User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#বাড়ির_নাম_জল_তরঙ্গ #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ বাড়ির নাম জল তরঙ্গ •লেখকঃ জয়নাল আবেদীন •ধরনঃ সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক •প্রকাশনীঃ নয়া উদ্যোগ প্রকাশনী •প্রচ্ছদঃ তানিয়া সুলতানা •মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৫০ •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২০২ •প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০২৫ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ কোনো উপন্যাস কেমন লাগবে এরকম অনুভূতি নিয়ে যখন কোনো বই পড়া হয়, আমি খেয়াল করে দেখেছি সেই উপন্যাসটি নিয়ে আসলে মনখুলে অনুভূতি প্রকাশ করা আমার ঠিক হয়ে উঠে না । আমি তাই কোনোরকম আশা করা ছাড়াই উপন্যাসগুলো পড়ে মনের শহরে পাঠানোর চেষ্টা করি । যেন একটু একটু করে নিজেদের জায়গা নিজেরাই নেয়ার চেষ্টা করে । এরকম করেই দিন কেটে যাচ্ছে, পাঠক মনের । হায়রে জীবন! ♦নামকরণঃ বাড়ির চারপাশ জুড়ে যেন কতশত নির্জীব হয়ে আসা জীবন্ত স্মৃতিরা ঘুরে বেড়ায় । একটা আড়াই তলা বিশিষ্ট বাড়ি হবে । শিউলি ফুল থাকবে । কিছু স্মৃতি বাড়ির প্রতিটি দেয়ালে যেন ঘুরে ঘুরে বেড়াবে । অবিরত হাতছানি দিয়ে মনে করিয়ে দিবে নিজস্ব স্বকীয়তা । ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা এ বাড়িগুলো যতটা না প্রাণহীন মনে হয়, তার থেকেও যেন বেশি মনে হয় স্মৃতিবাক্স এর মতো । না জানি কতগুলো সময় ধরে একের পর এক শুধু স্মৃতি, মুহূর্ত, এবং অগুনতি বিশেষণগুলো নিজেই আঁকড়ে ধরে নিয়ে আছে । বাড়ির নাম জল তরঙ্গ যেন এরকমই এক আখ্যান । জল তরঙ্গ যেন নামের অর্থের মতোই জীবনে নিজস্ব সুরের মতো বেজে উঠেও বয়ে চলে গেল জীবনভর ধরে । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ বীথি উৎসাহ নিয়ে বলল, “বই পড়ার অভ্যাস কীভাবে করা যায় বাবা? আমার এই অভ্যাসটা তৈরি হওয়া জরুরি । কাজকর্ম ছাড়া শুয়ে বসেই তো থাকি ।” আব্দুল বারী উৎসাহী গলায় বললেন, “তোমার কাজ হলো আলমারির সামনে গিয়ে যে বইটা দেখতে সুন্দর লাগে সেটা টান দিয়ে বের করা এবং পড়তে শুরু করা । ব্যস, দেখবে অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে ।” “আপনি এভাবে শুরু করেছিলেন?” প্রশ্ন শোনে কেমন যেন উদাস হয়ে গেলেন বারী সাহেব । হঠাৎ পা নাড়াতে লাগলেন, হাতটা কাঁপল একটুখানি । তাঁর ভেতরে অস্থিরতার জন্ম হয়েছে । খুব সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য না করলে বোঝা সম্ভব না । বারী সাহেবের চোখের পলকও ঘন ঘন পড়ছে । বীথি বুঝতে পারল নিজের অজান্তে সে আব্দুল বারী কোনো নাজুক জায়গায় আঘাত করে ফেলেছে । “আমার অভ্যাসটা করে দিয়েছিল একজন । তখন ভার্সিটিতে পড়ি ।” এতটুকু বলে থেমে গেলেন বারী সাহেব । বুকের একদম গহীনতম স্থানে লুকানো স্মৃতি টেনে বের করছেন । একা একা পুরোটা উদ্ধার করার সাহস তাঁর নেই । খাদ থেকে স্মৃতিসমেত উঠে আসার জন্য শ্রোতাকে সাহায্য করতে হবে । হাত বাড়িয়ে ধরতে হবে হাত । বীথি উপলব্ধি করল নির্ভুলভাবে । বীথি বলল, “অনুমান করছি তিনি ছিলেন একজন নারী ।” “হ্যাঁ।” অকপটে স্বীকার করলেন বারী সাহেব ।” “আরো অনুমান করছি তাঁর সঙ্গে এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক হয়েছিল আপনার ।” “হ্যাঁ ।” “কিন্ত বহুদিন ধরে যোগাযোগ নেই ।” “হ্যাঁ ।” “কোথায় তিনি ।” “জানি না ।” “জানেন না কেন? আপনাদের অনেক ঝগড়া হয়ে গিয়েছিল? তারপর ঘৃণা চালাচালি, মুখ দেখাদেখি বন্ধ... এরকম?” “না । এমন কিছুই হয়নি ।” “তাহলে তো আপনার অবশ্যই এইটুকু অন্তত জানার কথা তিনি কোথায় আছেন ।” “জানি না । কারণ মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায়, আমার সত্যিই জানা নেই ।” ♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটা দেখলেই আমার কোথাও একটা মায়া লাগে খুব । যেন সব ধরনের মনস্তাত্ত্বিক আবহে ঘিরে থেকেই প্রচ্ছদটা সাজানো হয়েছে । এই নীল আকাশ, সেখানে মেঘের বিচরণ, আড়াই তলা বিশিষ্ট ‘জল তরঙ্গ’ নাম দিয়ে থাকা বাড়ি হেঁটে চলা যাওয়া অবস্থায় একজন যুবক । এবং দূরে দুই তলার বারান্দা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নারী, সাথে কোনার বারান্দায় বয়স নিয়ে জীবন দেখে ফেলা বৃদ্ধ যুগল । এরকম মুহূর্তগুলো যেভাবে প্রচ্ছদটি সাজানো হয়েছে তা কোথাও গিয়ে ভীষণ মনস্তাত্ত্বিক হয়ে ধরা দিয়েছে । দেখেই যেন কোথাও আমার ভালোলাগা বেড়ে গিয়েছে খুব । ♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এই উপন্যাসটি পড়ার ইচ্ছা নিয়ে অনেকগুলো রাত আমি অপেক্ষা করেছিলাম । ভেবে নিয়েছিলাম যে এই উপন্যাসটি পড়তে যে রাতটা দরকার, সে রাতটি আমার জীবনে এখনও আসেনি । এতটা আয়োজন নিয়ে পড়তে বসা রাত যে এটাই হবে তা আমি কখনও ভাবিনি । বইটি পড়তে চাওয়ার মিনিট খানেক আগেও এই বইটি পড়ার ইচ্ছা আমার মনে জাগেনি । এরকম হুটহাট করে ফেলা অনুভবে আমার মনটা বারবার আচ্ছন্ন হচ্ছে এখন । মনে হচ্ছে যেন পড়তে চেয়ে আমার কোথাও ভুল হয়নি । বইটা এই উদাসীন, নিঃসঙ্গ রাতেই পড়া উচিত ছিল । ✓পটভূমি এবং আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসের পটভূমি নিয়ে বলার আগে আমি প্রেক্ষাপট নিয়ে বলি বরং । এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট বেশ বিস্তৃত । এখানে বর্ণনায় ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এসেছে । সেই সময়ের বিভিন্ন মুহূর্ত ফুটে উঠেছে । তবে তা ছাড়িয়ে গিয়ে উপন্যাসের মূল প্রেক্ষাপটে যেন ভেসে এসেছে ২০০৭ এর বিভিন্ন প্রেক্ষাপট । এসেছে কাহিনীর সমান্তরালে বিভিন্ন রাজনৈতিক মুহূর্ত । এসেছে তখনকার তত্বাবধায়ক সরকার এবং সেই সময়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট । এরকম সময়েই উপন্যাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আরো ভেসে এসেছে সাইক্লোন ‘সিডর’ এর ভূমিকা । এরকম সময়েই নব্বই দশকের না হয়েও তার ছাপের ধাঁচ দিয়ে যাওয়া মন মানসিকতার বাংলাদেশ নামক দেশে এই উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট শুরু । এরকম পটভূমিতে গড়ে ওঠা উপন্যাসটিকে তাই মনে ধারণ করতে খুব একটা সময় লাগে না । কারণ নব্বই দশকের মানুষের মনের যে অদ্ভুত এক ছোঁয়া, আজন্ম লালিত অদ্ভুত স্মৃতিচারণ এবং উদাসীন হয়ে আসা জীবন তার অদ্ভুত সুরের ধাঁচ এই উপন্যাসেও যেন বয়ে গিয়েছে খুব । কোথাও যেন মনের কাছাকাছি ধরে রাখার চেষ্টা । এরকম পটভূমিতে তৈরি হওয়া উপন্যাসটির একই পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে কোথাও ভালো লাগার অনেক অনুভব ভেসে আসে আমার মনে । দৃশ্যপটগুলো যেন সেভাবেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে । তবে কাহিনীর গতি প্রবাহ এবং জীবনধারা হাতছানি এতটাই দ্রুত আসে যে উপন্যাসে আবহ এর পারিপার্শ্বিক অনুভব তুলনায় কিছুটা কম । উপন্যাস যেন সেভাবেই বয়ে গিয়েছে নিজস্ব ধাঁচে এবং ঢঙে । এভাবেই যেন তবুও নিজস্ব স্বকীয়তায় উপন্যাসটিকে ভারসাম্যপূর্ণ মনে হয় খুব । ♦চরিত্র গঠনঃ যেহেতু এই উপন্যাসের চরিত্র সংখ্যা তুলনামূলক খুবই কম । তবুও পরিবারকে কেন্দ্র করেই চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলে উপস্থাপন করা হয়েছে । সেক্ষেত্রে চরিত্রগুলোর গঠন খুব জরুরি ছিল । উপন্যাসের বিভিন্ন পরতে পরতে, কাহিনীর সমান্তরালের টানাপোড়েনে ঘটনা ঘটে যাওয়ার টানে এবং মোড়ে মোড়ে গিয়ে চরিত্র গঠন এবং উপস্থিতি যেন তাদের আবহ দিয়েই তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । আমজাদ চরিত্রটির গঠন যেন তারই অন্যরকম এক ছাপ । কোথাও যেন তাকে অদ্ভুত ভাবে কম রেখেই উপন্যাসের কিছু দৃশ্য এবং মুহূর্তকে ধোঁয়াশা এবং হাতছানি দিয়ে ডাকার জন্যেই রাখা হয়েছে । এখানে তাকে উপস্থিতি হিসেবে আরো ব্যবহার করা যেতে পারতো, সেক্ষেত্রে উপন্যাসের ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্পর্কের টানাপোড়েন, রসায়ন এবং ঘটনার বিভিন্ন মোড়ের মুহূর্তগুলো ঘটার সময়ের আকর্ষণ টের পাওয়া হতো খুবই কম । আকস্মিক এক অনুভবে, বিস্ময়ের সুর রাখার জন্যেই যেন চরিত্রটিকে ধোঁয়াশায় রেখে দেয়া হয়েছে । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ •ফরহাদ, স্বপ্নবাজ যুবকটি স্বপ্ন দেখে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার । মন খেয়ালি এই মানুষটি নিজের বিভিন্ন মুহূর্তগুলো নিয়ে বাঁচতে চায় । আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষটি নিজের সম্মান নিয়ে এগিয়ে যায় জীবনের সবকিছু পর্যন্ত । তবুও একটা অতীত তার জীবনে তাকে নিয়েই যেন ঘুরতে থাকে পুরোটা জুড়ে । •আব্দুল বারীঃ মনের মধ্যে অনেক আলোড়ন বয়ে নিয়ে চলা মানুষটি কিছু যেন জীবনজুড়ে লুকিয়ে বয়ে নিয়ে চলে । এক বাড়ি, চুপচাপ নিজস্ব স্বভাব নিয়ে, নিজেকে নিয়ে বাঁচতে শিখে যান তিনি । •সাজ্জাদঃ সহসা রাগ উঠে যাওয়া মানুষটির কোথাও যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলার ভয় । নিজেকে প্রকাশ করার জন্য যেন কোথাও এক ধরনের চেষ্টা । হুটহাট রাগ করা মানুষটির রাগ পড়ে যেতেও সময় লাগে না । তার এই রাগ উঠে যাওয়া পৃথিবীতে চিৎকার, চেঁচামেচি কোথাও গিয়ে যেন ভীষণ নিঃশ্বাস নেয়ার মতো করে মনে হয় যেন । •বীথিঃ অদ্ভুত, শান্ত ধরনের মেয়েটি ভীষণ বুদ্ধিমতী । নিজেকে নিয়ে গড়ে ওঠা চারপাশের পরিবেশটা কিভাবে যেন নিজস্ব স্বকীয়তা দিয়েই বুঝে নিতে শিখে যায় তিনি । তাকে নিয়ে কোথাও একটা নিঃসঙ্গ, এবং নিশ্চুপ সুর বয়ে চলে যায় যেন । গুমোট একটা হাওয়ার মতো করে ভেসে চলে যায় । •ফরিদাঃ নিজের পরিবারকে যত্ন করার মানসিকতা নিয়ে থাকা মহিলাটি সংসারের সব দিকে নজর রেখে জীবনে এগিয়ে যান । ভীষণ বুদ্ধিমতী মানুষটি ধৈর্য নিয়ে জীবনভর সংসার করে যাওয়ার ইচ্ছা টের পান । সংসারের জন্য যার ভীষণ মায়া । কোথাও একটা গিয়ে তিনি নিজের হাতে গড়ে তোলা সংসারকে ভীষণ ভালোবেসে ছিলেন । •নীলিমাঃ নিজের মনে বয়ে চলা প্রতিটি কথা মুখের উপর বলে দিতে পারা মনোভাব নিয়ে বড় হওয়া মেয়েটি যেন এরকম করেই জীবন কাটিয়ে দেয় । আর্থিক অবস্থানে দারুণ ভাবে এগিয়ে থাকা বিধায় কোথাও একটা নিজেকে বড় মনে করার একটা ছাপ টের পাওয়া যায় । •খায়রুলঃ সময় বুঝে পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া মানুষটি আসলে দায়বোধে তেমন একটা চিন্তা করেন না । যা মনে ইচ্ছা হয় তা নিয়েই কাজ করতে করতে কখনও ভুল পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা মাথায় আসে না সেভাবে । •আমজাদঃ শান্ত, চুপচাপ ধরনের মানুষটি নিজের মনে কী বয়ে যাচ্ছে তা সহসা টের পেতে দেন না । নিজের কর্মদক্ষতা এবং পেশাগত দিক থেকে সফল হওয়া মানুষটি নিজেকে যেন প্রকাশ করতে না দিয়েও কিছুটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত । •টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসে আছে সুমি, যে নিজস্ব স্বকীয়তা এবং নিজের উপস্থিতি দিয়েই নিজের জায়গা করে নেয়ার মতো বুদ্ধি নিয়ে চলাফেরা করে । যার অদৃশ্য ছাপ, পুরোটা জুড়ে ধাঁচ নিয়ে পড়ে যায় । এছাড়াও আছে রুস্তম, যে নিজের ভালো লাগা এবং ভালো থাকা নিয়ে সবকিছুর দিকে তীব্র নজর রাখে । যেখানে ভালো থাকা, সেখানে মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা করে যায় সবটা সময় । এছাড়াও এই উপন্যাসে আছে আঞ্জুমান আরা নামের একজন মহিলা, যিনি নিজস্ব স্বকীয়তা এবং আত্মসম্মানবোধ নিয়ে পুরোটা জুড়ে ছিলেন । যার একটা অদ্ভুত স্বপ্ন ছিল । সেই স্বপ্ন এবং শখের মায়ায় জড়িয়ে থাকা মানুষটি নিজের অতীতের কিছু কষ্টে মিশে ছিলেন পুরোটাজুড়ে । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসের প্রিয় অংশ হিসেবে ভাবতে গিয়ে আমার বারবার মনে হয়েছে, একটা পরিবার জুড়েও এত কিছু থাকতে পারে! এত আলগোছে অদ্ভুত চিন্তারা মনজুড়ে বসে থাকতে পারে! ‘বাড়িটির নাম জল তরঙ্গ’ এই অদ্ভুত নির্দিষ্ট করে দেয়া নামটির অর্থের মতো করেই যেন জলের মধ্যে তরঙ্গ হয়ে শব্দ নামক সুর তুলে দেয়ার মতো করেই বাড়ির মানুষগুলোর সাথে ভীষণ অর্থবহ হয়ে উঠে । একেকটি মানুষের জীবন যেন তাদের মতো করেই বিভিন্ন মুহূর্ত দেয় । শিউলি গাছের স্মৃতি, তা ভেসে আসা কিংবা আড়াই তলা বিশিষ্ট বাড়িটিতে একটা তিন তলা কেনো নয় এরকম ছাপগুলো ভীষণ কাছের হয়ে ধরা দেয় । এছাড়াও এই উপন্যাসের প্রিয় ভালো লাগা হিসেবে আছে যে প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটি বয়ে গিয়েছে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ভাবাবেগ, আবহ এবং আলোড়ন । এতটা সুন্দর করে সব প্রভাবিত করেছে যে কোথাও গিয়ে ভালোলাগা বেড়েছে । এছাড়া সিডর, বন্যার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষের চিন্তা এগুলো ভীষণ ভালো লাগা নিয়ে এসেছে । উপন্যাসটির পরিশিষ্ট অংশটুকু এত ভালো লাগার মতো ছিল । বোধহয় প্রিয় অংশও ছিল । এছাড়াও মানুষের মনস্তাত্ত্বিক কিছু টানাপোড়েন এবং স্মৃতিচারণে অদ্ভুত ছাপ পুরোটা জুড়ে যেন বয়ে যায় । তবুও এই উপন্যাস জুড়ে যেন কোথাও এক ধরনের নিঃসঙ্গতা, নিস্তব্ধতা এবং উদাসীনতা জুড়ে ছিল । যা ভালো লাগার আবেশ এর মতো ছিল । তবুও এই উপন্যাসে কোথাও একটা দুই লাইন গান শোনানোর তাড়া ছিল । তবুও আদৌ হয় তা... বোধহয় হয়, আবার বোধহয় হয় না । এই অদ্ভুত দোলাচলেই জীবন কেটে যায়, যায় তো! ♦সংলাপঃ এই উপন্যাসের শব্দচয়ন, বাক্যালাপ বেশ ভালো । প্রেক্ষাপট এবং পটভূমি অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । তখনকার সংস্কৃতি এবং সময়ের মূল্যবোধে যেভাবে উপন্যাস বয়ে গিয়েছে সেরকম ভাবেই সংলাপ ধারণ করা হয়েছে যেন । তবে কোথাও একটা বাক্যতে একই ধরনের শব্দ দুইবার ব্যবহার করার মতো ত্রুটি চোখে পড়েছে । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘বাড়ির নাম জল তরঙ্গ’ লেখক জয়নাল আবেদীন এর পঞ্চম বই । উপন্যাস হিসেবে চতুর্থ । লেখকের সাথে পাঠক হিসেবে আমার পরিচয় এই প্রথম হলেও আমার অদ্ভুত কিছু স্মৃতিচারণ আছে যেন । যেভাবে উপন্যাসে বাড়িটির সাথে কোথাও ধোঁয়া উঠে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি ভেসে বেড়ায়, কোথাও বা নীলক্ষেত এর । ঠিক সেরকম । ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়া তার প্রথম উপন্যাস ‘শিকল’ বইটা প্রকাশ হওয়ার পরেই আমার খুব কিনতে ইচ্ছে হয়েছিল । পছন্দের তালিকায় তখন বইটি বারবার এসেছে । বোধহয় এক থেকে দুইয়ে গিয়েছে । দুই থেকে তিনে । কিন্তু কোথাও গিয়ে শেষ হয়ে যায়নি । তবুও বইটা আমার আর কেনা হয়নি । কারণ তখন আমি আমার পাঠকমনে সম্পূর্ণ অচেনা একজন লেখকের বই কেনার মতো বুদ্ধি করে বই কেনার কৌশল আহরণ করতে পারিনি মনে মনে । লেখকের দ্বিতীয় বইয়ের ব্যাপারেও এরকমই ঘটেছিল । এখন আমি নতুন লেখকদের লেখা পাঠক হিসেবে ভীষণ পড়তে চাই, পড়ে ভালো লাগলে পাঠক হিসেবে যে তৃপ্তি দেয় তা ভীষণ আত্মতৃপ্তির মতো । আর এখন বই কেনার জন্য যে ধাপগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো আগে থেকে করার শিক্ষা এবং দক্ষতা থাকলে বোধহয় লেখকের প্রথম পড়া বইটি এটি হতো না । যাহোক লেখকের লেখা পড়ে মনে হলো, লেখক পটভূমি বাছাইয়ে বেশ দৃঢ় ভাবে কাজ করতে পারেন । প্রতিটি প্রেক্ষাপট এবং দৃশ্যপট বেশ দারুণ ভাবে বর্ণনা করেছেন । উপন্যাসটির পরিশিষ্ট অংশটুকু এত ভালো লেগেছে যে অদ্ভুত সুন্দর এক ধরনের ধোঁয়াশা ভাবাবেগ যে রাখা হয়েছে তা আমি বেশ মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি । এছাড়াও লেখকের বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি, সংলাপ ধারণ, শব্দচয়ন সবই বেশ দারুণ । লেখকের পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো । ♦প্রকাশনীঃ নয়া উদ্যোগ প্রকাশনী এর পরপর দুইটা বই পড়ে ফেললাম । এই প্রকাশনীর বই পড়তে বেশ লাগছে । যেভাবে তারা বইটার প্রচ্ছদটা ফুটিয়ে তুলেছেন এবার বেশ ভালো লেগেছে । প্রচ্ছদটা বই হিসেবে দেখতে বেশ ভালো লেগেছে । দূর থেকে যেন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । প্রকাশনী দারুণ ভাবে বইটি বাঁধাই করেছে । এছাড়াও বইয়ের পৃষ্ঠা বাঁধাই করা হয়েছে । তবে বইয়ে প্রচুর বানান ত্রুটি এবং টাইপিং মিস্টেক আছে । যেন মনে হয় কোথাও একটা খেয়াল করে দেখা হয়নি ধরনের মনে হয়েছে । কোথাও একটা বাক্যতে একই ধরনের শব্দ দুইবার ব্যবহার করে ভুল করা হয়েছে । ভুল শব্দের বানান, অথবা ভুল শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে যেন । এগুলো না থাকলে আরো অসাধারণ কিছু হতে পারতো আসলে । ♦রেটিংঃ ৪.৬/৫ ♦উপসংহারঃ অদ্ভুত গান শুরু করতে যাওয়া মুহূর্তের আগে যেমন সুরের প্রয়োজন হয় । প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যেন এরকম বিশেষ বিশেষ কিছু অনুভবের প্রয়োজন হয় । তবুও সম্পর্কগুলোতে টানাপোড়েন চলে আসে । জীবন, জীবনের তরে ভেসে আসা রসায়ন এসবের জন্যেই বোধহয় আসে । জীবনকে দারুণ অর্থবহ আর ভারসাম্যপূর্ণ করে গড়ে তুলে । সুখ আছে বলেই বোধহয় দুঃখের এত গুরুত্ব । অথবা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর মতো করেই না বলতে চেয়েও বলা হয়ে উঠে যে, দুঃখ আছে বলেই মানুষ ক্ষণিকের সুখের মুহূর্তগুলোতেও তা অনুভব করার সময়েও কেঁদে ফেলে । কেনো সুখটা চিরস্থায়ী হয় না বলে, কেনো এত সুখ আসে জীবনে তা নিয়ে! তবুও তো জীবন ঠিকই বয়ে যায় । মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ করে চলার মতো করে উপরের পিঠে আলোতে থাকাবস্থায় নিচের পিঠ অন্ধকারে থাকার মতো করেই । তবুও মনে আফসোস জাগে, সেরকম করে আফসোস । যেভাবে কখনও গান শোনানো হলো না বলে, কাউকে তুমি করে বলা হলো না বলে, কাউকে জানানো হলো না বলে! এগুলো তো আফসোসই, জীবনের না হয়ে উঠা আফসোস...