User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সবার পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
দারুণ বই। চিন্তার খোরাক রয়েছে। রয়েছে জানার ও বুঝার অনেক কিছু।
Was this review helpful to you?
or
এক সুপরিকল্পিত মহা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিমদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র মানবসৃষ্ট মতবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিলো। ফলে এমন একটা প্রজন্ম তৈরি হয়েছিল যারা ইসলামকে কিছু নীতিকথার সমষ্টি মনে করত, যা কেবল মানুষ ব্যাক্তি জীবনেই অনুসরণ করতে পারে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ইসলামের বিধানকে তারা সেকেলে মনে করত। তখন থেকে মুসলিমরা আত্ব পরিচয় সংকটে ভুগছিল। ইসলামী রসম রেওয়াজকে ভুলে তারা অন্ধের মত বিজাতীয় মতবাদ ও সংস্কৃতিকে অনুসরণ করছিল। ঠিক তখনই কতিপয় মনিষী কলম ধরলেন এই আত্ব ভোলা, হতাশায় নিমজ্জিত প্রজন্মকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে। তাদেরই একজন হলেন মিসরের ঐতিয্যবাহী কিবতি সম্প্রদায়ের সাইয়েদ কুতুব। লেখক সাইয়েদ কুতুব ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সেরা ইসলামী চিন্তাবিদদের অন্যতম। মিসরের এই কৃতি সন্তান ছিলেন "ইখওয়ানুল মুসলিমূন" নামক সংগঠনের একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্ব। জাহিলী সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিরাপোষ ভূমিকা পালন করার কারণে মিসর সরকার ১৯৬৬ সনে তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে। এই বইটি তার রচিত "হাজাদ্দীন" নামক বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের বাংলা অনুবাদ। ইসলামের প্রয়োগ পদ্ধতির নির্ভুল বিবরণ তিনি উপস্থাপন করছেন এই বইতে। এই বই রচনাকালীন সময়ে মিসর সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্লকের ছত্রছায়ায় ছিল। দেশে ছিল একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন। ইসলামী দাওয়াত ও তরবিয়ত রাষ্ট্র কর্তৃক চরমভাবে শৃঙ্খলিত ছিল। বিভিন্ন প্রতীকী আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী অনুশাসন ও রসম-রেওয়াজের প্রতি বিদ্রুপ করা হত। এমনই এক পরিবেশে বেড়ে ওঠা লেখক প্রাথমিক জীবনে ইসলামের প্রতি উদাসীন ছিলেন। দ্বীন ইসলামের বুঝ হওয়ার পরে তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন তার লেখালেখির মাধ্যমে। কিছুদিন আমেরিকায় অবস্থানের কারণে পাশ্চাত্য সভ্যতার খুঁটিনাটিও তার গোচরে ছিল। একারণেই তার লেখায় ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার তুলনামূলক ধারণা উঠে আসে। তার রচনাগুলো বিখ্যাত: উন্নত সাহিত্য মানের জন্য। লেখক বইটিকে সাতটি প্রবন্ধে বিভক্ত করেছেন:- • মানব জাতির জন্য একটি পথ • একটি অনন্য পথ • একটি সহজ পথ • একটি সফল পথ • সম্ভাবনাময় মানব-প্রকৃতি • অভিজ্ঞতা সম্পদ • প্রভাব-পরিণতি • উপসংহার একদিকে পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সমাজতন্ত্র! মানবসৃষ্ট এই দুই মতবাদের মাঝে নিষ্পেষিত বিভ্রান্ত মানুষকে তিনি সঠিক পথের দিশা দেয়ার চেষ্টা করেছেন এই সাতটি প্রবন্ধের মাধ্যমে। লেখকের ভাষায় ইসলাম ও তার প্রয়োগ পদ্ধতি আজ হয় বিস্মৃত নাহয় ভ্রান্তির শিকার। কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন ইসলাম ও তার প্রয়োগ পদ্ধতিকে সঠিকভাবে না বুঝা। তিনি আরো দেখিয়েছেন ইসলাম স্থান কাল ও মানবের সীমবদ্ধতা কে ভুলে যায় না। তবে এটি এমনি এমনি প্রতিষ্ঠা পায় না। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় একদল মানুষ দ্বারা, যারা ইসলামকে মনে প্রাণে গ্রহণ করে, নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করে ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়িত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। "ইসলাম প্রতিষ্ঠা যদি মানবের সামর্থ্যের উপরই নির্ভরশীল, তাহলে অন্যান্য মানব রচিত মতবাদের সাথে এর পার্থক্য রইল কোথায়?" - এমন প্রশ্নের জবাবে লেখক বলেছেন যে, ইসলাম মানুষকে সত্যিকারের আজাদী দান করে, তার গলা থেকে গোলামীর জিঞ্জির খুলে ফেলে। মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে। একজন মানুষ মুসলিম হয়ে শুধু আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মানার মাধ্যমে বাকি সমস্ত সত্তার গোলামী থেকে নিজেকে মুক্ত, স্বাধীন করে নেয়। উদাহরণ হিসেবে লেখক ইউরোপকে সামনে এনে দেখিয়েছেন। বস্তুগত চরম উৎকর্ষ সাধন করলেও তারা শান্তি লাভ করতে পারেনি। কারণ তারা মানব সৃষ্টির আসল রহস্য নির্ণয় করতে পারেনি। গির্জার পাদ্রীদের গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে তারা এখন বস্তুবাদের গোলামিতে মত্ত। মানব প্রকৃতির বিশ্লেষণ করে লেখক দেখিয়েছেন, ইসলাম অবতীর্ণ জীবন বিধান। তাই মানব প্রকৃতির সাথে এর সংগতি রয়েছে। ইসলামের সোনালী যুগের সামাজিক ন্যায়নীতি ও সহজ, সরল উন্নত নৈতিক চরিত্রের জীবনব্যবস্থার আলোচনার পাশাপাশি তৎকালীন ভারতীয়, পারস্য ও রোমান সভ্যতার আলোচনা করে লেখক দেখিয়েছেন পূর্বে যেমন মানুষ এর মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পেয়েছিল, বর্তমানেও এর আবেদন একই আছে এবং ভবিষ্যতেও একই থাকবে। কারন এটি একটি কালোত্তীর্ণ জীবনবিধান। এছাড়াও বিভিন্ন পশ্চিমা লেখক ও বিশ্লেষকের লেখনীর উদৃতি দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন যে, বর্তমান সভ্যতা ইসলামের অনন্য এক অবদান। ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বর্তমানের মানুষ পূর্বের চেয়ে বরং আরো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বইয়ের শেষের দিকে লেখক ইসলামের সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। পাঠক বুঝতে পারবেন: কিভাবে ইসলাম মানুষকে বিভিন্ন বর্ন, গোষ্ঠী, ভাষা, অঞ্চল ইত্যাদির সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করে একক উম্মাহ হিসেবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ করে। সে ঐক্যের ভিত্তি হল আল্লাহর প্রতি ঈমান। প্রিয় পাঠক, মানবসৃষ্ট সকল মতবাদ ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। অসহায় মানুষ বস্তুবাদী সভ্যতা ও বিলাসিতার বোঝা বহন করে ক্লান্ত। তাদের মুক্তির একমাত্র পথ ইসলাম। এই সভ্যতা তাই ইসলামের কাঙাল হয়ে আছে। প্রয়োজন শুধু তাদের কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শের বাণীসমূহ পৌঁছে দেয়া। প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামকে বুঝতে চান, এমন পাঠকের জন্য এটি একটি অবশ্য পাঠ্য বই। বইটি পাঠকের চিন্তার জগৎকে সমৃদ্ধ করবে। নতুন চেতনায় উজ্জীবিত করবে।