User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
? কৃষ্ণকায়া লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা, ২০২৫ . প্রথম উপন্যাস "অবিনশ্বর" শেষ হয়েছিল দয়া-মায়াহীন যে নিষ্ঠুর এক অশুভ জগতের আভাস দিয়ে, দ্বিতীয় উপন্যাস "কৃষ্ণকায়া" -র মধ্য দিয়ে লেখক সাজ্জাদ সিয়াম তার সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেছেন। জনরা শিফ্ট করে এবারের পর্ব কসমিক হরর/ডার্ক ফ্যান্টাসি। আদ্রিয়ানের সাথে রুদ্র, সিজার, আরশাদকে নিয়ে প্যারালালে ইউনিভার্স, অল্টারনেট রিয়ালিটি, টাইম ট্রাভেল, প্যারাডক্স নিয়ে এক রোলার-কোস্টার রাইডের নাম "কৃষ্ণকায়া"। অধ্যায়ের পর অধ্যায় ব্লাড-গোর, লাভক্র্যাফ্টিয়ান ইমেজেরিতে পাঠক শিহরিত হতে বাধ্য। ঘটনাপ্রবাহের জটে অধ্যায়ের ক্রম নির্বাচনে লেখক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। স্বল্প সময়েও বেশ ভালোভাবেই মূল চরিত্রদের বিকাশ ঘটেছে, সেইসাথে পার্শ্ববর্তী চরিত্র, ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে অকারণ কালক্ষেপণ হয়নি। এছাড়াও ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উদ্ধৃতি লেখাকে প্রাসঙ্গিক রেখেছে। এ উপন্যাসে লেখকের মৌলিক সত্তার স্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে... "অবিনশ্বর" পেরিয়ে লেখক "কৃষ্ণকায়া" -র এই গল্পটাই বলতে চেয়েছেন, এবং সার্থকতার সাথে বলতে পেরেছেন।
Was this review helpful to you?
or
মৃত্যু! মানুষের জীবনের অন্তিম লক্ষ্য, যাতে মানুষ হারিয়ে যায় কালের অন্ধকারে। মানুষ চায় বেঁচে থাকতে। এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ফিরে যেতে চায় না। কিন্তু সত্যের মতো নির্মম আর কী হতে পারে? এই নির্মমতার কাছে হেরে যেতে হয়। মৃত্যু জিতে চাই অচিরেই। কিন্তু অসীম জীবনের লোভ মানুষ ছাড়তে পারে না। তাই খুঁজে চলে অমরত্বের মশাল। হয়তো পেয়েও যায়। কিন্তু এই প্রকৃতি যে বিরুদ্ধচারণ পছন্দ করে না। তাই যখনই এই পৃথিবীর বুকে স্বাভাবিকতার বাইরে কিছু ঘটে, তখনই বিশাল কিছু এগিয়ে আসে। হতে পারে সে কৃষ্ণকায়া, যাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে অমরত্বের মতন অসীম সাধনা পাওয়া যাবে। কিংবা অপভ্রংশ! মৃত্যুই যার কাছে শেষ কথা। মহাপ্রলয়ের বিভীষিকায় ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে যার চাওয়া এই পৃথিবীর কর্তৃত্ব। মৃত্যু কিংবা অমরত্ব, দুই বিপরীত মেরু যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে; তখন কী ঘটবে? কেউ কি জানে? ◾কাহিনি সংক্ষেপ : তিন বন্ধু — রুদ্র, সিজার আর আরশাদ। কোনো এক রাত যখন গভীরে প্রবেশ করছে, তিনজনের সাথেই ভিন্ন ভিন্ন কিছু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটছে। যার আসলে কোনো ব্যাখ্যা হয় না। সিজার দেখছে অজস্র কুকুর দাঁড়িয়ে আছে তার বাসার সামনে। সমানে ডেকে যাচ্ছে, যা ভীতি ধরায়। সিজারের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক নয়। ভয়ের তীব্র মুহূর্তে প্যানিক অ্যাটাক উঠে। এখন সেই অন্তিম মুহূর্তের দ্বারপ্রান্তে সে। এমন অবস্থায় সে যা দেখছে, তাকে বাস্তব মনে করার কোনো কারণ নেই। পাশের ফ্ল্যাটের হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর মাথা যেন ঘাড় থেকে প্রায় আলাদা হয়ে গিয়েছে। এই অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখে সিজার তাই দিশেহারা। সত্য দেখছে? না-কি তার মানসিক রোগের কারণ? সিজারের সাথে যখন এমন ঘটনা ঘটছে, তখন বন্ধু আরশাদ প্রেমের বিচ্ছেদে বড্ড অসহায়। দশ বছরের সম্পর্ক এক নিমিষে শেষ। গভীর রাতে আরশাদ যখন হাঁটছে, তখন অসংখ্য বিড়াল নজরে আসে। কুকুর সংঘবদ্ধ থাকলেও বিড়ালকে তেমন দেখা যায় না। তারপরও এতগুলো বিড়াল যখন তাড়া করে, আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হবে স্বাভাবিক। ঠিক তখন টহল পুলিশের সাথে টক্কর! জাকির নামের সেই পুলিশকে আরশাদের নিজের বাবা বলে ভ্রম হয়। এরপর যা দেখে, বিশ্বাস করা সম্ভব? আরশাদের ব্যাগ থেকে একটি গোলক বের হয়, গোলক ঠিক না; খন্ডিত মস্তক। যা আরশাদের প্রেমিকার অবয়ব। এক বিশালসদৃশ বিড়াল তাকে খাবলে খেয়ে নিতেও দ্বিধা করে না। ওদিকে রুদ্র শক্ত সমর্থ বিশালদেহী সাবেক সেনা সদস্য। যে বিশেষ এক কারণে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছে। তার একটাই সমস্যা, প্রবল রাগ। তাই প্রতিবেশী সায়মা ও তার মেয়ের সাথে অশালীন ব্যবহার করে পার পায় না কেউ। সেই রুদ্র দেখছে অদ্ভুত কিছু দৃশ্য। সায়মাদের বাসাতে ছুটে বেড়াচ্ছে তিনটি শিশুর মস্তক, যার কোনো দেহ নেই। বিশাল এক ছাগল যেন দৃশ্যপটে হাজির হয়। প্রত্যেকের ঘরের পেছনে ত্রিভুজাকৃতির চোখের অবয়ব ফুটে ওঠে। জ্বালা ধরে। ইঙ্গিত দিচ্ছে কোনো এক অতীতের। কুকুর, বিড়াল, ছাগল…. ছয় বছর আগের একটা ঘটনা, যাকে রীতিমতো ভুলে থাকার চেষ্টা করেছে ওরা। তাই যেন আবার সামনে আসছে। আবারও ফিরে আসছে সে বিভীষিকা, যাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। তাহলে? কী ঘটবে এবার? কোন অশুভ শক্তির মায়াজালে জড়িয়ে পড়েছে ওরা? এর থেকে মুক্তির উপায় কী? রশীদ কিংবা আদ্রিয়ান… মনে আছে এদের কথা? কিংবা হামিদা বেগমের কথা? অবিনশ্বর মানবী হামিদা বেগম আবার ফিরে আসছে। রশীদ হারিয়ে গিয়েছিল। ঠিক কোন জায়গা সে চলে গিয়েছে? কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে? আমাদের চেনা পরিচিত জগতে, না-কি অন্য কোনো পৃথিবীতে? আদ্রিয়ান-ই বা কেমন আছে? ২০২২ থেকে ২০১২ এর আদ্রিয়ান কেমন ছিল? তার ভূমিকা কী? কিংবা কায়সার? সে কি ফিরে আসবে এই কৃষ্ণকায়ার জগতে? একজন মানুষ যখন চোখের সামনে একধিক মৃত্যু দেখে তখন তার অনুভূতি কেমন হয়? হয়তো মনস্তত্ত্বে ঝড় ওঠে। তাতেই বদলে যায় সে। কোনো এক ঐশ্বরিক শক্তি অর্জন করে অজান্তেই। যে শক্তি তাকে ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন জগতে পরিভ্রমণ করতে সাহায্য করে। যা দেখে, তা-ই হয়তো সত্য হয়ে ওঠে অন্য কোনো সময়ে। একটু একটু করে বদলে যায় সময়। রুদ্র, সিজার কিংবা আরশাদের কথা আমরা শুনেছি। তিন অন্তরঙ্গ বন্ধুর পাশে আরেকজন ছিল… অপরাজিত। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা তিন বন্ধুর। কী হয়েছিল অপরাজিত’র সাথে? এক গভীর রাতে যে নারকীয় অস্তিত্বের দুয়ার খোলা হয়েছিল, তার মাশুল দিতে হবে কীভাবে? ১৯৭৫, ২০০৬, ২০১২ কিংবা ২০২২ — সবকিছু এক বিন্দুতে মিলিত হচ্ছে। যেখানে ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে, যা পৃথিবীর অস্তিত্ব, পৃথিবীর মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে তুলে দিয়েছে। কী হবে এরপর? ◾পাঠ প্রতিক্রিয়া : “অবিনশ্বর” যেখান থেকে শুরু হয়েছে, “কৃষ্ণকায়া”র শুরুটা সেখান থেকে হয়নি। মূলত তার কয়েক বছর পেছনে ঘটনার সূত্রপাত। “অবিনশ্বর” থেকে আমরা জানি, যে অমরত্বের কথা বলা হয়, তার রিচুয়াল ষোলো বছর পরপর সংগঠিত হয়। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ২০০৬ সালে সেই রিচুয়াল পূর্ণ হয়নি, যা টেনে নেওয়া হয় ২০২২ সালে। ঠিক কী কারণে ২০০৬ সালে ব্যর্থ হতে হয়েছিল, তারই ব্যাখ্যা যেন “কৃষ্ণকায়া” বইটি। এই উপন্যাসের টাইমলাইন একটু কনফিউজিং। মূলত দুইটি টাইমলাইন এখানে দেখা গেলেও, আদতে এখানে টাইমলাইন চারটা। যা এক বিন্দুতে মিলেছে। ২০২২ সময় থেকে ১৯৭৪ সালে ফিরে যাওয়া। ২০১২ সাল কিংবা ২০০৬ সাল! এত এত সময়কালে একটু খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। কখন সময়ে কোন ঘটনা ঘটছে, সেই ধারা বুঝতে একটু বেগ পেতে হচ্ছিল। তবে মূল সময়কাল আপাতত দুইটির মধ্যেই আবদ্ধ। ২০০৬ সালের ছয় বছর পর। আর ২০২২ সালের ৪৮ বছর আগে। একদিকে রশীদ, আরেকদিকে আদ্রিয়ান। তবে “অবিনশ্বর” বইয়ের দুই প্রধান চরিত্রের ভূমিকা এখানে কিছুটা ক্ষীণ। তারচেয়ে নতুন চরিত্রের ভূমিকা এখানে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। একটি ডায়েরির কাহিনি দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হলেও, এই ডায়েরির কথা আমরা জানতে পারি পরে। একটি গ্রাম, যার প্রত্যেকে অমর; সেই গ্রামের খোঁজে ছুটে চলে বন্ধুরা। কিন্তু সেখানে যে ঘটনা মঞ্চায়িত হয়, সবকিছু যেন বদলে যায়। হিসেবী হিসেবে পরিচিত রুদ্রও বেহিসাবী হয়ে ওঠে। লেখক যে বিষয়ের অবতারণা বইতে করেছেন, তা বেশ জটিল। এখানে ভৌতিক-অতিপ্রাকৃত সংযোগ তো ঠিকই আছে, সেই সাথে প্যারালাল ইউনিভার্স, মানুষের অসীম ক্ষমতা পাওয়ার লোভ, আজীবন বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেন বইটিকে অন্য এক মাত্র দিয়েছে। যা বুঝতে গেলে মস্তিষ্ক সচল (কিংবা অচল) হয়ে ওঠে। সচল বললাম এই কারণে, মস্তিষ্কের নিউরন এতকিছু বুঝতে গিয়ে ভীষণ দৌড়ঝাঁপ করে। আর দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে অচল হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। এছাড়া সবকিছু ছাপিয়ে আছে নৃশংসতা! “অবিনশ্বর”-এ যা ছিল, এই বইটি পড়ে আমার কাছে তা কেবল ট্রেলারই মনে হয়েছে। এখানে লেখকের কল্পনার তারিফ করতে হয়। তিনি যেভাবে গল্পের পরিচালনা করেছেন, একাধিক বিষয় উপস্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছেন, সেগুলোর প্রশংসা করাই যায়। বর্ণনা সাবলীল লেগেছে। তবে সংলাপের ক্ষেত্রে একটু অভিযোগ আছে আমার। সংলাপের অনেকক্ষেত্রেই বর্ণনা ও সংলাপের মধ্যে পার্থক্য করা যায়নি। বর্ণনা যেমন হয়, সংলাপ তেমনই মনে হচ্ছিল (বর্ণনামূলক)। বিশেষ করে যখন রশীদকে তার অন্য জায়গায় আসার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। লেখকের লেখার গতি পরিমিত। যখন গতির প্রয়োজন হয়েছে, গল্প ছুটেছে। আবার মাঝে মাঝে লাগাম টেনে ধরেছেন। ফলে এমন ভয়াবহ এক গল্পের জন্য মস্তিষ্ক শান্ত রাখার ক্ষেত্রে যে সময়ের প্রয়োজন সে সময় পাওয়া গিয়েছে। তবে অপরাজিত’র গল্প বলার সময় গতি একটু বেশি ধীর হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া গল্পের মাঝে মাঝে অতীতকে টান দিয়ে ব্যাকস্টোরির মাধ্যমে বর্তমানের সাথে সংযোগ ঘটানো ভালো লেগেছে। ফলে কাহিনির মূল বুঝতে সুবিধা হয়েছে। উপন্যাসটি পড়ার সময় কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। সেই প্রশ্নের উত্তর লেখক কিছু অংশে ব্যাখ্যা করেছেন। আবার কিছু অংশে লেখক ব্যাখ্যা না করলেও সূক্ষ্ম সূত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে আদ্রিয়ান কীভাবে ২০০৬তে গেল, ২০১২ থেকে রুদ্র তার দলবল নিয়ে কীভাবে ২০০৬ এ প্রবেশ করল, এর ব্যাখ্যা বইতে নেই। কিন্তু কারণ উল্লেখ করা আছে। আবার অতিরিক্ত নৃশংসের কারণ ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। কেন মস্তিষ্ক থেকে এক বা একাধিক শুঁড় বেরিয়ে আসছিল, তার ব্যাখ্যা লেখক যেভাবে দিয়েছেন যথাযথ মনে হয়েছে। অনেক কেন-এর উত্তর ঠিকঠাক বুঝতে বেগ পেতে হয়। লেখকের জটিল প্লট এখানে বাঁধা সৃষ্টি করে।এছাড়া রশীদের কেন এর পিছিয়ে যাওয়া, এর সঠিক উত্তর পেলাম না। তাছাড়া সায়মাদের কী হলো সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। এখানে লেখক মানব চরিত্রের একাধিক অন্ধকার দিক তুলে ধরেছেন। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে অভিহিত করা হলেও কতটা সেরা? বরং নিকৃষ্টতার উদাহরণ রেখে যায়। যেকোনো অভিযোগ, অনাচার, ঘটনায় মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে। যার ফলে প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়ত নিকেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। মৃত্যুই এখানে অবধারিত। ধর্মের বিরোধ, মতের বিরোধ; যা-ই হোক না কেন, প্রতিপক্ষের উপর হামলে পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। অপরাজিত’র অন্য ইউনিভার্সের যাওয়ার মধ্য দিয়ে এই সমাজের বেশকিছু গুরুত্বপুর্ণ মুহূর্ত লেখক জীবন্ত রেখেছেন। নিমতলী অগ্নিকাণ্ড, তনুর উপর নির্মম অত্যাচার, রানা প্লাজা বা জুলাই বিপ্লব লেখকের লেখায় এসেছে কল্পনার মধ্য দিয়ে। এই গল্পের মূল চরিত্র রুদ্র, সিজার কিংবা আরশাদ। যাদেরকে লেখক যেভাবে শুরুর দিকে চিত্রায়িত করেছেন, শেষদিকে এসে চরিত্র ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ভালো করতে চাওয়ার মধ্যে কখনও কখনও অজান্তেই অন্যের খারাপও হয়ে যায়। রুদ্রকে বেশ মনে ধরেছে। অতিমাত্রায় রাগ নিয়ন্ত্রণের সময় নির্মম হলেও, অন্য সময়ের রুদ্র বন্ধুদের জন্য যে নিবেদিত প্রাণ, এমন এক চরিত্রকে ভালো না লেগে উপায় নেই। বন্ধুকে ভালো রাখার জন্য সবকিছু করতে পারে রুদ্র। তবে অপরাজিত কিংবা সিজারের চরিত্র মানুষের অন্ধকার দিকেরই প্রতিনিধিত্ব করে। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য বন্ধুকেও পরোয়া করে না। সিরিজের প্রথম বইয়ের চরিত্রগুলো এই বইতে খুব একটা জায়গা পায়নি। তারা ছিল যদিও, তবে গৌণ হিসেবে। মূল চরিত্র হিসেবে নতুন চরিত্রগুলোকে বেশ ভালোভাবেই লেখক ব্যবহার করেছেন। তারা হয়তো এই গল্পের পর আর জায়গা পাবে না, কিন্তু তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি “কৃষ্ণকায়া”কে উজ্জ্বল করেছে। কিছু চরিত্র এসেছে, আবার গল্পের প্রয়োজন শেষে হারিয়ে গিয়েছে। আমাদের চেনা জগতের সমান্তরালে হয়তো অনেক জগতের বিচরণ। যে জগতে আমার মতোই কেউ থাকে ভিন্ন কোনো নামে। সেই প্যারালাল ইউনিভার্সের ব্যাখ্যা ঠিকঠাক বোধগম্য হয়নি আমার। রুদ্র বা রশীদ কীভাবে সেই পৃথিবীতে গেল, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। শুধু এক ডিস্টোপিয়ান পৃথিবী যা প্রায় ধ্বংসের প্রাক্কালে, সেই পৃথিবীকে আরেকটু স্পষ্ট অদল দেওয়া যেত মনে হয়েছে। ◾বানান, সম্পাদনা ও অন্যান্য : এই বইটির সবচেয়ে দারুণ বিষয় ছিল, খুব বেশি বানান ভুল চোখে পড়েনি। হয়তো দুয়েকটা ছিল, তাও চোখ এড়িয়ে গিয়েছে গল্পের খাতিরে। এমন নির্ভুল বই পড়তে আরাম লাগে। সম্পাদনাও ঠিকঠাক। তবে ওই দুয়েক জায়গায় বাক্যগঠন একটু সমস্যা চোখে লেগেছে। এই প্রচ্ছদটা সেই! সম্ভবত এবারের বইমেলার সেরা তিন প্রচ্ছদের একটা। দেখলেই এক ভয়াল মহাপ্রলয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ডিস্টোপিয়ান এক সময়ের মহাপ্রলয়। ঋদ্ধ প্রকাশের প্রোডাকশন কোয়ালিটি নিয়ে অভিযোগ করার কোনো জায়গা নেই। বরাবরের মতো দুর্দান্ত ◾পরিশেষে, শেষটাও কেমন ধোঁয়াশা, ঠিক অবিনশ্বরের মতো। অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর মিলল না। তবে লেখক তার মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছেন। পুরোনো চরিত্রগুলো নতুন রূপে তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে অপভ্রংশ। কৃষ্ণকায়া যার মুখোমুখি হবে। খারাপ তো প্রত্যেকেই। কম খারাপের বিজয়ে হয়তো পৃথিবী কিছুটা স্বস্তি পাবে। মৃত্যু ও অমরত্বের এই লড়াইয়ে জিতবে কে? ◾বই : কৃষ্ণকায়া ◾লেখক : সাজ্জাদ সিয়াম ◾প্রকাশনী : ঋদ্ধ প্রকাশ ◾প্রকাশ সাল : বইমেলা ২০২৫ ◾ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩২০ ◾ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.২/৫