User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
শাহরিয়ার জাওয়াদের ‘চন্দ্র চন্দ্র খুঁজে ফিরি’— দেশি বিদেশি লোকগাঁথার মিশেলে সুপারন্যাচারাল প্যাকেজ। নতুন লেখকদের বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার মাঝে এক ধরণের শঙ্কা কাজ করে। শঙ্কাটা সময় অপচয়ের, অর্থেরও। যদিও শাহরিয়ার জাওয়াদের আগের বইগুলোর মতো এই বইও সেটা উতরে গেছে, খুব ভালোভাবেই। ‘চন্দ্র চন্দ্র খুঁজে ফিরি’কে একটা ভালো বই-ই বলা যায়। ভালো বইয়ের ব্যাখ্যা অনেকে অনেকভাবে দেন। আমার কাছে সেটিই ভালো বই, যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের আগ্রহকে বেঁধে রাখে এবং পাঠক যে আগ্রহে গল্পে প্রবেশ করে, তা শেষ পর্যন্ত মুগ্ধতায় পরিণত হয়। ‘চন্দ্র চন্দ্র খুঁজে ফিরি’ বইয়ের ঘোষণা আসার পর থেকেই বেশ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কেননা শুনেছিলাম, বইটা সুন্দরবনের একটা লোকগাথার উপর ভিত্তি করে লেখা। সুন্দরবন নিয়ে আমার আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকে। ছোটবেলায় দেখেছি, আমাদের এলাকার একজন সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন। তার মুখ থেকেই শুনেছি তার বীরত্বের কথা। ডান হাতের কবজি আর কাঁধের খানিকটা মাংস চলে গেলেও তিনি দিব্যি বেঁচে ফিরেছেন। রাতারাতি আছর উদ্দীন মুন্সী থেকে তার নাম হয়ে যায় বাঘা মুন্সী। গল্পের শুরুটা হয় নড়াইল থেকে সুন্দরবনে মাছ ধরতে আসা একদল মালোদের দিয়ে। আড়পাঙাসিয়া নদীতে তারা নৌকা ছোটায়। ভোঁদড় দিয়ে এক বিশেষ পদ্ধতিতে মাছ ধরে। মালোরাই বনের ভিতর থেকে ক্ষত-বিক্ষত এক লোককে উদ্ধার করে। সেই লোক আর কেউ নয়, চাঁদনীমুখা গ্রামের ছকু মিয়া। যাকে সবাই ছকু পাইলট নামেই চিনে। ভয়ডরহীন ঝানুলোক ছকু পাইলটের কাজ ইঞ্জিন নৌকা চালিয়ে বনজীবীদের নিয়ে সুন্দরবনের গভীরে যাওয়া। এ কাজে সে বেশ পারদর্শী। সেই ছকু পাইলট সারা শরীরে বাঘের কামড় আর আঁচড়ের দাগ নিয়ে ফিরে এসেছে, তাও আবার অন্যের নৌকায় চড়ে। তার সারা শরীর কাঁপছে। বিড়বিড় করে বলছে, “বনের জিনিস বনে ফেরত গেছে। বাঁদাবন তার বলি নিছে।” মূলত এখান থেকেই মায়াবাঘের টার্ম শুরু হয়। এরপর এক এক করে গল্পে প্রবেশ করে স্থানীয় থানার এস আই মনসুর আলি, গল্প খুঁজতে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা তরুণ লেখক সিরাজুল হক। এক এক করে মায়াবাঘের আক্রমণে মারা যায় গ্রামের কয়েকজন। এস আই মনসুর খুঁজতে থাকে এইসব মৃত্যুর রহস্য, সিরাজুল হক একটা দারুণ গল্প। গল্পের মাঝে লেখক সুন্দরবনের লোকগাথার সাথে পশ্চিমা লোকগাথার গিট বেঁধেছেন। গল্প এগোনোর সাথে সাথে সেই গিঁট আর ছুটেনি, বরং আরও মজবুত হয়েছে। আর শেষটা হয়েছে বেশ গোছানো। এই বইকে হরর, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা গোয়েন্দা কাহিনী যেকোনো ক্যাটাগরিতেই ফেলা যায়। অল্প স্বল্প ম্যাজিক রিয়েলিজমও বিদ্যমান। গল্পে লেখক সুনিপুণ ভাবে সুন্দরবনের বর্ণনা দিয়েছেন। পড়তে পড়তে যে কেউ আড়পাঙাসিয়া নদীতে নৌকা চালাবে, জয়ন্তর মতো অবাক দৃষ্টিতে দেখবে সুন্দরবনের প্রকৃতি। তবে গল্পটা বনের চেয়ে বেশি শহুরে হয়ে গেছে। আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবহার আরও ভালোভাবে করতে হতো। নীলডুমুর বাজারের নৌ পুলিশ কার্যালয়ে এস আই মনসুর যখন ছকু পাইলটের জবানবন্দি নিচ্ছিলো, তখন তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো তারা সাতক্ষীরায় না, ঢাকায় বসে কথা বলছে, প্রমিত বাংলা ভাষায়। এস আই মনসুরের কথায় আঞ্চলিক টান থাকবে না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ছকু পাইলটের কথা শুনে কিছুতেই বোঝার উপায় নেই, সে একজন ইঞ্জিন নৌকার মাঝি। হোক সে এইট পাশ কিংবা যতই সরকারি ট্রেনিং করে থাকুক, একজন মাঝির কথা এতটা শুদ্ধ হবে না। আঞ্চলিক টান থাকবেই। গল্পের শুরু থেকেই একটা নারী চরিত্রের অভাববোধ করেছি। বনবিবি নিজেই নারী শক্তির প্রতীক তাই একটা শক্তিশালী নারী চরিত্র আশা করেছি। সেই নারী চরিত্র পেয়েছি অর্ধেক গল্পের পর, খুব অল্প সময়ের জন্য। ছকু পাইলটের স্ত্রী কুলসুম। অল্প সময়েই এই চরিত্রটি বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। হাতে বটি নিয়ে একাই লড়াই করেছে মায়াবাঘের সাথে। এই লড়াই যতটা না নিজেকে বাঁচানোর, তারচেয়েও বেশি স্বামী হত্যার প্রতিশোধের। গল্পে লেখক একটা জিনিস মিস করে গেছেন। বাঘের আক্রমণ বেড়ে গেলে বনজীবীরা বনবিবি বা বনদেবীর পূজা দেয়। এই কালচার অনেক দিনের। এই পূজা দেওয়ার বিষয়টা গল্পে দেখানো যেত। শাহরিয়ার জাওয়াদের গল্প বলার ধরন খুব ভালো। তিনি কোনো বিষয় ধরলে খুব গভীর থেকে ধরেন। আর উপস্থাপনও হয় চমৎকার। যার ফলে তার গল্প হয় সুখপাঠ্য। ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা কিংবা নদীতে নৌকা চালানোর সময়ের পরিবেশ, প্রত্যোকটা ছোট ছোট বিষয় বেশ দারুণভাবে বর্ণনা করেছেন। উপমা ব্যবহার করলে পড়তে আরেকটু আরাম লাগতো। ‘শ্রাগ করা’ শব্দ ব্যবহারের বহুলতা দেখা গেছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে, ‘চন্দ্র চন্দ্র খুঁজে ফিরি’ একটা ভালো বই। একটা ভালো সময় কাটালাম।