User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পাঠ প্রতিক্রিয়া/নাদিয়া ইনবিহাজ চমৎকার একটা বই পড়ে শেষ করলাম। ছোট বই তবুও সময় লেগেছে কারণ রমজান মাস। স্টুডেন্টদের পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে বইটা পড়েছি, চার-পাঁচ পৃষ্ঠা করে। আজকে বাকিটুকু একটানে শেষ না করে পারছিলাম না। এমন এক অমোঘ আকর্ষণ ছিলো। বইটা শেষ করে এক আদ্র মায়ায় বুকটা ভরে উঠেছে। কি লিখবো কোথা থেকে শুরু করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ছোট একটা বই এতো অর্থবহ! এতো ভাবনায় ফেলে দিলো! আমি মানুষ টা একটু ধর্মভীরু। ধর্মের প্রতি আমার সবথেকে বেশি টান। ধর্মের অবমাননা মেনে নিতে পারি না। তাই বইটা যে সেনসিটিভ ইস্যু নিয়ে লেখা, যেটা মূল প্রতিপাদ্য সেটা নিয়ে মনে খুঁতখুঁত করতেছিলো। লেখক কিছু মানুষ কে দিয়ে পুরো ওই সমাজ টাকে বিচার করে কিনা! তবে তিনি জ্ঞানী লেখক, এতো সাবধানতার সাথে বিষয়টি তুলে ধরে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আমার বারবার আফসোস হচ্ছিলো বইটা সঠিক মানুষদের কাছে কি পৌঁছাবে? এই ছোট ছোট প্রাণগুলোর সাথে যে ভয়ানক অপরাধ গুলো হচ্ছে। এই অবুঝদের শৈশবকে যে মুখোশধারী শয়তান গুলো এভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। ভয়াবহ ট্রমা থেকে নিষ্পাপ কিছু ফুল অকালেই ঝরে যাচ্ছে! জীবনের মানে বোঝার আগেই তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে! পড়তে পড়তে বুকটা ভার হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে মূঢ় হয়ে থাকি। "There are more tupees than heads of cattle, more tupees than sheaves of rice." মাস্টার্সে ছিলো সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালুর ইংরেজি অনুবাদ Tree Without Roots. এই লাইনটা উনি বলে গেছিলেন অনেক বছর আগে। তখনকার এবং এখনকার বাংলাদেশর ধর্মীয় অবস্থা সেই একই! সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর মতন অমন বিস্তারিত না হলেও ছোট কিন্তু তীব্রভাবে সেই ভণ্ড সমাজটাকে লেখক দেখিয়েছেন। কোন রকম ধর্ম বিদ্বেষ ছাড়া! বইটা প্রান্তিক মানুষের জীবন নিয়ে লেখা। বইটা হাজারমুখী ময়নাকে নিয়ে লেখা। দিন আনে দিন খায় হাজারমুখী ময়না। এহেন কোনো কাজ নেই সে পারে না। মৃত বাড়ির মরা কান্না কাঁদতে পারে সব থেকে ভালো। গুনগুনিয়ে বিলাপ করে কাঁদে সে। শোকের ছায়া নেমে আসে তার কান্নায়। কিন্তু সেই হাজারমুখীর কান্না থেমে যায় শেষবেলায়। তার জীবনের সব থেকে শোকের দিন সে আর কাঁদতে পারে না। তার চোখে খা খা করা শূন্যতা! লেখকের লিখনশৈলী নিয়ে কিছু না বললেই নয়। এতো দুর্দান্ত তিনি এই দিক থেকে। মাঝে মাঝে মন হচ্ছিলো কাব্য করে লিখেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় অন্তরের সমস্ত দরদ ঢেলে দিয়েছেন লেখায়। বইটাতে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার বেশি, যেহেতু নিম্ন শ্রেণির জীবন এবং প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে লেখা। অনেক শব্দের মানে বুঝতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস করুন তাতে আমার মনোযোগের একটুও ব্যাঘাত ঘটেনি। কারণ বইয়ের মূল মেসেজ আমি বুঝতে পেরেছি। গ্রামের অনুষ্ঠান আয়োজন, মানুষের জীবনের বৈচিত্র্য, তাদের সংগ্রাম এতো চমৎকার ভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। সামান্য পোড়া মরিচ আর রসুনের ভর্তা মেখে ভাত খাওয়ার দৃশ্যকে স্বর্গীয় দৃশ্যে রুপ দিয়েছেন। আর ওই রসুন ভর্তা হয়ে উঠেছে অমৃত! ছোট একটা বই কিন্তু হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে গেলো। বই- হাজারমুখী রোদসী লেখক - কাজী লাবণ্য প্রকাশক- গ্রন্থিক প্রকাশন
Was this review helpful to you?
or
‘হাজারমুখী রোদসী’ – এক মায়ের বিরহকথা ‘ইহকালোত দাসীবান্দী ফির পরকালেও দোজখের খড়ি? এই তাইলে জেবন? এই জেবনের জন্য দুনিয়াত জন্ম হইছে?’ মন্দেলের মা, রব্বানীর খালা হাজারমুখী ময়নার এই যে অভিমান, এই যে প্রচ্ছন্ন রাগ, তা কেবল জীবনদেবতার প্রতি নয়। বরং জাগতিক জীবনের প্রতিটি বিষয়েই তার এক আশ্চর্য অভিমান। আসলে তার আকাশপাতাল রাগেই উপন্যাসের সূচনা। কারণ তার আয়ের পথ একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। যন্ত্রসভ্যতার বলি হয়েছে তার ধান-চাতালের গতর খাটুনি। অভাব মানুষকে যে ভেতর থেকে চণ্ডাল বানিয়ে তোলে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হাজারমুখী। তবু তার আছে একটি বিশ্বজনীন অব্যয় সত্তা— তার মাতৃত্ব। কাজী লাবণ্য ‘হাজারমুখী রোদসী’ আখ্যানে একজন মায়ের কথাই বলতে চেয়েছেন। মাটিঘেঁষা এ কাহিনি কখনও হয়েছে ঐতিহ্যের স্মারক, কখনও বা সমাজবিম্বের ধারক। বোনপো রব্বানীকে নিজের কাছে রাখার মধ্যে এক ধরনের কোমল মাতৃসত্তা রয়েছে। সাধারণত নিজের ছেলে আর পরের ছেলের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ভেদরেখা থাকে। তবে সেই ভেদরেখা আমরা হাজারমুখীর আখ্যানে দেখি না। কারণ মন্দেল মায়ের জন্য দরদি সন্তান হয়ে উঠতে পারেনি। অপরদিকে রব্বানী বোনের ছেলে হয়েও ময়নার জন্য সবসময় অন্তপ্রাণ। ফলে খালা-বোনপোর মধ্যে একটা দারুণ সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমরা দেখি এই দুজনের মধ্যে শ্লোক ভাঙানির মতো লোকজ ব্যাপারগুলোর চর্চা হচ্ছে। ‘পথের পাঁচালী’র অপু আর সর্বজয়ার মধ্যকার মা-ছেলে বন্ধনটি কামতাপুরের মতো সম্পূর্ণ নতুন ভৌগোলিক পরিবেশে যেন ময়না আর রব্বানীর মাধ্যমে পুনর্মঞ্চায়িত হয়েছে। এছাড়া বাড়ির কুকুরটার প্রতিও তার সেই মাতৃসুলভ মমতা। খাবার দিতে না পারায় আসলে হতাশ পায়েই কুকুরের গায়ে লাথি বসায় ময়না। “বাঁশিক খাওয়াইম তাও মুন্সিক খাওয়াইম না” কথাটি ময়নার। একটি কুকুরকে তথাকথিত মানুষের চেয়ে বেশি সমাদরযোগ্য বিবেচনা করার মানস তুলে ধরে কথাটি। পাশাপাশি এ কথাটি তার মাতৃসত্তাকেও প্রতিফলিত করে। লোকজ উপাদান আরও রয়েছে উপন্যাসে। চাইলন বাতি, বান্নি মেলা, হাটিবারি, আমনামনি, বিয়ে ও মৃত্যুর গীত এসবই লোকজ উপাদান। চাইলন বাতি রাজবংশী সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। বান্নি মেলা, হাটিবারি, আমনামনি অঞ্চলবিশেষের রংপুরী সংস্করণ। লোকজ খাবারের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বুন্দিয়া-লুচি যা পুজোর সময়কার খাবার হিসেবেও জনপ্রিয়। সে বিচারে সার্বিকভাবে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিবেশ এ উপন্যাসের স্বল্প কলেবরেই লেখক সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এই ব্যাপারটি আরও পূর্ণতা পেয়েছে খুকি দিদি চরিত্রের অন্তর্ভুক্তিতে। এ উপন্যাসের ভাষারীতি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার সংলাপে পাঠক হাজারমুখীকে আবিষ্কার করবে। তার রাগে, স্নেহে, আর্তনাদে বাস্তবতার সুরভি আরও বেশি ছড়ায় তার মুখের ভাষায়। তবে বোঝা যায়, লেখক চেষ্টা করেছেন পাঠকের কাছে বোধগম্য একটি সরল ভাষারীতি ধরে রাখতে। সাহিত্যের জন্য আঞ্চলিক রূপের সহজ-সরল, অধিক প্রচলিত রূপটিই বেশি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর। কেঠো কাঠামোর কোনো এক কোণে যখন ঘুণ ধরে, তখন ধীরে ধীরে পুরোটাতেই বিস্তৃত হয় সেই ঘুণের রাজত্ব। সময়ে দমন না হলে একটা সময় ভেঙে পড়ে কাঠামো। লেখক ময়নার গল্প বলতে গিয়ে যে আলগোছে আরেকটি নৈতিক অধঃপতনের গল্প বলে গেছেন, তা ময়নার সংসারকে কীটদষ্ট করেছে অতিসঙ্গোপনে। হেফজখানাগুলোর বাস্তবানুগ চিত্র উঠে এসেছে মন্দেল চরিত্রের মধ্য দিয়ে। এ চিত্র আঁকতে গিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন লেখক। বিদ্যালয় একটি শিশুর বিকাশ তথা সামাজিকীকরণের দ্বিতীয় প্রধান ক্ষেত্র। পরিবারের পরে একটি শিশুর শিক্ষাগত বিকাশের যাবতীয় দায়িত্ব বিদ্যালয়ের। সেখানে যা কিছু দেখে, যা কিছু শেখে শিশু, বাস্তব জীবনে তারই প্রতিফলন ঘটায়। মন্দেল এবং রব্বানীর মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কের লেখচিত্রটি আসলে মন্দেলের ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণেরই ফল। আখ্যানের এ অংশটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ যোগ রয়েছে লেখক-সাংবাদিক সাইফুল বাতেন টিটোর উপন্যাস ‘বিষফোঁড়া’র। অবদমিত কামবাসনার ফাঁদ থেকে পুরুষের বিকৃতমনা যৌন নির্যাতক হওয়ার ইতিহাস সচেতন পাঠক জানতে চাইবেন। কাগজে-কলমে সেটা বাংলায় ইংরেজ মদদপুষ্ট জমিদারী আমলকে নির্দেশ করলেও মানুষের কামপ্রবৃত্তি তো আরও পুরোনো। তাহলে কি মৌলবাদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই বিকৃত যৌনতার চর্চাক্ষেত্র? এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর পাওয়া কঠিন। তবে একটি প্রশ্ন তোলা যায়— এই ভয়াল থাবার বিস্তৃতি কতদূর? কোনো আয়-উপার্জন না থাকায় নিজের ছেলের প্রতি ক্ষোভ আছে ময়নার। সেই ক্ষোভেই একেকবার জ্বলে ওঠে সে। তার ক্ষোভ চূড়ান্ত মাত্রা পায় রব্বানীর অন্তর্ধানে। কোনো অপরাধ না করেও কেন পালাল রব্বানী? মন্দেলের মন-দিলের কি কোনোরূপ পরিবর্তন আসবে শেষ পর্যন্ত? নিজের ভুলের খেসারত দিতে হবে না তো তাকে? এসব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে ‘হাজারমুখী রোদসী’র পাঠে। © রেজওয়ান আহমেদ