপন্যাসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে পৃথিবীতে আমরা যতই শক্তিশালী হই না কেন, একদিন আমাদের ভরসা রাখতে হয় সৃষ্টিকর্তার উপর। তবে, কিবরিয়া সেই উপন্যাসের গল্পে কখনোই পাঠককে দুঃখ বা হতাশায় ফেলে দেন না। বরং, তিনি প্রতিটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে জীবনের অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরেছেন। এতে এক ধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি হয় যা জীবনকে যেমন কঠিন, তেমনি সুন্দরও করে। লেখকের ভাষা কখনো মিষ্টি, কখনো দুঃখভরা, কখনো আবার সোজাসাপটা—এই বিভিন্ন শৈলীতে তিনি চরিত্রদের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন। রিডারের মনে একটা নির্দিষ্ট উত্তেজনা তৈরি থাকে, যেন সে জানতেই চায় পরবর্তী পৃষ্ঠায় কী ঘটবে। এখানে কিবরিয়া এক ধরণের চুম্বকীয় শক্তি সৃষ্টি করেছেন, যা পাঠককে গল্পের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। গল্পের গতি এতটা মসৃণ, যে কোনো অদৃশ্য বাঁধা পাঠককে থামাতে পারে না। প্রতিটি ঘটনা একের পর এক উন্মোচিত হতে থাকে, যেন মনে হয় এক স্রোতে ভেসে চলা এক জীবনযাত্রা। আরেকটি দিক যা নিনাদ এর বিশেষত্ব, তা হল এর আবেগ। কিবরিয়া যেমন চরিত্রদের বেদনাকে কল্পনাশক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তেমনি তাদের মধ্যে যে মানবিকতা, আশা এবং সম্ভাবনা রয়েছে, সেটিও আমাদের আবেগের সঠিক স্থানে পৌঁছায়। একটি উপন্যাসের সফলতা সেখানেই—যতটা মানুষ ভাবতে পারে, সেভাবেই সে আবেগকে পৌঁছে দেয়। কিবরিয়া এই বিষয়টি সুন্দরভাবে ধারণ করেছেন। নিনাদ শুধু এক লম্বা গল্প নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা—যেখানে পাঠক নিজের জীবন, নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব, এবং পৃথিবী সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে। কিবরিয়া’র লেখায় নিখুঁত মানবিকতা, চিন্তাশীলতা এবং একটি পৃথিবীজুড়ে মানুষের একাকীত্বের সার্বজনীন অনুভূতি ফুটে উঠেছে। এক কথায়, নিনাদ পাঠককে এক নতুন দৃষ্টিকোণ এবং জীবনবোধ উপহার দেয়, যা তাকে দীর্ঘ সময় ধরে চিন্তা করতে বাধ্য করবে। এটি এমন একটি উপন্যাস, যা একে একে মানুষকে তার অন্তর্দৃষ্টি এবং আবেগের দিকে টেনে নিয়ে যায়—আর এই যাত্রায়, কিবরিয়া প্রমাণ করেছেন যে তিনি শুধু একজন লেখক নন, একজন সৃষ্টিশীল শিল্পী, যিনি সাহিত্যকে জীবন্ত করে তোলেন।