User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সত্যি বলতে, একটা গা ঘিনঘিনে ভাব নিয়ে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। একজন স্ত্রী, তার স্বামী অসুস্থ সেই সময় অন্য একজন পুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে৷ তবুও ভালোবাসার মতো কোনো অনুভূতি থাকলে না হয় বিবেচনা করা যেতো। শুধু শারিরীক প্রয়োজনের খাতিরে এই গোপন অভিসারের বর্ণনা পড়ছিলাম রিনির নিজের ভাষায়। “ঘর ভরা মোর শূন্যতারই বুকের' পরে” কবিগুরুর লেখা একটি গানের লাইন। এই গল্পের সূত্রধার রিনি, স্বামী রাহাত মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি৷ ছেলে সিবগাত ও শাশুড়ি সালমাকে নিয়ে জীবন মঞ্চে প্রতিনিয়ত যু*দ্ধ করে যাচ্ছে রিনি। রিনি কোন শুদ্ধ চরিত্র নয়, সে নিজেও জানে৷ অফিস ছুটির কিছুটা সময় শহরের কোনো সস্তা হোটেলে সাব্বিরের সাথে অন্তরঙ্গতার সময় রিনি ভুলে যায় ভালো মন্দের হিসাব৷ তখন শুধু মাত্র নিজের চাহিদা, মানসিক শান্তি আর ঝড়ো উন্মাদনা নিয়ে ভাবে। খুব একটা মুক্তমনা পাঠক আমি নই। রিনির এমন কার্যকলাপের বর্ণনায় গা রিরি করে উঠেছে৷ তার উপর রাহাতের মানসিক অবস্থার বর্ণনা পড়ে, রাহাতের প্রতি তৈরি হওয়া সফট কর্ণার রিনিকে সরাসরি দোষী সাবস্ত করতে সাহায্য করেছে৷ সম্প্রতি আমিনা তাবাসসুম এর হৃদয়ে রসায়ন বইটি পড়েছিলাম। যেখানে তিনি খুব সাংঘাতিক একটি মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। ঘর ভরা মোর শূন্যতারই বুকের' পরে বইটিতেও খুবই প্রচলিত একটি নিয়মের ফলে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রাহাতের বাবা সর্বদা ছেলেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এসেছে৷ রাহাত বিশেষ প্রতিক্রিয়া না দেখালেও কষ্ট পেত। এবং দীর্ঘসময় ধরে পুষে রাখা এই কষ্ট একসময় বিরূপ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে ভয়াল আকার ধারণ করে৷ রাহাত ধরেই নেয় সে অযোগ্য। বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে হয়ে উঠে আত্মঘা*তী। আমার মনে হয়, এ দেশের নব্বই শতাংশ সন্তান রাহাতের মতো পরিবেশে বড় হয়। নিজ পরিবারে অপমানিত হতে হতে এদের মনে এক সময় নিজেকে যোগ্য প্রমাণের জেদ চেপে যায়। তখন তারা ভালো মন্দ বিবেচনা করে না। সামনে যে পথ খোলা দেখে সেদিকে ছুটে যায় নিজেকে যোগ্য প্রমাণের লক্ষ্যে। বাইরের লোকের কথার থেকে দ্বিগুণ আঘাত দেয় পরিবারের মানুষের কথা৷ অথচ আমরা সবাই জানি, পরিবারের মানুষজন আমাদের কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু শুধু ভালোবাসলেই হয় না৷ সে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হয়৷ সন্তানকে সাপোর্ট দিতে জানতে হয়। তার প্রতি ভরসা রাখতে হয়৷ তাকে জানাতে হয়, তার বাবা-মা তাকে কতোটা ভালোবাসে। বাবা মায়ের একটু প্রশংসা সন্তানকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, উদ্যোমী করে তুলে। কিন্তু তাদের তিরস্কার প্রতিনিয়ত ভেঙে গুড়িয়ে দেয় নিষ্পাপ শিশুগুলোকে৷ যার প্রতিরূপ রাহাত। রিনির অপরাধ তাকে শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড় করাবে? তার গোপন অভিসারের কথা যদি কখনো পরিবারের সামনে আসে তবে সবার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? সাব্বিরের সাথে রিনির সম্পর্ক কি শুধু দেহ পর্যন্তই অবশিষ্ট থাকবে নাকি কখনো রাহাতকে সরিয়ে মনেও জায়গা করে নিবে? সেটার পরিণতি কতোটা ভয়াবহ হবে? - অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে বইটি পড়ে গিয়েছি৷ চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, লেখক এতো সুন্দর একটা সমাপ্তি দিয়েছেন, যা আমার সকল ঘৃণা মুছে ফেলেছে। এন্ডিং এতো চমৎকার হতে পারে আমি ভাবিনি। ইটস পারফেক্ট৷ আমি এখন রিনির উপর রেগে নেই। বরং দোষে গুণে ভরা একজন স্বাভাবিক মানুষ বলে হচ্ছে। যে ভুল করে, রাগ করে, অভিমান করে, ক্লান্ত হয়৷ রিনি নিজের জীবনটাও সহজ ছিল না। সেও সুস্থ পরিবেশে বড় হয়নি৷ শৈশব তাকেও করেছে ত্রুটিপূর্ণ। এই যে বই পড়তে একটা চরিত্রকে ঘৃণা করা থেকে শিফট হয়ে তার প্রতি সহানুভূতি অনুভব করা - এটাই লেখকের লেখনীর ক্ষুরধারিত্ব প্রমাণ করে৷ তবে রিনির অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই। সে যা করেছে তা পাপ। এই পাপের কোনো সাফাই হয় না। রিনি চরিত্রটির ক্যারেক্টার বিল্ডআপ চমৎকার হয়েছে৷ সেই সাথে আমাদের সমাজে ক্ষুদ্র জীবাণুর মতো ছড়িয়ে থাকা মানসিক সমস্যাগুলো নিয়ে লেখক আমিনা তাবাসসুম যেভাবে প্রতিটি বইয়ে আলোকপাত করেন, তা আমার বরাবর ভালো লাগে। গল্পের ছলে মানুষ জানুক, বুঝুক, সচেতন হোক।
Was this review helpful to you?
or
বই:ঘর ভরা মোর শূন্যতারই বুকের পরে লেখিকা:আমিনা তাবাসসুম প্রকাশনা:শব্দশৈলী চমৎকার এক সামাজিক উপন্যাস পড়ে শেষ করলাম।গল্পটির যে মূল সুর তাই যেন অন্তর্দ্বন্দ্বের এক চালচিত্র মাত্র।মনের সাথে দেহের,দেহের সাথে আত্বার,আত্বার সাথে আজন্ম লালিত সংস্কারের,সংস্কারের সাথে ইচ্ছের।গল্পের মূল প্রোটাগনিস্ট একজন নারী,যে নারী একজন মা,একজন দায়িত্ববান অফিসের কর্মচারী,মানসিকভাবে অসুস্থ স্বামীর জন্য কর্তব্যরত একজন স্ত্রী আবার নিজের জীবনকে যাপনকারী একজন নারী। প্রচলিত নিয়মে যদি এই চরিত্রকে দেখতে চাই তাহলে মনে হবে এই নারী একজন চরিত্রহীন।স্বামীর অনুপুস্থিতে সে আরেকজনের সাথে দৈহিক খেলায় মেতে ওঠে,কিন্তু চিন্তাধারাকে আরেকটু প্রসারিত করে যদি এই চরিত্রটির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করি তাহলে অন্তর্দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ একটি চরিত্র পাই। রিনির চরিত্র যেন সমাজের দ্বিচারিতার প্রতীক।একদিকে তার সাব্বিরের সাথে সময় কাটানো আরেকদিকে শ্বাশুড়ি আর সন্তানের সামনে প্রতিচ্ছ্ববি।রিনির চরিত্রটি নিয়ে যখন আমি চিন্তা করছি তখন আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলাম রিনির যে সাব্বিরের সাথে সম্পর্ক তা হলো রিনির ক্রমোসোমে বয়ে চলা রিনির বাবার অংশ আর রিনির যে তার সন্তানের প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা তা হলো রিনির মায়ের থেকে পাওয়া অকৃত্রিম ভালোবাসার ইচ্ছা। রাহাতের চরিত্র আবহমান কালের বাঙালি পুরুষের চরিত্র।নিজের ব্যার্থতা ঢাকতে, নিজের পুরুষত্ব জাহিরে ব্যস্ত। তাই তো রিনিকে ছেড়ে নার্স রেইনাকে বিয়ে করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না।তবে সাব্বির আর রাহাত যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। স্ত্রীর সাফল্যকে মেনে নিতে তাদের ঠুনকো অহংবোধে আঘাত লাগে। গল্পে লেখিকা মেটাফোরের মাধ্যমে রিনির ভেতরের চলা দ্বন্দ্বকে বুঝিয়েছেন।সাব্বিরের সাথে পরোকিয়া থেকে রিনির যে দু:স্বপ্ন দেখা শুরু তা রিনির আজন্ম লালিত সংস্কারকে ভাঙার দরুণ মনের উপর বয়ে চলা যুদ্ধরই প্রকাশমাত্র। রিনির শ্বাশুড়ির চিত্রায়ণ ছিলো এই গল্পের সবচেয়ে পছন্দের অংশ।সন্তানের জন্য যে মা অন্ত:প্রাণ তেমনি ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্নে সে একজন বিবেকবান মানুষ। ভাঙা পরিবারে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় যাকে সে হয় সন্তানরা।পিতামাতা একজন আরেক জনের নামে কটু কথা বলে সন্তানের কানে বিষোদগার করে নিজের মিথ্যে অহংকে তুষ্ট করতে ব্যস্ত থাকে কিন্তু রিনির শ্বাশুড়ি রিনির সন্তানের সামনে তার মাকে এঞ্জেল রূপে এঁকে যান।প্রচলিত শ্বাশুড়ির যে ছবি সমাজে অঙ্কিত তা ভেঙে একজন নারী, আরেকজন নারীর জয় জয়কার করে ওঠে।রিনির সংসারের জন্য করা বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধকে আরেক যোদ্ধা তাই কুর্নিশ করে। "আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনাই"-নজরুলের এই কলির মতোই যেন গল্পের মূল চরিত্র রিনি।রিনির নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে চলা,নিজের ইচ্ছাধীন সিদ্ধান্ত নেয়া,নিজের আমিত্বকে খুঁজতে চাওয়াকে পাঠকের অন্তর কুর্নিশ করে।