User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই। দূর্দান্ত লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
#বই_রিভিউ বই: দহনচিহ্ন লেখক: ফৌজিয়া খান তামান্না প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদ: ফারিহা তাবাসসুম মলাট মূল্য: ৪০০৳ দহনচিহ্ন বইটি পড়ার শুরুতে মনে হয়েছিল—এমন লেখা তো আমার পছন্দ নয়! কিন্তু যতই পড়তে থাকলাম, ততই বুঝতে পারলাম, আমার ধারণার চেয়েও এটি অনেক গভীর ও ব্যতিক্রমী। লেখক ফৌজিয়া খান তামান্নার লেখার সঙ্গে আমি বেশ পরিচিত। তার অধিকাংশ বই-ই আমার পড়া হয়েছে। তিনি সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলতে দক্ষ, যা তার লেখাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। বন্ধু, প্রেম, পরিবার, সমাজ,এসবের বাইরেও কিছু সম্পর্ক থাকে, যার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা হয় না। ঠিক তেমনই এক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাস "দহনচিহ্ন"। গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুই অসমবয়সী চরিত্র_ফুলম্যাম ও জুরিন। তাদের সম্পর্ক প্রেমের গভীরতায় বাঁধা, তবে তার রূপ একেবারেই প্রচলিত ধারণার বাইরে। লেখকের শব্দচয়ন ও বর্ণনা অত্যন্ত নিখুঁত। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে উপলব্ধি করেছি, মানুষ কীভাবে অভিনয়ের আড়ালে সারাজীবন পার করে দিতে পারে! ফুলম্যাম এমনই এক চরিত্র, যার অতীত ও বর্তমান জানার পর শুধু বিস্মিত হয়েছি। ফুলম্যামের আসল নাম আম্বিয়া, কিন্তু বিয়ের পর তার নাম হয়ে যায় শুভ্রা আমিন। জীবনের বহু সময় পার করার পর একদিন হঠাৎ সে পরিচিত হয় এমন একজন মানুষের সঙ্গে, যার কাছে নিজের মনের কথা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারে। তার শৈশবের অন্ধকার ছায়া বর্তমান জীবনেও প্রবলভাবে প্রভাব ফেলে। জীবনের বাস্তবতায় সে যেন নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে, বড্ড একা হয়ে যায়। উপন্যাসের মূল আকর্ষণ ফুলম্যাম চরিত্রটি,তার না-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, বেদনা, হারিয়ে ফেলার ভয়,সবকিছু মিলিয়ে উপন্যাসটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয় পাঠককে। দহনচিহ্ন নিছক প্রেমের গল্প নয়; এটি এক শূন্যতা, এক গভীর উপলব্ধির গল্প।
Was this review helpful to you?
or
#দহনচিহ্ন "সেই সাততলার ভীষণ রকমের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গৃহকর্তী খুব ভোরে উঠে রাতের সৌখিন রঙিন রাত পোশাকের ওপরেই একটি ওড়না জড়িয়ে এসে তার বিশাল বারান্দাটিতে দাঁড়ান। তার বাড়ির সামনের প্লটটি ফাঁকা। তাকে সামনাসামনি দেখবে, এমন কেউ আশেপাশে নেই। তবুও তিনি বড়ো একটি ওড়না ভালোভাবে চাদরের মতো জড়িয়ে বারান্দার রেলিঙে বুক ঠেকিয়ে পূবের আকাশে উদীয়মান সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, আবার কিছুক্ষণ চোখ দুটো বন্ধ করে রাখেন। ওই রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিটি সূর্য দেখার চেষ্টা করেন।" ✍️ মানুষের সম্পর্কের জটিলতা, অনুভূতির সূক্ষ্ম দোলাচল, এবং না বলা কিছু প্রশ্নকে কেন্দ্র করে লেখক ফৌজিয়া খান তামান্না তাঁর ষষ্ঠ একক উপন্যাস "দহনচিহ্ন" রচনা করেছেন। বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকা, পরিবার কিংবা সমাজ—সকল সম্পর্কের বাইরেও কিছু সম্পর্ক থাকে, যাদের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট নয়, যাদের অস্তিত্ব অদৃশ্য কিন্তু অনুভবযোগ্য। এই উপন্যাস সেই অদৃশ্য অনুভূতিগুলোর এক নির্মোহ পর্যবেক্ষণ। "তিনি আমার জীবনে এসেছিলেন তার আর আমার দু'জনারই এক অদ্ভুত ক্রান্তিকালে। সেই সময় তার দরকার ছিল আমার মত একজন ভীষণ রকমের বাধ্য আর মুগ্ধ ভক্তের,আর আমার দরকার ছিল কঠিন একটি অবলম্বন। " ✍️ দহনের শুরুটা যেভাবে হয়েছিলো : "দহনচিহ্ন" এক নারীর মানসিক ও আবেগিক যাত্রার গল্প, যেখানে অতীতের গভীর ক্ষত, সম্পর্কের জটিলতা ও আত্মপরিচয়ের সন্ধান ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আম্বিয়া ওরফে শুভ্রা, যার শৈশবের দুঃসহ অভিজ্ঞতা তার বর্তমান জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সে নিজের অস্তিত্ব খুঁজতে গিয়ে সমাজের প্রচলিত নিয়মের সাথে লড়াই করে এবং আত্মপরিচয়ের জটিল পথ পাড়ি দেয়। জুরিন, গল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যার জীবনের বাঁকও কম বেদনাদায়ক নয়। সে শুভ্রার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়, এবং তাদের সম্পর্কের ওঠানামা, আস্থা ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব উপন্যাসের অন্যতম প্রধান উপজীব্য। উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদ "শুধাইও না কারে ভালোবাসি" জুরিনের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, যেখানে তার আবেগ ও শুভ্রার সঙ্গে তার সম্পর্কের জটিলতা উঠে আসে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ "না চাহিলে যারে পাওয়া যায়" ফুলম্যামের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণিত, যেখানে সে নিজের অতীত, যন্ত্রণার স্মৃতি ও বর্তমান জীবনের সাথে লড়াইয়ের কাহিনি বলে। "দহনচিহ্ন" কেবলই এক পরকীয়ার গল্প নয়, এটি কোন নারীর সংসার ভাঙার গল্পও নয়। এটি অতীতের দাগ, সম্পর্কের বন্ধন ও আত্মপরিচয়ের সন্ধানে প্রতিটি মানুষের অদৃশ্য সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে—আমরা কি সত্যিই অতীতের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারি, নাকি সেই দহনচিহ্ন (জ্বলন্ত ক্ষতচিহ্ন) আমাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়? "আমরা সারা জীবন একজন দুজন বা অনেকজনকে ভালবেসে যাই, ভালোবাসা না চিনেই, ভালোবাসার অর্থ বা মাহাত্ম্য না বুঝেই। আমরা জানিই না আমরা যেটিকে ভালোবাসা বলি, সেটি আদৌ ভালোবাসাই নয়। " ✍️ দহনচিহ্নের অনুভূতি : "দহনচিহ্ন" উপন্যাসটি মানবিক অনুভূতি, সম্পর্কের জটিলতা এবং জীবনসংগ্রামের এক অনন্য বয়ান। লেখকের ভাষার সাবলীলতা, গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি ও চরিত্র চিত্রণের দক্ষতা আমাকে শুরু থেকেই আবিষ্ট করে রাখেছিলো। উপন্যাসটি এক মর্মস্পর্শী কাহিনি বর্ণনা করে, যেখানে ফুলম্যামের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সামাজিক টানাপোড়েন ও মানসিক বিকাশ ধাপে ধাপে উঠে আসে। লেখিকা গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছেন —কোনো ঘটনা কেবল বাহ্যিক নয়, তার অন্তর্গত অর্থও রয়েছে। পরকীয়ার মতো জীবাণুকেও যে, এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এটা ধারনার বাইরে ছিলো। "কিছু না পেয়েও কখনো নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়। আবার কিছু পেয়েও কেমন ভেতরটা শূন্য শূন্য লাগে। মানুষের আজব মনের চাওয়া পাওয়ার হিসাব কেউ করতে পারে না। " কাহিনির গতি কখনো ধীর, কখনো দ্রুত, যা চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থার সঙ্গে সুন্দরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উপন্যাসের সংলাপগুলো স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত এবং বাস্তবিক, যা চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। লেখকের শব্দচয়ন ও বর্ণনার দক্ষতা বিশেষভাবে প্রশংসার দাবিদার। তবে, কিছু স্থানে বর্ণনার বিস্তৃতি বেশি হওয়ায় কাহিনির গতি সামান্য শ্লথ মনে হয়েছে। কিন্তু এটি উপন্যাসের সার্বিক আবেদন কমায় না, বরং তা পাঠকের গভীর মনোযোগ দাবি করে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে এর শেষটা, সবকিছু বলে দিয়েও যেন অনেক কিছু আড়ালেই রয়ে গেছে। কী ভীষণ এক ভালোলাগা আর শূন্যতা অনুভব হবে বইটি শেষ করার পর থেকেই। এটি কোনো সম্পর্কের সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা নয়, বরং সম্পর্কের অনিশ্চিত রূপগুলোর এক অন্তর্দৃষ্টি। ভালো-মন্দের দ্বন্দ্বে না গিয়ে লেখক পাঠককে ভাবনার এক নতুন জগতে নিয়ে যান, যেখানে সম্পর্ক মানেই পরিচিত কোনো নাম নয়, বরং এক অজানা অনুভূতির "দহনচিহ্ন " হয়ে থাকা। ✍️ চরিত্রায়ণ : একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হিসেবে খুব বেশি চরিত্রের আনাগোনা নেই বইটিতে। আমার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে ফুলম্যাম চরিত্রটি। তার অতীত এবং বর্তমান জেনে শুধু অবাকই হয়েছি। পাশাপাশি তার বিচক্ষণতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে রাগ হয়েছে তার শাশুড়ি চরিত্রটির উপর। একজন নারী হয়ে কতটা নীচে নামতে পেরেছেন শুধুমাত্র একজন ভালো মা সাজার জন্য। শামসের জন্য আলাদা করে কিছু বলার নেই। এরা আমাদের চারপাশেই আছে সত্যি হয়ে। জুরিনকে ভালো মন্দ কোনটাই মনে হয়নি। তবে শেষটায় ওর সিন্ধান্তটা মনে তৃপ্তি দিয়েছে। ✍️ সব মিলিয়ে, "দহনচিহ্ন" শুধু একটি গল্প নয়, এটি এক অনুভূতির জগৎ, যেখানে পাঠক নিজেকে হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হবে। যারা সংবেদনশীল ও গভীরতাসম্পন্ন সাহিত্য পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য। এই উপন্যাস পাঠককে প্রশ্ন করতে বাধ্য করবে—আমাদের জীবনে কিছু সম্পর্ক কি শুধু থেকে যাওয়ার জন্যই থাকে, নাকি তাদের কোনো ব্যাখ্যা থাকা জরুরি?
Was this review helpful to you?
or
সুন্দর আলোচনা করছেন ধন্যবাদ