User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস কীভাবে আমাদেরকে তার শেকড়ের সাথে সম্পর্ক করে দেয় তা বুঝিয়েছে এই বই।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস শুধু অতীতের গল্প নয়—এটি বর্তমানের বোধ জাগানোর মাধ্যম, আর ভবিষ্যতের পথনির্দেশক। ইতিহাসই মানুষকে শেখায় কে সে, কোথা থেকে এসেছে এবং কোন দিকে তার যাত্রা। আর তাই, জাতিকে দুর্বল করতে চাইলে শত্রুরা সবার আগে ইতিহাসকেই বিকৃত করে। তারা সত্যকে আড়াল করে, সাজিয়ে তোলে একটি বিকল্প কাহিনি—যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চেতনায় জায়গা করে নেয়। মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যায় নিজের গৌরবগাথা। নিজের শেকড়কে ভাবতে শুরু করে বোঝা। তখন আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে সে ঝুঁকে পড়ে অন্যের সত্তায় মিশে যেতে। আর এই বিভ্রান্তির মাঝে শত্রু তাদের ‘সফলতা’ দেখে পৈশাচিক তৃপ্তি লাভ করে। এই পটভূমিতে ‘ফরায়েজী আন্দোলন’ শুধু একটি ধর্মীয় উদ্যোগ নয়; এটি ছিল এক গভীর আত্মবোধের জাগরণ। উনিশ শতকের বাংলায় এই আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পূর্ববঙ্গের প্রতিটি কোণে। আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা থেকে শুরু করে সামাজিক ন্যায়, অর্থনৈতিক সাম্য থেকে পারিবারিক শুদ্ধতা—ফরায়েজী আন্দোলন বাংলার মুসলিম সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলেছিল। এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তোলে আত্মমর্যাদাবোধ, প্রতিবাদী চেতনা, আর স্বতন্ত্র অস্তিত্বের বোধ। ব্রিটিশ শাসনের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তারা গড়ে তোলে এক আলাদা পরিচয়ের ইমারত। বালাকোটের শহীদগাথা, নীলচাষের বিরুদ্ধে কৃষক-বিদ্রোহ, ৫৭-এর সিপাহী আন্দোলন কিংবা ৪৭-এর আজাদি—সব জায়গায়ই পরোক্ষে বা প্রত্যক্ষে ফরায়েজী চেতনার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। কিন্তু এই মহৎ ইতিহাসও আজ বিকৃতির শিকার। ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এর প্রকৃত আবেদন, ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে এর শক্তি ও সৌন্দর্য। আশা করছি এই বইটি পাঠের পর পড়াই যে আন্দোলনের প্রকৃতি ইতিহাস জানতে পারবেন এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন।
Was this review helpful to you?
or
ড. মুহাম্মদ আহসানউল্লাহ রচিত "ফরায়েজি আন্দোলন" বইটি ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আন্দোলনের এক গৌরবময় অধ্যায়কে তুলে ধরে। ১৯ শতকের বাংলার কৃষক ও তাতি সমাজে ইসলামের মূল আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা ফরায়েজি আন্দোলন কেবল ধর্মীয় পুনর্জাগরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক এবং জমিদার শ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী আন্দোলন। তৎকালীন মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অবস্থা ছিলো শোচনীয়। মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিলো নানা কুসংস্কার যেমন- পীর- মজার পূজা, হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি।তারা ছিলো ইসলামের প্রকৃত আদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন। এমনই এক অন্ধকার যুগে ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা করেন হাজী শরীয়তউল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০), যিনি ইসলামের মূল শিক্ষা—"ফরজ" বা অবশ্য পালনীয় বিধানগুলো মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেন। শিরক বিদায়ত থেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালান। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের কারণে মুসলিম কৃষকরা চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে হাজী শরীয়তউল্লাহ ফরায়েজি মতবাদ প্রচার শুরু করেন, যা একাধারে ধর্মীয় ও সামাজিক পুনর্গঠনের দিক নির্দেশনা দেয়।তার অনুসারীরা "ফরায়েজি" নামে পরিচিত হন এবং ইসলামি শরিয়াহ মেনে চলার আহ্বান জানান। আন্দোলনের মূলনীতি ছিল: ইসলামের মৌলিক আদেশগুলো অনুসরণ করা, সমাজ থেকে কুসংস্কার ও বিদআত দূর করা জমিদার ও ব্রিটিশদের অন্যায় কর বন্ধ করা এবং মুসলিম কৃষকদের অধিকার রক্ষা করা। ফরায়েজি আন্দোলন মূলত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক প্রকার প্রতিরোধ ছিল। ব্রিটিশ সরকার মুসলিমদের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখার চেষ্টা করছিল। ফরায়েজিরা জমিদারদের খাজনা দিতে অস্বীকার করত, যা জমিদার ও ব্রিটিশদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও ফরায়েজি আন্দোলনকারীরা 'দার-উল-হারব' (অমুসলিম শাসিত অঞ্চল) তত্ত্ব প্রচার করে ব্রিটিশ আইন মানতে অস্বীকার করেছিল। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালায়, বহু ফরায়েজিকে কারাগারে বন্দি করা হয়, এবং আন্দোলনকে দুর্বল করার নানা চক্রান্ত করা হয়। ফরায়েজি আন্দোলন ধর্মীয় হলেও এটি ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক চেতনার অন্যতম ভিত্তি স্থাপন করে। এটি পরবর্তীকালে মুসলিম কৃষক বিদ্রোহ ও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হয়। সাংস্কৃতিক দিক থেকে ফরায়েজিরা ইসলামের শুদ্ধ চর্চা প্রচার করায় অনেক প্রাচীন বাংলার লোকাচার, মাজার পূজা, দরগাহ ভক্তি ইত্যাদির বিরোধিতা করে। এটি স্থানীয় সমাজে বিরোধের সৃষ্টি করে, বিশেষত সুফিবাদ ও প্রচলিত লোকসংস্কৃতির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। হাজী শরীয়তউল্লাহর মৃত্যুর পর তার পুত্র দুদু মিঞা (১৮১৯-১৮৬২) ফরায়েজি আন্দোলনের দায়িত্ব নেন। তিনি আন্দোলনকে আরও সংগঠিত করে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষ প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করেন। তিনি কর আদায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করেন এবং সরাসরি জমিদার ও ব্রিটিশ সরকারের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরবর্তী নেতারাও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এককথায় "ফরায়েজি আন্দোলন" বইটি পাঠকের সামনে বাংলার কৃষক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামী অধ্যায় উন্মোচিত করে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার মুসলিম সমাজের যে একটি বিরাট ভূমিকা ছিলো, পাঠকের কাছে তা পরিষ্কার হবে। বইটি গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স এবং বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস বুঝতে আগ্রহী পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
Was this review helpful to you?
or
বাংলার ফরায়েজী আন্দোলন কে বৃটিশ-ভারতের প্রথম পুনর্জাগরণ আন্দোলন বলা যায়। বাঙালী মুসলিমদের করুণ অধঃপতন দেখে হাজী শরীয়তউল্লাহর ভেতরে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে ১৯ শতকের শুরুর দিকে বিশুদ্ধ ইসলামের পুনর্জাগরণের উদ্দেশ্যে তিনি এই আন্দোলন শুরু করেন। সর্বপ্রথম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মুসলিমদের মধ্যে তাওহীদের প্রতি এবং বিদআতের বিরুদ্ধে দাওয়াত পৌঁছানো। পরবর্তীতে সেটি সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিতে পর্যন্ত রুপ নেয়। ১৮১৮ সাল থেকে ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত জোড়ালো ভাবে এই আন্দোলন চলমান থাকে এবং পরবর্তীতে সেটি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত গড়ায়। প্রায় দু'শ বছরের ইতিহাসের উপর কেন্দ্র করে বহু লেখক গবেষক বহু পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন যেগুলো গবেষণার ভিত্তিতে বিস্তারিত আকারে আসেনি বরং নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যই সীমাবদ্ধ থেকেছে। যার কারণে লেখকের কাছে মনে হয়েছে এধরনের একটি গ্রন্থ অতীব প্রয়োজন এবং সে প্রেক্ষিতে লেখক ড. মুহাম্মদ আহসানউল্লাহ Ideology of The Faraizi Movement of Bengal বইটি রচনা করেন তারই অনুদিত বই "ফরায়েজী আন্দোলন: একটি আদর্শিক লড়াই"। বইটির শেষে গ্রন্থপাঞ্জীর ৩৩ পৃষ্ঠার জুড়ে লিস্ট দেওয়া হয়েছে। যেটি আমার কাছে ভালো লাগেনি, ফন্ট ছোট করে এই পেজ গুলো কমানো যেতো, অথবা কিউআর কোড সিস্টেম করে দেওয়া যেতো, এতে বইটির মূল্য কিছুটা কমে আসতো। তাছাড়া সাহিত্যের দিক দিয়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তাদের এই ভুলটির কারণে রেটিং এ একটি স্টার কম দিলাম। জাজাকাল্লাহু খাইরান। //fb: #review_s