User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#বই_রিভিউ বই: ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে লেখক: রুকসাত জাহান প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম মলাট মূল্য: ৫৭৫৳ রোমান্টিক ও সামাজিক জনরা নিয়ে লেখা রুকসাত জাহান এর ৪র্থ 'বই ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে'। লেখকের লেখার হাত মাশাআল্লাহ চমৎকার। একদম বাস্তবতা নিয়ে লেখা। এই বইটাও অনেক সুন্দর। ঝরঝরে ও প্রাণবন্ত লেখা। একটানা পড়ে শেষ করার মতো বই, কোন বিরক্ত আসবে না। শব্দচয়ন, বাক্যগঠন সব কিছু দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ★পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বিয়ে হচ্ছে একটা সামাজিক বন্ধন। এই উপন্যাসটি শুরু হয় তুলতুলের বিয়ের মাধ্যমে। পারিবারিক সিদ্ধান্তে ঠিক হয় তুলতুল ও সায়েমের বিয়ে, যেখানে বিয়ের আগে বর কনে দেখা করার সুযোগটুকু পায়নি। তাদের বিয়েকে ঘিরে সব চরিত্রের আবর্তন হয়। কোন চরিত্র নিয়ে কতটুকু লিখলে পাঠকে তৃপ্তি দেবে সেটা লেখক ভালো করে বুঝে গেছেন। একটা সম্পর্ক শুধু দুইজন মানুষ নিয়ে হয় না সেখানে থাকে গোটা পরিবারের বন্ধন। বোনে-বোনে সম্পর্কের গভীরতা, সন্তানের প্রতি বাবা- মায়ের পক্ষপাতিত্ব। হিংসা বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন সবকিছু চমৎকার করে লিখেছেন। বাবা মায়ের সিধান্ত যে সবসময় সন্তানের জন্য সুখের হয় না সেটা বইতে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। দুইটি মানুষের জীবন একসাথে বেধে দেওয়ার নাম হলো বিয়ে। পারিবারিক বিয়েতে দুটি মানুষের যে চেনা জানা দরকার তা হয়ে ওঠে না। তাই দরকার হয় বোঝাপড়ার। তেমনি তুলতুল ও সায়েম জানে না একে অপরের পছন্দ, রুচি সম্পর্কে। নতুন একটা পরিবারে আগমনে প্রয়োজন স্নেহ, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। তুলতুলের এই নতুন জীবন কোন দিকে মোড় নেবে? বইয়ের প্রধান চরিত্র মিতুল ও আরমান। বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় তাদের। কিন্তু সে পরিচয় কি ভালোবাসার রুপ নেবে? তুলতুল ও সায়েম এর দাম্পত্য জীবন কি সুখের হবে? এই তরুণ- তরুণীদের ভবিষ্যৎ কি পরিবর্তন আনবে? জানতে হলে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে। ★চরিত্র বিশ্লেষণঃ ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে বইটা অনেক চরিত্র নিয়ে রচিত। মিতুল: গল্পের প্রধান চরিত্র মিতুল। সহজ সরল একজন কিশোরী। যার সরলতায় সবাইকে মুগ্ধ করে। মিতুল প্রাণবন্ত একটা মেয়ে। আরমান: আরমান চরিত্রটা একটু কামখেয়ালী দেখালেও সে কিন্তু আসলে তা নয়। সে দায়িত্বশীল ও আপন মানুষের পাশে থাকে। প্রিয়জনদের সব প্রতিকূলতায় ঢাল হয়ে দাড়ায়। তুলতুল: খুব মিষ্টি একটা চরিত্র। শান্ত, বুদ্ধিমতি একজন নারী। সংসারের কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। তবে একটু অভিমানীও বটে। আপন মানুষের কাছে তো অভিমান করবেই। সায়েম: সায়েম হচ্ছে একজন পরনির্ভরশীল পুরুষ। যে মা বোনের ওপরে কথা বলতেই জানে না। মা, বোন দোষ করলেও সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করে না। এমন মা ভক্ত ছেলেদের বউরা কতটা সুখে থাকে সেটা এই সায়েম সম্পর্কে পড়েই জানতে পারবে। এছাড়াও ফারহা, ফারহান, মীরা, শেলী, জান্নাত আরা, ফরিদা, রফিক সাহেব ও শফিক সাহবে প্রতিটি চরিত্র যেন আমাদের সমাজের চারপাশের চেনা জানা বাস্তব চরিত্র। এই উপন্যাসটি ওঠে এসেছে আমাদের সমাজের বাস্তব সব চিত্র। খুব চমৎকার একটি বই ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে।
Was this review helpful to you?
or
#রিভিউ #ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে লেখিকাঃ রুকসাত জাহান রিভিউদাতাঃ ফারহানা তাবাসসুম _____ ★কাহিনী সারসংক্ষেপঃ গল্প টা শুরু বিয়ে দিয়ে। ❝বিয়ে❞ এটা কোনো সাধারণ শব্দ নয়। বিয়ে শব্দ টার সাথে একটা মেয়ের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা, নতুন সংসারে যাওয়ার অন্য রকম এক অনুভূতি, নিজের পরিবার ছেড়ে অন্য এক পরিবারে নিজের অস্তিত্ব টা জড়িয়ে দেয়ার ভাবনা, ছোট থেকে বড় হওয়া নিজের পরিবারকে ছাড়ার কষ্ট অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে। বিয়ে নিয়ে থাকে একটি মেয়ের হাজারও কল্পনা জল্পনা। ~ শুরু টা তুলতুলের বিয়ে দিয়ে। তুলতুল হচ্ছে গল্পের প্রধান চরিত্র মিতুলের বড় বোন। সেই বিয়েতে আগমন ঘটে আরমান নামের এক পুরুষের। যে কিনা হুট করে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মিতুলের জীবনে চলে আসে। আস্তে আস্তে তাদের পরিচয় বাড়ে। দেখা-সাক্ষাৎ হয়। দুজনের মনেই জন্ম নেয় এক অদ্ভুত অনুভূতি। আরমান মিতুলের চাইতে দশ বছরের বড়। ছন্নছাড়া এক জীবন তার। মিতুল আর আরমানের কথা হয় ছবি দেয়া নেয়া নিয়ে ওয়াটসএপে। কথা বলতে বলতে দুজনেরই দুজনের জন্য ভালো লাগা শুরু হয়। আস্তে আস্তে সেটা ভালোবাসায়। তবে শুরুতেই কেউ এই অনুভূতি টা বুঝতে সক্ষম হয় না। বুঝতে দুজনেরই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। কেউই কারও অনুভূতি কারও কাছে প্রকাশ করে না। করতে বড্ড দেরি হয়ে যায়। মিতুলের বোন তুলতুলের বিয়েতে ওদের কাজিন ফারহাকে দেখতে আসা ফারহান ফারহার বদলে মিতুলকে পছন্দ করে বসে। আর কিছু একটা কারণে জিদ করে বসে বিয়ে করলে মিতুলকেই করবে। অতঃপর মিতুল আর ফারহানের বিয়ে ঠিক করে ফেলে দুই পরিবার। আর অন্য দিকে আরমানের মাও আরমানের বিয়ে ঠিক করে মীরা নামের এক মেয়ের সাথে। আরমান মিতুল কেউই এই বিয়েতে খুশি নয়। আচ্ছা আরমান আর মিতুল কি অন্য কারও নামের হয়ে যাবে? ওরা কি একে অপরের অনুভূতি টা জানতে পারবে? পরিণতি কি হবে ওদের? এভাবেই কি ওদের ভালোবাসা টা শেষ হয়ে যাবে? হবে পারবে কি এক ওরা? ~ তুলতুলের বিয়ের পর সংসার জীবনটা খুব একটা সুখকর হয় না। বিয়ের প্রথম রাতেই সে বুঝতে পারে কেমন হতে পারে তার সংসার জীবন। স্বামী সায়েম মায়ের হাতের পুতুল। মা আর বোনই তার জীবন ছিল। মা বোনের হাতে বড় হয়েছে। সবসময় মা আর বোনের কাছে যেন ভালো হয়ে থাকতে পারে সেটাই করে সে। মা বোনের জন্য বউয়ের সাপোর্ট নিতে পারে না ছেলেটা। সংসারে তুলতুল মেয়েটা অপমানিত, অবহেলিত হতে থাকে। ননদ, শ্বাশুড়ির কথার আঘাত, অত্যাচারে চালিয়ে যায় তার সংসার। তুলতুল কি পারবে শ্বাশুড়ি আর ননদের মন জুগিয়ে সংসার জীবন টা সুখকর করতে? পারবে কি নিজের স্বামীকে বুঝাতে যে মা বোনের কাছে ভালো ছেলে আর ভাই হওয়ার পাশাপাশি স্ত্রীর কাছে ভালো স্বামীও হয়ে উঠতে হয়! _____ ★চরিত্রঃ মিতুলঃ গল্পের প্রধান চরিত্র। গল্পের নায়িকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মেয়ে। বড্ড বোকা সোকা মেয়ে টা। বোনের বিয়েতে আসা আরমান নামক যুবকের প্রেমে পড়ে যায় মেয়েটা। কিন্তু নিজের অনুভূতি টা জানাতে পারে না নিজের জড়তার কারণে। ~ আরমানঃ গল্পের প্রধান চরিত্র। গল্পের নায়ক। পছন্দের একটি চরিত্র। সে একজন ফটোগ্রাফার। ছন্নছাড়া এক জীবন যার। প্রকৃতি, জন মানুষের নানান জীবন নিয়ে যে ফটোগ্রাফার করে বেড়ায়। কাজিনের বিয়েতে এসে মিতুল নামের এক মেয়ের মায়ায় জড়িয়ে যায়। বয়সে বড় হওয়া আর ছন্নছাড়া জীবন হওয়ার দরুন নিজের অনুভূতি টা জানাতে পারে না। যদি মেয়েটা ফিরিয়ে দেয় সেই ভয়ে। ~ তুলতুলঃ এই চরিত্র টা আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে। তুলতুল চরিত্রের উপর আমার বড্ড মায়া কাজ করেছে। বিয়ের পর মেয়েটা না পায় স্বামীর কাছে যোগ্য সম্মান, না ভালোবাসা। আর না পেয়েছে শ্বাশুড়ি, ননদের কাছে যোগ্য ব্যবহার। সবসময় সবার কাছে অবহেলিত হয়ে এসেছে। ~ সায়েমঃ তুলতুলের স্বামী। মা বোনের আদর ভালোবাসার আদলে বড় হওয়ার দরুন সবসময় মা বোন ছাড়া এর বাইরে আর কোনো মেয়ের জীবনে জড়ায় নি। বিয়ের পর তাই নিজের বউয়ের প্রয়োজন টা কখনো বুঝে উঠতে পারে না। সবসময় মা বোনকে সাপোর্ট করতে যেয়ে বউকে সবার কাছে ছোট করে ফেলে। দ্বিধায় ভোগে ছেলেটা। ~ ফারহানঃ এই চরিত্র টার প্রতি আমার বড্ড বিরক্ত লেগেছে। ফারহান একজন আত্নকেন্দ্রীক মানুষ। সবসময় নিজেকে শো অফ করতে পছন্দ করে। নিজেকে বড় প্রমাণ করতে যেয়ে অপর পাশের মানুষ টাকে অপমানিত করে ফেলে কথার ছলে। নিজের জিদ টাই তার কাছে বড় কিছু। ~ ফারহাঃ মিতুল আর তুলতুলের চাচাতো বোন। ফারহা একজন অহংকারী মানুষ। মা বাবার আহ্লাদী মেয়ে। সবসময় মিতুলকে ছোট করতে ব্যস্ত থাকে। ~ শেলীঃ সায়েমের বড় বোন। এই চরিত্র টা আমার বড্ড অপছন্দের। নিজের সংসার ফেলে সবসময় নিজের মা ভাইয়ের সংসারে নিজে তদারকি করতে ব্যস্ত থাকে। ভাইয়ের বউকে নানান কথায়, ব্যবহারে অপমানিত করেই যায়। ~ জান্নাত আরাঃ সায়েমের মা। শেলী চরিত্র টার পাশাপাশি এই চরিত্র টার প্রতিও আমার বড্ড রাগ হয়েছে। ছেলের বিয়ের প্রথম দিন থেকেই ছেলেকে বউয়ের কাছ থেকে আলাদা করাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ছেলের বউকে নানান ভাবে অত্যাচার করতে থাকে। নিজে শাশুড়ি ননদের থেকে অবহেলিত, অপমানিত হওয়াই সেও সেই ভাবনাই ধরে রেখেছে। নিজের ছেলের বউয়ের সাথেও সেই আচরণটাই করে। ছেলেকে সবসময় নিজের হাতে মুঠোয় রাখতে চান। ~ এছাড়াও আর কয়েকটি চরিত্র রয়েছে। রফিক সাহেব মিতুলের বাবা, ফরিদা বেগম মিতুলের মা, শফিক সাহেব ফারহার বাবা, জেসমিন ফারহার মা, শর্মিলী আহমেদ ফারহানের মা, জুলফিকার সাহেব ফারহানের বাবা, রাতুল মিতুল তুলতুলের ভাই, আনোয়ারা পারভীন আরমানের মা, জলিল সাহেব সায়েমের বাবা, যুবায়ের শেলীর স্বামী, মিতুলের দাদি, সায়েমের দাদি। গল্পে সবার চরিত্রই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সব চরিত্রই একে অপরের সাথে জড়িত। _____ ★মতামতঃ পুরো গল্প টা একটা ঘোরের মধ্যে পড়েছি। চমৎকার একটি বই। আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে। গল্প টার মাঝে ভালোবাসা, মান-অভিমান, অবহেলা সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখিকার লেখার ধরণ চমৎকার। _____ ★রেটিংঃ ১০/১০
Was this review helpful to you?
or
বই ভাবনাঃ ধরো যদি হঠাৎ সন্ধে উপন্যাসের নামঃ ধরো যদি হঠাৎ সন্ধে লেখকের নামঃ রুকসাত জাহান প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ প্রকাশনীঃ চলন্তিকা বইয়ের ধরণঃ রোমান্টিক কাহিনির সারসংক্ষেপ উপন্যাস শুরু হয় মিতুলের বোন তুলতুলের বিয়ের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে। বিয়েতে মিতুল আরমানের প্রথম দেখা হয়। আরমান খামখেয়ালি, বাউন্ডুলে আর মিতুল সপ্রতিভ, চঞ্চল একটা মেয়ে। দুজনের একে অপরের প্রতি আবেগ ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে সিয়াম তুলতুলের বিবাহিত জীবন এগিয়ে যায়। লেখিকা পার্শ্ব চরিত্রদের সমান গুরুত্ব দিয়ে লিখেছেন। এসেছে ফারহা , ফারহান, মিতুলের চাচা,চাচী, তুলতুলের শ্বশুরবাড়ির গল্প। এসেছে ভালোবাসার কিছু মিষ্টি অনুভূতি, এসেছে বিরহ, এসেছে প্রাপ্তি। গল্পের মূল বিষয়বস্তু মানব,মানবীর ভালোবাসা, বিবাহ,বিবাহ পরবর্তী জটিলতা গল্পের পটভূমি শহর সময়কাল বর্তমান প্রেক্ষাপট চরিত্র বিশ্লেষণ মিতুল উপন্যাসের নায়িকা মিতুল। প্রাণোচ্ছল তরুণী। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের। কড়া শাসনে বড় হওয়া। হিসেবি বাবা, ভাইয়ের বেলায় একটু বেহিসাবি। তাও মানিয়ে চলা। পড়ালেখায় মধ্যমমানের। রান্নার কাজে অপটু। একদম সাধারন পাশের বাড়ির মেয়ে। তুলতুল মিতুলের বড়বোন। খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। বিয়ের পরে স্বামী, সংসার নিজের করে পাওয়ার জন্য সচেষ্ট। শাশুড়ি, ননাশের চাপ, স্বামীর অপরিপক্ক আচরণ মেয়েটার জীবনে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সিয়াম মা, বোনের আদরে বড় হওয়া ভালো ছেলেটা। কখনো প্রেম না করা। নারীসঙ্গ বিয়ের আগে না পেয়ে, বিয়ের পরে স্ত্রীর মন জয় করতে বেগ পেতে হয়। মা,বোনের শৃঙ্খল ভেঙে স্ত্রীর পাশে দাড়ানোর মতো দৃঢ়তা তার মধ্যে ছিলো না। আরমান উপন্যাসের নায়ক আরমান পেশায় ফটোগ্রাফার। তবে গতানুগতিক কাজ সে করেনা। সে নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করে, অগোছালো ,বাউন্ডুলে। যাদের সচারাচর মেয়েরা ভরসা করতে পারেনা। কিন্তু তার সুন্দর একটা মন আছে, যার সন্ধান মিতুল ঠিক পায়। বাকি চরিত্র গুলোর মধ্যে মিতুলের বাবা, চাচা চাচাতো বোন ফারহা, ফারহান, তুলতুলের শাশুড়ি, ননাশ গুরুত্বপূর্ণ। তুলতুলের বিবাহিত জীবনের ঘটনাগুলো সব মেয়েকেই ভাবতে বাধ্য করবে। প্রিয় অংশ তুলতুলের সায়েমকে বলা কিছু কথা, প্রত্যেকটা মানুষের ভালোবাসার একটা আলাদা রূপ আছে। কেউ ঝগড়ার মাঝেও ভেজা চোখে ভালোবেসে যায়। কেউ দৈনন্দিন সব কাজের ফাঁকে নিজের মানুষটার চোখে একটু ভালোবাসার খোঁজ পেতে নানা ছুতোয় বারবার সামনে আসে। অযথাই কপালের টিপটা ঠিক করে। আঁচড়ানো চুল আবার আঁচড়ায়। ঘর্মাক্ত নিজের মানুষটা যখন দিনশেষে ঘরে ফিরে, তার কপালে জমে থাকা ঘামের ফোঁটায়ও কিন্তু ভালোবাসা থাকে। ভালোবাসার জন্য শরীর কাছে আসা লাগে না সবসময়। তবে হ্যাঁ গভীর ভালোবাসার পর যখন শরীর কথা বলে, তার ভাষা অনেক বেশি সুন্দর হয়। আহ্লাদি তরুণী হোক,বা বাস্তবতার আঘাতে ক্লিষ্ট তরুণ। দিনশেষে সবাই-ই নিজের মানুষটার কাছ থেকে শুধু শারীরিক স্পর্শ না, বরং উষ্ণ অভ্যর্থনা চায়। একটা আদুরে আলিঙ্গন চায়। সবার সামনে প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা লোক দেখিয়ে করতে হয় না। আড়ালেই একটু জড়িয়ে ধরা, কপালের ঘামটুকু মুছে দেয়া, কখনো একটা নির্দোষ চুমু। এটুকু নিয়েই জীবন কাটানো যায়। রোজ ঘড়ি ধরে গল্প করতে হয় না। কাজের ফাঁকে একটু খুনসুটি, এক কাপ চা খেতে খেতে দুটো ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে পরিবারের বাকিদের ভুলেও যেতে হয় না। হানিমুনে না নিলেও চলে। কিন্তু মাঝেমধ্যে বাইকের পেছনে বসিয়ে একটু বাইরে গলি পর্যন্ত নিয়ে যেতে, হুড খোলা রিকশায় বসে বৃষ্টিবিলাস করতে, ছাদে বসে চাঁদ দেখতে কিংবা মোড়ের টঙে চা খেতে খরচ লাগে না । লাগে একটু ইচ্ছে। এটুকু করতেপারলে ভালোবাসা কারো চেয়ে নিতে হয় না। এমনিই আসে। হুড়মুড়িয়ে বর্ষার হঠাৎ বৃষ্টির মতো।’ লেখকের গল্প বলার ধরণ সহজ, সাবলীল। ভাষা ও বর্ণনার সৌন্দর্য উপন্যাস চমৎকার মেদহীন। উপন্যাসের গতি স্বাভাবিক। কোন অংশ অতিরিক্ত লাগেনি। কাহিনির মোড় ও টুইস্ট খুব বেশি ছিলো না। উপসংহার—প্রত্যাশিত উপন্যাসের বার্তা কারো জীবনে অহেতুক জোরপূর্বক নিজের অবস্থান তৈরি করা যায় না। সেটা রক্তের সম্পর্ক হোক আর ভালোবাসার। গতানুগতিক রোমান্টিক উপন্যাস না এটা। ভালোবাসার কোন অশালীন বর্ণনা ছাড়াই স্নিগ্ধ উপন্যাসটি। ব্যক্তিগত অভিমত রুকসাত জাহানের লেখা দিন দিন পরিনত হচ্ছে। আগের উপন্যাসেও তিনি আমাদের মুগ্ধ করেছেন। বানান ভুল চোখে পড়েনি। উপন্যাস পড়তে শেখা যেকোনো বয়সের জন্য উপযুক্ত। রেটিং ৪/৫ (লেখিকা আমাদের আরো মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন) সুখপাঠ্য উপন্যাস পাঠকের মনে জায়গা করে নিবে অবশ্যই।
Was this review helpful to you?
or
বই:ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে লেখক:রুকসাত জাহান প্রকাশনা:চলন্তিকা বিয়ে শব্দটি দারুণ এক অনুভূতির নাম।দুটি আত্বার একাত্বতা,প্রকৃতি আর পুরুষের একীভূত হওয়া।দুটি পক্ষীর একসাথে নীড় বাধার আনুষ্ঠানিক প্রথাগত নাম হলো বিয়ে। বিয়ের জন্য প্রয়োজন দুটি সমমনষ্ক মানুষের,কিন্তু বর্তমান সময়ে বিয়ে যেন এক প্রহসন।যে দুটি মানুষকে একসাথে থাকতে হবে তাদের মন মানসিকতা,Comparability বা রুচির মিল না খুঁজে, খোঁজ করা হয় অর্থ সম্পদের।পাত্রের আর্থিক সংগতি আর কন্যার রূপ এ দুটি যেন বিয়ের এক নিক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে যে বইটি নিয়ে কথা বলব তা একটি সমকালীন সামাজিক উপন্যাস।গল্পে দেখা যায় পারিবারিক পছন্দে দুটি মানুষের জীবনের তার এক সাথে বেঁধে দেয়া হলো কিন্তু দুটি মানুষই জানে না একে অপরের রুচি, পছন্দ অপছন্দ।পারষ্পারিক বোঝাপড়ার আগেই পরিবারের অন্য সম্পর্কগুলোর হস্তক্ষেপে নতুন এই সম্পর্কটি নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্ধিহান হয়ে পড়ে।কোনো একটি চারাগাছকে যখন তার আপন পরিবেশ থেকে উপড়ে নতুন পরিবেশে রোপণ করা হয় তখন তার অভিযোজিত হতে প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণ ও অনুকূল পরিবেশের।তেমনি নতুন একটি পরিবারে একটি বধূর আগমনে প্রয়োজন স্নেহ,ভালোবাসা,ধৈর্য্য ও সহমর্মিতার।কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে পুত্রবধূ হচ্ছে দাস, আর সেই দাসের যদি নিজস্ব রুচি, চিন্তা বা অভিমত থাকে তাহলে তার চেয়ে বড় অপরাধ এই ভূ সংসারে আর কিছুই নেই।গল্পটি পড়তে গিয়ে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ্য করেছি, পুত্রবধূ আসার পর পুত্রের মা নিজের অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে শুরু করে।নিজের অজান্তেই পুত্র বধূর সাথে এক অসম লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়।একদিকে মা আরেক দিকে বধূ,একদিকে জন্মাবধি রক্তের ঋণ আরেকদিকে নব্য পাওয়া প্রেমের সুখানুভূতি। এই দুই টানাপোড়েনে পুত্রটির অবস্থা হয় তথৈবচ।আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, মেয়ের বিয়ের পরে প্রায়শই মেয়ের পরিবার তার কন্যাটিকে বোঝারূপে দেখতে শুরু করে।আদরের দুলালি যখন বৈরি পরিবেশে নিপীড়িত, অন্তরের রক্তক্ষরণে শয্যাশায়ী তখন তারা নিজেদের তথাকথিত সম্মান আর মিথ্যে অহংয়ের তুষ্টিতে ব্যস্ত।যারা চিন্তা করে কন্যার বৈরি সময়ে তার পেছনে ঢাল হওয়া অর্থ অপচয়, সম্মান বিনাশ তারা তো উমারুপী কন্যার বিয়ের স্থলে সৎকার্য সাধন করেছে।গল্প পড়তে গিয়ে আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলাম পরিবারে পুত্র ও কন্যার অবস্থার ভিন্নতা।পুত্রের মোহে কন্যার সাথে অবিচার যদি পিতামাতাই করে তবে কন্যার সাথে পুরো সংসার ন্যায় বিচার করবে তা আশা করাটাই তো হাস্যকর। গল্পে আরেকটা বিষয় উঠে এসেছে তা হলো বিয়ের সময় কন্যার বয়স।কন্যার বাহ্যিক রূপ লাবণ্য আর বয়সের চক্করে আত্বিক সৌন্দর্য্যের খোঁজ কয় জন রাখে? গল্প পড়তে গিয়ে মনে হলো লেখিকা দুই বোনের জীবন দিয়ে দুটি প্যারালাল ইউনিভার্স তৈরী করেছে।সামাজিক প্রথার শিকার তুলতুলের বিভীষিকাময় জীবন আর ইচ্ছেস্বাধীন জীবন বেছে নেয়া মিতুলের জীবন।তুলতুলের জীবনের নানা বিপর্যয় যেন চিৎকার করে আশেপাশের মানুষগুলোর অসহযোগিতার কথাই জানান দেয় আর মিতুলের অপটু হাতে নতুন সংসারের জীবন তার স্বতঃস্ফূর্ত জীবন আমাকে সোনার শিকলে বন্দি পক্ষী আর নীল আকাশে উড়ন্ত বাধাহীন সাগড়পাড়ের সেই মুক্ত গাঙচিলের কথা মনে করিয়ে দেয়।যোগ্য সঙ্গীর সাহচর্যে কেউ গাঙচিলের মতো মুক্ত আকাশে ওড়ে,সমুদ্রের তটরেখা ছুঁয়ে যায় আর কেউ বা ভারী শিকলের ভাড়ে নুইয়ে পড়ে।একদিকে আরমানের চারিত্রিক দৃঢ়তা,ঋজু ব্যাক্তিত্ব আর বিপদে ধীর স্থিরতা মিতুলের জীবনকে দিয়েছে নির্ভরতা তদ্রুপ সায়েমের সিদ্ধান্তহীনতা, পরমুখাপেক্ষী মনোভাব তুলতুলকে করেছে উদ্বাস্তু। সায়েমের মা আর বোনের জন্য রবী ঠাকুরের হৈমন্তির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করাতে ইচ্ছে করে, "অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মতো বিড়ম্বনা আর হয় না।" ফারহানের চরিত্র চিত্রায়নে লেখক বিখ্যাত গ্রীক পুরাণের শিকারি নার্সিসাসের আদলে গড়েছেন।এ যেন নিজের সৌন্দর্য,নিজের অহং, নিজের আমিত্বেই সদা ব্যাতিব্যস্ত। ফারহা সহ বাকি সবার চিত্রায়ণের মধ্যে দিয়ে লেখিকা মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে ক্রমাগত চলমানে নানা রকম ক্রিয়া বিক্রিয়ার চালচিত্র একেঁছেন।প্রত্যেকটি চরিত্র নিজের ব্যাক্তিত্বকে পাঠকের চোখের দর্পণে স্বমহিমায় বিকশিত হয়েছে।আর এই চরিত্রের রসায়নে পাঠক দারুণ এক সামাজিক উপন্যাসের স্বাদ আস্বাদন করেছে। বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে আবহমান কাল ধরে নারীরা কখনো সীতারুপে,কখনো দৌপদ্রীর রূপে সমাজের অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন বার বার হয়েছে।কন্যা দায়গ্রস্ত বাবা মাকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে,যে ছিলো নয়নের মণি সেই সমাজের চাপে বোঝাস্বরূপ কিভাবে হয়?সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাবা মা ও সন্তানকে হাজারো বিড়ম্বনা থেকে বিরত রাখে।স্ত্রীকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে যে বাধ্য করে সে সমাজের চোখে পুরুষোত্তম হলে স্বামী রূপে সে ব্যার্থ।তেমনি দৌপদ্রীকে সমাজের সামনে লাঞ্চিত করার জন্য স্বামী হিসেবে ধর্ম পুত্র যুদিষ্ঠির দায়ি। বিয়ে দুটি খন্ডিত অন্তরের মিলন,পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোজন। ভ্রমর ব্যাতিত যেমন পুষ্পের পরাগায়ন সম্ভব নয় তেমনি পুষ্প ব্যাতীত ভ্রমর অস্তিত্বহীন।প্রভু আর দাস নয় বরং সঙ্গীরুপে প্রকৃতি আর পুরুষকে এই ধরিত্রীকে আলোকিত করতে হবে।