User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
এটা অসাধারণ একটি বই, যেখানে অন্যরকমের নিরপেক্ষতা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার পঠিত প্রিয় একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
Excillent
Was this review helpful to you?
or
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরু আগের পটভূমি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মহভাবে তুলে ধরেছেন লেখক গোলাম মুরশিদ। লেখক বিভিন্ন বিশ্বস্ত সোর্সের রেফারেন্স দিয়ে সত্য ইতিহাস লেখার চেষ্টা করেছেন। এবং আমার মনে হয়, লেখক এক্ষেত্রে সফল। মুক্তিযুদ্ধে সংক্ষেপে জানতে এই বইয়ের তুলনা হয় না। তরুণ প্রজন্ম এই বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারণ। তরুণ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের যাদের ‘ইতিহাস’ জানার ইচ্ছা, দুঃখজনকভাবে এই বইটি থেকে তারা ইতিহাসের একরকম একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট বচন ছাড়া অন্যকিছু জানতে পারবেন না। কেন একপেশে? বা পক্ষপাতদুষ্ট? কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। এই বইতে পলাশীর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে প্রসঙ্গত, কিন্তু সেখানে মীর জাফর আর মীর কাশিমদের নাম অনুপস্থিত! বিশাল পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের ‘ইতিহাস’ রচনা করা হয়েছে এই বইতে যার কোথাও গোলাম আযম, খাজা খয়ের উদ্দিনের নাম গন্ধও নেই! অবশ্য গোলাম আযমবিহীন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নির্দলীয় বলাই যায় এবং সেইহেতুই বোধকরি বইটির নাম! এই বইটি লিখতে গোলাম মুরশিদ সবচেয়ে বেশি তথ্য সাহায্য নিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসারদের লিখিত বিভিন্ন বই থেকে (সবচেয়ে বেশি ৪৬ বার তিনি উদ্ধৃত করেছেন সিদ্দিক সালিককে)। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় স্থানে আছেন রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, তাঁর বই থেকে তথ্য নিয়েছেন মাত্র ১৭ বার। আবার, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানও দখল করেছেন পাকসেনারাই! নিয়াজী এবং রাও ফরমান আলীর বই থেকে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নিয়েছেন ১২ বার করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা অসংখ্য বই এবং গবেষণাকে তার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মিথ্যাচারকে। বোধহয় একারণেই পাকি সেনার স্তুতগীত গেয়েছেন, “সিদ্দিক সালিক সেনাবাহিনীর সদস্য হলেও তাঁর খানিকটা ইতিহাস বোধ ছিলো এবং কোথাও কোথাও বেশ নিরপেক্ষ বিবরণ দিয়েছেন”। যথারীতি তিনিও প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে। তিনি লিখেছেন “তবে মনে হয়, তিরিশ লাখ লোকের জীবনহানি হয়েছিলো বলে যে দাবি করা হয়, তা কিংবদন্তী মাত্র। বাংলাদেশে ফিরে এসে শেখ মুজিব রেসকোর্সের ভাষণে তিরিশ লাখের কথা বলেছিলেন। তিনি অনুমান করেই বলে থাকবেন”। তারপরই লিখেছেন, “রুডলফ রামেলের অনুমান পাকিস্তান দশ লাখের চেয়েও বেশি লোককে হত্যা করেছিলো (আর.জে. রামেল, ১৯৯৬)। যদি তিরিশ লাখ অথবা দশ লাখের বেশির অনুমানে অতিরঞ্জনও থাকে, তা হলে অন্তত তিন/চার লাখ লোক যে নিহত হয়েছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ করার কারণ নেই”। অত্যাশ্চার্য ব্যাপারটা হল, বঙ্গবন্ধু আর রামেলের তথ্যকে অনুমান বলে উড়িয়ে দিয়ে ‘তিন চার লাখের’ হিসাব দিলেও এই তথ্য তিনি কোথায় পেয়েছেন তা উল্লেখ করেননি। অথচ কি নির্বিবাদে লিখে গেলেন তাঁর এই অনুমানের কথা। গবেষক সাহেব আরও লিখেছেন, “শরণার্থী শিবিরে যে উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যেও যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহের অভাব দেখা গিয়েছিলো। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগই গিয়েছিলেন সপরিবারে। দেশে ফেরার আগ্রহ তাদেঁর ছিলো তুলনামূলকভাবে কম”। আচ্ছা, বেশ কৌতুহল জাগানিয়া তো। কিন্তু এই তথ্যের উৎস? তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত! তিনি কলকাতায় সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুজিব বাহিনীর নানাবিধ ষড়যন্ত্রের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, কিন্তু অজ্ঞাত (নাকি নির্দলীয়!) কারণে গোলাম আযমদের ষড়যন্ত্র নিয়ে তিনি টু শব্দটি করেন না। এই হলো প্রথমা এবং গোলাম মুরশিদ প্রণীত মুক্তিযুদ্ধের নির্দলীয় ইতিহাস! অনেক ‘গবেষণা’ করে লেখা এই ইতিহাসগ্রন্থ কোনোভাবেই ইতিহাস গ্রন্থ না, স্রেফ গোলাম মুরশিদের ব্যক্তিগত বয়ান, তারও বেশিরভাগটা তথ্য তিনি নিয়েছেন পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের কাছ থেকে। (ব্লগার সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর লেখা পরিমার্জন করে উপর্যুক্ত রিভিউটি লেখা হয়েছে)
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর একটি নির্দলীয় ইতিহাস। লেখকঃ গোলাম মুরশিদ। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৬৪ প্রচ্ছদ শিল্পীঃ কাইয়ুম চৌধুরী। প্রকাশকঃ প্রথমা প্রকাশন। শান্তিপ্রিয় বাঙালি জাতির সংগ্রামের ইতিহাসও কিন্তু কম না। ধর্মীয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, রাজনৈতিক ও প্রাদেশিক সায়ত্ত্বশাসন এবং স্বাধিকারের জন্য বাঙালিরা বারবার আন্দোলনে নেমেছে। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এর সূত্রপাত। এরপর ১৯৪৭ এর দেশভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গন অভ্যুত্থান, এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের পরে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন- মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল বা সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান ছিল না। এটি ছিল সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবী। একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ দেশের জন্য তাঁরা অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের আত্মত্যাগের ফসল আজকের এই স্বাধীনতা। তাঁদের এই আত্মত্যাগের মূল্য কি আমরা দিতে পেরেছি? বরং বারবার ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লিখিত বইগুলো নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক ভাবাদর্শ অথবা ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনের প্রচেষ্টা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কাউকে পূজার আসনে বসিয়ে আবার অপরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোলাম মুরশিদ তাঁর 'মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর একটি নির্দলীয় ইতিহাস' বইটিতে এসকল পক্ষপাতদুষ্টতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন। বইটিতে ব্যবহৃত রেফারেন্সগুলো অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সমর্থ। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, এবং তার পরবর্তী সময়ের ইতিহাস এবং ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান এবং দোষী ব্যক্তিকে তিরস্কার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বইটি বেশ নির্ভরযোগ্য।
Was this review helpful to you?
or
"তিরিশ লাখ লোকের জীবনহানি হয়েছিলো বলে যে দাবি করা হয়, তা কিংবদন্তী মাত্র।বাংলাদেশে ফিরে এসে শেখ মুজিব রেসকোর্সের ভাষণে তিরিশ লাখের কথা বলেছিলেন। তিনি হয়তো অনুমান করেই বলে থাকবেন। " পৃষ্ঠা ১৬৮ বঙ্গবন্ধু অনুমান করে তিরিশ লাখ শহীদের কথা বলেছেন তার বক্তব্যের স্বপক্ষে গোলাম মুরশিদ কোনো রেফারেন্স দেন নি। তিনি অনুমান করেছেন বঙ্গবন্ধু অনুমান করে বক্তব্য দিয়েছেন।এরপর গোলাম সাহেব কোনো কথা নাই, বার্তা নাই হামুদুর রহমান কমিশন,নিয়াজী আর সিদ্দিক সালিককে কোট করে শহীদের সংখ্যা নিয়ে (!) যদিও তিনি তাদের বক্তব্যে সরাসরি সহমত পোষণ করেন নাই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে "অনুমান" ভিত্তিক যে তত্ত্ব গোলাম মুরশিদ দিলেন তার তো কোনো সমাধান করলেন না। এটা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণেদিত বলেই মনে হয়। বইয়ের নাম "মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর (একটি নির্দলীয় ইতিহাস) " ২৬৪ পৃষ্ঠার এ বইতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু ৯০ পৃষ্ঠার পর আর শেষ ১৬৮ পৃষ্ঠার দিকে। মুক্তিযুদ্ধ কে খাপছাড়াভাবে উপস্থাপনে গোলাম মুরশিদের তুলনা এক পাকিস্তানপন্থীদের সাথেই চলে। মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রীক কোনো তথ্যই পুরোটা দেননি লেখক,দিয়েছেন আধাআধি। রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তিকমিটি আর ইসলামী ছাত্রসংঘের কীর্তিকলাপ অতিযত্নে এড়িয়ে যাবার প্রবণতা লক্ষণীয়। একেবারে বাধ্য হয়ে দু'এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন মাত্র। স্বাধীনতাপরবর্তী উত্তাল সময়কে তিনি ব্যাখা করেছেন স্রেফ ম্যাসকারহান্সের বিতর্কিত বই "লিগেসী অফ ব্লাড " থেকে (কেন এ বই বিতর্কিত জানতে পড়ুন এম আর আখতার মুকুলের "মুজিবের রক্ত লাল ")।বঙ্গবন্ধু শাসনামলের সকল দোষ বঙ্গবন্ধুর এমন সাধারণীকেন্দ্রীক তথ্যকে হালাল করার চেষ্টা করেছেন আপ্রাণ। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, সেসময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার দায়ভার কী শুধু বঙ্গবন্ধুর? শাসক হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই দায়মুক্তি পাবেন না কিছু বিষয়ে। কিন্তু গোলাম মুরশিদ জাসদের গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টি আর সেনাবাহিনীর মধ্যকার চক্রান্তগুলোকে এতো হালকাভাবে উপস্থাপন করেছেন যে তা লেখকের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আর বঙ্গবন্ধু মৃত্যুপরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকটা তাড়াহুড়া করে শেষ করেছেন গোলাম মুরশিদ । এই হচ্ছে গোলাম সাহেব কর্তৃক নির্দলীয় ইতিহাসকথন। দেশের কোনো এক শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস শেখানোর জন্য এটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে(!)বুঝুন অবস্থা।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর লেখা একটি বই হাতে পড়ল সম্প্রতি। বইটির নাম মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস এবং লেখক গোলাম মুরশিদ, যাঁর মধুসূদন দত্তের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে লেখা আশার ছলনে ভুলি অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। এ গ্রন্থটিও একান্ত ঝরঝরে ভাষায় লেখা এবং তথ্যবহুল ও অন্তর্দৃষ্টি সমৃদ্ধ। মুরশিদ বইটিতে ইতিহাস বলে গেছেন ধারাবাহিকভাবে, চারটি মূল পর্বে ২৬টি ছোট ছোট অধ্যায়ের মধ্যে। শুরু করেছেন প্রাক-ইংরেজ যুগ থেকে এবং শেষ করেছেন জিয়াউর রহমানের তিরোধানকালে এসে। উপসংহারে অবশ্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুবিধাবাদী রাজনীতির ওপরও কিছু ধারালো মন্তব্য আছে। বইটির মূল থিম বাংলাদেশের জন্ম হলেও এটার জোর পড়েছে কীভাবে বাঙালি মুসলমান তার পরিচিতি-সংকট কাটিয়ে উঠে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করল। হিন্দু-মুসলমান দ্বান্দ্বিকতাপূর্ণ সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আলোচনা এগিয়েছে। ইংরেজরা ভারতে প্রতিষ্ঠা পেলে শুরুতে কলকাতার উচ্চবিত্তের হিন্দুরা ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতা করে ব্যবসা, চাকরি ও শিক্ষায় এগিয়ে যায়, কিন্তু মুসলমানেরা ইংরেজ-বিরোধিতা ও আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ না করাতে পিছিয়ে থাকে। তবে ইংরেজি ভাষা দ্বিবিধ ফলার মতো কাজ করল। কারণ, ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের ফলে হিন্দুদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধেরও উন্মেষ হয়। তারা রাজনৈতিক অধিকার দাবি করে। ভারসাম্য আনার জন্য ইংরেজরা ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি গ্রহণ করে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের কিছু রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে হিন্দুদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়। আগে যেখানে বঙ্গীয় আইন সভায় সদস্য হতো মেধা ও পারিবারিক আভিজাত্যের ভিত্তিতে, সেখানে ইংরেজরা মুসলমানদের জন্য আসন নির্ধারণ করে দেয় জনসংখ্যার অনুপাতের হারে। ফলে মুসলমানেরা পূর্ববঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। কিন্তু যে সমস্যাটা হিন্দুদের জন্য ছিল না, সেটা বাঙালি মুসলমানের জন্য হলো। মধ্যবিত্ত ও সাধারণ বাঙালি মুসলমান দেখল যে তাদের ভালোমতো একটা পরিচিতি-সংকট যাচ্ছে। তারা কারা? তাদের ভাষা কী? তারা কি বাঙালি নয়, তাদের ভাষাও কি বাংলা নয়? উচ্চবিত্ত ভারতীয় মুসলমানদের এ সংকট ছিল না, যেহেতু তাদের ভাষা বাংলা ছিল না। সাধারণ বাঙালি মুসলমানেরা ক্রমে অনুধাবন করল যে বাংলাই তাদের ভাষা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রমুখ এ বিষয় নিয়ে কথা বললেন। সৈয়দ এমদাদ আলী ১৯১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মিলনে সভাপতির ভাষণে বললেন: ‘দুনিয়াতে অনেক রকম অদ্ভুত প্রশ্ন আছে। “বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা কি? উর্দ্দু না বাঙ্গালা?’ এই প্রশ্নটা তাহার মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা অদ্ভুত।’ মুরশিদের সঙ্গে এ পরিপ্রেক্ষিতে আহমদ ছফার চিন্তাশীল গ্রন্থ বাঙালী মুসলমানের মন-এ প্রদত্ত বক্তব্যের পার্থক্য আছে। ছফা পুরো বিষয়টাকে নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে রায় দিয়েছিলেন যে বাঙালি মুসলমান হলো বেশির ভাগ নিম্নবর্ণের হিন্দু গোষ্ঠী থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান, সে জন্য তাদের মধ্যে কখনো নেতা জন্মায়নি এবং রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। তাদের মধ্যে সে জন্য জাতীয়তাবোধও জাগ্রত হতে পারেনি। পক্ষান্তরে মুরশিদ বলছেন, ইংরেজি সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে হিন্দুদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হলেও বাঙালি মুসলমানের মধ্যে ভাষা সংক্রান্ত চেতনা দৃঢ় হয় ইংরেজ কর্তৃক তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পর। তার পরও ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হয় ধর্মীয়ভাবে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। দ্বিতীয় ভাগের এ আলোচনায় মুরশিদ ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে ভাষার প্রশ্নটাই মৌলিক ইস্যু হয়ে দেখা দেয়। জিন্নাহ্র ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্টভাষা’—এই অবিবেচক উক্তিটি অবশ্যম্ভাবীরূপে একুশে ফেব্রুয়ারিকে অনিবার্য করে তোলে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অভিঘাত তখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবিতে রূপান্তরিত হয়। তার পরও পাকিস্তান সরকার আরবি, উর্দু এমনকি ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব করে একের পর এক। যা হোক, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলন দ্রুত শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। স্বৈরশাসক আয়ুবের সঙ্গে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সংঘাতের নিটোল বর্ণনা দিয়ে মুরশিদ তৃতীয় ভাগে আলোচনায় আসেন মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে। পঁচিশে মার্চের রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার, অপারেশন সার্চলাইট, তাজউদ্দীনসহ অন্য নেতাদের কলকাতায় গমন, মুক্তিযুদ্ধের শুরু, মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার গঠন, খন্দকার মোশতাক, শেখ মণি ও কিছু নেতার তাজউদ্দীনবিরোধিতা—এসবের যেমন উল্লেখ আছে, তেমনি আছে শরণার্থীসমস্যা নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের উদ্বেগ এবং তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির সফল প্রচেষ্টা। এই তৃতীয় ভাগেই মুরশিদ স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে স্পষ্ট বলেন যে জিয়ার ঘোষণাটি ঐতিহাসিক হলেও বেলাল মোহাম্মদ যদি ২৭ মার্চ কালুরঘাট থেকে জিয়াকে ডেকে নিয়ে না আসতেন, জিয়া রেডিওতে আসতেনই না। এর আগেই এম এ হান্নান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জিয়ার প্রতি ভাগ্যদেবী প্রসন্ন থাকার ব্যাপারে মুরশিদ ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বর কর্নেল তাহের কর্তৃক জিয়াকে মুক্ত করে আনার ব্যাপারটিও উল্লেখ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ের সক্রিয় অপারেশনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুরশিদ মনে করেন, মেজর রফিকুল ইসলাম, মেজর জিয়া, মেজর খালেদ মোশারফ বা মেজর আবু ওসমান যেমন ত্বরিত মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন, সে রকম কিন্তু ঢাকার খুব কাছে থেকেও মেজর শফিউল্লাহ করেননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে তিন দিন সময় নেন এবং শফিউল্লাহর সেক্টরই ছিল একমাত্র সেক্টর, যেখান থেকে কোনো মুক্তিযোদ্ধা কোনো খেতাব পাননি। এ প্রসঙ্গে মুরশিদ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সময় সকালে শেখ মুজিবের টেলিফোন পেয়েও যে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ ত্বরিত কোনো ভূমিকা রাখেননি, সে কথারও উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে জেনারেল ওসমানী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ওসমানকে পছন্দ করতেন না বলে তাঁকে তাঁর বীরত্বের জন্য কোনো খেতাব দেননি। অর্থাত্ মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কার সব সময় ন্যায্য জায়গায় পৌঁছায়নি। গেরিলাযুদ্ধের বিশদ বিবরণ আছে। বদি, রুমি প্রমুখ গেরিলার বিভিন্ন অপারেশনের যেমন উল্লেখ আছে, তেমনি আছে সম্মুখযুদ্ধের বর্ণনা, আর তেমনি আছে ‘গৃহবধূ’ জাহানারা ইমামের স্মৃতিচারণা থেকে উদ্ধৃতি ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে এম আর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্রে’র উল্লেখ। এবং মুরশিদের এ ধারণার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবোদ্ধারা একমত হবেন যে গেরিলাযুদ্ধের কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় ও তাদের মনোবল দারুণভাবে মার খায়। সে জন্য ডিসেম্বরের যুদ্ধে তারা অত সহজে হার মানে। চতুর্থ ভাগে আছে বাংলাদেশ হওয়ার পর স্বপ্নভঙ্গের বিবরণ। শেখ মুজিব সম্পর্কে বলছেন, তিনি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের কিছুই দেখেননি, তাঁর উচিত ছিল তাজউদ্দীনকে জিজ্ঞেস করা। কিন্তু শেখ মুজিব সেটা একবারও করেননি; করেছিলেন তাজউদ্দীনের বিরোধিতা যারা করেছিলেন তাদের। ফলে শেখ মুজিব এমন লোক দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়লেন, যারা তাঁর মোসাহেবি করেছে, কিন্তু তাঁকে একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে (যেমন বাকশাল গঠন) জনগণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেন। তিনি তাজউদ্দীনকে ঠেলে দেন আর খন্দকার মোশতাককে কাছে টানেন। এ ব্যাখ্যার আলোকে বলা যায়, শেখ মুজিবের এ ভুলটা এখনকার শাসকদেরও অনুধাবন করা উচিত। ইংরেজ লেখক ফ্রান্সিস বেকন তাঁর ‘অব গ্রেট প্লেস’ (১৬১২) শীর্ষক রচনায় যেমন বলেছিলেন, একজন শাসক ক্ষমতায় গেলে নিজের প্রশংসা শুনতে চাইলে তার লোকের অভাব হবে না। মুরশিদের গ্রন্থটি নিয়ে আমার একটি পর্যবেক্ষণ আছে। সেটি হলো চতুর্থ ভাগে শেখ মুজিব ও জিয়ার চরিত্র চিত্রণসহ ফারুখ, রশিদদের কর্মকাণ্ড বর্ণনা করেছেন তিনি সম্পূর্ণ অ্যান্টনি মাসকারেনহাসের আ লিগেসি অব ব্লাড (১৯৮৬) গ্রন্থটির অবলম্বনে। সেটি ঠিক আছে, তিনি সূত্রও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু শুধু যে তিনি তথ্যগুলো নিয়েছেন তা নয়, মাসকারেনহাসের নিজস্ব মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তগুলোও (যেমন মাসকারেনহাসের শেখ মুজিব ও জিয়ার রাজনৈতিক চরিত্র চিত্রণ: বিশেষ করে তাজউদ্দীন সম্পর্কে শেখ মুজিবের ধারণা বা কালো চশমার পেছনে জিয়ার সাপের মতো ঠান্ডা ক্রুর চোখ) তাঁর সিদ্ধান্ত হিসেবে এসে গেছে। আমরা জানি, একজনের ভাব আরেকজন অনুবাদ করলেই সেটা নিজের হয়ে যায় না। দ্বিতীয় কথাটি হলো, পাকিস্তানি সামরিক লেখক সিদ্দিক সালিকের উইটনেস টু সারেন্ডার বইটির উল্লেখ বারবার এসেছে, কিন্তু বইটির আসল মজা হলো, এটি পড়ে জানা যায়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কী রকম ভয়ের মধ্যে দিন কাটাত। তৃতীয় হলো: ১৬০-সংখ্যক পৃষ্ঠায় মুদ্রিত ছবিতে অরোরা আর নিয়াজির বাঁ পাশে তেজোদীপ্ত পদক্ষেপে আগুয়ান যুবকটি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম হায়দার, যিনি কে ফোর্সের অধীনে বহু মক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেন, যিনি প্রথম ষোলোই ডিসেম্বর সকালে ঢাকা টিভিতে দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন এবং যিনি দুর্ভাগ্যজনকভাবে খালেদ মোশাররফসহ শেরেবাংলা নগরে কাউন্টার ক্যুতে নিহত হন। তাঁর নামটি ফটো ক্যাপশনে থাকতে পারে।
Was this review helpful to you?
or
বই টি তার নিজের ও লেখকের নামের প্রতি অবিচার করেছে। প্রথমতঃ “মুক্তিযুদ্ধ ও তারপরঃ একটি নির্দলীয় ইতিহাস” শিরনামের বই এর ঘটনা প্রবাহ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক সঙ্কটের ভিত্তিতে রচিত হবে, এটা মনে করা স্বাভাবিক কিন্তু বই এর প্রথম ভাগে সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হই বারবার। দ্বিতীয়তঃ দলীয় গন্ধ না থাকলেও, লেখকের নিজস্ব মনোভাব বই এর প্রতি পদে পদে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কোনের দিকে ইঙ্গিত করে। স্বাধিনতা পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের ভারত ভিতির কোন কারন প্রদর্শন করা হয় নি, দেয়া হয় নি জিয়া পরবর্তী কোন সরকারের কোন কার্যকর বর্ণনা, যা ২০১০ এ প্রকাশিত একটি বই এর কাছে ছিল প্রত্যাশিত। সব চাইতে দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক ব্যানারে লিখিত না হউয়া সত্ত্বেও কেবল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কেই বিবেচনায় আনা হয়েছে কেবল। দেশের অর্থনৈতিক বিশেষ ভাবে শিল্প উন্নয়নের কোন বাস্তব চিত্রই উঠে আসে নি বই এর মধ্যে। স্বাধিনতার প্রথম দশক বাদে অন্য কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে আসে নি। বহু রেফারেন্স এর কথা বলা হলেও সেগুলর অনেক অংশ যা লেখকের বেক্তিগত বিশ্বাসের সাথে যায় নি তা বিসর্জন দেয়া হয়েছে সুচারু ভাবে। যেটুকু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে তার মধ্যে, তাহের এর বিপ্লব এর পরবর্তী সামরিক বাহিনির মধ্যেকার নৃশংস হত্যাকাণ্ড বা জিয়ার ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের কোন বর্ণনা আসে নি। নিতান্ত দুঃখজনক, মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর যে প্রতিবাদি কণ্ঠ এই হত্যাকাণ্ড বা তার পরবর্তী কোন সরকারকেই না মেনে নিয়ে সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল তার কোন বর্ণনাই এখানে আসে নি। পরিশেষে কেবল এটাই বলা যায়, যে সকল রেফারেন্স এর উল্লেখ বই এর শেষে দেয়া আছে তার আংশিক সারমর্ম ছাড়া এই বই কে অন্য কিছু মনে করার কোন সুযোগ নেই।