User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বুঝতে হালকা কষ্ট হয়! মানে লেখা ভালো মানের বেশ
Was this review helpful to you?
or
বইঃ প্রচেষ্টা লেখকঃ ফারায উদ্দীন ফারহান প্রকাশনীঃ সত্যায়ন প্রকাশন পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২০৮ প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বিষয়ঃ ইসলাম ও সমকালীন দর্শন "আমি সন্দেহ করি,অতএব আমি চিন্তা করি,অতএব আমি আছি", বলে কান্ট সাহেব হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন এই দোটানা থেকে যে উনার অস্তিত্ব কি সত্য, নাকি কোনো ভ্রম। তবে নিজ অস্তিত্ব নাহলে সত্য মানলাম, আমার বাসার অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ, ব্যালকনির গাছ? এরা তো সন্দেহও করে না,ভাবেও না। তবে এরা কি স্রেফ মায়া? আমাদের জীবনের কি আদৌ কোনো মানে আছে? থাকলে কি সেটা আর না থাকলে কেনই বা এই জন্ম,এই যাতনা? আলবেয়ার ক্যামু অবশ্য বলছেন যে এই সিসিফাসের জীবনের আনন্দই নাকি পাথর পাহাড় ঠেলে উপরে তোলায়। জীবনের মানে খুঁজতে যাওয়া বোকামি। তবে নিজ থেকে একটা মানে বের করে আনন্দের সাথে একটা অথেনটিক জীবন কাটাতে হবে। আজব কথা না? বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি আসলে কত হাজার বছর আগের? তবে কেন শাড়ির সাথে পেটিকোট,ব্লাউজের চল আসল জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি থেকে? এতোদিন জমে থাকা মস্তিষ্কে সুড়সুড় করে জগাখিঁচুড়ি মতবাদ ঢুকে ঘাপটি মেরেছে। সেই মতবাদগুলো বদ্ধ মস্তিষ্কে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে একেকটা উপাস্য। তবে সেই মতবাদ-পূজার বেদীতে কুঠারাঘাত করতে হুজুর হয়ে টিম রণসাজে প্রস্তুত করেছে তাদের তৃতীয় বই "প্রচেষ্টা"র। বই সম্পর্কে আলোচনার শুরু আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ আছে কিনা,সেই দ্বন্দ্ব নিয়ে। সংঘাত তুমুল আকার নিয়েছে ধীরে ধীরে। মানসপটে পূজিত "মতবাদ" উপাস্যের গোড়ালিতে প্রথম আঘাত করা হয় আশীর্বাদ ভেবে বন্দনা করে চলা বিজ্ঞানের কদাকার রূপ সামনে এনে। এই রূপ আমাদের সামনে থাকলেও আমরা অন্ধের মতো তাকে পাশ কাটিয়ে বিজ্ঞানের পায়ে নৈবেদ্য দিয়ে চলছি। মুসলিম বাদে অন্য মত,ধর্মপূজারী সকলেরই আছে এক আদিপাপ। সে হলো তাদের জনম। কিভাবে প্রতিটি বিশ্বাস সেই অ্যান্টি নেটালিজমের কথা বলে বইয়ে তার আলোচনা এসেছে। আলোচনায় এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ও হাদিসের প্রামাণ্যতা। কিন্তু সেই আলোচনায় গুমোড় ফাঁস হলো সেক্যুলারদেরই। তাদের এক অবতার সক্রেটিসের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ইতিহাসবিদরা। "জাজমেন্টাল হওয়া" ভালো কি খারাপ,উচিত নাকি অনুচিত তা নিয়ে ভাবনার উদ্রেক করে আরেকবার কুঠারাঘাত করা হয় উপাস্যের পায়ে। জাজমেন্টের ভয়ে লুকিয়ে থাকা সেক্যুলারদের শরিয়তের রূপরেখা নিরূপণ করা হয়েছে হার্ম প্রিন্সিপালের আলাপে। দেখা যায় তাদের শরিয়তে নিকৃষ্ট অপরাধও হার্মলেস ক্রাইম বলে জায়েজ হয়ে যায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে মাথাকুটে মরা অসহিষ্ণু সেক্যুলারদেরও যে একটা বাঁধাধরা লিমিট আছে মতের,সেই আলোচনাও করা হয়েছে বইয়ে। রাস্তা কাঁপানো হুজুররা আদৌ রাজনীতি বোঝে কিনা এই নিয়ে আপামর জনগণ অনেক সময় পড়ে যায় দ্বিধায়। সেই দ্বিধার দেয়াল ভেঙে পিছের সূর্যের কিরণ দেখিয়ে দিতে হুজুরদের অ্যাকটিভিজমের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে বইয়ে। এই টপিকটা আসলেও নিউরনে বুমেরাং করার মতো। ইসলামে রাজনীতির জায়গা আছে নাকি ইসলাম কেবল আচার-অনুষ্ঠানে মোড়া ধর্ম,সেই আলোচনায় এসেছে ইসলামের শাসনতন্ত্রের রকমফের, নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে কথা। বইটা এই বছরের একুশে বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হওয়ায় বার বার আলোচনায় এসেছে জুলাই অভ্যুত্থান। সেই অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড(!) এর চাওয়া নদীময় ইসলামের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে নিয়ে হাজার বছরের সংস্কৃতির বয়স গণনা করে তবে ছেড়েছে হুজুর হয়ে টিম। এই দরদী টিম অবশ্য দেশের বেকারত্ব সমস্যার কথা ভুলে যায়নি।সেই সমস্যায় তারা এমন মাথা আউলানো বুদ্ধির হদিস দিয়েছে যে প্রথমে জনগণ ক্ষেপে মারমুখো হলেও একটু রয়েসয়ে ভাবলে দেখবে যে খারাপ বলেনি এরা। শুধু রাখঢাক না রেখে বলায় গায়ে জ্বলুনি ধরে। কলাবিজ্ঞানীদের নিয়ে নাক সিটকিয়ে সোশ্যাল স্টাডিজের সাবজেক্টগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে তৌহিদি জনতা যে নিজেদের পায়ে কুড়োল মারছে,সেই কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে হুজুর হয়ে টিম। অনেকদিন একসাথে থেকে নিয়ে লাভ ম্যারেজ করা আর পারিবারিকভাবে জেনে নিয়ে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের নিয়ে টানা হয়েছে উপসংহার-কোনটা বেটার। কোনটা? বই পড়ে দেখে নিয়েন। শেষে এসে সমাজে চলমান নারী সম্পর্কিত কয়েকটা ইস্যুকে অ্যাড্রেস করা হয়েছে। "পুরুষ টাকার মেশিন" কিনা ও "জেন যি"র কোনো অনন্যতা স্বীকার করে নেওয়ার জরুরত আছে কিনা- আলোচনা করে এই অসাধারণ বইয়ের ইতি টানা হয়। পাঠ্যানুভূতি "প্রচেষ্টা" বইয়ের ভাষা সোজাসাপ্টা,চাঁছাছোলা। পড়তে বসলে একটু বার্নল ওয়েন্টমেন্ট নিয়ে বসা ভালো। কারণ মগজের ভিতরে উপাস্যের গোঁড়ালিতে তো ক্রমাগত বাড়ি মারতে থাকবে, সাথে অনেকের গাত্রদাহ শুরু হতে কয়েক সেকেন্ড লাগবে মাত্র। তবে আমি খুব এনজয় করেছি। বইয়ের ভাষায় একটা জেন যি ফিল আসে। কথায় সারকাজম ও সিরিয়াসনেস পেশাদারের মতোই ব্যালেন্স করা। জায়গা মতো অ্যাটাক দেওয়া আছে লজিকের, জায়গা মতো মক করা হয়েছে কথা দিয়ে। ভাষাশৈলী বাদে টপিক সিলেকশনও চমৎকার। বর্তমানে যেসব আইডিয়া ও আইডিওলজি আমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে সরিয়ে নিয়ে বাতিলের আরাধনায় ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে,সেগুলোর অসাড়তা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য হুজুর হয়ে টিমের চেষ্টার ফসল হলো "প্রচেষ্টা"। তাই বইয়ের নাম সার্থক। মাথা ধরিয়ে দেওয়া ইনফো দিয়ে প্রতিবার আমাদের এতোদিনের দেখে আসা,জেনে আসা দুনিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়ার সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বই ও বইয়ের লেখক বিপুল প্রশংসার দাবিদার। জেনে আসা,মেনে নেওয়া চিন্তাচেতনার মূলে বাস্তবে আঘাত করতে পারায় বইয়ের কাভার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বই শেষ করার পর পাঠক স্বস্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে এই কথা স্বীকার করবেই। বানান ভুল চোখে পড়েনি বলতে গেলে। তবে সমালোচনা বা উপদেশের জায়গায় হলো শেষের দেনমোহরের আলোচনায় স্ত্রীর সামাজিক,পারিবারিক মর্যাদার কথা আনা হলে দেনমোহরের প্রকৃতি আরো মার্জিতভাবে ফুটে উঠত। এতো সংক্ষেপে এই বিষয়ে আলোচনার ইতি টানায় সংশয় ও আপত্তির অবকাশ রয়ে যায়। সবশেষে বলব যে সেক্যুলার সমাজের চালানো অ্যান্টি ইসলাম ক্যাম্পেইনের উচিত জবাব জেনে নিতে ও নিজের মানসপটে সজ্ঞানে বা জ্ঞানহীনভাবে পূজিত উপাস্যের ফাঁকি বুঝে নিতে প্রতিটা সচেতন মুসলিমের জন্য মাস্টরিড বই হলো "প্রচেষ্টা"।